সবটাই তুমিময় পর্ব ৬ || লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

সবটাই তুমিময় পর্ব ৬
লেখনিতে – মিথিলা মাশরেকা

-এভাবে চোরের মতো চুপিচুপি আমার রুমে ঢুকে সবকিছু ওলোটপালোট করছেন যে?কিছু সরিয়েছেন নাকি?এটা জানেন তো?এএসএ’র ঘরে চুরির দায়ে আপনাকে ঠিক কতোবড় মাশুল দিতে হতে পারে মিস অদ্রি?
চমকে উঠলাম অঙ্কুরের গলা শুনে।সকালে ব্রেকফাস্ট শেষে ওনাকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলাম।নিচে ড্রয়িংরুমের চারপাশে গার্ডসরা ছিলো বলে বিরক্তি নিয়ে উপরে করিডোরে পাইচারি করছিলাম।হুট করে মনে পরলো ক্যামেরা আর ফাইলগুলোর কথা।ওগুলো অঙ্কুরের কাছেই আছে।আর উনি অবশ্যই তা নিজের ঘরেই লুকিয়েছেন।তাই সাহস জুগিয়ে চুপচাপ ঢুকে পরেছিলাম তার রুমে।এতোএতো ট্রফি,ব্যাচ,মেডেলের ভীড়ে খুজতে লাগলাম ওগুলো।ছিমছামভাবে সাজানো পুরো ঘরটা এলোমেলো করে ফেলেছি একদম।ভেবেছিলাম ওনার আসতে দেরি হবে,গুছিয়ে নেবো।কিন্তু এবার ওনার গলা শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো আমার।পিছন ফেরার সাহসটাও হলো না।

-পেয়েছেন?ফাইলগুলো?
ওড়না খামচে ধরে চোখ‌ খিচে বন্ধ করে রইলাম।উনি বুঝে গেছেন সবটা।আর এর ফল মোটেও ভালো হবে না তা বেশ আন্দাজ করতে পারছি আমি।
-চোখ খুলুন।
মাথা নাড়িয়ে না বোঝালাম।উনি আরো গম্ভীরভাবে বললেন,
-চোখ খুলতে বলেছি!
একটা শুকনো ঢোক গিলে চোখ খুললাম।উল্টেপাল্টে থাকা বিছানার উপর বসে জুতো খুলতে ব্যস্ত উনি।বললেন,
-এটা কিন্তু বোকামো।মানে বড়সড় বোকামো।আপনার কি ধারনা?ওগুলো আপনার হাতের নাগালের মধ্যে রাখবো আমি?
নিজের গালে নিজের অদৃশ্য বিবেক ঠাটিয়ে চড় লাগিয়ে বললো,এই লোক দুশো পার্সেন্ট ঠিক বলেছে,এমনিতে তো নিজেকে চালাক দাবি করিস।আর আজ তোর মাথায় এটুক ঢুকলো না?আস্তেধীরে পিছোতে লাগলাম।উনি উঠে দাড়িয়ে ঘড়ি খুলতে খুলতে বললেন,

-রুমের বাইরে গেলে শাস্তিটা আরো বেশি হবে।
পা থেমে গেলো আমার।দরজা ঘেষে দাড়িয়ে রইলাম।অঙ্কুর শান্তশিষ্টভাবে তোয়ালে কাধে ঝুলিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালেন।দরজায় থেমে গিয়ে আমার দিক ফিরে বললেন,
-আমি বেরোনোর পর পুরো রুম একদম আগের মতো গোছানো চাই।একবিন্দু এদিক ওদিক হলেই….
কথা শেষ করেননি।ভেতরে ঢুকে গেলেন উনি।এই লোকের এই একটা চরম বদঅভ্যাস!কথা শেষ করেন না!সবসময় এই কাজটার জন্য ভয় হাজারগুন বেড়ে যায় আমার।কপাল চাপড়ে তাড়াতাড়ি সব গোছাতে লাগলাম।ওনার বেরোনোর আগেই হয়ে গেছে সবটা।জোরে শ্বাস নিয়ে আরো ভালোমতো খুতিয়ে খুতিয়ে দেখতে লাগলাম তবুও।দরজা খোলার শব্দে সেদিক তাকাতেই হাত মুঠো করে চোখ‌ বন্ধ করে নিলাম।অঙ্কুর শাওয়ার নিয়ে শুধু ট্রাউজারটা পরে‌ একদম উদোম গায়ে বেরিয়েছেন ওয়াশরুম থেকে।আওয়াজ আসলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-এইসব লজ্জাটজ্জা পরে পাবেন!এখানে এই ট্রফিটা আর মেডেলটা একসাথে রাখা ছিলো।উল্টে দিয়েছেন।তাছাড়া বুকশেলফে উপরের তাকে হুমায়ন আহমেদের চারটে বই ছিলো।দুটো নিচের তাকে রেখে দিয়েছেন।আরো অনেক ভুল করেছেন আপনি মিস অদ্রি!এবার এসবের জন্য বোনাস শাস্তিভোগ করুন!
-দ্ দেখুন মিস্টার অঙ্কুর,আমি তো….
-হেডেক হচ্ছে।কফি বানিয়ে আনুন আমার জন্য।
-কিহ্?

