কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৫

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৫
লাবণ্য ইয়াসমিন

ভোররাতে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে গালিবের ঘুম ভাঙলো। দ্রুত উঠে আশেপাশে তাঁকিয়ে বুঝতে পারলো কহিনুর বিছানায় নেই। ও আর সময় নষ্ট করলোনা। এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো। দোতলা বাড়ির সামনে ছোটখাট একটা সুইমিং পুল একপাশে ছোট্ট বাগান।

পুলের পাশে ফ্লরে শুয়ে হাত-পা নেড়ে কহিনুর চিৎকার করছে। গালিব দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে তুলে নিলো। কপালে চুমু দিয়ে বুকের সঙ্গে নিয়ে আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো।একটুর জন্য পানিতে পড়েনি। মেয়েটা কক্ষে ছিল আর কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল তবে কে ওকে নিয়ে এসেছে বুঝতে পারলো না। কেউতো একজন এনেছে কিন্তু কেনো এনেছে? গালিব সামনে এগিয়ে যেতেই দূরে একটা চকচকে বস্তুতে ওর নজর আটকে গেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়েকে বুকের সঙ্গে নিয়ে বস্তুটা হাতে তুলে নিলো। কোনো মুল্যবান পাথর যেটা সামান্য আলোতে রশ্মি ছড়াচ্ছে। হঠাৎ ওকে অবাক করে পাথরটা ওর থেকে ছুটে গিয়ে শূন্যে ভাসতে শুরু করলো। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেলো। পুলের সাইডে লাইট ছিল সেটাও নিভে গেলো দপ করে। পাথরের আলোতে আলোকিত চারদিক। গালিব ডাক্তার মানুষ এসবে ওর বিশ্বাস নেই বললেই চলে কিন্তু আজ চোখের সামনে এমন দৈবঘটনা দেখে ঘাবড়ে গেলো।

মেয়েকে নিয়ে অতি দ্রুত স্থান পরিবর্তন করতে হবে ভেবে ও পিছিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না। পাথরটা ক্রমাগত ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। গালিব এবার মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে চমকে উঠলো। মেয়েটা ভয়ের বদলে হাঁসছে। হয়তো রঙিন আলো দেখে ভালো লেগেছে। গালিব বেশিক্ষণ ভাবতে পারলো না দৌড়ে আসলো বাড়ির দিকে কিন্তু তখনই বাধলো আরেক বিপত্তি। মাটির সঙ্গে ওর পা আটকে গেলো কিছুতেই আর নড়াচড়া করতে পারলোনা।

উজ্জ্বল রঙের নীলাভ পাথরটা ততক্ষণে ওদের নিকটবর্তী হয়ে গেছে। গালিব চোখ বড়বড় করে দেখছে। পাথরটা এভাবে হাওয়ায় ভাসছে কিভাবে ওর মস্তিষ্কে আসছে না। মনে হচ্ছে পালাতে হবে কিন্তু সেটাও সম্ভব না। অতিরিক্ত মানুষিক উত্তেজনাতে চিৎকার করতে ভুলে গেলো। শরীর মৃদু মৃদু কাঁপুনি দিচ্ছে। নিজের থেকেও মেয়েটার জন্য কষ্ট হচ্ছে। পাথরটা কহিনুরের মুখের সামনে এসে ঘুরতে ঘুরতে ওর মধ্যে মিলিয়ে গেলো। সেই সঙ্গে চার‍দিকে আবারও লাইট জ্বলে উঠলো। মেহুল দৌড়ে এসে গালিবের থেকে মেয়েকে নিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,

ওকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন? বাইরে ঠান্ডা বাতাসে যদি কিছু হয়। এমন কেনো আপনি?
গালিবের গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না। চোখের সামনে যা দেখলো সেটা কি অন্যরা বিশ্বাস করবে? মায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে ভেবে ও দ্রুত কক্ষের দিকে এগিয়ে আসলো। মেহুল বকবক করতে করতে ওর পিছু নিলো কিন্তু উত্তর পেলো না। গালিব মাকে ছাড়া কাউকে আর বলবেওনা। ও ছাদে গিয়ে মায়ের নাম্বারে ফোন দিলো। দুবারের পর ফোন রিসিভ হলো। গালিব কিছু বলতে চাইলো তার আগেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে আওয়াজ আসলো,

আজকের ঘটনা কাউকে বলোনা গালিব। মেয়ের না মায়ের ভালোর জন্য হলেও চুপচাপ থাকো। মেয়েকে চোখেচোখে রেখো। সে সাধারণ না।

মায়ের কথা শুনে গালিব ভ্রু কুচকে ফেলল। মায়ের এসব কাজকর্ম ওর ঠিক লাগছে না। মানুষটা কষ্ট পেয়েছে ঠিক আছে, সেসবের প্রতিশোধ গালিব নিয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে ওর মেয়ের কি সম্পর্ক? মায়ের কথাশুনে একটা অচেনা মেয়ের সাহায্য নিয়ে নিজের একমাত্র মেয়েকে পৃথিবীতে এনেছে। এসবের কি দরকার ছিল? গালিব কিছুতেই মেয়ের জীবন নিয়ে আর কোনো রহস্য বা ছেলেখেলা করতে পারবে না। মায়ের কথার বিপক্ষে যেতে হয় যাবে। দরকার হলে মাকে বোঝাবে। গালিবের ধ্যান ভাঙলো মায়ের আওয়াজ শুনে,

গালিব ওকে কক্ষের বাইরে কখনও বের করবে না। আমি যেমন বলবো তেমন করবে। আগামী মাসে আমি তোমাদের সঙ্গে দেখা করবো। ওর সঙ্গে থাকা লকেটটা খুঁলবে না। বুঝেছো আমার কথা? যা হচ্ছে হতে দাও।
এসবের মানে কি মা? আমার বাচ্চার জীবন নিয়ে আমি কোনো রিস্ক নিতে পারবোনা। প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও তুমি। কিসের জন্য এমন করছো তুমি? তোমার অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে। ওদের থেকে আমি সব অর্থ কেড়ে নিয়েছি। ওরা রাস্তায় বসেছে আরও কি চাইছো তুমি?

মেনুকা সিকদারের অর্থ কখনও ফুরাবেনা গালিব। তোমার কি ক্ষমতা ওকে রাস্তায় নামানোর? ওদের কাছে গুপ্তধন আছে বুঝলে? বুঝতে পারবেনা তাই আমি যা বলছি তাই করো। চুপচাপ আমার কথা শুনো। তাছাড়া কহিনুরের প্রতি তোমার এতোটা মমতা কেনো আসছে বুঝতে পারছি না। মেহুলের গর্ভে তো আর ওর জন্ম হয়নি। সরোগেসীর মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাচ্চার প্রতি তোমার কিসের এতো মায়া বলবে একটু? ওকে আমার লাগবে গালিব। মেয়েকে আমার হাতে তুলে দাও। তারপর তোমার ছুটি। নিজেদের মতো বাঁচো কেউ বাঁধা দিবে না। তুমি চাইলে তোমাদের আরও বাচ্চা হবে। মেহুলকে নিয়ে সুখে থাকবে।

মায়ের এহেন কথা শুনে গালিবের গলা শুকিয়ে গেলো। কি ভয়ংকর চিন্তা মায়ের। গালিব জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
ওর সঙ্গে কি করবে মা? আমি এইটুকু বুঝতে পারছি ওকে এহেন পদ্ধতিতে পৃথিবীতে আনার মানে কি। কিন্তু এটাতো বলবে ওকে দিয়ে তোমার কিসের কাজ?

