সঞ্চারিণী পর্ব ৭+৮+৯

সঞ্চারিণী পর্ব ৭+৮+৯
আফনান লারা

প্রায় মিনিট দশেক ধরে শাওন চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে গাড়ীকে রিস্টার্ট করতে।মেধা ফাঁকা রাস্তা পেয়ে মাঝখানে বসে আছে গালে হাত দিয়ে।মাঝে মাঝে ফোন নিয়ে টুপ করে পাঁচ ছটা ছবি তুলে ফোন আবার রেখেও দিচ্ছে।তাও শাওনের মেকানিক হওয়ার ইচ্ছার লিমিট শেষ হয়না।লোকটার ধৈর্য্য আছে বলতে হবে।
সেলফি তোলার পর্ব শেষ করে মেধা খেয়াল করলো শাওন তাকে ফেলে সোজা হাঁটা ধরেছে।সেটা দেখে তাড়াহুড়ো করে সেও চললো ওর পিছু পিছু।শাওনের হাঁটার গতির সঙ্গে মেধা পার পাচ্ছেনা।থামলেই দেখে শাওন বহুদূরে।ওর কাছাকাছি যেতে পারা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে উঠেছে।কিন্তু শাওনের এদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।হাতের ঘড়িটা বারবার দেখতে দেখতে হেঁটে চলেছে সে।

-‘একটু থামুন না।পা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার’
শাওন হাঁটতে হাঁটতে বললো,’অনেকটা পথ বাকি।প্রায় ৫কিলোমিটার।এই পুরো রাস্তায় একটা ফিলিং স্টেশন ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়বেনা।বসে বসে সময় নষ্ট করে কাজ নেই।’
মেধা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’আজকেই কেস ক্লোজ করবেন নাকি?বাপরে আপনার এত মেধা?’
শাওন কিছু বললো না।বরং হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দিলো।মেধা হাঁপাতে হাঁপাতে পুনরায় রোডে বসে পড়েছে।
শাওন কিছুদূর গিয়ে থামলো।এবার সে নিজেও হাঁপিয়ে গেছে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে মেধার দিকে তাকালো সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেধা রাস্তায় বসে পা ধরে টিপছে।একে তো হাত ব্যাথা,কপাল ব্যথা সাথে এখন পা ব্যাথা।এই চাকরি করে আর কত কি সহ্য করতে হবে কে জানে।তারপর এই তার ছেঁড়া মার্কা সিনিয়র একজন কপালে জুটেছে।তিনি আমাকে নিজের মতন মনে করেন।আরে মেয়েদের শরীর হলো তুলোর মতন নরম।এদের আগলে রাখতে হয়।চরকার মতন ঘুরালে হয়?আমাকে পানি পাইছে।যে জায়গায় দেবে সেই জায়গায় মিশে যেতে হবে।নিজে তো তেল।তেলে আর জলে কি জীবনে মেশে?

হুহ!!মন চায় কোদাল দিয়ে সব শ্যাওলা উঠিয়ে ফেলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেলি।’
শাওন একটা মাইক্রো দেখতে পেলো একদম দূর থেকে আসছে মনে হয়।মুচকি এসে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো সে
ওর এমন দাঁত কেলানো দেখে মেধাও তাকালো।মাইক্রো দেখে মেধাও হেসে ফেলেছে।
শাওনের ইশারায় মাইক্রোটা থামলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো সেখানে শুধুমাত্র একটা সিট খালি আছে।মাইক্রোটা বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিল।বরযাত্রী নিয়ে।মানুষে গিজগিজ করছে তাও তারা ঠেসে ঠেসে একটা সিট খালি করতে পেরেছে ওদের জন্য।তার মাঝ থেকে মধ্য বয়স্ক একজন মহিলা মশকরা করে বললেন,’সম্পর্কে বন্ধুই তো হও তোমরা তাইনা?বন্ধু বন্ধুকে কোলে নিতেই পারে।বসে পড়ো আর তোমার বন্ধুকে কোলে নিয়ে নাও।এসবে লজ্জার কি আছে?বিপদে পড়লে এত সাত পাঁচ ভাবতে হয়না।বুঝলে?’

শাওন পিছিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ইম্পসিবল’
মেধা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,’আপনার প্রেমিকা মানে ঐ সিটটা রাগ করবে বুঝি?একটা বুদ্ধি দেই?
আপনি আমাকে কোলে নিয়েন।আমি আপনার প্রেমিকাকে কোলে নেবো।ইজি’
-‘চুপ!আমি তোমায় কোলে কেন নেবো?কিরকম চিপ একটা ব্যাপার।ভাবতেই লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে।দরকার নেই।তার চেয়ে বরং হেঁটে যাব আমরা’

