শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৩

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৩
লাবণ্য ইয়াসমিন

আবিরকে বিছানায় রেখে ধপ করে সোফায় গা এলিয়ে দিলো সজীব। শরীরে শক্তি নেই সব ক্ষয় হয়ে গেছে আবিরকে গাড়ি থেকে টেনে বের করতে গিয়ে। আরশী বারবার জিঞ্জাসা করছিলো ওকে বলা হয়নি আবিরের কি হয়েছে। ওকে শুধু বলা হলো আবিরের শরীর খারাপ একটু বিশ্রাম দরকার। ফারজানা হক স্বামীর কাছে গিয়েছেন। বাড়িতে আরশী আর কাজের দুজন মানুষ। সজীব চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ফিরে যেয়ে আর ইচ্ছে করছে না। সারাদিন প্রচুর খাটতে হয়েছে। তারপর আবার আবির আর রোহানের অদ্ভূত কাণ্ডকারখানা ওকেই সামলাতে হয়েছে।

সজীব বিড়বিড় করে বলল,”দুটোই একরকম আস্ত মিটকে শয়তানের নানা। “আবির গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। সজীব উঠে গিয়ে দরজা ভালো করে বন্ধ করে আবিরের পাশে ঘুমিয়ে গেলো। দরজার ওপাশে কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরশী। আবিরের কি হয়েছে জানাটা ওর খুব দরকার। খালামনিকে সব বলতে হবে। নেশা টেশা করে নাকি এসব জানাটাও জরুরি। দুদিন পরে যার সঙ্গে ওর বিয়ে সে কিনা মদ খেয়ে টাল হয়ে বাড়িতে ফিরে এটা ও সহ‍্য করবে না। কিছুতেই না। কথাগুলো ভেবে ও দুবার দরজায় ধাক্কা দিলো কিন্তু ভেতরে যারা আছে তাদের কান পযর্ন্ত পৌচ্ছালো না। শেষমেশ রেগে চলে গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাসর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে রোহান। ভাইবোনেরা আর বন্ধুরা মিলে ওকে আটকে দিয়েছে। পকেটে কোনো ক‍্যাশ টাকা পয়সা নেই যে সেগুলো দিয়ে ও ঘরে ঢুকবে। কারো থেকে যে নিবে এটাও মাথায় আসছে না। ইচ্ছে করছে মেঝেতেই গড়িয়ে পড়তে। ক্লান্ত শরীর সঙ্গে ঘুম ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। না পেরে দরজার সামনে পা মেলে বসে পড়লো। সকলে হৈচৈ শুরু করেছে। রোহানের এমন অদ্ভুত ব‍্যবহারে সকলে বিরক্ত। বোনেরা বলল যেহেতু ও কথা বলার পর্যায়ে নেই সেহেতু আজ না নিয়ে সকালবেলায় নিলেই হবে। ও তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।

কিন্তু বন্ধুরা একদম অনড় বদ্ধপরিকর কোনোরক বাকী চলবে না। তাছাড়া ওরা তো জানে আগামীকাল কি হতে চলেছে। রিস্ক নেওয়া যাবে না। শেষমেশ রাজীব এসে সমস্যার সমাধান করলো। রোহানের একাউন্ট থেকে নিজের একাউন্টে টাকা নিয়ে ওদেরকে ক‍্যাশ দিয়ে দিল। রাজীব বলেছিল নিজেই দিবে কিন্তু কেউ মানতে চাইলো না। যার বিয়ে সেই টাকা দিবে। কোনো দুলাভাইয়ে আজ ঘাসজল খাবে না। দরজা খোলা দেখে রোহানের চোখদুচো আরও বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। কিসের বউ দেখা বিছানায় গিয়ে ধম করে শুয়ে পড়লো। টুপিটা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

অনিমা ভ্রু কুচকে আবিরকে বকছে। এতো খাওয়ানোর কি দরকার ছিল। একটু খেলে অন্ততপক্ষে রাতেই ড্রামাটা দেখা যেতো। সজিবটা আবার ইচ্ছে করে রুমে ক‍্যামেরা রেখে গেছে। কেমন লাগে। এসব ভেবে ও বিড়বিড় করে পাইচারি করছে। রোহান নাক ডাকছে। অনিমা কানে হাত দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। বিয়ের ঝামেলায় প্রায় অর্ধেক রাত পেরিয়ে গেছে বাকীরাতটুকু বসেই কাটিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া রোহান ওকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করে ভেবে একটু টেনশন হচ্ছে। রোহান যদি না মানে লোকজন জানাজানি হবে। সম্মান যাবে। এসব চিন্তা করতে করতে ওর চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসলো।

