হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৬

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৬
নন্দিনী চৌধুরী

আজকে শুভ্রতাকে দেখতে এসেছে ফিরোজ সাহেব।লোকটা যে বুড়ো হয়েগেছে তা বোঝার উপায় নেই।কারন সে ২০/৩০ বছরের যুবকদের মতো করে চলাফেরা করে।শার্ট প্যান্ট যা পরে তা একটা ২০ বছরের যুবকদের মতো।শুভ্রতাকে ওর মামি সং সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে লোকটার সামনে।লোকটার সাথে লোকটার বোন আর বোন জামাই এসেছে।ফিরোজের বোন ফারজানা অনেক রকম প্রশ্ন করলো শুভ্রতাকে শুভ্রতা সেগুলোর উত্তর দিলো।আর এদিকে ফিরোজ শুভ্রতার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।শুভ্রতাকে যেই শাড়িটা ওর মামি পরিয়েছে সেই শাড়ির বসার সময় সরে গিয়ে কোমর হাল্কা দেখা যাচ্ছে সেইটাই নজরে পরেছে ফিরোজের।সব কথা বলে শুভ্রতাকে নিয়ে গেলো ওর ছোট মামি।মেঝ মামি তাদের সাথে বসে কথা বলছেন।

ফারজানা:মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে।
ফিরোজ:আমরা আজকেই বিয়ে করে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।
মেঝ মামি:কিন্তু আজকে না মানে একটু গোজগাজ লাগবেনা।
ফারজানা:গোজগাজের কিছু নেই।অই লাকেজ দেখতেছেন না ওখানে বউয়ের জন্য সব আনা হয়েছে।এগুলো দিয়েই বউকে রেডী করেন।
ফিরোজ:আর এই নেন ৫লক্ষ্য টাকা।বাকিটা বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর দেবো।
মেঝ মামি:জি আচ্ছা তাহলে বিয়েটা কি এখোনি হবে?
ফারজানা:না সন্ধ্যায়।আমার আরো কিছু লোক আসবে তারপর।
মেঝ মামি:ঠিক আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঝ মামি উঠে গিয়ে ঘরে এসে আলমারিতে টাকা রেখে এলেন।শুভ্রতাকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে আজকেই তার বিয়ে হয়ে যাবে।শুভ্রতার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে।আচ্ছা কালো বলেইতো তার অপমান অবহেলা তাইনা।যদি সে সাদা হতো তাহলে সবাই কত ভালোবাসতো তাকে।আচ্ছা এমনটাকি নাহলে পারতোনা।সায়ান ভাইকি পারতোনা শুভ্রতাকে আপন করে রাখতে।আজ সায়ান তার পাশে থাকলে সে কোনোদিন এই বিয়েতে রাজি হতোনা।সেতো সায়ানের জন্য এই বাড়ির মাটি আকড়ে পরেছিলো।এখন যখন সায়ানই তার পর তাহলে আর কার জন্য এখানে থাকবে।কাল থেকে আবার তার জীবন আরেক নিয়মে চলবে।অই ৪০ বছরের লোকটার সাথে আজকে বিয়ে হয়ে যাবে।তারপর লোকটা স্বামীর ট্যাগ লাগিয়ে জোর করে শুভ্রতাকে কাছে টেনে নেবে।এরপর সংসার সামালানো তারপর একদিন হয়তো এই লোকটার জোর করে কাছে আসার ফল তার মধ্য বেড়ে উঠবে।তখন তাদের দেখাশুনা করা।মানে তখন নিজের সব ইচ্ছা মাটিচাপা দিয়ে দিতে হবে।শুভ্রতা আপন মনে এসব ভেবেযাচ্ছে।

