সবটাই তুমিময় পর্ব ১৫ || লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

সবটাই তুমিময় পর্ব ১৫
লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

সন্ধ্যে শেষ হয়ে রাত নেমে এসেছে।গাড়ি থামলো সোজা আমাদের বাসায়।গলা শুকিয়ে আসলো আমার।অঙ্কুর তার কাছে নিয়ে যাবেন বলার পর থেকেই ভয়ে ছিলাম ঠিকই,তবে নিজেকে শক্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাও করছিলাম।কিন্তু আমাদের বাসা দেখে ভয় কয়েকশো গুন বাড়লো যেনো।মাস্কটা খুলে নিজে নেমে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন উনি।ভেতর থেকেই বললাম,

-আ্ আপনি এ বাসায় কেনো আসলেন?
-তোমার মনিমার অনুমতি নিতে।
জামা খামচে ধরলাম আমি।অঙ্কুর আমার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
-কেনো?নতুন জীবন শুরু করতে চলেছো তুমি অদ্রি!বিবাহিতো জীবন!তোমার মায়ের মতো মনিমা,যে এতোগুলো দিন মানুষ করেছে তোমাকে,তোমার জন্য নিজের বর,ঘর,সন্তান,পরিচয় সব ছেড়েছে,তোমাকে আগলে রাখতে গিয়ে নিজের সত্ত্বাকে বিনষ্ট করতে পিছপা হয়নি,তার দোয়া নেবে না অদ্রি?উল্টো ভয় কেনো পাচ্ছো?এ কেমন কথা?

-শশুড়বাড়ি যাওয়ার আগে তোমার সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট মানুষটার দোয়া নেবে না?আমি থাকতে তা কি করে হয় বলো?তাই সোজা এ বাসাতেই আগে আসলাম।
এটুক বলেই হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামালেন আমাকে।ঝাপসা দেখছি সবটা।অঙ্কুর হাত ছড়িয়ে দরজা দেখালেন আমাকে।তানহাও এসেছে পিছন পিছন।উনি বললেন,
-তুমি আগে যাবে?নাকি আমিই….
-এমনটা করবেন না প্লিজ!
-কেমনটা?
-আমি….আমি মনিমাকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।একটু সময় দিন আমাকে।মনিমা সবে সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরেছে।হুট করে তাকে এখন এসব বললে….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-শোনো অদ্রি,আর সময় দিতে পারবো না।দেখছোই তো,কতোটা বউপাগল আমি!মনিমাকে কি বলবে না বলবে,দ্যাটস্ টোটালি আপটু ইউ।তবে হ্যাঁ,আমি এটুক বলবোই,বউ নিয়ে যেতে এসেছি,বউ নিয়েই বাসায় ফিরবো!
উনি কলিংবেল টিপে দিয়ে সরে দাড়ালেন।মুহুর্তেই দরজা খুলে গেলো।মনিমা ব্যস্তভাবে বললো,
-আন্নু?তুই কি এতোটুকো শান্তি দিবি না আমাকে?সেই সকালে বেরিয়েছিলি ভার্সিটি যাবি বলে।রাত আটটা বাজছে,এখন বাসায় ফিরছিস?ফোনটা কোথায় তোর?সারাদিনে কয়বার কল করেছি হিসেব আছে তোর?আমি তো….
মাথা নিচু করে ভেতরে ঢুকলাম।তানহাও পিছন পিছন কাচুমাচু মুখ করে ভেতরে ঢুকলো।ওকে দেখেই মনিমা কাধ ধরলো ওর।মাথার ব্যান্ডেজটা ছুইয়ে দিয়ে বললো,

-একি!কি হয়েছে তোর তান্নু?ব্যান্ডেজ কেনো?কিভাবে লাগলো?কি‌ হয়েছিলো তোর?আবার কি কান্ড ঘটিয়েছিস দুটোতে মিলে?সারাদিন কি করছিলি তোরা?কিভাবে এসব….
তানহা মনিমাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
-শান্ত হও মনিমা।আমি ঠিকাছি।পরে গিয়েছিলাম।একটু লেগেছে তাই।
-শান্ত হবো?তোর মাথায় ব্যান্ডেজ পরেছে তান্নু!
তানহা চুপ করে গেলো।মনিমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আর তুই?তুই কেনো চুপ করে আছিস?কথা বলছিস না কেনো?কিভাবে লাগলো ওর?কোথায় ছিলি তোরা?কোথায় ছিলি তুই আন্নু?

