সবটাই তুমিময় পর্ব ৪ || লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

সবটাই তুমিময় পর্ব ৪
লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

পানিভর্তি বাথটাবে জামা খামচে ধরে বসে আছি কতোক্ষন হলো হিসেব নেই।এভাবে টুইটুম্বরভাবে ভিজে কাপড়ে থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।তাই চেন্জ করে বেরিয়ে এলাম বাথরুম থেকে।বেরিয়ে দেখি রুমের দরজা এবারও খোলা।পা টিপে টিপে হেটে বেরিয়ে‌ দেখি করিডরে দুজন‌ লোক।নিচেও আছেন দুজন।তারমানে এ বাসায় সবগুলো ছেলেমানুষ।কুচকানো কপাল নিয়ে পিছন ফিরলাম।রুমে ঢুকতে যাবো,দরজা লক।পাশে থেকেই একলোক বললেন,

-স্যার নিচে ডাইনিংয়ে যেতে বলেছেন আপনাকে।
ভুতের মতো রুমের দরজা লক করে এখন নিচে যেতে বলছে।এই লোকটা সবকাজেই বাধ্য করছে আমাকে।ভয় হয়।কোনোভাবে সেরোগেশনের জন্যও‌ যদি….না!কিছুতেই‌ না!কোনোভাবেই রাজি হবো না আমি তার কথায়!চুপচাপ নিচে নেমে আসলাম।ডাইনিংয়ে বসে মোবাইল স্ক্রল করতে থাকা রোহান ভাইয়া বললেন,
-এসে গেছো আহানিতা?এসো।বসো।
দাড়িয়েই রইলাম।উনি মাথা তুলে একটু তাকিয়ে থেকে জোর করে মুখে হাসি টেনে আবারো বললেন,
-দাড়িয়ে আছো কেনো?প্লিজ বি সিটেড!
-আপনি আমাকে নিয়ে সবটাই জানেন তাইনা ভাইয়া?
উনি ভ্রুকুচকে তাকালেন।বললেন,

-সবটাই মানে?
-মানে আমাকে ঠিক কিভাবে এখানে আনা হয়েছে,কিভাবে আটকে রাখা হয়েছে,কিভাবে ট্রিট করা হচ্ছে,আমাকে কি শর্ত দেওয়া হয়েছে সবটা!
রোহান ভাইয়া ফোনে মনোযোগ দিলেন আবারো।বললেন,
-হ্যাঁ।
-আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
-প্রশ্ন?কিছু প্রশ্ন?তোমার তো অনেক প্রশ্ন থাকার কথা আহানিতা!
-এটা যখন বুঝেছেন তারমানে সেগুলোর উত্তর দেওয়ার সক্ষমতাও রাখেন।আমার সেসব প্রশ্নের উত্তর চাই!
-না।তোমার মতো আমিও সে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানি না!
-আপনি জানেন!আর বলতে আপনাকে হবেই!
-আমি কিছুই‌ জানি না আহানিতা!কি বলবো তোমাকে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আপনি সব জানেন!অঙ্কুর আপনার বন্ধু!আজ রুম থেকে বেরোনোতে দিয়েছেন উনি আমাকে।তাই আপনার সাথে কথা‌ বলার সুযোগ হয়েছে।আমাকে প্লিজ….
-অঙ্কুর নাকি তোমার সাথে আজ একসাথেই ব্রেকফাস্ট করবে।বাট আই ডোন্ট থিংক,এটা শুধু আজকের জন্যই!আই থিংক এরপর তোমাকে আর রুমে লক করে রাখবে ও!
তাচ্ছিল্যে হাসলাম।বললাম,