তুমি বিশ্বাস করবে কি আমার জানা নেই। তবে বিশ্বাস করো ওকে উৎসর্গ করলে তোমার পিতা আবারও ফিরে আসবেন সঙ্গে তুমি প্রচুর অর্থসম্পদের মালিক হবে। পৃথিবীতে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন মানুষ একটাও থাকবে না। তোমার আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাবে আমরা সকলেই সুখে শান্তিতে আজীবন পৃথিবীতে বসবাস করবো। বাবা মায়ের জন্য এইটুকু করতে পারবেনা গালিব?

গালিবের শরীর কেঁপে হাতটা নড়ে উঠলো। ফোনটা কান থেকে পড়ে যেতে গিয়েও পড়লোনা। রেলিংয়ের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কোনোরকমে বলল,

আমি রাখছি এখন।
গালিব ফোন রেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। মাকে সঠিকপথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। অনেকখানি সে এগিয়ে গেছে। কিন্তু মেয়ের জীবন ও কিছুতেই নষ্ট হতে দিবে না। মেয়েটার হাসি কান্না সবটা ওর আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে। হাজার বছর না একদিন মেয়েকে বুকে নিয়ে বাঁচবে তবুও শান্তি। মায়ের এসব পাগলামি ও মানবেনা।

কথাটা ভেবে ও হন্তদন্ত হয়ে নেমে আসলো। ফোন লাগালো এয়ারপোর্টে পরিচিত এক ফ্রেন্ডের কাছে। বলে দিলো রাতের মধ্যে দুটো টিকিট রেডি করতে। আজকের মধ্যে ও মায়ের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। মায়ের কাছে পর্যাপ্ত পয়সা আছে তাছাড়া উনার দেখাশোনার জন্য লোকের অভাব হবে না। কিন্তু মেয়েটার কিছু হলে ওর কি হবে? এতোবড় পাপ ও বাবা হয়ে করবে না। গালিব কক্ষে ফিরে বলে দিলো সব রেডি করতে আজকের মধ্যেই দেশ ছাড়বে।

উন্মুক্ত মূর্তির সামনে চোখ বন্ধ করে বসে আছে প্রহেলিকা। মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না। গালিব কথা রাখেনি স্ত্রী কন্যা নিয়ে হারিয়ে গেছে। ওকে খুঁজতে খুঁজতে কতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। ওর ডান পাশে বসে আছে উনার দ্বিতীয় স্বামী আলেক্স লয়েড। বোন যখন ওকে জার্মানিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো তখন এই লোকটার সঙ্গে ওর পরিচয় হয়েছিলো। লয়েড ওকে জাদুবিদ্যার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে সেই থেকে চলছে দুজনের কালো জাদুর উপাসনা করা।

এই শহরের নামকরা এক পরিবারের কাহিনী জেনে ও আরও কিছুটা ভরসা পেয়েছে। ভেবেছিল ছেলের কন্যাকে উৎসর্গ করেই ক্ষমতাপ্রাপ্তি ঘটবে কিন্তু কিছুই ঘটেনি। উল্টো এই বয়স এসে বিয়ে করতে হলো। এই লয়েডের সম্পর্কে ওর তেমন একটা ধারণা ছিলোনা। এখন যতটা আছে। লোকটার আরও স্ত্রী সন্তান আছে। যারা এই শহরেই থাকে। অর্থের অভাব নেই তবুও কি প্রয়োজনে এসব করে ওর জানা নেই। লোকটা কৌশলে ওকে নিজের দলে টেনেছে। ঘন্টা পর ঘন্টা তপস্যা করে। শুধু বলেছিলো কহিনুর পেতে সাহায্য করলে উনি যা চাইবেন তাই পাবেন। মহিলা মানুষ বুদ্ধি জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব ছিল বলেই ফাঁদে পড়তে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এরপর কি হবে ভেবে উনি চোখ খুঁলে বললেন,

