সায়েবা আসক্তি পর্ব ৬

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৬
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

অন্ধকারে আকাশ যেন তারার পসরা সাজিয়ে বসেছে।আমাবস্যা রাতের নিজস্ব মোহনীয় সৌন্দর্য আছে। সে নিজের বুকে কোটি কোটি তারার মেলা বসিয়ে নিজেকে সাজায়।সায়েবার কাছে পুর্ণিমা রাতের চেয়ে আমাবস্যা রাত বেশি প্রিয়। বারান্দায় দাড়িয়ে ঝলমলে তারা দেখায় ব্যাস্ত সে।আজ মনের আকাশেও হাজারো তারার মেলা বসেছে।ফারহান মুখে না বললেও সে বুঝতে পেরেছে ফারহান তাকে কতটা ভালোবাসে।ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রেম না হয় নাই হলো তাতে কি। নিরবেই নাহয় প্রণয় চললো। ভালোবাসলেই মুখে বলতে হবে তার কোন মানে নেই। প্রকাশ না করেও ভালোবাসা যায়।

সাত তলার বারান্দা থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহান। সায়েবার মুখের মুচকি হাসি নজর এরায় নি তার। সায়েবার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের অধরে ও হাসি ফুটলো ফারহানের।তার প্রেয়সী তাকে চিন্তা করেই অধর প্রসারিত করেছে তা সে জানে।বলবো না বলবো না করে ও ভালোবাসা প্রকাশ হয়েই গেলো। সায়েবার দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবলো,
— আমার লুকিয়ে রাখা তীব্র ভালোবাসা টেনে বের করে এনেই ছাড়লে ধূলোর রানী।এখন দেখার পালা তুমি কতটা নিতে পারো।আমি ভালোবাসা দিতে ক্লান্ত হবো না। এবার দেখার পালা তুমি কতটা গ্রহণ করতে পারো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের চিৎকারে।কাল রাতে দেরি করে ঘুমানোর দরুন আজ সকালে ঘুম ভাঙেনি সায়েবার।আজ শুক্রবার তাই ভার্সিটি যাওয়ার তাড়া নেই।কিন্তু মা জননী তা বুঝলে তো।সকাল সকাল চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে।
— সায়েবা,এই সায়েবা।কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?আরেক বার ডাকতে হলে পিঠের ছাল তুলে নিবো অসভ্য মেয়ে।
মায়ের ধমকি উপেক্ষা করে সায়েবা কম্বল ভালো করে গায়ে জরিয়ে নিলো।বিরক্ত গলায় বললো,
— উফফফ,মা যাও তো। আজ শুক্রবার। আমাকে ঘুমাতে দাও।

সায়েবার মা কটমট করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। একটানে কম্বল সরিয়ে দিয়ে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিলো।
মায়ের হাতে সকাল সকাল উত্তম মধ্যম খেয়ে লাফিয়ে উঠলো সায়েবা।পিটপিট করে সামনে তাকাতেই মায়ের অগ্নি দৃষ্টি দেখে শুকনো ঢোক গিলে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
মেয়ের কান্ড দেখে থ হয়ে দাড়িয়ে রইলো সায়েবার মা। বিরবির করে মেয়ে কে বকা দিতে দিতে রান্নাঘরে চলে গেলো। আজ ফারহানের দুপুরে আসার কথা। মেয়ে ছেলেটাকে ঠিক ঠাক বলেছে কিনা এটা নিয়ে তার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ওয়াশরুম থেকে বেরুলে একবার ও বাড়িতে পাঠাতে হবে।আনমনে এসব ভাবা ভাবতে রান্নায় মন দিলো সে।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই শোয়েব গা জ্বালানো হাসি দিলো।ছেলেটা সারাদিন ওর পিছনে লাগে।সায়েবা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রান্না ঘরে মায়ের কাছে চলে গেলো।
— সকাল সকাল এভাবে ডেকে তুললে কেন মা।এমনিতেই কাল রাতে ঘুমাতে দেড়ি হয়েছিল।এখন আবার এতো সকাল সকাল তোমার চেচামেচি তে ঘুমের বারোটা বাজে গেলো।
— তা রাতভর কি এমন রাজকাজ করেছো মা যে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারছো না।তা তোমার সকাল বুঝি বেলা এগারো টা?

মায়ের রাগী কন্ঠ শুনে থতমত খেয়ে গেলো সায়েবা।ড্রয়িং রুমে ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেল।বেলা এগারোটা বাজে!ভয়ে ভয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে জোর করে হাসার চেষ্টা করলো।কিন্তু হাসি আসলে তো!হাসি বেচারা ও ভয়ের চোটে মূখের কোথাও গিয়ে লুকিয়ে আছে।
সায়েবা কে ভেবলার মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে সায়েবার মা ধমকে উঠে বললেন,
— এখন কথা বলছিস না কেন? কান খুলে শুনে রাখো দুইজন, আমার বাসায় এসব মন মর্জি চলবে না।কাল থেকে ঠিক ভাবে নামায না পড়লে একটার ও ভাত নেই।কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখো।আর সায়েবা,তোমাকে বলেছিলাম ফারহান কে লাঞ্চ করার কথা বলতে। বলে ছিলে?

