হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১১

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১১
সাইয়ারা মম

আজ সকালটা যেন খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।সকাল থেকেই সারা বাড়িতে একটা খুশি খুশি ভাব।ছোটরা সারাবাড়ি জুড়ে ছোটাছুটি করছে।মিহু চাইছিল ফুফুর হাতে হাতে ধরে কাজগুলো এগিয়ে দিতে।কিন্তু ফুফু দিলেন না।বললেন
-এখন কাজ করতে হবে না।একটু পরে জীবনে একটা অনেক বড় ঘটনা ঘটবে।তাই এর জন্য প্রস্তুত নাও।
-ফুফু সেটাতো দুপুরে।এখনও তো কত সময় বাকি।
মিহু যত যাই বলে ওর ফুফু ওকে কিছুই করতে দেয় না।বিদিশাকে ডেকে ওকে ঘরে নিয়ে যেতে বলে।বিদিশা এসে ওকে নিয়ে যায়।ঘরে নিয়ে গিয়ে বলে

-আপু দেখো এখন আমি যা যা বলব তাই তাই করবে।ঠিক আছে?
-হ্যাঁ তা না হয় করলাম।কিন্তু তুই বলবিটা কী?
-আগে প্রমিস করো যে যা বলব তাই করবে
-আগে বলতো কী করতে হবে?
-না আগে প্রমিস করো
-আচ্ছা বাবা করলাম। এবার তো বল।
বিদিশা একটা রহস্যময়ী হাসি দিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আজকে সকালে আরফানের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।যেখানে সে সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে সেখানে আজ তাকে তার বন্ধুরা ঘুম থেকে উঠিয়েছে।ওর বন্ধুরা তো এটা নিয়ে একদম ওকে পচাচ্ছে।ওর এক ফ্রেন্ড আবিদ বলল
-কি মামা সারারাত ধরে ভাবির সাথে কি এমন কথা বলেছো যে ঘুমাও নি।
-আবিদ এসব কিছুই না।
রিয়াদ বলল-তাহলে আসল কাহিনীটা বলে ফেলো।
-দেখ তোরা যেটা ভাবছিস এমনটা কিছুই না।
-তাহলে যেটা সত্যি সেটা বল

ওর বন্ধুরা সবাই ওর ফোনের পাসওয়ার্ড জানে।রিয়াদ ফোনটা খুলে কল লগে গেল।সেখানে একটা আননোন নম্বরে তিনবার ফোন দেওয়া দেখে বলল
-আচ্ছা যা তোর কথা বিশ্বাস করলাম। এখন বলতো এই নম্বর টা কার?তুই তো আননোন কাউকে তোর ফোন দিয়ে কল করো না।

-আরে ওটা কেউ না তোরা যা ভাবছিস সব ভুল
-ঠিক আছে এখনই ফোন দিচ্ছি।প্রমাণ হয়ে যাক তাহলে।বলে ফোন দিল।পিয়াস এসেছিল ক্যামেরার বিষয়ে একটা কথা বলতে।ওকে ক্যামেরা এনে দিয়েছে কিন্তু কালারটা ওর পছন্দ হয় নি।এটা বলতেই এসেছিল।কিন্তু এসে যা শুনলো তাতে এ জনমে আর আরফানের সামনে যেতে পারবে না।কারণ ও যদি ফোন না দিত তাহলে আরফানকে ওর বন্ধুরা এভাবে হেনস্থা করতে পারত না।ও যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল।তবে আরফানের ভাগ্য ভালো বলতে হবে কারণ মিহু বদলে ফোনটা বিদিশা ধরল।

বিদিশা মিহুকে সকাল থেকেই সাজাতে লেগে গেছে।কারণ ও চায় আজকে যাতে সব থেকে সুন্দর মিহুকে লাগে।চোখটা অর্ধেক এঁকে একটু শুকাতে দিল। এমন সময় মিহুর ফোনে কল এল। বিদিশা ফোন ধরে বলল
-হ্যালো কে বলছেন?
রিয়াদ মেয়ে কন্ঠ শুনে বুঝেছে মিহুকে।তাই সিওর হতে জিজ্ঞেস করল
-আপনি কি তাসমীম মিহু?
বিদিশা বুঝেছে কোন ছেলে হয়তো মিহুকে ডিস্টার্ব করতে ফোন দিয়েছে।তাই বলল
-হ্যাঁ।বলুন তো কী চাই
রিয়াদ একটু শয়তানি করে বলল
-যদি বলি আপনাকে?

