শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১০

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১০
তানিয়া মাহি

রাত আটটা, শুভ্রতা আর ফাউজিয়া বসে বসে পড়ছে। ফাউজিয়া তো পড়ছে কিন্তু শুভ্রতা কিছুতেই পড়ায় মন দিতে পারছে না। ক্লাস শেষ করে সে বাসায় জানিয়ে দিয়েছিল যে ফাউজিয়া জোর করে আজ তাদের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। প্রথমদিকে আয়েশা বেগম ঘোর আপত্তি জানালেও পরে কোনমতে মেনে নেন। নিহানের সামনাসামনি হতে হবে এই ভয়ে সে আজ ফাউজিয়ার বাসায় কিন্তু নিজের বাড়িতে এখন কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা জানতে প্রবল ইচ্ছে করছে তার।
শুভ্রতাকে বারবার কলম ঘুরাতে দেখে ফাউজিয়া বলে, ” কি রে কি হয়েছে? পড়ছিস না কেন?”

” ইচ্ছে করছে না রে।”
” কালকে ক্লাসপরিক্ষা আছে ভুলে গেলি?”
” ভুলিনি কিন্তু পড়ায় মন বসছে না একদম।”
” কেন?”
” বাসায় কি হচ্ছে জানতে ইচ্ছে করছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কতদিন এভাবে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াবি? আদৌ কি সম্ভব? বিয়ের আগে একটা ভুল করেছিলি, বিয়ে করেও ভুল করেছিলি এসবের দাম তো দিতেই হবে। আমি চাই নিহান ভাই যেন এখনো তোকে আগের মতোই ভালোবাসে।”
” আজেবাজে কথা বলিস না তো। আগে ভুল করেছি এটা ঠিক কিন্তু সে যদি এখনো আমাকে ভালোবাসে তোর কি মনে হয় আমিও তাকে নিয়ে ভাববো? কখনো না, আমি ডিভোর্সি আর সে ভালো একটা অবস্থানে আছে হয়তো বাড়ি থেকে এবার গেলেই মেজর পদে অবস্থান করবে। সে আনম্যারিড, আমার চেয়ে শতগুণে ভালো একটা মেয়ে ডিজার্ভ করে। ”

” ভালোবাসা কি টাকা, প্রতিপত্তি দেখে হয় সবসময়? ”
” কিছু কিছু সময় হতে হয় ফাউজিয়া। ”
” কাল তো বাড়ি ফিরতেই হবে, কি করবি?”
” শাকিরা বাড়িতে থাকলে ভালো হতো ওর সাথে থাকা যেত কিন্তু সে নিজেই তো নানুবাড়ি গিয়ে হাজির। আমিও নানুবাড়ি চলে যাব নাকি বলতো? নাকি এখানে কোথাও মেস ভাড়া নেব কিছুদিনের জন্য?”

” পাগল হলি নাকি? এভাবে পালিয়ে থাকা কিছুতেই সম্ভব না তার চেয়ে ভালো মুখোমুখি হয়ে দেখ কি হয়!”
” উনাকে ভীষণ ভয় লাগে আমার। যদিও কখনো কাউকে রাগ দেখাতে দেখি নি তবুও। এখন তো আমাকে শেষ করে ফেলবে।”

” স্নিগ্ধাকে কল দিয়ে বাড়ির অবস্থা জেনে নে, দেখ কি বলে?”
” ঠিক বলেছিস, দেখি আমার গুপ্ত*চর কি বলে!”
শুভ্রতা ফোনটা নিয়ে স্নিগ্ধাকে কল করে। ফোনটা রিং হচ্ছে আর তার বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।
ফোনটা রিসিভ হয়, ওপাশ থেকে ভরাট পুরুষালি গলায় বলে, ” হ্যালো….”
হৃৎস্পন্দন থেমে যায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য শুভ্রতার। স্নিগ্ধার ফোনটা কে রিসিভ করেছে, নিহান! শুভ্রতা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ” কে?”

” নিহান।”
” আ আ আপনি? স্নিগ্ধা কো কোথায়?”
” আমার পাশে। তোর আজকেই বান্ধবীর বাড়ি থাকতে হলো?”
” হ্যাঁ কাল আমাদের ক্লাস পরিক্ষা। একসাথে পড়ার জন্য থেকে গেছি।”
” পড়া বাদ দিয়ে হাতে ফোন কেন?”

