কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৪

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৪
লাবণ্য ইয়াসমিন

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে গালিব পাশে মেহুল আয়েশ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। কয়েক ঘন্টা জার্নি করে বেচারীর কাহিল অবস্থা। সারারাত বেঘোরে ঘুমিয়েছে। গালিব মেয়ের দেখাশোনা করেছে। সকালে গালিব ওকে উঠিয়েছে। মেয়েটার ঘুম কাটানোর জন্য কফি তৈরী করেছে নিজ হাতে তারপর টেনে এনে বেলকনিতে বসিয়ে দিয়েছে। মেহুল ঘুম ঘুম চোখে কফির মগে চুমুক বসিয়ে দিতেই গালিব ওর পাশে বসে পড়লো। ওর হাত থেকে কফির কাপটা কেড়ে নিয়ে বলল,

অনেক খেয়েছো আর না। এতো ঘুম কোথা থেকে আসে শুনি? শুধু ঘুম আর ঘুম।
গালিবের ঝাড়ি শুনে মেহুল মুখটা করুন করে বলল,
ঘুম পেলে কি করবো? আপনিতো জানেন আমি জার্নি করতে পারিনা মাথা ঝিমঝিম করে। আজ থেকে প্রমিজ আর ঘুমাবোনা। মেয়েটাকে সময় দিবো। ভীষণ আদর করবো। আপনি দেখবেন আর জ্বলবেন। আমাদের মা মেয়ের ভালোবাসা দেখে।
মেহুলের কথা শুনে গালিব হাসলো। অর্ধখাওয়া কফি থেকে কিছুটা মুখে নিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমিওতো সেটাই দেখতে চাই মেহুল রাণী। খুব করে দেখতে চাই,তবে সেটা তোমার কাজকর্মকে না শুধুমাত্র তোমাকে। অন্যসব খেয়াল রাখার জন্য আমি আছিনা? সব সময় কাছেকাছে থেকো। তোমরা দুজন ছাড়া এখানে আমার কে আছে বলো? একজন আমার ভালোবাসা আমার হৃদয়, আরেকজন আমার হৃদয়ের স্পন্দন। দুটোকেই আমি খুব করে চাই।

আবেগে গালিবের গলা কাঁপছে। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ও মেহুলের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। মেহুল ওর দিকে চেয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠার জন্য চোখ দুটো ফুলে আছে। এলোমেলো চুলগুলো খোপা করা তবে বেশ কিছু চুল মুখের উপরে আর কানের পাশে ঝুলে আছে। গালিব দ্রুত ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে মেহুলের চুলগুলো ঠিকঠাক করে দিলো। এক গুছা চুল কানের পিঠে গুজে দিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল,

একটু গুছিয়ে থাকতে পারোনা নাকি সব আমাকেই করতে হবে? হাসপাতালে দুদিন পরে জয়েন করবো তখন কিন্তু খুব একটা সময় দিতে পারবো না। তাছাড়া তুমি জানো আমি কেমন ব্যস্ত থাকি। কহিনুরের জন্য আপাতত সিডিউলের বাইরে কিছু করবো না কিন্তু সেটা কতদিন? তারপর তোমাকেই দেখতে হবে।

গালিবের কথা শুনে মেহুলের মুখে হাসি ফুটলো। লোকটা ভালোবাসতে জানে। ওর মতো ছন্নছাড়া এতিম মেয়েকে কতটা আগলে রেখেছে। একসময় মনে হতো ওর পাশে কেউ নেই কিন্তু এখনতো একজন আছে। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করতেই গালিবের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো মেহুলের। হঠাৎ ভালোবাসা হয়না তেমনি ওদের দুজনের মধ্যেও হঠাৎ করে ভালোবাসা হয়নি।

প্রথমে মুগ্ধতা ছিল সেটা ক্রমাগত ভালোবাসাই রূপ নিলো। মেহুল সেটাকে পাত্তা দেয়নি। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজের কথা ভাবার সময় কোথায়? কিন্তু সেদিন হাসপাতালে যখন ওর মা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন সেই মূহুর্তে মেহুল পৃথিবী ভুলে গিয়েছিলো। বিদেশ বিভূয়ে ওর সঙ্গে তখন কেউ ছিল না। বাবা ছোট থেকেই নিখোঁজ মাকে নিয়ে ওর দুনিয়াদারি।প্রথম থেকে সবটা ভালো করে চললেও হঠাৎ ক্যান্সারে সব শেষ।