-ও হ্যালো আমার আজকে বিয়ে বুঝলেন?সো আপনি এবার রাখতে পারেন।ঠিক আছে
-আরে আরে রাখবেন না।শুনুন একটা কথা
-বলুন
-আসলে আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।তাই বলছিলাম কি আপনি তো আর ভালোবেসে বিয়ে করছেন না বা আপনার হবু বরের সাথে তেমন তো কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে যদি পালিয়ে আসতেন
-তোর ভালোবাসা আমি ঝাড়ু দিয়ে ছুটাবো বদমাশ।ফোন রাখ (ধমক দিয়ে )।আর একবার যদি ফোন দিস তাহলে তোকে পাতাল দেখিয়ে আনবো।

বলে ফোন কেটে দিল।বিদিশাকে এভাবে চিৎকার করতে দেখে মিহু জিজ্ঞেস করল
-কি হলো?এভাবে চিৎকার করে কার সাথে কথা বলছিস?
-আর বলো না আপু।কোন বদমাশ তোমাকে ফোন দিয়েছিল।বলে কিনা সে তোমাকে ভালোবাসে
-আরে কালকে রাতেও আমাকে ফোন দিছিল।শেষে ত্রিপল আট।ঐ নম্বরটা?
-হ্যাঁ হ্যাঁ ।দাঁড়াও ব্লক করে রাখি।

বলে ব্লক করে দিল।বেচারা বিদিশা জানলোই না কার নম্বর ব্লক করেছে।
তুলিকে বাসায় আনা হয়েছে।কিন্তু ও সবার সাথেই স্বাভাবিক ব্যবহার করছে।এমনকি মিহুর সাথেও ভালো ব্যবহার করছে।ব্যপারটা বিদিশার খটকা লেগেছে তাই মাহিনকে বিষয় টা জানালো।তবে এ পর্যন্ত কোনো গন্ডগোল হয়নি
বরযাত্রী এসে গেছে।কথাটি শুনেই বিদিশা দৌড় দিয়েছে।অন্য ভাইবোনেরাও গেট ধরতে গেছে।প্রমির আসতে একটু দেরী হয়েছে তাই ও নিজের বান্ধবী মিহুর কাছে না গিয়ে একেবারে গেটে চলে গেছে।সেখানে বসে গেটের টাকা নিয়ে দর কষাকষি হচ্ছে।বিদিশারা বিশ হাজার টাকা দাবি করেছে।যেহেতু দুইজন বর তাই টাকা ডাবল।পিয়াস ওদের কথা শুনে বলল

-বেয়ান সাবরা তাহলে তো প্রত্যেক খাবারের পদ দুইটা করে থাকতে হবে।যেমন ধরেন রোস্ট দুইটা চিংড়ি দুই পিছ।সব কিছুই দুই পিছ।
বিদিশা বলল-বেয়াই সাব আপনাদের পেটে যদি এত জায়গা থাকে তাহলে অবশ্যই দেওয়া হবে।আর সব থেকে বড় কথা হলো ইংরেজি ষাঁড় একটু বেশীই খায়।
পিয়াস বলল-কিন্তু জীনের বাদশা আপনার কাছে যে এত জীন আছে তাদের কাছ থেকে টাকা আনলেই তো হয়।তাহলে আপনি এখানে চাইছেন কেন?

প্রমি ওদের কথার মাঝে বলে উঠল-কিন্তু আমাদের আরেকজন দুলাভাই কই?তিনি আসেন নি?
পিয়াস বলল-তিনি এখানকার দূষিত বাতাস পরিষ্কার করতে বলেছেন। এখানের কোলাহল তার পছন্দ নয়।
-তা বললে তো হবে না।বরের টাকাটা দিতে হবে।এবং আমাদের তৈরি শরবত খেয়ে তারপর ঢুকতে হবে।
-আমি আপনাদের দুলাভাইদের বোন। আমি দিচ্ছি টাকা।তবে আমার বড় ভাইয়া এইসব শরবত খেতে পারবে না।মানে তিনি এসব রীতি পছন্দ করেন না।

গেটের গন্ডোগোল পেরিয়ে যাওয়ার সময় পিয়াস নীলুকে বলল-ভালো হলো সবুজ ড্রেস পড়েছেন।যদি সাদা ড্রেস পড়তেন তাহলে সত্যি সত্যিই জীন আপনাকে তাদের বাদশা বানিয়ে দিত
-আরে কালো ড্রেসে আপনাকে যা লাগছে না।একদম পারফেক্ট,কালো ষাঁড় হয়ে গেলেন।
বরের আসনে বসা নেহাল আর আরফান।নেহালের পাশে বসে পিয়াস ওকে খোঁচাচ্ছে আর বলছে

