হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৫

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৫
সাইয়ারা মম

এখন পরিবেশটা একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে নেহালের কাছে।কারণ ও ভেবেছিল নীলুকে দেখতে যাওয়ার সময়ে পিহুর সাথে দু একটা দুষ্টমি করবে কিন্তু এখন তাকে বিবাহিত হয়েও সিঙ্গেল ছেলেদের মতো থাকতে হচ্ছে।মিহু আর পিহু দুবোনে ঠিক করেছে তারা রিক্সায় যাবে।পিহু যখন এই আবদার করেছে তখন নেহাল অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিল পিহুর দিকে কিন্তু পিহু ওকে পাত্তা দেয় নি।দুবোন ড্যাঙ ড্যাঙ করে রিক্সায় উঠে চলে গেছে।আর নেহালের আসতে হচ্ছে একা একা।রিক্সায় উঠে নেহাল পোস্ট দিল

‘বিয়ের পরেও সিঙ্গেলদের মতো একা একা রিক্সাতে ঘুরতে হচ্ছে’
পোস্ট দেওয়ার সাথে সাথেই পিয়াস কমেন্ট করল
‘ভাই তোমার তো সাত কপাল।বিয়ের পরেও সিঙ্গেল। আর আমি তো জন্মগত সিঙ্গেল।’
নেহাল পিয়াসের কমেন্টে কোনো রিয়্যাক্ট করল না।কারণ এখন কিছু বললেই ওর ইমেজটা নষ্ট করে দিবে সবার সামনে।তবে পিয়াসের কমেন্টের সাথে সাথেই পিহু হতে মেসেজ আসল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘বউ set your nickname বিবাহিত সিঙ্গেল’
এরপর পিহু ডাটা অফ করে ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে।মিহু অন্যদিকে ফিরে ছিল।নিজের আপন বোনের সাথেও একটা জড়তা এসে গেছে।আসলেই সম্পর্কে দূরত্ব চলে আসলে সেখানে সম্পর্ক টা আগের মতো থাকে না।দু বোনের কেউ ই বুঝতে পারছে কীভাবে শুরু করবে।প্রথমে পিহু শুরু করল
-মিহু তোর কি মনে আছে সেই ক্লাস থ্রী এর কথা?যখন একদিন বাবা আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে যায় নি তখন রাস্তায় কয়েকটা কুকুর আমাকে আক্রমণ করেছিল?

-হ্যাঁ সেইদিন আমি স্কুলে যাই নি।কিন্তু চাচী আমাকে মারুফাদের বাসায় পাঠিয়েছিলেন তুলি আপুকে ডাকতে।তুলি আপু আর আমি যখন রাস্তায় তখন তোকে দেখেছিলাম কুকুরের ভয়ে রাস্তায় জড়োসড়ো হয়ে আছিস
-ঐদিন তো তুলি আপু ভয়ে কান্না করে দিয়েছিলেন।তিনি তখন ক্লাস সেভেনে পড়েন।রাস্তায় উপুড় হয়ে কুকুরগুলোকে বলেছিলেন কুকুর ভাই তোমার পায়ে পড়ি যেতে দাও।পরে তো ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।
-হুম সেইদিন যদি মাহিন ভাই সঠিক সময় না আসতেন তাহলে মনে হয় সবাই কুকুরের কামড় খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হতো।

ঘটনাটা বলার পরেই দুজনে চুপ হয়ে গেল কি বলবে কেউ ই ভেবে পায় না।দুজনেই ফরমালিটি দেখাচ্ছে।ফরমালিটি টা ভাঙতেই মনে হয় রিক্সাটা একটা ঝাকি দিল।মিহু পড়ে যেতেই পিহু ধরে ফেলল।এই হাতটাই তো এতদিন মিহু চেয়েছিল কিন্তু পায়নি।তারপরও মিহুর কাছে মনে হলো এতদিন পরে মনে হয় ও সত্যিই সুখের সন্ধান পেতে চলল।মিহু হঠাৎ করে কেঁদে দিল।মিহুকে থামাতে গিয়ে পিহুও কান্না করে দিল।

ওদের কান্না শুনে রিক্সাওয়ালা রিক্সা থামিয়ে হতভম্ব হয়ে বসল। ওদের রিক্সা থামাতে দেখে নেহাল ওর রিক্সা থামিয়ে দৌড়ে এই রিক্সার কাছে আসল।দুজনকে এত জিজ্ঞেস করল কেউ কিছু বলল না।কিছুক্ষণ পরে দুজনে কান্না থামিয়ে রিক্সাওয়ালাকে আবার যেতে বলল।কেউ কোনো কিছুই বুঝলো না।
নীলু এখন অনেকটাই সুস্থ।কিন্তু ডাক্তার বলেছে তারপরও সকাল পর্যন্ত থাকতে।পিয়াস আর নীলু বসে আড্ডা দিচ্ছিল।নীলু একটা আপেল নিয়ে কামড় দিবে তখনই দরজার দিকে তাকিয়ে

