শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৭

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৭
তানিয়া মাহি

” মামা, আমি আপনার মেয়ে শাকিরাকে পছন্দ করি। বিয়েও করতে চাই। আশা করছি আপনি, মামি কেউই কোন আপত্তি করবেন না এ ব্যাপারে। আমি খুব একটা খারাও ছেলে নই সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমি আপনার মেয়েকে ভালো রাখতেও পারব ইন শা আল্লাহ। আমার বাবার অনেক টাকা পয়সা আছে সেই ভরসায় বিয়ে করছি না আমিও এখন ব্যবসা দেখাশোনা করি৷ বাবা নিজেও আমার ওপর দায়িত্ব দিতে চাইছেন আমিই নিচ্ছি না।”

রায়হানের কথা শুনে খুব একটা অপ্রস্তুত হন নি শাকিরার বাবা সবুর সাহেব। তিনি রাতেই কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন এ ব্যাপারে। আন্দাজ সঠিক কি না সেটা জানার অপেক্ষাতেই ছিলেন। রায়হান যে ছেলে হিসেবে শুধু ভালো না খুব ভালো এটা সবাই জানেন। তিনি এটা ভেবে বিস্মিত হচ্ছেন যে শাকিরার মতো মেয়েকে পছন্দ কীভাবে করল! মেয়েটা না আছে পড়াশোনায় আর না আছে অন্যকিছুতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সবুর সাহেব একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, ” তোমার কথায় তো আমি আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দেব না। তুমি বাসায় জানাও। বেহায়া ছেলে নিজের বিয়ের কথা নিজে বলছো। ”
” মামা অনেক সময় নিজের বিয়ের কথা নিজেকেই বলতে হয়। আমি মাকে বলে রেখেছি মা-বাবা আগামীকালই!!”
” হবু শ্বশুরের সাথে একদম লাজলজ্জা বিক্রি করে কথা বলবে না। আপা আর দুলাভাইকে জলদি আসতে বলো। ”

সবুর সাহেব বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রায়হান তার বাবাকে কল দিলো। কল দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ ও হলো।
” বাবা, নানাবাড়ি আসছো কবে? এখানে তোমার কত কাজ পড়ে আছে ভাবতে পারছো তুমি?”
ওপাশ থেকে রবিউল আহমেদ বলে ওঠেন, ” কাজ! আমার? ”
” হ্যাঁ তোমার ছেলের বিয়ে আটকে আছে এখানে। তুমি আর মা আসলেই আমি বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব।”
” কি বলছো তুমি? বউ মানে?”

“আমি আর আলাদা করে এক্সপ্লেইন করতে পারব না তুমি মায়ের কাছে থেকে শুনে নাও প্লিজ। তাড়াতাড়ি চলে আসবে কিন্তু বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফিরতে হবে। ”
” মেয়ে কে?”
” শাকিরা, মায়ের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে।”
” নিজের জন্য মেয়ে নিজেই পছন্দ করে নিলে?”
” আমি তো পছন্দ করে বলছি আর তুমি যে বিয়ে করে বউ নিয়ে গিয়েছিলে সেবেলায়? তুমি আমার থেকে একধাপ এগিয়ে ছিলে বাবা।”

” বাবার সাথে এভাবে কথা বলতে লজ্জা লাগে না তোমার? অতীত টেনে তুলছো?”
” লজ্জা করলে বউ পাব না, তুমি আর মা বরং তাড়াতাড়ি চলে এসো। রাখছি…”
রায়হান ফোন রেখে নিহানদের বাড়ির দিকে যায়। সে আজ ওখানেই থাকবে৷ নিহান আর রায়হান প্রায় সমবয়সী। দুজনের সম্পর্কটাও বেশ ভালো।
নিহান কিছু একটা লিখছিল রুমে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে সেটা বইয়ের ভাজে লুকিয়ে রাখে। রায়হান এগিয়ে আসে নিহানের দিকে।

