প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৮

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৮
নিশাত জাহান নিশি

দৃষ্টি নুইয়ে নিলো সাদমান! থতমত খেয়ে গেল সে। বাঘের মতো গর্জন তার থেমে গেল। ফোঁসফোঁস আওয়াজও কমে গেল! নূরের কথায় দারুন জব্দ হয়ে গেল সে।

সাদমানের কাঁধ থেকে শক্ত হাতের বোঝাটা নামিয়ে নিলো নূর। বেশ রাগী ভাব নিয়ে সজোরে শার্টের কলারটা ঝাড়ল সে। সাদমানের দিকে হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি চাইনি কথাগুলো কখনো প্রকাশ্যে আনতে। তোর দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে। বাট তুই আজ আমাকে বাধ্য করলি তোর ত্রুটিগুলো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। চাঁদের সামনে তোর সো কল্ড ভালোবাসাকে ছোটো করতে!”

সাদমান কেবল মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বিষয়টা সে নিজেও মন থেকে ভাবল। আসলেই তো ঐ ছয়মাসে চাঁদের কথা একবারও মনে করেনি তার! চাঁদের খোঁজ-খবর নেওয়ারও কোনোরকম চেষ্টা করেনি সে। চাঁদের কথাটা প্রায় মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিল তার।

নূর চাঁদকে ভালোবাসে এই কথাটি জানার পর থেকেই তার চাঁদের প্রতি পুরনো ফিলিংস কাজ করতে শুরু করল! রাগ, হিংসা এবং ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে নূরের সাথে চ্যালেঞ্জ ও রাখল। কাজিনদের পেয়ে চাঁদের সাথে দেখা করার কথাটাও সে প্রায় ভুলে গিয়েছিল। নিজের বোকামীর কারণে তার দুর্বল জায়গাগুলো নূরকে বুঝিয়ে দিলো। এখন নূরের সাথে চাঁদকে দেখলেই তার হিংসে হয়।

প্রচণ্ড রকম হিংসে হয়! ইচ্ছে হয় নূরকে মে’রে দিতে। গলা চেপে ধরতে। তবে নূর তো কখনই এই কাজটি করেনি! নিজে হাজার কষ্ট পেয়ে হলেও চাঁদকে তার হাতে তুলে দেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিল। যেখানে নূরের মনে কোনো হিংসে নেই কোনো মনোমালিন্যতা নেই সেখানে তার মনে কেন এত হিংসে? সে কী আজকাল এটেনশান সিকার হয়ে যাচ্ছে? স্বার্থপর এবং হিংসুটে টাইপ? তার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে সে হিংসে করছে? সামান্য একটা চ্যালেঞ্জে জিতে যাওয়ার জন্য এভাবে তাকে হার্ট করছে? বন্ধুদের সম্পর্কটাকে এভাবে অসম্মান করছে?

কয়েকদফা রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল নূর। নিজেকে ধাতস্থ করার অন্তঃপ্রাণ চেষ্টা করল। রাগটাকে কীভাবে কন্ট্রোল করা যায় তার সলিউশন খুঁজতে লাগল। আইডিয়া খুঁজে পেতেই নূর ঘাড় বাকিয়ে পিছনে তাকালো। চাঁদ নীরব দর্শকের মতো একবার নূরের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার সাদমানের দিকে তাকাচ্ছে!

পুরো ব্যাপারটাতে সে দারুন শকড!তবে চাঁদের চোখে-মুখে একপ্রকার খুশির লহর দেখা যাচ্ছে তার! নূরের মোক্ষম জবাবে ভীষণ খুশি সে। কান্না ভুলে নূরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসল চাঁদ। চাঁদের হাসি মুখ খানা দেখে নূরের সমস্ত রাগ তড়তড় করে নিচে নেমে গেল! ঠোঁটের আলিজে ফুটে উঠল এক মৃদু হাসির রেখা। ঘাড়টা ঘুরিয়ে নূর পুনরায় নিবার্ক চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা সাদমানের দিকে তাকালো। এক কদম হেঁটে সাদমানের দিকে এগিয়ে গেল। সাদমানের কাঁধে হালকাভাবে হাতটা রাখল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বলল,,

“দেখ যা হয়ে গেছে ভুলে যা। আমি যেমন চাঁদকে ভালোবাসি, তেমনি চাঁদও কিন্তু আমাকে ভালোবাসে। দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝখানে তৃতীয় পক্ষ হয়ে থাকাটা তোর শোভা পায়না! আজ সন্ধ্যায় নীড় ভাইয়ার হলুদ। হোপ সো তুই ওখানে এটেন্ড থাকবি। আর যদি সঠিক সময়ে তোকে না পাই তো আমি তোকে টেনে হেছড়ে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তুই কিন্তু জানিস আমি কতটা জেদী এবং একরোখা!”

