শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৯

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৯
লাবণ্য ইয়াসমিন

আরাফাত লিস্ট চেক করে কোনো ক্লু পেলো না। হৈমি নামে একজন যাত্রীর নামদেখে লিষ্ট পাঠানো হয়েছে। আরাফাত নিরাশ হয়ে মাথায় হাত রেখে বসে পড়লো। মন মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে। মেয়েটা এভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক বছরের অধিক সময় ধরে। কিন্তু কেনো এই লুকোচুরি? রোহানের সঙ্গে বিয়ের জন্য, নাকি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কোনটা? রাজীব অফিসের কাজে ব‍্যস্ত সময় পার করছে। দুদিন হচ্ছে রোহানের খোঁজ নেই। চয়নিকার সঙ্গে সেদিনের পর থেকে ওর যোগাযোগ বা কথা হয়নি। মির্জা বাড়ির ডাইনিং রুমে বসে থেকে রুনির সঙ্গে কথাবার্তা বলে ফিরে গেছে। চয়নিকা রুম থেকে বের হয়নি। হবেই বা কেনো ভাইয়ের মতিগতি সুবিধার লাগেনি। সেদিনের পর থেকে রনিকে চয়নিকা চোখ চোখে রাখে। রাতে আরাফাত হাসপাতালের জন্য বেরিয়েছিল হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো। ওর ইচ্ছে ছিল না ফোন ধরার তবুও ধরলো। ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,

ভাইয়া আমি হৈমি। একটু দেখা করবা?
আরাফাত বাক‍্যশূন‍্য হয়ে গেলো। এতোদিন পরে হৈমন্তী ফোন করেছে কিন্তু বাড়িতে না এসে কোথায় আছে মেয়েটা? বাংলাদেশ ফিরে এসেছে? কথাটা ভেবেই ও কাপাকাপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
> তুই কোথায় আছিস? আর এতো দিন কোথায় ছিলি? জানিস কতো টেনশনে ছিলাম? ঠিকানা বল দ্রুত।
আরাফাত এক সঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করে থামলো। হৈমন্তী উত্তরে শুধু নিজের ঠিকানা দিয়ে চুপচাপ ফোন রেখে দিলো। আরাফাত সময় নষ্ট না করে হৈমন্তীর বলা ঠিকানাতে চলে আসলো। ওর বলা বাড়ির সামনে গিয়ে কলিংবের বাজাতেই দরজা খুঁলে গেলো। এতদিন পরে কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখে আরাফাত স্তম্ভিত হয়ে গেছে। হৈমন্তী অপেক্ষা করেনি ভাইয়ের বুকে হামলে পড়ে কেঁদে ফেলল। আরাফাত ওর মাথায় হাত রেখে নিজেকে সামলে নিয়ে ছলছল চোখে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

> এসবের মানে কি হৈমি? বাড়িতে না গিয়ে এখানে কেনো? কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। কি হচ্ছে বলবি?
হৈমন্তী কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আরাফাতকে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। তারপর চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল,
> যোগাযোগ কিভাবে করতাম ভাইয়া আমি ভীষণ বিপদে ছিলাম। তুমি ভাবতেও পারবে না কিভাবে বেঁচে আছি।
আরাফাত কিছু বুঝলো না। কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> বলতো বিস্তারিত কি হয়েছে?

হৈমন্তী আবিরের কথা লুকিয়ে বাচ্চা দত্তক নেওয়া পযর্ন্ত আরাফাতকে সব বলে ফেলল। তারপর বলল,
> আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগ সত্যিই করবো না। নিজের মতো আলাদা থাকবো। আমার সঙ্গে থাকলে তোমাদের ঝামেলায় পড়তে হয়। কিন্তু বাচ্চাটা নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম। সেদিন ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবো ভেবেও রেখেছিলাম। দিনটা ছিল মার্চ মাসের তিন তারিখ। আমি ক্লাস শেষ করে সবে বাড়িতে ফিরেছি। জান্নাত তখন মারিয়াম আন্টির কাছে খেলছিল। আমি আন্টির থেকে বেবিকে নিয়ে যখন নিজের রুমে ফিরছিলাম তখন কলিংবেল বেজে উঠলো। আন্টি আমাকে নিষেধ করে নিজে গিয়ে দরজা খুঁলে দিলো।

