সায়েবা আসক্তি পর্ব ৭

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৭
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

গপাগপ পরটা গিলছে সায়েবা।দেরি করে ঘুম থেকে উঠে সকালে নাস্তা টা ও করতে পারে নি মায়ের জন্য। এখানে নিজের পছন্দের নাস্তা দেখে লোভ সামলাতে পারে নি। খাওয়ার মাঝেই বিষম লেগে যাওয়ায় নিজের খাবার খেতে খেতেই পানি এগিয়ে দিলো ফারহান। ফারহানের হাত থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো সায়েবা।আরেকটু হলেই প্রান বেরিয়ে যাচ্ছিলো।
— খাবার কেউ নিয়ে যাচ্ছে না রানী সাহেবা। আমরা সাধারণ প্রোজা আপনার সেবায় নিয়জিত আছি।সো,,ধীরে সুস্থে খান।
ফারহানের গা জ্বালানো কথা শুনে সায়েবা গা জ্বালানো হাসি দিলো। মনে মনে বললো,,

— সেবা কোথায় করছিস বেয়াদব। বসে বসে গান্ডে পিন্ডে গিলছিস। বেশি কথা না বলে পা টিপ।তোকে ডাকতে এসে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেছে অসভ্য। পা টিপার আগে হাতে গ্লাবস পরে নিবি।তোর অই আম্বুজা সিমেন্টের হাত দিয়ে ধরবি না।না হলে তোর গদ্দান যাবে ব্যাটা মিরজাফরের দারোয়ান।
ফরহাদ নিজের খাওয়া ছেড়ে ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। কৌতূহলী গলায় বললো,
— তখন থেকে রানী সাহেবা রানী সাহেবা করে যাচ্ছিস কেন? এই রানী সাহেবা টা আবার কে?
ফরহাদের কথা শুনে ফারহানের দিকে অসহায় চোখে তাকালো সায়েবা।ফারহান নিজের খাবার খেতে খেতে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তোমার সামনে যে বসে আছে সে।
— তাই নাকি সায়েবা? তা কোথাকার রানী তুমি।(হেসে)
ফরহাদের কথা শুনে সায়েবার দিকে তাকালো ফারহান।সায়েবা এখানো অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।ফারহান সায়েবার চোখে চোখ রেখে মোহনীয় গলায় বললো,
— আমার মনের।
ফারহানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো ফরহাদ। রিতীমত হিচকি উঠে গেছে তার।রান্নাঘর থেকে ওদের কথা শুনে মুচকি হাসছেন ফারহানা বেগম। ছেলের হেচকি উঠতে দেখে তারাহুরো করে ডাইনিং রুমে ছুটে এলেন। মাথায় হালকা চাপড় মেরে পানি খাইয়ে শান্ত করলেন বড় ছেলেকে।ফারহান এখনো নিজের মনে খেয়ে যাচ্ছে। সায়েবা স্তম্ভিত হয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে আছে।
কি সাংঘাতিক নির্লজ্জ ছেলে!

ফরহাদ নিজের অবাকতার রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি। এর মধ্যেই ফারহান নিজের খাওয়া শেষ করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। ফরহাদ অবাক চোখ মায়ের দিকে তাকাতেই মা মুখ টিপে হাসলো।
এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাচতে সায়েবা খাবার টেবিল থেকে উঠে গেলো। বেচারি নিজের মুখ লুকানোর জায়গা খুজে পাচ্ছে না।তাই সিড়ি বেয়ে ছাদের দিকে চলে গেলো।
ছাদে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে সায়েবা।ফারহানের একটা কথা তার নিশ্বাস বন্ধ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। লজ্জায় পরলে ও অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।নিজের দু হাত দিয়ে মুখ লুকালো সে।
— লজ্জা গুলো তুলে রাখুন আমার ধূলোর রানী।একটা প্রশ্বস্ত বুক আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে।সময় হলে নিজের সমস্ত লজ্জা সেই বুকেই না হয় নিবারন করবেন।
আচমকা ফারহানের কন্ঠ শুনে হচকচিয়ে গেলো সায়েবা।ছাদের দরজায় ফারহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জা গুলো আবার ঘিরে ধরলো তাকে।

সায়েবার লজ্জা রাঙা মুখ দেখে বাকা হাসলো ফারহান।এই মেয়েটা কি জানে, এখন তাকে কতটা মোহনীয় লাগছে!মনের মধ্যে অজস্র ঝড় তুলে দিয়ে লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
— তুমি কি জানো? তোমার এই লজ্জা রাঙা মুখের প্রতি আমি কতটা আসক্ত? আমার কল্পনায় তোমার তীব্র আনাগোনার হদিস জানলে কখনো আমার সামনে দাড়ানোর সাহস করতে না রানী সাহেবা।
ফারহানের মন্থর গলায় বলা কথা গুলো শুনে কেপে উঠল সায়েবা।কম্পিত দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো সে।কি ভয়ংকর সে দৃষ্টি! সায়েবার এখন আফসোস হচ্ছে। কেন সে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পেছনে লাগতে গেলো! তার যন্ত্রণায় ভালো ছেলেটা কেমন নির্লজ্জের মতো বিহেভ করছে।এরকম একটা ভদ্র ছেলে কে বিগ্রে দেয়ার অপরাধে তার ফাসি হওয়া উচিত।
সায়েবা দুঃখী দুঃখী চোখে তাকালো ফারহানের দিকে। অসহায় গলায় বললো,