-ভাই শান্তির জীবন থেকে বিদায়ের শুভেচ্ছা।তোমার সাংসারিক জীবন যেন সুখের হয়
-মজা নিচ্ছিস?
-না মজা কই নিলাম?
-দেখবি তোর এই সুখের দিন বেশি থাকবে না।কারন সুখের পরে আসে দুঃখ।
এইদিকে আরফানকে ঘিরে আছে ওর বন্ধু বান্ধব।ফারিশ ওদের সাথে যাত্রা পথে এসেছে।ফারিশ বলল
-ভাই সেই তো বিয়ে করলিই শুধু সারাজীবন বিয়ের বিরুদ্ধে কথা বললি।আর তার জন্য আমি এখনো সিঙ্গেল।তোর এই বিয়েতে আমি আজকে মিঙ্গেল হবোই।

-ফারিশ এই বিয়েতে বলছিস কেন? আরফান কি আরো বিয়ে করেছিল নাকি?
এসব করতে করতেই সেই কাক্ষিত মুহূর্ত চলে আসে।প্রথমে নেহাল আর পিহুর বিয়ে পড়ানো হয়।নেহাল তো মুচকি হেসে কবুল বলে দিয়েছে।পিহুও একটু সময় নিয়ে কবুল বলে দিয়েছে।আরফানকে কবুল বলতে বলার সময় ও নীলুর দিকে একবার তাকালো।ওর হাসি মুখখানা দেখে কবুল বলে দিল।তবে মিহুর কবুল বলতে টাইম লেগেছিল।কারণ যে দুজন ছোট থেকে পাশে থেকেছে তারা কেউ ই পাশে নেই।দাদু তো কোথায় সেটা নিজেও জানেনা আর মাহিন ভাই ও নাই আসে পাশে।তারপরও বিদিশা প্রমি ফুফুর কথা শুনে কবুল বলে দিয়েছে।সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললো।

এবার এসে গেছে কন্যা বিদায়ের পালা।কবির সাহেব অনেক কান্না করে আবেগ দিয়ে কথা বলে নেহালের হাতে পিহুকে তুলে দিলেন
-বাবা আমার একমাত্র রাজকন্যাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। আমার কন্যাটাকে কষ্ট দিও না বাবা।
-আপনি দোয়া করবেন বাবা আমি যেন আপনার মেয়েকে সুখে রাখতে পারি।
মিহু আজকে একটা সাহসের কাজ করল।কবির সাহেবের সামনে গিয়ে বলল

-বাবা আমি জানিনা তুমি আমাকে কেন ঘৃণা কর।তবে আজকে মেয়ে হিসেবে একটা দোয়াই চাই তুমি যে কারণে আমায় ঘৃণা কর সেই কারণটা যেন একদিন আমার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে দাড়ায়।
কবির সাহেব চক্ষু লজ্জার ভয়ে কিছুই বললেন না।আরফান এতক্ষণ এইসব নাটক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল।কিন্তু হঠাৎ মিহুকে পড়ে যেতে দেখায় এগিয়ে গিয়ে ধরল।কবির সাহেব ধরতে চাইলে ও দৃঢ় গলায় বলল
-মিস তাসমীম মিহু এখন আমার মিসেস।তাই আশা করি তাকে ধরার অধিকার যে সে রাখে না।

বলে মিহুকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায়। সবাই গাড়িতে ওঠার পরে পিয়াস আর নীলুর খোঁজ পড়ল।নীলুকে পাওয়া যাচ্ছে না।কথাটি শুনে আরফানের বুক কেঁপে উঠল। আর এই কথাটি শুনে তুলি একটা হাসি দিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে স্টোর রুমের দরজা বন্ধ পাওয়া যায় ।সবাই এখানে বসে আছে তুলির চোখে আনন্দের ঝিলিক।কিন্তু তুলির চোখে সে আনন্দ বেশিক্ষণ টিকল না।কারণ কোথা থেকে পিয়াস এসে বলে তুলি স্টোর রুমেই আছে।তুলি মনে মনে বলে

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১০

-তাহলে ভেতরে কে আছে?
স্টোর রুমের দরজা খুলে নীলুকে দেখতে পাওয়া যায় ।তবে তার সাথে আরো একজনকে পাওয়া যায় ।যাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে আছে। আর সেই ব্যক্তি হলো
‘মাহিন”

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১২