ঠিক তখনই কালো কাপড়ে মুখ বাধা একদল ছিনতাইকারী ভেতরে ঢুকে আন্টিকে ধাক্কা দিয়ে আমার কাছে আসার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনার জন্য আমি ঘাবড়ে যায়। ওরা জোরজবরদস্তির করে আমাকে আর জান্নাতকে ধরে ফেলে। আন্টির বাধা দেওয়ার জন্য ওরা আন্টিকে খুন করে ফেলল। আমি চিৎকার করতে পারছিলাম না ওরা আমার মুখটা বেধে রেখেছিল। চোখ মুখ বেধে কোথায় একটা নিয়ে গেলো। আমাকে বেধে রাখে চেয়ারে। জান্নাতকে ফ্লোরে রেখে দিয়েছিল। আন্ধকারে আমি কিছুই দেখতে পারিনি। শুধু ওর কান্নাকাটি ছাড়া। একটা মেয়ের কন্ঠ শুনেছিলাম। মেয়েটা বলছিল আমাদেরকে খুন করবে। আমার ফোন পাসপোর্ট ভিসা সব ওদের দখলে তখন।

ওরা রাতের জন্য অপেক্ষা করছিল কি বলতে পারিনা। মেয়েটা বারবার আমাকে থাপ্পড় দিয়ে বলেছিল ওর মুল‍্যবান কিছু আমি ছিনিয়ে নিয়েছি তাই বাঁচার অধিকার নেই আমার।। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম। তারপর ওরা যখন চলে গেলো চারদিক চুপচাপ দেখে আমি বহুকষ্টে হাতের বাধন খুলে জান্নাতকে নিয়ে জানালা দিয়ে বের হয়ে আসি। কি করবো কোথায় যাব কিছুই মাথায় আসছিল না। তাছাড়া মারিয়াম আন্টির বাসাই ফিরলে আমাকে উনার খুনের কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতো। যেহেতু সেখানে আমি ছাড়া কেউ ছিলাম না। নতুন ভাড়াটিয়া ছিলাম বলে আমার কথা কেউ তেমন জানতো না। যদিও নিজেকে আইনের থেকে বাঁচাতে পারতাম তবে জান্নাতকে নিয়ে ঝামেলা হতো।

সেই বিপদের সময় একটা এনজিও আমাকে সাহায্য করে। ওরা সুবিধা বঞ্চিত ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করে। আমি সেখানে আগে থেকেই জয়েন ছিলাম। ওদের মধ্যে বেশ কিছু বাঙালি আছে। এতগুলো দিন আমি ওদের সঙ্গে কাজকরেছি। ক্লাসের বিষয়ে সাহায্য করেছে ইউনিভার্সিটির একটা ম‍্যাম। আমি শুধু পরীক্ষা দিয়েছি। এনজিও থেকে উনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যেহেতু আমার কাছে পাসওয়ার্ড ভিসা ছিল না তাই প্রকাশ‍‍্যে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে পারিনি। ওদের ভয়ে একাউন্ট থেকেও টাকা উঠাতে পারিনি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব ওরা নিয়ে নিয়েছিল। তাছাড়া আমার জন্য তোমাদের উপরে যদি আক্রমণ হয় এই ভয়েও ছিল। আমি তো জানি তুমি আমার বিপদ জানলে কিছুতেই আমাকে ছাড়তে না। গতকাল ফিরেছি এনজিও থেকে সব ব‍্যস্থা করেছে। বাংলাদেশের অবহেলিত বাচ্চাদের নিয়ে একটা ডুকুমেন্টের কাজ করবে ওরা।