সাদমানের প্রতিউত্তরের অপেক্ষা করলনা নূর। পিছু ঘুরে রুমের দরজার দিকে পা বাড়ালো। ব্যস্ত স্বরে চাঁদকে লক্ষ্য করে বলল,,
“চলে এসো চাঁদ৷ বাসায় অনেক কাজ পড়ে আছে। সাদমানের সাথে আমরা পরেও ফ্রি টাইম কাটাতে পারব।”
নূরের কথামতো চাঁদ মাথা নুইয়ে নূরের পিছু পিছু হাঁটা ধরল। ইতোমধ্যেই সাদমান পেছন থেকে সরল গলায় নূরের নাম ধরে ডেকে উঠল! চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতা সমেত চিন্তিত গলায় বলল,,

“এই নূর? বাসায় পৌঁছে গালটায় আগে বরফ ঘঁষে নিস। অনেকখানি লাল হয়ে গেছে।”
সাদমানের কেয়ারিং দেখে নূর বেশ অবাক হলো! পিছু ঘুরে সন্দিহান দৃষ্টিতে সাদমানের দিকে তাকালো। গলা খাকিয়ে বলল,,

“সিরিয়াসলি? তুই বললি কথাটা?”
“কেন? বলতে পারিনা? এতটাই খারাপ বন্ধু আমি?”
বিনিময়ে নূর মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। সাদমান মাথা নুইয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে বিছানার উপর বসল। নিচু গলায় বলল,,

“চিন্তা করিসনা। এবার অন্তত আমি নাটক করছিনা!”
কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল সাদমান। নিজের বিবেকের কাছে সে দ্বগ্ধ হতে লাগল। নূর সৌহার্দ্য হাসল! এই সাদমানকে চিনতে তার একটুও সমস্যা হচ্ছেনা। ছোটো বেলা থেকে ঠিক সাদমানের এই রূপটার সাথেই সে পরিচিত। মাঝখানে কিছুটা সময়ের জন্যে যদিও সাদমান পাল্টে গিয়েছিল! তবে এখন হয়তো সে আবারও সঠিক পথে ফিরে আসছে। চাঁদের হাতটা ধরে নূর হাসি খুশি মুখে সাদমানের বাড়ি থেকে বিদায় নিলো। রিকশা করে দুজন দুদিকে চলে গেল।

সন্ধ্যা হতেই হলুদের আমেজ পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ল! বর-কনে উভয়ই তৈরী হলুদের সাজে। দেখতে অস্থির সুন্দর দেখাচ্ছে দুজনকে। নীড় কিছুক্ষণ পর পর ভিডিও কলে সোহানীকে দেখছে। সোহানীকে একপ্রকার সে বিরক্ত করে ছাড়ছে! সন্ধ্যার পর থেকেই মুখের সামনে ফোন ধরে রেখেছে। কিছুতেই যেনো রাখতে চাইছেনা ফোনটা সে।

দুই বাড়িতেই হলুদের রমরমা পরিবেশ বিরাজ করছে। আত্নীয়-স্বজনদের কোলাহল বেগতিক বাড়ছে। ব্যস্ততায় নুইয়ে পড়ছে বাড়ির ছেলেফেলে এবং মুরুব্বিরা। সবার খাতির, যত্ন-আদর, আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছেনা। চা, পানি এবং বিভিন্ন নাশতার আইটেম থেকে শুরু করে মিষ্টি, কোল্ড ড্রিংকস সবকিছুর ব্যবস্থা করা রয়েছে।

দুই বাড়ির হলুদের স্টেজই একই রকম ভাবে সাজানো হয়েছে। লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কাঠ গোলাপ, রজনীগন্ধা এবং গাদা ফুলের সমারোহে তৈরী পুরো স্টেজ! মিষ্টি ঘ্রাণে ব্যাকুল হয়ে উঠছে সবাই। পুরো বাড়িতে যেনো স্টেজটিই সবার নজর কাটছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে বিশাল প্যান্ডেল জুড়ে।

নূর এবং মাহিন হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে রেডি বউয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য। তাদের মন আনচান আনচান করছে তাদের প্রেয়সীদের একনজর দেখার জন্য! কাজের চাপে তারা একবারও প্রেয়সীদের খোঁজ খবর নেওয়ার সময় সুযোগ পেয়ে ওঠেনি। তবে এবার সেই সুযোগ ঘনিয়ে এসেছে! আগে সোহানীর গাঁয়ে হলুদ মেহেদী পড়ানো হবে এরপর নীড়ের। এজন্য তাদের হলে ছুটে যাওয়া তাড়া।

