শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৭

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৭
লাবণ্য ইয়াসমিন

হৈমন্তী এক দৃষ্টিতে মেহুলের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটা আগের মতো নেই। হৈমী ওকে এভাবে ভেঙে পড়তে কখনও দেখেনি। কতগুলো বছর এক সঙ্গে আছে।তাছাড়া আবিরের কথা ওকে কেনো শোনানো হচ্ছে ও ঠিক বুঝতে পারলো না। বিষয়টা বুঝতে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগলো। হৈমী ভ্র কুচকে বলল,

আপু তুমি ঠিক আছো?
মেহুল চোখের পানি মুছে বলল,
> ঠিক আছি। তুমি আবিরের জীবন থেকে সরে যাও। তোমার জন্য আমি আবিরকে পাচ্ছিনা। তুমি সরে গেলেই ও আমাকে গ্রহণ করবে।
হৈমন্তী ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> আমি কি মিস্টার আবিরের জীবনে ছিলাম নাকি আছি যে সরে যাবো? তাছাড়া উনার সাথে আমার কিবা সম্পর্ক যে তুমি এসব বলছো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

> শুনো হৈমন্তী তুমি নেকা সাজার চেষ্টা করবে না। আমি কি বলছি তুমি খুব ভালো করে জানো। দুদিন আগেও তোমরা এক সঙ্গে আবাসিক হোটেলে রাত কাটিয়ে এসেছো। এসব এমনি এমনি না। একটা ছেলে একটা মেয়েকে এমনি এমনি হোটেলে নিয়ে যাবে না নিশ্চয়ই?
মেহুল বেশ ঝাঝালো কন্ঠে কথাগুলো বলল।হৈমন্তী হাসি থামিয়ে ভ্রু কুচকে ফেলেছে। হোটেলের বিষয়টা ওরা তিনজন ছাড়া কেউ জানেনা। আবিরের পক্ষে বলা সম্ভব না। জাবেদ য‍দি বলতো তবে বিয়ের কথাগুলো বলে দিতো আগেই। আর থাকলো হৈমন্তী নিজে ওতো প্রায় ভূলেই গিয়েছিল সেদিনের কথা। চিন্তা হচ্ছে এতো গোপন বিষয় মেহুল কিভাবে জানতে পারে? ও সন্দেহের চোখে তাঁকিয়ে বলল,

> আবাসিক হোটেল মানে? আপু তোমার মাথা ঠিক আছে?
মেহুল ঝঙ্কার দিয়ে বলল,
> ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানো না এমন বিহেভ করবে না। প্লিজ একটা মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের এমন ক্ষতি করোনা। আমাদের অনেক বছরের সম্পর্ক। ওকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না।
হৈমন্তী কিছু একটা ভেবে বলল,
> মিস্টার আবিরকে আমি বুঝিয়ে বলবো। উনি নিশ্চয়ই তোমাকে বুঝবে। তাছাড়া উনি ভালো মানুষ।
মেহুল চমকে উঠে বলল,

> না না তুমি ওকে কিছুই বলবে না। শুধু ওর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দাও। এতেই হবে। জান্নাতকে ওর ধারেকাছেও যেতে দিবে না। বাচ্চাদের প্রতি ওর একটা দুর্বলতা আছে। প্লিজ হৈমি আমাকে দয়া করো।
হৈমন্তী মলিন হাসলো। মেহুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে যেতেই হৈমন্তী আবিরের নাম্বারে ডায়েল করলো। তৃতীয়বারের মাথায় ফোন রিসিভ হলো। হৈমন্তীকে চুপ থাকতে দেখে আবির প্রশ্ন করলো,
> ফোন করেছো কেনো!বলেছিলাম না সামনে আসবে না?
হৈমন্তী গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,

> ভাজা মাছ উল্টে খেতে ফোন দিয়েছি। আপনার প্রেমিকা আপনার নামে উল্টাপাল্টা বকছে আমার কাছে। উনাকে থামানো আপনার দায়িত্ব। দেখুন এসব কিন্তু আমি সহ‍্য করবো না। কি ভেবেছেন একবার আপনি বিরক্ত করবেন আবার আপনার গার্লফ্রেন্ড বিরক্ত করবে। সমস্যা কি আপনাদের?
হৈমন্তীর কথা শুনে আবির ভ্রু কুচকে ফেলল। প্রেমিকা শব্দটা ওর হজম হলো না। সেই নাইন টেনের প্রেম কি আবার ফিরে আসলো? সেটা তো সিরিয়াস ছিল না। মেয়েটার চেহারা পযর্ন্ত মনে নেই। বন্ধুদের পাল্লাই পড়ে কয়েকদিন খুব উড়াউড়ি করেছিল। তারপর মেয়েটা নিজেই ওকে ছ‍্যাকা দিয়ে চলে গেলো। সেই দুঃখে কদিন সিগারেট খেয়ে কাঁটিয়ে দিয়েছিল। আবারও সেই প‍্যারা। আবির নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

