কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৭

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৭
লাবণ্য ইয়াসমিন

গভীর রাত পশ্চিম আকাশে চাঁদ ঢুলুঢুলু করছে কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো ডুবে যাবে। পাহাড়ের উপরে গাছগুলো বরফের জন্য সাদা হয়ে আছে। তাবুতে ঘুমিয়ে আছে কহিনুর। ঘন নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আপাতত কোনো আওয়াজ নেই। তাবুর ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে কহিনুরের মুখের উপরে এসে পড়েছে। আজ পূর্ণিমা না হয়তো আগামীকাল তবুও চাঁদের এমন পূর্ণ আলোতে কহিনুরের মুখটা বড্ড মোহনীয় লাগছে।

দূরে অর্ধেক পুড়ে যাওয়া ছোট ছোট কাঠের টুকরো থেকে ধোয়া উড়ছে। ঘুমানোর আগে ক্যাম্প ফ্যায়ার বানানো হয়েছিলো। সবাই উঠে গেছে কিন্তু চিহ্ন রয়ে গেছে। দূরের একটা তাবুতে মিটিমিটি আলো জ্বলছে। হাড় কাপানো শীত। নিস্তব্ধ ধরণী কোথাও কেউ নেই এমনটা নয়। যখন রাত নামে ধরণীর বুকে মানব সম্প্রদায়ের লোকেরা ঘুমিয়ে যায় ঠিক তখনই শয়তা/নের রাজত্ব শুরু হয়ে যায়। ওরা জেগে উঠে। আজও ঠিক তেমনি হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাবুর কাছাকাছি কয়েকজোড়া চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ওদের উদ্দেশ্য কি বোঝা কঠিন। একজোড়া চোখ ক্রমান্বয়ে চলতে চলতে কহিনুরের মুখের উপরে এসে থামলো। এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে কিছু একটা ভেবে থা/বা বসাতে ডান পা তুলতেই কহিনুর চোখ মেলে চাইলো। দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। কহিনুরের পুরোপুরি ঘুম ভাঙেনি। কিছু বুঝে উঠার আগেই থা/প্পড় বসিয়ে দিলো অগন্তুকের মুখে।

লোমশপূর্ণ সুচালু মুখটাতে থাবা বসিয়ে বিশেষ সুবিধা হলোনা। বরং নিজের কোমল হাতটা আঘাত পেলো। কহিনুর দ্রুত উঠে বসলো। উঁকিঝুঁকি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো। চাঁদের আলোতে পাহাড়ের কিনারে কয়েক জোড়া চোখ দেখে ও থমকে গেলো। ভয়ে শরীর কেঁপে উঠলো। আবছা আলোর জন্য প্রাণীদের শরীরের আকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। কহিনুর ফিসফিস করে উচ্চারণ করলো,মায়া নেকড়ে?

কথাটা ভেবেই ভয় ওর দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলো। কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো নেড়কের আকৃতি কি এমন? এদের উচ্চতা চার ফুটের কাছাকাছি তো হবেই। কহিনুর ভাবতে পারলো না। চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো তাবুতে আলো জ্বলে উঠলো। সুইটি দৌড়ে আসলো কহিনুরের কাছে। ওকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

তুমি এখানে কি করছো? কি দেখেছো বলো আমাকে প্লিজ?
কহিনুর ফুঁপিয়ে উঠে উত্তর দিলো,
এই পাহাড়ে অদ্ভুত কিছু প্রাণী আছে।আমি এখানে থাকবো না। প্লিজ সকালেই ফিরে চলো নয়তো আমাকে পাঠিয়ে দাও। ওরা আমাদের মে/রে ফেলবে ওদের র/ক্তের প্রয়োজন।

কহিনুরের কথা শুনে সুইটি ঘাবড়ে গেলো। মেয়েটা কি অদ্ভুত কথাবার্তা বলছে। এখানে অদ্ভুত প্রাণী কোথা থেকে আসবে? আজ অবধি এখানে কত মানুষ আসে কিছুইতো হয়নি। তাছাড়া ট্রেকাররা প্রাণ হাতে করেই পাহাড়ে আসে। এটা ওদের কাছে একটা নেশা। যদিও তাদের মৃ/ত্যু হয়েছে সেটা নেহায়েত দুর্ঘটনা ছাড়া কিছুই না। কহিনুর নিশ্চয়ই খারাপ স্বপ্ন দেখে এসব বলছে ভেবে ও শান্ত কণ্ঠে বলল,