মাইক্রোটা চলে গেলো।মেধা দাঁতে দাঁত চেপে হাঁটা ধরেছে আবার।শাওন এবার আস্তে আস্তে হাঁটছে।পথ শেষ হবার নাম নিচ্ছে না।যেন আরও বেড়েই চলেছে।বাঁকের পর বাঁক।মনে হয় এই বুঝি পথ শেষ হয়ে যাবে আর মৃত রেদোয়ানের বাড়ি নজরে আসবে।কিন্তু তা আর হচ্ছে কই?
বেশ অনেকদূর এসে একটা বাস দেখে মেধা লাফিয়ে উঠে বললো,’আমরা বাস পেয়ে গেছি।ইয়ে!!’
শাওন ভ্রু কুঁচকে বললো,’ডানে তাকাও’
মেধা ওর কথামতন ডানে তাকালো।এমা তাকিয়ে দেখলো রেদোয়ানের বাড়ির সামনে তারা।নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হয়ে রেদোয়ানের বাড়িতে ঢুকলো সে।
গিয়াস রহিম বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা কাঁচের দেয়ালটা দেখছিলেন মনোযোগ দিয়ে।শাওন উনার পাশে এসে দাঁড়াতেই মুখ ঘুরিয়ে বললেন,’এত দেরি হলো কেন?’

-‘স্যার আমার কার নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।হেঁটে এলাম।নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না ফোনে।নাহলে কল করে এক্সট্রা গাড়ী ডেকে আনা যেতো’
-“ওহ।যাই হোক!এই দেয়ালটা দেখেছো?দুটো মানুষের মৃত্যু হলো অথচ এত বড় বাড়ির কোণায় কোণায় ভাঙ্গচুরের চিহ্ন।আদৌ দুজন মারা গেছে নাকি এর পেছনে আরও মৃত্যু আছে?’
-‘স্যার সেটা হলে এতদিনে আমরা লাশ পেয়ে যেতাম’
নুহাশ কাছে এসে বললো,’শাওন আমি রেদোয়ানের ফুফাতো ভাইকে হসপিটালে দেখতে যাচ্ছি।তার আসলেই ডায়রিয়া হয়েছে নাকি আমাশয় হয়েছে তার পরীক্ষা করতে’
-‘যাও।ভালো করে সিওর হবা।পারলে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিও।আর হ্যাঁ!মিসেস রেদোয়ানের বাবা আসার কথা না?তিনি কি এসেছেন?’

রায়হান বাড়ি থেকে বের হতে হতে বললো,’তিনি রেদোয়ানের গেস্ট হাউজে আছেন আপাতত ।চলো আমরা গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে আসি।’
গিয়াস স্যার মেধাকেও পাঠালেন শাওনের সঙ্গে।
গেস্ট হাউজটা রেদোয়ানের বাড়ির ঠিক পেছনে।চার রুমের একটা গেস্ট হাউজ।দোতলা।নিচের তলায় দুই রুম,উপরের তলায় দুই রুম।রায়হান আফসোস করে বললো,’এরকম একটা বাড়ি ভাঁড়া দিলে মাসে যে টাকা আসতো ওটা দিয়ে আমার মাস কেটে যেতো অনায়াসেই।
বড়লোকদের ঢং দেখলে মন চায় আমি আজীবন গরীব থাকি’
নিচের তলায় ডাইনিং আর ড্রয়িং রুম আছে।সেখানে মিসেস রেদোয়ানের বাবাকে পেলো না ওরা তাই উপরের তলাতেই গেলো।সেখানে বেডরুমে মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন তিনি।শাওন তার সামনে বরাবর চেয়ার টেনে বসেছে চুপচাপ।

মেধা ড্রয়িং রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে।সোফা আর টিভি ছাড়া আর কিছু নেই সেখানে।সব জায়গায় ফুলদানির ছড়াছড়ি।এগুলো ছোট ছোট।ভেঙ্গে দেখতে হবে সোনা আছে নাকি রুপা।নাকি যহরত!
মনে রাখবে!কবি বলেছেন”যেখানে দেখিবে ছাই,উড়াইয়া দেখো তাই”
“পাইলেও পাইতে পারো,অমূল্য রতন”
আমি এখন এই ফুলদানি ভেঙ্গে দেখবো।মেধা আসলেই তোর অনেক মেধা তাই তো তোর এই নাম রেখেছে তোর ফ্যামিলি।
ধ্যাত!সব দেখি মাটি!টাকা পয়সা নাই কেন?

রায়হান একটু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে লোকটাকে পরোক করছে।বয়স খুব বেশি মনে হয়।
কথা বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।এক দৃষ্টিতে হাতের নীল রঙের আংটিটার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।ধবধবে সাদা দাঁড়ি তার।যে মারা গেছে তার সাথে হুবুহু মিল। মেয়ে একেবারে তার বাবার মতনই হয়েছে তাহলে।
উনাকে করা শাওনের প্রথম প্রশ্ন ছিল উনি কেমন আছেন।জবাব দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি।একমাত্র মেয়ে আশাকে ছাড়া তার দুনিয়ায় আর কেউ ছিলনা।আর আজ তাকে হারিয়ে তিনি একেবারে একা হয়ে গেলেন।ফুলের মতন মেয়ে ছিল তার।