> কোন গার্লফ্রেন্ড কিসের গার্লফ্রেন্ড?মজা করছ আমার সঙ্গে?
> মজা করার মতো সময় বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। আপনার গার্লফ্রেন্ড মেহুল আমার পেছনে গোয়েন্দা ঠিক করেছে। আবাসিক হোটেলে আমাকে নিয়ে রাত কাটিয়েছেন সেটা আবধি জানে। খুব রিকুয়েস্ট করেছে আপনাকে ছেড়ে দিতে।
> ধরেছো কবে যে ছেড়ে দিতে বলেছে? যাইহোক বিজি আছি।
আবির রেখে দিতে চাইলো কিন্তু হৈমন্তী চিৎকার দিয়ে বলল,
> থামুন থামুন আরেকটা কথা ছিল। মেহুলকে বলবেন না আমি আপনাকে বলে দিয়েছি। মেবি কেউ ওকে চাপাচাপি করেছে এসব বলতে। আপনি ওর উপরে নজর রাখেন কিছু একটা হয়েছে।
আবির কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

> আমার গার্লফ্রেন্ড আমি বুঝবো তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। দুরে থাকো আমার থেকে মঙ্গল হবে।
আবির কথা শেষ করে ফোন রেখে দিলো। হৈমন্তীর রাগ হচ্ছে। লোকটা ওকে ইগনোর করছে কিন্তু কেনো? এলোমেলো লাগছে। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মেহুলের বলা একটা কথাও ওর বিশ্বাস হয়নি। কেনো হবে লোকটাকে ও বহুদিন ধরে চিনে। ভালোবাসার জন্য এমন বেপরোয়া কাউকে হতে দেখেনি। তাঁকে অবিশ্বাস করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। হৈমন্তী ওর কাছে ধরা দেয়নি ছেলেটা খারাপ এই জন্য না। বরং নিজের ত্রুটির জন্য।

কাউকে সুখী করতে হলে আগে নিজে তার উপযুক্ত হতে হয়। হৈমন্তী তো ভাঙাচুরা মনের একজন মানুষ ছিল। নিজকে দেখলেই নিজের ঘৃণা হতো। সেই সময় কিভাবে পারতো আবিরকে কাছে টেনে নিতে? আবির ভালো ছেলে ওর জন্য ভালো মেয়ে পাওয়া কঠিন কিছু না। হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো ফোনের শব্দ শুনে। ও তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলো। চয়নিকা ফোন করেছে। হৈমন্তীকে বাড়িতে যেতে বলছে জান্নাত কান্নাকাটি করছে। হৈমন্তী টাইম দেখে নিলো দুপুর হয়ে গেছে। কাজ শেষ বাড়িতে যেয়ে আসুবিধা হবে না। হৈমন্তী হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো বাড়ির পথে।

হৈমন্তী ওর বোন মাধুবির সামনে বসে আছে। বহুদিন পর সামনে থেকে দেখা।মেয়েটার চেহারা কেমন ফ‍্যাকাশে হয়ে আছে। অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে নিজের বোনকে দেখে চমকে যায় হৈমন্তী। হৈমন্তীকে দেখে মাধুবি খুব কান্নাকাটি করছে। নিজের বোনের কঠিন সময়ে তার পাশে থাকতে না পারার কষ্ট মেয়েটাকে তিলে তিলে যন্ত্রণা দিয়েছে। ইচ্ছা করলেও পারেনি বোনকে দেখতে আসতে। স্বামী সংসার নিয়ে ওর ভরা সংসার। ওর স্বামী ইমতিয়াজ বউকে কাছছাড়া করে না। সব সময় নিজের কাছাকাছি রাখে। পুলিশ মানুষ বাইরে যেমন বাড়ির ভেতরেও তেমন কড়া। মাধুবী স্বামীর কথার বাইরে একটা কথাও বলতে পারে না। চুপচাপ সহ‍্য করে।