হৈমন্তী একদমে ঘটনাটা আরাফাতকে শুনিয়ে দিলো। সব শুনে আরাফাত ভ্রু কুচকে আছে। ভাবতে পারলো না বিদেশ বিভূঁয়ে কে এমন শত্রু হয়ে উঠেছিল যে হৈমন্তীকে খুন করতে চাইলো? তাছাড়া হৈমন্তীর মতো মেয়েকে খুন করার মানে কি? আরাফাত জিঞ্জাসা করলো,
> এতগুলো দিন পার হলো একটা ফোন করলে কি হতো? আর সেই চিঠিটার মানে কি হৈমি?
হৈমন্তী অবাক হয়ে বলল,

> কিসের চিঠি ভাইয়া? আমি কোনো চিঠি পাঠাইনি। তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না কতটা ভয়ে ভয়ে জীবন কাঁটিয়েছি। তবে অনেক কিছু শিখেছি। নিজেকে গোপন রেখেছি যাতে ওরা আমার নাগাল না পাই। বারবার মনে হয়েছে ওরা আমাদের খুঁজবে। আর যেহেতু ওদের মধ্যে অনেকেই বাঙ্গালী ছিল। আমি যদি তোমাদেরকে আমার খোঁজ বলতাম ওরা ঠিকই জানতে পারতো। কিছু কথা আমার কানে এসেছিল।
> গতকাল এসেছিস বাড়িতে না গিয়ে এখানে কি তোর?
> ভাইয়া মিটিং ছিল তাই আর যাওয়া হয়নি। ভেবেছিলাম কাজকর্ম শেষ করে তোমাকে বলবো। ভয় পাচ্ছি একটু একটু।
আরাফাত চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিলো। হৈমন্তী ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

> এখানে আমি একা নেই। আমার সহকর্মীরা আছে। সব ঘুমিয়ে আছে। কতোভাবে ওরা আমাকে সাহায্য করেছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। জান্নাতকে দেখবে ভাইয়া?
আরাফাত জান্নাতের কথা বহুবার হৈমন্তীর থেকে শুনেছে কিন্তু দেখার কথা ভাবেনি। হৈমন্তীর মুখে দেখার কথা শুনে চট করে চোখ খুলে বলল,
> কোথায় সে?

হৈমন্তী ঝড়ের বেগে রুমে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসলো। আরাফাত হাত বাড়িয়ে দিলো জান্নাতের দিকে। মেয়েটা ঘুমিয়ে বিভোর। আরাফাত বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল মাশাল্লাহ্ জান্নাত নামটা একদম চেহারার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। ও মন্ত্রমুগ্ধের ন‍্যায় ওষ্ঠদ্বয় জান্নাতের কলালে রাখলো। হৈমন্তীর চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক। খিলখিল করে হেসে বলল,
> জেগে থাকলে বুঝতে এতো শান্ত সে একদম নয়। আমাকে খুব বিরক্ত করে।
> ওকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে চল। আম্মা কান্নাকাটি করেন হৈমি। তাছাড়া ভাইয়াদের কথা একটু ভাব কি অবস্থা হয়েছে এতদিনে।
হৈমন্তী কিছু একটা ভেবে বলল,

> আমি এই কাজটা ছাড়তে পারবো না ভাইয়া। তবে বাড়িতে নিশ্চয়ই যাবো। যদি তোমরা আমাকে বাধা না দাও। বাচ্চাটাকে নিয়ে এখন কাজকর্ম করতে সত্যিই অসুবিধা হচ্ছে। অনেক বাচ্চাদের মধ্যে ও বড় হয়েছে। একা একা থাকতে পারছে না কান্নাকাটি করছে। বাড়িতে থাকলে ভাবিরা তো দেখাশোনা করবে। ভাইয়া অরিন কেমনে আছে?
আরাফাত মলিন হেসে বলল,
> শুধু বিয়েই হয়েছে সংসার হয়নি। ঝামেলায় ঝামেলায় ভাই বোনদের জীবন শেষ। এবার নতুন করে শুরু করবো ভাবছি। আমার শশুর অসুস্থ জানিস? উনাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দেওেয়া হয়েছিল।
হৈমন্তী চমকে উঠে বলল,

