প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৭

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৭
নিশাত জাহান নিশি

“আমার তোমাকে চাই! আর কাউকে না!”
সুখের অশ্রু ছেড়ে দিলো চাঁদ! নূরকে আরও শক্ত বাঁধনে আঁকড়ে ধরল। স্বস্তির শ্বাস ফেলে বুকভরা কষ্টকে নিয়ন্ত্রণ করল। নূরকে আবার বাজিয়ে অজুহাত ধরল। হেচকি তুলে বলল,,

“সত্যি বলছেন তো? আপনার শুধু আমাকেই চাই?”
“হ্যাঁ সত্যি বলছি। ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি শুধু তোমাকে চাই। আর বন্ধুত্বের জায়গা থেকে শুধু সাদমানকে চাই! দুটোই কিন্তু আলাদা বিষয় চাঁদ। বুঝতে হবে তোমার।”
সঙ্গে সঙ্গেই নূরকে ছেড়ে দাঁড়ালো চাঁদ। ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে নূরের শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। কম্পিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“বন্ধুত্বের জন্য ভালোবাসা বাজি রাখবেন? নাকি বন্ধু-ভালোবাসা এই দুইদিকই একসাথে ব্যালেন্স করবেন?”
“আমি দুটো দিকই একসাথে ব্যালেন্স করতে চাই চাঁদ! আমার এই দুই জনকেই প্রয়োজন। সাদমান আমার ছোটো বেলাকার ফ্রেন্ড। একসাথে খেয়েছি, দেয়েছি, চলাফেরা করেছি, বড়ো হয়েছি। কীভাবে সম্ভব বলো তাকে ভুলে যাওয়া? কেন বুঝার চেষ্টা করছ না তুমি বলো তো? কেন বন্ধুত্বের সাথে ভালোবাসাকে কম্পেয়ার করছ?”

চাঁদ ঝাড়ি দিয়ে উঠল! দৃষ্টিতে রূঢ়তা এনে অসহায় নূরের দিকে তাকালো। শাণিত গলায় বলল,,
“আমি কিন্তু একবারও সাদমান ভাইকে আমি ভুলে যেতে বলিনি নূর ভাইয়া। শুধু জানতে চেয়েছি আপনি কাকে চান!

শুধু একটিবারের জন্য আপনি নিশ্চিত হয়ে বলুন যে আপনি আমাকে চান, কারো সাথে আমাকে শেয়ার করতে চান না তাহলে আমিও কথা দিচ্ছি আপনাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে কীভাবে পুনরায় গড়ে তুলতে হয় আমি দেখিয়ে দিব! দুজনের মধ্যে সব ভুল বুঝাবুঝি দূর করে দিব। সাদমান ভাইকে ঠাণ্ডা মাথায় সব বুঝাব, যতটা সম্ভব উনার পাশে থাকব, প্রয়োজনে উনাকে সাপোর্ট করব। এতোটাই আপন করে নিব যে উনি তখন সব বিবাদ ভুলে যাবেন।

আমাদের মধ্যেও একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হবে। সাদমান ভাইয়া তখন ভালোবাসা হিসবে আমাকে আর চাইবেনা। বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আপনাকে যেভাবে দেখে এসেছে ভবিষ্যতেও ঠিক সেভাবেই দেখবে। শুধু আমাকে ঠিকভাবে কনফার্ম করুন যে আপনি শুধু আমাকে চান। ভালোবাসা হিসেবে আমাকে চান।

কারো হাতে তুলে দিতে চাননা আমাকে। জানেন শুধুমাত্র এই ভয়টার জন্যই আমি স্বার্থপর হয়ে উঠছি! সাদমান ভাইকে এতটা ভয় পাচ্ছি। দেখতে পর্যন্ত যেতে পারছিনা উনাকে। কখন না আপনি আমাকে উনার হাতে তুলে দেন! আপনার হাবভাব আমার সুবিধার ঠেকছেনা।”

