সঞ্চারিণী পর্ব ১০+১১+১২

সঞ্চারিণী পর্ব ১০+১১+১২
আফনান লারা

ফেরদৌস হাসানের কথা শুনে শাওন কিছু সময়ের জন্য থম হয়ে ছিলো।
-‘মেধার মতন ভীতুর ডিম একটা মেয়ের বাবা কিনা দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার?বিশ্বাস করতে কষ্টে হচ্ছে তাও করতে হলো।কারণ উনি তো মিথ্যে বলবেননা।
পুলিশ অফিসারদের মেয়ে হবে সাহসী,কাজে পটু।যাই হোক আমার কি।সব গিয়াস স্যার জানেন।’
রকি গাল ঘঁষতে ঘঁষতে ডাক্তারকে ইশারা করলো

শাওন সেটা খেয়াল করেনি।সে মেধার বাবার কথা ভাবছে।ডাক্তার এগিয়ে এসে বললেন,’সরি স্যার।আপনাকে এখন উনাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা বন্ধ করতে হবে।পেশেন্টের অবস্থা এখনও ঠিক হয়নি।এভাবে চাপ প্রয়োগ করলে হিতের বিপরীত হবে।উনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।আমরা কোনো রিস্ক নিতে চাইনা’
শাওন রকির দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি এখন যাচ্ছি।আবার আসবো।যদি পালিয়েছো তো তুমি যে গর্তেই ঢুকে থাকোনা কেন শাওন তোমার কান টেনে বের করে আনবে মাথায় রেখো।’
কথাটা বলে শাওন চোখ রাঙিয়ে চলে গেলো।রকি ও চলে যাবার পরেই বেড থেকে নেমে জানালায় হাত রেখে তাকিয়ে রইলো শাওন একেবারে হসপিটাল থেকে চলে যাওয়া অবধি।তারপর চেয়ারে বসে ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করলো।কি সব বুঝিয়ে দিলো ওপারের মানুষটাকে।
শাওনের গাড়ী ঠিক করেছে তার পাঠানো লোক।সেটা এখন এদিকেই আসছে।মিনিট পাঁচেকেই পৌঁছে যাবে।কড়া রোদের নিচে দাঁড়িয়ে আছে সে।মাথায় ঘুরছে নেক্সটে কি চাল চালা যায় তার ভাবনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেধা গেস্ট রুমটা দেখতে এসেছে।আশার বাবার সঙ্গে তারও কথা বলা উচিত।এটা গিয়াস রহিম মনে করেছেন তাই ওকে আর নিতুকে পাঠিয়েছেন এখানে।
মেধা উনাকে পানি আর ঔষুধ এগিয়ে দিয় উনার পাশে বসলো চুপচাপ।নিতুর দিকে তাকিয়ে আশার বাবা বললেন,’আমার মেয়েটা একদম তোমার মতন দেখতে ছিলো।নাক চিকন ‘
মেধা মাথা ঘুরিয়ে বললো,’আপনার মেয়েকে আপনারই সামনে কখনও মারতো রেদোয়ান?’
-‘নাহ।তবে রেদোয়ানের একটা ভাই আছেনা?? ‘
-‘হুম।চেনেন আপনি?কি করেছে সে?’

শাওন এখন রেদোয়ানের বাড়িতে এসে নুহাশের সাথে কথা বলছে রকিকে নিয়ে।
-‘বুঝলে নুহাশ।রকিকে দেখে আমার একবারও বেকুব মনে হলোনা।তাও সে বেকুব হওয়ার নাটক করেই চলেছে।কি প্রমাণ করতে চাইছে সে?’
-‘কি বলো শাওন!ওকে দেখে খাইষ্টা একটা লাগে।ও চতুর হতেই পারেনা’
-‘ইয়েস।ও চতুর।হসপিটালে রোগীরা শেভ করার মনমানসিকতা খুঁজে পায়না আর তার মুখ ক্লিনলি শেভড্ ছিল।তাছাড়া ড্রেস আপ,পারফিউম,ফোনে এলার্ম লাগিয়ে রাখা এসব একজন অসুস্থ মানুষ কেন করবে?এলার্ম বাজলো ঠিক সেসময়ে যখন আমি কেবিন থেকে বাহিরে পা রাখলাম।ওর মাথায় পরিকল্পনা ঘুরছে।সেটা কি আমাদের জানতে হবে।তার জন্য ওকে হসপিটালের বাহিরে নিয়ে আসতে হবে।ওর উপর কড়া নজর রাখো।’
রায়হান ফোন রেখে এগিয়ে এসে বললো,’শাওন এখানে একটা ল্যাম্প পোস্ট আছে।দেখেছিলে?’