বিকালের দিকে শুভ্রতাকে রেডি করা হচ্ছে।শুভ্রতা একদম রোবট এর মতো বসে আছে।আজযে তার বিয়ে সেই নিয়ে তার কোনো অনুভুতিই নেই।শুভ্রতাকে সাজানোর পর তাকে চাঁপার সাথে রুমে রেখে যাওয়া হয়।
সায়ান বাসায় আসার পর এতো তোরজোর দেখে ওর মাকে জিজ্ঞেশ করে,
সায়ান:মা আজকে বাড়িতে কি?
মেঝ মামি:আজকে শুভ্রতার বিয়ে।
সায়ান:বিয়ে!!কি বলো।কার সাথে?
মেঝ মামি:আরে আছে এক ৪০ বছরের বেটা।অনেক ধনি বুজলি।শুভ্রতাকে পছন্দ করে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে আজ।

সায়ান:অহ আচ্ছা।যাক আমি রুমে যাচ্ছি এসব ফালতু জিনিসে থাকার সময় আমার নেই।
মেঝ মামি:আচ্ছা যা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর কিছুক্ষন পর বিয়ে,
শুভ্রতার জন্য চাঁপার চোখের পানি ঝরছে।চাঁপা খালি এটাই ভাবছে,
এতো ভালা মাইয়াডারে কোন জাহান্নামে বিয়া দিতাছে।হায় ঈশ্বর মাইয়াডার লইজ্ঞা আমার অনেক খারাপ লাগতাছে।

চাঁপার কান্নার মাঝে দরজার কেউ কড়া নারে।চাঁপা গিয়ে উঠে দরজা খুলে দেখে শুভ্রতার মেঝ মামা সজিব আসছে।
চাঁপা:সাহেব আপনে এহানে এহন?
সজিব:শোন চাঁপা বেশি কথা বলার সময় নেই।তুই শুভ্রতাকে নিয়ে এখোনি পালা।নাহলে এরপর আর পালাতে পারবিনা।
চাঁপা:কি কোন সাহেব পালামু?
সজিব:হুম পালা বাড়ির পিছনের সাইডে কেউ নেই।ওখান দিয়ে পালা সবাই এখন সামনের দিকে।পিছনের সাইড খালি তাড়াতাড়ি পালা ওকে নিয়ে।
শুভ্রতা মামার কথায় অনেক অবাক হয়।এই মানুষটা কোনোদিন মামির এতো অত্যাচারের হাত থেকে বাচাঁয়নি কিন্তু আজ কেন তাকে বাচাঁচ্ছে।
সজিব শুভ্রতার হাতে একটা ব্যাগ দেয়।

সজিব:এই ব্যাগে কিছু টাকা আছে আর তোর মায়ের গহনা আছে।তুই আর দেড়ি করিস না তাড়াতাড়ি পালা এখান থেকে।
শুভ্রতা এভার মুখ খুলে,
শুভ্রতা:মামা আমি আমি কিভাবে পালাবো।আমি পালালে চাঁপাকে নিয়ে নানাকে কে দেখবে।
সজিব:তোর ওতো ভাবতে হবেনা।তুই পালা তাড়াতাড়ি।
মামার কথা মতো চাঁপা আর শুভ্রতা বাড়ির পিছনের দিক দিয়ে পালালো।শুভ্রতা আর চাপা মেইন রোডে চলে আসছে।এখন তারা কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছেনা।

এদিকে শুভ্রতা যে পালিয়েছে তা বাতাসের মতো ছড়িয়েগেছে।শুভ্রতার মামি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।তার সামনে বসে আছে সজিব, তার ছোট দেবর আর ছোট মামি।ফিরোজরা যাওয়ার আগে অনেক সাশিয়ে গেছে শুভ্রতার মামিকে।যেই টাকা দিয়েছিলো সেই টাকাও ফেরত নিয়ে গেছে।শুভ্রতার মামি বুজতে পারছেনা শুভ্রতার এতো সাহস কিভাবে হলো পালানোর।

শুভ্রতার মা আর জাকির এসেছে তাদের বাসায়।কলিং বেলের আওয়াজে ছোট মামি এসে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে শারমীন আর জাকিরকে দেখে চমকে গেলো সে।শারমীন আর জাকির বাসায় ডুকে দেখে বুজলো বাসায় কোনো আয়োজন চলছে।শারমীনকে আসতে দেখে শুভ্রতার মেঝ মামি আর সজিব ও নিচে আসে।শারমীন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বাবার কথা জিজ্ঞেশ করে।
শারমীন:ভাইয়া বাবা কেমন আছে?

