শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১১

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১১
তানিয়া মাহি

” শুভ্রতা, উঁচুলম্বা ফর্সা করে সুন্দর দেখতে একটা ছেলে তোমাকে ডাকছে, কি যেন নাম বলল নিহান হয়তো। বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছেন উনি।”
শুভ্রতা আর ফাউজিয়া নিজেদের বেঞ্চেই বসেছিল। ক্লাসের একটা মেয়ে বাহিরে থেকে তার কাছে এসে কথাটা বলল। শুভ্রতা ফাউজিয়ার দিকে তাকালো।

” দোস্ত তুই চল আমার সাথে, আমি একা যাব না।”
” ভাইয়া নিশ্চয়ই বাঘ ভাল্লুক না যে তোকে একা পেয়ে খেয়ে ফেলবে। তুই আগে গিয়ে উনার সাথে দেখা কর পরে স্যাররা ডাকলে আমি যাব তোর সাথে।”
” এখনই চল না প্লিজ।”
” আর একটাও কথা না তুই যা প্লিজ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুভ্রতা ধীরগতিতে ক্লাস থেকে বের হয়। এদিক ওদিক তাকাতেই হাতের ডান দিকে তাকাতেই নিহানকে দেখতে পায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। কালো শার্টে তাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। শুভ্রতা এবার আশেপাশে একবার তাকিয়ে নেয়। নিহানের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো কয়েকটা মেয়ে গল্পের মাঝেমাঝে নিহানের দিকে তাকাচ্ছে আর আবার গল্পে মন দিচ্ছে। শুভ্রতা কীভাবে গিয়ে সামনে দাঁড়াবে সেটা ভাবছে।

নিহানই হাতের বামদিকে ক্লাসরুমের দরজার দিকে তাকালে শুভ্রতাকে দেখতে পায়। শুভ্রতাকে দেখার সাথে সাথে নিহানের বা’পাশটা যেন থমকে যায়। এই মেয়েটা তাকে কাঁদেয়েছিল, তাকে কাঁদিয়ে অন্যকারো হয়েছিল! শুভ্রতাকে এগিয়ে আসতে দেখে বুকটা কেমন ব্যথা করা শুরু করে তার। বুকে হাত দিয়ে ঘষা দিতে থাকে। গোটা চার বছর পর প্রিয় মানুষের সাথে দেখা। চার বছর আগে শুভ্রতা অনেকটাই ছোট ছিল আর ছোট ছিল বলেই হয়তো ওরকম একটা ভুল করতে পেরেছিল।

শুভ্রতা এসে নিহানের পাশে দাঁড়ায়। শুভ্রতার উচ্চতা মোটামুটি ভালো হওয়া সত্ত্বেও নিহানের পাশে তাকে পিচ্চি পিচ্চি লাগে। সময় সময় তো মাথা উঁচু করেও দেখার প্রয়োজন হয়।
শুভ্রতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ক্লাসের বাহিরে এসেই শুধু একবার তাকিয়েছিল নিহানের দিকে তারপর আর দেখেনি। নিহান কিছু মুহুর্ত এক পলকে দেখে নেয় শুভ্রতাকে তারপর নরমস্বরে জিজ্ঞেস করে,

” কি হয়েছিল শুভ্রা?”
শুভ্রতাকে যে কেউ শুভ্রা বলে ডাকে সেটাও সে ভুলে গিয়েছিল। এই মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অপ*রাধী মনে হচ্ছে শুভ্রতার।
” কি হলো কিছু বলছিস না যে?”