” এমনি একটু স্নিগ্ধার সাথে কথা বলার জন্য কল দিয়েছিলাম।”
” এই যে নেন কথা বলেন, আর শুনেন আগামীকাল ক্লাস শেষ কয়টায়?”
” দেড়টায়, কেন?”
” আমি নিয়ে আসতে যাব, ক্লাস শেষ করে একদম মেইন গেইটের সামনে এসে দাঁড়াবেন। ফোনটা হাতেই রাখবেন।”
” আমি একাই বাড়ি ফিরতে পারব, আপনার আসতে হবে না।”

” আমি বলেছি না, আমি যাব আনতে?”
” হুম।”
” স্নিগ্ধার সাথে কথা বল।”
নিহান স্নিগ্ধার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দেয়। শুভ্রতা কিছুক্ষণ কথা বলে কলটা কেটে দেয়। ফোনটা রেখেই ফাউজিয়ার দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকায় শুভ্রতা। ফাউজিয়া তখন মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল।

” এই, এই ফাউজিয়া, কি রে….”
বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে চোখ তুলে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে, ” কি হয়েছে?”
” নিহান ভাই কালকে আমাকে নিতে আসবে বলেছে। ”
” ভালোই তো, তোর আর টাকা খরচ করে গাড়িতে যেতে হবে না আর এমনিতেও কাল কলেজবাস নেই।”

” টাকা আমার কাছে অনেক আছে, আমি উনার সাথে যাবই না। প্রায় একঘণ্টার পথে আমার কি অবস্থা হবে ভেবেছিস?”
” কি হবে না হবে সেটা কাল ভাবিস। আজ অন্তত একটু ভালো করে পড়, কালকে এক্সাম। আমার চেয়ে যদি বেশি না পাচ্ছিস, তোর খবর খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।”

” এসব আমি পারি, লিখতে পারব। কিন্তু…..”
” তুই নিহান ভাইকে নিয়ে আর একটা কথা বলবি তো একদম রুম থেকে বের করে দেব তোকে আমি। নিজে তো পড়বি না আমাকেও পড়তে দিচ্ছিস না।”
শুভ্রতা মাথার দুইপাশে দুইহাত দিয়ে চেপে ধরে বলে ওঠে, ” আল্লাহ কি বিপদের ফেললে তুমিইইইইইইই..”

” সংসার ভাঙার দুইমাস/ তিনমাসও হয়নি চালচলন দেখ, মনে হচ্ছে অবিবাহিত মেয়ে। আবার বোরখা পরেছে যেন কেউ চিনতে না পারে কিন্তু মামনি মুখ ঢাকোনি কেন? নিজের কলুষিত মুখটা ঢাকতে পারলে না!”
শুভ্রতা আর ফাউজিয়া ক্লাসে ঢুকবে, দোতলায় উঠে এসেছে এমন সময় পিছন থেকে পুরুষালি গলায় কেউ এমন কথা বলে উঠলো৷ ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলতে গেলে দেরি হয়ে যাবে তাই শুনেও না শোনার ভঙ্গিতে চলে যেতে লাগে। ফাউজিয়া একপ্রকার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাকে।

পিছন থেকে ছেলেটা আবার বলে ওঠে, ” চেহারা দেখিয়ে কি আরও কিছু ছেলেকে কুপোকাত করবে নাকি সুন্দরী? অনেকগুলো লাইনে থাকলে বেছে নিও কোনটা বা ভালো সার্ভিস দিবে, তোমার এক্স হাজবেন্ড তো দিতে পারে নি ”
কথাটা শুনে শুভ্রতা হাটা থামিয়ে দেয়। পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা তার অল্প পরিচিত। রাজনীতির সাথে জড়িত, বড় ভাই। একটু ভেবেই মনে করতে পারে এই ছেলেকে সেদিন তার পাশের মেয়ের সাথে দেখেছিল, যে মেয়ে সেদিন ডিভোর্স নিয়ে তাকে কথা শুনিয়েছিল। শুভ্রতা ফাউজিয়ার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যায় ছেলেটার দিকে। একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ছেলেটার। পাশে আরও কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা তাদের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নেয় আর বলে,