-তাই নাকি?রুমে লক করে রাখবে না।বরই সুসংবাদ শোনালেন!
-তোমার লাইফের আরো অনেক সুসংবাদদাতা হওয়ার ইচ্ছে আছে আমার আহানিতা!আফটার অল,ভাইয়া বলে ডেকেছো!
-যদি তাই হয়ে থাকে,যদি সত্যিই বোন ভেবে থাকেন আমাকে,তাহলে এটুকো বলুন,আমাকে কেনো এখানে আটকে রাখা হয়েছে?এসব উল্টোপাল্টা শর্ত কেনো..
-জাস্ট আ‌ মিনিট আহানিতা!একটু শ্বাস নাও!তুমি তো একদম সাংবাদিকদের মতো জেরা করতে শুরু করলে!অঙ্কুর ঠিকই‌ বলেছে,তোমার সাথে কথা বলাটা রিস্কি!
মুখ ফিরিয়ে নিলাম।উনি বললেন,
-রিল্যাক্স!বসো আগে!
চেয়ার টেনে বসলাম।রোহান ভাইয়া আবারো বললেন,

-একটা কথা বলো তো আহানিতা,অঙ্কুর তোমাকে অদ্রি কেনো ডাকে?ওটাও তোমার নাম?
-না।আমি অদ্রি নই!জানিনা কার সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন উনি আমাকে!আবোলতাবোল বকা,আবোলতাবোল নামে ডাকার রোগে ভুগছেন উনি।হি ইজ সিক!
মুচকি হাসলেন রোহান ভাইয়া।বুঝলাম,উনি কথা‌ বাড়াতে‌ চান না আমার সাথে।তাই‌এসব প্রশ্ন তুলছেন।এরমধ্যে অঙ্কুরের হুইস্টিংয়ের শব্দ।মাথা তুলে তাকালাম।মেরুন টিশার্ট পরেছেন উনি এবার।ভেজা চুল।গলায় তোয়ালে ঝোলানো।চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিলাম।উনি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললেন,

-যা দেখছি,বেশ পেটুক মানুষ আপনি মিস অদ্রি!যেইনা বলেছি খাবার আর আপনার ঘরে যাবে না,সুরসুর করে ডাইনিংয়েই হাজির হলেন ব্রেকফাস্ট করতে।কেয়া বাত!
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম আমি।অঙ্কুর সোজা আমার সামনে এসে দাড়িয়ে গেলেন।শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলাম তারদিকে কতোক্ষন।উনি মৃদ্যু হাসি নিয়ে চুপ করে রইলেন।পাশ কাটিয়ে চলে আসছিলাম।উনি পেছন থেকেই বলে উঠলেন,

-আপনার ঘরে তোয়ালে ছিলো মিস অদ্রি।মাথাটা মোছেন নি কেনো ঠিকমতো?চুলে পানি রয়েছে পুরোটাই।আর খাবার না খেয়ে চলে যাচ্ছেন যে!কোনোভাবে আপনি চাচ্ছেন অসুস্থ্য হতে?হসপিটালাইজড্ হতে?কোনোভাবে আমাকে এটা বোঝাতে চাচ্ছেন না তো?আমার শর্তে আপনি রাজি?
পা থেমে গেলো‌ আমার।গটগট করে‌ আবারো এসে এককোনের একটা চেয়ারে বসে গেলাম।অঙ্কুর এগোলেন আমার দিকে।আমার তীক্ষ্মদৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে গলায় থাকা তোয়ালেটা আমার মাথায় দিয়ে টেবিলের আরেকপ্রান্তে গিয়ে বসলেন উনি।বিশাল ডাইনিং টেবিলটার সবচেয়ে আলিশান চেয়ারটা ফাকা রাখা।তারই পাশের এক চেয়ারে বসে গেলেন অঙ্কুর।তার একদম পাশের চেয়ারটায় রোহান ভাইয়া।দুজন লোক এসে খাবার বাড়তে লাগলো।অঙ্কুর বললেন,

-মাথা ঠিকমতো মুছুন মিস অদ্রি!
উঠে দাড়িয়ে একটু সরে দাড়ালাম।মাথা মোছা মুলত বাহানা।আড়চোখে পুরো বাসা দেখতে লাগলাম।সদর দরজাটা চোখে পরেছে।আটকানো।এপাশে কেউ পাহাড়ায় নেই।বাইরে আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।অঙ্কুর চামচ নাড়তে নাড়তে বললেন,
-বাসার চারপাশে,ভেতরে,বাইরে সবখানেই গার্ডস্ আছে মিস অদ্রি!পালানোর রাস্তা স্ক্যান করা শেষ হলে প্লিইইইইজ ফিনিশ দ্যা ব্রেকফাস্ট!
আবারো খেতে বসলাম।রোহান ভাইয়া অঙ্কুরের পাশেই বসে খাচ্ছেন।অঙ্কুর খাওয়া শেষ করে মুখ মুছে উঠে দাড়ালেন।বললেন,
-রোহান তুই বাসায় যাবি?

