হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৭

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৭
সাইয়ারা মম

সকালের এই নির্ভেজাল পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করবে।রাতে বৃষ্টি হওয়ার দরুণ সব রাস্তা ভেজা রয়েছে।প্রকৃতি যেন নতুন করে সেজেছে।তাদের মধ্যে এসেছে সজীবতা।আলো ফোটার সাথে সাথেই মিহুরা বেরিয়ে পড়েছে।জব্বার রিক্সা চালাতে লাগল।মিহু মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখতে লাগল আরেক জন মুগ্ধ হয়ে মিহুকে দেখতে লাগল।মিহু এমনিতেও সকালেই উঠতো কিন্তু মাথার মধ্যে মানসিক চাপ থাকলে প্রকৃতির সৌন্দর্য সেখানে চোখে পড়ে না। বর্তমানে মিহুর মধ্যে কোনো চাপ নেই তাই সে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারছে।জনভানব শূণ্য রোডে রিক্সা চলছে শা শা করে।মিহু আরফানকে হাতের ইশারা করে কত গুলো পাখি দেখালো । আরফান সেদিকে তাকিয়ে বলে

-পাখি কি ভালোলাগে?
-অনেক ভালো লাগে
কিছুক্ষণ পরে রিক্সা এসে থামলো সেই জায়গায় । যেখান থেকে ওরা রিক্সায় উঠেছিল । ওদের গাড়িটাও ওখানেই ছিল । আরফান নেমে গিয়ে গাড়ি থেকে কিছু বের করল তারপর জব্বার কে দিয়ে বলল
– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কালকে আমাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য । এইটা আমাদের থেকে ছোট্ট একটা উপহার
জব্বার জিনিস টা হাতে নিয়ে দেখে একটা কার্ড । কিন্তু কার্ডটা কিসের তা বুঝতে পারে না । তাই জিজ্ঞেস করে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-স্যার কার্ড ডা কিসের?
– আপনি আমার অফিসে গিয়ে এই কার্ডটা দেখালে আপনার যা প্রয়োজন তা তারা দিয়ে দেবে । এই যেমন ধরুন আপনার আর্জেন্ট কোনো জিনিস প্রয়োজন সেটা ঐ জায়গায় গিয়ে চাইলেই দিয়ে দেবে ।
-স্যার আমার তো এডার প্রয়োজন নাই । আমরা গরিব মানুষ , আমরাই তো প্রয়োজনের সোমায় জিনিস পামু না । আমরা যদি হেইয়ার বিপরীত হই তাইলে তো আমরা আর গরিব থাকমু না । এইডা আপনেই নিয়ে যান ।
আরফান বুঝলো জব্বার আর যতই হোক অনেক আত্ম সম্মানীয় । কারো কাছ থেকে চেয়ে খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে থাকাটাই তার কাছে প্রিয় । আরফান মুচকি হাসলো তারপর জব্বার কে উদ্দেশ্য করে বলল

– আপনার প্রয়োজন না হলেও রেখে দেন । ওটা দিয়ে আপনার যা খুশি তাই করেন । আপনি না রাখলে আমার খুব খারাপ লাগবে । আরফানের কথায় বাধ্য হয়েই জব্বার কার্ড টি রেখে দিল।
আরফান ড্রাইভিং সিটে বসে দেখলো মিহু তার মায়ের ডায়েরির বক্স টি জড়িয়ে আছে । আরফানের দিকে তাকিয়ে বলল
– বুঝলেন আমার কেনো যেন মনে হয় মায়ের এই ডায়েরি টা আগের মতো নেই । আগে এটা ধরলেই একটা কেমন অনুভূতি আসতো কিন্তু এখন মনে কেন যেন অনুভূতি টা আসে না।

আরফান কিছু বলল না শুধু মিহুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । মিহু ঠিকই ধরেছে বক্সের ভেতরে আসল ডায়েরি টি নেই । আর যার কাছে এত বছর ধরে ডায়েরি টি ছিল সে নিশ্চয়ই ডায়েরি চিনতে ভূল করবে না! কিন্তু আরফানের মাথায় একটা বিষয় আসলো যে মিহু পরে এই বিষয় নিয়ে ভূল বুঝবে নাতো ? তারপর আবার নিজেই বলল – ও তো ডায়েরি টা পড়েই আবার মিহুর কাছে রেখে দিবে তাতে কোনো সমস্যা হবে না।

পিহু সকাল বেলা খুব লজ্জিত বোধ করল । পিহুর ভাই এসেছে আর সেটা পিহু জানতো কিন্তু তারপরেও পিহু ঘুমিয়ে গেলো । মাহিনকে বলল
-ভাইয়া তুমি রাগ করো না । আমি আসলে বুঝতে পারি নি । ঠান্ডার কারণে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই আর খেয়াল করতে পারি নি ।
– আরে না না সমস্যা নেই । আমি জানি তো তোর ও ঠান্ডায় সমস্যা আছে । এখন আমাকে যেতে হবে । আচ্ছা নীলু কোথায়?