সজিব:আগের মতোই আছে।তোর কি খবর।না বলে চলে আসলি।এতোগুলা বছরে একবার খোজঁ নিলিনা আমাদের।
শারমীন:মাফ করিস ভাইয়া।বাবার উপর রাগ করে আসিনি।আচ্ছা বাবা কি করছে?
সজিব:ঘুমাচ্ছে।
শারমীন:বাসায় আজকে কিসের অনুষ্টান ছিলো?
এভার সজিব কি বলবে বুজতে পারছেনা।কিভাবে বলবে যে তার মেয়েকেই বিয়ে দেওয়াএ আয়োজন চলছিলো এখানে।
শারমীন পুনোরায় আবার একি কথা জিজ্ঞেশ করে।সজিব এবার বাধ্য হয়ে বলে,
সজিব:শুভ্রতার বিয়ের আয়োজন ছিলো।

চাঁপা আর শুভ্রতার রোডের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে।বাড়ির রাস্তা থেকে অনেক দূরে চলে আসছে তারা।এখন যেই রাস্তা দিয়ে তারা হেটে যাচ্ছে এটা তেমন ভালো রাস্তা না।বখাটেদের আড্ডার জায়গা এই রাস্তাটা।শুভ্রতা:চাঁপা আর কত হাটবো।
চাঁপা:আমিও বুজতাছিনা আফা।কই জামু আমরা।
শুভ্রতা:এই রাস্তাটা এমনিতেও ভালোনা।এই রাস্তা তাড়াতাড়ি পার করতে পারলে বাচিঁ।
চাঁপা শুভ্রতা হাটতে হাটতে প্রায় অপর রাস্তার মাথায় চলেই আসছে তখন একদোল বখাটের সামনে পরলো তারা।

শুভ্রতা:হায় আল্লাহ যেই ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হলো।এখন আমরা এদের থেকে বাচঁবো কিভাবে।
১ম বখাটে:কি যাচ্ছো কোথায় মামনিরা।
২য়বখাটে:লিফট লাগবে নাকি মামনি।
৩য়বখাটে:হ্যা হ্যা বলো লিফট লাগবে।
চাঁপা আর শুভ্রতা ভয়ে কি করবে বুজতে পারছেনা।ছেলেগুলো ওদের দিকে এগোচ্ছে।চাঁপা আর শুভ্রতা অনেক সাহস জুগিয়ে ছেলেগুলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে।
শুভ্রতা:চাঁপা চল পালা।
শুভ্রতা আর চাপা এক ছুটে দৌড়।

শিশির ডিউটি শেষ করে বাসায় যাচ্ছে।অনেক চেষ্টা করেও মেয়েগুলোকে উদ্ধার করার কোনো উপায় পাচ্ছেনা শিশির।শিশির গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে হঠ্যাৎ গাড়ির সামনে কেউ এসে যায়।শিশির জোরে ব্রেক মারে
শিশির:What The.দুনিয়ার সবার কি আমার গাড়ির সামনে এসেই পরতে হয়।
শিশির গাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখে একটা মেয়ে মাটিতে বসে আছে আর তার পাশে আরেকটা মেয়ে গাড়ির লাইট মেয়েটার মুখে পরায় মেয়েটা এক হাত দিয়ে মুখ ডেকে রেখেছে আরেক হাত কোমরে রেখে দিয়েছে।
শিশির:এই মেয়ে কে তুমি।আর আমার গাড়ির সামনে এসে পরলা কেন?
শুভ্রতা এবার মুখের উপর থেকে হাত সরালো শুভ্রতাকে দেখে চমকে গেলো শিশির।আনমনেই বলে উঠলো,
“শুভ্রতা!”