-ও কোথায় ছিলো সেটা ভুলে যান,কোথায় যাবে সেটা নিয়ে ভাবুন মিসেস খানম!
আতকে উঠলাম আমি।অঙ্কুর ভেতরে ঢুকেছেন।মনিমা আস্তেধীরে উঠে দাড়ালো সোফা থেকে।চোখ ভরে উঠেছে তার।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো মনিমা অঙ্কুরের দিকে।অঙ্কুর পকেটে দুহাত গুজে,চোয়াল শক্ত করে রেখেছেন,তবুও কেমন একটা ইতস্তত করছেন।একদমই তাকাচ্ছেন না মনিমার দিকে।মনিমার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে।অস্ফুটস্বরে বললো,
-অ্ অঙ্কুর!
এটুক উচ্চারন করে মনিমা তার কাপাকাপা হাত অঙ্কুরের মুখের দিকে উঠাতে লাগলো।উনি ফিরিয়ে নিলেন তার মুখ।হাত থেমে গেলো মনিমার।যেনো হুশে ফিরলো সে।হাত নামিয়ে নিলো নিরবে।তবে চোখের পানি পরছেই তার।কিঞ্চিত বিস্ময়ে দেখলাম শুধু সবটা।যার কিছুই বুঝতে পারি নি।অঙ্কুর অন্যদিক তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন,

-অদ্রি?যাবে চলো!
এই ডাক শুনে চোখ বন্ধ করে নিলাম।মনেমনে প্রার্থনা করে চলেছি,মনিমা যেনো এই নাম নিয়ে কিছু না জানে।মনিমা বিস্ময়ে তাকালো অঙ্কুরের দিকে।বললো,
-ক্ কে অদ্রি?
অঙ্কুর এবার তারদিক তাকিয়ে বললেন,
-আপনার পালিত মেয়ে মিসেস খানম,আহানিতা সিদরাতুল!
বিস্ফোরিত চোখে মনিমা আমার দিকে তাকালো।আমি যেনো কথা বলাই ভুলে গেছি।বিয়েটার সাথে সাথে এভাবে আমার ছদ্মনামটাও মনিমার সামনে আসবে,অঙ্কুর এটাও বলে দেবেন,তা কখনো ভাবিনি।মনিমা এক পা দু পা করে এগোলো আমার দিকে।তাকে দেখে বুক ফেটে কান্না আসছিলো আমার।তবুও শক্ত রাখলাম নিজেকে।মনিমা বললো,

-আন্নু?
-ত্ তুই অদ্রি?
-ত্ তারমানে তুইই ভোরের বাংলায়…..
-তুই…তুই জার্নালিজমে ছিলি আন্নু?
পিনপতন নিরবতা ভেঙে অঙ্কুর বললেন,
-হ্যাঁ।ঠিক ধরেছেন মিসেস খানম।ওই সেই অদ্রি।

মাথা নিচু করে রইলাম।আজ বলার কিছুই নেই আমার।শুধু আজ কেনো?ততক্ষন অবদি অঙ্কুরের সব কথা মানবো,যতোক্ষন না তার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমান যোগাড় করতে না পারছি।মনিমা নিজেকে ছেড়ে দিচ্ছিলো।আমি এগোতেই হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো আমাকে।নিজেকে সামলে সোফায় বসলো।অঙ্কুর বললেন,
-অদ্রির আরেকটা পরিচয় আছে মিসেস খানম।ও এখন আমার বউ!মিসেস আরিয়ান সার্ফরাজ অঙ্কুর!
দ্বিতীয়বারের মতো বিস্ময়ে তাকালো মনিমা।কপাল কুচকে অবিশ্বাসের স্বরে বললো,

