প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৬৮

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৬৮
নিশাত জাহান নিশি

“এই এটা কী করলা হ্যাঁ? কী করলা? আমার পুরো মুখটাই নষ্ট করে দিলা।”
জায়মা নির্বিকার, নির্লিপ্ত, নিস্তব্ধ। মুখ চেপে ধরে অবাক চক্ষুজোড়ায় সাদমানকে প্রত্যক্ষণ করছে। চোখ যেন তার কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে! উদ্বেলতা আকাশ ছুঁইছে।

গাঢ় গভীর রাগে ডুবন্ত সাদমানের গোলন্দাজ চাহনি কেবল শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে! কী থেকে কী ঘটে গেল এসব? প্রতিদিনের বদঅভ্যাসকে সঙ্গ দিতে গিয়ে থুথু দরজায় না ফেলে সরাসরি সাদমানের গাঁয়ে এসে ছিটকে পড়বে কে জানত? তাছাড়া সাদমান-ই বা এই সাত সকালে এই বাড়িতে কী করছে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তার তো কস্মিনকালেও এই অসময়ে এই বাড়িতে আসার কথা নয়! গভীর চিন্তায় পড়ে গেল জায়মা। এদিকে সাংঘাতিক ভয়ও করছে। অজ্ঞানবশত থুথু ফেলার বিনিময়ে কী কী না ভোগ করতে হয় তাকে! ঘোর আতঙ্কে শুকনো ঢোঁক গিলল জায়মা। আপন মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“আচ্ছা লোকটা কি এখন আমাকে মারবে?”
জায়মার মনঃসংযোগে ছেদ ঘটল। সাদমান উঁচু গলায় জায়মাকে ধমকে উঠল! রোষভরা দৃষ্টিতে জায়মাকে ভৎস করে দিতে লাগল। শাণিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কী হলো? কথা বলছ না কেন হুম? আমার মুখটা তুমি এভাবে নষ্ট করলা কেন?”

তাৎক্ষণিক জায়মা থতমত খেয়ে উঠল! জায়গা থেকে খানিক নড়েচড়ে দাঁড়ালো। সাদমানের দিকে আর্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। এই মুহূর্তে সে গভীর রাতে ভূত দেখার মত ভয় পাচ্ছে! কথা কেমন যেন জড়িয়ে আসছে। অনুভূতিরা সব লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে! ভয়কে সংবরণ করা বড্ড দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখের পাতা অনবরত কাঁপছে।

কী এক জ্বালা! এক্ষণি এই মুহূর্তে এই দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো জায়মা! জংলী বাঘের সামনে এভাবে মুখরোচক খাবার হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাকি? যেই ভাবা সেই কাজ। সাদমানকে উপেক্ষা করে জায়মা যেইনা বুকে সাহস সঞ্চার করে ছাদের দরজার দিকে ছুটে পালাতে যাবে অমনি সাদমান জায়মাকে ডিঙিয়ে দ্রুত পা ফেলে জায়মার আগেই ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে পড়ল! সরাসরি জায়মার পথ আটকে দিলো। বুকের পাঁজরে দু’হাত গুজে বাঁ পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে বাঁকা চাহনিতে জায়মার দিকে দৃষ্টি ফেলল। রসাত্মক গলায় শুধালো,,

“এবার কই যাবা হুম?”
ঘটনার আকস্মিকতায় জায়মার বুকটা ধুকপুক করে কাঁপতে আরম্ভ করল। ভেতর থেকে বড়ো বড়ো শ্বাস বেরুতে লাগল। অধীর দৃষ্টিতে সাদমানের দিকে দৃষ্টি ফেলল। ধরাশায়ী গলায় বলল,,

“আমি ইচ্ছা করে আপনার গাঁয়ে থুথু ছিটায়নি সাদমান ভাইয়া। ভুলবশত হয়ে গেছে। তাছাড়া আমি তো জানতাম না আপনি হঠাৎ এই সময়ে আমাদের বাড়িতে আসবেন। এভাবে ছাদে চলে আসবেন। জানলে তো আর এটা হতো না তাইনা? কেউ কি চাইবে? ইচ্ছে করে তার গেস্টের গাঁয়ে থুথু ছিটাতে?”