” কিছু করছিলি হবু মেজর ভাই?”
” এটা কোন ধরনের ডাক হলো?”
” কি বলব হবু বউয়ের বড় ভাই?”
” আজ দেখছি সেই আগের মতো আপনার মুখে কথা ফুটেছে। তা এত আনন্দ কি বিয়ে করার খুশিতে নাকি?”
” আমি কবে চুপচাপ ছিলাম বল তো? তুই বিয়ে করছিস কবে সেটা বল তো?”
” যাকে বিয়ে করতে চাই সেই তো রাজি হয় না।”

” হবু মেজরকে বিয়ে করতে কার আপত্তি শুনি?”
” তোর বোনের। ”
” আমার বোন?”
” তোরই তো বোন, কি সুন্দর ভাইয়া ভাইয়া করে না তোকে?”
” তুই এখনো শুভ্রতাকে ভালোবাসিস?”
” কোনসময় ভালোবাসা বন্ধ করেছিলাম নাকি? তুই শাকিরার প্রেমে পড়ার আগে থেকেই আমি এই মেয়েটাকে ভালোবাসি, অসম্ভব ভালোবাসি। ”

” শুভ্রতা কি বলে?”
” আপনি আমার কাছাকাছিও আসবেন না, এটা বলতেই আছে। ও বুঝতেই চায় না যে আমি ওকে সত্যিই ভালোবাসি। ওর কথাকে আমি আর গুরুত্ব দেব না। ওর বিয়ের সময় আমি ছিলাম না জন্য বিয়েটা করতে পেরেছিল কিন্তু এবার ওর মতকে গুরুত্ব দিলে ও একটা ভালো জীবন হারাবে আর আমি ওকে। ”
” ওকে কীভাবে মানাবি?”

” ওর সাথে একবার খোলামেলা কথা বলব, মানলে তো বড়ই ভালো আর না মানলে ওর অমতেই বিয়েটা করব তাও দুই সপ্তাহের মধ্যেই।”
” আমি জানি শুভ্রতা তোর সাথে যতটা ভালো থাকবে ততটা ভালো ওকে কেউ রাখতে পারবে না কিন্তু সে একবার ভালোবেসে ঠকেছে তাই হয়তো সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না। মানুষটা তাকে প্রচন্ড খারাপভাবে ঠকিয়েছে রে।”
” কি হয়েছিল বলবি? আমি ওর অতীত নিয়ে কারো সাথে কোন কথা বলি নি। আমার আগ্রহ ও নেই তবুও জানা দরকার হয়তো।”

রায়হান নিহানকে সবকিছু বলতে শুরু করে। সে একদম বিয়ের থেকে শুরু করে ডিভোর্স অবধি যা যা ঘটেছে সবকিছু বলে। নিহান চুপচাপ সেগুলো শুনতে থাকে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক হলো শাকিরার রুমে সবাই আড্ডা বসিয়েছে। সকাল সকাল রায়হানের মা আর বাবা চলে এসেছে। এসেই জানতে পেরেছে ছেলে কি কান্ড ঘটিয়েছে। যদিও তারা জানতো শাকিরার কথা। রায়হান তার মায়ের সাথে সব কথা শেয়ার করে। তারা শাকিরাকে রিং ও পড়িয়েছে আজকে। তখন থেকেই সবার আলাপ আলোচনা চলছে। শাকিরা চুপচাপ বসে আছে। নিজের বিয়ের আলোচনায় বসে থাকতে তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। রায়হান বলেছিল বেরিয়ে তার সাথে দেখা করতে কিন্তু এখান থেকে কীভাবে উঠবে সেটাই ভাবছে।
হঠাৎ শুভ্রতা ভেতরে প্রবেশ করে। শুভ্রতাকে দেখে রবিউল সাহেব তাকে ডেকে কাছে বসায়।