চাঁদের ভয়টা নূর বুঝতে পারল। নূর নিজেও নিজেকে এই মুহূর্তে ভয় পেতে শুরু করল। অপরাধবোধের কারণে সে কখন চাঁদকে সাদমানের হাতে তুলে দেয় নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা! বা কখন সে সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যায় তারও গ্যারান্টি দিতে পারছেনা! তবুও চাঁদ যেহেতু সব ঠিক করে দিবে বলছে তাই নূর একটা রিস্ক নিতেই পারে। চাঁদকে একবার বিশ্বাস করে দেখতেই পারে। উদ্যমী হয়ে নূর গলা ঝাড়ল। চাঁদকে আশ্বস্ত করার সিদ্ধান্ত নিলো। সোজাসাপটা গলায় চাঁদের অস্থির দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“ওকে ফাইন। আমি কনফার্ম করলাম! আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকেই চাই, সাদমানের হাতে আমি তোমাকে তুলে দিবনা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার এই জবান ঠিক থাকবে। তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি আমার আল্লাহ্ই ভালো জানে।”

ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল চাঁদের! খুশিতে চিকচিক করে উঠল চোখদুটো। গালদুটো আনন্দে নেচেনেচে উঠল। অতি উত্তেজিত হয়ে চাঁদ নূরকে নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরল। মোলায়েম কণ্ঠে বলল,,
“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি নূর। বিশ্বাস করুন আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবনা। তাই তো আপনাকে নিয়ে এত ভয় পাই। তবে এখন, এই মুহূর্ত থেকে আমি আর আপনাকে ভয় পাব না। আপনার কথার নড়চড় হবেনা আমি জানি।”

নূরকে ছেড়ে দাঁড়ালো চাঁদ। ডান হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা গড়িয়ে পড়া চোখের জলগুলো মুছে নিলো। নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নূরের হাতে হাত রাখল। মিষ্টি হেসে বলল,,
“চলুন আমরা হসপিটালে যাই। সাদমান ভাইয়াকে দেখে আসি।”

মন ভালো হয়ে উঠল নূরের। ঠোঁটের কোণে মলিন হাসি ফুটে উঠল। চাঁদের গালে হাত রেখে ঝরঝরা গলায় বলল,,
“উঁহু। সাদমানকে দেখতে এখন হসপিটালে পাওয়া যাবেনা। একটু পরেই তাকে রিলিজ করা হবে। এগারোটার পর আমরা ওর বাড়ি যাব। বাড়ি গিয়ে দেখে আসব।”

“কাল কী কী হয়েছিল হসপিটালে? সাদমান ভাইয়া হয়তো আপনার সাথে খুব ঝগড়া করেছিল তাইনা? আপনাকে খুব হার্ট করেছিল? এজন্যই আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করছিলেন না? আমাকে ইগনোর করছিলেন? জানেন? এজন্যই কাল আমি আপনার সাথে যেতে চেয়েছিলাম। তবে আপনি নেন নি। যদিও বিশেষভাবে জোর দিইনি, কারণ আমার মনে ভয় ছিল!

এখন সেই ভয়টাও প্রায় কেটে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে এখন আমি সাদমান ভাইয়ার সাথে দেখা করতে রাজি। উনার জন্য কোনো ফিলিংস কাজ না করুক তবে সহানুভূতি তো কাজ করছেই।”
নূরের মাথাটা হঠাৎ করে ঘুরে এলো। অভুক্ত, অনিদ্রায় এবং অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তায় থাকার দরুন তার শরীর খারাপ পুনরায় জোঁ দিলো। দুর্বলতা কাজ করতে লাগল। তৎক্ষনাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে চাঁদ নূরকে শক্ত বাহুডোরে আঁকড়ে ধরল। চিন্তিত গলায় শুধালো,,