হাসপাতালের কেবিনে যখন ও চিৎকার করে কেঁদেছিলো হঠাৎ দেবদূত হয়ে গালিব ওর মাথায় হাত রেখেছিলো। অল্পদিনের পরিচিত সুদর্শন যুবকের বুকে সেদিন ও অনায়াসে নিজের দুঃখ বিলিয়ে দিয়েছিলো। ওর মায়ের দাফন শেষে গালিভ সেদিন রাতেই ওকে বিয়ে করে নিজের করে নিয়েছিলো। ভালোবাসার প্রকাশ প্রথমে ও নিজেই করেছিলো মেহুল শুধুমাত্র সেটাকে মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিয়েছিলো। তারপর থেকে কখনও আর ওর জীবনে ভালোবাসা অভাব হয়নি। গালিব ওকে আগলে রেখেছে। কথাগুলো ভেবেই মেহুল গালিবের কাধে মাথা রাখলো। গালিব ওর দিকে আরও খানিকটা সরে গিয়ে ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

ওই মেয়েটাকে খুঁজে পাইনি মেহুল। মেয়েটার পালস চেক করেছিলাম মৃত মনে হয়েছিলো তারপর হঠাৎ কিভাবে জানি গায়েব হয়ে গেলো। ওর টাকাটা আমি কিভাবে পরিশোধ করবো? কোনো ঠিকানা জানা নেই। কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
খুব দরকার ছিল এসব করার? আমাদের বাচ্চা অন্য একটা মেয়ের গর্ভে বড় হলো। আমার কষ্ট হয়েছে ভীষণ। কেন করলেন এমন?

মেহুল ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে। বহুবার ওকে নিষেধ করেছিলো এসব না করতে কিন্তু গালিব শোনেনি। হাতে কোনো উপাই ছিল না। মায়ের জন্য করতে হলো। মায়ের হুকুমেই নিজের মেয়েকে অচেনা একটা মেয়ের সঙ্গে রেখেছিলো । কথাটা ভেবেই গালিব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে উদাসীনভাবে বলল,

আমার মাকে ওরা ঠকিয়েছে মেহুল। মা ভীষণ কষ্টে আছেন তাই আমি চাইনি মায়ের কথার বিরুদ্ধে কিছু করতে। তাছাড়া কহিনুরতো আমাদের কাছেই আছে তাইনা? কতটা কিউট হয়েছে আমাদের বেবিটা একবার ভাবো?
দেখতে হবে তো কার মেয়ে? মেহুল যেমন কিউট মেহুলের বাবুও তেমন কিউট। আচ্ছা অরিত্রীর খোঁজ নিয়েছেন? কহিনুরের ও কিন্তু কয়েকদিন দেখাশোনা করেছে। মেয়েটা অতটা খারাপ না যতটা আপনি ভাবেন। রিজু ওকে ব্যবহার করেছে বোকা মেয়ে বুঝতে পারেনি।

সবাই স্বার্থের পাগল বুঝলে? কহিনুর আমার রক্ত আমার আত্না। ওরা ভাবলো কিভাবে আমি নিজের মেয়েকে ওদের কাছে রেখে মারা যাবো? আমার মেয়ের সুরক্ষার জন্য প্রথমেই আমি উকিল পাঠিয়েছিলাম যাতে অর্থের কথা ভেবেই ওকে দুটোদিন দেখাশোনা করে। হাসপাতালে যখন আমি অসুস্থ হওয়ার নাটক করছিলাম তুমি ওকে ছবিগুলো পাঠিয়েছিলে। ভালো মানুষ হলে অসুস্থ মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারতো বলো?
গালিবের কন্ঠ থেকে রাগ ঝরে পড়ছে। মেহুল ওকে শান্ত করতে বলল,

কিন্তু সবটাতো আপনার সাজানো ছিল। ছবিগুলো দেখে ও এমন রিয়েক্ট করবে আগে থেকেই জানতেন তবু কেনো এমন বললেন? ডাক্তার বলে যার তার লা/শ নিজের মতো করে ফেলবেন এটা কিন্তু ঠিক না। আপনি যে মৃত এটা কিন্তু কোর্টে প্রমাণিত কি হবে এখন?
গালিব বাঁকা হেসে বলল,

আমার ডেট সার্টিফিকেট কে দিলো মেহুল? হাসপাতাল থেকে লা/শ যাওয়ার পর ওরা কি এসব চেক করেছে নাকি উকিলের সঙ্গে কথা বলেছে? কিছুই বলেনি। আসলে আমি ছিলাম ওদের কাছে একটা সোনার ডিম পাড়া হাসের মতো। ভেবেছিলো আপদ মা/রা গেছে সবটা এবার আমাদের হবে। কিন্তু হলো সব উল্টো। রিজু শিকদার প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করেছিলো নিজের গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে আমার সব কিছু হাতিয়ে নিবে।