এক বোন ডিভোর্সী সেই দুঃখে মায়ের অবস্থা খারাপ তারপর যদি ও নিজেও এমন করে তাহলে সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। শত কষ্ট হলেও স্বামীর মন যুগিয়ে চলার চেষ্টা করে। এবছরেও আসা হতো না শুধু ছেলেটা মেডিক্যালের ভর্তি হবে বেশ কিছু টাকার দরকার। ইমতিয়াজ বলে দিয়েছে,” তোমার বাপ ভাই তো মেয়ে বিয়ে দিয়েই খালাস। শুধু খোঁজ নিলেই দায়িত্ব পালন হয়না। এবার গিয়ে বলো ছেলের জন্য কিছু দিতে। আমিতো আছি আর থাকবো যদি না দিয়েছে পরে দেখবো। শুধু এক বোনকে দেখলেই হবে নাকি?” মাধুবী লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ভাইয়ের কাছে টাকা চাইতে বিবেকে বাঁধছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। খালি হাতে ফিরে গেলে লোকটা উঠতে বসতে ওকে খোঁচা দিবে।

কথার খোঁচা সহ‍্য করা বেশ কঠিন। গায়ের ব‍্যাথা বেশিদিন থাকে না। কিন্তু মনের আঘাত কখনও যায়না। হৈমন্তী বোনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। বোন ওর থেকে বেশ বড়, আরাফাতের বড়। বোন আসার খুশীতে ভাইয়েরা পাগল হয়ে গেছে। আরাফাত অফিসে যায়নি। অরিনকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছে। রাজীব বাজার করতে গেছে। চয়নিকা রান্নাঘরে ঢুকেছে। আমেনা বেগম হৈমন্তীকে শুনিয়ে শুনিয়ে মেয়ের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করছে। হৈমন্তী শুধু বোনকে দেখছে। মেয়েটা হাসছে কিন্তু চোখমুখ কেমন শুকনো তাই কৌশলে ডেকে নিয়েছে। হৈমন্তী বোনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। মাধুবী ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> কি দেখছো?
হৈমন্তীর সোজাসাপ্টা প্রশ্ন,
> তুমি ভালো আছো আপা? দুলাভাই তোমাকে আসতে দিলো? কি হয়েছে বলবে?
মাধবী বোনের কথায় চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
> কিছু হয়নি আমি ভালো আছি হৈমী। শুধু তোমার জন্য খারাপ লাগছে। মেয়েদের জীবনটাই এমন হৈমী। সবকিছু সহ‍্য করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মাতে হয়। খারাপ লাগা বলতে কিছু থাকতে নেই।
হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> দুলাভাই তোমাকে এমনি এমনি পাঠিয়েছে বিশ্বাস হচ্ছে না। এতো বিপদ গেলো তোমাকে দেখিনি। আজকে হঠাৎ আসাটা আমাকে ভাবাচ্ছে। তাছাড়া দুদিন আগেও ভাইয়া দুলাভাইকে বলেছিল তখন উনি রাজি ছিলেন না। হঠাৎ একদিনে কি হলো? আপা তোমাকে দেখে আমার ঠিক লাগছে না। বলে দাও আমি না তোমার বোন?
মাধুবী কষ্টটা চেপে রাখতে পারলো না। হুহু করে বোনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। হৈমন্তী বোনের মাথায় হাত রেখে বলল,

> কেঁদো না আপা। তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার কষ্ট হয়। তুমি তো এমন ছিলে না আপা। তোমার হাসি দেখলে চির দুঃখীর ও হাসতে ইচ্ছা হতো।
বাধুবী নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের পানি মুছে সবটা হৈমন্তীকে খুঁলে বলল। লোকটার সঙ্গে সংসার করাটা কেমন দিনদিন অসহ‍্য হয়ে উঠছে। খিটখিটে স্বভাবের বউ ছেলেমেয়েকে চোখে চোখে রাখে। সন্দেহ করে। পুলিশ বলে কি সবাইকে সে চোর মনে করবে? এটা কেমন কথা। হৈমন্তী বোনের হাত ধরে বলল,

