হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৪

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৪
সাইয়ারা মম

আরফান সকাল সকাল চলে আসলো বাড়িতে।এসেই কোনো দিকে না তাকিয়ে চলে গেল বাথরুমে।তার আজকে জগিং করা হলো না।অফিসে যেতে হবে,প্রচুর চাপ পড়েছে।তার প্রডাক্ট তৈরি করার জন্য আজকে মাল আসার কথা।সেগুলো ঠিকঠাক এসেছে কিনা ,ঠিক মতো রাখা হলো কিনা সব দেখতে হবে।গোসল করার পরে সে বেলী ফুলের গাছটা নিয়ে চলে গেল তার বাগানে।কিন্তু বাগানে গিয়ে দেখলো এক অপূর্ব দৃশ্য।

মিহু সকাল বেলা নামাজ পড়ে আর ঘুমায় নি।সে বেলকনির দরজা খুলে দেখল এটা একটা মিনি ছাদ। ছাদে ঘুর ঘুর করে একটু কর্ণারে যেতেই দেখতে পেল ফুলের বাগান। এত দুঃখের মাঝেও যেন কোথায় একটা সুখের অনুভূতি হচ্ছে । এত গুলো ফুল দেখে মিহু তার খোঁপা খুলে দিল।তার লম্বা সিল্কি চুলগুলো ছড়িয়ে পড়ল।তারপর সে কয়েকটা লাল গোলাপ তার কানে গুজল।কতক্ষণ এভাবে সারা বাগান ঘুরল আর সব ফুল গুলোতে তার হাতের ছোঁয়া দিল।কিছুক্ষণ পরে সে গোলাপগুলো মুখে নিয়ে চুলগুলো খোপা করতে লাগল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঠিক এই সময়ে আরফানের আগমন ঘটল।মিহুকে এভাবে দেখে আরফানের চোখ জুড়িয়ে গেল।মিহু চুলগুলো খোপা করে গোলাপ গুলো খোপায় দিতে চাইল।কিন্তু কোনোভাবেই দিতে পারছে।শেষে অতিষ্ঠ হয়ে ফুলগুলো ফেলে দিল। আরফান ছাদে বসে এসব দেখছিল কিন্তু মিহু আরফানকে খেয়াল করল না। আরফান ছাদ থেকে নেমে মাটিতে পরা ফুলগুলো তুলে নিল।তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মিহুর নিকটে।
মিহু মনটা খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।তখনই হঠাৎ গম্ভীর কারো কথা শুনে বুকটা কেঁপে উঠে।কেউ খোঁপায় কিছু করছে।

-কোনো কিছু না পারলে একদম হাল ছেড়ে দিতে নেই।একটু বিরতি নেওয়া যায় কিন্তু একদম ছুটি না।
মিহু দ্রুত পেছন ঘুরল।ঘুরে আরফানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। আরফানকে যে দেখেনি এমন না।বিদিশা একবার আরফানের ছবি দেখিয়ে ছিল।তাই চিনতে কোন অসুবিধা হয় নি।কিন্তু হঠাৎ সামনে থেকে দেখে একটু থমকে গেল। আরফান ও মিহুকে আগে দেখেছে কিন্তু বাস্তবে দেখে আরফান ও একটু থমকে গেছে।মিহু খেয়াল আসতেই সে ঘোমটা দিল মাথায়। তারপর চলে যেতে চাইলে আরফান বলে

-মিহু আমার আপনার সাথে কয়েকটি কথা ছিল। আপনি কি এখন শুনতে পারবেন?
-জ্বী বলুন।
-তাহলে আপনি দোলনায় বসুন আর আমি বেলী গাছটা লাগাচ্ছি।এক সাথে কথা বলাও হয়ে যাবে।
মিহু দোলনায় বসে বসে আরফানকে পরোখ করতে লাগল আর আরফান গাছটা লাগাতে লাগাতে বলতে লাগল
-কিছু কথা আগেই বলে দিচ্ছি।আমি চাচ্ছি না আপনি কষ্ট পান।

শুনুন বিয়ে টিয়ে করার আমার কোনো ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু আমার বোনকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।বলতে গেলে ওই আমার প্রাণ। আমার বোন আবদার করেছে আপনাকে বিয়ে করতে হবে।এজন্য আমি আপনাকে বিয়ে করেছি।তাই বলে এটা ভাববেন না যে আপনি ফেলনা কিছু।যেহেতু আপনাকে বিয়ে করেছি সেহেতু আপনার কোনো অমর্যাদা হতে দেবো না।তবে একটা কথা আমি আপনাকে এখনই স্ত্রীর অধিকার দিতে পারব না এবং আদৌ পারব কিনা জানি না।আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।আপনি কী শুনছেন?