বেশ ভাব নিয়ে ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সাদমান। এদিক ওদিক তাকিয়ে শার্টের কলারটা ঝাড়ল। কিঞ্চিৎ মুহূর্তের মধ্যেই আবার জায়মার দিকে শূণ্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। হেয়ালী স্বরে বলল,,
“কিন্তু আমি তো কাল রাতে-ই তোমাকে জানিয়েছিলাম আমি আসব! শুনতে পাওনি তুমি?”

চোখ-মুখ থেকে সবিনয়ে আতঙ্কিত ভাব উবে গেল জায়মার! নির্বোধ দৃষ্টি ফেলল সাদমানের দিকে। কী বলছে কী এসব সাদমান? পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি? জর্ডান ফেরত ছেলেটা কী সত্যিই এবার আউলা পাগল হয়ে গেল? তাৎক্ষণিক গলা ঝাঁকালো জায়মা। অজ্ঞাত স্বরে বলল,,

“কখন বললেন এসব আপনি? গত তিনবছর ধরে তো আপনার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।”
জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালো সাদমান। দীর্ঘ এক লাফ ফেলে জায়মার সম্মুখস্থ হয়ে দাঁড়ালো। শার্টের কলারটা এদিক ওদিক ঝেড়ে জায়মার দিকে স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! জায়মা হতবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল এই অপরিচিত সাদমানের দিকে!

আজ হঠাৎ মেঘ না চাইতেই জল পড়ছে কেন? এ আবার প্রকৃতির কোন অদ্ভুত লীলাখেলা? অদূর থেকে ডাকা মানুষটা আজ কেন বিনা আবেদনে এতটা কাছে? কেন অজানা অযুহাতে তাকে এতটা কাছে টানছে? জায়মার দিকে আরও একটুখানি ঝুঁকে এলো সাদমান! ডানপিটে হেসে রঙ্গরসিক গলায় বলল,,

“রোজ-ই তো কথা বলি। তোমার স্বপ্নে আসি। তোমাকে কাঁদাই, পোঁড়াই, জ্বালাই, আঘাত করি, হয়তো ভালো ও বাসি!”
জায়মা আর স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারলনা! তার মাথাটা যেন ক্ষণিকের মধ্যেই ঘুরে এলো। এই ছেলে এত ফ্ল্যার্টবাজ কী করে হতে পারে? মুখভঙ্গি দেখেই বুঝা যাচ্ছে সহসা ফ্ল্যার্টিং করছে।

তবে কি সে এত গুলো বছর ধরে একটা ফ্ল্যার্টবাজ ছেলেকে ভালোবেসে আসছিল? ভাবতেই গাঁয়ে ঘৃণা ধরছিল তার। ধাক্কা মেরে সাদমানকে সামনে থেকে সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল! হলোও ঠিক তাই। মুখমণ্ডলে গাঢ় গভীর রাগ ফুটিয়ে তুলল জায়মা। চোখ লাল করে সাদমানের দিতে গরম দৃষ্টি ফেলল। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,,

“সরুন সামনে থেকে। আমার সাথে একদম ফ্ল্যার্ট করতে আসবেন না।”
সাদমানকে দু’হাত দ্বারা ধাক্কা মেরে জায়মা যেইনা ছাদের দরজায় পা বাড়াতে যাবে অমনি সাদমান হেঁচকা টানে জায়মার ওড়নার আঁচলটি টেনে ধরল পেছন থেকে! ঘাড় বাঁকিয়ে জায়মার দিকে ব্যগ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে তুলল দুষ্টু হাসি। পিছু ফিরে জায়মা নিষ্ক্রিয় দৃষ্টিতে সাদমানকে দেখল।