শুভ্রতা চোখ মুখ কুঁচকে বলে,
শুভ্রতা:ইচ্ছা করে পরিনি আপনার গাড়ির সামনে।বখাটে পিছনে পরেছে আমাদের দুজনের।তাই পালাচ্ছিলাম।পালাতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে আপনার গাড়ির সামনে পরেছি।
শিশির শুভ্রতার দিকে হাত বারিয়ে দিলো।শুভ্রতা শিশিরের হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।
শিশির:এই রাস্তা এমনিতেই রাতের বেলা ভালোনা।সেখানে তোমরা দুটো মেয়ে একা এখানে কি করছো?
শুভ্রতা আর চাঁপা চুপ করে আছে।
শিশির:কি হলো কথা বলছোনা কেনো।(চিৎকার করে)
চাঁপা:আসলে সাহেব আমরা বাসাত্তে ভাইজ্ঞা আইছি।
শিশির:পালিয়ে আসছো বাসা থেকে কিন্তু কেন?
চাঁপা:সাহেব আমার আফার মামি আফার লোগে এক ৪০ বছরের বুইড়া বেডার বিয়া ঠিক করছিলো।পরে আফার মামায় আমাগো দুইজানারে ভাগাইয়া দিছে।
শিশির সবটা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ওদের বললো,
শিশির:যাও গাড়িতে উঠো।

গাড়িতে উঠার কথা শুনে চাঁপা আর শুভ্রতা ভয় পেয়েগেলো।ওদের কি এখন জেলে নিয়ে যাবে।শুভ্রতা ভয়ে ভয়ে বললো,
শুভ্রতা:আমাদের জেলে নিয়ে যাবেননা প্লিজ।ওই ৪০ বছরের বুড়োকে বিয়ে করবোনা বলে পালিয়েছি।নাহলে পালাতাম না।
শিশির:আমি গাড়িতে উঠতে বলছি এতো কথা বলোকেন।
চাঁপা আর শুভ্রতা ভয়ে গাড়িতে উঠে যায়।শিশির গাড়ির সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

শারমীন সোফার কোণে চুপ করে বসে আছে।সে ভাবতেই পারছেনা তার মেয়েটার উপর এতো অত্যাচার করেছে তার পরিবার।এখন সে বুজতে পারছে মেয়েটা জোর করে হলেও নিয়ে যাওয়া দরকার ছিলো তার।তাহলে আজ তার মেয়েটার তার কাছেই থাকতো।সেইতো এলো মেয়ের কাছে।কিন্তু মেয়েটাকে হারানোর পর।কোথায় আছে তার মেয়েটা এখন।ঠিক আছেতো তার মেয়েটা।আল্লাহ মেয়েটাকে রক্ষা করো।শারমীন উঠে মেঝ ভাবির সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,

শারমীন:তোমাকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করবোনা।একজন মা হয়ে আরেকজন মায়ের সন্তানকে এতো অত্যাচার করতে পারলে কিভাবে।আজ যদি শুভ্রতা আমার না হয়ে তোমার মেয়ে হতো।তাহলে তুমিকি পারতে ওকে এতো অত্যাচার করতে।আমার মেয়েটাকে তুমি দিনের পর দিন অত্যাচার করেছো।আর আজ একটা ৪০ বছরের একজনের কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছিলে তাও কিছু টাকার জন্য ছিহ্।কতটা নিষ্টুর তুমি।

মেঝ মামি:এহ ভাব এমন করছো যেনো নিজের কোনো দোষ নেই।নিজেতো অন্যের সংসারে গিয়ে সংসার করছো।সেখানে আবার বাচ্চাও জন্মদিছো।বলি তখন কই ছিলো মেয়ের জন্য মায়া।সেইতো আমাদের কাছেই ছিলো।আর ওই কালো মেয়েকে কোন রাজপুত্র বিয়ে করবে শুনি।কপালে তাও এই ধনি পরিবার জুটেছিলো।কিন্তু তোমার চরিত্রহীনা মেয়ে পালিয়েছে নিশ্চই ওর কোনো নাগরের সাথে।শোনো তোমার ওই মেয়ে যদি কোনোদিন ফেরত আসে তাহলে তার জায়গা আর এই বাড়িতে হবেনা।