-হ্যাঁ
-তাহলে আপনার কিছু বলার আছে?
-হুম
-বলে ফেলুন সমস্যা নেই।
-আচ্ছা নীলু কেমন আছে?
আরফান ফুল গাছটাকে মাটিতে সবেমাত্র পুঁতবে।তখনই মিহুর এমন কথা শুনে একটু অবাক সাথ একটু আশাহত ও হলো।মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল

-আপনি মনে হয় ব্যাপারটিকে সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছেন না।আমি আসলে চাচ্ছি না এ বিষয় টা নিয়ে পরে কোনো ঝামেলা হোক।তাই এখনই সবটা ক্লিয়ার করতে চাইছি।
-আপনি যেমন করে চাইছেন তেমনটাই হবে।কারণ আমার নিজের ও বিয়ের প্রস্তুতি ছিল না।বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল।তাই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার তেমন কোনো সমস্যা নেই।
-আচ্ছা তাহলে আপনি হঠাৎ করে বিয়েতে রাজি হলেন কেন? আপনিতো চেনেনও না আমাকে।
মিহু কি করবে ভেবে পায় না।সে কি তার অতীতের কথা বলবে?নাকি কিছুই বলবে না।এসব বললে তিনি যদি কিছু মনে করেন?
মিহুকে কিছু বলতে না দেখে আরফান বলল

-আপনার যদি বলতে কোনো সমস্যা হয় তাহলে বলার প্রয়োজন নেই।এখন আপাতত আপনি এটা ডিসাইড করুন যে আমার শর্তে আপনার কোনো প্রবলেম হবে কিনা? আপনি লাগলে সময় নিন।
মিহু একটু মুচকি হাসলো।তারপর বলল- এই বিষয়টা আপনার বিয়ের আগে বলা উচিত ছিল বিয়ের পরে এসে আমাকে সহস্র বছর সময় দিলেও আমি আপনার সব শর্তে রাজি।কারণ বাঙালি নারিরা এক সংসারেই নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চায় হোক সেটা ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী।
বলে মিহু আস্তে আস্তে চলে গেল। আরফান মিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল

-আমি কি আসলেই মেয়েটার জীবন নষ্ট করলাম নাকি?আমার কি বিয়ের আগেই বিষয়টা ক্লিয়ার করা উচিত ছিল। নিজের বিষয়টা প্রধাণ্য দিতে গিয়ে আবার মিহুর জীবনটাকে বিপদে ফেলল না তো?
পিয়াস নীলুর বেডের পাশে সোফায় বসে ঘুমিয়ে ছিল।রাতে ওর ভালো করে ঘুম হয় নি।হাসপাতালে তো ওর কখনো ঘুমই আসতে চায় না।তবুও একটু ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক তখনই ওর মনে হলো কে যেন বলছে
ঐ ইংরেজী ষাড় ঘুম দিয়ে উঠে যা নইলে তোর ঘাড়ে চেপে একদম ঘড়িতে বাজাব।না হলে সুস্থ হবি না।

পিয়াস এসব অদ্ভুত কথা শুনে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে গেল।ঘুমানোর আগেও এটা হাসপাতাল ছিল আর ঘুম থেকে উঠার পরেও এটা হাসপাতাল শুধু পার্থক্য হলো আগে ছিল নির্জন নিরালা আর এখন হলো মাছবাজার।কারণ বাসার সব গুষ্টিশুদ্ধ এসেছে নীলুকে দেখতে।পিয়াস একটা বাচ্চা কে ডেকে জিজ্ঞেস করল

-এই একটু আগে কি কেউ আমাকে ঘুম থেকে উঠতে বলেছিল?
-হুম
-কে?
-একটা আপু
-কি বলেছিল?
-বলেছিল এই ইংরেজি ষাঁড় ঘুম থেকে উঠুন।নইলে ঘাড়ে ইন্জেকশান দিয়ে দেবো।
-আর কিছু বলেছে
-না
-যা তাহলে

পিয়াস হতভম্ব হয়ে আছে।নিশ্চয় বিদিশা এসেছিল।কিন্তু ও তো ঐসব কথা বলেনি।তাহলে কে বলেছে?
আসলে একটু আগে হয়েছিল কি রেবেকা নীলুকে বলেছিল ‘দেখেছো ঘড়িয়ে কয়টা বাজে এখনও যদি খাবার না খেয়ে থাকো তাহলে সুস্থ হবে না।’আর সবার কথা জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ঘুমের মধ্যে শুনেছে পিয়াস যেটা এখন পর্যন্ত সে বুঝতে পারছে না।উঠে সে ওয়াশরুমে গেল
রেবেকা নীলুর হাত ধরে বলল

