হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২
নন্দিনী চৌধুরী

ব্যাথায় বার বার কুকড়িয়ে উঠছে শুভ্রতা।পিঠে খুব জ্বালা করছে তার।কালো পিঠে পোড়ার লাল দাগ ভালোই ফুটে গেছে।খুব কষ্টে হাত পিছনে নিয়ে নিয়ে মলম লাগাচ্ছে সে।হাত দিতেই জ্বলে যাচ্ছে জায়গাটা।একটু আগেই মামি তাকে গরম খুন্তি এখানে চেপে ধরেছে।
কিচ্ছুখন আগে,,,
মামি:কোথা থেকে আসা হচ্ছে নবাবজাদী।

শুভ্রতা মামির কথায় ভয় পেয়েযায়।এটা যে ঝর এর পুর্বেআবাস তা সে বুজতে পারছে।শুভ্রতা আসতে করে বলে উঠে,
শুভ্রতা:মামি আজ কলেজে এক্সট্রা ক্লাস ছিলো তাই আসতে দেরি হয়েছে।তুমি চিন্তা করোনা মামি।আমি সব রান্না করে দিচ্ছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মামি এভার শুভ্রতার দিকে তেরে আসলো তারপর শুভ্রতার চুলের মুঠি ধরে চেচিঁয়ে বলতে লাগলো,
মামি:হারামজাদি তোর এক্সট্রা ক্লাস জাহান্নামে যাক।তুই জানস ১২টায় উনুন না জ্বালালে রান্না হতে দেরি হয়।এখন ঘরের বেটাছেলে গুলো ফিরলে তাদের খাবার দেবে কে তোর মরা বাপ।
শুভ্রতা মামির হাত থেকে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে,
শুভ্রতা:আল্লাহর দোহাই লাগে মামি আমার মৃত বাবাকে কিছু বলোনা।যা বলার যা কিছু করার আমাকে বলো করো কিন্তু খবরদার আমার বাবাকে কিছু বলবানা।

শুভ্রতার কথা শুনে মামি আরো ও রেগে গেলো রেগে বললো,
মামি:ফক্কিনির বাচ্চা তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মুখের উপরে কথা বলিস আজকে তোকে এর মজা দেখাচ্ছি।
বলেই আশে পাশে কিছু খুজতে থাকেন তারপর চুলার পাশে খুন্তি পায় গরম খুন্তি নিয়ে শুভ্রতার চুল ধরা অবস্থায় লাগিয়ে দেয় পিঠে।
শুভ্রতা:আল্লাহ গোওওও।মামি দোহাই লাগে ও মামি খুন্তিটা সোরাও।মামি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মামি।আমি মাফ চাচ্ছি তোমার কাছে।

শুভ্রতার মামি শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বলেন,
মামি:ফের আমার মুখে মুখে কথা বলললে খুব খারাপ হবে মনে রাখিস।আর তোর আর আজকে রান্না করতে হবেনা।এখনি সব এলোবলে আমি খাবার বাহির থেকে আনিয়ে রাখছি।তুই যাহ তোর ঘরে যা খাওয়ার সময় যেনো তোকে টেবিলের আশে পাশে না দেখি।

শুভ্রতার মামি হনহন করে চলে গেলো আর শুভ্রতা উনুন বন্ধ করে চলে আসে রুমে।খুব জ্বলছে পিঠতার।ড্রয়ার থেকে পোড়ার মলম বের করে সেটা খুব কষ্টে লাগাচ্ছে পিঠে।গায়ের জামাটা খুলে একটা ওড়নাকে ভালোভাবে শরীলে পেচিয়ে নিলো।যাতে পোড়া জায়গায় কোনো সমস্যা না হয়।এখন নিচে কোনো কাজ নেই।তাই শুভ্রতা দরজা আটকে দিয়ে জানালায় পর্দা দিয়ে দিলো।তারপর উপুত হয়ে শুয়ে পরলো খাটে।খুব ব্যাথা করছে পিঠে।শুভ্রতা খাটে শুয়ে বাবার কথা ভাবতে লাগলো।আজ বাবা থাকলে তার জীবন্টা এমন হতোনা।শুভ্রতা কাদঁছে আর বলছে,

কেন চলে গেলে বাবা আমাকে একা রেখে।আমার যে তোমাকে ছাড়া খুব কষ্ট হয়।জানো বাবা কেউ আমাকে ভালোবাসেনা।আমাকে দেখতে পারেনা।শুধু মাত্র আমি কালো বলে।তুমিই তো আমাকে কত ভালোবাসতে আদর করতে।কিন্তু কেউ এখন আমাকে ভালোবাসেনা।সার্থপর মা নিজের সুখের জন্য আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করে চলে গেলো।আমার কোনো খোঁজ খবর সে নেয়না।বাবা তোমাকে ছাড়া আমার কেউ নেই।তুমি চলে গেলা।যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেতে তাহলে আমাকে এতো কষ্ট সইতে হতোনা।