-‘হুম।কেন?’
-‘ওটাতে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।আজকেই দেখলাম’
নুহাশ হাত ভাঁজ করে ঠোঁট উল্টে বললো,’তাতে বেশি লাভ হবেনা।ওটা দিয়ে শুধু গেস্ট হাউজই দেখা যাবে।রেদোয়ানের বাসার পেছনের সাইডটাই নজরে আসবে শুধু’
-‘নুহাশ আর রায়হান চলো আমার সঙ্গে।সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা উচিত।একটু হলেও ক্লু পাবো।মনে রাখতে হবে অনু পরিমাণ কোনো কিছুকেও আমরা নজরের বাহিরে রাখবোনা।তাছাড়া আশার বাবার থেকে আরও কিছু জানতে হবে।রেকোর্ডের প্রয়োজন আছে।উনাকে দেখে মনে হয় না এরপরে আর ভালোভাবে কোনো কিছুর উত্তর দিতে পারবেন’
তাই এই বুদ্ধি সেঁটে তিনজনে গেলো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যেই অফিসে পাওয়া যাবে সেখানে।আশার বাবার কাশি উঠেছে বলে নিতু পানি নিতে গেছে।মেধা পকেটে হাত ঢুকিয়ে এদিক ওদিক দেখছে সামনের জানালাটা দিয়ে।আশার বাবা স্পষ্ট কথা বলতে পারেননা।শুধু কাশি আসে তার।
পানি খেয়ে যদি ভালোমতন কিছু বলতে পারে তাতেই বা মন্দ কি।ঐ শাওনরে বুঝিয়ে দিতে হবে আমিও অনেক ইনফরমেশন বের করতে পারি।দরকার হলে ইমোশনালি বুঝাবো।’

-‘আরে ভাই এটা তো আজকের ফুটেজ মনে হয়।আমাদেরকে কয়েকদিন আগের ফুটেজ দেখাও।আমি শুধু শুধু এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে দেখতেছিলাম’
-“ওয়েট আ মিনিট নুহাশ।দূরে একটা লোককে দেখতে পাচ্ছো?পাঁচ মিনিট হলো আমরা ভিডিও দেখছি সে ঐ জায়গা থেকে এক বিন্দু ও নড়েনি।এরকম নির্জন এরিয়াতে তার কি কাজ?ভাই একটু সামনে আনুন তো’
কর্মকর্তা শাওনের কথা মতন জুম করলো তারপর দু মিনিট এগিয়ে আনলো ভিডিওটা।আজকের সকাল এগারোটা দুই বাজে তখন।

লোকটা এবার গেস্ট হাউজের কাছাকাছি এসে বাউন্ডারিতে হাত লাগিয়েছে।রায়হান, নুহাশ আর শাওন নড়েচড়ে দাঁড়ালো।লোকটার পরনে হলুদ রঙের পোশাক।মুখটার কিছুই দেখা যায়না।
লোকটা এবার বাউন্ডারি টপকে ভেতরে ঢুকে গেলো।এত দূর থেকে আর কিছু দেখা গেলোনা।সে কি করলো না করলো।ল্যাম্প পোস্ট টা এমন জায়গায় যে বাউন্ডারির ভেতরে কি হচ্ছে তা বোঝা যায়না।
-‘নুহাশ খেয়াল করেছো?সে বাউন্ডারিতে যাওয়ার আগে তার হাতে একটা কালো সাইড ব্যাগ ছিল।বাট সে বেরিয়ে আসার পর সেটা ছিলনা’
-‘রাইট!!’

শাওন কপালে হাত দিয়ে কি মনে করে দ্রুত গতিতে ছুটলো রেদোয়ানের বাড়ির দিকে।রায়হান শাওনকে ছুটতে দেখে বললো,’কি হতে পারে?ও মাই গড!বোমা নয় তো?’
নুহাশ চোখ বড় করে বললো,’নিতু আর মেধা গেস্ট হাউজে!!না এটা হতে পারেনা’
শাওন ছুটে রেদোয়ানের বাড়িতে ঢুকে গেস্ট হাউজ অবধি এসে আর যেতে পারলোনা।বোমা ফেটে গেছে ততক্ষণে।চোখের সামনে দাউ দাউ করে গোটা গেস্ট হাউজে আগুন জ্বলছে।নুহাশ হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আগুন দেখে চিৎকার করে আগুনের দিকে যাওয়া ধরতেই রয়হান ওর বুকে জড়িয়ে ধরে আটকে ফেললো।নুহাশ চিৎকার করতে করতে বলছে,’আমার নিতুকে বাঁচাতে হবে।আমার হাত ছাড়ো রায়হান।হাত ছাড়ো ফর গড সেক!!”
নিতু পানির বোতল হাতে রেদোয়ানের বাড়ির ভেতর থেকে ছুটে এদিকে নুহাশের কাছাকাছি এসে হাত থেকে বোতল ছেড়ে দিয়ে বললো,’মেধা!!!’

শাওন নিতুর মুখে মেধার কথা শুনে ছুটে গেলো আগুনের দিকে।আগুনে আছে তার মানে এরপর কি করা উচিত তা ভাবার সময় নেই।আগুন থেকে বাঁচানো দরকার।আগুনে কাউকে পুড়তে দেখলে একটা সেকেন্ড নষ্ট করা মানে তাকে পুড়তে দেখা।একজন মানুষ হয়ে আরেকজনকে পুড়তে দেখা যেখানে আপনার হাতে আছে তাকে বাঁচানোর উপায়।
এই ভুলটা বছর খানেক আগে হয়েছিল আর কখনও হতে দেওয়া যাবেনা।

