শেষ থেকে শুরু পর্ব ২০

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২০
লাবণ্য ইয়াসমিন

রাজিবের সামনে বসে আছে হৈমন্তী। বড় ভাইয়ের প্রতি আলাদা একটা মায়া কাজকরে ওর। ভাইয়ের সঙ্গে এতোদিন যোগাযোগ করতে পারেনি সেই আক্ষেপে মরে যেতে মন চাইছে। রাজীব ছলছল চোখে বোনকে দেখছে। মেয়েটা আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে। আগে ফর্সা গোলগাল ছিল তবে এখন কেমন রোগা লাগছে। নিরবতা ভেঙে হৈমন্তী বলে উঠলো,

ভাইয়া এখনো রেগে আছো? খুব সরি এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। প্রমিজ করছি এমন আর হবে না।
হৈমন্তীর কোলের উপরে জান্নাত বসে আছে।। হাতে একটা পুতুল আছে সেটা নিয়েই নাড়াচাড়া করছে আর মুখে দিচ্ছে। হৈমন্তী বারবার ওর মুখ থেকে পুতুলের হাত পা গুলোকে টেনেটেনে ছাড়িয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা মায়ের উপরে রগে গিয়ে মুখে থাবা বসিয়ে দিচ্ছে। মোটামুটি বিরক্ত করছে হৈমন্তীকে তবুও ও নিরবে ভাইয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে উত্তরের আশায় বসে আছে। রাজীব কোনো উত্তর দিল না বরং জান্নাতকে ওর কোল থেকে নিয়ে নিয়ে বাচ্চাটার মুখে হাত রেখে বলল,
> আম্মু কি নাম তোমার? কথা বলতে পারো?
জান্নাতের সবে কথা ফুটেছে। আধো আধো কথা বলতে পরে। হৈমন্তী ভেবেছিল নিজেই উত্তর দিবে তাঁর আগেই জান্নাত তুতলিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

> জান্নালতুল এহথান জান্না
রাজীব ভ্রু কুচকে ফেলল। মেয়েটা যে কি বলেছে ওর কান পযর্ন্ত আসেনি। হৈমন্তী হেসে বলে দিলো ওর নামটা। এর মধ্যেই চয়নিকা রনিকে নিয়ে উপর থেকে নেমে আসলো। রুনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। আরাফাত হৈমন্তীকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবে বলে গেলো। চয়নিকা এসে জান্নাতকে কোলে নিয়ে হৈমন্তীকে বলল,
> তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করোনি। কতটা টেনশনে ছিলাম জানো? টেনশনে তোমার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

> সরি ভাবি খুব ঝামেলায় ছিলাম তাই সুযোগ হয়নি। এবার তো চলে এসেছি। আম্মা কোথায় ভাবি?
হৈমন্তীর কথা শেষ হলো না এর মধ্যেই আমেনা বেগম ছুটে এসে হৈমন্তীকে জড়িয়ে ধরে একঘর কান্না শুরু করলেন। হৈমন্তী মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল.
> আমি ঠিক আছি আম্মা। তুমি চিন্তা করোনা।
আমেনা বেগম মেয়েকে পেয়ে বেশ খুশী কিন্তু উনার খুশীটা বেশিক্ষণ টিকলো না। চয়নিকার কোলে মেয়টাকে দেখে চোখ কৌটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। উনি ভ্রু কুচকে বললেন,
> কে ও?ওটা কার মেয়ে?
হৈমন্তী এই ভয়টাই পাচ্ছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। মেয়েটা ওর জীবন। ওকে ও নিজের পরিচয়ে মানুষ করবে। তাই মুখটা কঠিন করে উত্তর করলো,

> আম্মা ও আমার মেয়ে জান্নাত।
আমেনা বেগম চোখ গোলগোল করে বলল,
> তুই আবার বিয়ে করেছিস? কাকে করেছিস? ছেলেটা কে? মুসলমান নাকি অন‍্য ধর্মের। বাঙ্গালী তো? নাকি সেটাও না?
আমেনা বেগম একদমে এতগুলো প্রশ্ন করে থামলেন।হৈমন্তী ঘাবড়ে না গিয়ে সাবলীলভাবে বলে দিলো,