-ঠিকই শুনেছেন।একদম কফি নিয়ে রুমে ঢুকবেন।তার আগে নয়!বেরোন রুম থেকে!বেরোন!
এমনভাবে আদেশ করছে,যেনো আমি তার কাজের লোক!রাগে চোখ মেললাম।কিন্তু আবারো বন্ধ করে নিতে হলো চোখজোড়া।এখনো উনি শুধু ট্রাউজার পরেই আছেন।রাগী গলাতেই বললাম,
-আমি আপনার বাসার কাজের লোক নই!
-একবারো তা বলেছি?
-এভাবে ওর্ডার করতে পারেন না আপনি আমাকে!
-ওর্ডার নয়,শাস্তি!
-হোয়াটএভার!পারবো না!
-ও।তারমানে এর থেকে বেটার শাস্তি চাইছেন আপনি?বেশ!তাহলে এক কাজ করুন!মাথা ব্যাথা করছে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিন!ঘুমাবো আমি।

-হোয়াট?
-এবারও ঠিকই শুনেছেন!আর হ্যাঁ,দুটোর একটা আপনাকে করতেই হবে মিস অদ্রি!নইলে….
আবারো অসমাপ্ত কথা!মাথায় হাত বুলাতে পারবো না তার।কোনোভাবেই না।কিন্তু কফিও‌ তো বানাতে পারি‌ না।চুলোই জ্বালাতে পারবো না হয়তো।আগুনে ফোবিয়া বলে মনিমা তো কিচেনের ধারেকাছেও ঘেষতে দিতো না কোনোদিন আমাকে।চোখ বন্ধ রেখেই আমতা আমতা করে বললাম,
-আ্ আমি কফি বানাতে পারি না!

অনেকক্ষন নিরবতা।আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।অঙ্কুর বেডে বসে।গায়ে টিশার্ট দেখে শ্বাস নিলাম।কিন্তু ওনার চাওনি দেখে মনে পরলো কি বলেছি।জোর করে হাসি ফুটালাম মুখে।বললাম,
-ইয়ে আ্ আসলে মনিমা আমাকে কোনোদিনও….
-নায়েব কাকা!
আমার দিকে তাকিয়ে বেডে বসে থেকেই ডাক লাগালেন অঙ্কুর।একটুপরেই একজন বয়স্ক লোক ভেতরে আসলো।আগেও দেখেছি ওনাকে।পরিচয় জানার আগ্রহবোধ হয়নি শুধু।উনি কাধের গামছা হাতে নিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললেন,
-কি হইলো অঙ্কুর বাবা?
অঙ্কুর আমাকে দেখিয়ে বললেন,
-মনিমার এই ননীর পুতলটাকে এক্ক্ষুনি কিচেনে নিয়ে যাও!এর হাতের রান্না খাবো আজ!সব রান্না আজ একে দিয়ে করাবে!

বড়বড় চোখ করে তাকালাম তারদিকে।বললাম কফিটাও বানাতে পারি না,আর উনি সোজা আমার হাতের রান্না খেতে চাইছেন?চেচিয়ে বললাম,
-কিইইই?আমি?রান্না?
-গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার!মেয়ে নামের কলঙ্ক আপনি!কফিটাও বানাতে জানেন না?আজ রান্না শিখবেন আপনি!যতোক্ষন লাগে লাগুক!লান্চ না জুটলে দরকার পরলে ডিনার করবো একদম!তবুও আপনাকেই রান্না করতে হবে আজ!গেট আউট!
আবারো ধমক!আবারো ধমক দিলেন উনি আমাকে।প্রচন্ড রাগ হলো।অগ্নিদৃষ্টি তাক করে রাখলাম অঙ্কুরের দিকে।আর উনি বিরক্তি নিয়ে মাথা ধরে বেডে বসে।কোনো গুরুত্ব পায়নি আমার রাগী চাওনি।পা ছুড়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।নায়েব কাকা বললেন,
-চলো আহানিতা মা,অঙ্কুর বাবা যহন কইছে,তুমিই রান্না করবা,তোমারই রান্না করোন লাগবো আইজ!
-কিন্তু আমি তো….
-রান্না জানো না তাইতো?আরে এই বাসায় মস্ত মস্ত সব রাধুনি আছে!ওই কি জানি নাম?শাফ!শাফ!
-শেইফ?

