হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৯

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৯
সাইয়ারা মম

মাহিন বাইকে বসে চাবি ঘুরাবে এমন সময় কোথা থেকে নীলু মাহিন ভাইয়া মাহিন ভাইয়া করতে করতে এলো । মাহিন অবাক দৃষ্টিতে নীলুর দিকে তাকিয়ে আছে । এই এলাকার মধ্যে নীলু আসবে কোথা থেকে । এটা ওর অফিসের এলাকা , এখানে আশেপাশে কোনো থাকার জায়গা ও নেই যে অন্য কারো বাসায় আসবে । নীলু দৌড়াতে দৌড়াতে ওর কাছে এসে থামলো । হাঁপাতে হাঁপাতে বলল

– আপনাকে সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি আপনি শোনার নাম ই নিলেন না
– তুমি এখানে কি করছো ?
– বলছি বলছি , আপনার কাছে পানি আছে ?
– আছে
– তাহলে দিন ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাহিন তার ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল । নীলু তা মুহূর্তেই ছিনিয়ে নিয়ে তার তৃষ্ণা মেটালো । তারপর বোতল টি দিতে দিতে বলল
– এটা কিন্তু ঠিক না ভাইয়া, রোজা রমজানের দিনে পানির বোতল নিয়ে ঘুরেন ।
মাহিন তাজ্জব হয়ে কতক্ষণ নীলুর দিকে তাকালো । নিজে রোজা না রেখে সবার সামনে বসে পানি খেয়ে অন্যকে সেই পানি বহন করার জন্য খোঁচা দিচ্ছে । তবুও মাহিন এ সম্পর্কে সেরকম কিছুই বলল না । তবে আগের প্রশ্ন ই পুনরায় জিজ্ঞেস করল

– এখন বলো তো তুমি এখানে কি করছো ?
– বলব বলব , তার আগে একটা নিরিবিলি পরিবেশে চলুন তো । বলেই মাহিনের বাইকের পেছনে উঠে মাহিনকে ধরে বসল । মাহিন নীলুর হাত ছাড়িয়ে বলল
– আমাকে না ধরে বাইক ধরলে খুশি হবো
– আজব তো আপনার খুশির জন্য কাজ করছে কে ? আমি তো নিজের বেনিফিট দেখছি
– তারপরও আমি কখনো কোনো মেয়েকে বাইকে নেই নি তাই আমাকে ধরতে নিষেধ করছি আর সাবধানতার জন্য বাইক ধরতে বলছি

– বেশ আপনাকে ধরলাম না তবে । বাইক ই ধরলাম
মাহিন বাইক চালাতে শুরু করলে কিছুক্ষণ যেতেই নীলু মাহিনকে জড়িয়ে ধরে । এইবার ও মজা করে ধরেনি । আসলেই ওর ভয় লাগছে । ওর অসুস্থতার জন্য আরফান ওকে বেশি বাইকে চড়তে দেয়নি সব সময়ই গাড়ি তে চড়েছে । তাই ভয়ে এখন মুখ খানা একটু হয়ে গিয়েছে । মাহিন বাইকের আয়নায় ওর এমন ভয় পাওয়া দেখে আর চলন্ত অবস্থা দেখে তেমন কিছুই বলে নি। বাইক এসে থামলো পার্কের সামনে । এখন দুপুরের একটু পর অর্থাৎ বিকেলের কাছাকাছি টাইম তাই পার্কে তেমন মানুষ নেই । ওখানের সামনা সামনি রাখা দুইটি বেঞ্চে দুইজনে বিপরীত ভাবে অবস্থান করলো । মাহিন নীলুর দিকে তাকিয়ে আছে । নীলু নিজেই বলতে শুরু করল

– দেখুন আমি যা বলার খোলাখুলিই বলতে চাই । আর আপনার কাছ থেকেও সরাসরি ই উত্তর চাইছি । আশা করি আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না ।
মাহিন কিছু বলল না । তবে নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে নীলু বলতে শুরু করল
– আপনি মিহু ভাবিকে ভালোবাসেন একথাটা কি সঠিক?
মাহিন একটা ধাক্কার মতো খেলো । ও যে মিহুকে ভালোবাসে সে কথা তো কেবল বিদিশা জানে তাহলে কি বিদিশা নীলুকে কথাটি বলে দিয়েছে । মাহিন শিওর হওয়ার জন্য বলল

– একথা বলার কারণ জানতে পারি?
– আগে আমি হ্যাঁ বা না উত্তর চাই
– দেখো নীলু তোমাকে আমি এসব কথা বলতে বাধ্য নই । আমি কাকে ভালোবাসি বা না বাসি সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার । এসব কথা তো আমি অন্য কে বলতে যাবো না
– ফার্স্ট অফ অল আপনার কথায় এটা বোঝা যাচ্ছে যে আমার কথা সঠিক । আর দ্বিতীয়ত এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার না । আপনি যাকে ভালোবাসেন সে আমার ভাইয়ের স্ত্রী । আর আপনি তাদের জীবনে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারবেন না