অনিমার ঘুম ভাঙলো পরদিন সকালবেলায়। তখনও রোহান ঘুমে বিভোর। ও তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে রুমে আসলো। এখনো আবিরের খোঁজ নেই। বলেছিল ভোরবেলায় চলে আসবে। আর রোহানের আক্কেল দেখে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। অনিমা অনেক ভেবে চিন্তা করে রোহানের পাশে গিয়ে বসলো। আস্তে করে ওর কাধে ধাক্কা দিয়ে বলল,
> রোহান আর কতো ঘুমাবে? উঠো না প্লিজ।

রোহান অনিমার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নড়াচড়া করে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলো। অনিমা হতাশ হলো। রেগে গিয়ে দুহাত দিয়ে রোহানের গলা চেপে ধরতে গিয়ে হাত ফিরিয়ে আনলো। এভাবে হবে না ভেবে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে রোহানের চোখেমুখে ছিটিয়ে দিলো। রোমান ঘুমের মধ্যেই হাত দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে আবার ঘুম। ওর মেজাজ এবার চরম খারাপ হচ্ছে। হুট করে জগপূর্ণ পানি রোহানের মুখের উপরে ঢেলে দিলো। রোহান হুড়মুড় করে উঠে বসলো। মনে হলো আকাশ থেকে পড়েছে। চারপাশে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সোজাসুজি অনিমার দিকে তাঁকিয়ে হুড়মুড় করে বিছানা থেকে পড়ে গেলো। সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এই মেয়েটা এখানে কি করছে বুঝতে পারছে না। অনিমার গায়ে লাল রঙের একটা সুতি সিল্কের শাড়ি। মেয়েটা ঘোমটা টেনে লজ্জা লজ্জা মুখে বলল,

> সরি বেবি,কতক্ষণ অপেক্ষা করছি এই তোমার উঠার সময় হলো? আমি কিন্তু ভীষণ রাগ করেছি।
রোহানের কান আর চোখ দিয়ে ধোয়া উঠছে। বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। অনিমা এখানে কিভাবে আসলো বুঝতে পারছে না। আশেপাশে তাকিয়ে আরেকজনকে খোঁজ করছে। অনিমা বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে বলল,
< তোমার বউ সামনে রোহান। তুমি কাকে খোঁজ করছো? আমাকে পছন্দ হয়নি বুঝি?
রোহান মেজাজ ঠিক রাখতে পারছে না। মনে হলো অনিমার কথাবার্তা নেকামির চরম মাত্রা অতিক্রম করেছে। বেহুদা মেয়ে মানুষ। রোহান ফ্লর থেকে উঠে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
> তুমি এখানে কি করছো? আমার বউকে ভুল বুঝিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছো তাইনা? আমি কখনও তোমাকে মেনে নিবো না। কখনও না। বের হও আমার বাড়ি থেকে।
অরিন সামান্য কেঁপে উঠলো তবে সাহস হারালো না। ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,

> বেবি আমি কিন্তু একা আসিনি। তোমার আম্মু আমাকে পছন্দ করে ছেলের বউ করে এনেছে। তুমি তো মাল খেয়ে টাল হয়ে রোবট হয়ে গিয়েছিলে। বিয়ের ছবি যদি একটুও খারাপ হয়েছে না। তোমার খবর আছে।
রোহান ওর কথার উত্তর করলো না দৌড়ে গিয়ে ওর গলা চেপে ধরলো। অনিমা চেষ্টা করছে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু ওর শক্তির সঙ্গে পারছে না। মনে হলো প্রাণ বুঝী এখুনি বেরিয়ে গেলো। বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে রোহানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
> তুমি মানুষ না একটা অমানুষ। আমাকে মেরে ফেলবে তো ফেলো বাধা দিবো না তবে মরার আগে তোমাকে দূটো কথা বলতে চাই। সেই সুযোগটা আশাকরি তুমি আমাকে দেবে।

