সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৮

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৮
ফারজানা আফরোজ 

কাক ডাকা ভোর। লঞ্চ থেকে নেমে মিষ্টি অটো খুঁজতে লাগল। অনিক কাঁধে গিটার, হাতে ব্যাগ নিয়ে নারিকেল গাছের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইল। শুভ্রতা ব্যাগ সামনে ঝুলিয়ে চারদিকে চোখ বুলাল। নেহা এক সাইডে ব্যাগ নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে বলল,

– মিষ্টি, কত সময় লাগবে যেতে?
মিষ্টি বলল,
– চল্লিশ মিনিটের মত লাগবে।
নেহা চোখে মুখে বি’রক্তি ফুটিয়ে অনিকের দিকে তাকালো। অনিক নেহার বি’রক্তি চেহারা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– এখানে আমার দোষ কোথায়?
– দোষ সব তোর। সারারাত জেগে না থেকে ঘুমানো যেত না? তোর কারণে ঘুমাতে পারিনি। মেয়েদের সাথে থাকলে নাকি মহারাজের ই’জ্জত চলে যাবে। বলি, তোর ই’জ্জত আছে? সব সময় তিনটা মেয়ের পিছনে আঠার মতো লেগে থাকিস সেখানে আবার ই’জ্জত।
অনিক চুপ করে রইল। শুভ্রতা মিষ্টিকে তাড়া দিয়ে বলল,

– সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখি অটো পাওয়া যায় কিনা ।
মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। পাঁচ মিনিট হাঁটার পর একটা অটো পাওয়া গিয়েছে কিন্তু সমস্যা হলো অটোতে স্পন্দন এবং তিশান বসে আছে। শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে বলল,
– পিছনের সিট ছাড়া বসব না।
স্পন্দন না’ছো’ড়’বা’ন্দা সেও পিছনের সিট না দেওয়ার জন্য বলল,

– মামা, আমরা আগে আসছি। পিছনের সিটে বসার অধিকার শুধু আমাদের। মেয়ে মানুষের এই এক স’মস্যা পিছনের সিট না দিলে ওনারা বসবে না। স’মস্যা শুধু ওনাদেরই হয় আমাদের বুঝি হয় না।
শুভ্রতা মুখ ভার করে তাকালো। গতকাল রাতে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছে আর এখন আসল রূপ দেখাচ্ছে। চোখ মুখ খিচে জবাব দিল,

– মিষ্টি অন্য অটো খোঁজ। আমি এই অটোতে যাব না।
ড্রাইভার মামা তখন অনুনয় সুরে বললেন,
– মামারা আপনারা জে’দ ধরেন কা, মাইয়া মানুষ পিছনে বসতে চাইতেছে দিয়া দেন। বেজাল করার দরকার নাই। আপনারা দু’জন ওনারা চারজন, না বসতে চাইলে নাইম্যা পড়েন আপনারা দু’জন।
তিশান ফিসফিসিয়ে বলল,

– জায়গা দিয়ে দে। ঝ’গড়া করে লাভ নাই। মেয়ে মানুষ বুঝে কম চি’ল্লায় বেশি।
অতঃপর শুভ্রতা, নেহা এবং মিষ্টি অটোর পিছনের সিটে বসল। মাঝের সিটে অনিক, স্পন্দন এবং তিশান। তবে নেহার মনে খটকা লাগলো স্পন্দন এবং তিশানকে দেখে। আড়চোখে শুভ্রতাকে এক পলক দেখে মিষ্টির কাঁধে মা’থা রেখে শুয়ে পড়ল। অটো চলছে আপন গতিতে। নেহার ক্লান্ত মুখের দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছে অনিক। মনের ভিতরে ঘোর লাগা শুরু করল। নিষ্পাপ নিষ্পলক নেহার ক্লান্ত মুখটি দেখে চট করে মনে পড়ল মেয়েটাকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে।