নিহানের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে শুভ্রতা। এতক্ষণ কিছু একটা ভাবছিল। নিহানের দিকে তাকাতেই সে বুঝতে পারে তার সমস্ত শরীর কাঁপছে বিশেষ করে পা। নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন ব্যাপার লাগছে তার কাছে। নিজের শরীরের ভার নিজেই নিতে পারছে না। অতঃপর দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে দাঁড়ায় সে, মাথা নিচু করেই বলে,
” এখানে সবাই তাকিয়ে আছে নিহান ভাই।”
নিহান চারপাশটা একবার দেখে নেয়। সত্যিই কয়েকজন তাদেরকে দেখছে।

” বসবি কোথাও?”
” পাশের ক্লাসরুমটায় বসার জায়গা আছে। ”
” তাহলে চল।”
নিহানের কথামতো পাশের রুমে গিয়ে দুজন বসে। ডিম্বাকৃতির বড় একটা টেবিল আছে ক্লাসে আর সেটার চারপাশে চেয়ার। দুজন চেয়ার টেনে বসে সেখানে।
নিহান বলে, ” এবার বল কি হয়েছিল, প্রথম থেকে বলা শুরু করবি।”

শুভ্রতা মাথা একপাশে নিচু করে সম্মতি জানিয়ে বলা শুরু করে। শুভ্রতা মাথানিচু করে ঘটনা বলছে আর নিহান এক পলকে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা হয়তো অনেকরাত ঘুমায় না চোখের নিচে হালকা কালো দাগ পড়েছে, শুকিয়েও গিয়েছে তবে আগের চেয়ে বেশি সুন্দরও হয়ে গেছে।

শুভ্রতার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে নিহান উচ্চস্বরে হেসে ফেলে। শুভ্রতা অবাক চোখে নিহানের দিকে তাকায়। একে তো সে সকাল থেকে চিন্তায় আছে এই ঘটনা নিয়ে আর নিহান কি না হাসছে! ভারি অদ্ভুত বিষয়। শুভ্রতা ভ্রু কুচকে নিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। একসময় শুভ্রতা খেয়াল করে নিহানকে সুন্দর লাগছে, অত্যাধিক সুন্দর। আগে কখনো তার চোখে নিহানকে সুন্দর লাগে নি, হয়তো ভালো করে খেয়ালই করে নি সে। হাসতে হাসতে নিহান শুভ্রতার দিকে তাকালে বুঝতে পারে শুভ্রতা তাকে দেখছিল। দুজনের চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় শুভ্রতা অপ্রস্তুত হয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। নিহান তা বুঝতে পেরে অপ্রস্তুত ভাব কাটিয়ে দেওয়ার জন্য বলে,

” ছেলে হয়ে তোর কাছে মা*র খেল?”
” আমি নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারি নিহান ভাই।”
” ক্যারাটে শিখেছিস?”
” হ্যাঁ। ”

” তাহলে একদিন আমার কাছে আত্মরক্ষার ট্রেইনিং নিস। কেউ সে** কেন স উচ্চারণ করলেই তার দাত ভেঙে দিবি। ”
” সেটা আমি বুঝে নেব আপনার বলতে হবে না। এখন আপনি শুধু তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমি বাসায় যাব ভালো লাগছে না।”
” বাসায় কেন? তোকে তো আমি আজও তোর বান্ধবীর বাসায় রেখে যাব। আমিও দেখতে চাই তুই কতদিন বাহিরে কাটাতে পারিস।”

” না আমি বাসায় যাব। আপনার নিয়ে যেতে হবে না এখানকার সমস্যা মিটিয়ে নেন তাড়াতাড়ি, তারপর আমিই চলে যেতে পারব।”
” তুই গতকাল বান্ধবীর বাড়ি কেন ছিলি?”
নিহানের প্রশ্নটা বেশ গম্ভীর শোনায় শুভ্রতার কাছে। গলাটা মুহুর্তের মধ্যে অন্যরকম শুনে নিহানের দিকে তাকায় শুভ্রতা। নিহানের মুখটাও এত অল্প সময়ে গম্ভীর হয়ে গিয়েছে। শুভ্রতা যে নিহানের সামনে যেন না আসতে হয় সেই ভেবে ওখানে ছিল এটা তো বলতে পারবে না। পড়ার জন্য ছিল এটা তো বলেই দিয়েছিল সে তাহলে আবার প্রশ্ন কেন করল? তাহলে কি তার কথা নিহান বিশ্বাস করে নি!