– নীলু আমি বুঝতে পারছি না তুমি কিসের ভিত্তিতে এসব কথা বলছো । তোমার কি সত্যিই মনে হয় আমি মিহুকে ভালোবাসি ?
– তাহলে কি আপনি আমাকে ভালোবাসেন ?
নীলুর কথায় মাহিন একটু থেমে হেসে দিল ।বলল- ভালো মজা করতে পারো তুমি । আচ্ছা তুমি কি এবার বলবে যে তুমি এসব কেনো বলছো

নীলুর কথাটা মাহিনের কাছে মজা হলেও নীলু কথাটি মজা করে বলে নি । ও কথাটি মন থেকেই বলেছিল। মাহিন যেহেতু কথাটি মজা বলে উড়িয়ে দিল তাই নীলুও কথাটি মজা করে উড়িয়ে দিল । তারপর নিজের ফোন বের করে তুলি যে ভিডিও টা দেখিয়ে ছিল সেই দেখালো । মাহিন দেখার পরে বলল

– নীলু দেখো মিহুকে খারাপ ভেবো না । আসলে এখানে যেমন টা দেখাচ্ছে বিষয় টা তেমন না হ্যাঁ আমি এটা অস্বীকার করতে পারব না যে আমি মিহুকে ভালোবাসি না । কথা সত্য যে আমি মিহুকে ভালোবাসি কিন্তু মিহু আমাকে ভাইয়ের নজরে দেখেছে সব সময় । আর মিহু তো প্রায় ই মন খারাপ থাকলে ছাদে যেতো ঐদিন ও যাওয়ার পরে আমি লুকিয়ে গিয়েছিলাম । আসলে মিহু অনেক ভালো একটা মেয়ে । ওকে ভুল বুঝো না

– আচ্ছা ভাইয়া আপনি যেখানে ভাবিকে এতো ভালোবাসেন সেখানে কি আপনার উচিত হবে তার ভালো থাকাটা কেড়ে নেওয়া ? সে যদি আপনাকে ভালোবাসতো তাহলে হতো । কিন্তু এক পাক্ষিক ভালোবাসা কি ভালো থাকে যদি অন্য জনে অন্য কাউকে ভালোবাসে ?

– তুমি চিন্তা করো না । আমি মিহুর চোখে আরফানের জন্য ভালোবাসা দেখেছি । আর আমি কখনোই ওদের জীবনে বাঁধা হয়ে দাড়াতাম না । কারণ যাকে ভালোবাসি তাকে কি করে খারাপ থাকতে দেখি ?
আচ্ছা তাহলে এখন বাসায় যাওয়া যাক । অন্য কেউ দেখলে বিষয় টি খারাপ ভাবতে পারে । বলে মাহিন উঠে দাঁড়াতেই নীলু বলে উঠলো

– ভাইয়া সব কিছু ভুলে আপনি আবার শুরু করতে পারেন না ? যে আপনাকে চাইবে তাকে নিয়ে?
মাহিন মুচকি হেসে বলল – প্রথম ভালোবাসা কি ভোলা যায়? তবে আমি চেষ্টা করে দেখবো তাতে আমার টাইম লাগবে
– টাইম নিতে গিয়ে আবার তাকেও হারিয়ে ফেলেন না যে আপনাকে চাইতো । পরে একটা সময় এটা ভেবে আফসোস করতে না হয় যে ঐ সময় বিষয় টা কেনো ভেবে দেখলাম না ।

রেবেকার শরীর টা খারাপ লাগছে তাই আজকে ইফতারির আয়োজন টা করতে পারেনি । তাই আজকে মিহু ইফতারি তৈরি করছে । প্রায় জিনিস তৈরি করাই শেষ । এখন ভাজা পোড়া গুলো বাকি । চুলায় ভরা তেলের মাঝে পিয়াজু গুলো ভেজে নিল আর বেগুনের টুকরো গুলো বেসনের মধ্যে ভিজিয়ে সেটা ছেড়ে দিল । এমন সময় মিহুর কপালের সামনে চুলগুলো এসে গেল ।

ও কোনোভাবে হাত দিয়ে সরাতে গিয়ে বেসন কপালে মেখে ফেলল । তারপর কিছুক্ষণ চেষ্টা করতেই চুলের কাটা পড়ে গিয়ে সব চুল গুলো খুলে গেল । মিহু অসহায় হয়ে বসে আছে । কিন্তু দূর থেকে এসব অবলোকন করছিল আরফান । সে রান্নাঘরে এসেই মেঝে থেকে চুলের কাটা টি উঠিয়ে মিহুর চুলগুলো খোপা করার চেষ্টা করল । হঠাৎ করে আরফানের আগমনে মিহু একটু ঘাবড়ে গেল । তাই আরফান বলল

