সায়েবা আসক্তি পর্ব ৫

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৫
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

আদিব আর সায়েবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহান। আদিব অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। সায়েবার এদিকে কোন খেয়াল নেই।সে এদিক সেদিক তাকিয়ে তাকিতুকি করছে।
ফারহান গলা খাকারি দিয়ে বললো,
— তো কে কার প্রেমে পড়েছে যেন?
আদিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— দেখ ভাই।সত্যি বলতে কেউ কারোর প্রেমে পড়ে নি।আমরা মজা করছিলাম। তাই না সাহেবান?
আদিবের কথা সায়েবা সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বললো,
— আমি মোটেও মজা করি নি। আমি প্রেমে পড়েছি।আলবাৎ পড়েছি।তো আমি প্রেমে পড়লে আপনার তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।আপনি রিয়্যাক্ট কেন করছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি বলেছি আপনি রিজেক্ট করেছেন। ইটস ওকে।তাই বলে কি আমি আর অন্য কাওকে ভালোবাসতে পারবো না!এটা কোন ধরনের কথা হলো ভাই!

সায়েবার কথা শুনে ফারহানের মাথা গরম হয়ে গেলো। রাগে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে।ফারহানের অবস্থা বুঝতে পেরে আদিব সায়েবা কে বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো,
— মাথা ঠান্ডা করো সাহেবান।রাগের মাথায় কি বলছো তুমি নিজেও জানো না।
— আমার মাথা ঠিক আছে ভাইয়া।আমি কি ভুল কিছু বকেছি বলে আপনার মনে হয়? ওনি যদি আমাকে ভালো না বাসেন তাহলে আমাকে নিজের জীবনের সাথে অন্য কাওকে তো জড়াতেই হবে।তাকে ভালো ও বাসতে হবে। এখানে ওনি এভাবে রিয়্যাক্ট কেন করছেন তাই তো বুঝতে পারছি না।
ফাকা ক্লাস রুম টা এখন আদিবের কাছে ভয়ংকর কোন কাল কুঠড়ি মনে হচ্ছে। ভয়ার্ত চোখে ফারহানের দিকে তাকাতেই ভয়া গলা শুকিয়ে গেলো আদিবের।ফারহান এক হাতে নিজের কপালে স্লাইড করছে আর রুমের এদিক সেদিক পায়চারি করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হঠাৎ করে আদিব কে টেনে রুম থেকে বের করে দিয়ে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো সে।
রক্তাক্ত চোখে সায়েবার দিকে ঘুরে তাকাতেই ভয়ে কাপতে লাগলো সায়েবা।ঝোকের বসে অনেকটা বেশিই বলে ফেলেছে এখন বুঝতে পারছে।ফারহান কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে কাপা কাপা গলায় বললো,
— দ দরজা বন্ধ করলেন কেন আপনি? আমাকে জেতে দিন।আ আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
— কর।কর চিৎকার।
ফারহানের ভয়ংকর গলায় দেয়া হুংকারে সায়েবার প্রতিটি শিরায় শিরায় কাপন ধরিয়ে দিলো।মুখ থেকে কোন কথা বেড় হচ্ছে না। ওদিকে বাইরে থেকে আদিব একনাগারে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে। ভয়ার্ত গলায় ফারহান কে ডেকে যাচ্ছে,,,
— দড়জা খোল ফারহান।দেখ ভাই মাথা গরম করে কিছু করিস না। ছোট মানুষ ভুল করে বলে ফেলেছে। মাফ করে দে ভাই।
ফারহান সায়েবার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো,,, অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,,

— আমার পাখির পাখনা গজাতে শুরু করলো আর আমি ই তা জানি না! (এক হাত দিয়ে সায়েবার গাল চেপে ধরে) এই মুখ দিয়েই তো অন্য কাওকে ভালোবাসার কথা বলেছিস।এই মুখ টা ভেঙে
দেই?উড়তে শিখে গেছিস?কান খুলে শুনে রাখ,বেশি ডানা ঝপটালে তুই আর তোর পাখনা দুটো ই ভেঙে গুড়িয়ে দিতে আমার এক সেকেন্ড ও লাগবে না। বোঝাতে পেরেছি?
শেষের কথা টা চিৎকার করে বলায় সায়েবা থরথর করে কেপে উঠল।হাত আর গাল এতো জোরে ধরেছে মনে হচ্ছে ভেঙে ই যাবে।ব্যাথায় চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।
সায়েবাকে চুপ থাকতে দেখে ফারহান হুংকার দিয়ে বললো,

— কি হলো? কথা কানে যায় নি?
সায়েবা ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়তেই ফারহান ধমকে উঠল,,
— ইউজ ইউর ওয়ার্ডস।
— হ হ্যা।
সায়েবার কথা শুনে ফারহান সায়েবার গাল ছেড়ে দিয়ে কপালের সামনের অগোছালো চুল গুছিয়ে দিতে দিতে বললো,,
— গুড।আর কোন দিন প্রেম করার ইচ্ছা হবে?
সায়েবা ফারহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি প্রেম করলে আপনার কি সমস্যা?
ফারহান সায়েবাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো,
— কারণ তুই আমার। একমাত্র আমার। তোর একটা ধূলিকণার ভাগ ও আমি কাওকে দিবো না। বুঝেছিস আমার ধূলোর রানী।

