প্রেয়সী গল্পের লিংক || নন্দিনী নীলা

প্রেয়সী পর্ব ১
নন্দিনী নীলা

বাসের পেছনের কর্ণারে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে একটা মেয়ে। তার পরণে লাল টুকটুকে বিয়ের বেনারসি শাড়ি। গা ভর্তি গহনা। মুখে ভারী মেকাপ। মেয়েটা ভয়ার্ত চক্ষু মেলে একটু পর পর বাসের সবার দিকে তাকাচ্ছে।‌ বাসের অধিকাংশ যাত্রী তার দিকে এমন ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে যেন ও মানুষ নয় অন্য কোন জীব।

প্রত্যেকেই ওর দিকে তাকিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। ব‌‌উ সাজে ও যাচ্ছে কোথায়? বাসা থেকে কি পালিয়ে এসেছে? একাই পালিয়েছে এসেছে নাকি কোন ছেলের সাথে এসেছে? ছেলেটা কোথায়? হ্যানত্যান প্রশ্ন করে ওর মাথাটা ধরিয়ে ফেলছে। মেয়েটি কারো প্রশ্নের কোন প্রকার উত্তর দেয়নি। মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। মেয়েটির পাশেই একটা আধ বয়স্ক পুরুষ বসেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

লোকটা মোটেও ভালো নয় কথার ছলে মেয়েটির পিঠে, হাতে ও কোমরে ছুঁয়ে দিচ্ছে। বাবার বয়সী লোকটার থেকে এমন ব্যবহারে ওর শরীরের প্রতিটা লোমকূপ ঘৃণায় রিন রিন করে উঠতে। ও লোকটার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালে লোকটার লোলুপ ও ভয়ংকর লালসা ভরা হাসি দেখতে পায়‌। পেট মোটা, কালো লোকটা, পান খাওয়ার লাল- কালো দাঁতের পাট্টা বের করে হাসছে। ওই হাসি দেখে ওর মন চাইছে লোকটাকে এক ঘুসি মেরে নাক ফাটাই দিতে। রাগী চক্ষু মেলে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটি। লোকটা আবারো নিজের হাতে ওর হাত চেপে ধরতে আসছে। মেয়েটির ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। শেষমেশ কুলাতে না পেরে চেঁচিয়ে মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়ল।

লোকটা ভয়ে আঁতকে উঠে সরে বসে। মেয়েটির চিৎকার এ বাসের কন্টাক্ট বাস থামিয়ে দিয়েছে। হেল্পার এগিয়ে এসে, কি হয়েছে আপা জিজ্ঞেস করছে।
মেয়েটি ঘৃণা চোখে এক পলক লোকটার দিকে চেয়ে হেল্পার কে বলল,,” আমি নামব।”
ভাড়া না দিয়ে বাস থেকে নেমে পরায় হেল্পার চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগল। মেয়েটি টাকা নাই বলছে। তা শুনে যা নয় তাই বলে গালিগালাজ করতে থাকে হেল্পার।

মেয়েটি গায়ের গহনা দিতে চাইলে ও নেবে না বলছে। তখন বাসের ভেতর থেকে একজন মহিলা বলে,, “আমার খুব তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আপনারা উনার সাথে চিৎকার চেঁচামেচি না করে গাড়ি ছাড়েন প্লিজ।”
” ভাড়া না নিয়ে যাব না।” হেল্পার বলল।
” আমি উনার ভাড়া দিয়ে দেব এবার চলেন।” মহিলাটি বিরক্তিকর গলায় বলল। গাড়ি চালু হলো।

মধু বাস থেকে নেমে চিন্তিত মুখে আশেপাশে তাকায়।। ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। তার উপর ওর হাতে একটা টাকা পয়সা কিচ্ছু নাই। বাসায় থেকে পালানোর সময় এমন অবস্থা হয়েছিল সব ফেলেই নিজের জান হাতে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। টাকার ব্যাগ, ফোন ফেলে এসেছে। নিজের উপর মধু চরম মাত্রায় বিরক্ত হচ্ছে। এখন তিন্নির বাসায় যাব কি করে? ফেসবুকে পরিচয় তিন্নির সাথে। আচমকাই বিয়ে ঠিক করে ফেলে ওর। বিয়ে করবে না বলে হাজার বলেও কাউকে মানাতে না পেরে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এখন এই ঢাকা শহরে কোথায় যাবে ও? তিন্নির নাম্বার ও তো মনে নাই। যে অন্য কারো ফোন দিয়ে কল দেব। এতো বড় ঢাকা শহরে কোথায় আছে তিন্নির বাসায় ও চিনবে বা কি ভাবে?