বারবার এই লাইনটাই বলে যাচ্ছেন তিনি।
শাওন নড়েচড়ে বসলো।শেষে উনার হাতটা ধরে বললো,’লাস্ট বার কবে কথা হয়েছিল আপনার মেয়ের সঙ্গে?’
-‘শুক্রবারে।’
-‘কি কি কথা হয়েছিলো বলতে পারবেন?’
-“ও ফোন ধরেই বলতো খেয়েছি কিনা।কাজের বুয়ার রান্না ভালো লাগে কিনা।তারপর আর কিছু বলেনি।জামাই নাকি ওরে ডাকছিলো।তাই কল কেটে দিয়ে চলে গেছে।এটাই শেষ কথা হবে কে জানতো!আমার মেয়ের মতন সহজ সরল কেউ ছিল না।বিশ্বাস করেন!!ওকে কে মারবে!যে মারার কথা সে তো….’
-“মানে?কি বললেন?কে মারার কথা?আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?’
-‘হ্যাঁ।একমাত্র একজনকে সন্দেহ হয়।সে হলো রেদোয়ান।কিন্তু এখন তো সে নিজেই মারা গেছে।আমি আর কাকে দোষারোপ করবো?’

শাওন উঠে দাঁড়ালো।থুঁতনির নিচে দুই আঙ্গুল দিয়ে ঘঁষতে ঘঁষতে দরজা খুলে বের হতেই মেধার সঙ্গে ধাক্কা লাগলো ওর।
মেধা পড়েই যাচ্ছিল।ঠিক সময়ে নিজেই শাওনকে ঝাঁপটে ধরে ফেললো।ওকে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে সিঁড়ির দিকে তাকালো ভয়ার্ত চোখে।শাওন ওর হাতটা নিজের শার্ট থেকে ছাড়িয়ো বললো,’এরকম চোরের মতন দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?’
-‘চোরের মতন দাঁড়াবো কেন?আমি তো ড্রয়িং রুম দেখে এদিকেই আসছিলাম।
আপনি সে সময়ে ঠাস করে দরজা খুললেন।কে জানতো আপনি এসময়ে দরজা খুলবেন?
আরও একবার আপনার কারণে আমি চোট পেতাম’
-‘তোমার এই হাতের চোট আমি দিই নাই।’
মেধার সাথে কথা না বাড়িয়ে শাওন আবারও আশার বাবার কাছে এসে বললো,’রেদোয়ান কি আপনার মেয়েকে অত্যাচার করত?’

-‘করত মানে!!আমি ওদের বিয়ের পর আমার মেয়েকে দুবার দেখেছিলাম।দুবারই ওর গায়ের দাগ দেখে আমার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে পড়েছিলো।এত অত্যাচার মানুষ মানুষকে করতে পারে?’
-‘আপনি কেস করলেন না কেন?বা আপনার মেয়ে কখনও পুলিশকে জানায়নি এ ব্যাপারে?’
-‘সে অনেক কাহিনী।আমার ঔষুধের খরচপাতি সব রেদোয়ানই বহন করত।যার কারণে আশা এত কিছুর পরেও সব কষ্ট সহ্য করে আসছিল।আমি তো বাবা বুড়ো বয়সে পানি টুকু ঢেলে খাওয়ার শক্তি খুঁজে পাইনা।বয়সের এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি সব কিছু দেখে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার।’

শাওন দুহাতের আঙ্গুল একবার দাঁড় করাচ্ছে আবার নেতিয়ে ফেলছে।তারপর কি ভেবে বললো,’আশার কোনো বান্ধবী ছিল?মানে ধরুন সে রেদোয়ানের বাসায় আসা যাওয়া করত এমন।আশাকে অনেক কাছের ভাবত এমন?’
-‘রেদোয়ানের চরিত্র খারাপ ছিল।তবে আশার তেমন কোনো বান্ধবী নেই যে কিনা সোজা বাসায় আসবে।একজন আছে সে আমার বাসার পাশেই থাকে।সে এদিকে কখনও আসেনি’
-‘রেদোয়ানের ব্যাপার এসব কি আপনাকে আশা জানাতো?’
-“হ্যাঁ।সে ফোন করে আমাকে সব বলতো।আমি শুধু শুনতাম।বুক ফেটে কান্না আসতো মেয়ের কষ্টের কথা শুনে।কিন্তু কি করবো বলো আমার কিছুই করার ছিলনা।আশা আমাকে বলতো বাবা তুমি শুধু শুনবে।কিছু বলবেনা।আমি বুকে চাপা থাকা কষ্ট বলছি শুধু।তোমাকে কিছু করতে হবেনা।নাহলে তোমার মুখে ভাত তোলার অর্থ আমাকে আর রেদোয়ান দেবেনা’

-‘আশাকে রেদোয়ানের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার আগে আপনার সংসার চলতো কি করে?’
-“আমি একজন মুদি দোকানদার ছিলাম। ক্যাশে বসে থাকতাম।দোকান আশাই চালাতো।আমি বসে টাকা গুনতাম।
আমার মেয়েটা একা হাতে সব করতো।আমি তো ওকে বিয়ে দিতেই চাইছিলাম না।রেদোয়ান আমাকে হাত জোড় করে বলেছিল সে আশাকে সুখে রাখবে।আমার সব খরচ সে দেবে।তাই রাজি হলাম।লোভে!
মেয়েকে ভালো ঘরে সুখী হতে দেখার লোভে।লোভ বড় জঘন্য জিনিস।একদিন না একদিন ঠিক ধংস করবেই।এই যে আমার লোভে আমার মেয়েটার জীবন গেলো।বড় লোকদের টাকা বেশি,সাথে তাদের রাগ বেশি,অহংকার বেশি,দাপট বেশি থাকে।এটা আমি যেন জেনেও অস্বীকার করেছিলাম।