খাটের মাথায় হেলান দিয়ে শুয়ে রইল শুভ্রতা। মিষ্টিদের বাসা পাঁচতলা। কোলাহলময় পরিবেশ, ফুলের সুবাস চারদিকে ম-ম করছে। রন্ধনশালায় চলছে রান্নার আয়োজন। মিষ্টির বাবা চাচারা সাতজন। সবাই একত্রে থাকে অর্থাৎ যৌথ ফ্যামিলি। চাচাতো ভাইবোন মিলিয়ে বিশ কিংবা একুশ হবে। বাড়ির বড় মেয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছে এ প্রথম, কোনো রকম অসুবিধে যেন না হয় তারই খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বারংবার। আসার পর থেকেই নানান জাতীয় পিঠার মেলা, অনেক পিঠার নাম জানে না শুভ্রতা। অনিক দুষ্টুমি করে বলল,

– মিষ্টি তোর দাদী পরিবার পরিকল্পা না করে বেশ ভু’ল করেছে। সাত সাতটি ছেলে বলতে হয় তোর দাদার কামাল আছে । তোর চাচারা যদি তিনটে করেও ডাউনলোড করে তাও একুশজন হয়ে যাবে। ভ’য় হচ্ছে পরে দেখা যাবে তোদের বংশের ছেলে মেয়ের জন্য আমাদের বংশের ছেলে মেয়েরা বাংলাদেশে ঠাঁই পাবে না। দাদা দাদী কাজটা খুব বড় ভুল করেছে।
অনিকের কথায় শুভ্রতা এবং নেহা হাসলো, মিষ্টি তির্যক চোখে চেয়ে থেকে বলল,

– খবরদার ভুলভাল বলবি না । তাহলে পাঁচতলা থেকে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দিবো। আমার বাপ চাচারা এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান ভুলে যাস না।
বন্ধু মহলের দুষ্টু মিষ্টি টক চলল বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ মিষ্টির মেঝ চাচি এসে জানালো মেহমান আসছে। মিষ্টি মেহমানের কথা শোনে লাজুক হেসে বলল,
– আজ তোদের জন্য ধামাকা সারপ্রাইজ রয়েছে। আগে থেকে তৈরি থাক,পরে অ্যা’টাক ফ্যা’টাক করলে আমি দায়ী নই।

বসার রুমে স্পন্দন এবং তিশান বসে আছে। শুভ্রতা, নেহা এবং অনিক দুজন মানুষকে দেখে চমকে উঠল। সন্দেহ নজরে তাকালো মিষ্টির পানে। মিষ্টি লাজুক হেসে বলল,
– তিশান স্যার তোদের দুলাভাই।
তিনজন একত্রে চিৎকার করে বলল,

– হোয়াট?
মিষ্টি ফিসফিস করে বলল,
– অনেক আগে আমাদের আকদ হয়ে গেছে।
অনিক বুক চেপে ধরে বলল,

– তাহলে তুই যে স্যারকে দেখলে ভ’য়ে কাঁ-পা-কাঁ-পি করতি সেটা কী ছিল।
মুখটা আরো নিচু করে ধীর গলায় বলল মিষ্টি,
– ওনাকে দেখলে আমার হাত পা কাঁ’পে।
ওরা তিনজন ছোট্ট নিঃশ্বাস ছাড়লো। তিশান স্বাভাবিক গলায় বলল,

– আমার ছুটি কিন্তু বেশি দিনের নয়, আমি চাচ্ছি কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়েটা সেরে ফেলতে। আপনারা ভালো দিন দেখে বিয়ের তারিখটা ঠিক করে ফেলুন।
এবার মিষ্টি সহ বাকি চারজন একসাথে উচ্চারণ করল,
– মানে?
স্পন্দন মুচকি হেসে বলল,
– সারপ্রাইজ।

রাত দশটা,
শুভ্রতা , মিষ্টি, নেহা এবং অনিক পুকুর ঘাটে বসে আছে। পুকুরে লাল পদ্ম ফুটেছে, আকাশের গোলাকার চন্দ্র পুকুরের জলে ঝলমল করছে। পুকুরে চাঁদের ছায়া। পথে পথে সবুজ মাঠ, ঘাস, রুপালি শিশির। দিগন্তে কুয়াশার রেশ। নারিকেল গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে বিশাল ছায়া নেমে। ঠিক তখনই আগমন ঘটে স্পন্দন এবং তিশানের। অনিক সালাম দিলো,ওরা দুজন সালামের জবাব দিল। তিশান বলল,