“কী হয়েছে নূর ভাইয়া? শরীর খারাপ লাগছে?”
নূর মাথাটা ঝাকালো। চোখ বুজে অতিষ্ট গলায় বলল,,
“আমার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন চাঁদ।”

চাঁদকে ছেড়ে নূর উল্টোদিকে ঘুরল। ঢুলুঢুলু শরীর নিয়ে তার রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল। মাহিন এবং আয়মনকে ঠেলে তাদের দুজনের মাঝখানে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ বুজে ঘুমকে আহ্বান করল। নূরের যাওয়ার পথে চাঁদ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মুখটা কালো করে তার খালামনির রুমের দিকে অগ্রসর হলো। নূরের নামে অনেক নালিশ জানাবে বলে মনোস্থির করে নিলো!

বিছানায় অর্ধশোয়া অবস্থায় সাদমান তার রক্তশূল দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে নূরের দিকে! নূর এবং চাঁদ সাদমানের দুপাশে মাথা নুইয়ে বসে আছে। নূরের প্রতি ক্ষোভ যেনো কিছুতেই কমছে না তার। চাঁদকে দেখে সেই ক্ষোভটা যেনো আরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। সাদমান শুধু একান্তেই চাঁদকে আশা করেছিল।

নূরের সাথে নয়! একে তো বিরহের আগুনে পুড়ছে সে দ্বিতীয়ত নূরের বিশ্বাসঘাতকতা তার চোখে পড়ছে। বহু কষ্টে সে তার রাগ জেদ সংবরণ করে রেখেছে। যখন সব সীমা লংঘন হয়ে যাবে তখন যে সে কী পরিমাণ ভায়োলেন্ট হয়ে উঠবে তার আন্দাজও করতে পারছেনা কেউ! নীরবতা ভেঙে চাঁদ গলা ঝাকালো। সরল দৃষ্টিতে সাদমানের রোগা সোগা মুখের দিকে তাকালো। ধীর গলায় শুধালো,,

“এখন কেমন আছেন ভাইয়া?”
সাদমান ঝেড়ে কাশলো। কয়েকদফা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মলিন কণ্ঠে বলল,,
“যেমন রেখেছ!”

নূর নড়েচড়ে উঠল। চাঁদের দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! সাদমানের এই উত্তর নূরের পছন্দ হলোনা। চাঁদ বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দিলো। হাসিমুখেই সাদমানকে বলল,,
“আমি কাউকে ভালো-খারাপ রাখার মালিক নই সাদমান ভাইয়া। আমার জন্য আপনার মন খারাপ হতে পারে ব্যস এতটুকুই। সময় নিন। আস্তে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

সাদমান উত্তেজিত হয়ে উঠল। চাঁদের দিকে রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ক্ষোভ ঝেড়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,,
“কী ঠিক হয়ে যাবে হ্যাঁ? কী ঠিক হয়ে যাবে? তোমার জন্য শুধু আমার মন খারাপ করছে না? শরীর খারাপ করছেনা? তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় আমি সু’ই’সা’ই’ড করতে যাইনি? এমনি এমনি কেউ সু’ই’সা’ই’ড করতে যায় হ্যাঁ?”

চাঁদ থতমত খেয়ে গেল! সাদমানের হুমকি ধামকিতে সে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেল। তবুও কম্পিত গলায় বলল,,
“কিন্তু আমি তো এর আগে কখনো আপনার মধ্যে আমাকে পাওয়ার জন্য কোনো সিরিয়াসনেস দেখিনি! কখনো আপনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখিনি। হ্যাঁ বলতে পারেন ভালোলাগা দেখেছি। যা অতি আপেক্ষিক মনে হয়েছিল আমার কাছে।”

চাঁদের কথায় কোনো প্রতিউত্তর করলনা সাদমান! অতি উত্তেজিত হয়ে ডেক্সের উপর থাকা ফুলদানিটা সে মাটিতে ছুড়ে মারল। চিৎকার করে বলল,,
“বয়ফ্রেন্ড নিয়া আসছ আমার ভালোবাসায় আঙুল তুলতে হ্যাঁ? আমাকে ইনসাল্ট করতে, অযথা আমাকে হয়রান করতে?”

