সবটাই তুমিময় পর্ব ১৩ || লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

সবটাই তুমিময় পর্ব ১৩
লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

দিনগুলো স্বাভাবিকভাবেই যাচ্ছে।আমি,মনিমা,তানহা,আস্থা,বাসা,ভার্সিটি।কিন্তু স্বাভাবিক মানতে পারছি না আমি।সবসময় মনে হয় কেউ চোখে চোখে রাখছে আমাকে।ফলো করছে।কিন্তু কাউকেই কোথাও পাইনি।মনমরা হয়েই আর পাঁচটা সকালের মতো ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বাসার বাইরে পা রাখতেই হা হয়ে গেলাম একপ্রকার।তানহা স্কুটিতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে।ওর স্কুটি নেই,গাড়িতে চলাফেরা করে ও।তাহলে আজ স্কুটি কেনো?একছুটে এগিয়ে গিয়ে স্কুটি টাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,

-তুই স্কুটি কিনেছিস?
-হুম।কেমন হয়েছে বলতো?
-ফার্স্টক্লাস!কবে কিনেছিস?
-কয়েকদিন আগেই।একদম শিখে তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলে বলিনি।
-ওয়াও ইয়ার!এই?তুই না গাড়ি করে…..
-ধুরু!স্কুটি এনেছি,কি না ড্রাইভে যাবো!আর ও পরে আছে ওর কিউ এন্ড এ পর্ব নিয়ে!চল ওঠ তাড়াতাড়ি!বেরোবো আমরা!
-বেরোবো মানে?ভার্সিটি যাবি না?
-না!আজ ঘুরবো শুধু!
-আস্থা,তিহান?ওরা….

-আস্থা ভার্সিটিতে যাবে না আজ।আর তিহানেরও ইন্টারভিউ আছে।গেলেও এক ক্লাস করেই বেরিয়ে‌ যাবে!চল ওঠ!
আমি খুশি হয়ে পেছনে বসতে যাচ্ছিলাম।তানহা টেনে সামনে বসিয়ে দিলো আমাকে।একটু অবাক হয়ে তাকাতেই একটা অসম্ভব সুন্দর হাসি দিলো ও।সেদিন স্কুটিটায় ওভাবে আগুন লেগে নষ্ট করে দিলো ওরা।তারপর থেকেই খুব মিস‌ করছিলাম।কিন্তু আবারো স্কুটি কেনার সামর্থ্য আমার নেই।আর একারনেই তানহা কিনেছে স্কুটি,আমি জানি।কান্না পাচ্ছিলো,কিন্তু কাদলে ওর রনচন্ডী রুপ দেখতে হবে।তাই আটকালাম নিজেকে।সামনে বসতেই তানহা বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আন্নু?এতোদিন পর স্কুটি চালাচ্ছিস।লেটস্ হ্যাভ আ ফুলস্পিড লং ড্রাইভ?হোয়াট সে?
অবাক চোখে তাকালাম ওর দিকে।ও বরাবরই আমার স্পিড নিয়ে রাগারাগি করতো।আর আজ?আমার মন ভালো করার জন্য ফুলস্পিড লংড্রাইভের কথা বলছে।কি করে ওর চেষ্টাগুলোকে বিফলে যেতে দেই?হাসিমুখে বললাম,
-যাবি বলছিস?আগে তো ভয় পেতি আমার স্কুটিতে যেতে।আজ ফুলস্পিডের কথা বলছিস যে?
-হুম।বললাম।তবে আজ সামহাউ তুই ভয় পাচ্ছিস না তো?
-ইউ নো আন্নু’স ডেয়ার!