– আন‌ইজি ফিল করতে হবে না। আমি তোমাদের হবু দুলাভাই। কলেজের স্যার কলেজে থাকবে গেইট পেরুলেই সে দুলাভাই। বুঝতে পেরেছো?
সকলে সম্মতি দিল। আড্ডা হলো জমকালো। আচমকা স্পন্দন শুভ্রতার ডান হাত শক্ত করে ধরে বলল,
– বিয়ে করবেন আমাকে?
জা’নপরান অবাক হলো সবাই। শুভ্রতা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। নিচু স্বরে বলল,

– হাতটা ছাড়েন প্লিজ।
স্পন্দনের এ বিহেভ কারো হজম হলো না। স্পন্দন বুঝল সে একটু বেশীই বলে ফেলেছে তাই কথার টপিক চেঞ্জ করার জন্য বলল,
– মজা করছিলাম। বন্ধুর শা’লী অর্থাৎ আমার বেয়াইন মজা তো করাই যায়।

সবাই মজার চলে নিলেও শুভ্রতা বুঝল স্পন্দন ঠিক কী বলেছে। পুরোনো আ’ঘাতে আ’ঘাত করতে চাচ্ছে। ল’ন্ডভ’ন্ড করে দিতে চাচ্ছে তার মন। বেয়াইয়া মনটা বড়ই না’ছো’ড় বা’ন্দা। কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। বারবার ইগনোর করতে গিয়েও পারছে না।

অ’সাড় হয়ে যাচ্ছে শুভ্রতার দেহ। নি’র্বোধ জ্ঞানশূন্য মাথাটা জানান দিচ্ছে স্পন্দন নামক ঝামেলাটা কিছুতেই পিছন ছাড়বে না। ফুসরত ফুরিয়ে এসেছে শুভ্রতার। স্পন্দন নামক মানুষটার সাথে হয়তো মিলন নেই সবই নাটক লোকটির তবুও অবুঝ মন স্বীকার করতে নারাজ। ফোনের স্ক্রিনে ‘আম্মু’ শব্দটি দেখে টনক নড়ে উঠল শুভ্রতার মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে দূরে পুকুরের সিড়ির দিকটায় যেতে নিতেই আকস্মিক স্পন্দন নিচু কণ্ঠে ডেকে উঠল,

– কোথায় যাচ্ছেন?
– আম্মু ফোন দিয়েছে ।
– বেশি দূরে যাবেন না। রাতের অন্ধকারে তেনারা ঘুরে বেড়ায়।
– ভয় দেখাচ্ছেন?
– সতর্ক করছি।
– শা’স্তি দিতে চান?
– ভালোবাসতে চাই।
– আপনি দিনদিন অ’সভ্য হয়ে যাচ্ছেন।
– আপনার জন্য অ’সভ্য হতে পেরে আমি ধন্য।

শুভ্রতা কথা বাড়ালো না। ফোনটা হাতে নিয়ে দূরে চলে গেল। কিছুক্ষণ কথা বলে যেই না পিছনে ঘুরবে অমনি স্পন্দনের বিশাল দেহে ধা’ক্কা খেয়ে উপছে পড়ে। রাগী চোখে বলে উঠে,
– আমায় ফলো করছেন?
– পাহারা দিতে এসেছিলাম। তেনারা আপনার নিয়ে গেলে আমার কী হবে?
– মজা করছেন আমার সাথে?

– আমাদের সম্পর্কটা কিন্তু মজারই। যদি আমার কথা না শোনেন তাহলে বলে দিবো আপনি আমায় চু’মু দিয়েছিলেন।
শুভ্রতা নড়েচড়ে উঠল। কিছুতেই এ কথাটা বন্ধু মহলে বলা যাবে না তাহলে সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে খেপাবে।
– কী করতে হবে আমায়?
– আপাতত আপনার কোলে মাথা রেখে জ্যোৎস্না বিলাস করব।
– অসম্ভব।
– অসম্ভব কেন হবে?

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৭

– আমার ফ্রেন্ডরা এখানে আছে। আমি পারব না।
স্পন্দন শ’য়তানি হাসি দিয়ে বলল,
– আরেকটা শর্ত আছে তাহলে।
শুভ্রতা ভয় পাওয়া গলায় বলল,
– কী?

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৯