সাদমানের পাশ থেকে ওঠে দাঁড়ালো নূর। উদ্বিগ্ন হয়ে সাদমানকে থামানোর জন্য অন্তঃপ্রাণ চেষ্টা করল। সাদমানের ডান হাতটা টেনে ধরে নিচু গলায় বলল,,

“তুই শান্ত হ সাদমান। এই অবস্থায় তোকে এতটা উত্তেজিত হলে চলবেনা। চাঁদ তোর ভালোবাসায় আঙুল তুলছে না। শুধু সে যা ফিল করেছে তাই বলেছে। তোকে এই অবস্থায় দেখতে আমার একটুও ভালো লাগছেনা সাদমান বিশ্বাস কর। কষ্ট হচ্ছে আমার। খুব কষ্ট হচ্ছে।

কাল সারারাত আমি ঘুমুতে পারিনি। খাওয়াদাওয়া টোটালি অফ। খুব অপরাধবোধ কাজ করছে আমার মধ্যে। ভেতরে ভেতরে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্লিজ আমাকে বিশ্বাস কর। প্লিজ।”
হুড়মুড়িয়ে সাদমান বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে ঠাস করে সে নূরের গালে বিশাল এক চড় বসিয়ে দিলো! তটস্থ গলায় বলল,,

“নাটক করছিস তুই আমার সাথে হ্যাঁ? নাটক করছিস? বিশ্বাসঘাতকতা করে আমার সাথে এখন নাটক করছিস? তুই জানতিস না চাঁদকে আমি আগে থেকেভ ভালোবাসতাম? তোরও অনেক আগে থেকে চাঁদকে ভালোবাসতাম? জানার পরেও কেন তুই চাঁদকে ফিল করালি তুইও চাঁদকে ভালোবাসিস হ্যাঁ? বল কেন?”

ধৈর্য্যের সমস্ত সীমা পাড় হয়ে গেল নূরের। আগ্রাসী দৃষ্টিতে সাদমানের দিকে তাকালো সে। চড়টা এতটাই গাঢ় ছিল যে তার কান দুটো ভোঁ ভোঁ করছিল! গালটা ব্যথায় টনটন করছিল। চাঁদ দূর থেকে দাঁড়িয়ে মুখ চেপে কাঁদছিল” তাদের দুই বন্ধুর মাঝখানে আসার সাহস পাচ্ছিলনা সে! শুধু নিজেকেই দোষারোপ করতে লাগল। নূরের জন্য তার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল। গাল থেকে হাত নামিয়ে নিলো নূর। শার্টের কলারটা ঝেড়ে সাদমানকে ধাক্কাতে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে নিলো! বিস্ফোরিত হয়ে চিৎকার করে বলল,,

“কোথায় ছিল তখন তোর ভালোবাসা হ্যাঁ? যখন চাঁদ কুমিল্লা চলে গিয়েছিল। বুকে হাত রেখে বলতে পারবি এই ছয়মাসে কখনো তুই ভুলেও চাঁদের নামটা মুখ থেকে উচ্চারণ করেছিলি? কখনো চাঁদের খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলি? কখনো আমাকে বলেছিলি চাঁদের নাম্বারটা দে একটু কল করে কথা বলি?