সত্যিই কি কহিনুর বলতে কোনো পাথর আছে পৃথিবীতে? কি কি ক্ষমতা আছে এই পাথরের?
প্রহেলিকার কথা শুনে ভদ্রলোক ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বললেন,
ওটা সাধারণ পাথর নয়। ওর ক্ষমতা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। একবার যদি ওটা পেতাম তবে বুঝতে পারতে। আমরা নতুন করে কহিনুর পাওয়ার চেষ্টা করবো। নতুন ছক তৈরী হচ্ছে।আবারও কোনো নবজাতকের প্রয়োজন পড়বে। তুমি সিউর গালিবের কন্যার মধ্যে কোনো দৈবযোগ ঘটেনি?

তাছাড়া আমি ডাইরি পড়েছি ওখানে উল্লেখ আছে কোনো সাধারণ মানুষের গর্ভে জন্ম নেওয়া বাচ্চার মধ্যে কহিনুরের শক্তি আসবে না। সুলতান পরিবারের কাছে সর্বশেষ কহিনুর ছিল তারপর থেকে কহিনুর উধাও। আমি জানি ওই মূল্যবান পাথরটা আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

লয়েডের কথা শুনে প্রহেলিকা চিন্তিত হলো। সেদিন রাতে গালিবের কথা না শুনেই বলেছিলো আজকের ঘটনা কাউকে না বলতে। কিন্তু সেদিন আদোও কিছু ঘটেছিলো কি ওর জানা হয়নি। অতিরিক্ত বুদ্ধিমান হলে যা হয় আরকি। এখন কথাটা লয়েডকে বললে ওর উপরে হুমকি ধামকি দিবে তারচেয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো।

এই বুড়োর জন্য গালিবকে হাতছাড়া করতে হয়েছে। রাগে ওর কপালের রগ খাড়া হয়ে উঠলো। মনে মনে ভাবলো “এসব কালো জাদুর অস্তিত্ব সত্যিই আছে কিনা জানা নেই তবে তোমার সম্পত্তি আমার চাইযে আলেক্স লয়েড। তোমাকে রাস্তায় নামাতে আমি এখানেই থাকবো। খুব দ্রুতই তোমার রাজ্যপাট আমি দখল করবো লয়েড। নারীকে বোকা ভাবার বোকামি করে ভুল করেছো মুর্খ্য।এবার হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারবে আমার ক্ষমতা কতখানি”।

মাথা নিচু করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। হালকা তুষারপাত হচ্ছে। রাস্তার দুদিকে ঘন জঙ্গল। ইউনিভার্সিটি থেকে ফেরার সময় ইচ্ছে করেই গাড়ি থেকে নেমেছিলো তারপর রাস্তা ভুলে গেছে।গালিব কিছুতেই ওকে একা কোথাও যেতে দিতে চায়না। আজ সঙ্গে সুইটি আসেনি তাই এই ভোগান্তি। সঙ্গে ফোনটাও নেই।কিভাবে বাড়িতে ফিরবে ভেবে ভয় মনের মধ্যে বাসা বাঁধলো। ছলছল চোখে আশেপাশে তাঁকিয়ে ঢোক গিলল।

হঠাৎ তুষারের জন্য রাস্তায় গাড়ি চলছে না। তাছাড়া এটা বাড়ির রাস্তাও হয়তো না। কাঁধে থাকা ব্যাগটা নিয়ে ও দৌঁড়ে সামনে এগিয়ে গেলো। গাছের পাতায় বরফ জমতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো রাস্তায় চলাফেরার উপযোগী থাকবে না। প্রচণ্ড শীত করছে। জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। মুখে নেকাবটা তুলবে ভেবেও তুলতে পারলোনা। বাবার কড়া হুকুম বাইরে বোরখা ছাড়া চলাফেরা করা যাবেনা। এটা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় কথা হয়। ইউনিভার্সিটিতে বোরখা ম্যাম বললে ওকে সবাই চিনে যায়।