এটুক বলেই বাকা হেসে স্পিড বাড়িয়ে স্কুটি ছুটালাম।পেছন থেকে তানহা এমনভাবে ধরেছে যেনো উল্টে পরে যাবে ও।চেচাচ্ছেও।ওর এমন ভীতুর ডিমের মতো অবস্থা দেখে আরো মজা লাগছে।চেচিয়ে উঠে আরো জোরে চালাতে লাগলাম স্কুটিটা।হেলমেটটা খুলে ফেলেছি।বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়তে শুরু করলো।আর ওই মুক্ত বাতাসে আমি শ্বাস নিতে লাগলাম প্রানভরে।

অনেকটা পথ চলে এসেছি আমরা।মেইনরোড ছেড়ে কিছুটা শুনশান রাস্তাই এটা।স্কুটি থামিয়ে রাস্তার ধারে বসে পরলাম দুজন।সামনে একটা শালবন।যতোদুর চোখ যায় শুধু শালগাছ আর শালগাছ।দু একটা গাড়ির হর্নের শব্দের সাথে অনুভব করতে লাগলাম বাতাসের শো শো শব্দ।বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে আসছে।বাসায় ফেরার জন্য উঠে আসতে যাবো,দুটো বাইক আমাদের একদম সামনে এসে দাড়ালো।চারজন ওরা।আমি আর তানহা একটু মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললাম,

-আজব তো!পথ আটকে দিয়েছেন কেনো?
ওরা জবাবহীন।দুটো বাইক ছেড়ে হেলমেট পরা চারজন লোক নেমে আসলো।চারজনই হেলমেট খুলে আমাদের দিকে এগোতে লাগলো।একজন আমাকে দেখিয়ে বললো,
-দেখেছিস?এএসএ মারে নি এই মেয়েকে।বসকে জানা এক্ষুনি!আমার স্পষ্ট মনে আছে,ওই ছিলো সেদিন ক্লাবে।ওয়েট্রেস সেজে ওই গেছিলো ওইদিন!
গলা শুকিয়ে আসলো আমার।ভুলেই গিয়েছিলাম ওরা সেদিন দেখে নিয়েছিলো আমাকে।এভাবে হেলমেট খুলে ঘোরাটা একদমই উচিত হয়নি।কিন্তু এর ফল ভোগ করতেই হবে।আস্তেকরে বললাম,

-তান্নু স্কুটিতে ওঠ!জলদি!
আমি উঠে বসলাম স্কুটিতে।তানহা বসতে যাবে,একজন একটানে ওকে রাস্তায় ছুড়ে ফেললো।মাথা সোজা পিচঢালা রাস্তায় গিয়ে পরেছে ওর।কপালটা কেটে গেছে।আহ্ শব্দে কপাল ধরলো ও।
-তান্নু!
চেচিয়ে উঠলাম।ও কপালটা ধরে কোনোমতে উঠে বসার চেষ্টা করছিলো।আমি এগোতে যেতেই একজন পথ আগলে দিয়ে বললো,
-এজন্যই বলে,অতিবাড় বাড়তে নেই!অবশ্য অতিবাড় বেড়েও বেশ অনেকদিনই বেচে আছো তুমি!
-হেল্প!কেউ ব্….
-কেউ আসবে না মিস রিপোর্টার!ভালো জায়গাতেই ঘুরতে,সরি,মরতে এসেছো।তোমাকে টুকরো টুকরো করে কেটে রেখে দেবো এখানেই।কেউ কিছ্ছুটি বলবে না আমাদের বিরুদ্ধে!তোমাকে মেরে জেলে গেলেও প্রদীপ সরকার তার ক্ষমতা দিয়ে ঠিক ছাড়িয়ে আনবে আমাদের।

লোকটার কথা শেষ হতেই তানহা উঠে দাড়ালো।আমাকে ইশারা করলো একপাশ দিয়ে দৌড় লাগানোর জন্য।ধাক্কা মেরে লোকটাকে সরিয়ে দিয়ে দুজনে মিলে ছুট লাগালাম।ওরাও পিছু নিয়েছে।রাস্তা থেকে নেমে শালবনে ঢুকে পরেছি আমরা।শালবনের মাঝ দিয়ে কাচা রাস্তায় দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি।অনেকটা সময় পর দেখলাম ওরা পিছনে নেই।একটু দাড়িয়ে শ্বাস নিলাম দুজনে।তানহার কপালে অনেকটাই কেটে গেছে।কিন্তু এখানে কেউ আসার বা থাকার সম্ভবনাই নেই।সাহায্য চাইবো কিভাবে?আচমকাই আবারো বাইকের শব্দ!কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাইকদুটো হাজির।আমাদের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বিশ্রিভাবে হাসতে লাগলো ওরা।বললাম,

