হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৩

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৩
নন্দিনী চৌধুরী

সকালে শুভ্রতা ফজরে উঠে নামাজ পরে নেয়। তারপর কিছু পড়াপড়ে রান্না ঘরে আসে নাস্তা বানাতে।সকালে সবার আগে সবাইকে চা দিতে হয়।একটু দেড়ি হলেই বকা খেতে হয়।শুভ্রতা এক চুলায় চায়ের পানি দিয়ে আরেকচুলায় আটা মাখার জন্য গরম পানি দিলো।রুটির সাথের ভাজি কেটে নিলো।তারপর চা বানিয়ে ফ্লাকসে ভরে রাখলো।সবাই উঠলেই দিয়ে দেবে চা।ভাজি রান্না করে রুটি বানানো শুরু করলো।এর মাঝেই সবাই উঠে পরে।প্রথমেই শুভ্রতার মেঝ মামির ঘর থেকে ডাক আসলো।শুভ্রতা চায়ের ট্রে নিয়ে তার রুমে গেলো।রুমে ডুকার সময় শুনতে পেলো শুভ্রতার মামি মামাকে বলছে,

শুভ্রতার মামি:শুনো বাবাকে বৃদ্ধআশ্রমে রেখে আসো।আমার আর ভালো লাগছেনা এসব।পেরালাইজ হবার পর থেকে সেই যে বিছানায় পরেছে তো পরেছে।যদি ভালো না হয় তাহলে মরে যায়না কেন।উফফ অহেতুক টাকা নষ্ট হচ্ছে ওনার পিছনে।
শুভ্রতার মামা:কি বলছো এসব উনি আমার বাবা।বাবাকে এসব বলছো কেন।আর আমি টাকাতো কম কামাইনা তাহলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শুভ্রতার মামি:হ্যা কম কামাও না কিন্তু উনি একটা বারতি খরচ ঘারে।তার ওপর তোমার বোনের মেয়ে।সেও আমাদের ঘারে।গায়ের রং কালি।যে বিয়ে দিয়ে পার ও করতে পারবোনা।
শুভ্রতার মামা:আচ্ছা তুমি এসব কথা থামাও তো ভালোলাগছেনা।
শুভ্রতা এত্তখন দরজার বাহিরে থেকে সব শুনছিলো।মানুষ কতটা খারাপ হলে বাবার মৃত্যু কামনা করে।শুভ্রতা আসতে করে রুমে এসে মামা মামির হাতে চা দিলো।শুভ্রতা চলে যেতে নিলে তার মামি পিছন থেকে বলে উঠে,

মেঝ মামিঃশোন শুভ্রতা আজকে কলেজে যাবিনা।আজকে অনেকদিন পর আমার বড় ভাই আসছে।তাদের জন্য রান্না বান্না করবি।একটু পর বাজারে যাবি গিয়ে বাজার করে নিয়ে আসবি।
শুভ্রতাঃঠিক আছে মামি।
শুভ্রতা রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

শুভ্রতার নানা আজ চার বছর পেরালাঈজড।দুই পা কাজ করেনা হাত একটা কাজ করেনা।মুখের জবান ও বন্ধ।অন্যের সাহায্যে জীবন চালাতে হয়।নানা দেখা শুনার জন্য চাঁপা কে আনা হয়েছে।চাঁপা একটা হিন্দু মেয়ে কিন্তু নানার অনেক খেয়াল রাখে।বাড়ির কেউ নানার সাথে ভালো ব্যবহার করেনা।শুভ্রতার খুব কষ্ট হয় নানার জন্য।মানুষটাকে এই বয়সে সবাই এতো অবহেলা করছে।

এই নানা নামক মানুষটার জন্য তার মায়ের থেকে সে আলাদা।কিন্তু তবুও তাকে শুভ্রতা কিছু বলেনা।শুভ্রতা আসতে করে চলে আসে।নানার রুম পরেছে রান্না ঘরের আগের রুমটা।রুমটায় অনেক গরম লাগে।সেই রুমেই নানাকে রেখেছে।শুভ্রতা রান্না ঘরে এসে চায়ের কাপ গুলো রেখে সব খাবার সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে টেবিলে।তারপর চলে আসে নিজের রুমে।শুভ্রতার রুমের পাশের রুমে সায়ানের রুম।শুভ্রতা সায়ানের রুমের পাশ দিয়ে আসার সময় শুনতে পেলো সায়ান ঘুম জোরানো কন্ঠে কাউকে বলছে”আই লাভ ইউ বাবু আজকে কলেকে তাড়াতাড়িই আসবো।তারপর তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।