আমি যাদের বেশি ভালোবাসিই তারাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়।দেখোনা বাবা সায়ানকে আমি কত ভালোবাসলাম সে আমাকে ঠকালো।আমার জীবনের প্রথম প্রেম আমাকে ঠকিয়েছে।আচ্ছা বাবা আমি কি দোষ করেছিলাম বলো।একটা ভুল করে থাপ্পরই মারছিলাম তার প্রতিশোধ ও এভাবে নিলো।আমাকে তার বদলে কয়েকটা থাপ্পর মেরে দিতো।আমার মনটা কেন ভাংলো।
নিজের মনে মনে কথা গুলো আউরিয়ে আসতে আসতে ঘুমিয়ে পরে শুভ্রতা।ব্যাথা আর কান্না কাটি করায় অনেকটাই ক্লান্ত সে।

হোটেলের এক রুমে দীর্ঘসময় মিলনের পর রাহাতের বুকের উপর শুয়ে আছে প্রিয়া।প্রিয়ার ২০২ নাম্বার বড়লোক বয়ফ্রেন্ড রাহাত।সায়ানের সাথে রিলেশনের পাশাপাশি রাহাতকেও হাত করে রেখেছে প্রিয়া।বড়লোক বাবার আদুরে ছেলে রাহাত।মেয়েবাজ নেশাখোর সব গুন তার ভেতর বিদ্যমান।মেয়েরা তার কাছে আসেই তার বাবার অগাত পয়সার কারনে।প্রিয়াও তাদের মাঝে একজন।

প্রিয়ার সাথে রাহাতের দেখা হয় একটা ক্লাবে।সেখান থেকে বন্ধুত্ত তারপর রিলেশন।প্রিয়া এটা জানায় ও নি রাহাতকে তার যে সায়ানের সাথে রিলেশন আছে।সায়ানের পাশাপাশি রাহাতের সাথে সময় কাটায় সে।রাহাতের সাথে এই নিয়ে অনেকবার মিলিত হয়েছে সে।বদলে রাহাত তার পিছনে অনেক টাকা ব্যয় করে।প্রিয়া রাহাতের বুকে শুয়ে বুকে নখ দিয়ে আচর কেটে কেটে দিয়ে বলছে,

প্রিয়া:বাবু আমরা বিয়ে করবো কবে?
রাহাত:খুব তাড়াতাড়ি বাবু।
প্রিয়া:এভাবে আর তোমার ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা করেনা।বৈধ ভাবে তোমার ভালোবাসা পেতে চাই।
রাহাত:হ্যা পাবাতো বাবু একটু অপেক্ষা করো।(তোর মতো মেয়েকে এই রাহাত বিয়ে করবেনা।তুইতো শুধু আমার বিছানার সজ্ঞি।মুড উঠে গেলেই তোকে ছুড়ে ফেলে দিবো।)
এরপর রাহাত আর প্রিয়া ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলো হোটেল থেকে।সায়ান অনেকবার কল করেছে প্রিয়ার নাম্বারে।কিন্তু প্রিয়া রাহাতের সাথে বিজি থাকায় ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।এখন তাকে সায়ানের সাথে দেখা করতে হবে।প্রিয়া চলে গেলো সায়ানের সাথে দেখা করতে।

বিকালের দিকে ঘুম ভাংগে শুভ্রতার।ব্যাথায় শরীরে জ্বর চলে আসছে তার।খুব কষ্টে উঠে।একটা জামা গায়ে দিয়ে নিলো সে।পিঠের ব্যাথা হাল্কা কমেছে।শুভ্রতা রুমের বাহিরে এসে দেখে বাসায় কেউ নাই।পরে তার মনে পরলো আজ তার ছোট মামির বোনের এংগেজমেন্ট সেখানে গেছে সবাই।শুভ্রতা আসতে করে রান্নাঘরে এসে ফ্রিজ খুলে দেখে খাবার আছে কিনা।খুজে সে পেলো পান্তা ভাত আর কালকের বাশিঁ তরকারি।এগুলাই খায় শুভ্রতা।এবাড়িতে এসে কবে যে ভালো কিছু খেয়েছে তা মনে পরেনা শুভ্রতার।অনেক ভালো ভালো রান্না হলেও তার কপালে জোটে পান্তা ভাত আর বাশিঁ তরকারি।

