শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৩৪

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৩৪
তাসনিম জাহান রিয়া

রাত একটা বাজে। ঘরের পিছনের দরজা খুলে বের হয় ইভা। বাড়ির পিছনের পুকুরের ঘাটে বসে আছে মুহিব। মুহিবের ছায়ামূর্তি দেখে এগিয়ে যায় ইভা। ইভাও মুহিবের পাশে বসে। মুহিব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে পুকুরের পানির দিকে। ইভা মুহিবের কাধে হাত রাখে। মুহিব এক পলক ইভার দিকে তাকায়। কিয়ৎক্ষণ কাটে তারপর হুট করেই ইভাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে মুহিব।

মুহিবের আকস্মিক আচারণে স্তব্ধ ইভা। ইভার হাত-পা মৃদু কাঁপছে। ইভার মনে হচ্ছে তার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ইভা জুরে জুরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে আলতো করে মুহিবের মাথায় হাত রাখে। ইভা মুহিবকে বাঁধা দেয় না। কাঁদলে মন হালকা হয়। মনের ভিতর জমানো সমস্ত কষ্ট বের হয়ে আসে।
শ্রেয়সী সকালে মিহানের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে নিতু বারান্দায় চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে। মিহান কাত হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। অতঃপর আস্তে আস্তে অনুপমের রুমে উঁকি দেয়। অনুপমও ঘুমাচ্ছে। শ্রেয়সী কাউকে বিরক্ত না করে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের বারান্দায় চলে যায়। বারান্দায় গিয়ে ইভাকে ফোন দেয়। দুই বারের মাথায় ইভা ফোন রিসিভ করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হ্যাঁ শ্রেয়সী বল।
আন্টি আর মুহিব এখন কেমন আছে?
আন্টি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মুহিব এখনো রুম থেকে বের হয়নি। মুহিব অনেক ভেঙে পড়ছে। কালকে রাতে কান্না করে অস্থির হয়ে গিয়েছিল।
প্রিয়ন্তি ঠিক আছে? অসুস্থ শরীর নিয়ে এতোটা পথ গেলো শরীর আরো খারাপ হয়নি তো?
হয়নি আবার। অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তন্ময় মনে করে ঔষধ নিয়ে আসছিল। ঔষধগুলো খাওয়ার পর একটু রিলিফ হয়। এজন্যই বলেছিলাম আসার দরকার নেই।

আচ্ছা শুন ওদের অবস্থা তো বুঝতেই পারছিস কেমন। তোরা কোনো ব্যবস্থা না করলে ওরা কিছু খাবে না। তোরা সবার জন্য রান্না করে ফেলিস। প্রিয়ন্তি তো অসুস্থ। তুই তো রান্না তেমন একটা পারিস না। আমি বা নিতু থাকলে ভালো হতো। তুই আর তন্ময় মিলে একটু ম্যানেজ করে নিস।
আমি তন্ময়কে বাজার করার কথা বলছিলাম। তন্ময় পাশের বাসার একটা ছেলেকে নিয়ে বাজারে গেছে।
আচ্ছা তাহলে রাখি।
আচ্ছা।

শ্রেয়সী নাহিনের দরজায় নক করে বলে,
আসবো?
নাহিন জবাব দেয় না।
শ্রেয়সী আবার নক করে। তবুও নাহিনের কোনো সাড়াশব্দ নেই। শ্রেয়সী কিয়ৎক্ষণ অপেক্ষা করে। শ্রেয়সী আর অপেক্ষা না করে রুমে ঢুকে যায়। বারান্দা থেকে নাহিনের কথার আওয়াজ আসছে। নাহিন মৃদু পায়ে হেঁটে বারান্দার দরজার সামন গিয়ে দাঁড়ায়।

নাহিন কারো সাথে খুব নিচু স্বরে কথা বলছে। কিছু কথা শ্রেয়সীর কর্ণগোচর হয়।
আমি শিওর। আর কোনো দ্বিধা নেই। আমি দেশের বাইরেই সিফট হয়ে যাব।
কথা বলতে বলতে বারান্দার দরজার দিকে তাকায়। নাহিনের দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে শ্রেয়সী। এদিক ওদিক তাকিয়ে রিনরিনিয়ে বলে,
আমি আসছি। পড়ে আসবো।
আমি তোকে পরে ফোন করছি। বাই।
নাহিন ফোনটা কেটে ট্রাউজারের পকেটে ফোন রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
কিছু বলবি?

নাহিনের কথায় আরো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। হুট করে কেউ এভাবে কিছু জিঙ্গেস করলে শ্রেয়সী উত্তর দিতে পারে না। নাহিনের সাথে তার এতোটাই দূরত্ব বেড়ে গেছে যে নাহিনের সাথে কথা বলতেও তার জড়তা কাজ করছে। কেমন যেনো তার নার্ভাস ফিল হচ্ছে। এতোটা নার্ভাস সে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার দিনও হয় নাই।
চুপ করে আছিস কেনো? কিছু বলার জন্যই তো এসেছিলি?
শ্রেয়সী মৃদু স্বরে বলে,

তুমি প্রিয়ন্তিকে দেখতে হসপিটালে যাওনি কেনো?
শ্রেয়সীর কথা শুনে নাহিনের মুখটা কালো হয়ে যায়। নাহিনের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে শ্রেয়সী আবার বলে,
তুমি জানতে না যে প্রিয়ন্তি সুইসাইড এটেম্প করেছিল? আমি তো তোমাকে বলে গিয়েছিলাম।
নাহিন ভেবেছিল শ্রেয়সী হয়তো তার সাথে সব ঠিক করতে এসেছিল। আগের মতো কথা বলবে, আগের মতো আবদার করবে, আগের মতো ঘুরতে যাওয়ার জন্য বায়না করবে।

কিন্তু শ্রেয়সী তার ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে তার সাথে প্রিয়ন্তির ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে। নাহিন শ্রেয়সীকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে যায়। নাহিন বিছানার কিনারে মাথা নিচু করে বসে পড়ে। শ্রেয়সী ভাবে নাহিন হয়তো তার সাথে কথা বলবে না তাই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
শ্রেয়সী আমি খুব খারাপ তাই নারে? আমার সাথে কথা বলা যায় না? আমাকে ঘৃণা করিস তাই না? এই কারণেই আমার সাথে কথা বলতে রুচিতে বাধছে?

শ্রেয়সী মৃদু পায়ে হেঁটে নাহিনের সামনে দাঁড়ায়।
রুচিতে বাঁধলে তোমার সাথে কথা বলছে কে এখন?
আমার সাথে তোর আর কোনো টপিক নেই কথা বলার? আমি সত্যিই খারাপ। আমি ভীষণ খারাপ। না ভালো ভাই হতে পারলাম না ভালো প্রেমিক হতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ। জীবনে এতো এতো সফলতা অর্জন করার পরও আমি ব্যর্থ। তোর এই খারাপ ভাইটাকে ক্ষমা করে দেইস। দোয়া করিস এমন খারাপ ভাই যেনো কারো না হয়।
শ্রেয়সী নাহিনের পায়ের কাছে বসে হু হু করে কেঁদে দেয়। এতোদিনের জমানো সব কান্না আজকে বেরিয়ে আসছে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৩৩

(দুঃখিত লেইট করে এবং ছোট করে গল্প দেওয়ার জন্য। একচুয়ালী আমি একটু সিফটিং নিয়ে ব্যস্ত। বাসায় সিফট হয়ে গেলে নিয়মিত গল্প দিব।)

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৩৪(২)