ভয় নেই আমি আছি না? তাবুতে চলো। তোমার জন্য সকলে জেগে উঠেছে। সকালে যেতে হবে।না ঘুমালে শরীর দুর্বল হবে। এখানে কোনো অদ্ভুত প্রাণী নেই তুমি স্বপ্ন দেখেছো।
সুইটির কথা শুনে কহিনুর তীব্র প্রতিবাদ করে বলল,
কিছুতেই না। আমি নিজের চোখে দেখেছি ওরা এখানে ছিল। আমার থাপ্পড়ে ওরা নিশ্চয়ই রেগে উঠেছে। দেখে নিও ওরা আবারও আসবে। প্লিজ এখান থেকে আমরা অন্য কোথাও গিয়ে ক্যাম্পিং করি।না বলোনা। সকলের সঙ্গে আলাপালোচনা করো। ওদেরকে বুঝিয়ে দাও এখানে আমরা থাকছি না।

কহিনুর কথাগুলো বলে নিশ্বাস ফেলল। ভয় পাচ্ছে। ভেতর থেকে কেউ একজন ওকে সাবধান করছে। হঠাৎ এমন অনুভূতির সঙ্গে ওর পরিচয় নেই। ভালো লাগছে না। তাই চুপচাপ বিছানায় গিয়ে চোখ বন্ধ করলো। হাত পা ঠান্ডায় জমে আছে। আগুনের প্রয়োজন। ভাবতে ভাবতেই ও ঘুমিয়ে পড়লো। হয়তো আজকের রাতটুকু এখানে ওদের শেষ রাত। সুইটি আগামীকাল ঠিকই অন্য জায়গায় যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। কহিনুরের বাঁধা নিষেধ ও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। কারণ ও মনে করে মেয়েটা অহেতুক কিছু বলেনা। যেটুকু বলে অদ্ভুতভাবে খুব তাড়াতাড়ি সেটা সত্যি হয়ে যায়। এটার সঠিক লজিক ওর জানা নেই।

মুখে হাত রেখে বসে আছে গালিব। মাথায় আকাশ সমান চিন্তা। ডিএনএ এর রিপোর্ট অনুযায়ী কহিনুর ওর নিজের মেয়ে না। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? খুব ভালো করে ফাইল চেক করে দেখেছে রিপোর্ট পজেটিভ ছিল। হাসপাতাল থেকে ওই মেয়েটাকেই গালিব কন্টাক্ট করেছিলো। সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মেয়েটা টুইন ছিল। ওর জমজ বোন এসে ওর বাচ্চাকে নিয়ে গেছে। তাকে খোঁজ করা জরুরি আবার মনে হচ্ছে ওই মেয়েটা চালাকি করেছে। তার থেকেও চিন্তার বিষয় হচ্ছে কহিনুরের ব্লাডের রঙ সাদা।

হাসপাতালের মর্গে থাকা লা/শের র/ক্তের সঙ্গে ওর র/ক্তের মিল পাওয়া যাচ্ছে। কেউ ইচ্ছা করে পৃথিবী থেকে সাদা ব্লাডের মানুষদেরকে হ/ত্যা করছে। এই হ/ত্যার পেছনে এই সাদা ব্লাড দায়ী বা একজন বিশেষ মানুষকে খোঁজার জন্য এদের টার্গেট করা হচ্ছে। তবে কি ওরা কহিনুরকে খোঁজ করছে? গালিবের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সামনে কহিনুরের মহা বিপদ অপেক্ষা করছে। কথাগুলো ভেবে ও দ্রুত বেরিয়ে আসলো। হাসপাতালে গিয়ে মৃ/ত ব্যক্তিদের পোস্টমটেম রিপোর্টগুলো আবারও চেক করে নিলো।

লা/শগুলোর দাফন হবে না। মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। তার আগে চেক করা জরুরী। গালিব চুপচাপ মর্গে গিয়ে ঢুকলো। বারবার করে চেক করলো। এদের মৃ/ত্যুর রহস্য বেশ জটিল। এরা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হয়নি। তবে পাঁচ জনের শরীরে আলাদা আলাদা জায়গায় কেমন পোড়া টাইপের সামান্য ক্ষতচিহ্ন। এইটুকুতে কেউ মা/রা যায়কি ওর জানা নেই। তবে সিউর এদের মৃ/ত্যু এই ক্ষতচিহ্ন থেকেই হয়েছে। গালিব চুপচাপ মর্গ থেকে বেরিয়ে আসলো। সুইটির ভিসা রেডি হয়ে গেছে মেয়েটাকে দ্রুত অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে।