ঢাকা শহর নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা ছিল ওর কখনো আসার সুযোগ হয়নি। মানিকগঞ্জের বাইরে ওকে যেতেই দিত না কখনো। নিজের নানা বাড়ি খালা বাড়ি সব নিজের শহরেই তাই আরো সুযোগ হয়নি। ওর ঢাকা শহরের আসার ইচ্ছে পূরণ হলো ঠিক কিন্তু এমন বাজে ভাবে।

পালিয়ে আসা লাগল। এই রাতের বেলা ও এখন কোথায় যাবে? গাড়িতে এতো মানুষের মধ্যে ও নিজে সেভ ছিল না। ওই বাবার বয়সী খচ্চর লোকটা কেমন গায়ে হাত দিচ্ছিল। আর এখন তো অন্ধকার এই নিরিবিলি রাস্তার নেমে পরল রাগের মাথায়। এখন কি করবে? ও আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল। শাড়ির আঁচল খামচে ধরে হাঁটছে। হঠাৎ ও লক্ষ্য করল ওর পেছনে কয়েকটা পা এগিয়ে আসছে। ও আড়চোখে তাকিয়ে দেখল কয়েকটা বখাটে ছেলে লেগেছে ওর পিছু।

ভয়ে মধুর মেরুদন্ড সোজা হয়ে যায়। আড়চোখে হালকা ঘাড় কাত করে পেছনে তাকিয়ে দেখে তিন চারজন ছেলে ওর দিকেই তেড়ে আসছে। ওর ভয়ে শাড়ি আরো খামচে ধরল। গাড়ি থেকে ও এমন জায়গায় নেমেছে এখানে মানুষ জন,দোকান কিচ্ছু নাই। ভয়ে ও নিস্তব্ধ রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলে গুলো ওর কাছাকাছি চলে এসেছে ও দৌড় লাগায়। শাড়ি পড়ে কি দৌড়ানো যায়?

মানুষের দেখা না পেলেও একটা মাইক্রো গাড়ি নজরে আসে। গাড়ির সামনে একটা শুভ্র সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করেই ওর পা জোড়া থেমে যায়। দাঁড়িয়ে পরে আবসা অন্ধকার রাস্তায়। সাদা পাঞ্জাবি পরা রাতে ওই লোকটা কে দাঁড়িয়ে আছে? ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে।

ভূত নয়তো আল্লাহ এ কোন বিপদে ফেললে আমায়? পেছনে শয়তান ছেলেগুলো সামনে ভূত এবার আমার কি হবে? ছেলেগুলো একদম ওর কাছাকাছি চলে এসেছে দৌড়ে। ও ভয়ার্ত চোখে সামনে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পরা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলছে। অন্ধকার রাস্তায় সাদা রঙটা কেমন চিকচিক করে উঠেছে। কেমন ভূতুড়ে পরিবেশে হয়ে উঠেছে। এতে ও আরো ভয় পেয়ে গুটিয়ে যায়।

হঠাৎ একটা গাড়ি ছুটে আসে রাস্তায় তার তীব্র আলোয় ও খেয়াল করে ছেলেটার পাশে আরেকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মৃদু আলোয় মেয়েটার খোলা চুল নজরে আসে। এটা দেখতেই ও দৌড় লাগালো কেন লাগালো ও নিজেও জানে। এগিয়ে এসে দেখল পাশে আরো ছেলে মেয়ে আছে। গাড়ি ও একটা নয় দুইটা। পেছনের গাড়িতে কয়েকজন উঠে চলে গেল। সামনের গাড়িটা রয়ে গেল তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন মানুষ দু’জন ছেলে একটা মেয়ে।

পাঞ্জাবি পরা ছেলেটার সাথে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে গা ঘেঁষে। পাশেই একটা খয়েরি শার্ট পরা ছেলে ফোন টিপছে দিন দুনিয়ার খেয়াল ভুলে‌ । এমন ভাবে ফোন টিপছে যেন ফোন ছাড়া আশেপাশে আর কিছু নাই। ও দৌড়ে তাদের সামনে এসে থামতেই। তিনজন‌ কপাল কুঁচকে তাকাল ওর দিকে । মধু কোমরে হাত রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ঘাড় কাত করে কিঞ্চিৎ ফিরিয়ে দেখল পেছনের ছেলেগুলো আসছে নাকি। না ছেলেগুলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অতঃপর উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরেছে। সামনের তিনজন ওর দেখাদেখি পেছনে তাকিয়েছে।

একটা মেয়ের পেছনে রাস্তার ছেলেদের ধাওয়া এক পলক দেখেই ধরে ফেলেছে কাহিনী কি!
মধু ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিন জোড়া উৎসুক চোখের দিকে।
সবাই মিলে কয়েকদিন পর পর ট্যুর দেওয়া এই দলের স্বভাব।‌ এবার ও গিয়েছিল বান্দরবান। তিনদিন কাটিয়ে এসেছে। ঢাকা এসেই গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেছে। ড্রাইভার চাকা চেঞ্জ করছিল। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল পাঁচজন। দুইজন পাশেই হাঁটছে। আর তিনজন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ফুয়াদের হাত ধরে কথা বলছে মিতুল। মিতুল ফুয়াদের আংটি পড়ানো ব‌উ।