-সুস্থ হয়ে যাও তাড়াতাড়ি।মামণি কষ্ট পাচ্ছে তো
-মামণি আমি তো সুস্থ ই আছি।একটু দুর্বল আর কিছুই না।আচ্ছা ভাবিরা কেউ আসেনি?
-আসলে বুঝলে বাড়িতে তো অনেক মেহমান। এখন সেখান থেকে ওদের নিয়ে আসলে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?তাই আসেনি
-ওওও
বলে মন খারাপ করে ফেলল নীলু।নীলুর মন খারাপ করা দেখে রেবেকা বললেন

-কিন্তু অন্য আরেক জন এসেছে।গেজ করো তো কে?
-কে মামণি
-ভেতরে আসো তুমি
বিদিশা নীলুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এতক্ষণ লুকিয়ে ছিল। বাসা থেকে কয়েকটা বাচ্চা এসেছে ওদের সাথে। সেই বাচ্চা দের নিয়ে বাইরে ছিল।রেবেকার ডাক শুনে দৌড়ে ভেতরে গেল।ঠিক তখনই পিয়াস বাথরুম থেকে বের হলো।বাথরুম ছিল দরজার পাশে।ও বাথরুম থেকে বের হতেই শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
-ও বাবাগো আমার কোমড়টা গেছে মনে হয় । নীলুরে এখন তোর সাথেই মনে হয় হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।কিন্তু এখানে উড়ন্ত খাম্বা এলো কীভাবে

-এই মিস্টার ইংরেজী ষাঁড় চোখ খুলে ভালোভাবে দেখে কথা বলুন। এখানে কোনো খাম্বা নেই আমি আছি। আমি হলাম বিদিশা
-ও জীনের বাদশা,এই জন্যই তো বলি এতো শক্তি অন্য কেউ কোথায় পাবে?
-আহ পিয়াস কি শুরু করলি কি?ফ্লোরে বসার নিয়ত ই করছো নাকি
রেবেকার ধমকে দুজনেই চুপ করে গেল।বিদিশা নীলুর কাছে গিয়ে বলল-দেখলে কেমন সারপ্রাইজ দিলাম
-হুম আমি খুব সারপ্রাইজড হয়েছি
-তুমি কি আমাকে এই বিষয়টা নিয়ে পচাচ্ছো?

-না না তোমাকে পচাতে যাব কোন দুঃখে?তুমি হলে আমার দুই ভাইয়ের শালিকা আমি কি সেখানে কিছু বলতে পারি?তুমি তো একটা শালিক পাখি
-যাও নীলু তোমার সাথে কথা বলব না।
-আরে না না রাগ করে না।

এভাবেই দুজনে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে।নীলুকে হাসি মুখে দেখে রেবেকা খুব খুশি হলো।পিয়াসকে আরফান ফোন দিলে নীলুর অবস্থা সম্পর্কে জানায়। আরফান ফোনটা কেটে তার অফিসে আসা প্যাকেট গুলোর হিসাব মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আজকে প্রায় মেহমানরাই নেহালদের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।পিয়াসের মাও তাদের বাড়িতে গিয়েছে।যেহেতু রিসিপশান এখন করা হবে না তাই বিকের মধ্যেই বাড়ি খালি হয়ে গেল।বাড়িতে মানুষ বলতে নেহাল,রেবেকা পিহু,মিহু।নেহাল আর পিহু রেডি হয়ে বাইরে যাচ্ছিল তখন রেবেকা সোফায় বসে চা খাচ্ছিল।জিজ্ঞেস করলেন

-কোথায় যাচ্ছ?
-মা নীলুকে দেখতে যাচ্ছি।
-মিহুকেও তাহলে সাথে নিয়ে যাও।
-আচ্ছা।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৩

পিহু মিহুকে ডাকতে ওর রুমে গেল।গিয়ে দরজা নক করল।মিহু ভেতরে আসতে বলল।কিন্তু পিহুকে দেখে মিহু একটু অবাক হলো।ও বাড়িতে থাকতে পিহু আর মিহুর তেমন একটা কথা হতো না।কারণ পিহু যদি মিহুর সাথে কথা বলে তাহলে তার প্রভাবটা মিহুর ওপরেই পড়ে যেটা ভেবে পিহু তেমন একটা কথা বলতো না মিহুর সাথে।কিন্তু এখন তো মিহুর সাথে কথা বলতে সমস্যা নেই।দুজনেই একটু আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ল।পিহু ওকে জিজ্ঞেস করল
-নীলুকে দেখতে যাবি মিহু

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৫