দরজায় আগুন। গেস্ট হাউজটা ভেঙ্গে পড়ছে ধীরে ধীরে।শাওন ঢুকতে গিয়েও পারলোনা।চোখের সামনে একটা ঘটনা ভাসছে শুধু।দম ফেলে কোট খুলে মাথায় চাপিয়ে দরজা টপকে ভেতরে গেলো সে।আগুন ছাড়া চোখের সামনে কিছুই দেখছেনা। ‘সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছে।মনে হয় এই বুঝি সম্পূর্ণ দালান ভেঙ্গে পড়বে।ছাদ খসে পড়ছে।শাওনের মাথার উপর থেকে কোটটা ছিঁটকে পড়ে গেলো আগুনের মধ্যে।
ওর মাথা ঘুরে উঠলো।হঠাৎ টের পেলো কেউ একজন ওর হাত মুঠো করে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ওকে দালানের বাহিরে।পেছনে তাকিয়ে মেধাকে দেখতে পেলো সে।
মেধা ওকে নিয়ে বাসা থেকে বের করিয়ে এনে নিজের চুলে লাগা আগুন হাত দিয়ে নিভিয়ে রেগে রেগে বললো,’আপনার মাথা ঠিক আছে তো?আগুনের ভিতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?মরার শখ জেগেছে?’

-‘তুমি!’
মেধা এবার শাওনের চুলে লাগা আগুন নিভাতে গিয়ে হেসে ফেললো।তার চুল লম্বা বলে পোড়া চুল কেটে ফেলা যাবে কিন্তু শাওনের চুল তো ছোট।ওকে কিরকম লাগছে হাসা ছাড়া উপায় নেই। ওকে এই চুল আবার বড় হওয়া অবধি সবার হাসিঠাট্টা শুনে যেতে হবে।
হাসি দমিয়ে সে বললো,’ আমি এই বাসাতে ছিলাম না।আমি তো রেদোয়ানের পুল দেখতে গিয়েছিলাম।এসে দেখি সব শেষ।আর আপনি বাসার ভেতরে এত এত আগুনের মাঝে দাঁড়িয়ে “তেরে বিনা মুজে নেহি জিনা” সিন করছিলেন?’
শাওন মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে।মেধা শাওনের হাত ছেড়ে দিয়ে গেস্ট হাউজের দিকে তাকিয়ে বললো,’পানি দিয়ে আর লাভ আছে??আশার বাবার হাঁড় ও তো পাওয়া যাবেনা’

শাওন কথা বলতে পারছেনা।কিছু সময়ের জন্য ঘোরের মাঝে ডুবে গিয়েছিলো সে।রশ্নিকে তো এরকম একটা ঘটনায় হারিয়ে ফেলেছিল।ভাবলো আজ তার চোখের সামনে ঠিক একই ঘটনা ঘটতে চলেছে।
ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আসতে দেরি করছে বলে গার্ডরা মিলে পুল থেকে পানি এনে এনে আগুনের দিকে ছুঁড়ে মারছে এখন।হাত লাগিয়েছে নুহাশ,রায়হান আর শাওন ও।

মেধা শাওনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঘাসের উপর বসে আছে।।কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী এসে গেলো।তাই হাতের কাজ রেখে এক এক করে শাওন,রায়হান আর নুহাশ একেক জায়গায় বসে হাঁপাচ্ছে।
নুহাশ নিতুর হাত শক্ত করে ধরে নিরবে কেঁদেই যাচ্ছে।ওর মাথা কাজ করছিলো না নিতুর বিপদের কথা চিন্তা করে।সে ওকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেই পারেনা।ভেবেছিলো সব শেষ।এখন ওকে সুস্থ দেখে আবেগে কেঁদে ফেলেছে সে।এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তার।প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়টা যেন জলন্ত রুপে দেখলো।তাকে কতখানি ভালোবাসে এক মূহুর্তে যেন আগুনের শিখার মাঝে ফুটে উঠছিল সব।

আগুন নিভাতে ঘন্টা খানেক লেগে গেলো।আশার বাবা মারা গেছেন।তারা পোড়া লাশ দেখে মেধার গা শিউরে উঠলো।পিছিয়ে গেলো সে।কিছুক্ষণ আগেও এই লোকটার সাথে তার কথা হয়েছিলো।পানি এগিয়ে দিয়েছিলো সে।তার হাতেই জীবনের শেষ খাবার খেয়েছিল লোকটা।আর এখন তিনি মৃত।মেয়ের পর মেয়ের বাবার মৃত্যু।কার শত্রুতা থাকতে পারে উনার সঙ্গে?
সব কিছু হুট করে হয়ে গেলো।আচমকা একটা ঝড় সবার বুক কাঁপিয়ে তুলেছে।না জানি আর কত কিছুর সম্মুখীন হতে হবে।’

শাওন লাশের মুখটা সাদা কাপড়ে ঢেকে মেধার দিকে তাকিয়ে বললো,’কি কি জিজ্ঞেস করেছিলে উনাকে?শেষবার তো তুমি উনার সঙ্গে কথা বলতে গেস্ট হাউজে গিয়েছিলে।সেসব বাদ দিয়ে পুল সাইডে কেন গেলে?’
মেধা লাশটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’বলছে আর কই!কাশির জন্য কিছুই বলতে পারছিলেন না।এক শব্দ বলতেন আর কাশতেই থাকতেন।

