কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৬

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৬
লাবণ্য ইয়াসমিন

জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের ‘স্যাক্সন সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত অঞ্চলে পাহাড়ের অদ্ভুত আকার-আয়তন ও বন্য উপত্যকা নজর কাড়ার মতো৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে চেক প্রজাতন্ত্রের সীমান্তে এলবে নদীর যাত্রাপথে বেলেপাথরের এই পর্বতমালা ট্রেকারদের স্বর্গ হিসেবে আকর্ষণীয়। সুইটি আর কহিনুর ফ্রেন্ডের সঙ্গে প্রথমবার এখানে এসেছে। যদিও অনেক রিস্ক কিন্তু সুইটির জন্য আসতে হয়েছে। মেয়েটা পাহাড় পছন্দ করে পূর্বের অভিজ্ঞতা আছে সেখানে কহিনুর একদম আনাড়ি।

গভীরে যাবেনা লোকালয়ের কাছাকাছি থাকবে বলে সেটা ওটা বুঝিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছে। কহিনুরের অবাক হয়ে চারদিকে নজর ঘুরিয়ে চলেছে। পাহাড়ি অঞ্চলে এই প্রথমবার এসেছে। বাবা মা বারবার বলে দিয়েছে সাবধানে থাকতে।তবে সুইটির লাফালাফি দেখে বোঝাই যাচ্ছে কোনো নিয়মকানুন মেনে চলাফেরা করতে হবে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কহিনুর ভয় পাচ্ছে সঙ্গে অস্বস্তিতে পড়ছে বারবার। সুইটির ফ্রেন্ডলিস্টের আকার বেশ বড়সড়। পনেরো জনের বিশাল দল,তারমধ্যে এক ছেলে ওকে কারণে অকারণে দেখছে। বিষয়টা ওর ভালো লাগছে না। যদিও এরা বেশ ভালো স্বভাবের তবুও মন খুতখুত করছে।

পাহাড়ের উপরে মোট পাঁচটা তাবু খাটানো হয়েছে। খানিকটা দূরে আরও একটা দল এসেছে ওরাও তাবু খাটানোতে ব্যস্ত। কহিনুর সুইটিকে সাহায্য করছে চুপচাপ। মেয়েটা অতিরিক্ত বাঁচাল কথা বলে বেশি। বাবা আসার সময় বারবার নিষেধ করেছে তাবুতে না থাকতে তবুও সুইটির জিদের জন্য থাকতে হবে। এমনিতেই শীত তারমধ্যে ঠান্ডা বাতাস। কহিনুর ফুল প্যাকেট হয়ে আছে। চোখদুটো ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নির্জনতা ভেঙে কহিনুর ফিসফিস করে বলল,

সুইটি লোকটা আমার দিয়ে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে আছে। আমার অস্বস্তি হচ্ছে। প্লিজ তুমি গিয়ে নিষেধ করো আমাকে এভাবে না দেখতে।
কহিনুরের কথা শুনে সুইটি খানিকটা দেখে নিয়ে উচ্চ শব্দে হেসে ফেলল। তারপর হাসি থামিয়ে বলল,

তুমি ফুল প্যাকেট হয়ে ঘুরছো বেচারা এভাবে কাউকে দেখেনি তাই অবাক হচ্ছে। ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীর কাছে তোমার এই পোশাক সত্যি ভয়ঙ্কর। ভেবো না আমি ওকে বলে দিবো তোমাকে না দেখতে।
কহিনুর এবার বুঝতে পারলো। না বুঝে কতকিছু ভেবে নিয়েছিল। নিজের বোকামির জন্য দোষারোপ করতে ইচ্ছা হলো তারপর চুপচাপ সেখান থেকে খানিকটা দূরে সরে আসলো।

জীবনে প্রথমবার মুক্তির আনন্দ পেয়েছে সেটাকে কিছুতেই অবহেলা করে নষ্ট করবে না। আল্লাহর সৃষ্টি কতটা সুন্দর কথাটা ভেবে কহিনুর চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণ এভাবে পার হলো দূর থেকে বাতাস ভেসে আসছে হঠাৎ সেই বাতাসের সঙ্গে কারো কাতর যন্ত্রণা মাখা কন্ঠ ভেসে এসে ওর কর্ণকুণ্ডলে আঘাত করলো। কহিনুর চমকে উঠে চোখ খুঁললো। আশেপাশে কেউ একজন কষ্ট পাচ্ছে। কহিনুর খাদের দিকে এগিয়ে আসলো চারদিকে নজর ঘুরিয়ে দেখলো কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না। পাহাড় থেকে নামার জন্য সামনে পা বাড়িয়ে দিতেই পেছন থেকে সুইটি ডেকে উঠলো,