ওরাতো জানেনা আমি সবটা জানতাম। মেনুকা শিকদার আমার মায়ের সঙ্গে যেটা করেছে রিজুও সেটা আমার সঙ্গে করতে চেয়েছিলো। নিজের স্বামীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার মায়ের জীবনটা নষ্ট করেছে। এখন সমাজের কাছে আমাকে নিজের ছেলে হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মহান সাজার নাটক করছে। এতেই কি সব সমাধান হয়ে যাবে? জানো আমার নানুর পালক মেয়ে ছিলেন রেমুনকা শিকদার।
গালিব এইটুকু বলে থামলো। মেহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ও এতটা জানতো না। তাই প্রশ্ন করলো,

সবটা বলবেন প্রথম থেকে? আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
গালিব মলিন হেসে শুরু করলো,
আমার নানুর বাচ্চা ছিল না। একবার কোন এক এতিমখানা থেকে মেনুকা শিকদারকে দত্তক নিলেন উনি। তারপর বছর পাঁচের পর আমার মায়ের জন্ম হলো। নানু দুজনকেই সমান ভালোবাসতেন কিন্তু নানুর শশুর মশাই প্রচণ্ড ঘাড়ত্যাড়া মানুষ ছিলেন। উনি নিজের বুদ্ধিতে নিজের সবকিছু আমার মায়ের নামে লিখে দিলেন। নানু উনাকে বলেছিলেন কিন্তু উনি শোনেনি। দিন গেলো মেনুকা ম্যাম বড় হলেন তারপর থেকে মায়ের সঙ্গে শত্রুতা শুরু।

আমার মা নানুর আদরে আদরে বড় হয়েছিল বিধায় বাইরের জগত সম্পর্কে তেমন চেনাজানা ছিলো না। উনি কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন এটার সুযোগ নিলেন উনি। নিজের স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে মায়ের একটা সম্পর্ক তৈরী করে দিলেন। বাড়ি থেকে মানবেনা তাই গোপনে বিয়ে দিলেন। যেটা গোপন থাকলো। কিছুদিন পর আমার বাবাকে উনারা ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেললেন। ততদিনে আমি আমার মায়ের গর্ভে।

চারদিকে লোকজন কি বলবে না বলবে এসব বলে উনি আমার মাকে ভয় দেখাতে শুরু করলেন। যেহেতু গোপন বিয়ে কোনো ডকুমেন্ট নেই। উনি মাকে মানা করে নিজেই নানুর কাছে সত্যি গোপন করে সত্যি মিথ্যা মিক্সড করে বলে দিলেন। নানু সেটা সহ্য করতে পারলেন না। হার্ট এটাক করে মারা গেলেন। মেনুকা ম্যাম সেটার সুযোগ নিয়ে মায়ের মন গলিয়ে ফেললেন।

বললেন,”চিন্তা নেই এই বাচ্চা আমার নামে লোকে চিনবে।” যতদিন বাচ্চা না হচ্ছে ততদিন মাকে লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব উনার। আর সেটাই করলেন। কিন্তু আমার মা হয়তো বুঝেছিলেন কঠিন ঝামেলায় জড়িয়ে গেছেন। যেহেতু সব সমস্যা এই সম্পত্তি নিয়ে তাই আমি যেমন কহিনুরের নামে সব লিখে দিয়েছি উনিও তাই করলেন।

আমি তো আগে জানতামও না মেনুকা ম্যাম আমার নিজের মা নয়। আমার মাকে দেশের বাইরে রেখে দিলেন। তারপর আমাকে ব্যবহার করে মায়ের সব সম্পত্তি দখল করলেন। আমি যখন বড় হলাম একদিন সবটা পরিস্কার হলো। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তখন থেকে যা করেছি মায়ের সঙ্গে পরিকল্পনা করে করেছি। আমি কারো ক্ষতি করিনি। শুধু নিজের যা কিছু ছিল ওদের থেকে কৌশলে নিজের করে নিয়েছি। আর কহিনুরের বিষয়টা এটার বিষয়ে আমি সত্যি কিছু জানিনা।

গালিব আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলোনা।কক্ষ থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসছে। মেয়েটাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছিলো হয়তো উঠে গেছে।। গালিব উঠতে চাইলো কিন্তু ওর উঠার আগেই মেহুল ছুটে গেলো মেয়ের কাছে। মা মেয়ের এখন আল্লাদ চলবে ভেবেই গালিবের হাসি পেলো। মায়ের সঙ্গে কথা বলা জরুরি ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

