সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

মায়ের সামনে কাচুমাচু করে বসে আছে সায়েবা।সামনের সোফায় ফারহান বসে তার মা কে মেডিসিন বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সায়েবার মা কিছুক্ষণ পর পর কটমট করে তাকাচ্ছে সায়েবার দিকে। ফারহান সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় সায়েবার দিকে একবার তাকালো।মেয়েটা এখনো এক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
ফারহান চলে গেছে প্রায় দু ঘন্টা হতে চললো। তবুও সায়েবার মায়ের প্রশংসার ঝুলি খালি হচ্ছে না।সায়েবা বিরক্ত হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়েবার মা কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললেন,

— ছেলেটা এতো কষ্ট করলো তোর জন্য। আমি ভাবছি ওকে একদিন দাওয়াত করে খাওয়াবো। কি বলিস?
সায়েবার বিরক্তি এবার আকাশ ছুলো।মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর গলায় বললো,
— উফফফ মা! ছাড়ো তো। এতো বড়লোক মানুষের আমাদের গরিবের খাবার মুখে রুচবে না।আমরা যা আয়োজন করে খাওয়াবো তা তারা প্রতিদিন ই খায়।
— আহ থাম তো।সব সময় দুই লাইন বেশি বুঝিস।আগামী শুক্রবার ফারহান কে আমাদের বাসায় লাঞ্চ করার জন্য ইনভাইট করবি।কথাটা মনে থাকে যেন।এখন রেষ্ট কর।শোয়েব চলে আসবে এখুনি।
ছোট ভাইয়ের কথা শুনে সায়েবার মন খারাপ হয়ে গেলো। তাকে এই অবস্থায় দেখলে ছেলেটা হয়তো কান্না কাটি শুরু করে দিবে।
মা চলে যেতেই সায়েবা বন্ধুদের কল করে এক্সিডেন্টের কথা জানিয়ে দিলো। কয়েকদিন ভার্সিটিতে যেতে পারবে না তাই নোটস গুলো কালেক্ট করে দিতে বললো। সবাই সন্ধ্যায় বাসায় আসবে বলে কল কেটে দিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দশতালার চিলেকোঠায় একটা ছেলেকে বেধে রাখা হয়েছে।ছেলেটা মিজানের বন্ধুদের মধ্যে একজন। আদিব ছেলেটার সামনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। ছেলেটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে আগ্রহ নিয়ে বললো,
— ছ্যাকা ট্যাকা খাইছিস ভাই?না মানে মরার সখ কেন হলো বুঝতে পারছি না। আর মরতে হলে অনেক অপশন আছে।এই অপশন টাকেই কেন বাছতে হলো!
আদিবের কথা শুনে বন্ধু মহলের সবাই কিটকিট করে হেসে উঠলো। আদিব ওদের দিকে তাকাতেই ওরা আরো জোরে হেসে উঠলো।
ওদের হাসির মাঝেই ফারহান রুমে প্রবেশ করলো। ছেলেটার মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসতেই ছেলেটা কাপা কাপা চোখে তাকালো।
ফারহান শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

— দেখ,কাল তোদের এতো মারার পরেও তোরা আবার একই কাজ করলি।
— ভুল হয়ে গেছে ভাই।আর কখনো এমন করবো না।
ছেলেটির কাদো কাদো গলা শুনে ফারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। রক্তলাল চোখে তাকিয়ে বললো,
— এটা আমার কলিজায় আঘাত করার আগে ভাবা উচিত ছিল। আমার আফসোস হচ্ছে আমি তোকে একেবারে মেরে ফেলতে পারবো না। কারণ তোর মায়ের তুই ছাড়া আর কেউ নেই। তবে এর শাস্তি তুই পাবি।
আদিবের দিকে ইশারা করতেই আদিব একটা হকিস্টিক এগিয়ে দিলো ফারহানের দিকে।
প্রায় দশ মিনিট বেধম মারার পরে ছেলেটি কে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলো।
নিজের ফোন বলে বের করে কাউকে কল করলো ফারহান।

— একটা ছেলে কে পাঠাচ্ছি। বেস্ট ট্রিটমেন্ট দিবেন তাকে।কোন কিছুর কমতি যেন না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
অপর পাশ থেকে কাপা কাপা গলায় বললো,,,
— জ জ্বি স্যার।
ফারহান কল কেটে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাড়ালো। আদিব ফারহানের পাশাপাশি দাড়িয়ে মন্থর চোখে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান আদিবের দৃষ্টি দিকে দেখে ভ্রু কুচকে বললো,
— হোয়াট???
— সাহেবানের তোকে পাগল করে ছারবে ভাই।তুই তো পাগল আশিক হয়ে গেছিস(দুষ্টু হেসে)।এতো ভালোবাসিস তাহলে রিজেক্ট কিরেছিস কেন?
আদিবের কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফারহান। মলিন চোখে তাকিয়ে বললো,