নিতু আপু তাই তো গেছিলো পানি আনতে।আমি জানালা দিয়ে বাহিরেটা দেখছিলাম।হঠাৎ নজরে আসলো রেদোয়ানের পুলটা।তাতে কি যেন ভাসছিল দেখে আমি তন্মধ্যে ছুটে গেলাম সেখানে।গিয়ে কিণারায় একটা পলিথিন ভাসমান অবস্থায় পেলাম যেটার থেকে আঁশটে গন্ধ আসছিল।সেটা আমি সেফ জায়গায় রেখে এসেছি অবশ্য।ফরেনসিকে পাঠিয়ে দিবেন।রক্ত হতে পারে অথবা অন্য কিছু।’

মেধার কথা শুনে শাওন গেস্ট হাউজের পেছন দিকটা ঘুরে দেখতে গেলো।
নুহাশ এগিয়ে এসে ওর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে বললো,’আশার বাবা হয়ত খুনির সন্ধান দিতে পারতেন।আর তাই খুনী তাকে জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়েছে। একজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে শত্রুতা দেখালো।কতটা জঘন্য হতে পারে সেই খুনি।আচ্ছা যদি উনি খুনির নামই বলতে পারতেন তাহলে আমাদের কেন বলেননি?’
-‘আশার বাবার ভুলে যাবার অভ্যাস।তবে হুটহাট উনার আবার মনেও পড়ে যায়।

আমাদের আগে দেখতে আর কে আছে এই কেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত।এমন ও হতে পারে আমরা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আগেই খুনি তাকেও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলো।নেক্সটে আর কারা কারা উইটনেস দেওয়ার আছে তাদের নাম লিস্ট করে ফেলো।তারা সবাই বিপদে আছে।একজন বয়স্ক মানুষকে মারতে পেরেছে, এই খুনি সব করতে পারবে।যাকে আমরা বাঁচাতে চাই তাকে সেটা জানাতে হবে। এই খুনি তাকেও খুন করতে চাইবে। তাকে সাবধান করে গার্ড দিয়ে নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।তাছাড়া আমাদের একটা কড়া প্ল্যানও করতে হবে।আজকে রাত নয়টায় মিটিং ডাকলাম, সবাইকে জানিয়ে দাও।’

মেধা বাড়িটার ভেতরে ঢুকলো দেখতে দেখতে।আগুনে সব পুড়ে গেছে।পানি দিয়ে নেভানোর পর এখন শুধুই ধোঁয়া।মুখে হাত দিয়ে মেধা চারিদিকটা দেখছে এখন।বুক ধরা কাশি আসছে।এত এত ধোঁয়া কোনো কিছু স্পষ্ট ভাবে দেখাই যাচ্ছেনা।একটা বোমা সবকিছুর চিহ্ন মুছে দিলো।
একজন সহজ সরল মানুষকে এভাবে হত্যা করলো।যে করেছে তাকে শাস্তি পেতে হবে।তাকেও মরতে হবে’
শাওন দূরে দাঁড়িয়ে থেকে ওকে এক ধমক দিয়ে বললো,’ওখানে কি করো তুমি?এবার তোমার মরার শখ জেগেছে?ছাদটা যেকোনো সময়ে ভেঙ্গে পড়তে পারে জানো না?’
শাওনের ধমকে মেধা বাড়ি থপকে বের হতেই কল আসলো মায়ের।এসময়ে মা কখনও ফোন করেনা।এক রাশ কৌতূহল মাথায় চেপে রিসিভ করলো সে।

-‘তোর একটা পার্সেল এসেছে।খুলবো নাকি আলমারিতে রাখবো?তোরে তো বিশ্বাস নেই।কে জানে বোমা- টোমা লুকিয়ে রেখেছে কিনা কে জানে?যদিও ওজনে হালকা’
-‘ওহ।পার্সেল?কে পাঠিয়েছে?নাম লেখা আছে?’
-‘প্রেরকের জায়গায় লেখা সামওয়ান স্পেশাল।ফোন নাম্বার আছে।কল করে দেখিস’
-‘আচ্ছা, আলমারিতে রেখে দাও।আমি এসে দেখবো।আজ আসতে লেট হবে মিটিং আছে’
মেধা ফোন কান থেকে সরানোর আগেই দেখলো মিডিয়ার লোকগুলো হুমড়ি খেয়ে ছুটে আসছে এদিকে।মূহুর্তেই ওদের সামনের সব জায়গা দখল করে তারা দাঁড়িয়ে পড়েছে মাইক সামনে ধরে।মেধা ফোন কান থেকে সরালো এবার
একজন সাংবাদিক ওকে প্রথম প্রশ্ন করে বসলো।বললেন,এটা বোমা হামলা নাকি অন্য কিছু।
মেধা কিছু বলার আগেই শাওন এসে বললো-‘এটা বোমা হামলা ছিল।’
শাওনকে সাংবাদিক আরেকজন প্রশ্ন করলেন,’সব অফিসার এখানে উপস্থিত থাকার পরেও এতবড় দূর্ঘটনা ঘটলো কি করে’

