শেষটা সুন্দর পর্ব ১৬

শেষটা সুন্দর পর্ব ১৬
জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা

ভার্সিটির বাইরে রাবীরের গাড়ি দেখে আরেকদফা অবাক হয় মেহুল। লোকটা আর একদিনে তাকে কত সারপ্রাইজ দিবে কে জানে। রিতা তখন মজা করে বলে,
‘একটু আগে ফুল আর এখন স্বয়ং নেতা সাহেব’ই চলে এসেছেন। যান নেত্রী সাহেবা। আমি তাহলে আসছি।’
‘এই তুইও চল। তোকে নামিয়ে দিতে বলব।’
‘কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার কোনো শখ আমার নেই, বুঝতে পেরেছেন বান্ধবী? চললাম।’

রিতা তার পথে হাঁটা ধরল। মেহুল ধীর পায়ে রাবীরের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সে গাড়ির কাছে যেতেই রাবীর গাড়ির দরজাটা খুলে দেয়। সে ভেতরে প্রবেশ করে। রাবীর গাড়ি স্টার্ট দেয়। মেহুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
‘আজ এত সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছে হলো যে?’
রাবীর এক পলক তার দিকে চেয়ে বলল,
‘কেন, আপনি খুশি হোন নি?’
মেহুল ভাব নিয়ে বলল,
‘না, তা না। আসলে আপনি তো আবার খুব ব্যস্ত মানুষ। আমার জন্য আবার আপনার কাজের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘নিজের ওয়াইফকে খুশি করার জন্য এমন একটু আধটু কাজের ক্ষতি করা’ই যায়।’
‘আচ্ছা, তাই!’
রাবীর তখন হঠাৎ তার হাতের দিকে খেয়াল করে। জিজ্ঞেস করে,
‘বেলি ফুল কে দিল?’
মেহুল ভ্রু কুঁচকে রাবীরের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘বেলি ফুল কে দিয়েছে আপনি জানেন না?’
রাবীর বলে,
‘না, আমি কী করে জানব?’
মেহুল এবার নড়ে চড়ে বসে। চিন্তিত সুরে বলে,
‘এই ফুল আপনি দেননি?’
রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,
‘না।’
‘ওমা, তাহলে কে দিল?’

‘আশ্চর্য, আপনি ফুল হাতে পরে বসে আছেন অথচ আপনি জানেনই না এটা কে দিয়েছে? তাহলে কোথায় পেয়েছেন এটা?’
‘আরে একটা ছেলে আমাকে এটা দিয়ে বলেছে কেউ একজন নাকি উনাকে ফুলটা ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের মেহুলকে দেওয়ার জন্য। উনিও তাই করেছেন। কিন্তু, ঐ লোকটাকে উনি চিনেন না। আর আমি তো উল্টো ভেবেছি এটা আপনি। হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছেন।’
রাবীর অবিলম্বেই একটানে গাজরাটা মেহুলের হাত থেকে খুলে ফেলল। সেটা বাইরে ছুঁড়ে মেরে বলল,
‘কেউ কিছু দিলেই নিতে হয় না। আর কখনো এমন কিছু করবেন না।’

মেহুল মুখ কালো করে বলল,
‘আমি জানতাম নাকি, এটা আপনি না অন্যকেউ।’
‘এখন তো জেনেছেন। আর কোনোকিছু ভাবার আগে আমার সাথে একবার কথা বলে সিউর হয়ে নিবেন। তাহলেই আর এত সমস্যায় পড়তে হবে না।’
মেহুল চুপ করে বসে থাকে। মনটাই খারাপ হয়ে যায় তার। কোথায় ভেবেছিল, রাবীর তাকে ভালোবেসে গাজরা কিনে দিয়েছে। কত খুশিই না হয়েছিল। ধুর, এখন উল্টো তার আরো টেনশন বেড়েছে। ঐ অচেনা ব্যক্তিটা আবার কে?

হঠাৎ গাড়ি থামতেই মেহুল এদিক ওদিক তাকায়। তারা তো এখনো পৌঁছায়নি। তাহলে গাড়ি থামল কেন। রাবীর গাড়ি থেকে নামল। মেহুল তার দিকে ফিরতেই দেখল, সে একটা ফুলের দোকানে ঢুকছে। মেহুল অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। লোকটা আসলে কী করতে চাইছে। একটু পর রাবীর অনেকগুলো ফুল সমেত বেশ কিছু গাজরা নিয়ে গাড়িতে ঢুকে। মেহুল তা দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে। রাবীর একটা গাজরা নিয়ে খুব যত্ন করে মেহুলের হাতে পরিয়ে দেয়। বাকি ফুলগুলো মেহুলের কোলের উপর রেখে মৃদু হেসে বলে,

‘আমি ব্যতিত অন্য কারোর দেওয়া ফুল ছোঁয়ার অধিকারও আপনার নেই।’
তারপর সে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়। মেহুল বিস্ময় নিয়ে তার হাতের গাজরাটাকে দেখছে। লোকটা অদ্ভুত সব কাজ করে। বারবার তাকে চমকে দেয়। এত মায়া এই মানুষটার মাঝে! এত নিবিড় ভাবে আদৌ কেউ কাউকে আগলে রাখতে পারে?

রাবীর আর মেহুল একসঙ্গেই ডাইনিং এ খেয়ে রুমে যায়। রাবীর বিছানায় বসে। মেহুল ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রাবীর বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে কী যেন ভাবছে। মেহুল আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শরীরের লোশন মাখতে মাখতে বলে,
‘আপনি কি ঐ গাজরাটা নিয়ে চিন্তিত?’
রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,
‘চিন্তা না করে কি কোনো উপায় আছে? কে দিয়েছে এটা আপনাকে সেটাও জানেন না। আচ্ছা, যে ছেলেটা এটা এনে দিয়েছে তাকে একবার আমার সামনে আনতে পারবেন?’