– আরে ভয় পেয়ো না , আমি আরফান
– কিন্তু আপনি আমার চুলগুলো নিয়ে কি করছেন ?
– দেখছি এর কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা । আচ্ছা চুলের খোপা করে কীভাবে? আমি কখনো কাউকে খোপা করে দেই নি । তবে বেণী করেছি , তাহলে বেণী করে দেই
আরফান অনেক আগ্রহের সাথে কথাগুলো বললেও মিহু কেমন যেন আড়চোখে তাকিয়ে আছে আরফানের দিকে । মিহুকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরফান ঠোটের কোণে হাসি এনে বলল

– জেলাস ? হ্যাঁ? আরে এভাবে জেলাসের কি আছে ? শুধু তো চুল নিয়ে বেণীই করেছিলাম বেশি কিছু না আর
আরফানকে আরকিছু বলতে না দিয়ে মিহু হাত ধুয়ে ফেলে । মুখ গোমরা করে বেগুণি গুলো নিয়ে চলে যায় । আরফান পেছনে পেছনে যায় তবে মিহুকে ওর বলা কথাগুলো শুনাতে পারে না । পিহু বাকি সব ইফতারির আয়োজন করছিল । মিহু ওকে বাকি সব বুঝিয়ে দিয়ে বলল

– পিহু আমি ওপরে যাচ্ছি , বাকি গুলো তুই সাজিয়ে রাখ । আমার মাথা টা ধরেছে
বলে মিহু ওপরে চলে গেল । আরফান ও মিহুর পেছনে পেছনে চলে গেল । মিহু মন খারাপ করে বাগানের দোলনায় বসে আছে আরফান ওদিকে যেতে নিলেই ফারিশের ফোন আসায় অন্য দিকে চলে যায়

ইফতারির সময়ে মিহু তেমন কোনো কথাই বললো না । রেবেকা জিজ্ঞেস করেছিল ঐদিন তোমাদের বাসার রান্না গুলো কি তুমিই করেছিলে? মিহুর আগেই নীলু উত্তরটা বলে দেয় । তারপর শুধু টেবিলে চামচ নাড়ানির শব্দ ই পাওয়া গেছে । সবার আগেই মিহু উঠে চলে গেল । আরফান সবার সাথে ইফতারি করে ঘরে গেল । গিয়ে দেখল ঘর সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢাকা । আরফান গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেখলো মিহু শুয়ে আছে বিপরীত দিকে ফিরে । আরফান মিহুর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলতে লাগল

– মিহু এই মিহু এদিকে তাকাও
বলে মিহুকে ঘুরাতে চেয়েও পারেনি । মিহু জোর করে বসে আছে । আরফান এবার অনেক কষ্ট করে মিহুকে ফিরিয়ে দেখল পুরো চোখ মুখ লাল করে আছে । কান্না করার ফলে চোখ মুখ ফুলে গেছে । আরফানের খুব কষ্ট হলো মিহুর এমন অবস্থা দেখে ।

– মিহু এ কি অবস্থা করেছো ?
(নিরুত্তর)
– আমি কি কোনো ভুল করেছি ?
(নিরুত্তর)
– মিহু তুমি কি এখনো ঐ কথায় রাগ হয়ে আছো । দেখো প্লিজ রাগ করো না । আমার কথাটা পুরো শুনতে তারপর যা করার করতে

– না আমার শোনা লাগবে না , আপনি চলে যান সেই মেয়ের কাছে যার বেণী করেছিলেন
– তুমি যদি কথাটা না শোনো তাহলে কিন্তু আমি সেই মেয়ের কাছে চলে যাবো
মিহু কান্না রেখে আরফানের দিকে তাকিয়ে আবার কান্না করে দিল । আরফান অস্থির হয়ে বলতে লাগল
– এই মিহু তুমি কান্না করো কেন ? আগে নামটা তো শোনো । আমি নীলুর চুল বেঁধে দিয়েছিলাম আর কোনো মেয়ে নয়।
– সত্যি তো

নীলুর চোখ চকচক করছে । আরফান এবার মিহুর কানে কানে বলল – আচ্ছা জেলাস ফিল করে তো সে যে ভালোবাসে । তাহলে আমি কি ভেবে নেবো আমার বেলী ফুল আমাকে ভালোবাসে ?
মিহু লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে উঠে ছাদে চলে গেল । আরফানের হৃদয়ে এখন বসন্তের ফুল ফুটেছে । আরফানের মনে একটা প্রশান্তির হাওয়া বইছে ।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২৮

( আস্সালামু আলাইকুম । আমি অনেক দুঃখিত । আমার শরীর অনেক দুর্বল আর এলার্জি দেখা দিয়েছে । তাই গল্প দিতে পারি নি । কালকে ও দিতে পারব কিনা বলতে পারিনা । আমি সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী।)

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩০