হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৪

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৪
নন্দিনী চৌধুরী

দুপুরের দিকে জ্ঞান ফিরে শুভ্রতার।সেলাইন শেষ হলে নার্স এসে সেলাইন খুলে দেয়।শুভ্রতার কাছে এখন মহুয়া আর সজিব আহমেদ আছেন।শিশিরের কিছু দরকারি কাজ আছে তাই সে থানায় চলে গেছে।শুভ্রতার জ্ঞান ফিরতে দেখে মহুয়া বলে,
মহুয়া:এইতো শুভ্রতার জ্ঞান ফিরছে।

শুভ্রতা জ্ঞান ফিরার পর বুজতে পারে সে হাসপাতালে আছে।মহুয়া শুভ্রতার মাথায় হাত রেখে বলে,
মহুয়া:এখন কেমন লাগছে তোমার শুভ্রতা?
শুভ্রতা মহুয়ার মুখে নিজের নাম শুনে চমকে গেলো প্রশ্নাত্তুর দৃষ্টিতে তাকালো শুভ্রতা।মহুয়া বুজতে পারছে শুভ্রতা কি ভাবছে তাই হালকা হেসে বলে,
মহুয়া:তুমি আমাদের গাড়ির উপরে অজ্ঞান হয়ে পরেগেছিলে আমি আর আমার ভাইয়া মিলে তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সজিব আহমেদ ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিলেন ডাক্তার জানালেন বাসায় নিয়ে গিয়ে খাবার দাবার জেনো ঠিক ভাবে খাওয়ায়।রোগীর শরীর এখনো দুর্বল।সজিব আহমেদ ডাক্তারকে আসস্ত করলো রোগীর দিকে তারা অনেক যন্তবান হবেন।ডাক্তারের সাথে কথা শেষ করে সজিব আহমেদ রুমে আসলেন।শুভ্রতা তাকে দেখে অবাক হলো।মহুয়া সজিব আহমেদের কাছে গিয়ে বললেন,
মহুয়া:ডাক্তার কি নিয়ে যেতে বলেছেন?
সজিব:হ্যা নিয়ে যেতে বলেছে।

মহুয়া:আচ্ছা তাহলে আমি আপনাদের আপনাদের বাসায় পৌছে দিচ্ছি।
সজিব:না না থাক এমনিতেও আপনারা দুই ভাই বোন আমাদের জন্য অনেক সময় নষ্ট করেছেন।শিশির স্যার তার থানা ফেলে আমাদের মেয়েকে এখানে নিয়ে এসেছে তার জন্য অনেক ধন্যবাদ।আপনাকেও ধন্যবাদ আমাদের জানানোত জন্য।নাহলে জানতাম মেয়েটা কোথায়।
মহুয়া:না ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই এটা মানুষ হয়ে একজন মানুষের সাহায্য করা মানু্ষ হিসাবে আমার দায়িত্ব।আজকে তাহলে আমি আসি।আপনারা সাবধানে যাবেন।
সজিব:জি আচ্ছা।

এরপর মহুয়া চলে গেলো।তারপর সজিব আহমেদ আর শুভ্রতাও চলে আসলো।শুভ্রতার শরীরে এখনো জ্বর।শুভ্রতার আর সজিব ঘরে ডোকা মাত্র সজিবের স্ত্রী তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
মেঝ মামি:সেই সকালে তোকে বাজারে পাঠিয়েছিলাম। আর এখন আসছিস তুই বলি রান্না বান্না করবি কখন?
সজিব:ও হাসপাতাল থেকে আসছে।
মেঝ মামি:হাসপাতাল?

সজিব:রাস্তায় মাথা ঘুরে পরেগেছিলো আর পরেছিলো আইজিবি পুলিশ অফিসার শুভ্র আহমেদ শিশিরের গাড়ির উপরে।তারপর তারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আর আমাকে ফোন দেয়।
মেঝ মামি:গাড়ির তোলে যখন পরেছিলো মরে গেলোনা কেনো।এই সব হচ্ছে ওর নাটক আমি বুজিনা মনে করেছো।যেই আমি আজ বলেছি আজলে কলেজ যেতে হবেনা আমার বড় ভাই আসবে অমনি ও অসুস্থ হয়ে গেলো।বাড়িতে বসে নাটক করলেতো আমরা ধরে ফেলবো তাই বাড়ির বাহিরে গিয়ে নাটক করছে।এই হারামজাদি যা গিয়ে রান্না কর।আজকে রান্না ওই করবে নাহলে আজ কপালে কোনো খাবার নেই বলে দিলাম।শুয়ে বসে অন্ন ধ্বংস করার ধান্দা তাইনা।আজকে রান্না করে তারপর ও খাবার পাবে।