-হ!হ!ওইডাই!ওরাই রান্না কইরা দিবো!আমি কমুনে অঙ্কুর বাবারে,তুমিই রান্না করছো!ওর মাথাব্যথা হইতাছে না?এক কাপ কফি দিলেই ওহনই ঘুমায়া পরবো ও!নিচে আসবো না আর!কে রান্না করলো হেইডাও বুঝবো না!
চোখ চকচক করে উঠলো আমার।খুশিমনেই কিচেনে আসলাম।কিচেনের যেপাশে স্টোভ বসানো,সেদিকটা ড্রয়িংরুমের সাথেই।ড্রয়িংরুম আর কিচেনের মাঝে ছোট দেয়ালের উপর স্টোভ।নায়েব কাকা ড্রয়িংয়ের এপাশেই অনেকটা দুরে দাড় করিয়ে দিলেন আমাকে।বললেন,

-তোমার রান্নাঘরে যাওন লাগবো না।এইহানেই থাকো!খালি দেইক্খা রাখো,ওরা কেমনে কি করে।যাতে অঙ্কুর বাবা কিছু জিগাইলে কইতে পারো।বুঝছো?
মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝালাম।যাক!কিছুতো উপায় হলো!কুকিং এপ্রোন পরে দুজন শেফ কাটাকাটি করছিলেন কিছু।নায়েব কাকা ওনাদের কিছু বুঝিয়ে দিতেই তারা মাথা নাড়াতে লাগলো।শুরু হলো তাদের রান্না।বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছিলাম সবটা।তবে আগুন ছেড়ে দুরেই ছিলাম।আচমকাই একজন শেফের চুলোয় ধরে রাখা ফ্রায়িং প্যানের একদম উপরে আগুন ধরে গেলো।অনেকখানি জুরে উপরে উঠেছে আগুনটা।সাথেসাথেই কোনো এক বিস্ফোরনের দৃশ্য ভেসে উঠলো চোখের সামনে।আম্মু বলে চিৎকার করে মেঝেতে লুটিয়ে পরলাম।আবছা হয়ে আসলো চারপাশ।

জ্ঞান ফেরার পর ড্রয়িংরুমের মেঝেতেই খুজে পেলাম নিজেকে।মাথার নিচে কুশন দেওয়া।আশেপাশে তাকিয়ে শেইফ দুজন আর নায়েব কাকাকে দেখতে পেলাম।গলায় স্থেটোস্কোপ আর এপ্রোন পরিহিতা একজন মহিলাও আছেন।ডক্টর!আমার পাশেই হাটুগেরে বসে উনি।মাথাটা ধরে আস্তেধীরে উঠে বসলাম কোনোমতে।অঙ্কুরকে দেখলাম বুকে হাত গুজে অনেকটা দুরে চিন্তিতভাবে দাড়িয়ে আছেন।ডক্টর বললেন,
-এখন কেমন ফিল করছেন মিস আহানিতা?
-জ্বী,ঠিকাছি।তবে একটু ব্যাকপেইন হচ্ছে।
উনি অঙ্কুরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আপনাকে বলেছিলাম মিস্টার অঙ্কুর, ওনাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যেতে!দেখুন,মেঝেতে ছিলেন বলে ব্যাকপেইন হচ্ছে ওনার!

-উনিই বলেছেন ওনাকে স্পর্শ না করতে।
সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম অঙ্কুরের দিকে।আমি অসুস্থ্য হয়ে পরেছি,আমার ওই দশাতে তার এই স্পর্শ না করার কথাটাই বড় হলো?ডক্টর ঠোট টিপে হাসলেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আপনার অন্যকোনো….
-না!ঠিকাছি আমি!
উনি উঠে দাড়ালেন।এগিয়ে গিয়ে অঙ্কুরকে বললেন,
-আমি আসছি মিস্টার অঙ্কুর।আই হোপ,আপনার কাজে লাগতে পেরেছি!
-ইয়েস ডক্টর।থ্যাংক ইউ!
-মাই প্লেজার!
ডক্টর বেরিয়ে গেলেন।গলার ওড়না ঠিকঠাকমতো টেনে গায়ের ময়লা ঝেরে মেঝে থেকে উঠে দাড়াতে যাবো,অঙ্কুর দুটো কাগজ আমার কোলে ছুড়ে মারলেন।
-এটা কি?

-আপনার মেডিকেল রিপোর্ট!
-এটুকোর জন্য আবার মেডিকেল রিপোর্ট?আপনাকে না বলেছি,আমাকে নিয়ে না ভাবতে!আগুনে ফোবিয়া আছে আমার।তাই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম।আর কিছু না!
-এটা আগের রিপোর্ট!
একটু আশ্চর্য লাগলো।ভ্রুকুচকে বললাম,
-কবেকার?
-যেদিন আপনাকে এ বাসায় আনা হয়।সেদিনও তো সেন্সলেস ছিলেন আপনি।ওইদিনই কিছু টেস্ট আর চেকাপ করা হয়েছিলো আপনার।রিপোর্টগুলো আজই দিয়েছে ডক্টর।
ধপ করে গায়ে আগুন ধরে গেলো আমার।রিপোর্ট মেঝেতে ফেলে উঠে দাড়িয়ে বললাম,
-হাউ ডেয়ার ইউ?আমার অজ্ঞান হওয়ার সুযোগ নিয়ে আপনি চেকাপ করিয়ে ফেললেন আমার?টেস্টও করিয়েছেন?একবারও আমার অনুমতি….