> এই জন‍্য অরিন ফিরে যায়নি? আমি ওর খোঁজ নিয়েছিলাম ভাইয়া। কিভাবে হলো এমন?
আরাফাত বিস্তারিত বলল। সব শুনে হৈমন্তী চিন্তিত হয়ে বলল,
> ভাইয়া উনি তো বেশ ভালো মানুষ। উনার সঙ্গে শত্রুতা কে করতে পারে? কিছু খোঁজ পেয়েছো? তদন্ত হয়নি?
> তদন্ত হয়েছে তবে খোঁজ পাইনি। সন্দেহভাজন কাউকে পাওয়া যায়নি। লিফটের মধ্যে পড়েছিল। লিফটে উনি একা ছিল।
> ভাইয়া তুমিও না বোকা আছো। অফিসে যাওয়ার আগেই উনাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। ওষুধের কাজ লিফটের মধ্যে গিয়ে শুরু হয়েছিল। ভেবে দেখো ওষুধ কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে না। একটু টাইম লাগে। উনি অফিসে যাওয়ার সময় কার সঙ্গে দেখা করেছে, সঙ্গে কে ছিল এসব কি ভালো করে খতিয়ে দেখা হয়েছে?

আরাফাত বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। বোনের জ্ঞান বুদ্ধি বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে বুঝতে বাকী নেই। আরাফাত বেশ খুশী। কথায় কথায় কেঁদে দেওয়া মেয়েটা আজ কি সুন্দর করে সাবলীল ভাষায় কথা বলছে। আরাফাতের কোলের মধ্যেই জান্নাত ঘুমিয়ে ছিল। হৈমন্তী বেশ খুশী ভাই ওর মেয়েকে দেখে কিছু বলেনি ভেবে। শুধু মায়ের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছে। বিয়ের আগে বাচ্চা কিভাবে দেখবে আল্লাহ্ ভালো জানে। হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো আরাফাতের কাজগুলো দেখে। ও নিজের ফোনটা বের করে ঘুমন্ত বাচ্চাটার কয়েকটা ছবি তুলে অরিনকে পাঠিয়ে দিয়ে লিখে দিলো
“আমাদের নতুন আম্মু। হৈমন্তীর মেয়ে জান্নাত”। আরাফাত জান্নাতকে আদর করে হৈমন্তীর কোলে দিয়ে বলল,
> হাসপাতালে যেতে হবে। অরিন একা আছে। আগামীকাল এসে তোকে নিয়ে যাবো। সাবধানে থাকিস।
হৈমন্তী মাথা নাড়িয়ে মলিন হাসলো। আরাফাত বেরিয়ে পড়লো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

হাসপাতালের বারান্দায় থমমেরে বসে আছে অরিন। কিছুক্ষণ আগে হৈমন্তীর মেয়েকে দেখার পর থেকেই মনের মধ্যে ঝড় উঠেছে। ভাই যে হৈমন্তীকে পছন্দ করে এটা ওর অজানা না। কিন্তু মেয়েটা বিদেশে গিয়ে বিয়ে করে বাচ্চা নিয়ে ফিরেছে। ভাই জানলে কিভাবে মানবে ভেবেই ভয় পাচ্ছে। এমনিতেই বাড়িতে বেহাল অবস্থা তারমধ‍্যেই যদি হৈমন্তীর বিয়ের কথাটা ওর কানে যায় তাহলে নিশ্চয়ই ও ভীষণ কষ্ট পাবে কথাটা ভেবে অরিন ঢোক গিলল। গলা শুকিয়ে আসছে । ছবিটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ছোটখাট একটা পরী।তবুও ও খুশী হতে পারছে না। ছবিটা জুম করে করে দেখছে। এমন সময় আবির ওর পেছনে এসে দাঁড়ালো। ফোনে বাচ্চার ছবি দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