-দ্ দেখুন,আমাকে মারার হলে মেরে ফেলুন।কিন্তু তান্নুকে যেতে দিন।ও তো কিছু করেনি!
বাইক থামিয়ে চারজনই নামলো।একজন এগিয়ে এসে বললো,
-তাতে কি খুকি?ও যে তোমার সঙ্গী না তার কি প্রমান আছে?
-না!ও কিছু জানেনা!ও কিছুই করেনি!
-শোনো মেয়ে,তোমাকে এএসএ ছেড়ে দিয়েছে,কিন্তু প্রদীপ সরকার ছাড়বে না।বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছো তুমি!তোমার বোঝা উচিত ছিলো,ওই ক্লাব প্রদীপ সরকারের!
লোকটা হাত বাড়াতে যাচ্ছিলো আমার দিকে।হাত মুঠো করে মার লাগাতে উদ্যত হচ্ছিলাম আমিও।আত্মরক্ষার চেষ্টাটুক করতে ক্ষতি নেই কোনো।আমার জন্য অন্তত তান্নুর কিছু হতে দেবো না আমি।এরমাঝেই কেউ তার হাত আটকে দিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলো,

-তোদেরকে প্রদীপ সরকারের চেনা এএসএ ছেড়ে দিতো,কিন্তু অঙ্কুর ছাড়বে না!ট্রাস্ট মি!অনেকটা বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছিস তোরা!তোদের বোঝা উচিত ছিলো,অদ্রি অঙ্কুরের!ও আমার!
এতোটা জোরে চিৎকার করেছে লোকটা যে কেপে উঠলাম।কিন্তু পাশে তাকিয়ে অঙ্কুরকে দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেছি আমি।পাশেই আরো দুটো গাড়ি এ‌সে থামলো।সেটা থেকে আটদশজন লোক নেমে আসলো।ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম একটা।কথা শেষ করেই অঙ্কুর নাক বরাবর ঘুষি লাগালেন ওই লোকটার।সে মুখ থুবড়ে মাটিতে পরলো।বাকি তিনজন এগোতে গেলেই ওদের চারপাশ থেকে আরো আটদশ জন ঘিরে ধরলো।ওদের চারজনকেই ধরে রেখেছে সবাই মিলে।অঙ্কুর রক্তচক্ষু করে তাকালেন আমার দিকে।চেচিয়ে বললেন,

-তানহাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠো রাইট নাও!
তাড়াতাড়ি তানহাকে নিয়ে তার দেখানো গাড়িতে উঠলাম।একজন দরজা খুলে দাড়িয়ে ছিলো।সেই আবার লক করে দিলো দরজাটা।সাথেসাথে গাড়ির জানালায় অঙ্কুর গলা টিপে ধরলেন কাউকে।দেখলাম এটা ওই লোকটাই যে আমার দিকে এগিয়েছিলো।অঙ্কুর দাতে দাত চেপে বললেন,
-ইচ্ছে তো করছে এভাবেই তোর গলায় হাতটাকে রেখে তোর ভয়েজটাকে চিরতরে সাইলেন্ট মোডে পাঠিয়ে দেই।কিন্তু আফসোস!আমার হাতে সময় কম।
-ত্ তুমি মারোনি ক্ কেনো ওকে এএসএ?ব্ বি…বিশ্বাস ঘ্ ঘাতকতা করেছো তুমি প্রদীপ সরকারের সাথে।ভ্ ভুল ক্ করছো তুমি এএসএ!
-বেশিই জেনে গেলি মনে হচ্ছে!ডোন্ট ওয়ারি!তোদের চারটারই মুখ বন্ধ করার দায়িত্ব আমার।দেখা হচ্ছে,খুব শীঘ্রই।চল যা!