সাদমানের এহেন অপ্রত্যাশিত কার্যকলাপে আকাশে বাজ পড়ার মত চমকে উঠল জায়মা। কদাচিৎ হেসে সাদমান জায়মার ওড়নার আঁচলের অংশ দ্বারা তার থুথু যুক্ত মুখটা মুছে নিলো! অতঃপর জায়মার দিকে ওড়নার আঁচলটি ছুড়ে ফেলল। ফিচেল স্বরে বলল,,
“তৈরি হয়ে নাও আমাকে বিয়ে করতে! বিয়ের পর বুঝবা ভালোবাসা কাকে বলে!”

জায়মা যেন মুহূর্তের মধ্যেই মূর্তিরূপ ধারণ করল! হিতাহিতজ্ঞান শূণ্য হয়ে পড়ল। দিন দুনিয়া নিরর্থক মনে হলো। নিজের কানকে অবিশ্বাস্য ভাবতে শুরু করল। দিনের বেলাতেও স্বপ্ন দেখছে না তো সে? আজকাল কল্পনা তার এতই প্রিয় হয়ে উঠেছে যে সারাক্ষণ শুধু সাদমানকে নিয়েই কল্পনা করছে? জায়মাকে উপেক্ষা করে সাদমান ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। দ্রুত পা ফেলে সিঁড়ি টপকাতে লাগল। ব্যস্ত স্বরে পেছন থেকে বলল,,

“ফ্যামিলির ডিসিশানে তোমাকে বিয়ে করছি ওকে? কীভাবে তাদের হাত করেছ কী জানি! তোমার নামের কলা খাচ্ছে সবাই। এখন আমিও এই কলা খেতে চাই! দেখতে চাই কেমন টেস্ট!”

শীতের ধোঁয়াটে আমেজ শুরু হলো পৌষ মাসের শুরু হতেই। চারিদিকে শীত মৌসুমের রাশভারী রুক্ষতা, নিরাগতা এবং ধূসরতাকে সঙ্গী করেই চার চারটি যুগলবন্দীদের জীবনে লেগে গেল বিয়ের ধুম! নূর তার নতুন চাকরীতে জয়েন করেছে আজ এক মাস হলো! কোনো বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই সে তার চাকরীতে জয়েন করতে পেরেছিল।

সবার পরিবারের সিদ্ধান্তেই একদিনে চার চারটি বিয়ের দিন/ক্ষণ ঠিক করা হলো। সবাই বেশ খুশি তাদের বিয়ে নিয়ে। প্রবল উত্তেজনায় ভরপুর একেকজন। তবে এদের মধ্য থেকে জায়মা এবং সাদমানের প্রণয় নিয়ে এখনও বেশ কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে! পরিবার থেকে সুষ্ঠুভাবে তাদের বিয়ে ঠিক করা হলেও সাদমান তেমন ঘনিষ্ঠ হতে পারেনি জায়মার সাথে। জায়মাও বেশ ভাব নিয়ে বসে আছে। জেঁচে পড়ে সাদমানকে বুঝাচ্ছে না যে, সে তার প্রতি দুর্বল!

সাদমান যতবারই চেষ্টা করছে জায়মার আশেপাশে থাকতে, জায়মার প্রতি দুর্বল হতে, সব ভুলে জায়মাকে আপন করে নিতে ততবারই যেন অদৃশ্য কিছু বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে! চাঁদের প্রেমময়ী মুখটা তার সামনে বারংবার ভেসে উঠছে। কিছুতে ই সে চাঁদের ভ্রম কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। যা কাউকে সে মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারছেনা! ভেতরে ভেতরে সব সহ্য করছে। প্রত্যুল দ্বিধা-দ্বন্ধে ভুগছে।