কহিনুর কিছু মনে করেনা। বাবাকে ও প্রচণ্ড ভালোবাসে। উনার কথার বাইরে কিছু করার ইচ্ছে ওর নেই। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও দৌড়ে গেলো। কিন্তু বেশিদূর পারলোনা। হাপিয়ে যাচ্ছে। বোরখার সঙ্গে পা জড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা গাছের ডাল ভেঙে পড়ার আওয়াজ শুনে ওর বুকের মধ্যে ধপ করে উঠলো। কহিনুর দাঁড়িয়ে পড়লো। পেছনে ফিরে দেখলো রাস্তার উপরে গাছ ভেঙে পড়েছে। এটা নতুন কিছু না প্রায় হয়।

তুষারপাত হচ্ছে বরফের ভর রাখতে না পেরে ভেঙে পড়েছে। কথাটা ভেবে ও দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। ঠিক তখনই খেয়াল করলো গাছের গুড়ির পেছনে একজোড়া কালো চোখ ওর দিকে চেয়ে আছে। কি প্রখর সেই দৃষ্টি। কহিনুর ঢোক গিললো। বিড়বিড় করলো ওটাকি তবে বাঘ নাকি অন্যকিছু? এই জঙ্গলে এমন হিংস্র জন্তুর অস্তিত্ব আছে কি ওর মনে পড়ছে না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই যে শিকারির হিং/স্র থাবায় শিকার হতে চলেছে বুঝতে বাকি নেই।

দৌড়াদৌড়ি করলে এই জন্তুর সঙ্গে পারবেনা সিউর তবুও শেষ চেষ্টা ভেবে দম নিয়ে ছুট লাগালো। পেছনে তাঁকানোর সময় নেই। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কিছু একটার সঙ্গে ও ধাক্কা লেগে ছিটকে গেলো। কিন্তু মাটিতে পড়ার আগেই ওকে শূন্যে তুলে নেওয়া হলো। চোখ বন্ধ করার আগে আবারও সেই একজোড়া চোখ দেখতে পেলো। মানুষের আকৃতি তবে তার লোমশপূর্ণ শরীর দেখে ও শিউরে উঠলো। মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। অচেতন হওয়ার পূর্বে বিড়বিড় করে বলল,

সাহায্য করো আমাকে। মেরোনা প্লিজ।
ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙলো কহিনুরের। ছোটবেলাতে বাবার সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে একবার বিপদে পড়েছিলো। সেখানে দেখা একজোড়া চোখ কিছুতেই ওর পিছু ছাড়েনা। প্রায় স্বপ্নে এসে ভয় দেখিয়ে চলে যায়। কহিনুর ঢকঢক করে পানির গ্লাস থেকে পানি নিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো। পাশে সুইটি নেই। মেয়েটা কোথায় আছে কে জানে। সারাক্ষণ শুধু মাথায় ওর বদ বুদ্ধি ঘুরে। কহিনুর বিছানা থেকে নামতেই হুড়মুড় করে সুইটি ভেতরে প্রবেশ করলো। মুখে অমায়িক হাসি। হাতে জুসের গ্লাসটা ওর সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,

নূর এটা তোমার। আমি নিজে তৈরি করেছি শুধুমাত্র তোমার জন্য। এটা খাও আর আমাকে সাহায্য করো প্লিজ।
কহিনুর গ্লাসটা নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
কি হেল্প শুনি?
আমি ঘুরতে যেতে চাই নূর। বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পিং করতে চাই কিন্তু আঙ্কেল কিছুতেই কথা শুনছে না। তুমি বললে তবে নিশ্চয়ই শুনবে। তোমাকেও সঙ্গে নিবো প্রমিজ। আঙ্কেল এমন কেনো জানো? আন্টির মতো ভালো মেয়ের এমন বর কিছুতেই মানা যায়না। অবিচার হয়েছে আন্টির সঙ্গে। আমি কিছুতেই এই বিয়ে মানিনা।