-‘কথাটা ভুল।আমরা সব অফিসার ছিলাম না।আমি, নুহাশ এবং রায়হান সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে গিয়েছিলাম এখান থেকে দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে।মিঃ রেদোয়ানের বাসায় আমাদের অফিসার মেধা আর নিতু ছিলেন।’
-‘একজন আসলো আর বোমা রেখে গেলো।আর আপনারা টেরই পেলেন না?’
-‘টের পাওয়া যেতো যদি এই বাসায় সিসি ক্যামেরা থাকতো।ভবিষ্যতে কি হবে কে জানে?খুনি একবার যে হামলা করেছিল দ্বিতীয় বার একই জায়গায় হামলা করবে কে জানতো??
এখনও হামলা করতে পারে সেটা ভেবে আপনি কি দৌড় মারবেন না?নাকি আমাদের মতন ভেবে বসে আছেন তৃতীয় বার হামলা করতে পারেনা সে।

টু মার্ডার কেস ছিল এটা।এখন থ্রি।ট্রিপল খুনের দায় একজনের উপর।সে আরেকটা খুন করতে পিছপা হবেনা।এবার হলে তার তিন দশে ত্রিশটা খুন করতেও হাত কাঁপবেনা।মানে আপনারা সহ।
বোমা রেখে গেলো আর কাজ শেষ।সুতরাং এরকম প্রশ্ন করবেন না।আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন।এমনিতেও আর একটুর জন্য আমাদের দুজন অফিসারের জীবন বাঁচানো হুমকির মুখে পড়তো।ভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে গেছেন।আমরা এমন জায়গায় কেস দেখতে এসেছি যেখানে না আছে সিসি ক্যামেরা,না আছে পাড়া প্রতিবেশী।যা করতে হচ্ছে সব অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার মতন।লেগে গেলে কেস সলভড্।
না লাগলে টু বি কন্টিনিউ।আজকের জন্য এই টুকুই।আপনারা এখন যেতে পারেন।’

মেধা শাওনের দিকে তাকিয়ে আছে।
-‘ওর সাথে কি এখন ভূতটা আছে?থাকলে সে পারে না ভৌতিক কিছু করে চমক সৃষ্টি করতে?কি জানি কি টাইপের ভূত।মেয়ে নাকি ছেলে?অফ কোর্স মেয়েই হবে।কারণ একটা ছেলে তো আরেকটা ছেলের বোতাম লাগিয়ে দেয়না।মেয়ে হলে সে সম্পর্কে কি হয়!অবশ্যই গফই হবে। লোকটার জন্য কি দেশে মেয়ের অভাব পড়েছিলো?কি জানি!!বেশি কাছে দাঁড়াবোনা।নাহলে তার গফের ভাই তাই এসে আমার প্রেমে পড়বে।এরপর আমার বোতাম ও….’
কথাটা বলে মেধা নিজের গায়ের শার্টটা খাঁমছে ধরে ঢোক গিললো।বুকে থুথু দিয়ে বললো,’না না।আমার অদৃশ্য ভূত টাইপের বয়ফ্রেন্ড লাগবেনা।আমি এমনিতেই ভালো আছি।’

শাওন রেদোয়ানের বাসার দিকে চলে গেছে।মেধা আশার বাবার লাশটার আবারও দেখতে গেলো।নিতু ওকে থামিয়ে বললো,’লাশ এভাবে দেখলে খারাপ স্বপ্ন আসে রাতে।ঘুম তো একেবারে গায়েবই হয়ে যায়।অনেক সময় তো চোখের সামনে মনে হয় লাশ দাঁড়িয়ে আছে।’

শাওন মাথার চুল টেনে টেনে ছিঁড়ছে যেগুলো পোড়া গেছে।রশ্নি ওর মাথায় হাত রেখে বললো,’আগুন দেখে সেই ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো তাইনা?তোমার সারাশরীর কাঁপছে।আজকে বাসায় ফিরে যাও।আর কাজ করতে হবেনা।রেস্ট নিতে হবে তোমায়।শরীর খারাপ করলে পরে ডিউটিতেই আসতে পারবেনা।তৃনা আপুর বিয়েতেও তো ছুটি নেবে তাইনা?’

-‘না।আমি ঠিক আছি।ভেবেছি চোখের সামনে আরেকটা অগ্নিকান্ড দেখতে যাচ্ছি।একটাতে আমি কিছুই করতে পারিনি।আমার চোখের সামনে তোমাকে চিরজীবনের জন্য চলে যেতে দেখেছি।দ্বিতীয়বার একই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।
-‘সবার সাথে একই ঘটনা ঘটেনা শাওন।তাছাড়া আমি চিরজীবনের জন্য গেলাম কই?এই যে দিব্যি তোমার পাশে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।থাকছি অস্থায়ী ‘
-‘স্থায়ী কেন নয়?’

শাওন ঘুরে বসে রশ্নির হাত মুঠো করে ধরলো।রশ্নি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’যেদিন তুমি আমায় ভুলে যাবে সেদিন আমি তোমার স্মৃতি থেকে মুছে যাবো একেবারে।অবশ্য তা নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই।আমি চাই তুমি আমায় ভুলে গিয়ে একটি নতুন জীবন শুরু করো।একজন সত্যিকারের মানুষের সঙ্গে।যে ভালোবাসা দিয়ে তোমার স্মৃতি থেকে আমায় ভুলিয়ে দেবে’
রশ্নি এমন ভাবে স্পর্শ করে মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি সে ফিরে এলো।তার ছোঁয়াতে বাস্তবতা খুঁজে পেলেই মনে হয়, নতুন করে আশা জাগে হয়ত সে সত্যি সত্যি চলে এসেছে।আর কোনো দুঃখ রইবেনা।শুধু ভালোবাসা আর সুন্দর একটা সমাপ্তি।