মেহেন্দির অনুষ্ঠান সন্ধ্যা হতেই জমজমাট! বড়ো একটি রিসোর্ট বুক করা হয়েছে তাদের বিয়ের জন্যে। একই রিসোর্ট থেকে তাদের বিয়ে হবে। একপাশ ছেলে পক্ষের এবং অন্যপাশ মেয়ে পক্ষের! ছেলে পক্ষের লোকজন যেমনি মেয়ে পক্ষের সীমানায় যেতে পারবেনা এবং তেমনি মেয়ে পক্ষের লোকজনও ছেলে পক্ষের ত্রি-সীমানায় যেতে পারবেনা! পরিবার থেকেই এই নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে।

বিয়ের কনেরা সব গাঢ় সবুজ রঙের শাড়িতে নিজেদের সাজিয়েছে। শাড়ির সাথে মিলিয়ে মানানসই সাজ। দেখতে একেকজনকে ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে। একটু পরেই মেহেন্দি আর্টিস্টরা চলে আসবে তাদের মেহেন্দি পড়াতে। তখনি শুরু হবে মেহেন্দির অনুষ্ঠান। নিজেদের আকর্ষণীয় সাজে সাজিয়ে ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে বসে আছে চার বধূ!

অধীর দৃষ্টিতে কেবল জানালায় উঁকি মারছে। আশেপাশে কোথাও তাদের পাগল বরদের দেখতে পায় কিনা সেই অপেক্ষায়! এই নিয়ে সবার মনে বেশ উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা কাজ করলেও জায়মার মনটা বড্ড বিষণ্ণ হয়ে আছে! সাদমানের এড়িয়ে চলা ভাবটা যেন সে কিছুতেই মানতে পারছেনা। আদোতে এই বিয়েটা করা ঠিক হবে কিনা তাও বুঝতে পারছেনা। কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে জোর করে বিয়ে করাটা কি আদো ঠিক? এসব নিয়েই ভীষণ দুঃশ্চিতায় ডুবে আছে জায়মা।

জায়মার এহেন বিমূর্ষতা চোখ এড়ালো না চাঁদের! তাশফিয়া এবং তিথীর সাথে হাসি-ঠাট্টা থামিয়ে চাঁদ জায়মার দিকে মনোযোগ দিলো। স্তব্ধ দৃষ্টিতে জায়মার দিকে তাকালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে জায়মার কাঁধে হাত রেখে বলল,,
“কী রে? কী হয়েছে তোর? মুখ ফুলিয়ে বসে আছিস কেন?”

তৎক্ষনাৎ মাথা নুইয়ে নিলো জায়মা। রঙচঙে মুখমণ্ডলে রাশভারী ভাব ফুটিয়ে তুলল। নাক টেনে ভরাট গলায় বলল,,
“আমি হয়তো জোর করে সাদমান ভাইয়াকে বিয়ে করছি চাঁদ! যা করা আমার মোটেও উচিৎ হচ্ছেনা। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। গুরুত্বহীন মনে হচ্ছে। আই থিংক এই মুহূর্তে আমার বিয়েটা ভেঙে দেওয়া উচিৎ!”
দাঁতে দাঁত চাপল চাঁদ৷ জায়মার দিকে লোহিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। খরতর গলায় বলল,,

“এই পাগল হয়েছিস তুই? এখন বিয়ে ভাঙবি তুই? কাল বাদে পরশু তোর বিয়ে। সমস্ত এরেঞ্জমেন্ট হয়ে গেছে। দুই পরিবারের সবাই কত এক্সাইটেড। এখন বলছিস তুই বিয়ে ভাঙবি?”
জায়মা চোখের জল ছেড়ে দিলো! মাথা উঁচিয়ে চাঁদের দিকে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আহত গলায় বলল,,

“তো আমি কী করব বল? সাদমান ভাইয়া তো আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। বুঝতে পারছিনা উনি আদোতে আমাকে ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিতে পারছেন কিনা। এই হীন সম্ভাবনায় থেকে আমি কীভাবে বিয়েটা করি বল? আমার কি আত্মসম্মানবোধ নেই?”