রোহানের রাগ আরও বৃদ্ধি হলো। একে তো ওর সঙ্গে চিট করা হয়েছে তারপর আবার এই মেয়েটা এখন ভনিতা করছে। সহ‍্য করতে না পেরে ছুটে গিয়ে অনিমার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। মেয়েটা ছুটে গিয়ে খাটের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো। কপাল কেটে গেছে তবে অনিমার সামান্যতম ব‍্যাথাও অনুভব হচ্ছে না। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে বলল,

> আমাকে খুন করলে তিলতিল করে যে অর্থসম্পদের পাহাড় তৈরী করেছিস সেসব ভোগ করার অধিকার কিন্তু হারিয়ে ফেলবি। তোর কি মনে হয় আমি অবলা স্ত্রীদের মতো তোর সংসার করতে এসেছি? তোর ধারণা ভুল। যে আমার সঙ্গে রাত কাটিয়ে নিজের সন্তানকে খুন করতে চাই তার সঙ্গে আমি? কখনও না। গতকাল তুই বেহুশ হয়ে কাবিনের সঙ্গে তোর সম্পত্তির সবটা আমার মেয়ে রুহী শেখ কে লিখে দিয়েছিস।ওর আঠারো বছর পযর্ন্ত সেসবের দায়িত্ব আমার উপরে থাকবে। তাছাড়া বাচ্চার কিছু হলে সেসব সরকারি ফান্ডে জমা হয়ে যাবে। আমাকে মেরে ফেল আমি মরে যায়, তোর ফাঁসি হোক তারপর এই বাড়িতে আমার মেয়ে রুহী এসে রাজত্ব করুক। আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবো। আমি ইচ্ছে করলেই বাচ্চা এবোট করে অন‍্য কাউকে বিয়ে করে সংসার করতে পারতাম কিন্তু আমি পারিনি। সন্তানের মায়া তোর মতো পিশাচ কখনও বুঝতে পারবে না। তবে আজ থেকে তোর যা ইচ্ছা করে বেড়া তুই স্বাধীন। আমি ঝামেলা করবো না।

রোহানের মাথা ঘুরছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো। ও অবিশ্বাসের সঙ্গে বলল,
> তুই বললেই আমি বিশ্বাস করবো? কিসের সম্পত্তি আর কিসের দলিল। ওসব আমি বিশ্বাস করিনা। তোকে আর তোর মেয়েকে আমি স্বীকার করছি না। ওটা যে আমার মেয়ে কেউ বিশ্বাস করবে না। সবাই জানে আমি ভালো ছেলে।
রোহানের বোকা বোকা কথা শুনে অনিমা হাসলো। তারপর বলল,
> তুখোড় ব‍্যবসায়ী রোহান শেখ আজকাল দেখি সব ভুল গেছে। বাচ্চাটা কার এটা টেস্ট করতে আহামরি কষ্ট করতে হয়নি আমার। হাসপাতাল ডাক্তার এসব কি জন্য আছে রোহান? এটা তোর নিজের রক্ত। আমি ওকে এমনভাবে তৈরী করবো কখনও তোকে বাপ বলে স্বীকার করাতো দূর তোর মুখ দেখতে ঘৃণা করবে। তুই আফসোস করবি।
অনিম একটু থেমে আবারও শুরু করলো,

>আমার মধ্যে কিসের কমতি ছিল জানিনা। আমি সুন্দরী, শিক্ষিতা, ভালো পরিবারের মেয়ে। তুই ইচ্ছে করলে আমাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারতি। আমি তো তোর জন্য পাগল ছিলাম। যেই আমাকে দিয়ে তোর ইচ্ছে পূরণ হয়ে গেলো আর অমনি তুই আরেক নারীর প্রতি আকৃষ্ট হলি। আসলে কি জানিস তোর যে চরিত্র ভালো করে সাবান দিয়ে আছড়ে আছড়ে পরিস্কার করলেও জীবাণু থেকে যাবে। তোরা এক নারীতে সন্তুষ্ট থাকতেই পারিস না।
রোহান নিজের সম্পর্কে আর খারাপ কথা শুনতে পারলো না। অনিমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। মেয়েটা হুড়মুড় করে বিছানায় গিয়ে পড়লো। এতক্ষণ মুখ জোর করে ঝগড়া করলেও এবার আর পারলো না। হুহু করে কেঁদে ফেলল। রোহানের মাথায় আগুন জ্বলছে। ওর একটু একটু করে সকলের উপরে সন্দেহ হচ্ছে। গতকাল আবির ওকে নেশা করিয়েছিল। ও
এসবের জন‍্যই ওরা এমন করলো। কাউকে ছাড়বে না রোহান।