এর ভেতরে হঠাৎ বাবা ফোন করে ওকে আসতে বললেন বাসায়।কারণ তৃনার হবু শ্বশুর বাড়ির লোক এসে গেছে।তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই শাওনকে দেখতে চাচ্ছে তাই সে যেন জলদি চলে আসে।
শাওন বেশ ভালোমতন বুঝতে পেরেছে যে বাবা কেন এত তাড়া দিচ্ছে।এর কারণটা হলো তৃনার ননদের সঙ্গে ওর বিয়ের আলাপ জমানোর কথা আজ।সে মুখের উপর বলে দিলো তার ফিরতে অনেক রাত হবে।আজ মিটিং এটেন্ড করতে হবে।মিটিংটা যে সে ডেকেছিল এটা বাবাকে বললোনা।
রশ্নি অনেক রিকুয়েস্ট করেও শাওনকে বসা থেকে এক বিন্দু ও ওঠাতে পারেনি।

গিয়াস স্যার মেধাকে বলেছেন বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে।মিটিংয়ের এখনও দেরি আছে।আজকের জন্য সে যেন এখান থেকে বিরতি নেয়।মেধার ও শরীরটা দূর্বল লাগছিল তাই গিয়াস স্যার বলতেই রাজি হয়ে গেলো।বাস ধরে বাসায় এসে গোসল দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় আলমারির ভেতরে রাখা পার্সেলটা সে বের করে বিছানায় গোল হয়ে বসলো।বাবা বাসায় নেই।মৌমিতা ঘুমাচ্ছে।বিকেল এখন।বোমা হামলার কথা মেধা এখনও মাকে জানায়নি।জানালে মা যুদ্ধ শুরু করবে এই চাকরি ছাড়ানোর জন্য।হয়ত আজকেই ছাড়িয়ে ছাড়বে।রক্ষে নেই।

নীল রঙের মোড়ক পার্সেলটার।তাতে আবার ফুল একটা লাগানো।ফুলের সাথে কাগজ ঝোলানো একটা সুতির গোলাপি রঙের দড়ি দিয়ে।তবে সেই কাগজটা একেবারেই ছোট একটা কাগজ।কাগজটাতে শুধু লেখা,’গেস কর’
মেধা বক্সের নীল মোড়কের সেই কাগজটা ছিঁড়লো সবার আগে।ভেতরে কার্ড বোর্ডের একটা বক্স।বক্সটা কেঁচি দিয়ে কাটলো সে।এক হাত দিয়ে টেপ খোলা অসম্ভব।বক্সটাতে টিস্যু মোড়ানো একটা জিনিস দেখতে পেলো সে।জিনিসটা হলো একটা ধারালো ছুরি।তাতে রক্ত মাখানো।শুধু তাই নয়।ঐ ছুরির সঙ্গে একটা বন্দুক ও আছে।খেলনা বন্দুক।টিপ দিলে একটা আওয়াজ ভেসে আসে।জোকারের হাসি।বিরাট বড় একটা কাগজ ছিল তার ঠিক পেছনে।কাগজে ইংরেজীতে লেখা সব।তবে সেটা বাংলা কথা।তাতে লেখা আছে

-‘ডিয়ার মেধা!
ওপস!মেধা অফিসার।ক্রাইম ব্রাঞ্চের মেধা না আপনি??হাতের চোট ভালো হয়েছে?নাকি এখনও এক হাত দিয়ে জামা চেঞ্জ করতে হয়?সমস্যা না।যেদিন হাত ভালো হবে সেদিন দেখবি পা কাজ করছেনা।খুব ভালো লাগে কাউকে টর্চার করতে, স্পেশালি তাদের! যারা আমাকে ধরার মিশনে নামে।বাই দ্যা ওয়ে!গিফট কেমন লাগলো?ছুরির রক্তটা কিন্তু তোর।তোর হাতেরই রক্ত।আফটার অল চোট টা তো আমিই দিয়েছিলাম।ভালোই ভালোই ক্লিপটা আমাকে হস্তান্তর কর নাহলে আমি কি জিনিস সেটা তো আর বোঝাতে হবেনা?আমার লোকদের কি হাল করেছো দেখলাম।আসলে এরকম চটপটা মেয়েদের টর্চার করতে আলাদা শান্তি আছে।কপালে ঘাম জমবে,ঠোঁট ভেজানো থাকবে,চোখে এক রাশ হিংসা,ক্রোধ,হাত ছাড়া পাবার লালসা!!ইশ!!কবে সেই হালে তোকে একটিবার দেখবো!