সজিব:ও অসুস্থ একটু বোজার চেষ্টা করো।দূর্বল অনেক ওর শরীর।কিভাবে এতো রান্না করবে।
মেঝ মামি:সামান্য জ্বর হয়েছে মরে যাবেনা তাতে।আমাদের ও জ্বর হয় তাও আমরা সংসারের কাজ করি।তাহলে ও পারবেনা কেন।এমনিতো কালি হয়ে জন্ম নিয়েছে।বিয়েতো সহজে দেওয়া যাবেনা।যদি কেউ কাজ কামের গুনে নেয়।এই তুমি চলোতো রুমে চলো এতো মায়া তোমাকে দেখাতে হবেনা।আর শোন রান্না যেনো আমি এসে দেখি হয়েগেছে নাহলে আজ তোর কপালে দুঃখ আছে।

সজিবকে নিয়ে তার স্ত্রী রুমে চলে গেলেন।শুভ্রতা অনেক কষ্টে রান্না ঘরে আসলো।শরীর তার চলতে চাইছেনা। তবুও রান্না করতেই হবে নাহলে আজ কি হবে সে জানে।
নিজের রুমে বসে মেয়ের ছবি দেখে যাচ্ছে।শারমীন।মেয়েটা কত বড় হয়েছে তার কিন্তু সে না পারে মেয়েটাকে মন ভরে আদর করতে না পারে দেখতে।কেন সে বাবার কথা শুনে আবার বিয়ে করলো।আজ বিয়েটা না করলেই মেয়েটা তার সাথে থাকতো।বাবার বাড়িতে জায়গা নাহলে রাস্তায় থাকতো তবুও মেয়েটা তার থাকতো।তার আর আমিনুল এর একমাত্র ভালোবাসার চিহ্ন তাদের মেয়ে।সেই মেয়েটাকে সে আগলে রাখলোনা।

জাকির স্ত্রীর রুমে এসে দেখে শারমীন কাঁদছেন।এটা নতুন কিছুনা সে সব সময় মেয়ের জন্য কাদেঁ।জাকির নিজেও শুভ্রতার জন্য কষ্ট পায়।মেয়েটার জন্য বিয়ে করতে চেয়েছিলো মেয়েটাকেই পেলোনা।জাকির গিয়ে স্ত্রীর পাশে গিয়ে বসলেন।স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে বললেন,
জাকির:কেদোঁনা শারমীন।কত কাঁদবে আর।

শারমীন:আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে জাকির।আমার উচিত ছিলো জোর করে হলেও আমার মেয়েকে নিয়ে আসা।বাবা আমাকে আমার মেয়ের সাথে দেখাই করতে দেয়নি।একবার যাও দেখা করতে দিয়েছিলো আমার মেয়ের আমার প্রতি সেদিন অভিমান ছিলো।এরপর আর আমার মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়নি।আমি সব সময় বাবাকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিতাম।

বাবা বলতো শুভ্রতা নাকি আমার মুখ ও দেখতে চায়না।আমি ওর সাথে দেখা করতে আসলে ও কিছু করে বসবে।এই ভয়ে মেয়ের কাছে যাইনি।আমি জানি জাকির আমার মেয়ে এসব নিজে নিজে বুঝেনি।আমার ভাইয়ের বউরা আমার মেয়েটাকে কিছু উল্টা পালটা বুঝিয়েছে।নাহলে আমার মেয়ে এমন করতে পারেনা।জানোতো ওর গায়ের রং কালো বলে ওকে সবাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে।মেয়েটা আমার বড় চাপা স্বভাবের কোনোদিন কাউকে নিজের মনের কথা বলবেনা।এক মাত্র ওর বাবার কাছেই সব বলতো।

জাকির:আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে।আমার ও কষ্ট হচ্ছে ওই জান্নাতটার আশায় তো তোমাকে বিয়ে করেছিলাম।তবে ভুল আমাদের ও আছে রাগ করে ও বাড়ি যাওয়া বন্ধ না করে যাওয়া উচিত ছিলো আমাদের।একদিন না একদিন শুভ্রতা মায়ের সাথে আমাদের দেখা হতো।তোমার বাবাও তো পেরালাইজড।তাকেও দেখতে যাচ্ছিনা আমরা।আমাদের যাওয়া উচিত।
শারমীন:কোন মুখে গিয়ে মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো।
জাকির:না গেলে কোনোদিন দাঁড়াতে পারবেনা।
শারমীন:আচ্ছা যাবো আমি।

অনেক কষ্টে রান্না শেষ করলো শুভ্রতা।রান্না শেষ করে রুমে এসে শাওয়ার নিলো।তারপর আসতে করে শুয়ে পরলো বিছানায়।সকাল থেকে এখনো না খাওয়া সে।কখন খেতে পাবে তাও সে জানেনা।মেঝ মামির ভাইয়েরা চলে এসেছে।টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে।খাবার খেতে বসেছে সবাই।খাবার মুখে দিতেই সবাই থুথু দিয়ে ফেলে দিলো।