কাপল এর মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে কাবাবের হাড্ডি হয়ে সমুদ্র। ফুয়াদের বড় ভাই হ‌ওয়া সত্বেও সমুদ্রের নসীব খারাপ। ওর সামনেই ওর ছোট ভাই, হবু ব‌উ নিয়ে প্রেম করছে। আর ও ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে গার্লফ্রেন্ড বা হবু ব‌উ এর অভাবে।
দীর্ঘ জার্নি করে সমুদ্রের হাঁটতে ইচ্ছে করছে না তাই তো বাকি দুজনের মতো সে তাদের একা রেখে যেতে পারছে না। ফোন হাতে ফোনে মনোযোগ দিয়ে রেখেছে। তিনজনের ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ আগমন ঘটে একটা অদ্ভুত মেয়ের। যার পরণে বিয়ের বেনারসি। মেয়েটাকে দেখেই বিয়ের কনে লাগছে। কিন্তু অদ্ভুত মেয়েটা বিয়ের আসরে না‌ থেকে রাস্তায় দৌড়াচ্ছে কেন?

সমুদ্র ফোন অফ করে ফুয়াদ আর মিতুল কে পেছনে ফেলে এগিয়ে এসে মধুর সামনে দাঁড়ায়। পেছনে এক দল ছেলে দৌড়ে পালাচ্ছে ও গলা উঁচিয়ে সেদিকে তাকায়। ততক্ষনে বাকি দুজন ও চলে আসে ফাহাদ আর রাহী। কিন্তু ওদের দেখতে পায়নি এখনো মধু। ওরা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে মধুর দিকে।
সমুদ্র মধুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,,” এনি প্রবলেম?”

মধু ঢোক গিলে সমুদ্রের কথাকে অগায্য করে মিতুলের সামনে গিয়ে বলল,,” আপু একটা হেল্প করবেন প্লিজ।” খুব অসহায় কন্ঠ ওর।
অপরিচিত দু’জন ছেলের সামনে ওর ভয় করছে। যাকে দেখছে তাকেই সন্দেহ হচ্ছে। এইটুকু সময় তো কম কিছুর সম্মুখীন হয়নি। কিন্তু এখানে একটা মেয়ের উপস্থিতি পেয়ে ও সাহস পেয়েছে। এদিকে সমুদ্র রাগী চোখে তাকিয়ে আছে মধুর পানে। ও এগিয়ে এসেছিল ওকে ফেলে মেয়েটা চলে গেল। ওর কথাকে ইগনোর করল। এইভাবে অপমান। অপমানে ওর মুখটা লাল হয়ে উঠেছে কিন্তু অন্ধকারে তা বুঝা গেল না তেমন একটা। শুধু দাঁতে দাঁত চেপে রাগী লুক দিয়ে তাকিয়ে ছিল মধুর দিকে।

ড্রাইভার এগিয়ে এসে বলল,,” গাড়ি ঠিক হ‌য়েছে। সবাই উঠে পড়ুন।”
সবার আগে উঠে গেল সমুদ্র। এই মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাইছিল কিন্তু মেয়েটা ওকে এইভাবে অপমান করল। গাড়িতে উঠে ঠাস করে দরজা আটকে দিল। মিতুল ও ফুয়াদ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
মিতুল যথেষ্ট বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস বলল,,” কি হেল্প? দেখে তো বিয়ের কনে লাগছে? বিয়ে ছেড়ে রাস্তায় কি?”

” আপু পালিয়ে এসেছি।” মাথা নিচু করে বলল মধু।
রাহী আর ফাহাদ গাড়ির অপর প্রান্তে ছিল তাই ওদের মধু দেখে নি। পালিয়ে এসেছে শুনেই দুজনে চিৎকার করে এগিয়ে এল। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো।
রাহী কৌতুহল গলায় বলল,,” ও মাই গড। তুমি পালিয়ে এসেছ? বিয়ে করবে না বলে? তোমার তো খুব সাহস।”
মধু আচমকা চিৎকার শুনে চমকে উঠে। এবং আরেকটা মেয়েকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দেয়। রাহী এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে মধু কে। মধু উত্তর দিচ্ছে।

রাহী বলল,,” তোমার নাম কি?”
মধু বলল,,” মেহেরিমা মধু।”
” ওয়াও নাইস নেম। আমি রাহী।”
মিতুল, ফুয়াদ ও গাড়িতে উঠে বসেছে।