-নীলু মেবি ঘুমিয়ে আছে । কেন কিছু বলবে?
-না মানে কালকে আমাকে সাহায্য করার জন্য একটু ধন্যবাদ জানাতাম । কিন্তু ঠিক আছে , পরে জানিয়ে দেবো । আমি এখন উঠি

বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাহিন একবার চারদিকে ব্যর্থ নজর বুলালো নীলুকে দেখতে পাওয়ার আশায় কিন্তু দেখতে পেল না তাই রওনা দিল । এদিকে লুকিয়ে নীলু সব কিছুই শুনছিল ওর খুব লজ্জা লাগে মাহিনের সামনে যেতে । কেন যেন ও মাহিনের দিকে তাকাতেই পারে না । নীলু দৌড়ে ওর রুমে গেল । তারপর বেলকনি থেকে তাকিয়ে দেখল মাহিন চলে যাচ্ছে । মাহিন কি মনে করে এদিকে তাকাতেই নীলু লুকিয়ে পড়ে । মাহিন আবার সামনে চলতে থাকে । ঠিক তখনই একটা গাড়ি মাহির পাশ দিয়ে ঢোকে । মাহিন সেদিকে না তাকিয়ে চলে যায় ।

মিহু গাড়ি থেকে নেমে চলে যায় নিজের ঘরে । আরফান মিহু নামার পরে ওর সিটের নিচ থেকে একটা বক্স বের করে । এটার মধ্যে আসল ডায়েরি টা রেখেছিল । অনেকক্ষণ বক্স এর দিকে তাকিয়ে থেকে বক্স টা খুলতেই ওর চোখ জুড়ে বিস্ময় নেমে এলো । বক্স টি ভালো করে দেখল এমন কি সারা গাড়ি ভালো করে খুঁজে দেখল কোথাও ডায়েরি টা নেই । আরফানের মাথা হ্যাং হয়ে গেল । কে নিতে পারে এই ডায়েরি ?

পিয়াস আজকে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছে কারণ ওর দেওয়া ছবি গুলো সেলেক্ট করা হয়েছে । আজকে বিডিতে বসেই একজনের সাথে সাক্ষাত করতে হবে । তার সাথে কথা বলে বিডিতেই সাতদিনের একটা প্রতিযোগিতা হবে । সেখান থেকে যে প্রথম হবে তাকে কানাডার জন্য সিলেক্ট করা হবে । সে বিডির প্রতিনিধিত্ব করবে । পিয়াস এই কথা ওর বাবাকে জানিয়ে ছিল কিন্তু তিনি সোজা না বলে দিয়েছেন ।

বলেছেন ওর যদি এতোই শখ থাকে তাহলে যেন ঘর থেকে বের হয়ে যায় । তার এমন অকর্মণ্যের দরকার নেই । পিয়াস সেটা শুনেই বের হয়ে গিয়েছে । কিন্তু অনেক দূরে আসার পরে পিয়াসের খেয়াল এলো ও টাকা পয়সা বলতে কিছুই আনে নি । ওর তো এখন আপাতত পাঁচ হাজার টাকা লাগবে । সেটা পাবে কোথায়? আরফানের অফিসের একটা কার্ড আছে কিন্তু আরফান ওকে সেটা খুব বড় বিপদ না হলে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে । তাই প্রথমেই আরফানের কথা বাদ । এখন হাতে আছে নেহাল আর নীলু । নীলুর কথাও বাদ কারণ নীলুর কাছে তো টাকা থাকার কথা না । তাই নেহালকে ফোন দিল ।

– হ্যাঁ পিয়াস বল ।
– ভাই আমাকে আর্জেন্ট পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে পারো ? আমার এখনি লাগবে ।
-আচ্ছা দিচ্ছি কিন্তু এখন টাকা দিয়ে কী করবি ?
– আমি বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি ।
– কিন্তু কেন?

– ফটোগ্রাফির প্রতিযোগিতার কথা বাবাকে বলেছিলাম কিন্তু তিনি না করে দিয়েছেন । আর বলেছেন যদি এতি শখ থাকে তাহলে যেন বাসা থেকে বের হয়ে যাই ।
– ঠিক আছে দিচ্ছি । কিন্তু সাবধানে থাকিস , আর ফোন দিয়ে আপডেট জানাস
-থ্যাংকস ভাই
– ধুর এই সামান্য কিছুর জন্য থ্যাংকস লাগে না । আর শোন বেস্ট অফ লাক

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৬

পিয়াস ফোনটা কেটে দিল । আনন্দে ওর চোখে পানি চিক চিক করছে । ওর এখন খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে যে মা দেখো । তুমি বলেছিলে বিপদে পড়লে কেউ সাহায্য করবে না কিন্তু তোমার কথা ভুল । সব সময় মায়েরা ঠিক হয় না ।
কিন্তু সব সময় যে মায়ের কথা ভুল এটাও কিন্তু না । কারণ মায়েরা আগেই এই পরিস্থিতিতে পড়ে এসেছে । তারা তাই চায় তাদের সন্তানরা যেন এই পরিস্থিতিতে না পড়ে । কিন্তু সন্তানেরা তা বোঝে না ।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৮