-সেরোগেশনের আগে আপনার মেডিকেল হিস্ট্রি জানাটা জরুরি ছিলো।তাই…
-হোয়াট দ্যা হেল?কিসের মেডিকেল হিস্ট্রি?আমি তো কোনো সেরোগেশন করাবোই না!ইউ নো দ্যাট!আর….
এতোক্ষনে আমার দিকে ফিরলেন উনি।চোখদুটো রক্তিম হয়ে আছে তার।যা দেখেই থেমে গেলাম আমি।হাতদুটো মুঠো করে রেখেছেন।ফর্সা গলার রগগুলো জেগে উঠে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।অঙ্কুর চোয়াল শক্ত করে বললেন,
-আপনি করাতে চাইলেও তা সম্ভব না মিস অদ্রি।কারন রিপোর্টে স্পষ্ট বলা,সেরোগেশনের জন্য ফিজিক্যালি রেডি নন আপনি!

আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশিকে দিয়ে যদি সর্বোচ্চ আনন্দটাকে বোঝানো হয়,তবে আমি যেনো সেই আকাশের চাঁদটাকেই হাতে পেলাম।ভেতরটা আনন্দে নেচে উঠলো।মনপ্রান জুড়ে প্রশান্তি বয়ে গেলো আমার।ঠোটে খুশির হাসি।খুশিতে কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না।তবুও চকচকে চোখে অঙ্কুরের সামনে দাড়িয়ে বললাম,
-দ্ দেখেছেন?দেখেছেন মিস্টার অঙ্কুর?আ্ আমি…আমি ফিজিক্যালি ফিট নই সেরোগেশনের জন্য!ফিট নই!তারমানে আপনার বেবির জন্য সেরোগেট মাদার আমি হতে পারবো না!আমাকে আর আপনার শর্ত মানতে হবে না!এবার তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন?যেতে দিন এখান থেকে?আমি তো….

-খুব তাড়াতাড়িই আমাদের বিয়ে হচ্ছে মিস অদ্রি!গেট ইউরসেল্ফ রেডি!
আমাকে শেষ করতে না দিয়েই কথাটা বললেন অঙ্কুর।কথাটা কর্নগোচর হয়ে কানে বাজতে লাগলো কয়েকবার।কথাটার মানে গোছাতে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো বেশ অনেকটা সময় লাগিয়েছে।কিন্তু বুঝ আসতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো আমার।এটা কি শুনলাম আমি?ঠিক শুনলাম?এটাই বললেন অঙ্কুর?থমকে আছি যেনো।চারপাশও আটকে গেছে বলে মনে হচ্ছে।অত্যন্ত শান্তভাবে এটুক বলে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন অঙ্কুর।ধপ করে আবারো মেঝেতে বসে পরলাম।আবার কি ঘটতে চলেছে আমার জীবনে?বিয়ের কথা করনো বললেন অঙ্কুর?ঠিক কি করতে চাইছেন উনি?
-আপনার ঠিক কি চাই মিস্টার অঙ্কুর?

শক্ত গলায় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেও উত্তরের জন্য একদমই প্রস্তুত নই আমি।তবুও অঙ্কুরকে প্রশ্নতাক করতে সব দ্বিধা,ভয়,ঘৃনা,আক্রোশ একপাশে ঠেলে সোজা রুমেই ঢুকে পরেছি তার।এসে দেখি উনি বেডে স্বাভাবিকভাবে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে ব্যস্ত।এতোক্ষন আমার আসাটা নিয়ে বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন।প্রশ্নটা শুনে কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলেন উনি।অন্যদিক ফিরে দাড়িয়ে অনেকটা সময় নিয়ে বললেন,
-আমার কি চাই তা তো আপনার অজানা নয় মিস অদ্রি।আমি তো আগেই বলেছি,আই ওয়ান্ট আ বেবি ফ্রম ইউ।আপনার কাছে বেবি চাই আমার।শুধু এটুকোই।
আবারো সেই একই কথা!দাতে দাত চেপে রাগ সংযত করে শেষবারের মতো শান্ত করলাম নিজেকে।তাকে বোঝাবো।ভুল করছেন উনি।বললাম,

-শুধু এটুকোই?আপনার কাছে এসব এটুকো মনে হয়?আমি….
এবার উনিই ফুসে উঠে আমার সামনে এসে দাড়ালেন।চেচিয়ে বললেন,
-আপনি কি?আপনি কি মিস অদ্রি?সেরোগেশনে রাজি ছিলেন না,এখন জানলাম তার জন্য ফিজিক্যালি ফিট নন আপনি।কিন্তু আমার বেবি চাই!এট এনি কস্ট!বিয়ের আগে বাচ্চার মা হয়ে অপমানিত হতে হবে না আপনাকে।তাই বিয়ে করেই…..

-তারমানে শুধু‌ বেবির জন্য আমাকে‌ বিয়ে করতে চাইছেন আপনি?
উনি আবারো অন্যদিক ফিরলেন।হাত মুঠো করে দাড়িয়ে রইলেন অনেকক্ষন।গিয়ে ওনার সামনে দাড়িয়ে বললাম,
-চুপ করে থাকবেন না!আন্সার মি!শুধুমাত্র বেবির জন্যই কি আপনি….
-হ্যাঁ।শুধুমাত্র বেবির জন্যই আপনাকে বিয়ে করবো আমি।
কথাটা শুনে রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলা রক্তপ্রবাহ আটকে গেলো আবারো।দুপা পিছিয়ে গেলাম।এই লোকটার প্রতি ঘৃনাটা চরমে পৌছেছে আমার।রাগে,ঘৃনায় চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো।অঙ্কুর আমাকে কাদতে দেখে একটু ব্যস্ত হয়ে পরলেন।এগিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন,হাত দিয়ে থামিয়ে দিলাম ওনাকে।উনি বললেন,
-মিস অদ্রি,বিয়েটা হবেই।তবে আপনার মত ছাড়া…..