নেক্সট যাদের পাঠাবো তারা মোটেও ভীতু হবেনা।জাস্ট ক্লিপই তো চাইছি এটাতে তুমি এরকম দ্বিধান্বিত হয়ে যাচ্ছো কেন?
তোমার কি ছোট বোনটার জন্য মায়া হয়না?তোকে সম্মান দিয়ে তুমি বলছি।নাহলে তুই ছাড়া বলতে পারিনা আমি।ক্লিপটা নিজের কাছে না রাখলে তোমার কপালে শনির দশা এসে জমতো না।কি দরকার বোঝা কাঁধে ফেলে?ক্লিপ দাও আর স্বাধীন ভাবে বাঁচো।আমি তোমায় দেখতেও আসবো না আর।
জাস্ট আমার ক্লিপ চাই।তারপর না তুমি আমায় চিনবে আর না তোমায় আমি চিনবো ‘

মেধা কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো।মা আসছে এদিকে।কথা শোনা গেলো।তাড়াহুড়ো করে বক্সটা লুকিয়ে ফেললো সে।একেবারে বালিশের তলায়।মা ওর সামনে কফির মগটা রেখে বললেন,’তোর না পার্সেল এসেছিল?কই দেখি কে, কি পাঠালো?’
-‘অফিসের কাগজপত্র। ওসব দেখে কি করবে?’
-‘ওহ।শুনলাম ঐ বিজন্যাসম্যান রেদোয়ানের আর তার স্ত্রীর কেসটা তুই ও সামলাচ্ছিস।’
-‘কে বললো?’

-‘কে আর।তোর বাবা বলেছে।আজকে গিয়েছিলো তো ঐ রেদোয়ানের বাসায়।তোর একটা কলিগের সঙ্গে গিয়ে কোথা থেকে ঘুরেও এসেছে।ছেলেটা নাকি অনেক ভালো।কাজে এক্সপার্ট।সে নাকি একাই খুনীকে বের করতে পারবে তোর বাবার মনে হলো।
-‘কে?’
-‘নাম মনে হয় শাওন’
মেধা ভেংচি কেটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।মা ওর হাতের প্লাস্টারটার দিকে তাকিয়ে বললেন,’কাল গিয়ে এটা খুলে আসিস।কদিন তো হলো।দরকার হলে নতুন একটা লাগিয়ে আনবি এটা ময়লা হয়ে গেছে’
-‘হুম যাবো তো।

শাওন, নুহাশ আর নিতুকে পাঠিয়েছে বরিশালে।বাকেরগঞ্জ।দুজনে বাস ধরে রওনাও হয়েছে।সেখানে আশার একটামাত্র বান্ধুবীর বাসায় যাচ্ছে তারা।বান্ধবীর থেকে হয়ত কিছু হলেও খবর পাওয়া যাবে।এমন ও হতে পারে এই কেসের সঙ্গে সে জড়িত।তাকে সাথে করে নিয়ে আসবে তারা সোজা ঢাকাতে।
শাওন এখন রায়হান,মেধা আর বাকিদের নিয়ে কেসটা সামলাবে যতক্ষণ না নুহাশ আর নিতু আসছে।
আপাতত সাজিদ,মিলন এবং সামিয়া কেসে সাহায্য করবে।তারা এতদিন একটা কেসের কাজে নিযুক্ত ছিল।ঐ কেস শেষ তাই তাদের ডাকা হয়েছে এটাতে হেল্প করতে।মিটিংয়ে সবাই উপস্থিত হলেও মেধা এখনও আসেনি।নয়টা দশ বাজে।তার খবর নেই।শাওন বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।সাজিদ বললো হয়ত সে আসবেনা।মিটিং শুরু করা উচিত।শাওন বললো আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করবে।

পাঁচ মিনিট ফুরানের আগেই মেধা ছুটতে ছুটতে হাজির।হলুদ রঙের কোট,খোলা চুল আর মুখে মিষ্টি হাসি দেখে সাজিদ নামের নম্র- ভদ্র ছেলেটা দু মিনিটের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল স্বপ্নের দেশে।
“কিছু কিছু মেয়েকে পাগলামিতে দারুণ মানায় আর কিছু কিছু মেয়েকে পাগলামিতে সত্যি পাগল মনে হয়। প্রথমটার উদাহরণ মেধা আর দ্বিতীয়টার উদাহরণ পরে জানতে পারবেন।”
জিভ বের করে চুলগুলোকে ঠিক করে মেধা বললো,’সরি স্যার।একটু দেরি হয়ে গেলো।’
মিলন ব্রু কুঁচকে বললো,’একটু দেরি?ভেরি ফানি’

শাওন মেধার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। মেজাজ দেখাতে গেলে মিটিং করার মুডটাই বিগড়ে যাবে তাই হালকা দম ফেলে ঠাণ্ডা মাথায় সে বললো,’বোসো’
মেধা সাজিদের দিকে তাকাতে তাকাতে চুপচাপ চেয়ার টেনে বসলো।সাজিদকে চেনা মনে হলো।পরে মাথায় আসলো এরে টিভিতে দেখেছিলো সে।শাওনের সঙ্গে।ওর মতোই একজন অফিসার।কদিন আগের একটা কেস সাজিদ নিজে সলভ্ করেছিল।

শাওন ও বসেছে এবার।দুহাত সামনে এনে টেবিলের উপর রেখে বললো,’পয়েন্ট হলো নেক্সট আমরা যার থেকে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করবো ঠিক তখনই তার উপর হামলা হবে।
হতে পারে না,একচুয়ালি এটাই ঘটবে।একটা বোমা হামলা মুখের কথা না।’
সামিয়া বললো,’তাহলে স্যার আমরা পরবর্তীতে যার সঙ্গে কথা বলবো তাকে অধিক নিরাপত্তা দেবো।’
-‘নাহ।এরকম সহজ প্ল্যান আমরা কষবোনা।আমরা ঠিক উল্টো চাল চালবো।’
কথাটা বলে শাওন উঠে দাঁড়িয়ে হোয়াইট বোর্ডে মার্কার দিয়ে একজন মানুষ আঁকলো, তার সামনে তিনজন।তিনজনের উপরে লিখলো অফিসার’স।আর ঐ একজনের উপর লিখলো নেক্সট টার্গেট।’
এরপর পেছনে তাকিয়ে বললো,’এটা আমরা মিডিয়ার সামনে জানিয়ে দেবো।এবং এটাও বলবো আমরা তাকে কড়া নিরাপত্তা দেবো।’