ঝারা মেরে ছেড়ে দিলেন উনি লোকটাকে।ওনার সাথে থাকা লোকগুলো টেনেটুনে চারজনকেই ধরে গাড়িতে তুলতে লাগলো।অঙ্কুর ড্রাইভিং সিটে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন চুপচাপ।তানহাকে জাপটে জরিয়ে ধরে রয়েছি।ওউ শক্ত করেই ধরে রেখেছে আমাকে।ভয়টা এখনো কাটেনি দুজনের কারোরই।
অঙ্কুর সোজা হসপিটালের সামনে গাড়ি থামালেন।কোনোদিক না তাকিয়ে তানহাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।ভেতরে ঢুকতেই একজন নার্স এসে তানহাকে ধরে নিয়ে গেলো।আমিও যাচ্ছিলাম পিছন পিছন,কিন্তু ডক্টর বললেন ওয়েট করতে।ওরা রুমে ঢুকতেই হেচকা এক টানে কেউ পাশের রুমে এনে আমার দুহাত দেয়ালে চেপে ধরলো।এটা অঙ্কুর।দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার।চোখ বন্ধ করেই গায়ের জোর খাটাতে লাগলাম।অঙ্কুর দাতে দাত চেপে বললেন,

-এই গায়ের জোর নিয়েই এতো সাহস তোমার অদ্রি?
-আন্সার মি!এটুকোই গায়ের জোর তোমার?আজ তবে তোমার গায়ের সবটুকো জোর দেখবো আমি!শো মি!হাত ছাড়িয়ে দেখাও অদ্রি!ডু ইট!

-তোমাকে বলেছিলাম মুখ ঢেকে বেরোতে!তারপরও কেনো হেলমেট খুলে ঘুরছিলে তুমি?হোয়াই?
-আমি প্রশ্ন করেছি তোমাকে!আন্সার ইট!কি না করেছি আমি তোমার এই রিপোর্টার অদ্রি পরিচয় ঢাকতে!দীপক তালুকদারকে নিয়ে তোমার লেখা রিপোর্ট ভোরের বাংলার এমডির থেকে নিয়ে টিভি চ্যানেলে পাব্লিশ করিয়েছি।এমডিকে বলে ওই চাকরিই তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছি।গত কয়েকদিনে মুখ না ঢেকেই বাসা টু ভার্সিটি রিকশায় যাতায়াত করেছো।কিছু না বলে সবটা সময় আড়ালে থেকে শুধু চোখে চোখে রেখেছি তোমাকে।আজ ভার্সিটি না গিয়ে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে গেলে?হেলমেট খুলে?তোমার একটাবারও মনে পরলো না,প্রদীপ সরকার আর ওর লোকেরা তোমাকে দেখে নিয়েছিলো?একটা বারও মনে হলো না ঠিক কার লেজে পা দিয়েছিলে তুমি?একটাবারও মনে হলো না ওরা দ্বিতীয়বার দেখলে জানে মেরে দেবে তোমাকে?সে ইট অদ্রি!চুপ করে থেকো না!জবাব দাও!

বিস্ময়ে চোখ মেললাম আমি।তারমানে এমডি স্যারকে উনিই মানা করেছেন?উনিই সবটা করছেন যাতে এই অদ্রি নামটা জার্নালিজম থেকে মুছে যায়?অঙ্কুরের নাকচোখ রক্তবর্ন হয়ে আছে একদম।চোয়াল শক্ত করে দাতে দাত চেপে রয়েছেন যেনো উনি।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতেই বললাম,
-মরলে মরতাম!তাতে আপনার কি?আমাকে বাচিয়ে কেনো আনলেন?সেদিনই বা কেনো বাচিয়েছিলেন?আপনার জন্য বেচে থেকেও প্রতিমুহুর্তে মরতে হচ্ছে আমাকে।মরতে দিন না আমাকে!কেনো বাচাচ্ছেন?কেনো করছেন এমন?কেনো?মরে যেতে দিন আমাকে!

অঙ্কুর আমার একহাত ছেড়ে ঘাড়ের চুল মুঠো করে নিলেন।আরেকহাত পিছনে কোমড়ে আটকে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকালেন।চোখ বন্ধ করে নিলাম আবারো।ছাড়া পেয়েছে যে হাত সে হাতে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।অঙ্কুর অন্যহাত আরেকটু মুচড়ে ধরে আরো শক্তিতে কাছে টেনে নিলেন আমাকে।চুলগুলোও বেশ অনেকটাই জোরে মুঠো করেছেন উনি।ব্যথায় একটু কুকড়ে উঠতেই উনি কাতরভাবে বললেন,
-মরার কথা আর কোনোদিন বলবে না তুমি অদ্রি!প্লিজ!