শারমীন:ঠিক বলেছো ভুল আমারই। তোমাদের মিথ্যা কথা গুলো বিশ্বাস না করে। আমার উচিত ছিলো জোর করে আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়া।কিন্তু আমি তোমাদের মিথ্যা কথা গুলো বিশ্বাস করেছি।সেই ভুলেই আমার মেয়েকে হারালাম।
শারমীন আর কোনো কথা না বলে চলে আসে জাকিরকে নিয়ে।

শিশির শুভ্রতা আর চাঁপাকে নিয়ে আসে ওদের বাড়িতে।শুভ্রতা আর চাঁপা এখনো ভয় পাচ্ছে।শিশির গাড়ি থামিয়ে ওদের নামতে বলে।শিশিরের কথা শুনে ওরা নেমে পরে গাড়ি থেকে।গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটা বিশাল বাসার সামনে ওরা এসেছে।শিশির ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
শিশির:আমার পিছনে পিছনে আসো।
শুভ্রতা আর চাঁপা মাথা নাড়ালো।শিশির বাড়ির ভিতরে আসলো ওদের নিয়ে।শিশিরের মা শিশিরের সাথে মেয়েদুটোকে দেখে শিশিরকে বলে,
সাবিনা:এরা কারা শিশির?

শিশির:মা এরা দুজন আমার গাড়ির সামনে এসে পরেছিলো।বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে এরা।
সাবিনা:সেকি!পালিয়ে এসেছে কেন?
শিশির:জোর করে একটা ৪০ বছরের লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছিল্লো ওর ফ্যামিলি ওকে।তাই পালিয়ে এসেছে।
সাবিনা:অহ আচ্ছা তাহলে এরা এখানে থাক।
শিশির:হ্যা আজকেত রাতটা থাক কাল বাসায় দিয়ে আসবো।
সাবিনা:এসো মা ভিতরে আসো তোমরা।
সাবিনা শুভ্রতা আর চাঁপাকে সোফায় বসালো।শিশির ফ্রেশ হতে নিজের রুমে গেলো।
সাবিনা:চোখ মুখ তো একদম শুকনো লাগছে।সারাদিন নিশ্চই তোমরা না খাওয়া।তোমরা ফ্রেশ হয়ে নেও তারপর খাবার খাও।

মহুয়া এই মহুয়া কোথায় গেলি।
মহুয়া মায়ের ডাকে নিচে আসে,
মহুয়া:হ্যা বলো মা কি হইছে?
সাবিনা:এই দেখ কারা এসেছে।
মহুয়া তাকিয়ে দেখে শুভ্রতা আর ওর সাথে একটা মেয়ে।মহুয়া খুশি হয়ে বলে,
মহুয়া:আরে শুভ্রতা তুমি।
শুভ্রতাও মহুয়াকে দেখে অবাক হয়।মহুয়া শুভ্রতার কাছে এসে বলে,
মহুয়া:তুমি এখানে কিভাবে?
সাবিনা:তুই ওদের চিনিস?

মহুয়া:হ্যা মা আমি ওকে চিনি।ওইযে তোমাকে বলেছিলাম যে একটা কিছুদিন আগে গাড়ির ওপরে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।পরে তাকে ভাইয়া আর আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই।এই হলো সেই হলো মেয়ে শুভ্রতা।
সাবিনা:ওহ আচ্ছা তুমি হলো শুভ্রতা।হ্যা তোমার কথা বলেছিলো আমাকে মহুয়া।
মহুয়া:কিন্তু তুমি এখানে আর এটাকে?
শুভ্রতা:আমি পালিয়ে এসেছি আপু।পালাতে গিয়ে বখাটের হাতে পরেছিলাম বাচাঁর জন্য ছুটতে গিয়ে আপনার ভাইয়ের গাড়ির সামনে পরেছি।আর এ হলো চাঁপা।
মহুয়া:অহ আচ্ছা।

সাবিনা:যা ওদের রুমে নিয়ে যা একটা।আমি খাবার গরম করছি সবার জন্য।
মহুয়া:আচ্ছা মা চলো তোমরা আমার সাথে।
মহুয়া ওদের নিয়ে একটা রুমে আসলো।
মহুয়া:তোমার তো কোনো জামা কাপড় নেই।এটা পরে তো থাকতে পারবেনা।ওই কাবার্ডে দেখো জামা আছে আমার।তোমরা দুজন ওখান থেকে জামা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।