ভাবছো এত বড় ঘরে বিয়ে কি করে দিলাম??রেদোয়ান আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে।এমনটা নয় যে রেদোয়ানকে ওর পরিবার জোর করে বিয়ে দিয়েছে আশার সঙ্গে।বরং রেদোয়ান নিজেই আশাকে পছন্দ করে বিয়েটা করেছিল।তাহলে এমন কেন হলো তার উত্তর আমি আজও পেলাম না।আশা আমাকে ওর বিয়ের আগে রেদোয়ানের সাথে কিছু মেলামেশা করে বলেছিলো রেদোয়ান ছেলেটা অনেক কেয়ার করে ওর।শুনে আমার কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিলো।তাছাড়া ওর সম্পর্কে এমন মানুষ পেলাম না যারা খারাপ বলেছে।নিয়তি কত জলদি বদলে যায়।’

মেধা জানালা ধরে নড়াচড়া করছে।পারছেনা জানালা ধরে ঝুলে পড়ছে।সিরিয়াস টাইমে বাঁদরামি করা নিয়ে অস্কার দেওয়া উচিত তাকে এটা সবসময় বলে মা।এখন অবশ্য বাবা ও বলে।কিছুদিন পর শাওন ও বলবে।
কেমন একটা গটরগটর আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।শাওন আশার বাবার কথা ঠিকমত শুনতে পারছেনা মেধার করা এমন আওয়াজের জন্য।বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে আসছে।বয়স্ক মানুষ সামনে,তা নাহলে মেধাকে দোতলা থেকে ছুঁড়ে মারতো শাওন।

রায়হানের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে শাওন উঠে দাঁড়ালো।এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে অন্য হাত দিয়ে মেধার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো সে।একেবারে নিচ তলায়।
-‘আরে!এমন করছেন কেন?ওখান থেকে নিয়ে আনলেন কেন?’
-‘তুমি নিজে তো কোনো কাজ করোনা।উল্টে আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করো কি জন্যে?’
-‘কে বলেছে কাজ করিনা?এই যে এসব ফুলদানি উপুড় করে মাটি ফেলেছি ভেতরে কিছু আছে কিনা দেখার জন্য।এগুলো কি কাজ নয়??আপনি শুধু নিজের কাজই দেখেন?মাঝে মাঝে জুনিয়রদের কাজের ধরণ ও দেখতে হয়।ছোটদের বাহবা দিলে তারা মন থেকে দোয়া করে’
শাওন কপাল চাপড়িয়ে চলে যাওয়া ধরতেই আটকে গেলো।ওর ঘড়ির সঙ্গে মেধার কোমড়ের বেল্ট আটকে গেছে তাই।

প্রথমে বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও যখন তিনবারের টানেও ছুটলোনা তখন সে মেধাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,’ধরেছিলাম তোমার হাত।বেল্টের সাথে আটকালো কি করে?দাঁড়িয়ে দেখছো কি?খুলতে পারোনা?’
-“আজব তো।আমার এক হাতে প্লাস্টার, আমি কি করে খুলবো?’
শাওন মনযোগ দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।কি করে আটকালো তাই বুঝে উঠতে পারছেনা।বাড়ির পেছনের সাইডে গেস্ট হাউজটা তাই আলো বাতাস একেবারেই কম।অন্ধকারের তোড়ে ভালোভাবে ফোকাস করা মুশকিল
হয়ে উঠছে। এরই ফাঁকে শাওন হঠাৎ মুখটা ফ্যাকাসে করে ডানে তাকালো।মেধাও তাকালো।শাওন দেখতে পেলো রশ্নিকে কিন্তু মেধা কিছু দেখলোনা।শাওন চোখের পলক ফেলছেনা।এক দৃষ্টিতে ওদিকেই তাকিয়ে আছে।
মেধা হাত উঠিয়ে শাওনের চোখের সামনে হাত নড়াচড়া করে বললো,’আপনার অদৃশ্য প্রেমিকাকে পরে দেখবেন।আমাকে মুক্ত করুন আগে।আমি হলাম ধৈর্য্যহীনলিমিউয়াস’

শাওন মাথা তুলে বললো,’হোয়াট?’
-‘ধৈর্য্যহীনলিমিউয়াস হলো একটা স্বভাবের নাম।মানে এটাতে আপনি এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য্য হারাবেন’
শাওন বেল্ট টাইট করে ধরে বললো,’আমাকে বাচ্চা ছেলে পেয়েছো?উল্টো পাল্টা লজিক বুঝিয়ে দেবে আর আমি সেটা বুঝেও যাবো?’
-‘তো বুঝবেন না।’
শাওন হাঁপিয়ে গেছে তাও পারছেনা।বেল্টের সাথে যেন পার্মানেন্টলি লক হয়ে গেছে।
সেসময়ে রায়হান নিচে নেমে বললো,’এনি প্রব্লেম? ‘