-জাস্ট শাট আপ!কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি আর আপনার!কান খুলে শুনে রাখুন মিস্টার অঙ্কুর!এই বাসায় বন্দি থেকে পচে মারা পরবো,তবুও আপনার মতো জঘন্য মানুষের জঘন্য কথায় রাজি হবো না!কোনো বিয়ে হবে না!কোনো বাচ্চাও হবে না!শুনেছেন?আর হ্যাঁ,জোর করবেন কি না,সেটা আপনি ভালো জানেন।কিন্তু যদি জোর করতে আসেন,আই সোয়ার,নিজেকে শেষ করে দেবো আমি।কথাগুলো মনে রাখবেন!
-আপনার কাছে দ্বিতীয়বার মৃত্যুর কথা শুনতে চাইনা মিস অদ্রি!
-বলবো না!বাট ট্রাস্ট মি,আমার কথা না মানলে কাজে করে ফেলবো!দ্বিতীয়বার ভাববো না!
বেরিয়ে আসছিলাম রুম থেকে।অঙ্কুর বলে উঠলেন,

-সন্ধ্যায় প্রদীপ সরকার এ বাসায় আসছে।তার থেকে নিজেকে ঠিক কোথায়,কিভাবে লুকোবেন সেটা এখনই ভেবে রাখুন।নইলে তার চোখে পরলে যে আপনার মৃত্যু সুনিশ্চিত,এ বিষয়ে আপনি অবশ্যই নিশ্চিত।তাইনা মিস অদ্রি?
প্রদীপ সরকারের নাম শুনে রাগে হাত মুঠো হয়ে আসলো আবারো।পেছন ফিরে বললাম,
-আজ তবে প্রদীপ সরকারের হাতেই অদ্রি মারা যাবে!তাতে অন্তত এই জাহান্নাম থেকে তো মুক্তি পাবো!আপাতত নিজের মৃত্যুকামনাই করছি!

অঙ্কুর ঝড়ের বেগে এসে ওড়না ধরে টান লাগালেন আমার।ওড়না ধরে রাখতে গিয়ে দেয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকেছে আমার।ওড়নার একপ্রান্ত অঙ্কুরের হাতে,আরেকপ্রান্ত কোনোমতে গায়ে জরিয়ে নিলাম।নিজেকে সামলে উঠে মাথা তোলার আগেই উনি দেয়ালের দুপাশে হাত রেখে একদম কাছে এসে দাড়ালেন আমার।পুরো চেহারাটাই লাল হয়ে গেছে তার।পাশে হাত,নিচ দিয়ে বেরোবো,হাত নিচে ঠেলে দিলেন উনি।জামা খামচে ধরে চেচিয়ে বললাম,
-গেট আউট অফ মি!

-আপনাকে এতো সহজে তো মরতে দিতে পারি না মিস অদ্রি।আপনাকে মরতে দেবো বলে তো সেদিন বাচাই নি।মরতে দেবো বলে তো আমার পুরো লাইফটাকে উল্টেপাল্টে দেইনি আমি।মরতে দেবো বলে তো এতোকিছু করছি না আমি।আপনি‌ মারা গেলে এগুলোর হিসেব দেবে কে?আমার সব ক্ষতগুলোর হিসেব কে দেবে?না!মরতে তো আপনাকে দেবোই না!সবটা সুদে আসলে উশুল করেই দম নেবে এএসএ!মাইন্ড ইট!
উনি ওড়না ধরেই টানতে টানতে রুমের বাইরে‌ নিয়ে আসলেন আমাকে।নিজের মতো করে আমিও ওড়না ছাড়ানোর চেষ্টায় ছিলাম।লাভ হয়নি।করিডরের শেষ প্রান্তে একটা বড়সড় রুমে এনে ছেড়ে‌ দিলেন ওড়নাটা।বললেন,

-প্রদীপ সরকার চলে না যাওয়া অবদি এখানেই থাকবেন আপনি!
এটুক বলেই দরজা লক করে বেরিয়ে গেলেন অঙ্কুর।সিক্রেট ইনফর্মার কাজটতে জড়ানো নিয়ে আজ প্রথমবার আফসোস হচ্ছে আমার।মারা গেলেও এ আফসোসটা করতাম না।কিন্তু মৃত্যুর চেয়ে আরো ভয়ানক শাস্তি পেতে হচ্ছে আমাকে।আরো ভয়ানক কিছু ভেবে রেখেছেন অঙ্কুর!