” কি হলো কিছু বলছিস না কেন?”
” না মানে আজ তো পরিক্ষা ছিল তাই দুজন একসাথে পড়ার জন্য…”
” আমাকে বাচ্চা ছেলে পেয়েছিস? তোর থেকে গুণে গুণে নয় বছরের বড় আমি। আমার চাকরি আর ট্রেইনিংয়ের এই কয়েক বছরে যত মানুষের সাথে মিশতে হয়েছে তার অর্ধেকও তুই দেখিস নি। যতগুলো জায়গায় যেতে হয়েছে তার নামও শুনিস নি কখনো আর আমাকে বুঝাচ্ছিস যে পড়ার জন্য বান্ধবীর বাড়ি ছিলি!”

” হ্যাঁ পড়ার জন্যই ছিলাম।”
” আমার সামনে আসবি না? দূরে দূরে থাকবি? কতদিন আমি সেটাই দেখতে চাই। আমার রুমে থাকার ব্যবস্থা করছি ওয়েট কর।”
নিহান কথাগুলো বলেই উঠে দাঁড়ালো। দ্রুতপায়ে রুম থেকে বের হচ্ছে আর শুভ্রতা সেদিকেই তাকিয়ে আছে। নিহান কি বলল সেটা ঠিক স্পষ্ট বুঝতে সক্ষম হয় নি। অতিদ্রুত কথাটা বলে উঠে দাঁড়িয়েছে সে। নিহান দরজার ওখানে গিয়ে ” তাড়াতাড়ি অফিসরুমে আয়” কথাটা বলে চলে গেল। শুভ্রতাও আর দেরি না করে ক্লাসে চলে গেল ফাউজিয়াকে ডাকতে।

” আমরা তোমাকে ভালো স্টুডেন্ট হিসেবেই চিনি। তুমি এমন একটা কাজ করবে সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি শুভ্রতা। কে তোমাকে কি বলল না বলল সেটা মনে রেখে আমাদের কাউকে বলবে আমরা বিচার করব। তুমি কেন ওই ছেলেকে চড় মারতে গেলে? শুধু চড় না এমনভাবে মেরেছো দ্যাখো ছেলেটার জিহ্বা কে*টে গেছে। এখন যে তোমার এই কাজের কাছে ওর অপরা*ধ কিছুই না।”

ডিপার্টমেন্টের রবিউল স্যারের কথাটা খুব একটা নিরপেক্ষ শোনালো না নিহানের কাছে। সে চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা রেখে মাথা নিচু করে কথাগুলো শুনছিল। তার ঠিক পিছনে শুভ্রতা আর ফাউজিয়া দাঁড়িয়ে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। তারা হয়তো অপেক্ষা করছে নিহানের কিছু বলার জন্য। নিহানের সামনের দিকে সকালের ছেলেটা বসে আছে।

তার জিহ্বা কেটে যাওয়ায় সে ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না। ছেলেটার( সোহেলের) ডানপাশে দুজন বসে আছে, দেখে মনে হচ্ছে শহরের বড় কোন পদের কেউ হতে পারে। শুভ্রতা তখন বলেছিল উক্ত ছেলেটা নাকি রাজনীতির সাথে জড়িত। ছেলেটাকে দেখে নিহানের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তবুও অনেক কষ্টে সে নিজেকে ঠিক রেখেছে।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে নিহান বলে, ” আপনাদের বললে আপনারা কি ব্যবস্থা নিতেন স্যার?”

নিহানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে রবিউল স্যার আবার বলে ওঠেন, ” আমরা শিক্ষকরা মিলে যেকোন একটা শা*স্তি দিতাম, প্রয়োজনে শুভ্রতার কাছে মাফ চেয়ে নিতে বলতাম।”
নিহান এবার মাথা ঘুরিয়ে হালকা পিছনের দিকে তাকিয়ে বলে, ” শুভ্রতা সামনের দিকে এসো।”
নিহান কি করতে চাইছে কেউ তা বুঝতে পারছে না এমনকি শুভ্রতাও না। সে নিহানের কথামতো দুই একপা ফেলে নিহানের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিহান এবার রবিউল স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,

” স্যার এই ছেলেকে আপনি কি শা*স্তি দিতেন? চড় থাপ্পড় আর তারপর মাফ চাইতে বলতেন ঝামেলা মিটমাট করে দিতেন তাই তো? এটা করাই স্বাভাবিক।”
” হ্যাঁ তাই করতাম৷ ডিপার্টমেন্টের সবার সামনে মাফ চাইতে বলতাম কিন্তু শুভ্রতা নিজে ছেলেটার গায়ে হাত তুলে ভুল করেছে। মেয়েমানুষের এসব মানায় না।”

” আপনারা যে শাসন করতেন সেটা শুভ্রা নিজ দায়িত্বে সেরে নিয়েছে এবার শুধু মাফ চাওয়া বাকি। মাফ চাইতে বলুন।”
নিহান কথাটা বলামাত্র সবাই তার দিকে তাকায়। এমন কথা যে সে বলবে এটা কেউ আশা করে নি৷ সোহেলের ডানপাশে থাকা লোকটা জোরালো কণ্ঠে বলে ওঠে,

” আমার ছেলে যা করেছে আমি তাকে শাসন করব, ওই মেয়ে কে আমার ছেলের গায়ে হাত তোলার? আর আপনাকে ডাকা হয়েছে মীমাংসা করার জন্য অথচ আপনি কীনা ঝামেলা বাড়াচ্ছেন? সোহেল কোনভাবেই মাফ চাইবে না, এই মেয়েকে মাফ চাইতে হবে।”

নিহান এবার বুঝতে পারে এটা হয়তো ছেলেটার বাবা। উনার কথার পর অনেকেই অনেক কথা বলে। পরিবেশটা বেশ অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। নিহান যদি সুতো টেনে না ধরে তাহলে সবকিছু হার হাতের বাহিরে চলে যাবে।
” শুভ্রতা, তুমি তোমার কাজের জন্য মাফ চেয়ে নাও সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

ডিপার্টমেন্টে হেড কিছু বলবেন ঠিক তখনই তার বাসা থেকে কল আসে। তিনি মিটিংয়ের সবার কাছে মাফ চান কারণ তিনি এখানে আর থাকতে পারবেন না। দুই পক্ষকেই বলেন, ” আপনারা প্লিজ ঝামেলা করবেন না নিজেদের ঝামেলা প্লিজ মিটিয়ে নিন। আমি নিজেই থাকতাম, আমার মা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে তাই আমাকে জরুরিভাবে যেতে হচ্ছে।”
উনি চলে যাওয়া মাত্রই নিহান বলে, ” যে ইভ*টিজিং করেছে সে ক্ষমা চাইবে আর যে মে*রেছে সে ক্ষতিপূরণ দেবে, সোজা হিসেব।”

রুমে বর্তমান আছে নিহান, শুভ্রতা, ফাউজিয়া, টিজ করা ছেলে, তার বাবা, একটা নেতা, আর দুটো স্যার। নিহান সবার আচরণ আর কথাবার্তায় বুঝে গিয়েছে সামনের সবগুলো এক দল হয়েছে। এদের সাথে সহজে হয়তো পেরে ওঠা যাবে না তবে আইনকে অ*স্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে খুব সহজেই মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া যাবে।

রুমের সবাই যার যার ইচ্ছেমতো কথা বলে যাচ্ছে। নিহান চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে। শেষে উপস্থিত নেতা বললেন, ” কি যেন নাম তোমার মা? তোমার কিছু করতে হবে না তুমি শুধু এখান থেকে বেরিয়ে সবার সামনে সোহেলকে স্যরি বলবে। শুধু মুখে মুখে বললেই হবে। এরপর যদি আবার এরকম কাজ করে তাহলে এই যে আমার কার্ড রাখো আমাকে কল দিয়ে বলবে।”