রোহানের মায়ের সামনে মুখ ভার করে বসে আছে আবির। মুখটা ওর থমথমে হয়ে আছে। রুমে এখনো অনিমা আর রোহানের ঝগড়া চলছে যেটা কিছুক্ষণ আগে ল‍্যাপটপে দেখেই এই বাড়িতে হুড়মুড় করে ছুটেছে। ঘরে ক‍্যামেরা সেট করেছিল প্রমাণ রাখার জন্য। রোহান সহজে হার মানবে না তাই এই ব‍্যবস্থা। মিসেস শেখ আবিরের প্রশংসা করছে এতো সুন্দর একটা মেয়ের খোঁজ দেওয়ার জন্য। উনি এতো এত কথা বলছে আবির শুধু হু হ‍্যা করছে ওকে এমন করতে দেখে ভদ্রমহিলা ভ্রু কুচকে বলল,

> আবির মন খারাপ কেনো? কোনো অসুবিধা হয়েছে? আন্টিকে বলো।
আবির মন খারাপ করে মাথা চুলকিয়ে বলল,
> আমি মহা পাপ করেছি আন্টি। আপনার মতো এমন সাদা সরল মানুষের সঙ্গে পাপ করেছি। আপনি আমাকে ফাসি দেন। ফাঁসি না গুলি করেন। প্লিজ আন্টি।
মিসেস শেখ ঘাবড়ে গেলো আবিরের এমন কথাবার্তা শুনে। ছেলের মাথাটা গেছে নাকি বুঝতে পারছেন না। কৌতূহলী হয়ে বললেন,

> এসব কি কথা আবির? বিস্তারিত বলো আমি টেনশন করছি।
> আন্টি অনি রোহানের পরিচিত। ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতো। কিন্তু মাঝখানে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। রোহান আর অনিমা বাবা মা হয়ে গেছে। ওদের ছয় মাসের একটা কিউট বেবি আছে। বিয়ের আগে বেবি হয়েছে বলে আপনার ছেলে বাচ্চাকে মানছে না। আপনিই বলুন এই শেখ বাড়ির ইতিহাসে এমন ঘটনা কি কখনও ঘটেছে? বাড়ির মেয়ে বড় হবে এতিমখানা বা বস্তিতে। শুনেছিলাম আপনার শশুরের বাবা না শশুর জানি জমিদার ছিলেন। জমিদারদের রক্ত পথে পথে ঘুরবে তাই কৌশলে আমি বন্ধুদের সঙ্গে মিলে রোহানকে বাধ্য করেছি বিয়ে করতে।

আপনাকে আগে কিছু বললে আপনি রোহানকে যদি বলতেন তখন ও পালিয়ে যেতো। আমার অন‍্যায় হয়েছে এবার আমাকে আপনি ফাঁসি দেন। প্লিজ দেন।
আবির মুখে হাত দিয়ে কাঁদার নাটক করে আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ভদ্রমহিলার মুখের ভাবমূর্তি বোঝার চেষ্টা করছে। এতগুলো কথা নিজের ছেলের সম্পর্কে শুনে সহজে কেউ হজম করবে না এটাই স্বাভাবিক। আবির এবার চিন্তা করছে যদি হার্টএটাক হয়ে যায়? এই রে এটাতো ভাবেনি। ও হন্তদন্ত হয়ে মিসেস শেখের পাশে গিয়ে বসলো। উনি এখনো চুপচাপ আছে। কথাগুলো হজম হচ্ছে না হয়তো। আবির উত্তর শোনার আশায় মুখের দিকে তাঁকিয়ে বসে আছে। কিছুই বলছে না দেখে ভয়ে ভয়ে বলল,