> চিন্তা করোনা। টাকার ব‍্যবস্থা আমি করে ফেলবো। আমার কাছে এতগুলো টাকা আছে সেগুলো তো পড়েই আছে। আমি কাজকর্ম করছি এই দিয়ে মা মেয়ের চলে যাবে। তুমি সামান্য একটা ব‍্যাপার নিয়ে কষ্ট পাচ্ছো।
মাধুবী বোনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। বোনটা ছোট থেকেই খুব নরম মনের ছিল। আর ও ছিল চঞ্চল। কিন্তু সব এখন বদলে গেছে। সত্যিই মেয়েদের সাবলম্বি হওয়াটা খুব জরুরি। হৈমন্তী বোনকে বুঝিয়ে বাইরে আসলো। রাজীব বাজার থেকে ফিরেছে। হৈমন্তী ভাইয়ের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করলো। রাজীব একাই টাকাটা দিতে রাজি হলো কিন্তু হৈমন্তী রাজি না।আরাফাতকেও বলা হয়েছে। শেষমেশ চার ভাইবোনে মিলে বোনকে টাকা দেবে বলে ঠিক করলো।

আমেনা বেগম এসবের কিছুই জানেনা। উনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। বড় মেয়েকে উনি অনেক ভালোবাসেন। বিয়ের পরে মেয়েটাকে তেমন কাছে পাননি তবে মেয়ে সুখে আছে এতেই উনি খুশী। আমেনা বেগম থালা ভর্তি ফল নিয়ে মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন। মাধুবী জান্নাতকে নিয়ে বসে ছিল। পুতুলের মতো মেয়েটা। দেখলেই আদর করতে মন চাই। আমেনা বেগম মেয়ের কোলে জান্নাতকে দেখে মুখটা কুচকে ফেলে বললেন,

> ওকে নিয়ে বসে থাকলে চলবে? খেয়ে নাও কিছু। তোমাকে দেখলে আমার চোখ দুটো ভরে উঠে। কতটা সুখে আছো স্বামী সংসার নিয়ে। তুমি আমার অহংকার। বোনকে দেখিয়ে দাও সংসার কাকে বলে।
মাধুবী কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাঁকিয়ে মলিন মুখে উত্তর দিলো,

> যেই বয়সে আমার বাবার বাড়িতে হেসে খেলে বাড়ানোর কথা সেই বয়সে দাঁতে দাঁত চেপে স্বামীর সংসার করেছি। তিলতিল করে নিজের রক্ত মাংস পানি করে ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছি। বিনিময়ে হাসতে ভূলে গেছি। শতরাত চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়েছি। এটাকে যদি তুমি সুখে থাকা বলো তাহলে আমি খুব সুখী আম্মা। আমার বাল‍্যকালটা তুমি নষ্ট করেছো।তোমাকে আমি কখনও ক্ষমা করতে পারবো না আম্মা। যদি হৈমন্তীর মতো চলে আসতে পারতাম তবে হয়তো এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতাম। মৃত্যু ছাড়া আমার তো সে পথ খোলা নেই। ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে হজম করতে হচ্ছে। ভালো আছি আম্মা খুব ভালো আছি তুমি সেই আনন্দে নাচতে পারো।

মাধুবী মুখটা কঠিন করে ধীর কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠে আসলো। আমেনা বেগমের চোখেমুখে বিস্ময়। বুকের মধ্যে হুহু করে উঠলো। এতদিনের বিশ্বাস এক নিমিষেই শেষ। এতদিন ভাবতো মেয়টা বুঝি খুব সুখে আছে। ক্লান নাইন পাশ করার আগেই উনি মেয়েকে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলের বয়স একটু বেশি ছিল। ভেবেছিলেন মেয়েকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মানিয়ে চলবে। বড়ঘর ছেলের সরকারি চাকরি আর কি চাই? টাকা থাকলে সুখ এমনিই চলে আসে। আসলেই কি অর্থসম্পদই সকল সুখের মূল?দুদিন পরে হৈমন্তীর বোন চলে গেল। টাকার পরিমাণ নেহায়েত কম ছিল না।ইনিয়ে বিনিয়ে বিশ লক্ষ টাকা। চার ভাইবোনেরা মিলেমিশে টাকাগুলো দিয়েছে তবে কারো তেমন সমস্যা হয়নি। হৈমন্তী যা রোজগার করে সেসব খরচ হয়না। এতগুলো ভাই থাকতে এইটুকু একটা বোনের খরচ চালানো বিষয় না। রাজীব একাই পারে তবুও সবাই মিলেমিশে সংসারের দায়িত্ব পালন করে।