এদিকে মধু পালিয়ে আসার কাহিনী শুনাচ্ছে ওদের দুজনকে। ফাহাদ আর রাহী গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
সমুদ্র গম্ভীর গলায় বলল ওদের দুজনের উদ্দেশ্যে,,”গাড়িতে উঠবি। নাকি সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কাহিনী শুনবি।”
রাহী এগিয়ে এসে বলল,,” সমুদ্র ভাই আমরা মধু কে আমাদের সাথে নিয়ে যাই? ওর ঢাকায় যাওয়ার মতো কোন জায়গা নাই আপাতত। এই রাতে ও কোথায় যাবে। যার বাসায় যেতে চেয়েছিল তার সাথেও যোগাযোগ করতে পারছে না।”

ফাহাদ ও এগিয়ে এসে বলল,,” হ্যা ভাইয়া প্লিজ ওকে আমাদের সাথে নিয়ে চলো প্লিজ।”
সমুদ্র এক ঝিলিক মধু এর দিকে তাকিয়ে ফুয়াদ এর দিকে চোখ রেখে বলল,,” কি বলিস?”
” এসব ঝামেলা মাথায় নিতে চাইছি না। আর মেয়ের মতলব খারাপ ও হতে পারে। এতো তাড়াতাড়ি কাউকে বিলিভ করা উচিত নয়।”

” কিন্তু মেয়েটাকে রাস্তায় ফেলে যাব কি করে? একটু আগেই কয়েকটা ছেলে ওর পেছনে ছিল।”
” তোমার ইচ্ছে হলে নিতে পারো। এসবের আগে পিছে আমি নাই। এর জন্য জিজ্ঞেস করার কি আছে?”
“গাড়িটা তোর। তোর গাড়িতে কাকে নিবি তার পারমিশন তো তোর থেকেই নিতে হবে।”
বড় ভাইয়ের কথা শুনে ফুয়াদ হেসে ফেলল।

” তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি ছোট আমি বড়।”
“দক্ষতা তোর বেশি। আমি তো অন্যের উপর ডিপেন্ডিন্ট।”
” আচ্ছা নিয়ে নাও।”
সমুদ্র ওদের ভেতরে উঠে বসতে বলল মধু কে নিয়ে।

মধু গাড়িতে উঠে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। রাহী কে ও ফাহাদ কে অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছে। ওদের জন্য আজ একটা গতি হচ্ছে। না হলে এই রাতে কোথায় যেতো?
পেছনের সিটে বসেছে ওরা তিনজন। মাঝখানে রাহী দুপাশে ফাহাদ ও মধু ।‌ মাঝখানের সিটে ফুয়াদ আর মিতুল বসেছে। পেছনে থেকে দুই কাপল এর প্রেম দেখছে মধু। লোকটার সাদা পাঞ্জাবি দেখে তখন কি ভয়টাই না পেয়েছিল। ও বুকে হাত দিয়ে ফুঁ দেয় আবার ও।

মধু চোখ পিটপিট করে তাকায়ে আছে। কারো মুখ ও ঠিক মতো দেখতে পায় নি। গাড়িতে উঠার‌ পর ও গাড়ি অন্ধকার করে রাখা। বাইরেও আধো অন্ধকার রাস্তায় ছিল। এদের একবার আলোয় না দেখলে নেক্সট টাইম চিনতে পারবে কিনা সন্দেহ।
কোথায় যাওয়ার কথা ছিল কোথায় যাচ্ছে। ওদিকে বাসায় কি হুলুস্থুল কাণ্ড হচ্ছে আল্লাহ তাআলা জানেন। শাড়ি পড়ে এতো দৌড়াদৌড়ি করে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ওর শ্বাস আটকে আসছে। ও বন্ধ গাড়িতে থাকতে পারে না। জানালা লাগিয়ে রাখা তাই ওর খুব অসুবিধা হতে লাগল। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে নিজের সমস্যার কথা বলতেও পারছে না। এদিকে স‌ইতেও পারছে না।

” মধু তোমার কি খারাপ লাগছে?” রাহী মধুর ছটফটানি টের পেয়ে জিজ্ঞেস করল।
মধু না করতে চেয়ে ও বলল,,” খুব গরম লাগছে। মাথা ঘুরাচ্ছে।”
” এসি চলছে তো। গরম লাগছে কেন? তুমি চোখ বন্ধ করে মাথা হেলিয়ে রাখো। ভালো লাগবে।”
মধুর দম বন্ধ হয়ে আসছে। ও তোতলানো গলায় বলল,,” আপু জানালা খোল প্লিজ। আমি বন্ধ গাড়িতে থাকতে পারি না। আমার শ্বাস আটকে আসছে।”

প্রেয়সী পর্ব ২