” কি সমস্যা?”
” কোন সমস্যাই না মামনি। বোরখায় কিন্তু তোমাকে সে……”
ছেলেটা কথা সম্পন্ন করতে পারলো না। পুরো কথা মুখ থেকে বের হওয়ার আগেই শক্তপোক্ত একটা চড় বসে গেল তার গালে।

” তোর বোনকেও নিশ্চয়ই বোরখায় সে** লাগে তাই না রে হা*রা*ম*জা*দা? এরকম ঢিলেঢালা বোরখা যেখানে শরীরের আকৃতি বোঝা যায় না এটাও তোদের মতো কু*ত্তারবাচ্চার চোখ আটকাতে পারে না! তোর বাবা-মা টাকা খরচ শুধু বইয়ের পিছনেই করেছে তোর মানুষ হওয়ার পিছনে করলে আর এরকম অমানুষ হতে পারতি না।”
শুভ্রতার কথা শুনে রাগে ফুসতে থাকে ছেলেটা। চারপাশে ছেলে-মেয়ে জড়ো হয়ে যায়। কেউ কেউ তো স্যার ম্যামকে ডাকতে যায়। ফাউজিয়া এগিয়ে আসে শুভ্রতার দিকে তাকে ক্লাসে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শুভ্রতা ফাউজিয়ার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।

ছেলেটা বলে, ” তোর মতো না আমার বোন, সংসার ভেঙে এমন উশৃঙখল হয় নি। তুই তো একটা…..”
শুভ্রতা এবারও তাকে কথা শেষ করতে দেয় গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দেয়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি শুভ্রতার দিকে হাত বাড়াতেই শুভ্রতা মেয়েটিকেও একটা চড় লাগিয়ে দেয়।
” লজ্জা করে না তোমার একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের পিছে এভাবে লেগেছো? সেদিন একা বলে শান্তি পাও নি আজ বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে নোংরা কথা বলাচ্ছো?”

” তোর সাহস কি করে হলো আমার গায়ে হাত দেওয়ার!
তাদের দুজননের বন্ধুরা আশেপাশে থেকে এগিয়ে আসে, তারা কয়েকজন মিলে ছেলেটাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে শুভ্রতার গালে চড় বসাতে যাবে ঠিক তখনই ফাউজিয়া ছেলেটাকে ধাক্কা দেয় পিছনের দিকে শুভ্রতা ছেলেটার থুতনিতে মুঠ পাকিয়ে আঘা*ত করলেই জিহ্বার একপাশে একটু কে*টে র*ক্ত বের হতে থাকে। এবার ছেলেটার বন্ধু দুইটা কিছু করতে যাবে ঠিক তখনই ডিপার্টমেন্টের হেড এবং দুজন স্যার এসে উপস্থিত হয়।

ছেলেটার জিহ্বা কে*টে যাওয়ায় স্যাররা বলে তাকে ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়। যাওয়ার সময় ছেলেটা রাগে কটমট করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে ছিল। আঙুল নাড়িয়ে বলছিল, ” দেখে নেব তোকে….” ছেলে আর মেয়েটাকে কয়েকজন মিলে নিয়ে যায়। স্যাররা সিদ্ধান্ত নেন ক্লাস শেষে দুপক্ষকে একসাথে করে কথা বলবেন। শুভ্রতা আর ফাউজিয়া দাঁড়িয়ে আছে। একজন স্যার শুভ্রতার বাবার নম্বর চান। শুভ্রতা সাথে সাথে বলে,

” স্যার আমি তো কোন ভুল করি নি, ওই ছেলেই আমাকে উত্তোক্ত করছিল।”
একজন স্যার বলেন, ” তুমি আমাদের কাছে বলতে, আমরা বিচার করে দিতাম।”
শুভ্রতা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ” স্যার নিজের ক্ষুধা নিজেকেই নিবারণ করতে হয়, অন্যকেউ এসে খাইয়ে দিয়ে যায় না। এদেশে ধর্ষণের বিচার হয় না, ইভ*টিজিংয়ের বিচার হবে! হাসালেন স্যার।”