গত ছ মাসে অদ্রি ছদ্মনামে অনেকগুলো পেপারওয়ার্ক করেছি।রিস্কি ছিলো,তবে রিস্কি মনে করিনি।এই একমাত্র প্যাশনের বাইরে আর কিছুই‌ ভাবতে পারতাম না।জব ইন্টারভিউ,কোচিং,ভার্সিটির নানা ট্রিপের কথা মনিমাকে বলে বেরোতাম বাসা থেকে।পাঁচদিন আগেও বেরিয়েছিলাম।কিন্তু এবারের রিপোর্টটা একটু বেশিই চ্যালেন্জিং ছিলো।সমাজসেবকরুপী কুখ্যাত জুয়ারু প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে প্রমানের খোজে ছিলাম এবার আমি।উনি বরাবরই মুল নিশানা ছিলেন আমার।দীপক তালুকদারের থেকে পাওয়া হিন্টস্ গুলো কাজে লাগিয়ে,আরো বেশ কয়েকসপ্তাহ টানা ফলো করার পর প্রদীপ সরকারের পরবর্তী আড্ডার খবর পেয়ে যাই।জানতে পারি একটা নাইট ক্লাবে পরবর্তী ডিল করার কথা তার।

ক্লাবের এক ওয়েট্রেসকে টাকা খাইয়ে ওর‌ শিফটটা আমিই নিয়ে নেই সেদিন।ছদ্মবেশে পৌছে যাই ক্লাবে।কিন্তু সেখানে গিয়ে যা‌ দেখেছিলাম,সেটা বড়সড় শক ছিলো আমার জন্য।প্রদীপ সরকারের সাথে এএসএ!ওই কুৎসিত লোকটার সাথে এএসএ’কে দেখে থমকে গিয়েছিলাম।তার থেকেও বেশি বিস্মিত হয়েছিলাম এটা শুনে,পুরো দেশ যার উপর এতোটা ভরসা করে,সেই এএসএ প্রদীপ সরকারের কাছে টাকার বিনিময়ে ম্যাচ হারার ডিল করতে এসেছেন।মানুষ টাকার জন্য ঠিক কতটা নিচে নামতে পারে তার এক বাস্তব উদাহরন!প্রদীপ সরকার বললো,

-শোনো এএসএ,আপকামিং আন্তর্জাতিক ম্যাচে সমস্ত গ্যামব্লাররা তোমার দলের জয়ের উপর টাকা বাজি রাখতে যাচ্ছে।সে টাকাগুলো জিততে হলে ওই ম্যাচে হারতে হবে তোমার দলকে।এজন্য‌ যা এমাউন্ট চাই তোমার,পেয়ে যাবে!ডিলে রাজি থাকলে বলো,আমি….
এএসএ টেবিলে রাখা পেপারওয়েটটা ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন,
-ডিল করবো বলেই এখানে আসা।এএসএ’র টিম ওইদিন ম্যাচ হারবে।আমি কনফার্ম করছি আপনাকে।আপনি এটা ভাবুন,টাকাটা কিভাবে পে করবেন?
-তারআগে এটা তো শিওর হই,তুমি আমার জন্যই খেলছো!
-পরশু ক্লাবের যে ম্যাচটা হবে,তাতে এএসএ জিরো রানে আউট হবে।এটা এনাফ?নাকি….
-স্পোর্টলাইফে এ অবদি জিরো রানে আউট হওনি তুমি এএসএ!
-এবার থেকে হবো।
প্রদীপ সরকারের ঠোটে সন্তুষ্টির হাসি।বললো,
-গ্রেট!ডিল কনফার্মড্!

-তবে একটা কথা ক্লিয়ার হলাম না এএসএ!তোমার বাবা এতোবড় ব্যবসায়ী,এতো টাকাপয়সা তার,তোমারও ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইনকাম অনেক।তবুও তুমি কেনো আমার সাথে ডিল করতে রাজি হয়ে গেলে?
পেপারওয়েট ছেড়ে এএসএ তারদিক তাকালেন।উঠে দাড়িয়ে কোটটা টেনে ঠিক করে বললেন,
-মানুষকে বাইরে থেকে দেখে বিচার করা উচিত না।আমি বরাবরই স্বার্থপর একটা মানুষ মিস্টার সরকার!স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজই করি না আমি।আর এটাও খুব ভালোভাবেই জানি,টাকাই পৃথিবীতে সব।সেটা বাবারই থাকুক,বা আমার।লাইফলিড করতে গেলে,আজ হোক বা কাল,টাকা কম পরবেই।তাই,টাকাকেই প্রায়োরিটি দেই সবসময়।আর যেখানে একটা ম্যাচ হেরে আমি দশটা ম্যাচ জেতার সমপরিমান টাকা পাচ্ছি,কেনো বেকার খাটুনি খাটবো বলুন তো?