-তোরা…তোমরা বিয়ে করে নিয়েছো?
-হ্যাঁ,বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের।
-কিভাবে?
-সবরকমের নিয়মকানুন মেনেই।নিখোজ হওয়ার এক সপ্তাহ ও আমার কাছেই ছিলো।তখনই হয়েছে বিয়েটা।অদ্রি চায়নি বলে বিয়ের বিষয়টা পাব্লিক করি নি!আপনাকে জানাই নি!
মনিমার বিশ্বাস হয়নি কথাটা।সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-বিয়েটা কিভাবে হলো আন্নু?
-চুপ করে আছিস যে?
-মনিমা?মনিমা?

দুবার ডাক লাগিয়ে ভেতরে ঢুকলো তিহান।ওকে দেখেই গরগর করে বলে দিলাম,
-অঙ্কুর প্রথম দেখাতেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমাকে।তাকে এতোটাই ভালো লেগেছিলো,অবশ্য আগে থেকেই লাগতো।তাই আর মানা করতে পারি নি।বিয়েটা করে নিয়েছি দুজনে।আমার বিশ্বাস ছিলো,আমার পছন্দকে অবশ্যই সম্মান করবে তুমি মনিমা।করবে,তাইনা?বলো?আর রইলো বাকি পাব্লিক করার কথা,এটা এখনই চাই না আমি।ঠিক সময়মতো সবাইকে আমিই জানাবো।আশা করবো এখনই সবাইকে সবটা জানিয়ে আমার সংসারটা ভাঙার চেষ্টা করবে না কেউ!

পুরো কথাটা তিহানের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে বলেছি যেনো শুধুমাত্র ওকেই উদ্দেশ্য করেই বলা।চোখ ভরে উঠেছে ওর।মোটামুটি হাসিখুডিভাবেই এসেছিলো ও।কিন্তু আমার কথা শুনে মুহুর্তেই ওর চোখমুখে হাহাকার ফুটে উঠলো।মনিমা আবারো সোফায় গিয়ে বসলো।তার দিকে এগোলো তিহান।হাতে কিছু ফলমুল।ওগুলো টি টেবিলে রেখে মনিমার সামনে হাটু গেরে মেঝেতে বসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বললো,

-তুমি ঠিক বলো মনিমা।আন্নু,তান্নু শুধু পারে আমাদেরকে টেনশনে রাখতে।ট্রাস্ট মি,এরপর থেকে আর কোনোদিনও ওদের সাপোর্টে কোনো কথা বলবো না আমি।আন্নু তো ওভাবে বিয়ে নিয়ে নিখোজই ছিলো,এই তান্নুকে হসপিটালে রেখে বেরিয়েছিলাম কিছু ফ্রুটস্ কিনবো বলে।আর ওদের দেখো,বেরিয়ে এসেছে।তবে ধারনা করেছিলাম এখানেই থাকবে দুজন।তাই…

-তুই জানতি ওদের বিষয়ে?
-বল তিহান!তুই জানতি বিয়েটা হয়েছে?
-হুম।
মনিমার চোখের জল বেরিয়ে এলো।জরিয়ে ধরলো সে তিহানকে।তিহান আলতোভাবে মনিমার কাধে হাত রেখে বললো,
-কাদছো কেনো মনিমা?আজ না হোক কাল,তোমার তো মেয়ে বিয়ে দিতেই হতো।সেখানে তোমার মেয়ে নিজেই ভালোবেসে বিয়ে করেছে।ওর মনের মতো মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে।তোমার তো খুশি হওয়া উচিত মনিমা।কেদো না!
তিহানকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ালো মনিমা।তিহানও দাড়িয়েছে।মনিমা তিহানের গাল ধরে কাদতে কাদতে বললো,

