হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৫

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৫
নন্দিনী চৌধুরী

বিছানায় শুয়ে আছে শুভ্রতা পেটে ক্ষুদা আর শরীরে জ্বর নিয়ে কাহিল হয়ে গেছে মেয়েটা।শরীরে দুইকদম চলার শক্তিটুকুও নেই।দুপুরে মামির ওই আচারণের পর শুভ্রতা খুব কষ্টে রুমে এসেছে।নিজেকে অনেক হতভাগি মনে হয় তার।শুভ্রতা খাটে শুয়ে ছিলো তখন দরজা ঠেলে ভিতরে আসে চাঁপা।চাঁপা হাতে করে খাবার নিয়ে এসেছে।চাঁপাকে দেখে অবাক হয় শুভ্রতা দুর্বল কন্ঠে বলে,

শুভ্রতাঃচাঁপা তুই এতো রাতে এই রুমে?নানার কোনো সমস্যা হইছে?
চাঁপাঃনা দাদায় ঘুমাইতাছে।আমি আপনের লইজ্ঞা খাওন আনছি।
শুভ্রতাঃখাবার!তুই খাবার পাইলি কই?
চাঁপাঃআমারে মেঝ ভাবি যে খাওন দিছে সেই খাওন।
শুভ্রতাঃতাহলে তুই খাস নাই কেন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চাঁপাঃআফা আমি জানি আপনে হক্কাল থেইক্কা না খাওয়া।হক্কাল থেকে হেই কাম শুরু করেন।একটু ভুল হইলেই মাইর খান আপনার খাওন বন্ধ কইরা দেয়।আজকেও দিছে আমি জানি।হেই হক্কাল থেকে এহোনো কিছুডি মুহে দেননাই।হেইলইজ্ঞা আমি আপনের লইজ্ঞা খাওন আনছি।লোন আফা খাইয়ালোন।
শুভ্রতা:তোর মাথা ঠিক আছে মামি জানতে পারলে অনেক বকা দেবে তোকে।
চাঁপা:আরে রাহেন তো তার কথা কিছু কইবোনা আপনে খাইয়া লোন।

শুভ্রতার শরীর দুর্বল থাকায় সে উঠে বসতে পারছেনা।তাই চাঁপা গিয়ে শুভ্রতাকে ধরে বসালো।তারপর নিজ হাতে খাইয়ে দিলো।এই পুরো বাড়িতে এই একজন আছে যে শুভ্রতাকে ভালোবাসে।চাঁপা মেয়েটা অনাথ নানার দেখা শোনা করার জন্য ওকে আনা হয়েছে।হিন্দু হলেও সবাইকে অনেক ভালোবাসে।শুভ্রতাকে খাইয়ে আবার শুইয়ে দিয়ে গেলো চাঁপা।শুভ্রতার ক্ষুদা নিবারন হয়েছে এখন ঘুম চলে আসছে তার।
কেটে গেছে এক সপ্তাহ,

শুভ্রতা এখন অনেক সুস্থ।আগের মতো কলেক,বাড়ির কাজ এসব করছে সে।ইদানিং তার মামি তার সাথে তেমন একটা খারাপ ব্যবহার করছেনা।এটা দেখে শুভ্রতা আরো ও অবাক।এইতো সেদিন সে ভুল করে একটা কাপ ভেংগে ফেলেছিলো মামির সামনে।ভেবেছিলো আজ তাকে মার খেতে হবে। কিন্তু তাকে অবাক করে মামি ওকে কিছুই বলেনি।

শুভ্রতা বুজতে পারছেনা এর কারন কি।শুভ্রতা চা নিয়ে মামির ঘরে এসেছে ভিতরে ডুকতে নেবে তখন শুনে মেঝ মামি ছোট মামির সাথে কথা বলছে।
মেঝ মামি:বুজলি ছোট এক বিরাট বড়লোক বাড়ি থেকে শুভ্রতার জন্য সমন্দ এসেছে।লোকটার বয়স ৪০। আগের দুই বউ মারা গেছে। আবার বিয়ে করবে লোকটা।আমাদের শুভ্রতাকে পছন্দ করছে।বিনিময় পুরা ১০লাক্ষ টাকা দেবে বলছে।

ছোট মামি:কি বলো সত্যি?কিন্তু বাড়ির সবাই রাজী হবে বিষেশ করে ভাইয়া আর তোমার দেবর।
মেঝ মামি:ওরা রাজি হবার না হবার কে।একে তো কালি তার ওপর এতিম।কে বিয়ে করবে ওকে।তাও কপাল ভালো কেউ করতে চাচ্ছে।আর ওকে বিদায় না করতে পারলে আমাদের ছেলেমেয়ে গুলার বিয়ে হবে কেম্নে।সায়নির বিয়ে দিতে গেলে মানুষ ওকে দেখলে আর আসবেনা।তাই এই আপদ তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারলে বাচিঁ।