বারের এককোনে বসে আলোচনা চলছিলো তাদের।লুকিয়ে সবটা শুনছিলাম।ক্যামেরায় দুটো ছবি ক্লিক করে‌ও নিয়েছি চুপিচুপি।কথা শেষে পাশের এক লোকের হাতে থাকা কয়েকটা ফাইলের মধ্য থেকে এএসএ’কে একটা ফাইল এগিয়ে দিলো প্রদীপ সরকার।উনি ফাইলটায় চোখ বুলিয়ে সাইন করতে লাগলেন।সাইন করা শেষে হাত মেলালেন দুজনে।ফাইলগুলো একটা ব্রিফকেসে রাখলেন প্রদীপ সরকার।

ফাইলগুলো যে তার কুকর্মের প্রমান,সেটা বুঝতে বাকি রইলো না।তাছাড়া এএসএ’র এই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রমানটাও আছে ওতে।তার ক্লাবের পরিচালককে সবটা দেখাবো আমি।এই লোক ইচ্ছে করেই পরের ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে হারতে চলেছে।নিজেও খারাপ খেলবে আর তার টিমকেও মিসলিড করবে হারার জন্য।তাই খেলার ফ্লো ঠিক রাখতে তাকেই ক্লাব থেকে বের করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।এজন্য ওই ফাইলগুলোই আগে জোগার করতে হবে আমাকে।যাতে প্রমান করতে পারি এই লোকটা একটা ঠকবাজ!ফ্রড!

ওরা কথা বলছিলো তখনও।ক্লাবে বাকিসব নিজেদের মতো নাচ আর ড্রিংক করতে ব্যস্ত।আস্তেধীরে ক্লাবের এককোনে থাকা ফায়ার সেন্সরের কাছে গিয়ে লাইটার ধরলাম।সাথেসাথে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো।হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলো সবাই।ভীড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে দরজার সামনেই দাড়ালাম।ফায়ার এলার্ম শুনে ক্লাবের ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো।টর্চের আলোতে দেখলাম ভীড়ের মধ্যে এএসএ ও বেরিয়ে গেলেন।প্রদীপ সরকার যেইনা বেরোতে যাবেন,ইচ্ছে করেই ধাক্কা লাগিয়ে দিলাম তাকে।লোকটা হুড়মুড়িয়ে পরে গেলো।ব্রিফকেসটা একদম দুরে গিয়ে পরেছে।
-সরি স্যার!সরি সরি!এক্সট্রেমলি সরি!সরি স্….

-স্টপ ইউর ননসেন্স!ব্রিফকেসটা কোথায়?জলদি আনো!
অন্য আরেকটা ব্রিফকেস তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,
-এ্ এইতো!এইতো আপনার ব্রিফকেস স্যার!আ্ আগুন!
আগুন শুনেই একদৌড়ে‌ বেরিয়ে গেলো লোকটা।ক্লাবের বাকিসবের সাথে আমিও বেরিয়ে আসলাম।সবটাই ঠিক সেভাবেই হয়েছিলো,যেভাবে আমি প্লান করেছিলাম।ব্রিফকেসটা নিয়ে স্কুটি স্টার্ট দিয়ে অনেকটাই দুর অবদি চলেও আসি।কিন্তু হুট করেই দুটো গাড়ি এসে সামনে দাড়িয়ে যায় আমার।কোনোমতে স্কুটি থামিয়ে নেমে দাড়ালাম।সামনের গাড়িদুটোর একটা থেকে প্রদীপ সরকার আর ওর দলবল বেরিয়ে এলো।প্রদীপ সরকার বললো,

-এই মেয়েটাই ছিলো!ওর কাছেই আছে ব্রিফকেসটা!
দশ বারোজন মিলে ঘিরে ধরলো আমাকে।দম মেরে দাড়িয়ে রইলাম।ভেবেছিলাম সবটা আমার পরিকল্পনামতোই হয়েছে।কিন্তু না,আজ ধরা পরে গেছি।কোনো রক্ষে নেই আর।হয়তো এটাই ছিলো নিয়তিতে।স্কুটিতে রাখা ক্যামেরা,ব্রিফকেসটা যথেষ্ট ছিলো আমার মৃত্যুর কারন হিসেবে।ছোটাছুটির চেষ্টাটাও করিনি।জানতাম লাভ হবে না।প্রদীপ সরকারের ইশারায় এক লোক এগোলো আমার দিকে।বললো,
-স্যার!মেয়েটাকে তো ওই ক্লাবে কোনোদিন দেখিনি!ও পুলিশের কোনো গুপ্তচর হবে নিশ্চিত!
প্রদীপ সরকার তেড়ে এলো আমার দিকে। বললো,
-কে তুমি?

-এই মেয়ে?কথা‌ বলো!কে তুমি?কি ভেবেছিলে তুমি?আমার আড্ডায় ঢুকে,আমাকেই বোকা বানিয়ে,আমার বিরুদ্ধেই প্রমান জোগার করে নিয়ে চলে যাবে আর আমি টেরও পাবো না?এতোটা সাহস তোমার?
-চুপ করে আছো কেনো?জবাব নেই?
-এতো সময় নেই আমার!একটা প্রশ্নের জবাব দাও।তুমি কে?
-এমনি এমনি জিজ্ঞাসা করছি না তোমার নাম!কাল নিউজে তোমার মৃত্যুসংবাদ কি নামে টেলিকাস্ট হবে বলো?ডেডবডি তো কেউ খুজে পাবে না!আইডেন্টিফিকেশনও সম্ভব হবে না!তাই….
চোখ তুলে তাকালাম।কোনোরুপ সংকোচ ছাড়াই বলে দিলাম,
-অদ্রি।

সবাই খানিকটা বিস্ময়ে তাকালো।একটু থেমে থেকে প্রদীপ সরকার বললো,
-ওওও!আই সি!তুমিই অদ্রি?ফ্রম ভোরের বাংলা?অনেক শুনেছি তোমার নাম।এভাবে দেখা হবে ভাবিনি!বাট আই ওয়ান্ট টু মেক মেমোরেবল দিস মিটিং!ইউনিক ডেথ দেবো তোমাকে অদ্রি!এটুকো বয়সে এতোবেশি সাহসিকতা!তার পুরষ্কার আরো অনন্য হওয়া উচিত!এমন ভয়ংকর মৃত্যু হবে তোমার,সাংবাদিকতা পেশাকে ভুলে যাবে এদেশের মানুষ!আই উইল মেক শিওর দ্যাট অদ্রি!