মিলন কপাল কুঁচকে বললো,’তাহলে স্যার খুনী তো সব জেনে গেলো।সে হয়ত এবার হামলা করবেনা’
-‘অবশ্যই করবে।সে মজবুত হামলা করবে।তবে!!সে যার উপর হামলা করবে সে হবে আমাদের মাঝেরই একজন।মানেটা হলো আমাদেরই একজন নেক্সট টার্গেট হয়ে কাল নাটক করবে।খুনী হামলা করতে আসবে আর ধরা পড়ে যাবে।ইজি।আর যদি সে না এসে অন্য কাউকে পাঠায় তবে তাকে ধরলেও আমাদের লাভ আছে’
-‘স্যার যদি সে বোমা হামলা করে?’

-‘শোনো সাজিদ!সে যেই রকম পদ্ধতিই করে থাকুক না কেন তাকে কিন্তু আগে সিসি ক্যামেরার নিচ দিয়ে যেতে হবে।আর আমরা সিসি ক্যামেরার সামনে বসে দেখবো সে আসলে বোম দিয়ে মারতে চায় নাকি ছুরি,নাকি গান।একজন খুনী থেকে আমরা অফিসাররা নিজেকে বাঁচাতে পারলেও সাধারণ মানুষ পারবেনা।তাই টার্গেট সেজে আমাদেরই একজন অফিসার যাবে।নেক্সটে সব প্রশ্ন করতে চলেছি আশার একমাত্র বান্ধবী তন্নিকে।তন্নিকে সাথে নিয়ে নুহাশ আর নিতু ঢাকায় ফিরবে।তার লোকেশান আমরা বলবোনা।শুধু বলবো তার নাম তন্নি।
খুনী বুঝবে সে একটা মেয়ে।বাট সে তন্নিকে আগে দেখেনি।হয়তবা হালকা ঝাপসা দেখেছে।সাজলে তন্নির মতন সাজতে হবে।

সঞ্চারিণী পর্ব ৭+৮+৯

আমাদের একজন অফিসার তন্নি সাজে আমাদের সামনে প্রশ্নের উত্তর দিতে আসবে।এবার সামিয়া,এন্ড মেধা অথবা নিতু তোমরা তিনজনের মধ্যে ডিসাইড করবে কে টার্গেট সাজবে।’
সামিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’মেধার হাত ভাঙ্গা সে যদি টার্গেট সাজেও সহজে ধরা পড়ে যাবে।আমাদের এমন করে প্ল্যানটাকে মজবুত করতে হবে যেন গুপ্তচরও কানে ভুল শোনে।নিতু তো জার্নি করে এসে দায়িত্ব নিতে পারবেনা।সুতরাং কাজটা আমি করতে চাই’

-“ওকে।তৈরি হও।তবে যে বললে গুপ্তচরও যেন কানে ভুল শোনে সেটা তুমি ভুল বললে।গুপ্তচরকে আমরা সত্যিটাই জানাবো।সে গিয়ে খবর দেবে।কিন্তু সেই সত্যিটা বালি চাপা দিয়ে আমরা একটা নতুন সত্যি কাল উদ্ভাবন করবো।
আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটায় আমাদের নাটক শরু হবে।নিজেকে তৈরি করো।কারণ খুনী এসেই হামলা করবেনা।সে দেখবে কি হচ্ছে,কেন হচ্ছে কার সাথে হচ্ছে’

-‘ওকে স্যার।নিশ্চিন্ত থাকুন।এমন লুক নিয়ে আসবো আপনি নিজেও চিনতে পারবেন না আমায়।যদি তার জন্য আমাকে লম্বা চুল বয়ে আসতে হয় তাও করবো তারপরেও খুনীর চোখে আমি ধুলো দেবো।’
সাজিদ,মিলন আর সামিয়া চলে গেলো মিটিং শেষ হতেই।মেধা মুখটা গম্ভীর করে শাওনের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,’টার্গেট আমি হবো।এই সামিয়াকে আমি চিনি।ও বামহাতি শুটার।ডান হাতে কোনো কাজ পারেনা ঠিকমত।নিজেকে তো বাঁচাতে পারবেই না উল্টে আর কজন আহত হবে।’

শাওন হাত ভাঁজ করে দু কদম এগিয়ে এসে মেধার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,’তো তুমি কোন দিক দিয়ে পারফেক্ট?তোমার তো হাতই ভাঙ্গা।তার উপর তুমি গান ধরলে তোমার হাত কাঁপে।তোমাকে দিলে আহত হবে কি! নিহত ও হতে পারে সবাই।আমি এমনিতেও তোমায় নিতাম না’

সঞ্চারিণী পর্ব ১৩+১৪+১৫