নিয়ম অনুযায়ী মিষ্টি, পান- সুপারি ফুলমূল এবং যাবতীয় যা যা লাগে সব নিয়ে নূর এবং মাহিন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল হলের উদ্দেশ্যে। সাদমান এখনো আসেনি হলুদের অনুষ্ঠানে! দুইবার কল করা হয়েছিল তাকে তবে কলটা তুলেনি সে। নূর মনে মনে ভেবে নিলো হল থেকে ফেরার পথে সাদমানকে জোর করে হলেও অনুষ্ঠানে নিয়ে আসবে। তাদের মধ্যে বেড়ে ওঠা দ্বন্ধগুলোকে অচিরেই নিরসন করবে।

চাঁদ, জায়মা, তিথী এবং তাশফিয়া সেজেগুজে প্রায় বিয়ে বাড়ি হয়ে আছে। সবার থেকে বেশি গর্জিয়াস লাগছে চাঁদকে! হলুদ লেহেঙ্গাতে তাকে হলদে পরীর চেয়ে কম সুন্দর দেখাচ্ছেনা। নূরের আইডিয়া এতটাও খারাপ নয়। সে যা আন্দাক করেছিল ঠিক তাই হয়েছে।

সেজেগুজে চাঁদ সেই কখন থেকে নূরের অপেক্ষাতে পথ চেয়ে বসে আছে। তবে নূরের কোনো দেখাটি নেই। অস্থির মন তার আরও উচাটন হয়ে উঠছে। রুমের জানালা থেকে হলগেইটটা সে দূরদর্শী দৃষ্টিতে দেখছে। অনেকক্ষণ যাবত এই জানালার সামনেই সে ঘুরঘুর করছে। নূরকে হলুদ পাঞ্জাবিতে দেখার জন্য যেনো তার তর সইছেনা। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।

আয়মনের হার্ট তো প্রায় দুর্বল হয়ে আসছে! তাশফিয়াকে হলুদ শাড়ি এবং হলুদের সাজে দেখে। তার যেনো মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে আসছে। কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে সে তাশফিয়াকে আড়চোখে দেখছে। তাশফিয়া প্রায় বহুবার নোটিশ করেছে বিষয়টা! কোনো না কোনোভাবে সে নিজেও আয়মনকে আড়চোখে দেখছে! ঐ দিনের আয়মনের সেই হঠাৎ চুমু তার ধ্যান-জ্ঞান পাল্টে দিয়েছে!

সেই চুমু খাওয়ার পর থেকেই সে যেনো আয়মনের প্রতি কেমন কেমন হয়ে গেছে! আয়মনকে নিয়ে মনে মনে সে অনেক কিছু ভাবে! সেই ভাবনাচিন্তারাই কিছু অপ্রকাশিত অনুভূতিতে পরিণত হচ্ছে। যা জ্ঞান খাটিয়ে তাশফিয়া বুঝতেই পারছেনা। আয়মন যেমন এই প্রথম তাশফিয়াকে হলুদ শাড়িতে দেখেছে তেমনি তাশফিয়াও এই প্রথম আয়মনকে হলুদ পাঞ্জাবিতে দেখেছে। তাই দুজনই দুজনকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে!

তিথীও এসে এবার চাঁদের সাথে যোগ দিলো। দুজনই জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে রইল। ব্যাকুল দৃষ্টি তাদের হলগেইটের দিকে সীমাবদ্ধ৷ অধীর আগ্রহের যেনো অন্ত নেই তাদের৷ কখন তারা তাদের দুই প্রেমিক পুরুষকে দেখবে সেই চিন্তায় ব্যাকুল। পাশ ফিরে তিথীকে দেখামাত্রই চাঁদ বেশ অবাক হলো। ত্যাড়া দৃষ্টিতে সে তিথীর দিকে তাকালো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই? তুই এখানে কী করছিস?”
তিথী ঠোঁট উল্টালো। নীরস দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ঢঙি গলায় বলল,,
“তোর কি সত্যি সত্যি মনে হয় মাহিন ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে?”
“কেন? তোর মনে হয়না?”