দুদিন ধরে আবির প্রচুর ব‍্যস্ত সময় পার করছে। পুলিশ তোড়জোড় তদন্ত করছে খুনীকে ধরার জন্য। আবির আরশীকে চোখে চোখে রেখেছে কিন্তু তেমন কিছুই চোখে পড়েনি তাছাড়া ওর কল লিস্ট চেক করেছে সেখানেও কিছু নেই। সেদিন বাড়িতে কেউ আসেনি এমনকি কেউ যায়নি। বিষয়টা জটিল। আবির প্রচণ্ড টেনশনে করছে। কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। ফোন বের করে বারবার জান্নাতের ছবিটা দেখছে। সেক্রেটারি জাবেদ ওর সামনে আধা ঘন্টা ধরে চুপচাপ বসে আছে। আবির ফোন সামনে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

> জাবেদ তোমার কি মনে হয় আমার চরিত্র ভীষণ খারাপ? লুচ্চা কিছিমের ছেলে আমি?
জাবেদ দাঁত দিয়ে জিব কামড়ে কানে হাত দিয়ে বলল,
> ছিঃ ছিঃ কি বলেন স‍্যার। আপনার চরিত্র ফুলের মতোই পবিত্র।
আবির সন্তুষ্ট হতে পারলো না। অফিসের বস বলে কি তাকে খুশী করতে মিথ্যা বলতে হবে নাকি। যা সত্যি তাই বলতে হবে। আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,

> পাম দিতে বলছি না জাবেদ। আমি সত্যিটা জানতে চাই? যার জন্য পাগলামী করলাম তাকে পেলাম না অথচ যাকে আমি কখনও কল্পণাতেও ধরিনি সে বলছে আমি তাকে ঠকিয়েছি। পাগল হয়ে যাচ্ছি।
জাবেদ কিছুই বুঝতে পারলো না। কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> ম‍্যাডাম কিছু বলেছে আপনাকে? অবিশ্বাস করেছেন উনি?
জাবেদ তোমার ম‍্যাডামের কথা আমি ভাবছি না। শুধু ভাবছি আমার নামে শুধু শুধু একজন মিথ্যা কেনো বলবে?কারণ আছে নিশ্চয়ই। তুমি কারণ খুজে বের করো। যাও লোক লাগাও আজকের মধ্যেই আমি ওকে চাই।
জাবেদ বিস্তারিত জেনে উঠে আসলো। আবির মেহুলের ফোনে কল দিতে গিয়েও থেমে গেলো। রুচিতে বাধছে। মেয়েটা মিথ্যাচার করেছে। ওকে ক্ষমা করা যায়না। বাবা নেই চার‍দিক থেকে বিপদ ওকে ঝাপটে ধরেছে। অসহায় লাগছে।

অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে হৈমন্তীর। মেহুলের সঙ্গে আবিরের বিষয়ে আর কোনো কথাবার্তা হয়নি। হৈমন্তী দ্রুত ব‍্যাগ নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। কিন্তু ড্রাইভার নেই। হৈমন্তী ড্রাইভারকে ফোন দিলো বন্ধ বলছে। ভাবলো বেরিয়ে আসবে কিন্তু হলো না হঠাৎ একজন লোক গাড়ির দরজা খুঁলে ভেতরে গিয়ে বসে পড়লো। হৈমন্তী প্রশ্ন করার আগেই সামনে থেকে ওর দিকে কিছু একটা ছুড়ে দেওয়া হলো। মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ। হৈমন্তীর নাকে গন্ধটা প্রেবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই ও অচেতন হয়ে ঢোলে পড়লো। বাঁধাহীনভাবে গাড়িটা চলছে।

একজন পরম তৃপ্তিতে হৈমন্তীর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কতকাল পরে দেখা। এ দেখার শেষ হবে না। হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুপ্ত অনুভূতি শিরশির করছে। এতো মায়া এই মুখে আগে কেনো উপলব্দি হয়নি আফসোস হচ্ছে। জীবন কত বিচিত্র। যাকে একদিন অনাদর করে বাতিলের খাতায় আবদ্ধ করা হয় সময়ের ব‍্যবধানে পরে সেই খাতায় আবার চিরুনি অভিযান করে খোঁজা হয়। সব কিছু শুধু সময়ের ব‍্যবধান নাকি প্রয়োজন? ভালোবাসার আরেক নাম হয়তো প্রয়োজন। হৈমীকে লোকটার এখন বড্ড বেশি প্রয়োজন। লোকটা নিজের শক্ত হাতের আঙুল দিয়ে হৈমীর কপালে থাকা হিজাবটার কিছু অংশ মুখ থেকে সরিয়ে দিলো। চুলগুলো হিজাবের ভেতরে থেকে উঁকিঝুকি কাঁটছে। শীতল বাতাসে প্রাণ ঠাণ্ডা হবার জোগাড়।