শুভ্রতা নিহানের দিকে তাকায়, নিহান কিছু একটা ইশারা করতেই শুভ্রতা বলে, ” ও আমাকে অশ্লীল অশ্লীল কথা বলেছে। এটা কথাতেই সীমাবদ্ধ ছিল আমি মানছি কিন্তু এটা তো অন্য পর্যায়ে চলে যেতে পারতো। আমাকে আ*হত করতে পারতো বা ধরুন আমাকে মে*রেই ফেলল তখন তার কি শা*স্তি হতো? আমি জানি কোন শা*স্তিই হতো না। আমাকে টিজ করা হয়েছে তার প্রতিবাদ করেছি জন্য আমারই মাফ চাইতে হবে? আপনার মেয়েকে কেউ টিজ করলে কি করতেন? আপনার মেয়ের জায়গায় আমাকে একবার কল্পনা করুন স্যার। কল্পনা করুন আপনার মেয়ের বডিশেপ, অতীত নিয়ে নোংরা কথা বলল আপনার মেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে চড় বসিয়ে দিল। ছেলের সব দোষ মাফ করে মেয়ে কেন চড়টা দিল এটার পিছে পড়তেন? ”

শুভ্রতা কথা শেষ করে ফাউজিয়ার দিকে তাকাতেই ফাউজিয়া রুমের দরজার ওখানে এগিয়ে গিয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে আসে। মেয়েটা ভেতরে প্রবেশ করলে লোকটার ভ্রু কুচকে যায়। শুভ্রতা মেয়েটাকে তার পাশে দাঁড় করিয়ে তাকে প্রশ্ন করে, ” আচ্ছা আয়রা, তোমাকে নাম ধরেই ডাকলাম কারণ আমি তোমার সিনিয়র।”
” সমস্যা নেই আপু, বলো।”

” আমার মেয়েকে কেন এখানে ডাকা হয়েছে, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না এবার?”
মি. সাজ্জাদের কথায় নিহান বলে ওঠে, ” এখানে ইভটিজিং হবে না সমস্যা নেই স্যার।”
শুভ্রতা এবার বলে, ” আয়রা তোমাকে যদি ইভটিজিং করা হয় আর তুমি যদি নিজেকে রক্ষা করার উপায় জানো, তোমাকে নোংরা নোংরা কথা বলা হয় তাহলে তুমি কি করবে?”

আয়রা তার বাবার দিকে একবার তাকিয়ে পরে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে, ” তুমি যা করেছো তার চেয়েও বেশি কিছু হয়তো এতক্ষণে এই কাজ আমার সাথে হলে আমি হাত পায়ের কিছু একটা ভেঙে দিতাম আর আমার বাবা তাকে জে*লে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো তাই না বাবা?”

সাজ্জাদ সাহেবের মুখে আর কোন কথা নেই। শুধুমাত্র দলের ছেলে বলে এখানে তার জন্য এসেছিল কিন্তু মেয়ে এসে পরিবেশটা পাল্টে দেবে সেটা মাথায় ছিল না তার। পরিবেশ নিরব দেখে নিহান বলে ওঠে,
” এই যে তুমি, সবার সামনে যদি এখন মাফ না চাও তাহলে দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী শা*স্তিস্বরূপ একবছরের কারা*দণ্ড আর নগদ জরিমানা কাধে এসে পড়বে৷ সিদ্ধান্ত নাও তুমি কি করবে!”

সোহেল তার বাবার দিকে তাকায়, ওখানে সবাই একে অপরের দিকে তাকালে, কথা বলেও কোন লাভ হয় না। অতঃপর বাহিরে নয় রুমেই মাফ চাওয়ার কথা বলে সবাই।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১০

ঝামেলা মিটে গেলে নিহান দাঁড়িয়ে সাজ্জাদ সাহেবের দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় আর বলে, ” আজকের ঘটনা ভুলে যান চলুন পরিচিত হওয়া যাক আমি নিহান, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে আছি তিন মাস পর মেজর হিসেবে জয়েন করব ইন শা আল্লাহ। ”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১২