“কিছুক্ষণ হয় তো কিছুক্ষণ হয়না! উনি একদিন বলেছিলেন উনার পিছনে নাকি অনেক মেয়েরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বিদেশেও নাকি অনেক মেয়ে উনার পিছনে ঘুর ঘুর করত। কিন্তু উনি পাত্তা দিত না। এবার তুই-ই বল আমি কীভাবে বিশ্বাস করি আমার মতো সাধারণ একটা মেয়েকে উনি পছন্দ করতে পারেন। যেখানে আমি উনার বুড়ো আঙুলের যোগ্যও না।”

চাঁদ হা করে কিছু বলার পূর্বেই জায়মা পেছন থেকে দৌঁড়ে এলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে চাঁদ এবং তিথীর কাঁধে হাত রাখল৷ হাঁপিয়ে ওঠা গলায় বলল,,
“এই? কী নিয়ে কথা বলছিস রে তোরা?”
চাঁদ ঘাড় ঘুরিয়ে জায়মার দিকে তাকালো। রূঢ় গলায় বলল,,

“তিথী বলছে মাহিন ভাই নাকি তাকে পছন্দ করেনা। একটু বুঝা তো এই বলদিটাকে!”
জায়মা গলা ঝাঁকালো। তিথীর দিকে তৎপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মোলায়েম গলায় বলল,,
“আরে করে করে। শুধু পছন্দই করেনা। ভালোও বাসে। আমি নিজ কানে শুনেছি৷ তুই রিলাক্সে থাক তো। প্যারা খাওয়ার মত কিছুই না এসব। আরে, শুধু তুই কেন? আয়মন ভাইও তো তাশফিয়াকে পছন্দ করে! দুই ফ্রেন্ড মিলে এসবই ভুজুংভাজুং করছিল ঐদিন! ভাগ্যিস আমি আড়াল থেকে সব শুনে নিয়েছিলাম।”

চাঁদ এবং তিথী হঠকারিতায় মাথা ঝাঁকালো। দুজনই মুখে হাত চেপে ধরল। জায়মার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সমস্বরে বলল,,
“কী বললি তুই? আয়মন ভাইয়াও তাশফিয়াকে পছন্দ করে?”
“হ্যাঁ। ঐদিন তো আমি এসবই শুনেছিলাম। তবে এখনি যেন তাশফিয়াকে কিছু বলিস না তোরা। আয়মন ভাই বারণ করেছে। খবরটা এখান থেকে লিক হলে পরে আমার কপালে কিন্তু দুর্গতি আছে।”

চাঁদ এখনো তাজ্জব বনে রইল। বিস্মিত গলায় বলল,,
“কী রে ভাই। ভেতরে ভেতরে এতকিছু চলছে অথচ আমি টেরই পেলামনা? আয়মন ভাই আমাকেও কিছু বললনা?”
জায়মা তিক্ত হয়ে উঠল। বিরক্তির স্বরে বলল,,
“আরে ছাড় তো এসব। আমি ভাবছি আমাকে নিয়ে। আমার কী হবে বল তো? তোরা তো সবাই মনের মানুষ পেয়ে গেলি। আমার দিকে তো কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেনা! কী হবে আমার কী হবে? আর কতকাল আমি এভাবে সিঙ্গেল থাকব? এই জ্বালা প্রাণে সইছেনা।”

জায়মা নাকি কান্না জুড়ে দিলো! হতাশায় কপাল চাপড়াতে লাগল। পাশ থেকে তিথী মুখ চেপে হাসছিল। জায়মার হায়-হুতাশ দেখে চাঁদের মাথায় একটা দুর্দান্ত বুদ্ধি খেলল। উত্তেজিত গলায় সে জায়মাকে শুধালো,,
“আচ্ছা? তোর সাদমান ভাইকে কেমন লাগে?”
জায়মা কান্না থামালো। ফ্যাল ফ্যাল চাহনিতে চাঁদের দিকে তাকালো। নাক টেনে বলল,,

“মানুষ হিসেবে ভালোই লাগে। কেন?”
“আরে মানুষ হিসেবে না তো! ছেলে হিসেবে। কতটুকু ভালো লাগে তোর বল?”
চাঁদের ইশারা জায়মা বুঝতে পারল। তবে সে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিলো না। শ্লেষাত্মক হেসে বলল,,
“সাদমান ভাই তোকে ভালোবাসে চাঁদ! আমাকে না। সো এসব ভুলে যা! আমি ঠিক অন্য কাউকে জুটিয়ে নিব। যে শুধু আমাকেই ভালোবাসবে!”

অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে নূর এবং মাহিনের আগমন ঘটল হল গেইটের ভেতরে। গাড়ি পার্ক করে তারা তাড়াহুড়ো করে নামল গাড়ি থেকে। গাড়ির ব্যাক সিট থেকে প্রথমে তারা যাবতীয় জিনিসপত্রগুলো বের করল। হাতে হাত লাগিয়ে দুইভাই মিলে জিনিসপত্র গুলো নিয়ে পিছু ঘুরতে ঘুরতে বেশ ব্যস্ত স্বরে বলল,,
“ড্যাম ইট। অনেকটাই লেইট হয়ে গেল।”

মাহিনের আগেই নূর যেই না মিষ্টির বক্সগুলো নিয়ে পিছু ঘুরল অমনি সে সাক্ষাৎ চাঁদের দেখা পেল! ব্যস্ত চোখদুটো তার মুহূর্তের মধ্যেই চঞ্চলতায় ভরে উঠল। মিষ্টির ঢালাটি অযাচিতভাবেই হাত ফসকে পড়ে গেল! শরীরটা হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। বেসামাল হয়ে সে বুকের বাঁ পাশে হাত রাখল। রংধনুর লহর খেলতে লাগল তার মোহভরা দৃষ্টি জুড়ে। রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে সে প্রেমময় গলায় বলল,,

“চোখ দুটো ব্লাইন্ড হয়ে গেল। হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে গেল। বুকটা দুড়ুদুড়ু করে কেঁপে উঠল। শুধুমাত্র তোমায় দেখে!”
ফিক করে হেসে দিলো চাঁদ! নূরের দিকে তাকিয়ে হাসি থামালো। এক কদম বাড়িয়ে নূরের সামনে এগিয়ে এলো সে। অনু্ভূতিশূণ্য নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো৷ নূরের চোখের সামনে তুড়ি মেরে মন্থর গলায় বলল,,

“শুধু আপনারই বুঝি হার্টবিট ফার্স্ট হয়ে যায় হ্যাঁ? আর কারো হয়না? অনুভব করে দেখুন না আমার বুকটাও কেমন কাঁপছে! এতক্ষণ আপনার আসার অপেক্ষায় কাঁপছিল আর এখন আপনাকে দেখার পর! কী অদ্ভুত এক জ্বালা। যদিও আপনাকে দেখার পর এই জ্বলনটা কমে এখন প্রশান্তিতে পরিণত হয়েছে। তবে এখন আমার তৃষ্ণার্ত মন জানতে চাইছে এত দেরি হলো জনাবের আগমনের হুম? কী এমন বিশেষ কারণ ছিল?”

নূর জমে বরফ হয়ে গেল! হীমশীতল বাতাস বইতে লাগল তার দেহের অভ্যন্তর জুড়ে। চাঁদের মুখ থেকে নিঃসৃত প্রতিটি তপ্তশ্বাস তার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অদ্ভুত এক উন্মাদনার সৃষ্টি করছিল। এই দমফাটা অনুভূতি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য৷ নূর ঝট করে এক কদম পিছু হটে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই ফলমূল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মাহিনের সাথে ধাক্কা খেল সে। মাহিনের হাত থেকেও ফলের বক্সগুলো নিচে পড়ে গেল!

দুই ভাই একসাথে বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ইতোমধ্যেই চাঁদের পেছন হুট করে তিথীর আগমন ঘটল! চাঁদের কাঁধে হাত রেখে তিথী বিভোর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মাহিনের দিকে চোখ টিপে তাকালো! মাহিনের চোখ যেনো ট্যাড়া হয়ে গেল তিথীর চোখ টিপা দেখে! দুই উন্মাদ প্রেমিকের অবস্থা দেখে চাঁদ এবং তিথী দুজনই দম ফাটা হাসিতে মত্ত হয়ে উঠল। ঘাম ঝড়তে লাগল মাহিনের কপাল জুড়ে। বুকে হাত রেখে সে নূরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,

“আরে ভাই চল। আজ আমরাও আমাদের হলুদটা সেরে ফেলি! তিনভাই মিলে একদিনে বিয়ে করি। নতুন ইতিহাস গড়ি।”
অস্থির দৃষ্টিতে নূর দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাহিনের দিকে তাকালো৷ দিশাহীন গলায় বলল,,,
“আমার না হয় চান্সেস আছে চাঁদকে বিয়ে করার। তোর কীসের চান্সেস হ্যাঁ? এখনো তিথীকে বলেছিস? তিথীকে ভালোবাসিস তুই?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৭

মেয়েদের মতো নখ কামড়ালো মাহিন। অধীর গলায় বলল,,
“আজই তিথীকে আমি আমার মনের কথা জানাব। মাঝখানে যতোই বাঁধা আসুক না কেন। আমাদের এক হওয়া চাই ই চাই।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৯