জ্ঞান ফিরে হৈমন্তী নিজেকে একটা বন্ধ রুমে আবিস্কার করলো। রুমে মিডিয়াম তাপমাত্রাই এসি চলছে,শীত শীত করছে। দরজা জানালা সব বন্ধ। হৈমন্তীর শরীর বেশ দুর্বল,ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। গায়ে অফিসের পোশাক। হিজাব ছিল মাথায় সেটাও ঠিকঠাক আছে। হৈমন্তী মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। কোথায় আছে ঠিক বুঝতে পারছে না।ও কয়েকবার ঢোক গিলে উঠে বসলো। আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো রুমটা। রুমের মালিক বেশ সৌখিন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হৈমন্তী ধীরে ধীরে উঠে বসলো।

সবটা মনে হতে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগলো। সেই সঙ্গে ভয় ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। হৈমন্তী দৌড়ে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করলো কিন্তু কিছুতেই দরজা খুঁললো না। হৈমন্তী জানালা খোলার চেষ্টা করলো সেটাও বন্ধ। রুমের মধ্যে ওর আওয়াজ প্রতিধ্বনি করে ফিরে আসছে। হৈমন্তী চিৎকার চেচামেচি করতে করতে দরজা ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো। মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। কিভাবে এখানে থেকে বের হবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ খুঁট করে আওয়াজ করে দরজা খুঁলে গেলো। হৈমন্তী অবাক চোখে দরজার দিকে তাঁকিয়ে আছে।একটা মুখ ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলত। হৈমন্তীর সারামুখে ভয় ছাপিয়ে বিরক্তি আর ঘৃণা এসে ভর করলো। কারণ লোকটা ওর প্রাক্তন স্বামী ফরহাদ। এই লোকটাকে ও প্রচণ্ড ঘৃণা করে। হৈমন্তীর ইচ্ছা করলো লোকটাকে খুন করতে। চরিত্রহীন লম্পট। হৈমন্তী দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে কঠিন মুখে বলল,

> ফাজলামি করছেন আমার সঙ্গে? থাপ্পড়িয়ে গাল ভেঙে দিব বেয়াদব। আমাকে যেতে দিন।
ফরহাদের ওষ্ঠে বাঁকা হাসি। কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির আনন্দ। হৈমন্তী জিঞ্জাসু চোখে এখনো তাঁকিয়ে আছে। ফরহাদ হাসিটাকে আরও চাওড়া করে বলল,
> আজ থেকে তুমি আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে থাকবে। বউকে ছাড়া আর কতকাল একা থাকবো বলো?
হৈমন্তীর গা জ্বলে উঠলো ফরহাদের এমন খাপছাড়া কথা শুনে। ডিভোর্স হওয়ার পরে বউ বলতে লজ্জা লাগছে না। হৈমন্তী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> তুই সত্যিই অমানুষ। লতার প্রেম উবে গেছে? তোর দেওয়া প্রতিটা আঘাত আমার মনে গেঁথে আছে। যদি কখনও মারাও যায় তবুও মনে থাকবে। তোকে ঘৃণা ছাড়া কিছুই করা যায় না।
ফরহাদ মন খারাপ করে বলল,

> ভুলে যাও না কেনো সেসব খারাপ অতীত? আমি ভূল করেছিলাম ক্ষমা চেয়েছি। তোমার উচিৎ আমাকে ক্ষমা করে সংসার করা। তাছাড়া তোমার আম্মাও চেয়েছে তুমি আমার সঙ্গে থাকো।
> কুত্তা, তুই এখুনি আমাকে দিয়ে আসবি নয়তো খুন করবো তোকে। কিসের ক্ষমা?
আমি বিবাহিত, মেয়ে আছে স্বামী আছে। আমার সংসার ফেলে তোর সঙ্গে থাকবো কেনো?
> এটা একদম ঠিক না হৈমন্তী। আমি জানি ওই মেয়েটা তোমার মেয়ে না। মিথ্যা বলোনা। যদিও তোমার মেয়ে বা স্বামী থাকতো তবুও আমার কোনো সমস্যা নেই। উপর থেকে ঠিক করা তুমি শুধু আমার।
ফরহাদের কথাবার্তা শুনে হৈমন্তীর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। হাতের কাছে ফুলদানি ছিল উঁচু করে ওর গায়ে ছুড়তে গেলো কিন্তু পারলো না। ফরহাদ ছুটে এসে ওকে ধরে ফেলল। হৈমন্তীর সঙ্গে ফুলদানি নিয়ে বেশ ধস্তাধস্তি হলো। শেষমেশ ফরহাদ সফল হলো। হৈমন্তী ক্লান্ত হয়ে বসে ফুপিয়ে কেঁদে ফেলল। ফরহাদ দাঁত বের করে হাসতে হাসতে ওর ওর সামনে বসে বলল,