তাকে ফিল করাই আমি তাকে ভালোবাসি? আমার চোখে চোখ রেখে কখনো বলেছিলি চাঁদকে খুব মিস করছি? চাঁদকে আমি ভালোবাসি? প্রতিদিনের সব কথা তো আমার কাছে শেয়ার করতিস। কোন মেয়ে তোকে প্রপোজ করেছে, কোন মেয়ের সাথে ইনস্ট্রাগ্রামে কথা হয়েছে, কোন মেয়েটা তোকে বিরক্ত করছে,

কাকে তুই ইগনোর করছিস, কী খেয়েছিস, কী পড়েছিস, কোথায় কোথায় ঘুরতে গিয়েছিস, বাড়িতে কী হয়েছে না হয়েছে সব আপডেট তো রোজ আমার কাছেই শেয়ার করতিস। তাহলে চাঁদের বিষয়টা কেন তুই আমার কাছে শেয়ার করতিস না? কেন জানতে চাইতিস না চাঁদ কেমন আছে?

চাঁদের সাথে কথা হয় কিনা? যেহেতু চাঁদ আমার কাজিন হয়। আমি তো জানি ভালোবাসলে দু/একদিনের বেশি ভালোবাসার মানুষটাকে ছাড়া থাকা যায়না। পাগল পাগল লাগে। যেমনটা আমি চাঁদকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না। বিশ্বাস না হলে চাঁদকে জিজ্ঞেস করে দেখ আম্মু রোজ চাঁদকে ফোন দিতো কিনা,

চাঁদের খবরাখবর নিতো কিনা, প্রতিদিনের আপডেট জানত কিনা। চাঁদের সাথে কথা না বললেও সোহানী ভাবির থেকে চাঁদের খবর নিতো কিনা। আমিই আম্মুকে জোর করে কল করাতাম চাঁদের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য! চাঁদ কেমন আছে তা জানার জন্য। তাহলে তুই কীভাবে পাঁচ ছয়মাস চাঁদকে ছাড়া থেকেছিলি বল?

চাঁদের কোনো খোঁজ-খবর না নেওয়া ছাড়াই? এসব দেখার পর যখন আমি ভাবলাম চাঁদের প্রতি হয়তো তোর একটা এটরেকশান কাজ করত যা এই পাঁচ ছয়মাসে হয়তো কেটে গেছে। যখন আমি তোকে সর্বপ্রথম বললাম চাঁদকে হয়তো আমি ভালোবেসে ফেলেছি, চাঁদের জন্য স্পেশাল কিছু একটা ফিল করছি তখনই তুই চাঁদকে ভালোবাসিস এই কথাটা মনে পড়তে হবে তোর? এরজন্য আমার টুটি চেপে ধরতে হবে?

আজ যে জোরালোভাবে চড়টা মারলি না? সেদিনও ঠিক এই চড়টাই তুই আমাকে মেরেছিলি! চাইলে আমিও পারতাম সেদিন তোর গাঁয়ে হাত তুলতে। কিন্তু তুলিনি৷ তুই কষ্ট পাবি, হার্ট হবি বলে। তোকে আঘাত করার নূন্যতম ইচ্ছে ছিলনা আমার। রাগের বশে সেদিন ঠিকই বলেছিলাম হ্যাঁ ঠিক আছে চাঁদ যাকে ভালোবাসবে চাঁদ শুধু তারই হবে। তুইও মেনে নিয়েছিলি আমার সেই শর্ত। সেদিন আমি তোর চোখে হিংসা দেখেছিলাম সাদমান!

ক্রোধের অগ্নি দেখেছিলাম, কিন্তু চাঁদের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা দেখিনি! যাই হোক, তখন আমি বিষয়টাকে পাত্তা দিইনি। নিজের শর্তে অনড় ছিলাম। সেই শর্তের রেশ ধরেই যখন আমি কুমিল্লা যাই তোকেও বলেছিলাম আমার সাথে যেতে। যাসনি তুই! বরং ইচ্ছে করেই যাসনি৷ কারণটা আমার জানা আছে।