‘ভাবী’
বলে চিৎকার দিল। আর আপেলটা ছুড়ে ফেলল।বেড থেকে নেমে দৌড়ে মিহুকে জড়িয়ে ধরল।তা দেখে পিহু বলল
-নীলু আমি কিন্তু রাগ করেছি।শুধু এক ভাবীকে জড়িয়ে ধরলেই হবে?
মিহুকে ছাড়িয়ে পিহুকে জড়িয়ে ধরে বলল
-কে বলেছে শুধু বড় ভাবীকেই জড়িয়ে ধরব? এই নাও তোমাকেও জড়িয়ে ধরলাম।কিন্তু ভাবি তোমার রাগতো আমি ভাঙাবো না।যে ভাঙাবে সে কই হ্যাঁ?
পিহু লজ্জা পেল।তারপর বলল

-ও পেছনে পড়েছে।আচ্ছা দাঁড়াও ফোন দিচ্ছি।
বলে পিহু ফোন দিল কিন্তু নেহাল ফোন রিসিভ করল না।আরো দুইবার ফোন দেওয়ার পরেও ধরল না।
-মনে হয় ব্যস্ত আছে।
পিহু কথাটি বলে অন্য দিকে তাকাতেই দেখলো পিয়াস এক হাতে ফোন আর অপর হাতে একটা আপেল ধরে আছে।কিছুক্ষণ আপেল এর দিকে তাকায় আবার কিছুক্ষণ ফোনের দিকে।পিয়াসের এমন অবস্থা দেখে পিহু জিজ্ঞেস করল
-পিয়াস কি হয়েছে?
পিহু মিহু কে দেখে অবাক হয়ে পিয়াস জিজ্ঞেস করল

-তোমরা কখন আসলে ভাবী?
-এইত কিছুক্ষণ আগে।কেন তুমি খেয়াল করো নি?আচ্ছা যাক,এক হাতে ফোন আর এক হাতে আপেল নিয়ে কি দেখছো?
-বুঝলে ভাবী আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে নীলুর সাথে কথা বলছিলাম।কীভাবে যেন উড়ন্ত একটা আপেল এসে আমার ফোনের ওপরে পড়ল আর ফোনটা পড়ে গিয়ে ডিসপ্লে ভেঙে গেছে।
পিয়াসের কথা শুনে নীলু মিটমিটিয়ে হাসল।তারপর বলল

-ভাই হয়তো তুমি ভবিষ্যতের নিউটন। পুরোনো নিউটনের মাথায় আপেল পড়ে কয়েকটা সূত্র আবিষ্কার হয়েছিল আর এখন হয়তো তোমার ফোনের ওপর পড়ে নতুন কিছু আবিষ্কার হবে।আচ্ছা ভাই যা কিছুই আবিষ্কার করো না কেন একটু সহজ করো যাতে ভবিষ্যতের বাচ্চাদের গালি না খেতে হয়।
এমন সময় পিহুর নম্বরে আননোন থেকে ফোন আসল।প্রথমে পিহু ধরেনি।দ্বিতীয়বারে ফোনটা ধরল
-হ্যালো কে বলছেন?
-পিহু আমি নেহাল

-তোমার ফোনের কি হয়েছে?আর এইটা কার নম্বর থেকে ফোন দিয়েছো?
-আমার ফোন আর টাকা হারিয়ে গেছে।
-কীভাবে?
নেহাল শুকনো মুখে বলল-তোমরা যখন রাস্তায় বসে কান্না করছিলে তখন রিক্সায় মোবাইল আর মানিব্যাগ রেখে আসছিলাম পরে তোমরা যাওয়ার পরে গিয়ে দেখি রিক্সা উধাও।আর আমার কাছে ফোন টাকা কিছু নেই।তুমি একটু শপিং মলের কাছে আসতে পারো।আমি এখান থেকে যেতে পারছি না।

পিহু হাসতে হাসতে বলল-আমার মনে হয় রিক্সায় তুমি থাকলে তোমাকেও নিয়ে যেতো।আচ্ছা,,,,,,,,তুমি একটা রিক্সা করে চলে আসো এখানে।ভাড়া এখান থেকে দিবে বলে উঠে আসো।
-না তুমি একটু এখানে আসো।কাজ আছে
-আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আসছি

পিহু ফোন কেটে সবাইকে সব বলল।তারপর বেরিয়ে গেল শপিংমলের উদ্দেশ্যে।মিহু পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল
-ভাইয়া আপনিও এখন বাসায় যান। আপনাকে দেখে ক্লান্ত লাগছে।আমি আছি নীলুর সাথে
-না ভাবী আরফান ভাই আমাকে ভর্তা বানিয়ে দেবে।আর তাছাড়াও কালকে সকালে তো চলেই যাবো।এখন গিয়ে কোনো লাভ নাই।