> আগের হৈমন্তী কিন্তু এমন ছিল না। আগে কতো লক্ষ্মী হয়ে আমার হুকুম শুনতে। আশেপাশে ঘুরঘুর করতে খুব মিস করি তোমাকে। প্লিজ আগের মতো হয়ে যাও না। খুব ভালোবাসা দিবো বিশ্বাস করো।
হৈমন্তীর গা গুলিয়ে উঠলো ফরহাদের কথা শুনে। ইবলিশ শয়তানকে হার মানিয়ে দিবে এই লোকটা। হৈমন্তী নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে ধাক্কা দিয়ে ফরহাদ কে দরজার ওপাশে ফেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলল। ওপাশ থেকে বাধা দিলো কিন্তু হৈমন্তীর সঙ্গে পারলো না। ফরহাদ বুঝে উঠার আগেই হৈমন্তী দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি আটকে দিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,

> আমি জানি তুই আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবি না। যতদিন কেউ আমাকে উদ্ধার করতে না আসবে আমি এই রুমেই থাকবো। সহ‍্য করতে না পারলে সুইসাইড করবো তবুও তোর কাছে নিজেকে তুলে দিবো না। তোর থেকে মৃত্যু ভালো।
হৈমন্তী কথাগুলো বলে মেঝেতেই বসে কাঁদতে লাগলো। কাছে ফোনটা ছিল কিন্তু সেটা কোথায় আছে বুঝতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে হৈমন্তীর চোখ বন্ধ হয়ে আসলে। মেঝেতেই ঢলে পড়লো আর অজ্ঞান হয়ে গেলো।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে ফরহাদ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাক্কা দিচ্ছে। হৈমন্তী যে এমন একটা কাজ করবে ওর বুঝতেই পারেনি। মেয়েটার সাহস দেখে ও হতবাক। কিন্তু পাখি কতদিন দানা পানি ছাড়া ঘর বন্দি থাকবে। এক সময় না এক সময় বাইরে আসতেই হবে। তখন কোথায় যাবে? কথাটা ভেবে ও নিচে নেমে আসলো। বাড়িতে শায়লা বানু ছিলেন কিন্তু এখন নেই। তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে এসেছে। আর দেখতে যাওয়া হয়নি। ফরহাদ মায়ের ব‍্যাপারে একদম উদাসীন। যেই মা সন্তানের খুশীর জন্য কতটা বেপরোয়া ছিল সেই মাকে আজ অনাদর অবহেলায় পড়ে থাকতে হচ্ছে। বিধির লিখন আর পাপের শাস্তি খন্ডন করার সাধ‍্য আছে কার?

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে তবুও হৈমন্তী বাড়িতে ফিরে আসেনি। জান্নাত মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছে। খাওয়া দাওয়া করছে না। হৈমন্তীর ফোন থেকে আরাফাতের ফোনে একটা টেক্সট এসেছে। হৈমন্তী অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে কবে নাগাদ ফিরবে বলা যাচ্ছে না। জান্নাতকে দেখে রাখতে। নেটওয়ার্কের সমস্যা ফোন বন্ধ থাকবে। আরাফাতের কেমন খটকা লাগছে। অরিন আবিরের সঙ্গে কথা বলছিল হঠাৎ জান্নাতের কান্নাকাটি শুনে জিঞ্জাসা করলো,
> ও কাঁদছে কেনো?
> হৈমী বাড়িতে নেই ভাইয়া। অফিসের কাজে বাইরে গেছে কবে ফিরবে জানিনা। টেক্সট করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। মেয়েটা মাকে চাইছে। খুব কেঁদেছে।
> আমি আসছি তুই ওকে গেটের কাছে নিয়ে আসেক।
> কাঁদবে তো।
> কাঁদবে না তুই এখুনি বাইরে আই।
> আচ্ছা।