-হুম।
-অফিস?
-যাবো।বাসা থেকেই।
-ওকে।আর এইযে মিস পাহাড় পর্বত?
মাথা তুলে কপালে ভাজ ফেলে তাকালাম তার দিকে।উনি একগাল হেসে বললেন,
-ছোটবেলায় ব্যকরন ক্লাসে ফাকি দেননি তারমানে।সমার্থক শব্দটা ভালোই পড়েছেন দেখেছি!
কটমটে চোখে তাকিয়ে রইলাম শুধু।অঙ্কুর বললেন,

-শুনুন মিস এভারেস্ট!আমি ক্লাবে যাচ্ছি।প্র্যাকটিস আছে।কখন ফিরবো জানি না।আর রোহানও বেরোবে।হুইচ মিনস্,বাসায় আমি বাদে মোটামুটি বাকি তিনজন সার্ভেন্ট,দুজন মালি, দুজন দাড়োয়ান আর বারোজন গার্ডস্ এর নজরে থাকবেন আপনি শুধু।সব মিলিয়ে মাত্র উনিশজন।এছাড়া কোনায় কোনায় লাগানো সিসিক্যামগুলো হিসেবের বাইরে রাখলাম।ওগুলোতে যে আপনি সবসময় আমার নজরে থাকবেন,ওটা আলাদা করে নাইবা বললাম।মরাল অফ দ্যা স্টোরি ইজ,আপনি যতোচেষ্টাই করুন না কেনো,এ বাসা থেকে বেরোতে পারবেন না।তাই একটু শান্তশিষ্ট স্বভাব দেখানোর চেষ্টা করবেন।চড়ুইয়ের মতো বেশি লাফালাফি করবেন না কেমন?হ্যাভ আ নাইস ডে!

উনি রুমের দিকে পা বাড়ালেন।রাগে কাটা চামচে প্লেটেই ঘা লাগালাম।রোহান ভাইয়া ওখানেই বসে।অনেকটা সময় পর বললেন,
-তুমি অঙ্কুরের কথায় রাজি হচ্ছো না কেনো আহানিতা?
বিস্ময়ে তাকালাম তারদিক।পরপরই নিজেকে সামলে নিলাম।ওনাকে ওনার বন্ধুর থেকে আলাদা ভাবা আমারই‌ বোকামি ছিলো।বললাম,
-সার্থক আপনাদের বন্ধুত্ব!সবটা জেনেবুঝেও আপনিও আপনার বন্ধুকে সাপোর্ট করছেন!হাহ!
-কোনো ভুল কাজকে‌ সমর্থন করিনি!
-হ্যাঁ বুঝেছি।অঙ্কুরের সাথে আপনারও বিবেক বিবেচনাবোধ লোপ পেয়েছে!
-যদি অঙ্কুরের মতোই হয়ে থাকি,আমি ধন্য!
মুখ ফিরিয়ে নিলাম।উনি আবারো বললেন,

-জানো আহানিতা?সেই স্কুল থেকে অঙ্কুরকে চিনি আমি।ভাবতাম,সবটাই জানি ওর।বুঝি ওকে।ওউ এ পৃথিবীতে আমাকেই সে একমাত্র মানুষটার জায়গা দিয়েছে,যেখানে সবটা শেয়ার করা যায়।কিন্তু তুমি ওর জীবনে আসার পর থেকে‌ মনে হচ্ছে ওকে‌ চিনতে অনেকটাই বাকি রয়ে গেছে আমার।
-হ্যাঁ।বাইরের দুনিয়াও ভুলই চেনেন ওনাকে।উনি তো অন্য চরিত্রেরই মানুষ!
-আহানিতা,তুমি যা ভাবছো….
-আমি যা ভাবছি?আপনি কেনো ভাবছেন না?ওনার না হয়‌ বিবেক শেষ হয়ে গেছে,কিন্তু আপনি তো আলাদা একটা মানুষ!আপনিও কেনো তাহলে একই পথে হাটছেন?
-কারন আমি‌ জানি অঙ্কুর কোনো ভুল করতে পারে না।

