হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৭

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৭
নন্দিনী চৌধুরী

সকালে খাবার টেবিলে বসে খাবার সার্ভ করছেন সাবিনা।মহুয়া,শুভ্রতা আর চাঁপা খাবার টেবিলে বসা।সাবিনা ওদের প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছেন ওরা খাচ্ছে।খেতে খেতে শুভ্রতার চোখ গেলো পুলিশ ইউনিফর্ম পরে। শিড়ি দিয়ে নামতে থাকা শিশিরের দিকে।শিশির হাতা ঠিক করতে করতে নামছে।শিশির নামতে নামতে চোখ গেলো শুভ্রতার দিকে।শিশির শুভ্রতার দুজনের চোখাচোখি হলে শুভ্রতা লজ্জা পেয়ে যায়।লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়।সেটা দেখে শিশির মুচকি হাসেঁ।শিশির খাবার টেবিলে বসতেই সাবিনা ওকে একবাটি কনফ্লেক্স দিলো,সাথে ফ্রুটস।

শিশির চুপচাপ খাচ্ছে আর ফাকে ফাকে আড়চোখে শুভ্রতাকে দেখছে।শিশির খাওয়ার মাঝে বললো,
শিশির:তোমাদের বাড়ির ঠিকানা বলো ড্রাইবার তোমাদের বাসায় দিয়ে আসবে।
শিশিরের কথা শুনে শুভ্রতার মনে আবার ভয় জেগে গেলো।বাড়ি যদি সে ফিরে তাহলে মামি তাকে মেরেই ফেলবে। আর হয়তো ধরেবেধে অই লোকটার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে।না না সে বাড়ি যাবেনা।
শুভ্রতা:আমি বাড়ি যাবোনা।দরকার হলে আপনার বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমি বাড়ি যাবোনা।
শিশির:কেন বাড়ি যাবেনা কেন?
শুভ্রতা:………।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাবিনা:বলো শুভ্রতা মামনি কোনো সমস্যা আছে বাড়িতে?
চাঁপা:আমি কইতাছি খালা।
তারপর চাঁপা সব কিছু খুলে বললো শিশিরদের।সব কিছু শুনে সাবিনা,শিশির,মহুয়া তিনজনেই অবাক।মানুষ কত নির্মম হলে এমন করতে পারে।
সাবিনা:শিশির শুভ্রতা এখানেই থাকবে।ওকে ওই জাহান্নামে দিয়ে আসার দরকার নেই।
শিশির:হুম বুজলাম সব মা।আচ্ছা তোমরা এখানেই থাকো।তা মিস শুভ্রতা আপনি কলেজের কোন ইয়ারে পড়েন?

শুভ্রতা:জি ফাইনাল ইয়ারে উঠেছি।
শিশির:আচ্ছা তাহলে আপনার কলেজ আমি চ্যাঞ্জ করে মহুয়ার কলেজে আপনাকে ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।মহুয়ার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম চলছে।
শুভ্রতা:জি আচ্ছা।
শিশির:আর চাঁপা আপনি?
চাঁপা:সাহেব মুই ছোড বেল্লাত্তন অসিক্ষিত।পড়ালেহা করি নাই।মোরে আপনেগো বাইত্তে কামে রাইক্ষেন।তাহলেই হইবো।
সাবিনা:সেকি কি বলো।কাজের মেয়ে হয়ে থাকবে কেন তুমি।তুমিও এই বাড়ির একজন সদস্য।
শিশির:আচ্ছা আমি যাচ্ছি মহুয়া চল।
মহুয়া:হুম চলো।

শিশির মহুয়াকে নিয়ে চলে গেলো।
দুপুরে সাবিনা রান্না ঘরে রান্না করছে।চাঁপাও হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে।শুভ্রতার একা ভালো লাগছেনা তাই রান্না ঘরে চলে আসে সেও।
সাবিনা:কিরে তুই এখানে আসলি কেন?
শুভ্রতা:আন্টি আমার একা একা ভালো লাগছেনা।
সাবিনা:আন্টি কি হুম মামনি ডাক।তুইতো আমার কাছে মহুয়ার মতোই।
শুভ্রতা:আচ্ছা মামনি।
সাবিনা:তুই শিশিরের রুমে যা ওর রুমে অনেক বই আছে সেখান থেকে কিছু একটা পড় বা হ্যা শিশিরের রুমে অনেক গাছ আছে সেগুলোতে বরং পানি দে।
শুভ্রতা:আচ্ছা।