-আমাকে ক্ষমা করে দিস তিহান!আমি অসহায়।আজকে আমাকে স্বার্থপর হতেই হবে।নইলে যে আজীবন ছোট হয়ে থাকবো নিজের কাছে,যেমনটা এখনো আছি!ক্ষমা করে দিস আমাকে!ক্ষমা করে দিস!
তিহানের চোখের পানি বেরিয়েই এলো।তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ফেলে মনিমার হাতে হাত রেখে জোর করে হেসে বললো,
-পাগল তুমি?আমার কাছে কেনো ক্ষমা চাচ্ছো?এতে যে আরো ছোট হয়ে যাবো আমি মনিমা।আর ছোট করো না আমাকে।
-তিহান…
-ত্ তুমি ওদের….ওদের সাথে কথা বলো,আমি…আমি আসছি।মা ফোন করে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছে।ইন্টারভিউ শেষ করে বাসায় ফিরিই নি এ অবদি।তানহা?এই ফলগুলো চাইলে নিয়ে যাস।আর হ্যাঁ,টেক কেয়ার।
আমার দিক তাকিয়ে তিহান বললো,

-আজই যাবি?
-হ্যাঁ।এখনই!
-দোয়া রইলো,ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে অনেক ভালো থাকিস তুই।
-থ্যাংকস্।
আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম।ও অঙ্কুরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আন্নু অনেক ভালোবাসে আপনাকে।আপনার এককথায় বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।বিয়েটা পাব্লিক করুন বা নাই করুন,আশা করবো ওকে….
-ও বউ হয় আমার তিহান!
-হ্ হ্যাঁ।অ্ অল দ্যা বেস্ট স্যার।ভালো থাকবেন,আপনার ভালোবাসার মানুষটার সাথে।খুব সুন্দর হোক আপনাদের জীবন।একসাথে খুব ভালো থাকুন আপনারা দুজনে।
তিহানের গলা ধরে আসছিলো কথাগুলো বলতে।কোনোমতে কথা শেষ করে বেরিয়ে গেলো ও।সবাই ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।চোখমুখ মুছে অঙ্কুরের দিকে এগোলো মনিমা বললো,

-বউকে এখনই নিয়ে যাবে?
-হ্যাঁ।
মনিমার মুখে হাসি,চোখে জল।যেটা অবাক করে দিচ্ছে আমাকে।এই হাসিটার কোনো কারনই খুজে পাচ্ছি না আমি।মনিমা তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে গিয়ে একটা ব্যাগ এনে আমার হাতে দিয়ে বললো,
-এগুলো তোমার মায়ের শাড়ি গয়না আহানিতা!শশুড়বাড়ি যাচ্ছো,এটা পরে যাও আজ ও বাসায়।তান্নু?ওকে রেডি করে দে!

কেদে দিলাম।বিস্মিতও হয়েছি আমার বিয়েটা নিয়ে তার এই রিয়্যাক্ট দেখে।পরপরই মনে হলো বলেছি আমার ইচ্ছায় বিয়ে হয়েছে,তাই কিছু বলছে না সে।তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিলাম।কাদবো না,মনিমাকে বোঝাবো,আমি সুখে আছি বিয়েটা নিয়ে।কাপাকাপা হাতে ব্যাগটা নিতে যাবো,অঙ্কুর এসে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে বললেন,
-অদ্রি আমার বউ!এএসএ’র বউ!এসব পরে কেনো যাবে?
উনি ব্যাগটা নিয়েই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটা ট্রলিব্যাগ নিয়ে হাজির উনি।তানহার দিকে ওটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