কোথায় যাচ্ছো তুমি? আঙ্কেলের হার্ট ভীষণ দুর্বল তোমার কিছু হলে কিন্তু উনাকে বাঁচানো সত্যি অসম্ভব। ফিরে চলো তাবুতে। আজ বিশ্রাম তারপর যত ইচ্ছা ঘুরাঘুরি হবে।
সুইটির কথা কহিনুরের কান অবধি পৌচ্ছালোনা। কেউ একজন অসুস্থ হয়ে সাহায্য চাইছে। কহিনুর কিছু একটা ভেবে বলল,

তুমি যাও আমি এখুনি আসছি। চিন্তা করোনা আমি হারাবোনা। ফোন আছে হারিয়ে গেলেও তুমি খুজে পাবে।
সুইটি মিষ্টি করে হাসলো। কহিনুরকে বাঁধা দিতে ওর একটুও ইচ্ছে করছে না। মেয়েটা সব সময় চুপচাপ থাকে। সকলের কথা মেনে নিজের স্বাধীনতাকে ভুলতে বসেছে এখানে এসে থাকনা নিজের মতো করে। কথাটা ভেবে ও ফিরে গেলো। কহিনুর হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এখনো সেই শব্দ ওকে তাঁড়া করছে।

ও আর অপেক্ষা করলো না। উৎস ধরে এগিয়ে চলল। খাড়া ঢাল চলতে অসুবিধা হচ্ছে। এলাকাটা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত অহরহ মানুষ আসছে যাচ্ছে অনেক বাঙ্গালীও আছে কিন্তু অদ্ভুতভাবে এদিকটাতে পর্যটক নেই। পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢুলুঢুলু করছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ডুবে যাবে। কহিনুর যতই নিচের দিকে নামতে শুরু করলো ততই লোকজনের আওয়াজ কমতে শুরু করেছ। অহত লোকটার আওয়াজ ছাড়া আপাতত সব বন্ধ।

কিন্তু লোকটা কোথা থেকে আওয়াজ করছে ওর মাথায় আসছে না। একজন অহত মানুষ নিশ্চয়ই শক্তি খরচ করে জোরে শোরগোল করতে পারবেনা। লোকটা ভীষণ ক্ষীণভাবে শব্দ করছে। কহিনুরের মনে হলো হঠাৎ ও অনেক দূরের শব্দও শুনতে পাচ্ছে। কেমন রহস্য লাগছে। ভয় করছে সঙ্গে বুক ঢিপঢিপ করছে। ঘন্টা খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর ও সমতলের কিছুটা উপরে একটা গাছের সঙ্গে কালো মাফলার দেখতে পেলো।

কহিনুর দ্রুত পা চালালো। সামনে কেউ আছে উত্তেজনাতে ওর শরীর মৃদু কাঁপছে। হাতের ফোনটা চেপে ধরে রেখেছে। খানিকটা পর পর পিছলে যাচ্ছে। কাপড়ে ময়লা লাগছে তবুও বিষয়টাকে ও পাত্তা দিচ্ছে না। গাছের কাছে এসে ও সাবধানে মাফলারটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চিৎকার করলো,

আশেপাশে কেউ আছেন? প্লিজ সাড়া দিন। কে আছেন? কথা বলুন।
কহিনুরের আওয়াজ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসলো। ও আরও খানিকটা ডাকাডাকি করার পরে যখন ও থামলো ঠিক তখনই ওপাশ থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসলো।

আমি এখানে। প্লিজ সাহায্য করুন আমাকে। কষ্ট পাচ্ছি আমি।
কহিনুর শব্দের দিকে দৌড়ে গিয়ে দেখলো পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে অল্প বয়সী এক ছেলে বসে আছে। ছেলেটার পা বেশ বাজেভাবে জখম হয়েছে। কহিনুর একটুও অপেক্ষা করলোনা। হন্তদন্ত হয়ে ছেলেটার পায়ের কাছে বসে পড়লো।তারপর পা খানা নিজের কোলের উপরে তুলে নিয়ে বলল,

