অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৩
সুমাইয়া সানজুম ঐশী

-আচ্ছা আংকে,,,ল
আংকেল আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,দেখে মনে হচ্ছে তিনি ভীষন ভাবে রেগে আছেন । মা,আলো আপু খাওয়া থামিয়ে গ*ম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।আংকেল এবার গ*ম্ভীর গলায় বললেন,
-আমি তোমার কোন কালের আংকেল?

ভ্যা*বাচে*কা খেলাম আমি। ভ*য়ে ভ*য়ে আংকেল এর দিকে তাকালাম একবার। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন
-আমি কতো সুন্দর করে তোমায় আম্মু, মা, মেয়ে ডাকছি আর তুমি আংকেল ডাকছো!এতটা পর ভাবছো! বাবা ডাকবে আমায় বুঝলা। ভু*ল হলে কান ম*লে দিবো এরপর।
আমি মুচকি হেসে সম্মতি জানালাম। তিনি পুনরায় বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-তুমি এবাড়ির বউ নও। ছোট মেয়ে আমার। কোনো কিছু লাগলে ধ্রুব বা তোমার শাশুড়ী অথবা আমাকে জানাবে। ওই বাড়ির মানুষদের মতো আমাদের মনে করার দরকার নেই। তাই ভয় পাবে না। তোমার নিজের স্বাধীনতা আছে। আমি সেসব বিষয় বিবেচনা করেই কথা বলছি।
-জ্বি,বাবা

আমার ভীষণ ভালো লাগলো বাবার ব্যবহার, ভাবলাম কয়দিন পর তো আমি চলে যাবো কিন্তু কোথাও যাবার তো জায়গা নেই,তাই যদি বাবার কোম্পানিতে যদি আমাকে জব দেয় তাহলে এখন থেকে পড়াশোনার খরচ আর আমি থাকার বাসা ভাড়া খরচটা জোগাড় হয়ে যাবে। তাই আবদার করেই ফেললাম,
-বাবা আসলে আমি পড়াশোনার পাশাপাশি আপনার কোম্পানিতে জব করতে চাই।আমি নিজের সব খরচ নিজেই জোগাড় করতে চাই।
আমার কথার মাঝখানে আলো আপু বললেন,

-কিন্তু ভাইয়ার তো ইনকাম অনেক বেশি,তোমার মতো হাজারটা বউয়ের যাবতীয় খরচ বহন করতে পারবে।তাহলে তুমি জব কেনো করতে চাইছো?
আমি এবার কি করবো,এটাই একটা ভালো সুযোগ ছিলো আমার কিন্তু আপু,কি উওর দিবো আমি! কিন্তু বাবা আপুর কথার বি*রোধিতা করে বললেন-

আলো তোমার ভাইয়ের টাকায় ঐশীর চলতে হবে এমন কোনো কথা আছে, সে কি তোমার মতো মাথা*মো*টা নাকি,তুমি জানো ঐশী ক্লাস এইট থেকে টিউশন করে নিজের স্টাডি কস্ট নিজেই বহন করেছে আর তুমি তো নিজের একটা কলমও নিজের টাকা দিয়ে কিনো নি!আমি তোমায় ব্যাপার টা খারাপ ভাবে বলছি না,প্রতিটা মেয়ের উচিত নিজের উপর নির্ভরশীল হওয়া। ঐশী যেহেতু জব করতে চাচ্ছে তাহলে সমস্যা কোথায়! বাসায় সব কাজ তো সার্ভেন্টরাই করে ওর তো তেমন কাজ নেই।সপ্তাহে তিন দিন জাস্ট আমার কেবিনের ফাইলস গুলো চেক করবে, হিসাব ঠিক আছে কিনা দেখবে তারপর বাসায় চলে আসবে।ধ্রুব তো যাওয়ার সময় পায় না তাই ঐশী দেখবে এসব।
তারপর জিজ্ঞেস করলেন,,