একবার সে মাংসের তরকারি থেকে এক পিছ ছোট মাংস খেয়েছিলো তা মামি দেখার পর শুভ্রতার জিবলা ছ্যাকা দিয়ে দিছিলো আর পুরা একদিন কিছু খেতে দেয়নি।এরপর শুভ্রতা কোনোদিন সাহস করে কিছু মুখে দেয়নি।এসব বাশিটাশি খেয়েই থাকতো।খাওয়া শেষে শুভ্রতা নাপা খেলো।তারপর ওযু করে এসে নামাজ পরলো আসরের।নামাজ পরলে নিজের মনটা অনেক হালকা লাগে।

শুভ্রতা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।দূর আকাশের পাখিরা নিজ নিজ বাসায় ফিরছে।তাদের পরিবারের কাছে ফিরছে।আচ্ছা শুভ্রতাকি কোনোদিন এখান থেকে মুক্তি পাবে।কেউ কি তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে এখান থেকে।নাহ কে নিয়ে যাবে তাকে এখান থেকে।তার মতো কালো মেয়েকে কে নেবে নিজের জীবনে।সবাই তো সুন্দরের পূজারী।তার এই কালোময় জীবন কালো মেঘেই ডেকে থাকবে।

সবাই বলে কালো জগৎ এর আলো।কিন্তু এই কালো সবার চোখের সাল মনে হয়।সাদা চারমড়ার অধিকারি হয়েও কালো মন নিয়ে বসবাস করে অনেক মানুষ।আর কালো চামড়া নিয়েও ভালো একটা মন নিয়ে বসবাস করে অনেক মানুষ।মাগরিবের আজান দিয়ে দিছে।শুভ্রতা মাগরিবের নামাজ পরে কলেজের পড়া নিয়ে বসলো।

কফির মগ হাতে নিয়ে ভাইয়ের রুমে আসলো মহুয়া।কফি নিয়ে রুমে এসে দেখে ফাইল নিয়ে গম্ভির মুখ করে বসে আছে তার ভাই।মহুয়া আসতে করে ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলে,
মহুয়া:এই নে ভাইয়া তোর কফি।
বোনের গলার আওয়াজ পেয়ে ফাইল রেখে সামনে তাকায় মিষ্টি হাসি দিয়ে কফিটা হাতে নেয় শিশির।মহুয়া শিশিরের পাশে বসতে বসতে বলে,

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১

মহুয়া:তোমাকে এতো গম্ভির লাগছে কেন ভাইয়া কোনো সমস্যা হইছে?
শিশির:নারে একটা ক্যাশ মাথায় ডুকছেনা সেটা নিয়ে রিচার্জ করছি।
মহুয়া:ওহ।আচ্ছা ভাইয়া শুনো আমাকে কালকে কলেজে দিয়ে আসবে।এই তিনদিন জ্বরের কারনে যেতে পারিনাই।
শিশির:আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে আসবো।
মহুয়া:আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই।

বলেই মহুয়া উঠে চলে গেলো আর শিশির পুনরায় ফাইল দেখতে বিজি হয়ে গেলো।
শুভ্র আহমেদ শিশির।একজন আইজিবি পুলিশ অফিসার।শিশিরের বাবা মিস্টার এনাউল আহমের ছিলেন একজন আইজিবি অফিসার।খুব সৎ আর দায়িত্বশীল ছিলেন তিনি।কিন্তু একদিন এক ক্যাসের সমাধান করা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।শিশির মানে এটা কোনো নরমাল মৃত্যু নয়,এটা একটা খুন।শিশির ও তাই বড় হয়ে একজন পুলিশ অফিসার হয়েছে।বাবার খুনিদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে।শিশিরের পরিবার বলতে তার মা আর বোন।শিশিরের মা সাবিনা আর ওর ছোট বোন মহুয়া ইসলাম মুন।এদের নিয়েই শিশিরের একটা ছোট দুনিয়া।

রাতের দিকে শুভ্রতার মামারা সবাই বাসায় আসে।শুভ্রতা সবাইকে সব গুছিয়ে দিয়ে আসে।আজকে সে একবার ও সায়ানের সামনে যায়নি।অথচ আগে হাজার বাহানায় যেতো সায়ানের কাছে তাকে একটু দেখতে।শুভ্রতা চায়না নিজেকে দুর্বল করতে।সে সায়ানকে দেখিয়ে দেবে সে কালো হলেও কোনোদিক দিয়ে অযোগ্য নয়।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৩