আবির ফোন কেটে চোখ বন্ধ করলো। হৈমন্তী মেয়েকে ফেলে অফিসে কাজে গিয়েছে কিন্তু কিভাবে সম্ভব? মেহুলের নম্বরে বাধ্য হয়ে ফোন দিলো। মেহুল ফোন রিসিভ করে ঢোক গিলে বলল,
> কেমন আছো আবির?
আবির ভনিতা রেখে সোজাসুজি জিঞ্জাসা করলো,
> তোমাদের অফিস থেকে কাজের জন্য বাইরে গেছে কতজন? কোথায় গেছে?
মেহুল অবাক হয়ে বলল,
> কিসের কাজে আবির? আমাদের এখান থেকে বাইরে কেনো কাজে যাবে? অফিসের শাখা আছে। কোনো দরকার থাকলে ওরাই করে দিয়ে থাকে আমাদের যাওয়া লাগে না। কেনো বলোতো?
> হৈমী এসেছিল অফিসে?
> হুম এসেছিল আবারও চলেও গেছে। বলল জান্নাত কান্নাকাটি করছে তাই তাড়াতাড়ি ফিরে গেছে। কেনো বলতো?
> কিছু না।
> শুনো…

আবির শুনলো না খট করে ফোন রেখে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো। সেক্রেটারি জাবেদকে ফোন দিয়ে হৈমন্তীর নাম্বার দিয়ে বলে দিলো খোঁজ করতে। মেয়েটা এমনি গায়েব হয়নি। গায়েব করা হয়েছে। নিজের বুদ্ধির তারিফ করতে ইচ্ছে করছে। বেকুবের মতো ভয় পেয়ে ওরে দূরে থাকতে বলে বিপদে পড়তে হলো। মেয়েটা ভালো আছে কি আল্লাহ্ ভালো জানে। আবির আগে জান্নাতকে নিয়ে আসলো। মেয়েটা ওকে দেখলে বেশ শান্ত হয়ে থাকে। আবির বুঝতে পারছে না কথাগুলো আরাফাতকে বলা উচিৎ কিনা। পুলিশের সাহায্য নিলো। কিন্তু বারো ঘন্টা না হলে কিছুতেই কেস নিতে চাইলো না। এক সেকেন্ড টাইম যাচ্ছে না আবার বারো ঘন্টা। বিপদের মধ্যে আরেক ঝামেলা। আরশী ঘনঘন ফোন করছে বাড়িতে ফেরার জন্য। ওর মা বাবা এসেছে কিসের কথাবার্তা বলবে। আবির সাফ জানিয়ে দিলো ফিরবে না। ফোনটা চালু রাখতে হবে।

মন খারাপ করে বসে আছে আমেনা বেগম। শরীর ঠিক লাগছে না। বড়মেয়ের বলা কথাগুলো উনাকে আঘাত করেছে। মেয়েকে সুখে রাখতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা মরার মতো বেঁচে আছে। কি করে দিবেন এই পাপের মাশুল? দুটো মেয়ের জীবন উনি নিজ হাতে নষ্ট করেছেন। কথাগুলো ভেবে উনার পেসার হাই হয়ে যাচ্ছে। প্রচুর ঘামছেন। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করছে। ফ‍্যানের বাতাস গায়ে লাগছে না। ছোট মেয়ের জীবনটা উনি তছনছ করেছেন। শুধু ভেবেছেন বড় মেয়ে ভালো আছে ছোট মেয়েকেও বোনের মতো ভালো থাকতে হবে।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৬

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বড় মেয়েটাই ভালো নেই। যাকে উনি আগে অহংকার ভাবতেন তাকে এখন বিষাক্ত লাগছে। মা হয়ে কিভাবে সন্তানের এমন সর্বনাশ করেছেন নিজের উপরে নিজের ঘৃণা হচ্ছে। বড় মেয়েটা না আসলে তো উনি বুঝতেই পারতেন না উনার সিদ্ধান্তগুলো কতটা খারাপ ছিল। মেয়ে দুটো দাঁতে দাঁত চেপে মায়ের দেওয়া কষ্ট সহ‍্য করে বেঁচে আছে। আর উনি চোখে পর্দা টাঙিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমেনা বেগমের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। চারদিক ঘুরছে। শরীর থরথর করে কেঁপে উনি ধপাস করে পড়ে গেলেন। চয়নিকা শাশুড়ির কাছেই আসছিল হঠাৎ শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখলো আমেনা বেগম উল্টে পড়ে আছে। ও চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডেকে নিলো। রাজীব তাড়াতাড়ি মাকে নিয়ে হাসপাতাল ছুটলো। বয়স হয়েছে হার্ট এটাক হলে রক্ষা নেই।

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৮