কিভাবে হলো এমন? তুমি এখানে কি করছো একা? জানোনা এদিকে কেউ আসেনা?
ছেলেটা চোখ মুখ অন্ধকার করে উত্তর দিল,
আমি ইচ্ছা করে আসিনি। বন্ধুদের সঙ্গে ছিলাম হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেছি ওরা দেখেনি। দেখোনা আমার ফোনটাও কাছে নেই। কিভাবে ফিরবো আমি? আম্মু জানলে ভীষণ রাগারাগি করবেন।
ছেলেটার কথা শুনে কহিনুরের ভীষণ মায়া হলো। মুখটাকে দেখে মনে হলো কতদিনের চেনা। কহিনুর মাফলার দিয়ে ওর পা ভালো করে পেচিয়ে দিয়ে বলল,

চিন্তা করোনা। আমি আছিতো সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমাকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। আমার কাধে হাত রেখে চলতে পারবে?
ছেলেটা মুখে হাসি ফুটিয়ে দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,

তুমি পারবে আমাকে নিয়ে যেতে? তোমার কষ্ট হবে না? এতো ভারি পোশাক পরে আমাকে নিয়ে যাবে কিভাবে শুনি? এক পা পুরোপুরি অকেজো।
কহিনুর কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,
উপরের দিকে আমার বোন আছে। আমি এখুনি ওকে ফোন করে বলছি। আমাদের নিয়ে যাবে। চিন্তা করোনা আমার ড্যাড একজন নামকরা ডাক্তার। তোমার পা খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।

কহিনুরের কথা শুনে ছেলেটা ভরসা পেলো। কঠিন বিপদের দিনে এমন একটা ভালো মনের মেয়ের দেখা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এখানে সারারাত থাকলে ঠাণ্ডায় মা/রা যেতে হতো। আল্লাহ আছেন বলেই বিপদে ঠিকই একজন ভালো মেয়েকে পাঠিয়েছেন। কথাটা ভেবে ওর ভীষণ ভালো লাগলো। নিজের ভাইবোন নেই বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হিসেবে ওকে সব সময় চোখে চোখে রাখা হয়। মায়ের যত ভয় ওকে নিয়ে। এখানে আসার সময়ও কত তালবাহানা ছিল তাঁর। কহিনুরের ডাক শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো।,

ফোন করেছি ওরা আসছে। তুমি আপাতত আমার হাত ধরে উঠার চেষ্টা করো।
ছেলেটা ওর হাতটা ধরে উঠার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যার্থ হলো। শেষমেশ কহিনুর ওর পাশে বসে পড়লো। ছেলেটার হাতটা আলগোছে ধরে বলল,

তুমি টেনশন করছো তাই এমন হচ্ছে। হাত পা টলছে। এভাবে হবে না। কিসের ভয় তোমার? এইটুকুতে কিছু হবে না। বললাম তো সব ঠিক করে দিব।
ছেলেটা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
র/ক্তে আমার ফোবিয়া আছে। তাছাড়া এভাবে কখনও কাঁটেনি। আম্মু দেখলে ভীষণ কষ্ট পাবেন। আর ড্যাড খুব রাগ করবেন। ভয় করছে আমার।

কহিনুর জীবনে প্রথমবার একটা অচেনা ছেলের সঙ্গে কোন প্রকার অস্বস্তি ছাড়া এতোটা কথা বলল। কেনো জানি ভালো লাগছে। ছেলেটা বয়সে ওর ছোট হবে নাকি বড় অনুমান করতে পারছে না। তবুও ভালো লাগছে। হঠাৎ পেছন থেকে আওয়াজ শুনে ও দ্রুত পেছনে তাঁকালো। সুইটি দলবল নিয়ে এগিয়ে আসছে। কাছে বেশ কিছু লাইট। সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণের মধ্যে রাত নামবে। কহিনুর ছেলেটাকে বলল,