মুখে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে অরিত্রী। রিজু কিছুক্ষণ আগে ওর মুখে থা/প্পড় দিয়েছে। ব্যাথাতে মুখ টনটন করছে। অতিরিক্ত শোকে চোখ থেকে পানি বের হচ্ছে না। গালিব যায় করুক কখনও ওর সঙ্গে এমন ব্যবহার করেনি। এই রিজুর জন্যই ও গালিবের মতো ছেলেকে ঠকাতে গিয়েছিলো। ফলাফল আজ নিজে ঠকে বসে আছে। রিজু কিভাবে পারলো ওর গায়ে হাত তুলতে? কথাটা ভেবে ও দাঁতে দাঁত চেপে হুঙ্কার ছেড়ে বলল,

তোমার সাহস হয় কিভাবে আমাকে থাপ্প/ড় দিচ্ছো? অরিত্রীকে অবলা পেয়েছো? তোমার মতো ছেলেকে ছুড়ে ফেলতে আমার সময় লাগবে না। অরিত্রীকে সস্তা পেয়েছো? নিছক ভালোবাসি তাই সহ্য করি।
অরিত্রীর কথা শুনে রিজু দমলো না। সামনে থাকা ফুলদানিটা ছুড়ে দিয়ে বলল,

খুব না রূপের দম্ভ তোমার? তবে কেনো গালিবের মন ভোলাতে পারলে না? এতগুলি দিন গালিবের সঙ্গে থেকেছো কখনও হয়তো গালিব তোমার দিকে সামান্যতম তাকিয়েও দেখেনি। ও মানুষ চিনে তাইতো নিজের পরিকল্পনা সফল করে সবকিছু অন্য একটা মেয়েকে দিয়ে গেছে। মেয়েটা সত্যি গালিবের যোগ্য তোমার মতো মাথামোটা নয়। আবার চিৎকার করছো। এখন থেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে হলে গলা নামিয়ে বলবে। আর শোনো রুশীর ছেলে আছে ওটা শুধুমাত্র রুশীর একার না আমারও ছেলে। আমাদের দুজনের ছেলে বুঝলে?

রিজুর কথা শুনে অরিত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। লোকটা ক্রমাগত নিজের আসল রূপে ফিরে আসছে। সত্যি অরিত্রী বড্ড বোকা। বোকা না হলে এমন জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতো? গালিব নিশ্চয়ই ওকে ঘৃণা করতো। অভিশাপ দিয়ে গেছে তাইতো এমন হলো। অরিত্রীর হৃদয় ভেঙে চুরমার হলো। নকল বিয়ে করে গালিব আজ পযর্ন্ত ওকে সামান্যতম অসম্মানও করেনি আর এই লোকটা দুটো দিন না যেতেই এমন করছে তবে বাকিটা দিন কেমনে যাবে?

অরিত্রী কিছুতেই এই লোকের সঙ্গে থাকবে না। নিজের মতো আলাদা হয়ে যাবে। কিছুদিন পর ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করবে তখন ওর মতো হাজারো রিজু ওর পায়ের কাছে গড়াগড়ি খাবে কিন্তু ওর মনতো এখন গালিবের বিরহে শোকর করছে। লোকটা ভীষণ ভালো ছিল। কোথায় গেলে উনাকে আবার পাওয়া যাবে ভেবেই ও ফ্লরে ধুপ করে বসে পড়লো। কাউকে ঠকালে যে নিজেও ঠকতে হয় এটা জানা ছিলো না। নিজের হাতে বদনাম ডেকে নিয়েছে। বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার মুখ নেই। ওকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে রিজু হুঙ্কার ছেড়ে বলল,

যা কিছু হয়েছে সবটা তোমার বোকামির জন্য হয়েছে। তোমার জন্য আমি সবকিছু হারালাম। মা আমাকে ভুল বুঝেছে। তোমাকে আমি ছাড়বোনা। কি ভেবেছো তোমাকে এমনি ছেড়ে দিবো? এতোই সোজা? দেখো তোমার সঙ্গে কি কি হয়।
রিজু হুমকি ধামকী দিয়ে বেরিয়ে গেলো। নিজেদের জালে নিজেরা ফেঁসে গেছে কিভাবে বেরিয়ে আসবে ভাবতে পারছে না।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩

গভীর রজনী নির্জন কক্ষ। মেহুলের কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে কহিনুর। গালিব এক হাত মেহুলের গায়ের উপরে রেখে আগলে রেগেছে। তিনজন মোটামুটি ঘুমের মধ্যে তলিয়ে আছে। কক্ষে আবছা আলো বিরাজ করছে। হঠাৎ একটা ছায়া মূর্তির উদয় হলো । ছায়াটা বেলকনি থেকে সোজা কহিনুরের পাশে এসে থামলো। হামু হয়ে ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে বাঁকা হাসলো। কিছু একটা ভেবে তুলে নিলো মেয়েটাকে। তারপর সোজাসুজি বাইরে এসে বেলকনি থেকে নিচের দিকে লাফিয়ে পড়লো।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৫