মেহুল রাবীরের সামনে গিয়ে বসে। বলে,
‘আপনি অযথাই এত চিন্তা করছেন। এটা নিশ্চয়ই আমার কোনো ফ্রেন্ডের কাজ। আমার সাথে মজা করার জন্য হয়তো এসব করেছে।’
রাবীরের তাও চিন্তা কমে না। সেসময় মেহুলের চট করে আবার সেই চিরকুটের কথা মনে পড়ে যায়। মনে তখনই প্রশ্ন জাগে, “আচ্ছা, এই চিরকুটটা রাবীর দিয়েছে তো, নাকি এটাও আবার অন্য কারোর দেওয়া?”
সে সিউর হওয়ার জন্য রাবীরকে জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা, আপনি কোনোদিন আমাকে কোনো চিরকুট দিয়েছেন?’

‘চিরকুট? কীসের চিরকুট?’
রাবীর ভ্রু কুঁচকে উল্টো তাকে প্রশ্ন করে। মেহুল বলে,
‘দাঁড়ান, দেখাচ্ছি।’
সে গিয়ে তার ড্রয়ার ঘেটে সেই হলুদ রঙের চিরকুটটা বের করে আনে। সেটা নিয়ে রাবীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘এটা আপনি দিয়েছেন না?’
রাবীর চিরকুটটা হাতে নেয়। চিরকুটের লেখাটা পড়ে। মেহুলের দিকে চেয়ে বলে,
‘এটা কে দিয়েছে?’
মেহুল এবারও অবাক হয়ে বলে,

‘এটাও আপনি দেননি?’
‘না, এসব জিনিসে আমি অভ্যস্ত না। এটা কে দিয়েছে আপনাকে?’
মেহুল রাবীরের পাশে বসে। বোকা বোকা স্বরে বলে,
‘আমি জানি না, একদিন রিতা আর আমি পার্কে গিয়েছিলাম। সেদিনই একটা লোক এসে এটা দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, কেউ একজন নাকি এটা আমাকে দিতে বলেছে। লোকটাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি সেখান থেকে চলে যান। আমি তখনও ভেবেছিলাম এটা বোধ হয় আপনি।’
রাবীর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। সে কী বলবে বুঝতে পারছে না। বিরক্ত হয়ে বলে,

‘আর এসব আপনি আজ আমাকে বলছেন? এতদিন কেন বলেননি? একবার চিরকুট, তো একবার গাজরা, কে এসব দিচ্ছে সেই ব্যাপারে আপনি কিচ্ছুই জানেন না; ব্যাপারটা কী মানানসই? অথচ এসব ব্যাপারে আমাকেও আপনি কিছু বলেননি।’
‘আমি এত কিছু ভাবেনি তো। আমি বরং খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, সবকিছু আপনিই করছেন।’
রাবীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মাথার মধ্যে আরো এক দুশ্চিন্তার বীজ বোপন হলো। এমনিতেও শান্তি নেই, এখন আবার নতুন এক অশান্তি এসে জুটেছে। মেহুলের বিষন্ন মুখ দেখে রাবীর বলল,

‘হয়েছে আর মন খারাপ করতে হবে না। আমি ঐ লোকটাকে খুঁজে বের করব। আর ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে আগ বাড়িয়ে আগেই সবকিছু ভেবে ফেলবেন না। আগে আমার সাথে কথা বলে সিউর হয়ে নিবেন, বুঝতে পেরেছেন?’
‘জি।’
রাবীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেহুলকে খেয়াল করে বলে,
‘গাল ফুলানো কমাবেন, নাকি অন্য ব্যবস্থা করতে হবে?’
মেহুলের ভোলাভালা রূপ নিমিষেই উগ্র হয়ে উঠল। সে চেতে গিয়ে বলল,

‘এই যে মি. আমাকে একদম হুমকি দেবেন না। আমি আপনাকে মোটেও ভয় পাই না, বুঝেছেন?’
‘আচ্ছা, তাই?’
রাবীর তার দিকে কিছুটা ঝুঁকতেই মেহুল পিছিয়ে যায়। কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করে,
‘সমস্যা কী?’
রাবীর তপ্ত সুরে বলে,

‘অনেক সমস্যা। সুন্দরী বউ থাকলে স্বামীদের আর সমস্যার শেষ থাকে না। সেই কষ্ট আর আপনি কী বুঝবেন।’
মেহুল ঠোঁট চেপে হাসে। মনে তার খুশিতে লাফায়। তবে মুখে সেটা প্রকাশ করে না। ভাব নিয়ে বলে,
‘আজকাল সুন্দরী হয়েও জ্বালা দেখছি। মানুষের নজরের জ্বালায় বাঁচা যায় না।’
‘অন্যসব সুন্দরীর কথা বলতে পারছি না। তবে, আমার সুন্দরীর উপর অন্য কারোর নজর আমি মোটেও বরদাস্ত করব না। প্রয়োজন পড়লে সেই নজরের দৃষ্টিক্ষমতা কেড়ে নিব, যেন দ্বিতীয়বার আর আমার সুন্দরীর দিকে আর চোখ তুলে তাকাতে না পারে।’

শেষটা সুন্দর পর্ব ১৫

রাবীরের চোখ মুখ দেখে মেহুল শুকনো মুখে বলে,
‘আপনি এভাবে কথা বললে আমার ভয় করে।’
রাবীর তখন বাঁকা হেসে বলে,
‘মাঝে মাঝে একটু ভয় পাওয়াও ভালো।’

শেষটা সুন্দর পর্ব ১৭