মৃ/ত বন্ধুর মেয়েকে নিজের মেয়ে হিসেবে বড় করছে গালিব। মেহুলের মতো ভালো মনের মেয়েকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলো বলেই সবটা এতো সহজে সম্ভব হয়েছে। নয়তো আজকাল কয়জন মেয়ে আছে যে পরের মেয়েকে এভাবে মানুষ করে। অষ্ট্রেলিয়ার একটা নামকরা ইউনিভার্সিটিতে সুইটির এডমিশন হয়েছে ভর্তির বাকী মাত্র একটা দিন অথচ মেয়েটা ওকে না জানিয়ে চলে গেছে ঘুরতে। কথাটা ভেবে ওর বেশ রাগ হলো। দ্রুত ফোন করলো সুইটির নাম্বারে। ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই গালিব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

সন্ধ্যায় তোমার ফ্লাইট। যেখানেই থাকো আজকের মধ্যে তোমাকে আমার সামনে দেখতে চাই। আমি তোমার দরকারি কাগজপত্র ইয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দিব। আগামীকাল তোমার ভর্তির লাষ্ট ডেট সেটা আমাকে বলোনি কেনো?
সুইটি আর কহিনুর তাবু গুছিয়ে বাকীদের জন্য অপেক্ষায় ছিল। নতুন একটা রিসোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু গালিবের কথা শুনে ও বেশ ভড়কে গেলো। ভেবেছিল চুপচাপ থাকবে বাড়িতে জানতে দিবে না। কহিনুর আর মেহুলকে ছেড়ে কোথাও যেতে মন চাইছে না কিন্তু এখন কিছু করার নেই যেতেই হবে। সুইটির ধ্যান ভাঙলো গালিবের ঝাড়ি শুনে,

তোমাকে কতবার বলেছি একদম ফাঁকিবাজি করবে না। তবুও আমার একটা কথাও তোমার কানে যায়না। বোনকে নিয়ে এখুনি ফ্লাইট ধরো। আগামী মাসে আমরা তোমার সঙ্গে জয়েন করবো। একা থাকতে হবে না। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমাদেরও কষ্ট হবে। জীবনে ভালো কিছু করতে হলে পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। ত্যাগ না করলে ভালো ফল আশা করা বোকামি। বুঝতে পারছো?

জ্বী আঙ্কেল।
কহিনুরকে নিয়ে চলে এসো। আমি রাখছি এখন।
ও কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিয়েছে। সুইটি মুখটা মলিন করে ছোট করে বলল,
ঘোরাঘুরি আমাদের ভাগ্যে নেই নূর। এখুনি ফিরতে হবে।

কহিনুর বুঝতে পারলো। তবে মন খারাপের চাইতে ওর ভালো লাগছে। দুজনে বাকিদের থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত ইয়ারপোর্টের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘন্টা তিনেক পর ওরা মিউনিখ বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালো। এখানে এসে কয়েকবার গালিবের নাম্বারের ফোন করলো কিন্তু বন্ধ বলছে। এদিকে ওদিকে ঘুরে যখন ওরা বাইরে বেরিয়ে আসবে ঠিক তখনই ওদের ড্রাইভার এসে হাজির হলো। ছেলেটার এক হাতে লাগেজ আর অন্য হাতে টিকেট। কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। এখানে গালিবের আসার কথা ছিল কিন্তু লোকটা আসলোনা কেনো? কৌতূহল চাপিয়ে রাখতে পারলোনা,

তুমি কেন এসেছো? বাবা কোথায়?
ছেলেটা লাগেজ আর টিকিট ওদের সামনে তুলে ঢোক গিলল। ওদিকে সুইটির ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেছে। কহিনুর ছেলেটার উত্তরের অপেক্ষা করলোনা। দ্রুত সুইটির থেকে বিদায় নিলো। ফোনে বাকীটা শোনা যাবে ভেবে মেয়েটা মন খারাপ করে চুপচাপ সামনে এগিয়ে গেলো। কহিনুর এবার ড্রাইভারের দিকে তাঁকালো। ছেলেটা বলল,

স্যার কোথায় আছেন আমি জানিনা। উনি কিছু বলেননি।
কহিনুর উত্তর করলোনা। দ্রুত বেরিয়ে আসলো। গাড়িতে বসতেই ওর ফোনে একটা ভয়েজ টেক্সট এসে হাজির হলো,
” নূর কিছুতেই তুমি বাড়িতে ফিরে এসোনা প্লিজ। ওরা তোমার খোঁজ করছে। যেখানেই আছো পালিয়ে যাও।বাবা মা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে নূর। কোনো প্রশ্ন বা কৌতূহল নিয়ে একদম এখানে আসার চেষ্টা করবে না। নিজের নাম পরিচয় কাউকে দিবে না।ওরা ভীষণ ভয়ংকর মা”।

ভয়েজ রেকর্ড শুনে কহিনুরের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। বাবার কিছু হয়েছে ভেবে মনের মধ্যে কেমন অস্থির লাগছে। কে ওকে খোঁজ করতে পারে ওর তেমন আইডিয়া নেই তবে পালাতে হবে। বাবা নিশ্চয়ই মজা করে এমনটা বলেনি। কহিনুর দ্রুত গাড়ি থামাতে বলে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে আসলো। কাছে থাকা ফোনটা গাড়িতে রেখে বলল,

এখানে আমার কাজ আছে। কাজ শেষে বাকিটা রাস্তা আমি ঠিক চলে যাবো আপনি আসুন।
মালকিনের কথার বাইরে লোকটার কথা বলার সাহস নেই তাই চুপচাপ চলে গেলো। কহিনুর পড়লো অকুলপাথারে। কোথায় যাবে মাথায় আসছে না। তাছাড়া জার্মানিতে ওরা বছর দুয়েক হচ্ছে এসেছে । তার আগে অষ্ট্রেলিয়া ছিল। গালিব ওদেরকে বাইরে তেমন একটা যেতে দেয়নি। এটিএম কার্ডে বেশ কিছু টাকা আছে। কহিনুর আগে টাকাগুলো তুলে নিলো। এই শহরে থাকা মানেই বিপদ ভেবে আবারও ইয়ারপোর্টের দিকে ছুটলো। রাজধানীতে যাওয়া যেতে পারে। সেখানে পরিচিত কেউ না থাকলেও লুকিয়ে থাকতে পারবে।

গভীর রাত বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায় চুপচাপ বসে আছে কহিনুর। নিজের বোকামির জন্য লাগেজ হারিয়ে ফেলেছে। সঙ্গে একটা টাকাও নেই। ক্ষুধাকাতর শরীর সঙ্গে জুটেছে তুষারপাত। শরীর কেমন ঝিমিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ থাকলে মৃ/ত্যু অবধারিত। বাবা এমন কেনো বললো ওর মাথায় আসছে না। একবার গিয়ে খোঁজ করতে পারতো। নিজের বোকামির জন্য নিজেকে আচ্ছা করে গালি দিয়ে মন চাইছে।

এখানে ও ম/রে পচে গেলেও কেউ এগিয়ে আসবে না। সবাই ব্যস্ত কে কার খোঁজ রাখে। জীবনে এতোটা অসহায় ও আগে কখনও হয়নি। তখন সুইটির সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়া চলে গেলেও পারতো। চোর চলে গেলে বুদ্ধি বাড়ে কথাটা সত্যি কিন্তু এবার কি হবে? কথাটা ভাবতে ভাবতে ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। পেটের মধ্যে ক্ষুধার্থ রাক্ষসেরা তান্ডব করছে এখুনি তাদের খাবারের প্রয়োজন। কিছুক্ষণ এভাবেই অতিবাহিত হলো। হটাৎ তীক্ষ্ণ আলোকরশ্মি ওর চোখে এসে লাগলো। কহিনুর পিটপিট করে সামনে তাঁকালো। ওর সামনে একজন যুবক গাড়ি থেকে নেমে দ্রুতগতিতে ওর সামনে এসে থামলো। কহিনুর ভয় পাচ্ছে। লোকটা যদি খারাপ কেউ হয় তখন? ওর ধ্যান ভাঙলো লোকটার আওয়াজ শুনে,