-রানীর মতো সাজাবে ওকে তানহা!কেউ জানুক,বা না জানুক,দেখুক,বা না দেখুক!আমার চোখে আমার বউকে আমার বউয়ের মতোই দেখতে চাই আমি!এএসএ’র বউ!
রাগে মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে আসলো আমার হাত।তানহা মাথা নিচু করে একহাতে ব্যাগটা,আরেকহাতে আমাকে ধরে রুমে নিয়ে আসলো।মুর্তির মতো চুপচাপ শুধু নিজেকে সাজানো দেখে চললাম।লাল খয়েরী লেহেঙ্গা,শাড়ির আচলের মতো তুলে দেওয়া ওড়না,ঘোমটা,সারা গায়ে ভারিভারি গয়না।কোথথেকে এলো এসব কে জানে!তবে আমাকে দেখলে যে কেউ বলবে আজই যেনো এএসএ’র সাথে ধুমধাম করে বিয়ে হলো আমার।তানহা বললো,

-এখনো সময় আছে আন্নু।আরেকবার ভেবে দেখ!
-যা ভাবার আমি ভেবে নিয়েছি।এখন সবটা সেভাবেই হবে,যেভাবে অঙ্কুর চান!
-এসবের কোনো দরকার ছিলো?
-আর কিই বা করতাম আমি?বিয়েটা তো হয়েই গেছে।
-মনিমাকে সবটা জানালে হতো না?

-তোর কি মনে হয়,মনিমা যখন জানবে অঙ্কুর আমাকে বিয়েটা শুধু বেবির জন্য করেছেন,আর আমি সবটা চুপচাপ এজন্য মেনে নিচ্ছি যাতে তাকে এক্সপোজ করতে পারি,মনিমা সবটা মানতে পারবে?
তানহা জরিয়ে ধরলো আমাকে।আমি পাথর হয়েই দাড়িয়ে রইলাম।এরমধ্যে মনিমা ভেতরে ঢুকলো।একটু স্বাভাবিক করলাম নিজেকে।একদম আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,
-তোর কাছে আজ অবদি একটা জিনিসই চেয়েছিলাম আ‌মি আন্নু,জার্নালিজম থেকে দুরে রাখবি নিজেকে।সেটা আমাকে দিস নি তুই।লুকিয়ে সাংবাদিকতায় নিজেকে জরিয়ে,এদিক দিয়ে কিন্তু আমাকে ঠকিয়েছিস তুই!

সবটাই তুমিময় পর্ব ১৪

-তবুও মেনে নিলাম।মেনে নিলাম শুধু এটুকো ভেবে কারন আজ দ্বিতীয়বার আর শেষবারের মতো কিছু চাইবো তোর কাছে।দিবি?
-ক্ষমা করে দিও আমাকে মনিমা,শুনিনি তোমার বারন।হয়তো এজন্যই আজ….
-আজ কি?
-কিছুনা।বলো কি চাই তোমার?আজ তুমি যা চাইবে,আমি চেষ্টা করবো আমার সবটুকো দিয়ে তা পুরন করতে।বলো মনিমা।
-হ্যাঁ,চাইবো।ভিক্ষে চাইবো তোর কাছে আন্নু!ভিক্ষে চাইবো!
-এভাবে কেনো বলছো?তুমি শুধু বলো তোমার কি চাই!
মনিমা থেমে গেলো।অন্যদিক ফিরে শক্ত গলায় বললো,

-মনে রাখবি আন্নু,অঙ্কুর তোর বর!ভালোবাসে ও তোকে!আজ থেকে জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে অঙ্কুরের পাশে থাকতে হবে তোকে।ওকে এতোটা ভালোবাসবি,এতোটা ভালো রাখবি,ওর জীবনের বাকি সমস্ত শুন্যতা,সমস্ত অপুর্নতা যেনো বিলিন হয়ে যায়।অঙ্কুরের জীবনে সব সুখ ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে তোকে।ওর একাকীত্বকে ভালোবাসায় মুড়িয়ে সুখসঙ্গে বদলে দিতে হবে তোকে।অঙ্কুরের চেহারার এই কৃত্রিম হাসি মুছে বাস্তবিক অর্থেই সুখের হাসি ফোটানোর দায়িত্ব তোর!বল?পারবি না?পারবি না অঙ্কুরকে ভালো রাখতে?ভালোবাসতে?

সবটাই তুমিময় পর্ব ১৬