-‘এটা খুলতে পারো কিনা দেখো তো!এসেছি কাজ করতে আর এই মেয়েটা আমাকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখে সবসময়।ওর কারণে রেদোয়ানের কেস শেষ হতে বছর লেগে যাবে।ভিডিও কনফারেন্সে সোজা ওর দোষ দেবো আমি’
রায়হান বেল্ট ধরে বললো,”আমি পারলে ছিঁড়ে ছুটাতে পারি’
-‘দেখো আমার ঘড়ি যেন না ভাঙ্গে।আমাকে রশ্নি দিয়েছিলো ঘড়িটা।ছিঁড়লে ওর বেল্ট ছিঁড়ো’
মেধা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’খবরদার!আমার বেল্টটা আমি পকেটমানি বাঁচিয়ে কিনেছিলাম।এটার সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’

শাওন চোখ রাঙিয়ে বললো,”তো তুমি কি চাও সারাজীবন এভাবে থাকতে?’
-‘আপনার ঐ অদৃশ্য প্রেমিকাকে বলুন না জাদুটোনা করে এটা ছুটাতে।তাহলেই তো হয়’
শাওন বিরক্ত হয়ে জোরে টান মারলো।মেধার বেল্ট ছিঁড়লো সাথে শাওনের ঘড়িটাও খানিকটা ভেঙ্গে গেছে।মেধা কিছুক্ষণ চেঁচামেচি করে বেরিয়ে চলে গেলো।শাওন ঘড়ি খুলে হাতে নিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।রশ্নির দেওয়া প্রথম উপহার ছিল এটা।এভাবে নষ্ট হবে কখনও ভাবতে পারেনি সে।
রশ্নিকে একবার পানি থেকে বাঁচিয়েছিলো সে।সেই থেকে আস্তে আস্তে দেখা-সাক্ষাৎ,অতঃপর প্রেম গড়া।পানির কারণে শাওনের হাতের ঘড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো বলে রশ্নির দেওয়া প্রথম উপহার এই ঘড়িটাই ছিল।শাওন কষ্টে পেয়েছে দেখে রশ্নি ওর পাশে বসে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’আজ বাসায় ফেরার সময় ঘড়ির দোকানে যাবে।আমি পছন্দ করে দেবো আর তুমি কিনবে।’

শাওন মাথা তুলে তাকালো ওর দিকে।রায়হান চলে গেছে রেদোয়ানের বাড়ির দিকে।শাওনের চোখের দিকে তাকিয়ে রশ্নি রাগ করে বললো,’কথায় কথায় ছেলেরা কাঁদেনা।
এই কথাটা তুমি আমায় সবসময় বলতে আর এখন নিজেই কথায় কথায় চোখে পানি এনে ফেলো।কান্না থামাবে নাকি আমি একা একা আজিমপুর চলে যাবো?’
শাওন চোখ মুছে বললো,’না।কাঁদছিনা।আচ্ছা তুমি জানো কে মেরেছে রেদোয়ানকে?’
রশ্নি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,’শাওন আমি তোমার মনে বাস করি।আমি তোমায় ছাড়া আর কিছু নিয়ে আলোচনা করতে পারিনা।করতে জানিনা।আজ তোমাদের বাসায় তৃনা আপুর হবু শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আসবে কথাটা তৃনা আপু তোমায় বলেছে কিছুদিন আগে।তুমি ভুলে গেছো।আমি তোমার পাশে থেকে শুনেছি।সেটাই বলেছি তোমায় তাও আজ সকালে।তুমি যা শুনো আমি তাই শুনি।তুমি যা দেখো আমিও তাই দেখি।যেদিন তুমি দেখা বন্ধ করে দেবে সেদিন আমি থাকবোনা’

শাওন ব্রু কুঁচকে বললো,’আমি তোমায় দেখা বন্ধ করবোইনা।
রশ্নি শাওনের মাথায় হাত রেখে চুলগুলোকে বুলিয়ে দিয়ে বললো,’একদিন তুমি আমায় দেখবেনা।দেখতে ভুলে যাবে।আমি সেদিনের অপেক্ষা করবো।কারণ এভাবে জীবন চলেনা’
——
মেধা জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে আছে।তার সামনেই জানালার ওপারে সোফায় বসে শাওন তার পাশে কেউ একজনের সঙ্গে কথা বলছে।কিন্তু কার সঙ্গে বলছে তাই বুঝছেনা মেধা।দৃঢ় দৃষ্টিতে দেখতে গিয়ে দেখলো শাওনের কোটের ভেতরের শার্টের বোতাম গুলো আপনা আপনি লেগে আসছে।এতক্ষণ এগুলো খোলা ছিলো।
-‘ও মাগো ভূত!’