-ভুল?কোনটা ভুল?উনি যা করছেন তা অন্যায়!এভাবে আটকে রেখে সেরোগেশনের জন্য আমাকে রাজি করাতে চান উনি!একটা বাঙালি মেয়ে সেরোগেশন বলতে কি বোঝে জানেন?সেরোগেশন মানে বিয়ের আগে বাচ্চার মা হওয়া।যেখানে ওর সতিত্ব নষ্ট হবে না ঠিকই,কিন্তু সমাজের কাছে ওর সম্মান?সবটা শেষ হয়ে যাবে।সবাই চেচিয়ে আঙুল উচিয়ে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলবে,ওই দেখো সবাই,অবিবাহিত হয়েও অন্তসত্ত্বা ও!ওই‌ সন্তান নাজায়েজ!ওই বাচ্চা…..
রোহান ভাইয়া টেবিলে বারি লাগিয়ে উঠে দাড়ালেন।বললেন,

-স্টপ ইট আহানিতা!জাস্ট স্টপ ইট!
ওনাকে রাগতে দেখে ভয় হলো না।উল্টে আশার আলো দেখলাম যেনো।আল্লাহ করুক,এই রাগটাই আমার সব প্রশ্নের জবাব এনে দেয়।জোর গলায় বললাম,
-কেনো?কেনো থামবো বলতে পারেন?আপনি যা শুনতে পারছেন না,আপনার বন্ধু চান এই সবটা আমি শোনার জন্য প্রস্তুত হই!শুধুমাত্র আমাকে জোর না করে কি বোঝাতে চাইচ্ছেন উনি আমাকে?উনি মহান?আমার মতকে সম্মান দেখিয়েছেন?আমাকে সম্মান দেখিয়েছেন?যেখানে ওনার শর্তে আমাকে সবচেয়ে জঘন্যভাবে অপমান করছেন উনি!ওনাকে তো সবাই কতো সম্মান করে,শ্রদ্ধা করে,বিশ্বাস ভরসা সবই করে।আর উনি?উনি তো এসবের যোগ্যই নন!উনি একজন বিশ্বাসঘাতক!লোভী একটা লোক!ওনার তো….

-চুপ!অনেক বলেছো!আমিও শুনেছি!কিন্তু অঙ্কুরকে নিয়ে আর একবর্নও বাজে কথা না!
-কেনো?কেনো শুনবেন না?কেনো বলবো না আমি?উনি তো তাইই!ইনফ্যাক্ট উনি আরো….
উনি দুহাত একসাথে করে আকুতির স্বরে বললেন,
-প্লিজ আহানিতা!হাতজোর করছি তোমার কাছে!আর বলো না!আর অপমান করো না ওকে!অঙ্কুরের বিষয়ে তুমি কিছুই জানো না!ও তো শুধু বাচার জন্য সম্বল চায়,একটা বাচ্চা চায়!আর কিছু তো না!কিছু না জেনে এভাবে বলো না প্লিজ!
-জানতেই তো চাইছি!বুঝলাম একা জীবনে বেচে থাকতে একটা বাচ্চা চাই তার।কিন্তু সেরোগেশন করিয়ে কেনো বেবি চাইছেন অঙ্কুর?বিয়ে করে একটা মেয়েকে তার প্রাপ্য সম্মানটা দিয়েই বাচ্চার বাবা হতে পারেন উনি।এসবের কি দরকার?