-এ ব্যাপারে তোমাদের সবার কোনো সম*স্যা আছে?ধ্রুব তোমার ?
নাহহ।বলে আঁধার ভাইয়া ডাইনিং রুম ত্যা*গ করলেন,
মা বললেন, আমার অনেক ইচ্ছে ছিল আমার ছেলে মেয়েরা তোমার অফিস সামলাতে তোমায় সাহায্য করবে কিন্তু ছেলে তো পারছে না, আর বড় মেয়েটাও সংসার নিয়ে ব্যস্ত,ছোট টা তো কোন কাজেরই না,আমার আরেক মেয়ে না হয় এই দায়িত্ব পালন করুক।মা হিসেবে আমি তাতেই স*ন্তুষ্ট,

আলো আপু নাক ফু*লিয়ে বললেন,আমি তো এখন আর কেও না তোমাদের সব তো নতুন মেয়েই,আপুর কথায় সবাই হেসে দিলো।
-আলো এক কাজ কর।তুই একটা আটা ময়দার দোকান দে।দেখবি ডেইলি কত মেয়ে তোর কাছে আটা ময়দা মেখে ভু*ত সাজতে আসবে।হাসতে হাসতে বললেন নীল ভাইয়া।
-আগে আমি তোমাকে সাজাবো নীল্লু ভাইয়া।

তোরা থা*ম তো। ঐশী তুমি আগামী মাস থেকে জয়েন করবে কোম্পানিতে,আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই বাবা চলে গেলেন। টেবিল গোছানোতে শিরিন(সারভেন্ট)আন্টিকে সাহায্য করছিলাম তখন আলো আপু এসে বলল,
-হেই”বিশ্ব সুন্দরী”চলো তোমায় সাজাতে হবে।তোমাকে বিকেলে সবাই দেখতে আসবে,ঐশ্বরিয়া আর তোমার নাম একই ধাচের তাই তোমায় ডাকলাম গো রাগ কইরো না পাটকাঠি,বলেই হেসে দিলো।
এই আপুটা আমার নাম এর ফালুদা বানাই দিলো, বেচারা নাম আমার আপুর উপাধি শুনতে শুনতে কোনদিন যে অ*ক্কা পায়!

-কি ভাবছো ভাবনার রাণী?চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে তো,
মাত্র তো দুপুর হলো এতো তাড়াতাড়ি কেনো আপু?
আপু আমাকে নিয়ে যেতে যেতে বলল, শাড়ি +সাজানোর কাজ করতে অনেক সময় লাগবে টিয়াপাখি। তাই কথা না বাড়িয়ে চলোতো
হাতে চুড়ি পড়ানোর সময় আপু বললো,

-তোমার ডান হাতের পিঠটা অমন লাল হয়ে আছে কেনো? কি করেছো তুমি?
-আপু ধাক্কা লেগে কফি পড়েছে (মিথ্যা বললাম আমি)
-এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি,ঐশী! একথা বলে আমার হাতে মলম লাগিয়ে দিলেন।
প্রায় দেড় ঘন্টা পর আপু আমার সাজ কমপ্লিট করলো,

-মাশাল্লাহহ।তোমায় অনেক মায়াবী লাগছে গো সুন্দরী,ভাইয়া তোমাকে না বিয়ে করলে এখনি আমি করে ফেলতাম, অপ্স সরি, আমি তো তোমার মতো মেয়ে।চলো তোমার শাশুড়ীর ডাক পড়েছে।
আমি নিচে গিয়ে সবাই কে সালাম দিতেই মা আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিলেন।আশেপাশে তাকালাম কিন্তু দুচোখ যাকে খুজছে পেলাম না সেই কাং*খিত মানুষটা কে। তাকে খোঁজা বারন আমার তারপরও মন তাকেই খুজছে।কেমন নি*লজ্জ আমি সকালে এতো কথা শুনেও তার কথাই আবার ভাবছি!নিজের অনুভূতিকে ক*ড়াকড়ি ভাবে শা*ষণ করলাম। ভাববো না ঐ হি*টলাররে আর।বনমোরগ একটা।

এসব ভাবনার মাঝেই একজন আন্টি বলে উঠলেন,
-ভাবী মেয়ের কিন্তু মুখের রঙটা আরও সুন্দর হলে ভালো হতো ।আপনার ছেলে তো অনেক বেশি ফর্সা তাই ছেলের জন্য তার থেকে বেশি সুন্দর হলে ভালো হতো। আপনার বউ ও ফর্সা তবে ছেলে থেকে কম।আঁধারের সাথে কি এমন মেয়ে মানায়!আমি তো আমার বোনের মেয়ের কথা বললাম, মেয়ে মাত্র ডাক্তারী পাশ করছে, অনেক সুন্দর ও।