মহুয়া ওদের রুমে রেখে চলে আসলো।শুভ্রতা একটা জামা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর চাঁপাও ফ্রেশ হয়ে নিলো।একটু পর মহুয়া ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসলো।দুজনের ক্ষুদা পেটে থাকায় খেয়ে নিলো।তারপর দুজনেই বিছানায় এসে শুয়ে পরলো।অনেক হাটায় ক্লান্ত হয়ে গেছে দুজনে।তাই ঘুমিয়ে পরলো দুজনে।
এদিকে শিশির বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে আছে।আজ তার বাবার কথা খুব মনে পরছে।বাবার মতো যোগ্য অফিসার সে হতে পারলোনা।

শিশির নিজের মনে মনে বলছে,
“আজ্ঞুলে আজ্ঞুল ছুঁয়ে শেখালে”
“তুমি জীবনের পথচলা”
“নিজে না খেয়ে তুমি খাওয়ালে”
“শেখালে কথা বলা”
“বাবা তুমি আমার যত খুশির কারন”
“বলো তোমার মতো করবে কে শাষন”
“বাবা তুমি আমার বেচেঁ থাকার কারন”
“নেই তোমার মতো কেউ এতোটা আপন”

আম সরি বাবা আমি এখনো তোমার খুনিদের ধরতে পারলাম না।কিন্তু আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।
দরজার আড়ালে শিশিরের গান শুনে শুভ্রতার ও চোখে পানি এসেগেছে।শুভ্রতা ঘুম থেকে উঠেছিলো পানি খাওয়ার জন্য।শিশির আর শুভ্রতাদের রুম পাশাপাশি।শুভ্রতা পানি খাওয়ার জন্য বের হতে এই গানটা শুনে শিশিরের মুখে।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৫

শুভ্রতা:ওনার ও আমার মতো বাবা নেই।কিন্তু ওনার তো একটা সুন্দর পরিবার আছে।আর আমার কপালে তাও নেই।নাহলে কি আর পালিয়ে আসতাম।
শুভ্রতা আসতে করে চলে আসে নিজের রুমে।চুপ করে শুয়ে পরলো শুভ্রতা।
শিশির বারান্দা থেকে উঠে রুমে আসলো।শুভ্রতার কথা মনে পরতে একটা আলাদা কিছু অনুভব করতে পারছে ও।

“জানিনা আমার হৃদয়ে কেন এমন ভাবে স্পন্দন করে তোমাকে দেখে।এক আলাদা স্পন্দন আমি অনুভব করি তোমার জন্য।জানিনা এ আমার কেমন #হৃদয়ের_স্পন্দন।
সকালে শুভ্রতার ঘুম ভাংগে।উঠে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজটা কাজা পরে নেয়।তারপর গিয়ে রুমের বারান্দায় দাঁড়ায়।আশে পাশে বেশ খোলামেলা জায়গা।ঠান্ডা হিম বাতাস বইছে।শুভ্রতা বাতাশ গুলো অনুভব করছে।আশে পাশে চোখ বুলাতে বুলাতে চোখ গেলো গার্ডেনের এক পাশে।শিশির একটা কালো গেঞ্জি আর টাউজার পরে ব্যায়াম করছে।

শুভ্রতা হা করে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে।কিছুক্ষন পর নিজের মাথায় নিজেই বারি মেরে বলে,
শুভ্রতা:কি করছিস শুভ্রতা।একটা ছেলেকে এভাবে তাকিয়ে দেখছিস কেন।
শুভ্রতা নিজের মনে নিজেকে বকতে বকতে রুমে চলে আসে।
এদিকে প্রিয়া আর সায়ানের রিলেশন একদম খারাপ প্রায়।প্রিয়া কথায় কথায় খালি রাগ করে।সায়ান প্রিয়ার এই ব্যবহার মেনে নিতে পারছেনা।সায়ান বুজতে পারছেনা এর কারনটা কি।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৭