“সায়ানের কথা শুনে শুভ্রতা বুজতে পারলো সায়ান প্রিয়ার নামক মেয়েটার সাথে কথা বলছে।সায়ানের সাথে সব ঠিক ছিলো তখন সায়ান তাকেও এভাবে কল দিতো।ঘুম জোরানো কন্ঠে কথা বলতো।তবে রিলেশনে থাকার সময় সে দেখেছিলো প্রিয়াকে তবে সায়ান ওকে নিজের ফ্রেন্ড বলেছিলো।তবে প্রিয়ার সাথে শুভ্রতার কখোনো সরাসরি কথা হয়নি।শুভ্রতা নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে বিড়বিড় করে বললো,

“প্রিয় মিথ্যা গল্পের শ্রেষ্ট লেখক ছিলে তুমি,আর সেই গল্পের বিস্বস্ত পাঠিকা ছিলাম আমি।কত কত মরা নদী জেগে উঠে বর্ষায় ভেংগে যাওয়া মানুষ ও জেগে উঠে ভরসায়।”
শুভ্র‍তা নিজের চোখের কোণের পানি মুছে মাথায় কাপড় দিয়ে বেরিয়ে পরে বাজারের জন্য।খালিপেটে হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে।শুভ্রতা বাজারে এসে লিস্টে লেখা সবকিছু কিনে নিলো।সব কিনাকাটা করে এখন শুধু চিজ আর কেচাপ কিনতে গ্রসারি মার্কেটে যাবে।গ্রসারি মার্কেটে এসে চিজ আর কেচাপ কিনেনিলো।এখন রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে শুভ্রতা।অনেক রোদ মাথা ঘুরাচ্ছে শুভ্রতার।দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।একটা রিকশাও সে পাচ্ছেনা।

বোনকে নিয়ে গ্রসারি মার্কেটে যাচ্ছে শিশির।মুন কিছু জিনিশ কিনবে তাই।শিশির গাড়ি চালাইয়ে গ্রসারি মার্কেটের সামনে চলে আসছে।এদিকে শুভ্রতা খুব কষ্ট হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে কিন্তু তাকে বাসায় যেতে হবে নাহলে মামির হাতে মার খেতে হবে।শুভ্রতা পায়ে হাটা দিলে মাথা ঘুরিয়ে ওঠে শিশির তখন গাড়ি নিয়ে গ্রসারির সামনে আসতেই শুভ্রতা ওর গাড়ির উপরেই পরে যায় সেন্সলেস হয়ে।শুভ্রতাকে এভাবে পরে যেতে দেখে মুন চিৎকার দিয়ে বলে,

মুনঃওহ মাই গড! ভাইয়া দেখ একটা মেয়ে গাড়ির উপরে পরে আছে।
মুন আর শিশির তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয়ে শুভ্রতার কাছে গেলো।মুন গিয়ে শুভ্রতাকে উঠিয়ে ওর মাথা কাধে রাখলো।শুভ্রতার গায়ে হাত দিতে চমকে যায় মুন।শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
মুনঃভাইয়া মেয়েটার গায়ে অনেক জ্বর।এই জন্য মনে হয় সেন্সলেস হয়ে গেছে।ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।
শিশিরঃহুম।

শিশির শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো।শিশির শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো।কালো চেহারা হলেও মেয়েটার মুখে একটা মায়া আছে।ঘুমন্ত অবস্থায় খুব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।শিশির নিজেকে ধমক দিলো,
শিশির মেয়েটা অসুস্থ আর তুই এসব কি চিন্তা করছিস।
শিশির শুভ্রতাকে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিলো।মুন সিটে বসে শুভ্রতার মাথা নিজের কোলের উপর রাখলো।তারপর শিশির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

