হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৬

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৬
সাইয়ারা মম

সবাই তোড়জোড় করে সবকিছু গুছাচ্ছে । প্রথমে যাওয়া হবে মিহুদের বাসায় । তারপর রাতে রওনা হয়ে বিদিশা দের বাসায় যাওয়া হবে । ঐখানে ঈদ কাটানোর প্লান করা হয়েছে । সব কিছু গুছিয়ে নীলু মিহুর কাছে গিয়ে বলল
– ভাবি ভাইয়া কি যাবে ?
– উনি যাবেন কীভাবে? উনি তো বললেন ওনার নাকি অফিসে কি সমস্যা হয়েছে । তাই যেতে পারবেন না । কিন্তু ঈদের দিন নাকি যেতে পারেন

– তাহলে কী এখন তুমি ভাইয়া কে ছাড়া যেতে চাচ্ছো ?
মিহু মুখটা কালো করে বলল – এখন আমি কি করতে পারি ? ওনার তো কিছুই মনে নেই
মিহুর চোখ ছলছল করছে । নীলু মিহুকে রেখে আরফানের রুমে গেল । আরফান ল্যাপটপ এ কিছু একটা দেখছিল । নীলু রুমে গিয়েই আরফানকে টেনে ছাদে নিয়ে গেল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– ভাইয়া তোমার কি হয়েছে আমাকে বলবে ? কালকে থেকে দেখছি তোমার মুড ভালো নেই । আর এখন তুমি আমাদের সাথেও যাচ্ছো না
– নীলু ফারিশ আমাকে ধোঁকা দিয়েছে ।
নীলু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে । ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ফারিশ আরফানকে ধোঁকা দেবে
– ভাইয়া আমার বিশ্বাস হচ্ছে না । ফারিশ ভাই এমন কেন করবে ?
– আমি জানিনা । ও আমার থেকে কম্পানি ছিনিয়ে নিয়েছে ।
– তারমানে তোমার সেই শত্রু ফারিশ ভাই ছিল ?
– হ্যাঁ

– ওয়াও । গ্রেট । একটা দিকে ভালো হয়েছে যে এখন আর ভাবিকে নিয়ে টেনশন করা লাগবে না । কারণ ফারিশ ভাই যা চেয়েছেন তা পেয়ে গেছেন । এখন নিশ্চয়ই ভাবির আর কষ্ট পাওয়া লাগবে না । তুমি এখন ভাবিকে সব জানাতে পারো
– হ্যাঁ সে বিষয়ে ও আমি চিন্তা করেছি । কিন্তু কীভাবে কি করব বুঝতে পারছি না । আর তাছাড়া ও মিহু তো তোদের সাথে যাচ্ছে ।
– সেটা নিয়ে টেনশন করো না । আমি ভাবিকে কিছু একটা বলে বাসায় পাঠিয়ে দেবো । বিদিশাদের ওখানে যাওয়া লাগবে না ।
– ঠিক আছে ।

আরফান স্বাভাবিক কথাবার্তা বললেও ওকে বিমর্ষ দেখাচ্ছে । নীলু সেটা দেখে আরফানের হাত ধরে বলল
– ভাইয়া তুমি এত টেনশন করো না । তুমি চাইলে ওরকম হাজার কম্পানি তৈরি করতে পারবে । তুমি একবার নিজেই মনে করো তো তুমি কীভাবে ঐ কম্পানি তৈরি করেছিলে? সেই সময় তোমার পাশে কেউ ছিল না । কিন্তু এখন আমরা সবাই আছি

– নীলু এই কথাটা প্লিজ কাউকে বলিস না । আমি শুনেছি ফারিশ ওর নামে আরো তিনটা পারফিউম বাজারে নামিয়েছে আর সেটাও ভালো রেসপন্স পাচ্ছে । ফারিশের ব্যপারটা পড়ে দেখছি । কিন্তু তুই কাউকে এই কথা বলবি না
– ঠিক আছে ।
– তবে ঐ বাসায় গেলে একটু সাবধানে থাকবি । আর তুই নিজে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাবি না । খবরদার বলে দিলাম ।
নীলূ নিজের মাথা নাড়ালো । কিন্তু ও আরফানের কথায় সম্মতি জানিয়েছে না অসম্মতি তা বোঝা গেল না ।