আর চিন্তা নেই। ওরা এসে গেছে। একটু কষ্ট হবে হাটতে কিন্তু তুমি কিন্তু কিছুতেই হাল ছাড়বে না।
ছেলেটা মাথা নাড়ালো। কহিনুর পূর্বেই টেক্সট করে এখানকার সবকিছু সুইটিকে বলে দিয়েছিল। ওরা এখানে এসে আর প্রশ্ন করলোনা। সোজা ছেলেটাকে দুজন ধরে হাঁটতে শুরু করলো। কহিনুর পেছনে পেছনে যাচ্ছে। উপরে উঠতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ছেলেটা দাঁত চেপে সহ্য করছে। রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করবে। তাবুতে ফিরতে এক ঘন্টার রাস্তা ওদের আড়াই ঘন্টা লেগে গেলো।

কহিনুর নিজ হাতে পানি গরম করে ছেলেটার পা ড্রেসিং করলো। কাছে ব্যাথার ওষুধ ছিল ওটা দিবে কি বাবার থেকে ফোন করে শুনে নিলো। খাবার ছিল সেটাও খেতে দিয়ে ওদের কাছেই শুতে বলে বাইরে গেলো। কহিনুর ছোট থেকে যেখানে নিজের খাবার পযর্ন্ত মায়ের হাতে খেয়ে এসেছে সেখানে একদিনের চেনা এই ছেলেটার প্রতি এতোটা মমতা দেখে সুইটি বিস্মিত। কহিনুর নিজেও হতবাক তবুও কিছু বলল না। আজকের রাতটুকু ওর ঘুম হবে না। ছেলেটার মাথার কাছেই বসে থাকবে। কাটাছেড়া অনেক। গালিব বারবার বলে দিয়েছে জ্বর আসবে তাই ও সচেতন থাকবে। এতোকিছুর মধ্যে ওর একবারও খেয়াল হলো না ছেলেটার পরিচয় বা ওর নাম জানার। তবে ওর বন্ধুদের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। সকালেই ওরা আসবে।

ঠান্ডার মধ্যেও অস্থির হয়ে ঘামছে গালিব। মস্তিষ্কে কাজ করছে না। বহুকাল আগের করা একটা ঘটনা বারবার চোখের সামনে ভাসছে। হাসপাতালের মর্গে এখনো পাঁচটা লা/শ রাখা আছে। সাধারণত প্রাণির র/ক্তের রঙ লাল হয় কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই পাঁচ ব্যক্তির র/ক্তের রঙ সাদা। পৃথিবীতে খুব কম মানুষ আছে যাদের র/ক্ত সাদা বর্ণের হয়। এই পাঁচ ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা যায়নি।

একদম বেয়ারিশ তাই এখানেই রাখা আছে। তদন্ত চলছে। দফায় দফায় পোস্ট/মটেম করেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। গালিব বুঝতে পেরেছে এই বাঁচ ব্যক্তির জন্ম কখনও এক রাষ্ট্রে হয়নি। এদের পোশাক আর গায়ের রঙ দেখে কিছুটা অনুমান করেছে। গালিবের আপাতত সেদিকে নজর নেই। ওর ভাবনায় শুধু আজ কহিনুর ঘুরছে। বহুকাল আগের একটা ভুল ওকে ভুগাচ্ছে। হাতে ডিএনএ টেষ্টের রিপোর্ট।

যেখানে উল্লেখ আছে কহিনুরের সঙ্গে ওর ডিএনএ মিল নেই। কিন্তু কিভাবে এমনটা হতে পারে? সরোগেসি করেছিলো নিজের হাতে এক অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে। ভিবিন্ন ঝামেলার কহিনুরের জন্মের পর রিপোর্ট করা হয়নি। কিন্তু এখন সেটা অদ্ভুতভাবে সামনে এসেছে। এমন কেনো হলো? সেদিন যখন মা ওকে বাচ্চার কথা বলেছিল গালিব কিছু না ভেবেই রাজি হয়েছিলো তারপর প্রসেস শুরু হওয়ার আগে তখন অদ্ভুতভাবে একটা মেয়ের সঙ্গে ওর হাসপাতালে দেখা হয়েছিলো। মেয়েটার মুখ বোরখা দিয়ে আবৃত ছিল।