মেঝ মামির ভাই:এটাকি রান্না হয়েছে মুখেই নেওয়া যাচ্ছেনা।
ছোট মামি:ভাবি আজকে রান্না করছে কে?
মেঝ মামি:শুভ্রতা রান্না করেছে।কিন্তু ওর রান্নাতো এমন না।
সায়নি:আরে মা বুজোনা তুমি ওকে রান্না করতে দিছো তাই এমন করেছে।
সায়ান:ঠিক বলেছিস।এইসব কালো মেয়েদের মুখ যেমন কালো মনের ভেতর ও কালো।ইচ্ছা করে রান্না নষ্ট করেছে।

মেঝ মামি:আজকে ওকে এর জন্য আমি উচিত শিক্ষা দেবো।
মেঝ মামি উঠে শুভ্রতার রুমে আসলো।শুভ্রতা তখন চোখ বুজে ছিলো।মামি গিয়ে চুলে মুঠি ধরে টেনে নিয়ে আসলো।আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়েযায় শুভ্রতা।শুভ্রতার মামি শুভ্রতাকে টেনে এনা ধরাম করে খাবার গুলো মাঝে ছুড়ে মারে।সব ভাত তরকারি একদম শুভ্রতার নাকে মুখে গায়ে মেখে যায়।শুভ্রতার মামি আবার ওর চুলের মুঠি ধরে চিল্লিয়ে বলে,

মেঝ মামি:ইচ্ছা করে তুই খাবার গুলা নষ্ট করছিস।ইচ্ছা করে যাতে আমরা কেউ খেতে না পারি।তোকে বলছিলাম রান্না ভালোভাবে করতে।কালির বাচ্চা কালি।নিজের বাপটারেতো ছোট বেলায় খাইছস।তারপর মা এখানে ফালাইয়া রাইখা গেছে আরেকবেডার ঘরে।আপদ রাইক্ষা গেছে আমাগো ঘারে।আজকে তোরে এগুলা খাওয়ামু।

শুভ্রতার মামি প্লেট ভর্তি পোলাউয়ের মধ্য শুভ্রতার মুখটা চেপে ধরেন।শুভ্রতা ছোটফোট করছে।মুখ থেকে কথাও বের করতে পারছেনা।শুভ্রতার মামি ওকে উঠিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।আজকে ও এই সব খাবার গুলো খাবে।নষ্ট ও করেছে খাবে ও।বলে হনহন করতে করতে চলে গেলো শুভ্রতার মামি।বাকি সবাই ও চলে আসলো।এতো অত্যাচাত করে কেউ শুভতাকে বাচাঁয় না উলটে সবাই মজা নেয়।শুভ্রতা আসতে করে উঠে বসে নাকে মুখে ভাত ডুকে গেছে।শুভ্রতা ওখানেই চিৎকার করে কেদেঁ দেয় আর বলে,

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৩

আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও আমি আর সয্য করতে পারছিনা।রোজ রোজ এতো অত্যাচার আর আমি সইতে পারছিনা আল্লাহ।গায়ের রং কালো ভাগ্যটাও কালো।কি হতো বাবা বেচেঁ থাকলে।তাহলে আজ আমার পরিনতি এমন হতোনা।আমি কি পাপ করেছি যার সাজা ছোট থেকে দিচ্ছো।বাবা মা কারো ভালোবাসা পেলাম না।নিজের মা কোনোদিন আমার কাছে আসেনা।দিব্ব্যি সংসার সন্তান স্বামী নিয়ে সুখে আছে।আমার কপালে কি একটুও সুখ নেই আল্লাহ।
কান্না করতে করতে শুভ্রতা আসতে করে উঠে রুমে যায়।

নিজের থানার রুমে বসে ফাইল দেখছে শিশির।কিন্তু তার মন বার বার চলেযাচ্ছে আজক ঘটা ঘটোনা গুলোর মাঝে।বার বার শুভ্রতার মুখটা ভেসে আসছে তার চোখের সামনে।শিশির এভার বিরক্ত হয়ে নিজেই নিজেকে বললো,

What’s Wrong of With You Shishir.জীবিনে কি প্রথম মেয়ে দেখেছিস নাকি।কত মেয়েই তো রাস্তায় দেখছিস।তাহলে ওই একটা মেয়েকে দেখার পর থেকে কেন বার বার ওর কথা মাথায় আনছিস।একজন পুলিশের মাথায় এসব না শুধু কেস থাকবে।তানা মেয়ে মাথায় এসে নাচতেছে।নো আমাকে কেসে মন দিতে হবে।

এই বছরে প্রায় ৩০ জনের মতো মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে।তাদের সবাই অল্প বয়সের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে।সবাই এক টাইম সকালে নিখোঁজ হয়েছে।কেউ তাদের হদিস দিতে পারেনি।পুলিশ সিআইডি টিম মিলে এখন খুজতেছে মেয়েগুলোকে।সবার ধারনা কোনো মেয়ে পাচারকারি গ্যাং এর সাথে জরিতো।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৫