— আপনার কি হয়েছে ভাইয়া।এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছেন কেন?
— এটাকে ভালোবাসা বলে রানী আমার।এখন থেকে অভ্যাস করতে শিখো।
সায়েবা হা করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। এমন ভয়ংকর ভাবে ভালোবাসার কথা কে বলে? আজব!
সায়েবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমতা আমতা করে বললো,
— মা আপনাকে যেতে বলেছে ভাইয়া।আজকে দুপুরে আমাদের বাসায় লাঞ্চ করবেন।সাথে ফরহাদ ভাইয়া কে ও নিয়ে যাবেন।আমি এখন যাই হ্যা।অনেকক্ষণ হলো এসেছি। মা রাগ করবে।চলে আসবেন প্লিজ।
ফারহান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে পালিয়ে গেলো সায়েবা।সায়েবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ফারহান।

বাসায় আসতেই ফারহান কে চেপে ধরলো ফরহাদ। ভাইয়ের এমন আচরণে মোটেও অবাক হলো না ফারহান। ফরহাদ নিজের উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে,
— কবে থেকে হলো এসব?আমাদের বলিস নি কেন? প্রপোজ করেছিস?সায়েবা কি বলেছে?রাজি হয়েছে?
ফারহানা বেগম হাসতে হাসতে বললেন,
— আরে থাম থাম।এক সাথে কত গুলো প্রশ্ন করবি?
— ছোট ভাইয়ের প্রেম নিয়ে কথা বলতে লজ্জা করছে না? আমি আমার প্রাইভেট বিষয় কারো সাথে শেয়ার করবো না।বিয়ের সময় দাওয়াত করবো। এসো।আর আজকে সায়েবাদের বাসায় লাঞ্চের ইনভাইট আছে।নামাজ শেষে যেতে হবে। রেডি থেকো।

একদমে কথা গুলো বলে নিজের রুমে চলে গেলো ফারহান।
ফরহাদ নিজের মায়ের দিকে তাকালো। ফারহানা বেগম সব খুলে বললো ফরহাদ কে।
— সায়েবা কে বউ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো আম্মু।মেয়েটা খুব ভালো। আর তোমার ছেলে তো লাজ লজ্জা সব ভুলেই বসে আছে। কখন যেন মাথাটা বিগড়ে যায়! কিছু ঘটানোর আগেই ঝামেলা সেড়ে ফেলো।
ফরহাদের কথা শুনে মুচকি হাসলো ফারহানা বেগম। ছেলের চুল এলো মেলো করে দিয়ে বললো,
— বর ছেলে রেখে ছোট ছেলে বিয়ে করাবো নাকি?আগে তো বড় বউ ঘরে আনি।সায়েবা তো আমাদেরই মেয়ে।যখন খুশি নিয়ে আসতে পারবো।তা তোমার কাউকে পছন্দ আছে নাকি বাবা?থাকলে এখনই বলে দাও।তাহলে আর কষ্ট করে আমাদের খুজতে হবে না।

— যাক কারোর তো আমার কথা মনে পড়লো! আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে বৈরাগ্য নিতে হবে।
ফরহাদের দুষ্টমি দেখে হেসে ফেললো ফারহানা বেগম। আজ তার বিকেলে ডিউটি পরেছে।তাই বাসায় ছেলেদের সাথে সময় কাটাচ্ছে। ফারহানের বাবা সানোয়ার আবরার বেরিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।এই সময় টা সে বন্ধুদের সাথে কাটায়।ব্যবসায় সারা সপ্তাহ ব্যাস্ত থাকলেও শুক্রবার সে বন্ধুদের সময় দেয়।এতে বন্ধুত্ব টিকে থাকে।সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায় না।

সায়েবাদের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে ফরহাদ।ফারহানের এখনো আসার নাম নেই। তাকে দাড় করিয়ে রেখে কোথাও একটা চলে গেছে। পাচ মিনিট পরে ফারহানের দেখা মিললো। হাতে কয়েকটি শপিং ব্যাগ।ফরহাদ ফারহানের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,,
— নতুন জামাইদের মিষ্টি নিয়ে আসতে হয়।তুই এসব কি নিয়ে এসেছিস?এগুলো আমার হাতে দে আর গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আয়।
ফারহান কিছু না বলে কলিং বেল চাপলো।সাথে সাথেই দড়জা খুলে দিলো শোয়েব। ফারহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সাথে ফরহাদ কে দেখে সালাম দিয়ে বললো,
— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন আপনি?আসুন আসুন ভিতরে আসুন।
ফরহাদ সালামের উত্তর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বললো,
— ওয়ালাইকুম আসসালাম শোয়েব।আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? পড়াশোনা কেমন চলে?

— ভালো ভাইয়া।বসুন। আমি মাকে বলে আসছি আপনারা চলে এসেছেন।
শোয়েব রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। মিনিট দুয়েক পরেই সায়েবা পানি নিয়ে এলো ড্রয়িং রুমে। ফরহাদ সায়েবার থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো। ফারহান তার প্রেয়সীর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। কালো জামায় সায়েবাকে কালো পরীর মতো লাগছে।ফরহাদ হালকা ধাক্কা দিতেই হুস ফিরলো তার।প্যাকেট গুলো সায়েবার হাতে দিতেই সায়েবা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৬

— তোমাদের সবার জন্য সামান্য কিছু উপহার।
— এগুলোর দরকার ছিল না ভাইয়া।আপনারা এসেছেন তাতেই আমরা খুশি।
— উপহার দিলে নিতে হয় সায়েবা।এগুলো নিয়ে যাও।
ফরহাদের কথায় সায়েবা আর কিছু বললো না। ওখান থেকে চলে যেতে নিতেই শোয়েবের আগমন। সায়েবার দিকে গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো,
— আরে ভাইয়া,আপনি জানেন? আপনাদের সেবায় নিয়জিত আমাদের একমাত্র ধূলার রানী।যেন তেন রানী নয়।একেবারে ধূলায় গড়াগড়ি খাওয়া রানী।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৮