> বিয়ে করিনি। বিয়ে কেনো করবো?দুবার বিয়ে করেছি আর সখ নেই। মেয়েটাকে নিয়ে ভালো আছি।
আগামীদিনগুলোও ভালো থাকবো। আমি এখন জব করি আম্মা। মেয়ের দায়িত্ব আমি নিজেই পালন করবো ইনশাআল্লাহ।
হৈমন্তী কথাশুনে আমেনা বেগমের মেজাজ চরম খারাপ হলো। বেহায়া বেলাজ মেয়ে। বিয়ে না করে বাচ্চার মা হয়েছে। ঘৃণাই উনার মুখটা কুচকে গেলো। কি বিষাদ লাগলো মেয়ের মুখটার দিকে তাকিয়ে। এতদিন ছিল না ভালো ছিল ফিরে এসেছে সঙ্গে ঝামেলা নিয়ে ফিরেছে। তাছাড়া পাড়া প্রতিবেশি সমাজের লোকজন কিভাবে দেখবে বিষয়টা আল্লাহ্ জানেন। একঘোঁরে করবে নিশ্চয়ই। মিটিং বসে সমালোচনা হবে। আমেনা বেগম সব কিছুই যেনো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। যদিও শহরে এসব মানুষের তেমন চোখে বাঁধে না কিন্তু গ্রামে তো এমন না। সেখানে তিল থেকে তাল হতে সময় লাগেনা। মির্জা বাড়ির সম্মান বুঝি ধুলোই লুটিয়ে যাবে। বিষয়টা ভেবে উচি চাপা চিৎকার করে বললেন,

< মেয়েদের এই জন‍্যই বিদেশ পাঠানো উচিৎ না। ভদ্রতা সভ‍্যতার বালাই নেই। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এতো বড় একটা বাচ্চা নিয়ে হাজির হয়েছো ছি। তোমাকে কখনও আমি ক্ষমা করবো না।সেই সঙ্গে আমার ছেলে গুলোকেও না। এই অনাচার আমি দেখতে পারবো না। রাজীব আমাকে বাড়িতে পাঠানোর ব‍্যবস্থা করো। আর এই বেহায়া মেয়েটা যেনো কিছুতেই সেখানে না যায়। পারলে ওকে এখুনি চলে যেতে বলো ভালো হবে।
মায়ের কথা শুনে হৈমন্তীর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। চিরকাল মা ওকে ভুল বুঝে এসেছে। এমন ভাব করে যেনো ও এই ভদ্রমহিলার নিজের মেয়ে না। কিন্তু কেনো এই বৈষম্য? রাজীব আমেনা বেগমকে শান্ত করতে বলল,

> আম্মা তুমি ওকে ভূল বুঝতেছো। বাচ্চাটা ওর……
হৈমন্তী আর বলতে দিলো না। মুখটা কঠিন করে বলল,
> ভাইয়া ও আমার মেয়ে। শুধু আমার। হুহাতে ওকে মানুষ করেছি। আমাকে ও মাম্মা বলে ডাকে। ওকে নিয়ে আমি আর কোনো কথাবার্তা বলতে রাজি না। বাচ্চাটা বড় হচ্ছে। আমি চাইছিনা সে ছোট থেকেই আমাকে পর ভাবুক। যে পর ভাবে তাকে আপন করার জন্য আমি আমার মেয়েকে বলি দিতে চাইছি না।
হৈমন্তীর এমন বেপরোয়া কথা শুনে আমেনা বেগম ঠোঁট চেপে ধরে বিড়বিড় করে বললেন, বেহায়া একাট, কালসাপ পেটে ধরে এখন জীবনটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিলো। আগে মিনমিনে স্বভাবের ছিল এখন আবার মুখের উপরে ঝগড়া করছে নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য।” উনি একে সহ‍্য করবেন না। তাই তেঁড়ে গিয়ে বললেন,
> মুখের উপরে কথা বলছো এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে? মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যাও।তোমার মতো মেয়ের মুখ দেখতে চাইছিনা।ঘৃণা লাগছে আমার। ছিলে না বেশ শান্তিতে ছিলাম।

হৈমন্তীর মায়ের কথা শুনে কেঁদে ফেলল। মা ওকে এই চিনলো। প্রচণ্ড অভিমান হলো মনের মধ্যে। এই বাড়িতে ও কিছুতেই থাকবে না। রাজীব মায়ের মুখ বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। চয়নিকা বিস্ময়কর দৃষ্টিতে শাশুড়িকে দেখছে। ওর ভাষায় এই ভদ্রমহিলার মেয়ের উপরে কোনো মায়া নেই। শুধু আছে কুসংস্কারের ভরা একটা মন। যেখানে সব মমতা ছাপিয়ে গিয়ে শুধু সমাজ সভ্যতার বসবাস। একে আধুনিক যুগের মা বলে মেনে নেওয়া যায় না। হৈমন্তী হুট করে দাঁড়িয়ে পড়লো। রাজীব ভেবেছিল বোনের উপরে একটু রাগ করে থাকবে কিন্তু হলো না। আরও চুপচাপ থাকলে বোনকে হারাতে হবে। তাই দ্রুতগতিতে হৈমন্তীর হাত ধরে বলল,