সায়েবা অবাক চোখ তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। খুশি হবে না রাগ করবে ভেবে পাচ্ছে না।সবার সামনে এভাবে অপমান করে রিজেক্ট করে এখন এইসব ঢং মার্কা কথা বলতে এসেছে।
সায়েবা কটমট করে তাকালো ফারহানের দিকে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,,
— আমার এক বিন্দু ধূলো ও আপনাকে দিবো না।
দেখি আপনি কি করতে পারেন।এয়্যা আসছে, ধূলিকণার ভাগ কাওকে দিবো না! আমি আর আপনাকে চাই না। বুঝেছেন আপনি!
সায়েবার রাগ দেখে ফারহান বাকা হাসলো,, সায়েবার দিকে ঝুকে মন্থর গলায় বললো,
— আমি চেয়েছি তোর কাছে? আমার জিনিস আমার তোর কাছ থেকে নিতে হবে কেন?সময় হলে আমি নিজেই নিয়ে নিবো।
সায়েবা ফারহানের দিকে ক্রুর চোখে তাকিয়ে দরজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। বারান্দায় আদিব অস্থির ভাবে পায়েচারি করছে।সায়েবা কে বেরুতে দেখে দৌড়ে এসে সায়েবার সামনে দাড়ালো, অবাক গলায় বললো,,
— তুমি বেচে আছো?
আদিবের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,,

— নাহ মরে গেছি।ভিতরে আমার ডেড বডি আছে।এইবার ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করুন। চট করে দাফন কাফনের কাজ টা সেরে ফেলুন।কিছু গরীব মানুষ কে দান সাদকা করে দিয়েন।আত্মার শান্তির জন্য।
আদিব কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো সায়েবা।আদিব অবাক হয়ে কিছুক্ষণ সায়েবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর দ্রুত পায়ে রুমে যেতেই দেখলো ফারহান চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পা তুলে বসে আছে। আদিব কে ভিতরে আসতে দেখে শয়তানি হেসে বললো,
— আরে আরে শালা সাহেব যে।আসেন আসেন। আপনার জন্য ই তো অপেক্ষা করছিলাম।
— এভাবে বলছিস কেন দোস্ত।ভয় পাই তো।

রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ফারহান কে গালি দিচ্ছে। এতো দিন পরে ভার্সিটিতে এসে এইসব কাহিনির জন্য ক্লাস করা হলো না। ওর ফ্রেন্ড রা কেউ আজ ভার্সিটিতে আসে নি। বাসায় গিয়ে কল দিয়ে সবাইকে ডেকে নিবে।এই ফারহান কে তো দেখে নিবে সে।এই সায়েবার সাথে এইসব হাংকি পাংকি চলবে না।

বাসায় ঢুকতেই শোয়েব রাজকীয় ভঙ্গিতে সালাম দিলো সায়েবা কে। সায়েবা অবাক হয়ে তাকাতেই ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো,
— আমাদের এই ছোট কুটিরে আপনাকে স্বাগতম ধূলোর রানী। আমি আপনার কি সেবা করতে পারি?
সায়েবা দরজার বাইরে থেকেই পায়ের জুতো খুলে ছুরে মারলো শোয়েবের দিকে। শোয়েব জুতা কেচ করে নাক শিটকে বললো,

— ছিঃ।জুতোয় গোবর নিয়ে এসেছো কেন?এখন কি তুমি গোবরের রানী হতে চাও!
— তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা। না হলে থাপ্পড় মেরে গাল ফাটিয়ে দিবো বেয়াদব।
— ইসসস,আসছে থাপ্পড় মারতে।আমিও তাহলে সবাইকে বলে দিবো তুমি রাস্তায় গড়াগড়ি খাও গায়ে ধূলো মাখার জন্য। নিজেকে ধূলোর রানী মনে করে আকাশে বাতাসে উড়ার কিছু হয় নি। সব আমাদের হ্যান্ডসাম ফারহান ভাইয়ার কোলে উঠার ধান্দা।বুঝি বুঝি সব বুঝি।
সায়েবা শোয়েবের দিকে কটমট করে তাকিয়ে উচ্চস্বরে মা বলে ডাকতেই সায়েবার মা খুন্তি হাতে বেরিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। দু’জন কে শাসিয়ে বললো,

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৪

— আরেকবার যদি তোদের এভাবে ঝগড়া করতে দেখেছি তাহলে দুজকেই রাস্তার মাথায় বসিয়ে দিয়ে আসবো। তখন করিস অসভ্য ছেলে মেয়েদের মতো ঝগড়া। আমার বাড়িতে এইসব চলবে না। আরেকটা কথাও যেন না শুনি আমি।
সায়েবার মা রান্নাঘরে যেতেই সায়েবা শোয়েবের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৬

1 COMMENT

Comments are closed.