> বাচ্চাটা ভীষণ কিউট। হঠাৎ মামা হতে ইচ্ছে করছে। আর কতকাল আমাকে বঞ্চিত করে রাখবি। আম্মার ও কিন্তু খুব ইচ্ছে।
হঠাৎ আবিরের কথা শুনে অরিন চমকে উঠলো। হাত কেঁপে ফোন পড়ে যেতে গেলো কিন্তু পড়লো না আবির ধরে ফেলল। অরিন তুতলিয়ে বলল,
> ভাইয়া তুমি কখন আসলে?
আবির ছবিটা জুম করে দেখতে দেখতে বলল কিছুক্ষণ আগে। বাবুটা কে অরিন?
অরিন জোরকরে হেসে বলল,
> কেউ না ভাইয়া। ছবিটা অনলাইন থেকে নেওয়া। কিউই না দেখতে? হঠাৎ চোখে লাগলো। ভাইয়া বাড়িতে গিয়েছিলে?
আবির ফোনটা এর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল,

> অফিস থেকে এখানে এসেছি। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললাম। আব্বুর শরীর মোটামুটি আগের থেকে ভালো। বাসাই ফিরবো না তুই চলে যা আজ আব্বুর কাছে আমি থাকবো। আম্মু আজ আসবে না।
অরিন কিছু ভেবে দ্রুতগতিতে বলল,
> একদম না ভাইয়া। উনি আসছেন আমি আর উনি আব্বুর কাছে থাকবো। তুমি ক্লান্ত আছো তোমাকে থাকতে হবে না।
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> উনিটা আবার কে?
> উনি মানে উনি তুমি চিনবে না। যাওতো।

অরিন ফোন নিয়ে বাবার কাছে চলে গেলো। আবির ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। বাড়িতে ফিরতে হবে ভেবে তাড়াতাড়ি চলে আসলো। সারাদিন গাধার খাটুনি খাটতে হয়েছে। বাবা সুস্থ থাকতে উনি সবকিছু নিজের মতো দেখাশোনা করতো আবিরকে দরকার হতো না। সুখের দিনটা বুঝি চিরতরে শেষ হয়ে গেলো। হাসপাতাল থেকে বাড়ি পনেরো মিনিটের রাস্তা। আবির দ্রুত বাড়িতে পৌঁছে গেলো। কলিংবেল বাজাতেই ফারজানা হক মিষ্টি হেসে দরজা খুঁলে দিলো। আবির এতদিন পরে মায়ের মুখে হাসি দেখলো। কিছূ ভেবে দুপা ভেতরে ফেলতেই চোখে পড়লো সোফার উপরে বসা সুন্দরী রমনীর মুখের দিকে। আয়েশি ভঙ্গিতে পায়ের উপরে পা তুলে বসে আছে আরশী। আবির একবার সেদিকে তাঁকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। মেয়েটার একটা বদ অভ‍্যাস আছে। সে গায়ে ওড়না পড়েনা না। উল্টাপাল্টা পোশাকের কুখ্যাতি আছে প্রচুর। আবিরকে দেখে আরশি হাসি হাসি মুখ নিয়ে কথা বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই আবির বলল,

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৮

খুব ক্লান্ত আমি একটু বিশ্রাম দরকার। তোমার সঙ্গে আগামীকাল কথা হবে।
আবির না থেমে যেতে যেতে বলে গেলো। আরশীর মুখটা মলিন হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বলল, এটা আবার কেমন ভদ্রতা? মেহমান আসলে তার সঙ্গে এরা এমন ব‍্যবহার করে নাকি। মাকে বলতে হবে এখানে ও থাকতে পারবে না।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২০