> প্রমাণ আছে আন্টি আপনি চাইলে দেখতে পারেন। দেখবেন?
ভদ্রমহিলা কিছু না বলে উঠে গেলো। আবির উনার পিছনে পিছনে দৌড় দিলো। ওরা একবারে রোহানের ঘরের সামনে এসে থামল সেই মূহুর্তে রোহান দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। ভেতর থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ আসছে। আবির সোজা ভেতরে গিয়ে তাড়াতাড়ি অনিমাকে তুলে সোফায় বসিয়ে পানি এগিয়ে দিলো। কপালে রোমাল ভিজিয়ে মুছে দিতে দিতে বলল,
> সরি আসতে দেরী হয়ে গেলো। তবে প্রমিজ তোর দুঃখ দূর করতে না পারলেও সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবো। এই বাড়িতে তোর রাজত্ব কায়েম করিয়ে দিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

অনিমা ফুপিয়ে যাচ্ছে। আবিরকে ও চোখ বন্ধ করে ভরসা করে। অন‍্যদিকে রোহান মায়ের সামনে মাথা নিচু করে বলল,
> সব মিথ্যা আম্মা। ওরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। ওই বাচ্চা আমার না। এই মেয়ে আর ওর বাচ্চাকে লাথি দিয়ে বের করে দিবো একটু সময় দাও।
রোহানের কথা শেষ হলো না কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিলেন উনি। এই বাড়ির বংশধরকে মানতে ওর অসুবিধা হচ্ছে তাহলে উনি কেনো রোহানকে মানবে? উনি পরপর আরও দুটো থাপ্পড় দিয়ে বললেন,
> ওকে না মানলে আমিও আর তোমাকে নিজের ছেলে হিসেবে মানছি না। তুমি ওকে মানলে তবেই আমি তোমাকে নিজের ছেলে হিসেবে মানবো। এখন ভাবনা চিন্তা করে দেখো যাও। দূর হও আমার চোখের সামনে থেকে।
কথাটা বলে উনি অনিমার পাশে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

> বিয়ের আগে এসব করা ঠিক না তবুও তুমি করেছো। ছেলেরা বললেই সব করতে হবে কেনো? ভালোবাসার উপরে ভরসা রাখতে পারো না তেমন ভালোবাসার দরকার কি ছিল। তোমরা দুজনেই দোষী। মাঝখানে আমার নাতনিটা সাজা পাচ্ছে। তোমাদের দুজনকেই আমি ক্ষমা করবো না। আবির আমার নাতনিকে আনার ব‍্যবস্থা করো। আমি চাইছি না সে দাদা বাড়ি ছেড়ে পরের বাড়িতে গিয়ে উঠুক।

আবিরের ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো। ঝামেলা মোটামুটি শেষ। রোহান যা ইচ্ছা করুক সমস্যা নেই। ওর নামের সম্পত্তির সবটা উকিল ডেকে বিয়ের রেজিস্ট্রির সঙ্গে মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। ও চাইলেও বাচ্চা বা অনিমার ক্ষতি করতে পারবে না। কথাগুলো ভেবে ও মলিন হেসে উঠে আসলো। সজীব গাড়িতে বসে ভিডিও দেখছে। আবির হন্তদন্ত হয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলো। গাড়ির ছিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,

পরিকল্পনা সফল হয়েছে সজীব। রোহানের বিয়েটা হলো অবশেষে।
> এবার আমার পালা। তোর বাসাই যে মেয়েটা আছে ওর সঙ্গে আমার পাকাদেখা করিয়ে দে ভাই। বিয়ে করে সংসার করি।
আবির চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
> ওটা মেয়ে না অগ্নিগিরী লাভা। তোকে পুড়িয়ে দিবে।
> মাঝেমাঝে পুড়তেও মজা।
> তাহলে আর কি ঘনঘন আবিরের বাড়িতে ঘুরঘুর কর। লাভ কিছুই হবে না। ওর শকুনের দৃষ্টি আগেই আবিরের উপরে পড়ছে। আবির পালাবে এবার বুঝলি?
সজীব মাথা নাড়িয়ে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বলল,
> সত্যিই?

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২২

আবির ওর কথার উত্তর দিলো না। এই মূহুর্তে খুব জান্নাতকে দেখতে মন চাইছে। ফোন বের করে মেয়ের ছবিতে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে গাড়ি ছাড়লো। সজীব চুপচাপ বসে ছিল। ওর চোখেমুখে কৌতূহল।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৪