ইন্ডিয়া থেকে তোর কাজিনরা এসেছিল সেজন্য তুই কুমিল্লা যেতে পারিস নি। সর্বোচ্চ তিনদিন থেকেছিলাম আমরা কুমিল্লায়। তুই চাইলে অন্তত একটা দিন আমাদের সাথে কাটতে পারতিস। চাঁদকে দেখার জন্য অন্তত এক ঘণ্টার জন্য হলেও আমাদের সাথে কুমিল্লায় যেতে পারতিস। ভালোবাসলে মানুষ কত কি ই না করে৷ নিজেকে পাগল ভাবতেও দ্বিধাবোধ করেনা।

তোর ভালোবাসার দৌঁড় কতটুকু তখনই আমার বুঝা হয়ে গিয়েছিল সাদমান। তবে তা প্রকাশ করিনি। আমি চাইলেই চাঁদের থেকে জোর করে ভালোবাসা আদায় করতে পারতাম। আহামরি কিছু ছিলনা। কিন্তু করিনি। তোর ভালোবাসার কথা চাঁদকে জানিয়ে এসেছিলাম। চাঁদের জীবন থেকে অনেকটা দূরে সরে এসেছিলাম। তাকে ছাড়া আমি মরমে মরমে ম’রে যাচ্ছিলাম। ভেতরে ভেতরে কঠিন অসুখ বাঁধিয়ে রেখেছিলাম।

তবুও আমি তোদের মাঝখানে যেতে চাইনি। তোর ভালোবাসাকে সম্মান করেছিলাম। ঐদিন ছাদে দাঁড়িয়েও আমি তোকে সাপোর্ট করেছিলাম। নিজেকে স্বার্থপর প্রমাণ করেছিলাম। তোর দুঃখ ভোলানোর জন্য নিজেকে যতোটা নিচে নামানোর দরকার ছিল ঠিক ততটুকুই নামিয়েছিলাম। রুমে যাওয়ার পর বলেছিলাম চাঁদকে প্রপোজ কর। ফিল করা চাঁদকে তুই ভালোবাসিস। সারারাত এই নিয়ে আমাদের মধ্যে আড্ডা হয়েছিল। পাঁচটা সিগারেটের প্যাকেট আমি ঐ রাতে শেষ করেছিলাম! ভেতরটাকে জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম!”

দম নিলো নূর৷ রুদ্ধশ্বাস ফেলে পুনরায় বলল,,
“চাঁদ আমাকে পছন্দ করত না বলে আমি যে তোদের মাঝখান থেকে সরে এসেছিলাম বিষয়টা কিন্তু পুরোপুরি এমন নয়। আমি চাইলেই চাঁদকে জোর করে বিয়ে শাদি করে নিতে পারতাম! যেখানে আমার মা আমার ভালোবাসার কথাটা অনেক আগে থেকেই জানত। সেখানে চাঁদকে জোর করে বিয়ে করাটা কোনো ব্যাপারই ছিলনা।

তবে আমি তোর কথা ভেবেছিলাম। তোকে জিততে দেখতে চেয়েছিলাম! কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলোনা। চাঁদ নিজেই আমার কাছে ছুটে এসেছিল। উপলব্ধি করতে পেরেছিল সে ও আমাকে ভালোবাসে। এখনো তুই যা করছিস না সাদমান? সব তুই হেরে যাওয়ার ক্ষোভ থেকে করছিস!

সু’ই’সা’ইড ফুইসাইড এসব জাস্ট একটা নাটক ছিল। তোর চোখ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম। উদ্দেশ্য সৎ হলে কেউ তোর ভালোবাসার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতো না! আমার উদ্দেশ্য সৎ ছিল বলেই আমি চাঁদকে পেয়েছি। উপর ওয়ালা যা করে সব ভেবেচিন্তেই করে!”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৬

দৃষ্টি নুইয়ে নিলো সাদমান! থতমত খেয়ে গেল সে। বাঘের মতো গর্জন তার থেমে গেল। ফোঁসফোঁস আওয়াজও কমে গেল! নূরের কথায় দারুন জব্দ হয়ে গেল সে।

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৮