> এইটুকু বাচ্চা নিয়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছিস আম্মা বললেই হবে নাকি? আমরা আছি কি করতে? আম্মা সব সময় এমন করে জানিস না? কিছু হবে না। আমি তো আছি সব ঠিক করে ফেলবো।
হৈমন্তী ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলল,
> ভাইয়া আমার মনে হয় উনি আমার মা না। ওই ভদ্রমহিলার জিদের জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। রবিনের ভয়ে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেখেছিল। বিয়েটা দিলো তারপর দুর্ঘটনা। ভেবেছিলাম জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করবো। পড়াশোনা শুরু করলাম কিন্তু কি হলো? আরেক লম্পটের সঙ্গে ধরে বেঁধে বিয়ে করিয়ে দিলো। কখনও প্রতিবাদ করেছি আমি? এসবের পেছনে সব ওই ভদ্রমহিলা দায়ী। মায়ের সঙ্গে খারাপ ব‍্যবহার করতে হয়না তবুও করতে আমি বাধ্য হচ্ছি। আমার জীবনটা উনি নরক বানিয়ে ছেড়েছেন। এখন যদি আমার মেয়ের পেছনে লাগে আমি কিন্তু ছেড়ে দিবো না।

হৈমন্তী মনের মধ্যে থাকা রাখ ক্ষোভ সব এক সঙ্গে প্রকাশ করে ফেলল। ওর এখন কান্না পাচ্ছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পরলো না ফুপিয়ে উঠলো। রাজীব বোনকে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত রেখে বলল,
> শুধু আম্মা একা না বোন। এর জন্য আমিও কম দোষী না। আম্মার কথা না শুনে যদি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম এসবের কিছুই হতো না। আর কোনো ভুল করবো না। তুই ঘরে যা। আমি বললাম তো সব সামলে নিব।
রাজীবের কথা শুনে আমেনা বেগমের রাগ হলো। উনি নিজের দোষটা বুঝতে পারছেন না। হৈমন্তীর কথাগুলো উনার কাছে ভিত্তিহীন বলে মনে হচ্ছে। মা কখনও সন্তানের খারাপ চাইনা। তাছাড়া উনি মেয়েকে দুবার খারাপ যায়গায় বিয়ে দেননি। মেয়ের কপালের দোষ। কিছুদিন আগেও মনে হয়েছিল ফরহাদ দোষী কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব কিছুর জন্য নিজের মেয়েটাই দোষী। কেমন মেয়ে সে যে নিজের স্বামীকে আকৃষ্ট করতে পারেনা?

স্বামী পর নারীতে আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়। স্ত্রীর অবশ‍্যই উচিৎ স্বামীর পছন্দ মতো চলাফেরা করা। তাকে তোয়াজ করে চলতে হয়। ফাজিল মেয়ে নিজে দোষ করে এখন মাকে দোষারোপ করছে। কথাটা ভেবে উনি গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলেন। হৈমন্তী মুখ ঢেকে সোফায় বসে পড়লো চয়নিকার কোলে থাকা জান্নাত মায়ের কান্নাকাটি দেখে কেঁদে ফেলল। চয়নিকা ছেলেমেয়ে দুটোকে নিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলো। কাজের মেয়েকে বাচ্চাদের খাবার আনার হুকুম দিয়ে। বাচ্চটার ক্ষুধা পেয়েছে। রাজীব বোনকে এটা ওটা শুনিয়ে বুঝ দিচ্ছে। মাসুদ ফোন করেছিল ওকে এখানকার ঘটনা সংক্ষেপে বলা হয়েছে। সব শুনে মাসুদ মায়ের উপরে কিছু বলতে না পেরে বলল,” ভাইয়া আমি বরং বাসা নিচ্ছি। হৈমন্তীকে নিয়ে সেখানেই থাকবো।।” রাজীব ওকে শান্ত করলো। আরাফাত আসলো একদম পরিস্থিতি শান্ত হলে। ও এসে হৈমন্তীকে কাঁদতে দেখে জিঞ্জাসা করলো কিন্তু হৈমন্তী কিছুই বললো না। শুধু শুধু ঝগড়া ঝামেলা করে কি লাভ। ভাইদের জন্য শতাধিক রাগ অভিমান নিয়ে মির্জা বাড়িতেই থাকতে হলো। তবে ও দুর্বল হবে না। এখানে ওর মেয়েকে নিয়ে ঝামেলা হলে তখনই বের হয়ে যাবে।

ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুঁলে দিলো আবির। দরজা না খুঁলে উপাই ছিল না। দরজার ধাক্কা ধাক্কির শব্দে ওর কানের পর্দা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম। সারা মুখে বিরক্তিতে ছেয়ে আছে। ভ্রু কুচকে কোনো রকম চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে বিরক্তির পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো। আরশী কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তাঁর মুগ্ধতার হাসি। এক কাফ কফির জন্য এই মেয়ের এতো আদেক্ষেতার কি আছে বুঝতে পারলো না। আবিরকে দেখে আরশী হাসিটা আরও চাওড়া করে বলল,
> তোমার কফি আমি নিজ হাতে তৈরী করেছি। খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।
আবির মেয়েটার হাসি দেখে সহ‍্য করতে পারলো না। ফিসফিস করে বলল,
> কাজের মেয়েকে ছাড়িয়ে দিতে হবে দেখছি। কফিটা বরং তুমি নিজেই খেয়ে ফেলো। এতো কষ্ট করে তৈরী করেছো। আমার লাগবে না। নেক্সট টাইম দরজা ধরে ধাক্কা-ধাক্কি করার আগে একবার ভেবে কাজটা করবা। আমি কিন্তু ভূলে যাবো তুমি আমার বোন ছিলে। যাও এখন।

আবির ঝাড়ি দিয়ে দরজা বন্ধ করে বাথরুমে চলে গেলো। সকালটা নষ্ট হলো এই মেয়েটার জন্য। বাড়িতে থাকা রিস্ক হয়ে যাবে। অফিসে যেতে হবে তার আগে হাসপাতালে। গতকাল রাত থেকে অরিন হাসপাতালে রয়েছে। মেয়েটা সংসার ছেড়ে এখানে পড়ে আছে। এভাবে চললে সংসার করবে কখন। বাবাকে বাড়িতে আনা যেতো কিন্তু অসুবিধা আছে অনেক। হাসপাতালে রাখলে ডাক্তার সব সময় দেখাশোনা করতে পারে। কিন্তু বাড়িতে আনলে ডাক্তারকে সব সময় পাওয়া যাবে না। সারাক্ষণ সার্ভিস দেওয়ার মতো এমন ডাক্তার শুধু গল্প উপন‍্যাসে পাওয়া যায়। আবির ফ্রেস হয়ে হাসপাতালে দিকে পা বাড়ালো। হাসপাতাল থেকে অফিসে যাওয়ার পথে খেয়ে নিবে ভেবে।
****
অরিন বসে আছে বাবার হাত ধরে। মানুষটা আগের মতো নেই। মুখটা মলিন হয়ে গেছে। আরাফাত সকালবেলায় ফিরে গেছে। ও ফিরে যাওয়ার পরে একটা মিরাক্কেল ঘটেছে। আলাউদ্দিন সাহেব হঠাৎ উঠে বসেছে তবে কথা বলতে পারেনি। শরীর কাঁপছিল অনেক। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বলার আগেই অচেতন হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছে এটা খারাপ কিছু না। সুস্থ হয়ে যাবেন। তখন থেকে অরিন থম মেরে বাবার হাত ধরে বসে আছে। চোখের পানি পড়ছে। আবির দ্রুতগতিতে বোনের পাশে এসে দাঁড়ালো। কেবিনে আসার পথে নার্সের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সেখান থেকেই মোটামুটি শুনেছে। ভাইকে দেখে অরিন বসে থাকতে পারলো না। ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,

ভাইয়া আব্বু ঠিক হয়ে যাবে বলো? আগের মতো হয়ে যাবে সব। আমাদের দুঃখ থাকবে না।
আবির বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
> সব ঠিক হয়ে যাবে। শোন আব্বুর এই ঘটনাটা কাউকে বললে কিন্তু চলবে না। আম্মুকে পযর্ন্ত বলা যাবে না।
অরিন অবাক হয়ে বলল,
> কেনো ভাইয়া?

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৯

পরে বলবো। আব্বুর ভালোর জন্য হলেও আমাদের এইটুকু করতেই হবে। এখন থেকে তুই দিনে আর আমি রাতে পালা করে আব্বুর কাছে থাকবো। দু ভাইবোন ছাড়া আব্বুর কেবিনে কাউকে আসার সুযোগ দেওয়া চলবে না।
অরিন কিছু না বুঝেই মাথা নাড়ালো। আবির ওকে বুঝিয়ে দিয়ে অফিসের জন্য পা বাড়ালো। রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেতে হবে এই আশায়। ও অফিসের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকলো। সামান্য কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে দিয়ে বসে পড়লো। খাবার আসতে টাইম লাগলো না। খাওয়া শেষ করে বের হয়ে এসে গাড়িতে বসতে বসতে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা রমনীকে দেখে ওর চোখ আটকে গেলো।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২১