সব আত্মীয় স্বজন মিহুদের বাসায় অপেক্ষা করছে । রাতে সবাই মিলে বিদিশাদের বাসায় যাবে । কিন্তু কি জন্য যাবে তা কেউ ই ভাবতে পারছে না । নীলু এ বাসায় আসার পর থেকেই লক্ষ্য করছে মাহিন ওকে এড়িয়ে চলছে । কিন্তু কি কারণে এটা করছে সেটা বুঝতে পারছে না । যেহেতু ঘর ভর্তি মেহমান তাই সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে । রেবেকাও তুলির মায়ের সাথে কাজ এগিয়ে দিচ্ছে । তখন কেউ একজন তুলির মাকে বলে

– এই কি পিহু আর তুলির শ্বাশুড়ি ?
তুলির মা একটু রেবেকাকে অপদস্থ করতে টিটকারী মেরে বলল
– না আপা , মিহু আর পিহুর শ্বাশুড়ি । বেয়াইন তো কথা দিয়েছিলেন যে আমার মেয়েকে বাড়ির বৌ বানাবে কিন্তু সেটা মনে হয় উনি মিহুর রুপ দেখে গলে গেলেন ।
– আমাদের তুলি কম কিসে ?

– সেটাই তো । যাক যারা ভালো জিনিসের কদর বুঝে না তাদের এসব বলে লাভ নেই ।
রেবেকার কানে কথাগুলো এসেছে । তিনি সবার জন্য শরবত বানাচ্ছিলেন । মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
– আসলেই তো বেয়াইন ভালো জিনিসের কদর বুঝলেন না । মিহু তো কত গুণি মেয়ে । রান্না বান্না আর ঘরের কাজে তো মিহু বলতে গেলে পারদর্শী । তা মাহিনের জন্যই তো মিহুকে রাখতে পারতেন ।
তুলির মা মুখ বাকা করলো । রেবেকা যে ওনার কথার ওপরে কড়া কথা বলবে সেটা ওনি বুঝতে পারেন নি । তুলির মাকে থেমে যেতে দেখে ঐ মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল

– জানেন আমরা যেদিন পিহুকে দেখতে আসি ঐদিন মিহু সব রান্না করেছিল । আর আমি তো সেই রান্না খেয়ে ই মিহুকে বৌ বানাতে চেয়েছিলাম ।
– কিন্তু আমরাতো শুনেছিলাম তুলির জন্য নাকি প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছেন ?
আড় চোখে তুলির মায়ের দিকে তাকিয়ে রেবেকা বলল
– এখন কেউ যদি বলে রান্না তুলি করেছে তাহলে আমি কি করব ? আমি তো আর অন্তর্যামি না যে সব জেনে বসব ।
রেবেকা যে আসল ব্যাপার জানে সেটা ভেবে তুলির মা ওখান থেকে বাহানা দিয়ে সরে গেলেন। রেবেকা তা দেখে কিঞ্চিত হাসলেন

ইফতারির সময় ধুম পড়ে গিয়েছে । যে যেখানে পারছে সে সেখানে বসছে । পিয়াস কোথাও জায়গা না পেয়ে ছোটদের সাথে বসে পড়েছে । সবাইকে বলা হয়েছে যার যা প্রয়োজন নিয়ে খেতে । পিয়াস এক গ্লাস শরবত খাওয়ার পরে মনে হলো তৃষ্ণা মেটে নি তাই ওর ইফতারি রেখে আরেক গ্লাস শরবত আনলো । কিন্তু এসে দেখলো ওর বেগুনি আর আলুর চপ দুই কমে গেছে । ওর স্পষ্ট মনে আছে ও চারটা চপ এনেছিল কিন্তু কমল কি করে ? সামনের বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করতেই বলে পিয়াস নাকি নিজেই খেয়েছে । এবার শরবতের গ্লাস রেখে আরো দুটো চপ আনতে গেল । এসে দেখলো শরবতের গ্লাস মিসিং । এবার ওর সন্দেহ হলো কিন্তু তারপরও খেতে বসল । আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে খেতে খেতে একটা চপের মধ্যে মরিচ ঢুকিয়ে সবাইকে বলল