” শোনো শুভ্রতা তুমি একজন মেয়ে হয়ে কীভাবে একটা ছেলের গায়ে হাত তুলতে পারো? তুমি ভালো ছাত্রী জন্য আমরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেই নি। তোমার বাবার নম্বর দাও আর পরবর্তীতে এসব যেন দ্বিতীয়বার না ঘটে।”
শুভ্রতা সোজাসাপ্টা জবাব দিয়ে দেয়, ” স্যার এরপর যদি কেউ আবার এরকম করে তাহলে আমিও এরকম আবার করব। সবাইকে সতর্ক করে দিবেন যেন আমার সাথে লাগতে না আসে।”

” তুমি কিন্তু এবার অসভ্যতা করছো শুভ্রতা। ”
” কোনরকম অসভ্যতা ও করছে না স্যার। ওই ছেলেটাই শুভ্রতাকে বাজে বাজে কথা বলছিল।”
পাশে থেকে ফাউজিয়া কথা বলে উঠলে, স্যার তাকে থামিয়ে শুভ্রতার বাবার নম্বর নিয়ে তাদের ক্লাসে পাঠিয়ে দেয়।

সাহিল স্যারের সাবজেক্ট পরিক্ষা, তাই সবাই পড়তে ব্যস্ত। ঠিক দশটা পয়তাল্লিশে সাহিল শেখ ক্লাসে ঢুকেন। রোলকল করার পরই সবাইকে বই সামনে রেখে যেতে বলেন। ফাউজিয়া আর শুভ্রতাকে ডাকেন প্রশ্নপত্রগুলো সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। দুজন এসে সাহিল স্যারের হাত থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে সবাইকে দেয়। দুজন একসাথে গিয়ে বসবে ঠিক তখন সাহিল স্যার ফাউজিয়াকে ডাকেন। ফাউজিয়া নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়।

” জি স্যার?”
” আপনি সামনের বেঞ্চে এসে বসুন। আপনার দুজন একসাথে বসবেন না। ”
স্যারের কথা অনুযায়ী ফাউজিয়া নিজের খাতা নিয়ে সামনের বেঞ্চে চলে আসে। সামনের বেঞ্চে বসে পিছনে ফিরে শুভ্রতার দিকে তাকায়। শুভ্রতার মন খারাপ, মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক। এই দুনিয়ার মানুষগুলো যে খুব বিশ্রী। কাউকে আঘা*ত করতে দুইবার ভাবে না।

শুভ্রতা ফাউজিয়ার দিকে তাকালে ফাউজিয়া বলে, ” ভালো করে পরিক্ষা দিবি কিন্তু। ওসব নিয়ে ভাবিস না ক্লাসে পরে ওই ঘটনা নিয়ে কিছু হলে আমি নিজে তোর হয়ে কথা বলব।”
শুভ্রতা মুখে কিছু না বলে মাথা ঝাঁকিয়ে ফাউজিয়াকে সান্ত্বনা দেয় যে সে ঠিক আছে। এমন সময় শুভ্রতার ফোন বেজে ওঠে, ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে নিহানের কল। ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,

” স্যার, আমার বাড়ি থেকে কল এসেছে আমি কি দুই মিনিটের জন্য বাহিরে যেতে পারব?”
সাহিল শেখ অফিসরুমে শুনেছেন শুভ্রতার বিষয়টা। তিনি মনে মনে শুভ্রতার পক্ষই নিয়েছেন। প্রতিটা মেয়েকে নিজের সমস্যার সমাধান করার সাহস থাকা উচিৎ। তিনি শুভ্রতার বিষয়টা না জানলে হয়তো এখন ক্লাস থেকে বের হতে দিতেন না। যেহেতু তিনি সবটা শুনেছেন তাই তিনি শুভ্রতাকে সম্মতি জানান। শুভ্রতা ফোন নিয়ে ক্লাসের বাহিরে চলে আসে।

” হ্যালো।”
” কোথায় আছিস তুই?”
নিহান অন্য প্রসঙ্গে না গিয়ে সোজা জানতে চায় শুভ্রতা কোথায় আছে। শুভ্রতা মিনমিনিয়ে বলে, ” আমি ক্লাসে ছিলাম, পরিক্ষা শুরু হবে।”
” শোন, তোর কোন স্যার কাকাকে কল দিয়েছিল। কাকা আমাকে কল করে জানালো, উনি অফিসে ব্যস্ত। আমি আসছি, তুই একদম কোনকিছুতে ভয় পাবি না। আমি আধাঘণ্টার মধ্যে চলে আসছি। তুই ভালো করে পরিক্ষাটা দে, ঠিক আছে?”
” আপনি কেন আসবেন? বাবা আসলেই হতো।”

” এসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।”
” আপনি এসে প্লিজ কোন ঝামেলা করবেন না। ”
” ঠিক আছে, এখন যা পরিক্ষা দে।”
” বাইক দ্রুত চালিয়ে আসার দরকার নেই ধীরেই আসুন।”
” ঠিক আছে।”

নিহান কল কেটে দিলে শুভ্রতা ক্লাসে চলে যায়। শুভ্রতা ক্লাসে এসে লেখা শুরু করে দেয়। সবাই অলরেডি লেখা শুরু করে দিয়েছে। শুভ্রতা প্রশ্নপত্র দেখে, সবই সে পারে কিন্তু কতটুকু লিখতে পারবে কে জানে! চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখে লেখা শুরু করে।

প্রায় চল্লিশ মিনিট পর সবার পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়। শুভ্রতা সবার পরে লেখা শুরু করলেও সবার আগেই খাতা জমা দিয়ে দেয়। নিজের জায়গায় বসে বসে আঙুল দিয়ে নখ ভাঙছে, দাত দিয়ে কাটছে। এ অভ্যাস শুভ্রতার নেই কিন্তু আজ সে এসব করছে। একে তো পরিক্ষা ছিল নতুন স্যারের, সকাল সকাল ওরকম একটা ঘটনা, সহ্য করে ক্লাসে চলে আসলেই হয়তো ভালো হতো, আবার নিহান আসছে এসব চিন্তায় কপাল দিয়ে তার ঘাম ঝড়ছে।
সাহিল শেখ সবার খাতা নিয়ে রুম থেকে চলে যাবেন ঠিক তখনই কিছু একটা মনে করে শুভ্রতার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। শুভ্রতা সেটাও খেয়াল করে নি তার মন অন্যদিকে।

” আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?” সাহিল শেখের কথায় উনার দিকে তাকায়। সাথে সাথে উঠেও দাঁড়ায়।
” জি স্যার! কিছু বললেন?”
” আপনি কি কোন বিষয়ে ভয় পাচ্ছেন?”
” এমন কেন মনে হলো?”
” আপনাকে যে কেউ দেখেই বুঝবে। শুনুন আপনি একদম ঠিক কাজ করেছেন। আপনার জায়গায় আপনি ঠিক মানে সব ঠিক। ”

” না মানে স্যার আমি ওরকমটা করতে চাইনি কিন্তু ওদের কথায় খুব রাগ হয়ে গিয়েছিল তার জন্য……”
” চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হবে।”
” মিস ফাউজিয়া…”
” জি স্যার!”
ফাউজিয়া এগিয়ে আসে দুজনের কাছে। ফাউজিয়া নিজেও চিন্তায় আছে কি হবে সেটা নিয়ে।

” আপনাদের হয়তো কিছক্ষণের মধ্যেই ডাকা হবে। একদম ভয় পাবেন না। আমি বলছি যা করেছেন ঠিক করেছেন। এসব নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। আর পরিক্ষা কেমন হলো?”
” জি স্যার ভালো হয়েছে।”
” আর শুভ্রতা, আপনার কেমন হলো?”
” জি স্যার ভালো।”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৯

আরও কিছু কথা বলে সাহিল শেখ ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যান। ফাউজিয়া গিয়ে শুভ্রতার পাশে বসে৷ শুভ্রতা এখনো চিন্তিত। নিহানের মুখোমুখি হবেই বা কীভাবে, তার আগেই আরেকটা সমস্যা বাধিয়ে বসলো। নিহান কি এগুলো স্বাভাবিকভাবে নিবে নাকি সেও যদি তার দোষ দেয় বাড়িতে তো তাকে আরও বেশি বকাবকি করবে সবাই। শুভ্রতা চিন্তা করতে থাকে কি হবে কিছুক্ষণ পর, কেন সে রাগের মাথায় ওসব করতে গেল!

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১১