হাসপাতাল কাছেই থাকায় কিচ্ছুখনের মাঝের শিশির হাসপাতালে এসে পৌছালো।শিশির গাড়ি থেকে বের হয়ে শুভ্রতাকে আবার কোলে তুলে নিলো।তারপর হাসপাতালের ভিতরর ডুকলো।শিশির হাসপাতালে ডুকে ডাক্তার কে খুজলো একজন নার্স গিয়ে ডাক্তার কে ডেকে আনলো।ডাক্তার আসার পর শুভ্রতাকে কেবিনে নিয়ে গেলো।ডাক্তার শুভ্রতাকে চেক করতে লাগলো।শিশির আর মুন তখন কেবিনের বাহিরে দাঁড়ানো।মুন শিশিরের কাছে এসে বললো,

মুনঃভাইয়া আমাদের মেয়েটার বাড়ির লোকেদের খবর দেওয়া উচিত।
শিশিরঃহুম মেয়েটার পার্স আছেনা ওখানে দেখ মোবাইল আছে কিনা সেখানে ওর বাড়ির লোকের নাম্বার থাকবে।
মুন ভাইয়ের কথা মতো শুভ্রতার পার্স ব্যাগ খুলে একটা ফোন পেলো।ডায়াল নাম্বারে গিয়েই প্রথমে লেখা মেঝ মামা সেই নাম্বারেই কল লাগালো।কিছুক্ষন রিং হবার পর ফোন রিসিভ হলো।
মুনঃহ্যা আসসালামু আলাইকুম।

সজিব আহমেদঃওয়ালাইকুমুস সালাম কে বলছেন।
মুনঃজি আপনি আমাকে চিনবেন না আমি যার মোবাইল থেকে কল করেছি সে কিছুক্ষন আগে আমাদের গাড়ির উপরে অজ্ঞান হয়ে পরেগেছে।আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি আপনারা যদি আসতেন ভালো হতো।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২

সজিব আহমেদ ফোনের স্ক্রিনের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে শুভ্রতার নাম্বার থেকে কল এসেছে।কল সে না দেখেই রিসিভ করায় প্রথমে খেয়াল করেনি।সজিব আহমেদ আবার ফোন কানে দিয়ে বললেন,
সজিবঃজি কোন হাসপাতালে আছে শুভ্রতা?

মুনঃএইতো আদ্বীন হাসপাতালে।
সজিবঃজি আমি আসছি।
সজিব অফিসের বসের থেকে কিছু সময়ের ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পরলেন।শুভ্রতাকে সে মোটেও অপছন্দ করেনা।কিন্তু স্ত্রীর ভয়ে কিছু বলেও না।তার স্ত্রী মেয়েটার উপর যখন অত্যাচার করে তার খারাপ লাগে।কিন্তু সে কিছুই করতে পারেনা।আগে প্রতিবাদ করলেও এখন তার স্ত্রী তাকে ধমক মেরে চুপ করিয়ে দেন।
শিশিরঃআসছে কেউ?

মুনঃহ্যা শুভ্রতার বাড়ির লোক আসছে।
শিশিরঃশুভ্রতা?
মুনঃআরে এই মেয়েটার নাম শুভ্রতা।
শিশিরঃঅহ আচ্ছা।

কিছুক্ষন পর ডাক্তার আসলেন।শিশির শুভ্রতার অবস্থা জানতে চাইলে।ডাক্তার জানান যে শুভ্রতা প্রচুর দূর্বল হয়তো খাওয়া দাওয়া করেনা ঠিক মতো।আর জ্বরের কারনে আরো ও দূর্বল হয়েগেছে।ঘুমের মেডিসিন দিয়েছে এখন শুভ্রতা ঘুমাচ্ছে।ডাক্তার চলে যায় মুন যায় শুভ্রতার কাছে।শিশির ফোনে ওর কলিগকে কল করে জানায় আজ আসতে দেরি হবে।সে একটু হাসপাতালে আসছে।শিশির কল কেটে ভিতরে গেলো।শুভ্রতাকে সেলাইন দেওয়া হয়েছে।শরীর দূর্বল বলে।একটু পর সজিব সাহেব সেখানে আসলেন।হাসপাতালের রিসিপশোন থেকে শুভ্রতার কেবিনের নাম্নার জেনে সেই রুমে গেলেন।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৪