– আমি এক গ্লাস শরবত আনতে যাচ্ছি তোমরা সবাই এই চপটা দেখে রেখো
বাচ্চা গুলো সুন্দর করে মাথা নাড়ালো । বাচ্চা গুলোকে দেখে মনে হয় এক এক জন কত নিশ্পাপ । এদের সন্দেহ করে পিয়াসের গিল্টি ফীল হচ্ছে । তারপরও এক গ্লাস শরবত আনলো । এসে যা দেখলো তাতে চক্ষু চড়ক গাছ । একটা মোটা করে বাচ্চা নাক টানছে আর পিয়াসের প্লেট নিয়ে চপটা খাচ্ছে । একটু পরে ঝালে চিৎকার করে উঠলো । তখন পিয়াস ওর দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে দেখিয়ে দেখিয়ে শরবত খেতে লাগল ।

– আমার জিনিস খাওয়া । এখন দেখ কেমন লাগে
ওর বলতে দেরি কিন্তু একটা চড় পড়তে দেরি নেই । পাশে তাকিয়ে দেখলো তুলির খালা অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ।
– তুই দেকতাছো আমার নাতিডা জালে হোসায় আর তুই এইহানে দারাইয়া দরাইয়া শরবত খাও ।
– কিন্তু খালা ও তো আমার ইফতারি খেয়ে নিচ্ছিল
– হেতে কি এহন তোর শরবত ও খাইবে

বলে এক হ্যাচকা টান দিয়ে শরবত নিয়ে গেল । গিয়ে আদর করে তার নাতিকে খাওয়াতে লাগল ।
ইফতারির পরে কেউ দেরি করল না । সবাই রেডি হয়ে নিল । নীলু সেই নীল শাড়িটা পড়ে নিল । মিহু রেডি হতে নিলে বলে
– ভাবি তুমি একটা কাজ করতে পারো ?
– কি কাজ ?

– আমার ওষুধ গুলো রেখে এসেছি । তুমি একটু বাসায় গিয়ে নিয়ে আসবে ?
– আমি ?
– হ্যাঁ । নেহাল ভাই আর পিয়াস ভাইরা আগেই চলে গিয়েছে । চলো তোমাকে এগিয়ে দিচ্ছি । আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো ।
মিহুকে কোনো মতে বাহানা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিল । নীলু ঘরে যাওয়ার পথে মাহিনের সাথে দেখা হলো । মাহিন অপলক নয়নে তাকিয়ে রইল নীলুর দিকে । নীলু একটু লজ্জা পেল । তারপরে জিজ্ঞেস করল
– কিছু বলবেন ?

নীলুর বলা কথায় মাহিনের ঘোর কাটল । মাথা চুলকিয়ে বলল – একটু ছাদে আসতে পারবে ?
– এখন ?
– হুম
– কিন্তু সবাই তো চলে যাচ্ছে
– আমি বেশি টাইম নেবো না

বলে মাহিন ছাদে চলে গেল । নীলু ছাদে যাওয়ার পথে মিহুর দাদুর রুমের দিকে তাকালো । দেখলো সেখানে কেউ নেই । তাই কৌতুহল হয়ে ওখানে ঢুকল । কিছুক্ষণ এখানে ওখানে কিছু খুঁজল । কিন্তু কিছুই পেল না । তারপরও কিছুক্ষণ দেখলো । হঠাৎ কিছুর আওয়াজে সামনে তাকালো ।
মাহিন নীলুকে ওর সাথেই আসতে বলেছিল কিন্তু নীলু বেশ দেরী করায় নিচে চলে যেতে চাইলেই ছাদের দরজা খোলার আওয়াজে থেমে যায় । পেছনে না তাকিয়েই বলতে থাকে

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৫

– নীলু আমি কয়েকটা কথা এই কয়েকদিন ধরে অনেক ভেবেছি । ভেবে দেখলাম যে তুমি হয়ত আমাকে পছন্দ করো বা ভালোবাসো । আমি আরোও ভেবে দেখেছি যে আসলেই আমার দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া উচিত । আর এই কয়েকদিনে আমি তোমার প্রতি একটা অনুভূতি আকর্ষণ করেছি । তাই আমি তোমাকে বলতে চাই আমার সামনের পথ চলায় তোমাকে পাশে চাই । দেবে কি তুমি আমাকে সেই অনুমতি ?

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৭