মেয়েটা টাকার জন্য ওকে সাহায্য করতে রাজি হয়েছিলো। কিন্তু আজ অবধি কোনো টাকাই নেয়নি। তবে কি মেয়েটা ওকে ঠিকেছে? নিজের বাচ্চাকে ওর কাছে রাখার জন্য এতো তালবাহানা? কহিনুরের জন্ম রহস্য কি তবে? গালিবের মাথায় নানারকম চিন্তাভাবনার উদয় হচ্ছে। মেয়েটাকে কতটা আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করেছে কখনও ভাবেনি সে ওর নিজের না। গালিব ভাবলো,”রক্তের সম্পর্কটাই কি সব? এই কঠিন সত্যিটা আমি জীবন থাকতে কাউকে বলবোনা। কহিনুর শুধুমাত্র গালিবের মেয়ে। পৃথিবী ধ্বংস হোক তবুও গালিব এই সত্যিটা প্রাণ থাকতে স্বীকার করবে না।”

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই কহিনুরের ঘুম ভাঙলো। ছেলেটা ঘুমিয়ে আছে এখনো। কহিনুর ওর মাথায় হাত রেখে জ্বর চেক করে বেরিয়ে আসলো।বাইরে থেকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে । হয়তো ছেলেটার বন্ধুরা চলে এসেছে। কহিনুর ওদেরকে দেখে ছেলেটার কাছে গিয়ে বসলো। মৃদু কণ্ঠে ওকে ডাক দিয়ে বলল,

ওরা এসে গেছে। বাইরে গিয়ে দ্রুত ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে। উঠে যাও প্লিজ।
ছেলেটা একটু একটু করে চোখ খুঁললো। জ্বরের জন্য চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। পা বেশ ফুলেছে। হয়তো ভেঙে গেছে।কহিনুর ওর হাত ধরে উঠতে সাহায্য করলো। মুখটা শুকিয়ে আছে দেখে কহিনুরের ভীষণ মায়া লাগছে। কফির কাপটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

এভাবে আর কখনও একা কোথাও যাবেনা। তুমি এখনো অনেক বাচ্চা বুঝেছো?
কহিনুরের কথা শুনে ছেলেটা হাসলো। কফির মগে মুখ ডুবিয়ে উত্তর দিলো,
তোমার থেকেও বড় আমি। আম্মুর মতো সুযোগ পেয়ে আমাকে উপদেশ দিচ্ছো? আমি একদম ঠিক আছি। এখুনি দৌড়াতে পারবো। তোমার কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। তুমি না থাকলে আমার অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে বিলিন হতে সময় লাগতো না। আল্লাহর প্রেরিত কোনো দেবদূত হয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছো। যদি কখনও সুযোগ হয় আমি তোমার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতেও পিছনে যাবোনা।

কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। ছেলেটার জন্য যা করেছে সবটা নিজের অজান্তেই করেছে। কিছু পাওয়ার আশা করেনি। ওর কাতর কণ্ঠটা যখন শুনেছিলো পাগলের মতো ছুটেছিলো। হৃদয়ের টান তাছাড়া কিছুই না। কথাটা ভেবে ও উত্তর দিলো,

আল্লাহ চেয়েছেন তাই তোমাকে সাহায্য করেছি। নয়তো তোমার কণ্ঠ আমি এতোটা দূর থেকে কখনও শুনতে পেতাম না। সবটা কেমন রহস্য। যাইহোক তুমি দ্রুত এখান থেকে চলে যাও।নিজের খেয়াল রেখো।
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে ওর থেকে বিদায় নিয়ে তাবু থেকে বেরিয়ে আসলো। ওর বন্ধুদের অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে ওদের সঙ্গে গিয়ে মিললো। কহিনুর ওদের বাই বলে কিছু একটা ভেবে দ্রুত ছুটে গেলো। ততক্ষণে ওরা কিছুটা এগিয়ে গেছে। কহিনুর চিৎকার করে জানতে চাইলো,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৫

তোমার নামটা বলে যাও ছেলে।
ছেলেটা পেছনে ফিরে ওর মতোই চিৎকার করে উত্তর দিলো,
সুলতান আলফা ফারুকী’ বাবা সুলতান জুবায়ের ফারুকী। রাজধানীতে আসলে অবশ্যই দেখা হবে।
ছেলেটা হাত নাড়তে নাড়তে দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলো। কহিনুর বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো,
” সুলতান জুবায়ের ফারুকী”

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৭