-না ভাইয়া আপনি এখন বাসায় যান। উনি কিছু বলবেন না।আর আমি আছিতো নীলুর সাথে।আমি সকাল পর্যন্তই থাকবো।
-না না।আরফান ভাই অনুমতি না দিলে যাবো না।আর বড় মা যদি জানে তার ছেলের বৌকে আমি হাসপাতালে রেখে এসেছি তাহলে আমাকে চিরতরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবে।
-আপনি মনে হয় ভাবছেন আমি নীলুর ভালোমতো দেখাশোনা করতে পারব না।
-না না ভাবি ।একথা কখন বললাম
-তাহলে বাসায় যান
-কিন্তু

-কোনো কিন্তু নাই আপনি চলে যান।
মিহুর কথায় পিয়াস চলে গেল। আসলে ও একটু চাইছিল ফ্রেশ হতে কিন্তু এখানে কে থাকবে ভেবে যায় নি।মিহুকে এখানে থাকতে দেওয়াটা কেমন দেখায় তাই যেতে চাইছিল না।তারপরও মিহুর জোরাজুরিতে চলে গেল আর ওর মনটাও একটু বাসায় যেতে চাইছিল।
পিয়াস চলে যাওয়ার পরে নীলু মিহুকে নিয়ে বেডে বসল।তারপর মিহুকে বলল
-বড় ভাবী তোমাকে কয়েকটা কথা বলার ছিল। এখন সুযোগ পেয়েছি তাই বলে রাখছি।
-হ্যাঁ বলো।

-ভাবী আমি জানিনা অতীতে কি হয়েছিল বা কি ঘটেছিল ।কিন্তু আমি আঁচ করতে পেরেছি যে অতীতে এমন কিছু ঘটেছে যার ফলে আমি মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ি।আমার কথা বাদ দাও তুমি আরফান ভাইয়ের কথা বলো।তাকে কি তোমার স্বাভাবিক মনে হয়?
-হ্যাঁ স্বাভাবিক ই তো।

-না ভাইয়া স্বাভাবিক না।এমনকি তিনি স্বাভাবিক ভাবে জীবনটাকে উপভোগ করছেন না।আমি জানি তোমাকে প্রথম প্রথম বলাটা ঠিক হবে না।কিন্তু আমি এখনই তোমাকে এটা জানিয়ে রাখতে চাই যে আমি চাই তুমি আমার ভাইয়ের জীবনটাকে ঝলমলে করে দাও।তাকে একটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সাহায্য করো।আমি জানি এইটা একমাত্র তুমিই পারবে।
আরফান তার অফিসের কেমিক্যাল ল্যাবে গেল। আজকে যে প্রডাক্ট গুলো এনেছে সবগুলোই কেমিক্যাল।ফারিশ আগে থেকেই ল্যাবে ছিল।সবগুলো কেমিক্যাল থেকে একটু একটু স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগল।ফারিশ আরফানকে বলল
-আরফান আমার তো মনে হয় সবগুলোই ঠিক ঠাক আছে।তবুও তুই একটু রিপোর্ট টা চেক করে দেখ
আরফান ফারিশকে বলল-তুই যেখানে বলেছিস সব ঠিক আছে তাহলে সব ঠিকই আছে।তোকে অবিশ্বাস করার কোনো অপশন ই নাই।

-ভাই এত বিশ্বাস করিস না।কবে দেখবি বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে চলে গেছি টের পাবি না।
-সেটা হওয়ার হলে অনেক আগেই হতো।
এমন সময় অফিসে পিয়ন এসে বলল
-স্যার আপনাকে একজনে এই চিঠিখানা দিয়ে গিয়েছে।বলেছে আপনাকে দিতে।আর এটা সাথে সাথেই পড়তে বলেছে।
আরফান চিঠিটা নিয়ে দেখল বেশ আহামরি কিছু না।চিঠিটা একটা সাধারণ খামের মধ্যেই দেওয়া।ফারিশ বলল
-হয়ত সাধারণের ভেতরে অসাধারণ কিছু।যা খুলে দেখ
আরফান নিজের কেবিনে এলো।এসে তার চেয়ারে বসে পড়ল। তারপর খামটা খুলে চিঠিটা বের করল।সেখানে লেখা ছিল কিছুটা এরকম

“জনাব আরফান আদিত্য,
আমি আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী বলছি।একেবারে আপনার না আমি আসলে মিহুর শুভাকাঙ্ক্ষী।তবে যেহেতু আপনি মিহুর জীবনে জড়িয়ে আছেন তাই আপনাকেই বলতে হচ্ছে। আমি আমার পরিচয় কিছুই এখানে লেখার মাধ্যমে দিতে রাজি নই।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৪

কারণ কোনো প্রুভ থেকে যাক সেটা আমি চাইছি না।আর বেশি কথা এখানেও লিখব না।শুধু বলছি আপনার কিছু জরুরী ইনফরমেশন জানা প্রয়োজন। আপনি (………..) রেস্টুরেন্টে আগামী দিন বিকেল চারটার সময়ে আমার সাথে দেখা করবেন। আর এটাকে নিছক কোনো বিষয় ভেবে উড়িয়ে দেবেন না।
ইতি
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৬