— সায়েবার বাবা মারা যাওয়ার পর আন্টি খুব ভেঙে পরেছিলেন।মেয়ে আর ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুব সহজে সামলে ও নিয়েছেন। সায়েবা আর শোয়েব কে নিয়ে ওনার অনেক স্বপ্ন। সায়েবা কে প্রোফেসর হিসিবে দেখা আংকেলের একমাত্র স্বপ্ন ছিল।সায়েবার জন্য এটা একটা আবেগের সময়।ও আমাকে ভালোবাসে তা আমি জানি।তবে এখন এভাবে কোন সম্পর্কে জরিয়ে আমি ওর পড়াশোনা নষ্ট করতে চাই না। যে সময় টা আমাকে দিবে ওই সময় টা পড়াশোনায় কাজে লাগাবে।তাছাড়া এখন আমার মাস্টার্স ফাইনাল এক্সাম সামনে। সায়েবা কে পেতে হলে নিজেকেও গুছিয়ে নিতে হবে। দুজনের ই সময় দরকার।যে আমার তাকে হারানোর ভয় নেই।কারণ যে আমার সে শত ঝড় সয়ে ও আমার ই থাকবে।

— সাহেবান কিন্তু খুব রেগে আছে তোর উপর।
— আমি তো চাই সে রাগুক।অভিমান, অভিযোগ জমিয়ে রখুক।যখন এক সমুদ্র ভালোবাসা নিয়ে তার সামনে দাড়াবো তখন সে সমস্ত রাগ অভিমান আমার বুকের মুখ লুকিয়ে ঝড়িয়ে দিক।অভিযোগের পাহাড় আমার বুকের মাঝেই শেষ করুক।আর আমি তার অভিমানী চোখের প্রেমে পড়ে আরো একবার পাগল প্রেমিক হয়ে যাই।
ফারহানের কথা শুনে আদিব কাদো কাদো গলায় বললো,,
— আজ একটা গালফ্রেন্ড নেই বলে,,,,, ??
আদিবের কথা শুনে ফারহান হতাশার নিশ্বাস ফেললো। বন্ধু সব সময় সিরিয়াস কথার মধ্যে এমন মজা করে।

শোয়েব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে। কিছুক্ষণ পর পর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বোলাচ্ছে।
— কি?এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? জীবনে অসুস্থ মানুষ দেখিস নি?
— কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেলে যে মানুষের কোলে চেপে বাড়িতে আসতে হয় এটা আমার জানা ছিল না। বেচারা ফারহান ভাইয়া তোমার মতো দুই মণের একটা আটার বস্তা তিন তালায় তুলে এখনো পর্যন্ত বেচে আছে কি না সন্দেহ। দাড়াও আমি একটু দেখে আসি। আমার আশি কেজি বোনের জন্য একটা অবলা ছেলে অকালে ঝরে যাবে আমি তা কিছুতেই মেনে নিবো না। তুমি একজন ভবিষ্যৎ বিজনেস ম্যান কে এভাবে মেরে ফেলতে পারো না।আমি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এটা কখনোই মেনে নিবো না। পাচশ টাকা দাও।তার জন্য কিছু ফলমূল কিনে নিয়ে যেতে হবে। দেখা গেলো তোমাকে কোলে তুলে বেচারা শক্তির ঘাটতি দেখা দিলো।তখন এই শোয়েবের ফলমূল ই কাজে লাগবে।

সায়েবা চোয়াল ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে শোয়েবের দিকে। কিছুক্ষণ আগে এই ছেলেটা তাকে নিয়ে চিন্তা করবে ভেবে সে অস্থির হচ্ছিল! এখন নিজেকেই নিজে কয়েকটা ভয়ংকর গালি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
— তুই এই মুহুর্তে আমার চোখের সামনে থেকে যা।না হলে ছোট ভাই খুন করে আমি জেলে যেতে চাই না।
— আগে বেড থেকে নেমে তো দেখাও।এখন তুমি আটানা পয়সার মতো। অচল।
— মাআআআ।তোমার ছেলে কে এখান থেকে যেতে বলো।
— যাচ্ছি যাচ্ছি। এতো চিৎকার করার কিছু হয় নাই।এটা আমার ও বাবার বাড়ি। আমিও চিৎকার করতে পারি।
সায়েবা কটমট করে তাকাতেই শোয়েব ভেংচি কেটে চলে গেলো।
আধঘন্টা পরে শোয়েব আবার সায়েবার রুমে এলো। সায়েবা তখন ফোনে ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করছিল।সায়েবার কোলের উপর একটা প্যাকেট রেখে বললো,

— আপু তোর জন্য নিয়ে এলাম।
সায়েবা ভ্রু কুচকে তাকালো শোয়েবের দিকে। নিজের কোলের উপর প্যাকেট দেখে কপালের ভাজ দৃর হলো। সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কি এটা?
— আরে খুলেই দেখো না।তোমার খুব পছন্দের জিনিস।
সায়েবা প্যাকেট খুলতেই এক গাদা ধুলা এসে তার কোলের উপর পরলো।অবাক হয়ে শোয়েবের দিকে তাকাতেই শোয়েব দুঃখী দুঃখী গলায় বললো,

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২

— শুনলাম তুমি নাকি ধূলোর রানী।আমার বোন ধূলোর রানী এই কথা আনার অন্য একজন থেকে জানতে হচ্ছে! বড়ো কষ্টের পাইলাম।তুমি আমাকে আপন না ভাবলে কি হবে আমি তো তোমাকে আপন ভাবি।ধূলোর রানী কে তো আর ধুলো ছাড়া রাখতে পারি না। তাই অনেক কষ্ট করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তোমার জন্য ধূলো নিয়ে আসলাম।ভালো করেছি না বলো?

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৪