চোখ‌ বন্ধ করে রইলাম।মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করলাম নিজেকে।কিন্তু মনিমাকে শেষবারের মতো দেখতে পারবো না ভেবে চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো শুধু।এরমধ্যেই কেউ বলে উঠলো,
-কেউ ছোবে না ওকে!
চোখ মেললাম আমি।ল্যাম্পপোস্ট,স্কুটি আর গাড়ির হেডলাইটের আলোয় দেখলাম এএসএ আমার সামনেই দাড়িয়ে।তারমানে কথাটা উনিই বলেছেন।উনি আবারো বললেন,
-একে আমার হাতে ছেড়ে দিন মিস্টার সরকার!আমি দেখে নেবো একে!
উপস্থিত সবাই বিস্ময়ে তারদিক তাকিয়ে।একবারের জন্য ভেবেছিলাম হয়তো বাচাবেন বলে ওমনটা বললেন উনি।কিন্তু না,উনি তো বললেন আমাকে দেখে নেবেন।আবারো চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম।একটু সময় নিয়ে প্রদীপ সরকার বললো,
-তুমি?এসবের অভ্যেস নেই তোমার এএসএ!
-করে নেবো!ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচ ডিল করতে আসলাম,সেখানে কেউ বাধা হয়ে দাড়াবে,আই ওন্ট টলারেট দ্যাট মিস্টার সরকার!এর ভবিষ্যৎ আমি ডিসাইড করতে চাই!

-কিন্তু….
-আই ওয়ান্ট হার!এন্ড আই মিন ইট!
-ওকে ওকে।এতো জোর করছো যখন,নিয়ে যাও!তবে হ্যাঁ,এটা অবশ্যই নিশ্চিত করবে ওর মুখ যেনো বন্ধ থাকে।নইলে আমার সাথে সাথে কিন্তু তোমারও এতোবছরে তৈরী করা নাম ধুলোয় মিশে যাবে এএসএ!
উনি বাকা হেসে বললেন,
-এএসএ জানে,ওর কি করনীয়।এনিওয়েজ,আসছি!
এটুক বলেই উনি সোজা এসে হাত ধরলেন আমার।তাদের সম্পুর্ন কথোপকথনের সময়ও উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।আমাকে নিয়ে চলে আসতে গিয়ে আবারো কি মনে করে থেমে গেলেন উনি।পেছন ফিরে বললেন,
-ও হ্যাঁ!টাকাটা যেনো আমার একাউন্টে আজই ট্রান্সফার হয়ে যায়!পরশু ম্যাচে এএসএ জিরো বলে আউট হচ্ছে!এন্ড ইটস্ ফাইনাল!
-অবশ্যই!

সবটাই তুমিময় পর্ব ৫

উনি আমার হাত ধরে হাটা লাগালেন।পিছন ফিরে দেখলাম একজন আমার স্কুটির দিকে এগোচ্ছে।ব্রিফকেসটা নেবে বলে হয়তো।একটুপরেই বিকট শব্দ!বিস্ফোরন হয়েছে খানিকটা দুরে।আবছা হয়ে আসতে লাগলো চারপাশ।শেষ অবদি শুধু চোখে পরলো আমার স্কুটিটা জ্বলছে।তারপর আর কিছুই মনে নেই।

জ্ঞান ফেরার পর এএসএ’র বাসায় পাই নিজেকে।যে মানুষটা এভাবে টাকার জন্য ম্যাচ ডিল করেছে,ভেবেছিলাম তার সত্যিটা জেনে ফেলায় আমাকে মেরে ফেলবেন উনিও।হয়তো ওদের দেওয়া মৃত্যুর চেয়ে আরো ভয়ানক মৃত্যু হবে আমার।কিন্তু না!উনি তো মারেন নি আমাকে!মারবেনও না।তবে হ্যাঁ,তার থেকেও ভয়ংকরভাবে রেখে নরকযন্ত্রনায় বাচিয়ে রাখতে চাইছেন উনি আমাকে।আমাকে ছেড়ে দিলেও তার সত্যিটা কেউ জানতো না।জানাতে পারতাম না আমি।কোনো প্রমানই তো নেই আমার কাছে!তবুও শাস্তি দিচ্ছেন উনি আমাকে।শুধু এজন্য,তার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সত্যিটা আমি জানি বলে!শুধু এজন্যই তো?

সবটাই তুমিময় পর্ব ৭