এই মেয়ে এখানে কি করছো? তোমার সাহায্যের প্রয়োজন?
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে না জানিয়ে দিলো। তবুও লোকটা শুনলোনা। ওর হাত ধরতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। ছেলেটা কিছুটা ছিটকে গেলো। কহিনুর ছেলেটার দিকে চাইলোনা। চোখ বন্ধ করে রাস্তা ধরে দৌড়াতে শুরু করলো। লোকটা ভালো না বুঝতে ওর বাকী নেই। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ ও থেমে গেলো। পা চলছে না। ভাগ্য বিধাতা আজ ওকে নিয়ে নিশ্চয়ই নতুন কোনো খেলাতে মেতেছে। কহিনুর রাস্তার মাঝখানে ঢলে পড়লো। শরীরে একফোঁটা শক্তি অবশিষ্ট নেই। অচেতন হওয়ার আগে বুঝতে পারলো একটা গাড়ি ওর পাশে এসে থেমেছে। তবে বেশি কিছু চিন্তা করতে পারলোনা। সবটা আবছা হয়ে মিলিয়ে গেলো।

প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ করে ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বসে আছে জুবায়ের। কতবার নিষেধ করেছিলো না যেতে তবুও ছেলেটা না শুনে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে জখম হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। অধরা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আল্লাদ করতে ব্যস্ত যেটা ওর সহ্য হচ্ছে না। ছেলেটা মায়ের মতো কোমল স্বভাবের হয়েছে। জুবায়েরকে রাগ করতে দেখে অধরা বিরক্ত হলো। লোকটার অযথা রাগারাগি করা ওর পছন্দ হয়না। রাগের মাথায় আছাড় দিয়ে হাড্ডি ভেঙে পরে আদর করতে আসার মানে হয়না। ভাঙা হাড্ডি জোর লাগলেও ব্যথার সহ্য করতে কতটা কষ্ট হয় লোকটা যদি জানতো। দুজনের নিরব যুদ্ধ দেখে আলফা দাঁত বের করে হেসে বলল,

ড্যাড আমি ঠিক আছি। ওখানে চমৎকার একটা মেয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। যখন পাহাড়ের নিচ থেকে আমি চিৎকার করছিলাম মেয়েটা উপর থেকে শুনতে পেয়ে আমাকে উদ্ধার করতে এসেছিলো। সারারাত আমার সেবাযত্ন করেছে।
ওর ঠিকানা নিয়েছো? অন্ততপক্ষে ফোন নম্বরটা আনতে সেটা পর্যন্ত পারোনি। তুমি মায়ের মতো গাধা হয়েছো। সুলতান জুবায়ের ফারুকীর ছেলে এরকম গাধা হবে ভাবতে পারছি না।
আলফা মুখ ভার করে ফেললো। বাবার কথা শুনে না নিজের বোকামির জন্য মন খারাপ হচ্ছে। ওকে এভাবে চুপচাপ দেখে অধরা বিরক্তি নিয়ে বলল,

ওকে এভাবে অপমান করছেন কেনো? আপনার ছেলে আপনার মতোই হয়েছে। আমার জীবন পেরিয়ে গেলো আপনাকে সঠিক পথে আনতে আনতে। দুমদাম রাগারাগি ছাড়া কি পারেন? বাইরে চলুন ঠান্ডা ঠান্ডা পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করবেন। বাইরে নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা ঘটিয়ে এসেছেন।
জুবায়ের অধরার কথার প্রতিবাদ করতে পারলোনা। সত্যি আজ অফিসে ঝামেলা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নতুন এক কোম্পানি ওদের সঙ্গে ঝামেলা করছে। লোকগুলো কারণ ছাড়া প্রডাক্ট কম দামে মার্কেটে সেল করছে ফলাফল হিসেবে সুলতান গ্রুপের অবস্থা বেশ খারাপ।

পিটপিট করে চোখ খুলতেই ঝটকা খেলো কহিনুর। একজোড়া কালো চোখ ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। এই চোখ জোড়া ওর খুব চেনা। কথায় দেখেছে ভাবতেই ভয়ে কেপে উঠলো। পালানোর জন্য উঠতে চাইলো কিন্তু পারলো না। পুরুষালী গম্ভীর আওয়াজ ওর কানে এসে ধাক্কা দিলো,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৬

সুইয/সাইড করতে ইচ্ছা হলে রাস্তায় অহরহ গাড়ি আছে সেখানে যেতে। সেটা না করে আমারটাতেই কেনো এসেছো মেয়ে? উদ্দেশ্য কি তোমার? আমার শত্রুরা তোমাকে পাঠিয়েছে তাইনা? মুখটা পযর্ন্ত ঢেকে রেখেছো।
কহিনুর লোকটার দিকে এবার তাঁকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। লোকটাকে ও আজকের পূর্বে কখনও দেখেনি তবে কিসের শত্রুতা? কে এই লোক?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৮