-অঙ্কুর ওর জীবনে কোনো মেয়েকে জড়াতে চায় না।বিয়ের বাধনে বাধতে চায় না নিজেকে!
-কেনো?বিয়ের মতো পবিত্র বাধনে একটা মেয়েকে আপন করতে কেনো চান না উনি?
-ভালোবাসতে পারবে না কাউকে!সম্মান করতে পারবে না কোনো মেয়েকে!আসলে কি বলো তো আহানিতা?সব সম্পর্কেরই ভিত্তি হলো একে অপরের প্রতি সম্মান!আর সম্মানটা কোথায় থেকে আসে জানো আহানিতা?মা বাবার দেওয়া শিক্ষা থেকে।অঙ্কুর কোনোদিনও‌ সে শিক্ষাটা পায়নি ওর বাবা মার কাছ থেকে।অঙ্কুর বরই আফসোস নিয়ে বলে জানোতো?ওর পরিবারটা আর পাঁচটা হাসিখুশি পরিবারের মতো হলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো কারো?আরেকটু ধৈর্যশীল মা পেলে ওর জীবনটা হয়তো অন্যরকমই হতো।যতোদিন ওর মা বাবা কাছে ছিলো ওর,সবসময় ওর মাকে খারাপ ব্যবহার করতে দেখেছে ওর বাবার সাথে।তবে ওকে নাকি যথেষ্ট ভালোবাসে কাছে ডাকতো সে,কিন্তু সেগুলোকে স্বীকার করতে পারেনি অঙ্কুর।ওটুকো বয়সে ওর শিক্ষা এটুকোই ছিলো,মা বাবার সাথে বাজে ব্যবহার করে,ঝগড়া করে সবসময়।
কিন্তু হ্যাঁ,মাত্র নয় দশ বছর বয়সে ওকে ছেড়ে চলে গিয়ে ওর মা আরো একটা চরম শিক্ষা দিয়ে গেছে ওকে।

“মা হীন সন্তান,তার উপর বড়লোক বাবা,এ ছেলে বিগড়ে যাবে।মানুষ হবে না কোনোদিনই।”সবার এইসব কথার তীর সহ্য করেছে ও ওই বয়স থেকে!ভুল প্রমান করতে চেয়েছিলো সবাইকে।ওর বাবা বিদেশপাড়ি দিতে চাইলেন তার পরপরই।কিন্তু অঙ্কুর জেদ করে বিডিতে থেকে যায়।একা!সবটা ছেড়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে ও।ওর বাবার এক বন্ধু খোজ খবর নিতো ওর।কিন্তু তা একটুও প্রভাব ফেলেনি ওর জীবনে।ও একাই নিজের চেষ্টায় তৈরী করেছে নিজেকে।মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করতে থাকা ওর এই ক্রিকেট ক্যারিয়ার তার প্রমান।মাকে ছাড়াও বাচ্চা মানুষ হতে পারে।অনেক ভালো মানুষ হতে পারে।এজন্যই মা ছাড়া বাচ্চা চাই ওর!কাউকে নিজের জীবনে না জরিয়ে,কারো সতিত্ব নষ্ট না করে,সেরোগেশন করিয়ে বাচ্চা চাই ওর!

সবটাই তুমিময় পর্ব ৩

এতো অন্ধকারে ভরা ছেলেবেলা অঙ্কুরের?বাবা মা থেকেও তাদের ভালোবাসা জোটেনি ওনার।একাকী থেকেছেন এভাবে এতোগুলো বছর।ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে পারবেন না,তাই কাউকে নিজের জীবনে জড়াবেন না উনি।কারো সতিত্ব নষ্ট করবেন না,তাই কাউকে জোর করেও বাচ্চার বাবা হতে চান না।কিন্তু এসবের শেষেও সেই একটাই প্রশ্ন।আনিই কেনো তবে?শান্তভাবে বললাম,

-উনি বাচ্চা এডপ করতে পারতেন।সিঙ্গেল ফাদার তো অনেকেই আছে এ পৃথিবীতে।আর সেরোগেশনে রাজি হওয়ার জন্য আরো অনেকেই আছে।যারা আর্থিকভাবে সাহায্য পেলেই ওনাকে….
-এগুলোর কোনোটাই করবে না অঙ্কুর।কারন ও চায় বেবির মা তুমিই‌ হও!
ওড়না খামচে ধরলাম।তারমানে উনি সত্যিই আমাকেই ভেবেছেন সেরোগেশনের জন্য।ওনার কথামতো,যে করেই হোক,আমাকেই তার বাচ্চার সেরোগেট মাদার হতে হবে!ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম কয়েকটা।গলা দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরোলো,
-আ্ আমিই ক্ কেনো?

সবটাই তুমিময় পর্ব ৫