মেধা চোখ বড় করে মাথায় হাত দিয়ে নিচে পড়ে গেছে জ্ঞান হারিয়ে।কিসের যেন আওয়াজ পেয়ে শাওন ও ছুটে আসলো দেখবে বলে।এসে দেখলো গেস্ট হাউজের বাহিরে মেধা অজ্ঞান হয়ে ঘাসের উপর পড়ে আছে।শাওন কাছে এসে ওর মুখ টিপে ধরে ঘুরিয়ে-ঘারিয়ে বললো,’এ তো অজ্ঞান হয়ে গেছে।অজ্ঞান হলো কেন?তাও এই জায়গায়।খুনিকে দেখলো না তো?’
-‘শাওন আমার মনে হয় আমার সঙ্গে কথা বলছো দেখে জ্ঞান হারিয়েছে।সে তো আমায় দেখতে পাবেনা।নাকি দেখেছে?এটা অসম্ভব। সে আমায় কেন দেখবে?
সেই প্রথমদিন থেকে দেখছি মেয়েটা চোট পেয়েই যাচ্ছে।এর তো হাত কাঁচা,কাজকর্ম ও একেবারে বাচ্চা বাচ্চা টাইপের।এত জলদি চাকরিতে জয়েন হওয়া ঠিক হয়নি’

শাওন ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো,’একদম ঠিক।ওর হসপিটালে ভর্তি হওয়া উচিত ছিল।তাও পাবনা মেন্টাল হসপিটালে।রায়হান?নিতু???জলদি আসো।আশ্চর্য এত করে ডাকার পরেও কেউ আসছেনা কেন?আমার আওয়াজ কি ওদের কাছে পৌছাচ্ছে না?
এরে আমাকে তুলতে হবে নাকি?আমি পারবোনা।ওরে কোলে নেওয়ার ভয়ে ৫কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছি।এখন সেই ওকেই কোলে নিতে হবে নাকি?’
শাওন উঠে দাঁড়িয়ে রায়হানকে ডাকতে যেতেই রশ্নি থামালো ওকে।ব্রু কুঁচকে বললো,’শাওন এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।বিপদে পড়ে কোলে নিচ্ছো।আনন্দে নিচ্ছো না।ওকে এখানে ঘাসের উপর বেশিক্ষণ রাখা ঠিক হবেনা।
কত পোকামাকড় থাকতে পারে।এত গভীর ঘাস আমি দেখিনি আগে।অনেকদিন মনে হয় পরিষ্কার করা হয়নি।
ক্ষতিকর পোকা দংশন করতে পারে।তুলে নাও।কিছু হবেনা’

শাওন বিড়বিড় করে এসে মেধাকে কোলে তুলে নিলো। সোজা রেদোয়ানের বাসার সোফায় এনে রাখলো ওকে।নিতু আর রায়হান উপরের তলায় ছিল। তারা ছুটে এসে মেধার জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এখন।
মেধার জ্ঞান ফিরেছে নিতু যখন পানির ছিঁটা দিলো ঠিক তখনই।চোখ মেলে সবার আগে শাওনকে দেখে চিৎকার করে সাথে সাথে দূরে সরে গেছে সে।শাওন বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে এখনও।
মেধা ভয়ার্ত চোখে চেয়ে বললো,’এই লোকটা ভূত’
ওর কথা শুনে রায়হান তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,’ভূত বলতে কিছুই হয়না মেধা।’

মেধার দৃষ্টি শাওনের দিকে।তার বোতামগুলো লাগানো।শাওনের সঙ্গে যে ভূত আছে তা আর যেচে কাউকে প্রমাণ করে দিতে হবেনা ওর সামনে।মেধা বেশ বুঝেছে হয় শাওন নিজেই ভূত আর নয়ত ওর সঙ্গে ভূতের হাঁটাচলা আছে।এই ভেবে ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে ওর। গলায় হাত দিয়ে মেধা বললো,’পানি এট্টু খাব নিতু আপু’
নিতু ছুটে চলে গেলো পানি আনতে।শাওন গেছে রেদোয়ানের রুম দেখতে।সেদিনের হাতুড়ি আর অন্য সব জিনিসপাতি দিয়ে তাহলে আশাকে টর্চার করতো রেদোয়ান।হয়ত সে আশাকে মেরেছে।কিন্তু তাকে মারলো কে?
রুমে বড় করে একটি ছবি টাঙানো।ছবিতে সোফায় আশা বসে আছে আর তার পেছনে রেদোয়ান দাঁড়িয়ে আছে।রেদোয়ানের মুখে হাসি।অথচ আশার মুখটা যেন তার বিপরীত ভঙ্গিতে ফুটে আছে।তার মুখে হাসির ছিঁটেফোঁটাও নেই।এত ঐশ্বর্যের মালিক হয়েও তাদের সংসার আজ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছে।একটা মানুষ নেই যে তাদের পরিবারের একজন।’