ছোট মামি:কিন্তু শুভ্রতাকি রাজী হবে?
মেঝ মামি:হবেনা কেন।আলবাদ হবে আমি যা বলবো তাই ওর করতে হবে।
ছোট মামি:এই জন্যেই তুমি ওকে এখন মারোনা বকোনা তাইনা ভাবি।
মেঝ মামি:হুম ঠিক।আজকে রাতেই শুভ্রতাকে জানাবো তাহলে পরশুদিন তারা ওকে দেখতে আসবে।
ছোট মামি:আচ্ছা।

শুভ্রতা মামির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।এই জন্য তাহলে তার মামি অত্যাচার করেনা।তাকে টাকার বিনিময় বিয়ে দিচ্ছে।শুভ্রতা আর রুমে যাওয়ার শক্তি পেলোনা।আসতে করে চলে আসলো রান্না ঘরে।চায়ের ট্রে রেখে চলে আসলো রুমে।

সায়ান প্রিয়া বসে আছে কলেজের মাঠে।কাল রাতেও প্রিয়া রাহাতের সাথে রুমডেট করেছে আর সায়ানকে বলেছে তার খালামনির বাসায় সে।প্রিয়া সায়ানের কাধে মাথা রেখে গল্প করছে।কথা বলতে বলতে সায়ান দেখে প্রিয়ার ঘারে লাল দাগ।দাগটা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা লাভ বাইট।কিন্তু এই লাভ বাইটতো সায়ান দেয়নি।সায়ান প্রিয়াকে সোজা করে ধরলো এতে প্রিয়া কিছুটা চমকে গেলো।সায়ান প্রিয়ার ঘারের জায়গাটাতে হাত দিয়ে বলে,

সায়ান:প্রিয়া এখানে এটা কিসের দাগ?
প্রিয়া সায়ানের প্রশ্নে কিছুটা ভরকে যায়।এটা যে রাহাতের দেওয়া লাভবাইট সেটা প্রিয়া কন্সিলার দিয়ে ডাকতে ভুলে গেছে।প্রিয়া আসতে করে বলে,
প্রিয়া:ব্যাথা পেয়েছিলাম কালকে।
সায়ান:কিন্তু এটাতো মনে হচ্ছেনা ব্যাথার দাগ।

প্রিয়া:কি বলতে চাইছোটাকি তুমি।কাল ছুরি লেগে কেটে গেছে জায়গাটা। আর তুমি সন্দেহ করছো।তুমি কি ভাবছো আমি অন্য কারো বাইট নিয়ে এসেছি।শোনো আমার সাথে কথা বলবানা আর বাই।
বলেই প্রিয়া হনহন করে চলে গেলো।আর সায়ান বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।সায়ান বুজতে পারলোনা প্রিয়া রাগ করলো কেন।সেতো স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন করেছে।এতে রাগ করার কি হলো।আজকাল প্রিয়া কেমন পাল্টে গেছে।আগের মতো তেমন কথা বলেনা সায়ানের সাথে।আজকে আবার ঘাড়ে ওই দাগ।আচ্ছা প্রিয়া কি তাকে ধোকা দিচ্ছে।না না এটা কি ভাবছে সে।প্রিয়া এমন না।হতেই পারে ব্যাথাই পেয়েছে সে।সায়ান দ্রুত গেলো প্রিয়ার কাছে।

শুভ্রতা রেডি হয়ে কলেজে আসলো।কলেজে এসে দেখে রিফা ওর জন্য অপেক্ষা করছে।এই একটা মেয়ে যে ওকে অনেক ভালোবাসে।শুভ্রতা রিফার কাছে গেলো।রিফা শুভ্রতাকে দেখে মুখ ফুলিয়ে বললো,
রিফা:আজকেও লেট করলি?
শুভ্রতা:কি করবো তুই তো জানিস কেন লেট করি।
রিফা:হ্যা জানি।কি আর করবি।চল ক্লাসে চল।

তানজিলাল আজিম রিফা।শুভ্রতার বেস্ট ফ্রেন্ড।কলেজের প্রথম দিন থেকেই ওদের বন্ধুও হয়েছে।রিফা শুভ্রতার ব্যাপারে সব জানে।এমনি সায়ানের ব্যাপারেও।রিফার খুব ইচ্ছা করে শুভ্র‍তাকে ওই জাহান্নাম থেকে নিয়ে আসতে।কিন্তু শুভ্রতা আসবেনা সে জানে।শুভ্রতা ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।রিফা গেছে আয়ানের সাথে।রিফা আয়ানের হবু স্বামী।

রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে শিশির। হঠ্যাৎ চোখ গেলো সেদিনের মেয়েটার দিকে।আজকে একটা টিয়া কালারের জামা পরেছে সে।চুল গুলো বেনি করা।কাধে কলেজ ব্যাগ।শিশির তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।শিশিত বুজতে পারলো মেয়েটা রিকশা খুজতেছে।কিন্তু ওপারে কোনো রিকশা সে পাচ্ছেনা।তাই শিশির এপাশ থেকে একটা রিকশা ঠিক করে দিলো।দেখিয়ে দিলো শুভ্রতাকে।
শুভ্রতা অবষেশে রিকশা পেয়ে খুশি হলো।তাড়াতাড়ি রিকশা করে চলে গেলো বাসায়।শিশির শুভ্রতাকে খুশি হতে দেখে নিজেও খুশি হলো।কিন্তু সে যানেনা কেন সে এটা করলো।শিশির আপন মনে বললো,

–~মেঘ পিয়নের ডানায় করে-
শরৎ আসে কাশফুলের শুভ্রতা নিয়ে–?
-“তুমি কবিতা হয়ে যেও
একফালি সাদা মেঘের মতো-”
শিশির আপনা মনে এসব বলে আবার ফোনে কথা বলা শুরু করলো।কিন্তু তার মন পরে আছে শুভ্রতার কাছেই।

রাতে শুভ্রতার মামি তার রুমে আসলো।শুভ্রতা তখন বসে বসে বই পড়ছিলো।শুভ্রতার মামি এসে শুভ্রতার মাথায় হাত রাখলো।শুভ্রতা চেয়ে দেখে তার মামি।শুভ্রতা জানে কেন তার মামি এসেছে।তার মামি যদি এই মাথায় হাতটা ভালোবেসে রাখতো তবে হয়তো শুভ্রতার চেয়ে খুশি কেউ হতোনা।
শুভ্রতার মামি তার পাশে বসে শুভ্রতাকে বলতে লাগলো,
মামি:শুভ্রতা শোন তোকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।
শুভ্রতা:হ্যা আমি বলো কি বলবে।

মামি:শুভ্র‍তা তোর জন্য একটা বিয়ের সমন্দ এসেছে।পাত্ররা অনেক ধনি।পাত্রের বয়স ৪০।আগে দুই বউ ছিলো মরে গেছে।দেখ ছেলেদের বয়স কোনো বিষয় না।অনেক বড়লোক তারা।তুই অনেক সুখে থাকবি।দেখ তোর গায়ের রং এমনি কালো।ভালো কোথাও বিয়ে দিতে পারবোনা।এখানে রাজি হয়ে যা।না করিস না।সায়নি মায়া কেও তো বিয়ে দিতে হবে বল।তুই রাজি হলে পরশুই তারা আসবে।
শুভ্রতা:আচ্ছা মামি আমি রাজি তুমি যা চাও তাই হবে।কিন্তু আমি তোমার থেকে একটা জিনিশ চাই।
মামি:কি চাস তুই বল।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৪

শুভ্রতা:মামি আমাকে একটু আদর করবে।ছোট থেকে মায়ের আদর ও পাইনি কারো আদর পাইনি।আজ আমাকে একটু আদর করবে।পরশু তো চলেই যাবো।
শুভ্রতার আবদার করাতে খুব মায়া হলো মামির।অনেক অত্যাচার করেছে সে এই মেয়ের উপর।আজ নাহয় একটু আদর করে দিক।শুভ্রতাকে একটু আদর করে বেরিয়ে গেলো ওর মামি।শুভ্রতা খাটে বসে কেঁদে দিলো।আমি কালো বলে তোমার চিন্তা যে সায়নি আর মায়ার বিয়ে হবেনা।যাক করলাম বিয়ে ওখানে।কপালে যা আছে তাই হবে।আমাকে বিদায় করতে পারলে যদি তুমি খুশি হউ তবে তাই হোক।

শিশির নিজের রুমে বসে আছে আজকে আরো দুইটা মেয়ের মিসিং রিপোর্ট এসেছে।শিশির বুজতেই পারছেনা।মেয়ে গুলো উধাও হচ্ছে কোথায়।শিশির প্রায় অনেক গোপন খবর দাতাদের সাথে কথা বলেছে কিন্তু কেউ কিছু বুজতে পারছেনা।
শিশির:কাদের কাজ এটা কোনো গ্যাং এর নাকি কেউ ইচ্ছা করে ওদের উধাও করছে।এক বছরে এক নিয়ে ৩২টা মেয়ে নিখোঁজ।
কে নিখোঁজ করছে মেয়েগুলোকে।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৬