আরেকটু ব্যথাতুর শব্দ বেরোলো মুখ দিয়ে।কান্নাও করে দিয়েছি।অঙ্কুর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে দাড়ালেন।মাথার চুলগুলো উল্টে ধরে আমার দিকে ঝুকে ব্যস্তভাবে বললেন,
-লেগেছে তোমার?অদ্রি?আ’ম…আ’ম সরি।রাগটা কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে….কেনো বারবার মরার কথা বলো তুমি?কেনো?এই কথাটা আমি শুনতে পারি না।তবুও বারবার কেনো বলো এসব?
-আমি মরলে আপনার কি?
অঙ্কুর থেমে গেলেন।ওনার কথায় বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে আমি ছাড়া যেনো উনি অসহায়।তাই তার সব খারাপ ব্যবহারকে একপাশে রেখে,মস্তিষ্ককে পাত্তা না দিয়ে মনের প্রশ্নটা মুখেই এনে ফেলেছি।উনি মাথা নিচু করে হাত মুঠো করে রইলেন।এবার আমি একপা এগিয়ে বললাম,
-চুপ করে থাকবেন না অঙ্কুর।আমার উত্তর চাই!

-বলুন অঙ্কুর,আমি মরলে আপনার কি?কেনো বাচাচ্ছেন আমাকে প্রদীপ সরকারের হাত থেকে?কেনো চান না আমি সিক্রেট রিপোর্টার হিসেবে চাকরিটা করি?কেনো অদ্রির আসল পরিচয় জেনেও চুপ আপনি?কেনো বলে দিচ্ছেন না সবাইকে?কেনো আমার সেইফটি নিয়ে এতোটা সেন্সিটিভ আপনি?কেনো অঙ্কুর?কেনো?
-আপনি এভাবে চুপ থাকলে আমি নিজেকে আঘাত করবো অঙ্কুর!
-কারন তোমাকে আমার বাচ্চার মা হতে হবে।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার বেবি…..
ওনার মাটিতে দৃষ্টি স্থির করা শান্ত জবাব।পাশে রাখা তাকটার উপরের ছোট ফুলের টবটা ঠেলে ফেলে দিলাম আমি।চেচিয়ে বললাম,

সবটাই তুমিময় পর্ব ১২

-বেবি বেবি বেবি!এছাড়া কিছুই জানেন না আপনি অঙ্কুর!আপনার আর কিছু আশা করাও বেকার!আপনি খুব খারাপ একটা লোক অঙ্কুর!অত্যন্ত নিচ মনের মানুষ!কে বলেছে মা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন আপনি?আপনি সত্যিই মানুষ হননি মা ছাড়া!অমানুষ হয়েছেন আপনি!অমানুষ!আপনি তো মায়ের ভালোবাসা ডিসার্ভই করেন না!কারো ভালোবাসাই ডিসার্ভ করেন না আপনি!কারোর না!

কথাগুলো বলে কাদতে লাগলাম আমি।অঙ্কুর তার ডানহাত আমার দিকে বাড়ালেন।হাত দিয়ে ঝারা মেরে সরিয়ে দিলাম।উনি চোখভরা পানি নিয়ে নিশব্দে এক অদ্ভুত হাসি হেসে বললেন,
-আজ যা বললে,কয়েকটা দিন পর এর উল্টোটাই বলবে তুমি অদ্রি।এটা আমার বিশ্বাস।আর জানোতো?অঙ্কুর নিজে হারলেও ওর বিশ্বাস কোনোদিন হারেনি।বরাবরের মতোই আমার বিশ্বাস জিতে যাবে।দেখে নিও অদ্রি।দেখে নিও!আর সেদিন সে সব ভালোবাসা আমার জন্য হবে,যা আমি ডিসার্ভ করি!সবটা!

সবটাই তুমিময় পর্ব ১৪