-‘শাওন এদিকে আসো’
শাওন রেদোয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নামলো নুহাশের ডাকে।নুহাশকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ও এত জলদি এসে পড়েছে কেন।রেদোয়ানের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি সে।
নুহাশ বললো,’সে নিয়ে আর কি বলবো বলো!ঐ ছেলে এত নাটক করছে।আমার মাথা আর একটু জন্য খারাপ হয়ে যেতো।এটা তুমি ছাড়া সলভ্ হবেনা।বাবা আমার এত ধৈর্য্য নেই।’
-“কেন?কি সমস্যা তার?ডায়রিয়া সারে নাই?’
-“সে রোবটের মতন শুধু কাঁপে।আমার প্রশ্নের জবাব দেয়না।আরও কত নাটক।তার নাটক দেখে আমার গায়ের পশম খাড়া হচ্ছিল আবার নেতিয়ে পড়ছিলো।মনে হয় যাত্রা পালায় অভিনয় করে।বাপরে কি নাটক যদি তুমি একবার দেখতে।এমন ভাবে নাটক করছিলো আমি বাদে বাকি সবাই ওকে বিশ্বাস করেছে।’
-‘ঠাস করে চড় মেরে দিতা।আপনা আপনি বকরবকর শুরু করে দেবে’
-‘আমি গলা টিপে ধরছিলাম।ডাক্তার এসে বললো,’কুল ডাউন।অসুস্থতার কারণে হয়ত প্যানিক করছে অল্পতেই’
শাওন কোট ঠিক করে বললো,’আচ্ছা আমি তাহলে গিয়ে একটু ডিটার্জেন্ট দিয়ে ধুয়ে আসি ওরে।দেখি রঙ ওঠে কিনা’

মেধা চোরের মতন বসে ছিল সোফায়।শাওন যাওয়ার সময় থেমে গিয়ে বললো,’তুমি ও চলো আমার সাথে।মেয়ে দেখলে হয়ত তার মুখ দিয়ে ফরফর করে কথা বের হবে’
মেধা কুশন টেনে জড়িয়ে ধরে বললো,’না আমি যাবোনা।আপনার সঙ্গে ভূত আছে’
-‘তুমি যাবেনা তোমার আব্বু যাবে’
কথা শেষ করতে না করতেই শাওন দেখলো একজন পুলিশ অফিসারকে।ফোন দেখতে দেখতে ভেতরে ঢুকেছেন তিনি।

নাম ফেরদৌস হাসান।শার্টে লেখা আছে।কিন্তু চিনলোনা সে।তাও সালাম দিয়ে এগিয়ে গেলো।ভাবলো কেস দেখতে এসেছে হয়ত।উনার কাছে আসতেই উনি বললেন,’চলো যেখানে যাওয়ার সেখান থেকে ঘুরে আসি’
শাওন মেধার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো উনার সাথে।মেধা সেসময়ে সোফার পেছনে লুকাচ্ছিলো যাওয়ার ভয়ে।পুলিশ অফিসারকে আর দেখলোনা সে।মাথা তুলে শাওনকে চলে যেতে দেখে স্বস্তি পেলো।শাওনের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।নাহলে ওর সাথে থাকা ভূতের আত্নীয় স্বজন এসে আমাকে কব্জা করবে।’
মেধা উঠে দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো দেখবে বলে।গিয়েই দেখলো নুহাশ নিতুর মুখ ধরেছে কিস করবে বলে ঠিক সেসময়ে মেধা ঢুকে পড়েছিল।সঙ্গে সঙ্গে চোখে হাত দিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সে বললো,’সরি।আমি জানতাম না।কিছু দেখিনি’
নুহাশ আর নিতু দুপাশে সরে দাঁরিয়ে পড়েছে।নুহাশ হালকা কেশে রায়হানের নাম করে জায়গা ছেড়ে পালিয়েছে আপাতত।নিতু মাথা চুলকোচ্ছে।

ফেরদৌস হাসান তার গাড়ীতে শাওনকে বসতে বললেন।ড্রাইভার আছে সামনে।তারা দুজনেই পেছনে বসলো।
শাওন ভদ্র ভাবে বসে আছে।তার পাশেই একজন ভদ্রলোক।দেহ চওড়া।বলিষ্ঠ দেহের মানুষটা।
দেখে মনে হয় অনেক পুরোনো অফিসার।চেনা চেনা লাগে তাও অচেনা।
মৌনব্রত ভেঙ্গে ফেরদৌস হাসানই মুখ খুললেন।বললেন,’-‘আচ্ছা! তোমার বাবার নাম কি?’
শাওন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো।-‘আবু শামীম ‘যেন আগে থেকেই উত্তর রেডি রেখেছিলো।

-‘ম্যাজিস্ট্রেট আবু শামীম?’
-‘জ্বী।চিনেন আমার বাবাকে?’
-“হ্যাঁ চিনি।আমার এক ক্লাস সিনিয়র ছিলেন তাও হাই স্কুলে থাকাকালীন।ভাবছো মনে রেখেছি কি করে?তোমার দাদা আমার বাবার বন্ধু ছিলেন।সেই সূত্রে আলাপ হতো।উনি আমায় দেখলেই চিনবেন।বছর বাদেই যেকোনো অনুষ্ঠানে আমাদের দেখা হতো।কত ভালো মানুষ তোমার বাবা।লাস্ট ইয়ার বসে একসাথে গোলাপ জাম খেয়েছিলাম।তুমি ছিলেনা।নাহলে দেখতাম। মনে হয় তোমার আম্মু ছিল।ওহ হো!তোমরা ভাই বোন কজন?’
-“আমরা ভাইবোন তিনজন।আমার আপু বড়।তারপর আমি।এরপর আমার ছোটবোন’
-‘ওহহ।তোমার আপুর বিয়ে হয়েছে?’
-“হবে।শীঘ্রই।আপনি তো আসবেনই।বাবা আপনাকে ঠিক দাওয়াত করবে।যথা সময়ে কার্ড পেয়ে যাবেন’