এরমধ্যেই হঠাৎ নূরের আগমন ঘটল তাদের রুমে! সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে নূর বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই রুমে ঢুকে পড়ল। সন্দিহান দৃষ্টিতে তিথী নূরের দিকে তাকাতেই নূর হাত দুটো উঠিয়ে ঠাট্টার স্বরে বলল,,
“ভাবি আমি নূর। মাহিন না।”

তিথী ফিক করে হেসে দিলো। নূর মাথা চুলকিয়ে চোখ রঙিন করে তাকিয়ে থাকা চাঁদের দিকে তাকালো! চাঁদের গরম চাহনি দেখে নূরের হাসিমুখটা নিমিষেই চুপসে গেল! পেছনের চুলগুলো টেনে ধরে থতমত গলায় বলল,,
“এই একটু আসো না। কথা ছিল!”

চাঁদ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল। চাঁদের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য নূর অবলার মত মুখ করে চাঁদের দিকে তাকালো। নূরের এসব ঢঙ দেখে চাঁদের রাগটা তড়তড় করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ধুমধাম করে সে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। হনহনিয়ে হেঁটে নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে কোমরে হাত গুজল। চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“কী হইছে হ্যাঁ? সবসময় সব জায়গায় আপনাকে হাজির হতে হবে? পরিবার থেকে নিষেধ আছেনা মেয়ে পক্ষের ত্রি-সীমানায় না ঘেঁষা?”
মুখটা বাঁকালো নূর। ভাবশূণ্য গলায় বলল,,
“ধুর! এসব কে মানে? আমার বডি আছে পা আছে আমি হেঁটে হেঁটে আসবই।”
“আপনি ভালো কথার মানুষ না বুঝছেন? এখন বলুন কেন এসেছেন?”
“তোমাকে দেখতে!”

কথাটা বলেই নূর টুপ করে চাঁদের মাথায় চুমু খেয়ে দিলো! উপস্থিত সবাই লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো। জায়মা কান্নারত মুখেও হেসে দিলো। মনে মনে বেশ আফসোসও করতে লাগল। কেন সাদমান নূরের মত হলোনা! নূরের নির্লজ্জতা দেখে চাঁদের চোখ ভেঙে এলো। মাথা নুইয়ে সে নূরকে আচ্ছে মতো বকতে লাগল। চাঁদের অভিসন্ধি ঠিক বুঝতে পারল নূর। মাথা ঝুঁকিয়ে সে চাঁদের কর্ণতলে ওষ্ঠদ্বয় ঠেকালো। মগ্ন গলায় ফিসফিসিয়ে বলল,,

“আজ কিন্তু আমি তোমাকে মেহেন্দি পড়িয়ে দিব! তোমার মেহেদী রাঙা হাতে অতি যত্নে আমার নামটা লিখে দিব। শুনেছি মেহেদীর রঙ গাঢ় হলে নাকি বউরা খুব আদর পায়?”
চাঁদ লজ্জায় এবার হেসেই দিলো! চোখ নামিয়ে নূরের বুকে কিল, ঘুষি মারতে লাগল। আড়ষ্ট স্বরে বলল,,
“এই যান তো যান। হুদাই ফাইজলামি করতে আসছে এখানে।”

নূর মার খেয়েও খিলখিলিয়ে হাসছে! চাঁদের নরম হাতের কিল ঘুষিও তার কাছে বেশ আদুরে মনে হচ্ছে। একদণ্ডের জন্যও থামানোর চেষ্টা করছেনা চাঁদকে। এই অবস্থাতেই হেসে হেসে নূর বলল,,
“আরেহ্ ফাইজলামি না সত্যি। আজ আমি তোমাকে মেহেন্দি পড়িয়ে দিব।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৬৭

চাঁদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিলো নূর জায়মার দিকে তৎপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। গলায় স্বাভাবিকতা এনে দ্রুত স্বরে বলল,,
“এই জায়মা? তোমার জন্যও আজ বিরাট বড়ো এক সারপ্রাইজ আছে! তৈরী থেকো কিন্তু।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৬৯