মায়ের কথায় শুকনো ঢোক গিললো সায়েবা।এখন যদি বলে ফারহান কে সে কিছুই বলে নি।উল্লেখযোগ্য ঝগড়া করে এসেছে তাহলে খুন্তির বারি একটা ও মাটিতে পরবে না। কিন্তু মা কে মিথ্যা ও বলা যাবে না।
— আরে মা তুমি একদম চিন্তা করো না। আমি এখনি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসছি। হে হে হে।
— কি বিশ্রী হাসি।হাসা বন্ধ করে ফারহান কে ডেকে নিয়ে এসো।
সায়েবার মায়ের এই এক সমস্যা। রেগে গেলে তুমি করে বলবে।
সায়েবা অসহায় মুখে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। শোয়েব সায়েবা কে দেখে আফসোসের স্বরে বলতে লাগলো,
— কি দিন কাল আসলো! এখন রানী সাহেবা কে দিয়ে ও পিয়নের কাজ করানো হয়।আহারে,,,
সায়েবা সব রাগ শোয়েবের উপর ঝেড়ে দিলো।পিঠের উপর কয়েক ঘা কিল ঘুসি মেরে ধুপধাপ পা ফেলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
সায়েবা চলে যেতেই পিঠ ডলে মুচকি হাসলো শোয়েব। বোন কে রাগাতে চরম লাগে ওর।

ফারহানের বাসার সামনে দাড়িয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো সায়েবা।লিফটে উঠে সাত তালার বাটন চাপতেই কেউ একজন এসে লিফটে প্রবেশ করলো। লোকটা কে দেখে সৌজন্যের হাসি হাসলো সায়েবা।
— আরে সায়েবা যে।কেমন আছো?
ফরহাদের কথা শুনে মুচকি হাসলো সায়েবা।নম্র গলায় বললো,
— আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?
— আমি ও ভালো আছি। তুমি তো আমাদের ভুলেই গেছো। ফাইজা যাওয়ার পর থেকে তোমার দেখাই পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে এই ভাইয়ের খোঁজ নিতে ও তো আসতে পারো।
ফরহাদের কথা শুনে মুখটা মলিন করে ফেললো সায়েবা।সে তো আসতেই চায়।কিন্তু ফারহানের সামনে পড়ার ভয়ে আসে না। আর ওইদিনের পর থেকে একবার ও আসে নি। ফরহাদ উত্তরের আশায় এখনো তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে। সায়েবা অপরাধী গলায় বললো,

— সরি ভাইয়া।আসলে পড়ার খুব চাপ। তাই খুব একটা আসা হয় না।তবে এবার থেকে চেষ্টা করবো আসার।
— হুম।মাঝে মাঝে আসলে আমাদের ভালো লাগবে।ফাইজা টাও নেই,বাড়ি পুরো খালি খালি লাগে।মাঝে মাঝে এসে মায়ের সাথে গল্প করে যেও।
ফরহাদের কথা শুনে সায়েবা মনে মনে বললো,
— আমি পারলে এখুনি ব্যাগ গুছিয়ে এ বাড়িতে চলে আসি।আপনার ভাই ই আসতে দিচ্ছে না ভাইয়া।আপনি তাকে ঘড়ির টাইম বন্ধ করে কয়েক ঘন্টা পেটাবেন প্লিজ! তার আগে অবশ্যই হাত পা বেধে নিবেন।তার হাতে গন্ডারের মতো শক্তি। আমার গাল গুলো মনে হয় ভেঙেই গিয়েছে। বুনো ষাড় একটা।

লিফট থেকে নেমে কলিং বেল বাজাতেই বুক ধুকপুক করতে লাগলো সায়েবার।কিছুক্ষণ পরে দরজা খুলে দিলো ফারহান। একেই বলে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।সায়েবা কে দেখে এক ভ্রু উচু করে তাকালো ফারহান।পিছনে ফরহাদ কে দেখে দরজা ছেড়ে ভিতরে চলে গেলো সে।সায়েবা আর ফরহাদ একসাথে ভিতরে ঢুকলো।সায়েবা মনে মনে ফরহাদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিচ্ছে।
— ভাব দেখে বাচি না।নিজেকে রাজা সিরাজুদ্দৌলা মনে করে। হুহ।তুই হচ্ছিস ঘসেটি বেগমের মেল ভার্সন। বুঝেছিস অসভ্য বানরের বেয়াদব নাতি।(মনে মনে)
— বসার জন্য কি সৈন্য সামন্ত ডাকতে হবে রানী সাহেবা।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৫

ফারহানের তীক্ষ্ণ কন্ঠ শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো সায়েবা।মুখ বাকিয়ে ধুম করে সোফায় বসে পরলো।
সায়েবা কে বসতে দেখে ফারহান আস্তে করে কিচেনে চলে গেলো। মায়ের কাছে সায়েবা আসার কথা বলে সায়েবার পছন্দের নাস্তা পাঠিয়ে দিতে বললো। ফারহান চলে যেতেই মুচকি হাসলো ফারহানা বেগম। ছেলে রাগী, গম্ভীর হলে কি হবে।সায়েবাকে অসম্ভব ভালোবাসে তা সে জানে।ছেলের কথা মতো পরটা আর কলিজা ভুনা নিয়ে হাজির হলো ডাইনিং রুমে। টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে ফরহাদ, সায়েবা আর ফারহান কে ডাকলো নাস্তা করতে।শুক্রবার সকালের নাস্তা টা একটু দেড়ি করেই খায় সবাই।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৭

1 COMMENT

Comments are closed.