সাভারের একটা হসপিটালে আছে রেদোয়ানের ফুফাতো ভাই রকি।কেবিনে শাওন আর মিস্টার ফেরদৌস এক সাথেই ঢুকলো।রকি তখন স্যুপ খাচ্ছিল।শাওনকে দেখে নড়েচড়ে বসেছে সে।শাওন ঠাণ্ডা মাথায় টুল একটা টেনে ওর কাছে বসলো।ফেরদৌস হাসান দূরে একটা সোফায় বসেছেন।
-‘তো বলো তুমি রেদোয়ানের বাসায় লাস্ট কবে গিয়েছিলে?’
রকি শাওনের প্রশ্নে চোখ বড় করে তাকিয়ে সরে গিয়ে বললো,’আমার মাথা ঘুরছে।আমি কিছু মনে করতে পারছিনা।না না আমি সব ভুলে যাচ্ছি আমার শরীর খারাপ করছে।ওহহহ!!মরে যাবো’
শাওন টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাত ভাঁজ করে রকির নাটক দেখছে।ফেরদৌস হাসান বাঁকা হাসি দিয়ে শাওনের দিকে তাকালেন, শাওন কি করে দেখার জন্য।

শাওন মাথা ঘুরিয়ে আড়মোড় ভেঙ্গে দুহাত দিয়ে দুইগালে দুইটা চড় মেরে দিলো রকির।তাও আবার একসাথে।রকির মনে হলো ওর কানের পর্দা ফেটে গেছে।চোখ গোল হয়ে গেছে।এবার মনে হয় সত্যি সত্যি ওর মাথা ঘুরাচ্ছে। চোখ একবার খুলছে আর একবার বন্ধ করছে সে।
ফেরদৌস হাসান হাসি দমিয়ে রাখলেন।শাওনকে দেখে বোঝা যায়না তার হাত এরকম দ্রুত চলে।
শাওন রকির কান মুঠো করে ধরতেই ফেরদৌস হাসান নড়েচড়ে বসে বললেন,’রিমান্ড নিছিলা নাকি কখনও?’
-‘কখনও বলছেন কি স্যার।আমার কথা না শুনলেই হাত দিয়ে কাজ চালাই।দুগালে একসাথে থাপ্পড় মারলে দেখবেন সত্যি কথা বলে দেবে।কানের পর্দা ফাটানোর ভয় একেবারে দরজার মুখ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে আবার ব্যাক আনিয়ে দেবে’
ফেরদৌস হাসান খিলখিল করে হেসে ফেললেন এবার।হাসি আর আটকে রাখতে পারলেননা।
শাওন রকির কানে চাপ দিয়ে বললো,’শুধু বলো লাস্ট কবে গিয়েছিলে?’

সঞ্চারিণী পর্ব ৪+৫+৬

-‘ততততত’
-‘তততো?’
-‘তিন মাস আগে।’
শাওন কান ছেড়ে দিয়ে টুল টেনে বসলো আবার তারপর বললো,’ওহ তিন মাস আগে?’
-‘হ্যাঁ’
শাওন আরেকটা চড় মেরে দিলো।রকি রেগে বললো,’এবার মারলে কেন?’
-‘বুঝতেছিনা।এতক্ষণ নাটক করছিলে।এখন নাটক করছোনা তার প্রমাণ কি?প্রথমত রেদোয়ান আর তার স্ত্রী আশার মার্ডারের দিন তোমার ডায়রিয়া হলো।হসপিটালে ভর্তি হলে।ফাইন!!কিন্তু এতদিন পরেও অসুস্থ হওয়ার নাটক করছিলে কেন তা বুঝলাম না।নুহাশ আসলো তার সামনে একই নাটক করলে।আমি জানতে চাই, কেন করলে??’

-‘এখন যদি বলি তাহলে সেটা বিশ্বাস করবে?’
শাওন পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো,’হ্যাঁ বলো’
-“দু মাস আগে গেছিলাম’
এবার মাথায় চড় খেয়ে বসে আছে রকি।শাওনকে পারছেনা কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে।লাল হয়ে গেছে তার চোখ।অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’এবার কেন মারলে?’
-‘প্রথমে তিন মাস বলছো কেন?’
ফেরদৌস হাসান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,’শাওন আমি আজ যাই।দেখতে এলাম কেমন চলছে কেসটা।আর হ্যাঁ তোমার কথাই রইলো।মেধার আব্বুই আসলো তোমার সঙ্গে ‘

সঞ্চারিণী পর্ব ১০+১১+১২