” ভালো আছিস রে মা?”
” জি ফুপা, আপনি কেমন আছেন?”
” আমিও আলহামদুলিল্লাহ। এখন কি পড়াশোনা করছিস?”
” হ্যাঁ করছি, পড়াশোনা তো করতেই হবে ওটাই এখন আমার সবকিছু। সাকসেস খুব বেশি করে প্রয়োজন আমার।”
” ভালো করে পপড়াশোনা করে বাবার মুখ উজ্জ্বল করো। তোমার ফুপির সাথে কথা হয়েছে?”
শাকিরার পাশে থেকে রায়হানের মা সাজিদা বেগম বলে ওঠেন, ” আমার জানের টুকরোর সাথে আমার কথা হবে না! ওকে বড় করেছি আমি।”

” হ্যাঁ সেটাই তো, আমার দ্বিতীয় মা হচ্ছে আমার ফুপি। ফুপি এখানে আসবে আর আমার সাথে দেখা করবে না?”
রবিউল সাহেব হাসতে হাসতে বলেন, ” তাহলে তো আমার প্রশ্ন করা ভুল হয়ে গেল দেখছি।”
শুভ্রতা ফুপাকে জিজ্ঞেস করে, ” বিয়ে কবে ঠিক হলো ফুপা?”
” এই মাসের শেষের দিকে আটাশ তারিখ।”
” ফুপি….”
” হ্যাঁ বল।”

” তোমার ছেলের হবু বউকে আমি নাম ধরে ডাকব নাকি ভাবি বলব বলো তো?”
” তোর যা ইচ্ছে হয় ডাকিস।”
” তাহলে শাকিরাই বলবে, ভাবি বলাটা ভেতর থেকে আসবে না। এই শাকিরা বাহিরে আয় তো একটু কথা আছে।”
শাকিরা অনুমতি নিয়ে শুভ্রতার সাথে বাহিরে চলে যায়। শুভ্রতা শাকিরাকে ছাদে যেতে বলে। শুভ্রতা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করতে থাকে।

রায়হান চিলেকোঠার ঘরের একপাশে দাঁড়িয়ে শাকিরার জন্য অপেক্ষা করছে। শাকিরা এসে এপাশে ওপাশে খুঁজে না পেয়ে চলে যেতে লাগলে রায়হান বেরিয়ে আসে। পিছন দিক থেকে বলে,
” এত দেরি হলো কেন আসতে?”
” আপনি কোথায় ছিলেন?”
” পাশেই, তোর আসতে এত দেরি হলো কেন সেটা বল।”
” সবাই ছাড়ছিল না যে।”
” আচ্ছা শোন একটা কথা।”
” হ্যাঁ বলেন।”

” বাবা-মা রাতে বাসায় ফিরবে উনাদের সাথে সাথে থাকবি। আমার এখন ফিরতে হবে কাজ পরে গেছে। আমি ফোন দিব তোকে। সাবধানে থাকবি, পড়ালেখায় মন দিবি এখন থেকে। কোন সমস্যা হলে শুভ্রতার কাছে যাস, ও তো ভালো স্টুডেন্ট। ”

” এখনই যেতে হবে?”
” হ্যাঁ দেরি করা যাবে না।”
রায়হান আর শাকিরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে। শুভ্রতা সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা আজ ক্লাসে যায়নি জন্য ফাউজিয়া কল করেছে। শুভ্রতা ফাউজিয়ার সাথেই কথা বলছিল এমন সময় নিহান এসে সামনে দাঁড়ায়।
” দোস্ত একটু ফোন রাখতো আমি তোকে পরে কল দিচ্ছি।” বলেই শুভ্রতা কল কেটে দিয়ে নিহানের দিকে তাকায়।
” কিছু বলবেন?”
” হ্যাঁ। তোকে কিছু জানানোর আছে।”
“কি?”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৬

” এখানে না, পুকুরপাড়ের দিকটাতে চল একটু। ”
” এখানেই বলুন, এখানে কি সমস্যা?”
” ওখানে গেলেও তো কোন সমস্যা নেই। আয় আমি অপেক্ষা করছি। ”
নিহান সেখান থেকে চলে গেলে শুভ্রতাও পিছু পিছু হাটতে থাকে আর ভাবতে থাকে কি বলবে নিহান!

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৮