সুইটির কথা শুনে কহিনুর চোখ উল্টে ফেললো। পেছনে গালিব দাঁড়িয়ে আছে যেটা সুইটি জানেনা। কহিনুর কিছু বলতে চাইলো তার আগেই গালিব ইশারায় বুঝিয়ে দিলো চুপ থাকতে। সুইটি বলেই চলেছে,
আন্টির জন্য নিশ্চয়ই ভালো ছেলের অভাব হবে না নূর। চলো আন্টির জন্য ভালো পাত্র ঠিক করি। আমাদের নতুন আঙ্কেল নিশ্চয়ই আমাদের ক্যাম্পিং করতে সাহায্য করবে। ভীষণ মজা হবে।
সুইটি কথা বলতে বলতে পেছনে ঘুরতেই থমকে গেলো। কতগুলো বাজে কথা বলেছেন ভেবেই বুক ধুকপুক করছে। গালিব সোজা এসে ওর কান ধরে বলল,

সারাক্ষণ মস্তিষ্কে শুধু আজেবাজে বুদ্ধিঘোরে তোমার? আমি ছাড়া তোমার আন্টির বিয়েটাযে হতোইনা সুইটি। ওর জন্য সারা পৃথিবীতে এই একটা মাত্র পাত্র ছিল বুঝতে পারছো? কোনো ক্যাম্পিং হবে না। ডিসেম্বরের শেষে আমি সবাইকে নিয়ে যাবো প্রমিজ। এখন পড়াশোনা করো। ফ্যাশন ডিজাইনার হতেও পরিশ্রমের প্রয়োজন আছে বুঝতে পেরেছো?
সুইটি মাথা নাড়িয়ে মুখটা করুন করে বলল,

বুঝতে পেরেছি কিন্তু ফ্রেন্ডদের আমি কথা দিয়েছি আঙ্কেল।এবার ওদের সঙ্গে যাচ্ছি। তাছাড়া কহিনুরকেও সঙ্গে নিবো ভেবেছিলাম। তুমি বললে আমাদের সঙ্গে গার্ড নিবো তবুও না বলোনা আঙ্কেল প্লিজ।
গালিব না বলতে চাইলো তার আগেই মেহুল মিষ্টি হেসে বলল,

নিশ্চয়ই যাবে সুইটি। আমি লাগেজ গুছিয়ে দিবো তুমি নূরকে নিয়ে খেতে আসো। উনি সারাক্ষণ মানুষ কা/টাকুটি নিয়ে বস্তু থাকেন এসব উনার বোঝার বাইরে।
গালিব ধমক দিতে চাইলো কিন্তু মেহুল পাত্তা দিলোনা। বাচ্চাদের সঙ্গে অবিচার ও কিছুতেই মানবেনা। সারাক্ষণ মেয়েদুটো ঘর বন্দি থাকে। একটু ঘুরলে আমাহরি ক্ষতি হবে না। কথাগুলো ভেবে ও বেরিয়ে গেলো। গালিব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো ঠিক তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠলো। গালিব ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৪

মর্গে নতুন লা/শ এসেছে দ্রুত আসুন।
গালিব ফোন রাখলো। কিছুদিন ধরে এটাই হয়ে আসছে। নতুন নতুন লা/শের উৎপত্তি হচ্ছে। যাদের শরীরে বিন্দু পরিমাণ ক্ষতচিহ্ন নেই তবুও মৃ/ত। মৃ/ত্যুর কারণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। মৃ/ত ব্যক্তিদের বয়সের তফাৎ খুব একটা বেশি না অল্প বয়সী সব। ছেলেমেয়ে উভয়ই এই অদ্ভুত মৃ/ত্যুর শিকার। প্রশাসনের জন্য খবরটা চাপা রাখা হয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অসুবিধা হবে। গালিব চুপচাপ বেরিয়ে আসলো। কেনো হচ্ছে এই মৃত্যু?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৬