আপনার ছেলের সাথে পারফেক্ট মানাবে কিন্তু আপনি তো রাজি হইলেন না।এখন তো দেখি আ*নস্মার্ট শ্যাম রঙের মেয়েকেই বউ করলেন!
এ কথা শুনে আমার চোখ টইটম্বুর হয়ে উঠলো জলে। নিজের শাড়ি খা*মচে কা*ন্না আট*কানোর চে*ষ্টা করছিলাম। আর কত শুনতে হবে এসব কথা! ইচ্ছে করছে নিজের মুখটাকে জ্বা*লাই দেই। সব তো এই চামড়ার দো*ষ! চেহারা যেমন ই হোক না কেনো সাদা হতে হবে। সাদাই সব! আমার ভাবনার মাঝেই মা বলে উঠলেন,

-ভাবী আধুনিক যুগেও চামড়ার ত-ফাৎ খোঁজ করার মতো নি*চু মন-মানসিকতা আমার নেই।আমি বউ আনি নি বাসায় আমার আরেকটা মেয়ে এনেছি।আমার মেয়ে আমার চেয়েও যথেষ্ট সুন্দরী।তার মায়াবী চেহারাই পারফেক্ট তার জন্য। আলো তো তার মতোই দেখতে তাহলে আমি তফাৎ কেনো খুজবো?আর আমি তার সাদা চেহারা চাইনি তবে সুন্দর চরিত্র পেয়েছি যেটা আপনার বোনের মেয়ের মাঝে ছিলো না।আপনিও তো সাদা চামড়ার অনেক সুন্দরী মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করেছিলেন কিন্তু সে তো এক বাচ্চা রেখে প্রেমিক এর সাথে পা*লিয়েছে। লাভ কি এতো সৌন্দর্যের যেখানে চরিত্রটাই কু*ৎসিত!

মহিলাটা ভীষণ অ*পমান বোধ করলেন।একটা কথাও না বলে চুপচাপ বিদায় হলেন,, আমি এবারও মায়ের কথায় মুগ্ধ হলাম। আমার আপন আম্মু হলে এতোক্ষণে সেই মহিলার সাথে আমার চেহারার ব*দনাম করেই যেতেন কিন্তু অথচ আপন মা না হয়েও কি মা*রাত্মক প্রতিবাদটাই আমার শাশুড়ী করলেন!! হয়তো এবার আমার তৃ*ষ্ণার্ত মন একটু মাতৃস্নেহ পাবে!
সবাই বিদায় নিতেই তাড়াতাড়ি রুমে যাচ্ছিলাম । অতিরিক্ত অসস্থি হচ্ছে এসব পড়ে থাকতে। দরজা কাছে আসতেই মাথায় বা*রি খেলাম,

-ধুর কোন খা*ম্বারে এইটা।আমার মাথা টা গেলো! চোখ কি গরুর কাছে ছিলো নাকি হা*বা!কোন পা*গলা গা*রদ থেকে যে এগুলো ছুটে আসসস,,,,আঁধার ভাইয়ার অবাক হওয়া চোখ দেখে বাকি কথা গুলো বলতে ভু*লেই গেলাম,
তাকে কোনো কিছু না বলে একপর্যায়ে পুরোপুরি এ*ভোয়েড করে চলে গেলাম রুমে। এই লোক এর নাকি পছন্দের মানুষ আছে তো আমার দিকে হা করে তাকাইছিলি কেন! বে*দ্দপ ব্যা*টা।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ২

আমি আর মাথা ঘামাই নি তার ব্যাপার এ। রুমে এসে চে*ঞ্জ করলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিলান,, এবার শা*ন্তি লাগছে। মনটা আমার এখন ভীষণ ভালো,,,ভেবেছিলাম পড়াশোনা আর হবে না কিন্তু এই বাড়ির মানুষগুলো সত্যিই অসাধারণ। আমার জবটাও এতো জলদি হবে বুঝতেই পারিনি। আমি এখন অনেকটা চিন্তা মু*ক্ত হলাম।

অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব ৪