শুভ্রতা পানির পাইপ নিয়ে গেলো।শিশিরের রুমে।শিশিরের রুমটা বেশ বড়।এক সাইডে বেড তার পাশে একটা ছোট টেবিল তার উপর ল্যাম্প রাখা।বেডের আরেক সাইডে আলমারি আর সোফা বসানো।ওয়াসরুমের পাশের সাইডে ড্রেসিংটেবিল।বেলকনির সাইডে বড় বুকসেল্ফ।দেয়ালে শিশিরের অনেক ছবি।আর এক সাইডে গিটার রাখা।শুভ্রতা বারান্দার আসলো।বারান্দায় অনেকগুলো ফুলের গাছ একটা রকিং চেয়ার আর একটা দোলনা রাখা সাথে সুন্দর সুন্দর কালারফুল লাইট লাগানো।বোঝাই যাচ্ছে শিশির খুব যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে জায়গাটা সাজিয়েছে।সাধারনত মেয়েরা এভাবে বারান্দা সাজায়।আজ প্রথম সে কোনো ছেলেকে এসব করতে দেখেছে।

শুভ্রতা পাইপ দিয়ে প্রত্যেকটা ফুলের টবে পানি দিয়ে দিলো।তারপর ফুলের টপের এক্সট্রা আগা গুলা কেটে দিলো।তারপর রুমে এসে বুকসেল্ফ থেকে বই নিলো হুমায়ন আহমেদের “হিমু” বইটা সে নিলো।তারপর রুম থেকে চলে আসলো। দুপুরে মহুয়া বাসায় আসার পর সবাই লাঞ্চ করে নিলো।
সায়ান আর প্রিয়া বসে আছে মুখোমুখি রেস্টুরেন্টে।আজকে সায়ান প্রিয়ার থেকে জানবেই কেন সে এমন করছে।
সায়ান:প্রিয়া তুমি আমার সাথে এমন কেন করছো?
প্রিয়া:কই কি করছি?

সায়ান:আমাকে এভাবে ইগ্নোর করছো কেন?আমার সাথে ঠিক ভাবে কথাও বলোনা।আমি ফোন দিলে ফোন ধরোনা।ম্যাসেজ দিলে রিপ্লে করোনা।সমস্যা কি?তুমি কি আমার সাথে রিলেশন রাখতে চাওনা।
প্রিয়া:হ্যা আই ওয়ান্ট ব্রেকাপ সায়ান!
প্রিয়ার কথা শুনে সায়ান অবাক হয়েগেলো।
সায়ান:মানে কি বলছো এসব?
প্রিয়া:হ্যা সায়ান আমি তোমার সাথে আর রিলেশন রাখতে চাইনা।তুমি আমার জন্য যোগ্য না।দেখো তোমার কোনো স্টেটাস নাই।না তুমি কোনো বড়লোক বাড়ির ছেলে।আমি তোমার থেকে ভালোকিছু ডিজার্ভ করি।সো আমি তোমার সাথে আর রিলেশন রাখতে চাইনা।
সায়ান:ছেলেটা কে প্রিয়া?

প্রিয়া:রাহাত।আমাদের এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে সে।অনেক বড়লোক তারা।আমার সাথে দুই মাস হয়েছে রিলেশন আছে।তোমাকে বলবো বলবো করেও বলতেপারিনি।তাই আজ বলে দিচ্ছি।আমি তোমাকে ভালোবাসিনা আমি রাহাতকে ভালোবাসি।
সায়ান প্রিয়ার কথা শুনে হতভম্ভ হয়ে যায়।যেই প্রিয়াকে সে নিজের থেকে ভালোবাসলো সেই তাকে এভাবে কষ্ট দিলো।

সায়ান আসতে করে উঠে চলে যায়।
আজকে শুভ্রতার কথা গুলো তার মনে পরছে সেদিন শুভ্রতা বলেছিলো,
“আল্লান না করুক সায়ান ভাই মন ভাংগার কষ্ট আপনি না পান।”
হ্যা আজকে তার মন ভেংগেছে।শুভ্রতাকে দেওয়া কষ্ট প্রকৃতি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।শুভ্রতাকে সে যেই কষ্ট দিয়েছে।সেই কষ্ট আজ সে পাচ্ছে।

রাতে শিশির বাসায় আসে।আজকে তার মন ফুরফুরা কিছুটা খোজ পাওয়া গেছে মেয়েগুলোর।জানাগেছে মেয়েগুলোকে এক সাথে গায়েব করা হয়েছে।এটা একটা মেয়ে পাচার কারি চক্রের কাজ।মেয়েদের বিয়ের প্রলোবম দেখিয়ে বিয়ে করে বেঁচে দেয়।শিশিরদের এখন জানতে হবে এর পিছনে কারা আছে।

শিশির রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ব্যালকোনিতে এসে দেখে ওর গাছের টব একদম পরিষ্কার করা।দেখে মনে হচ্ছে কেউ পরিষ্কার করে গেছে।কিন্তু শিশিরের মা তো এই কাজ করবেনা।মহুয়াও তো করবেনা এসব।তাহলে করলো কে?শিশির নিচে এসে দেখে খাবার টেবিলে খাবার দেওয়া।শিশির খাবার খেয়ে নেয়।খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে ল্যাপ্টপ নিয়ে বসলো।শুভ্রতাত জন্য অনলাইনে ফ্রম ঠিক করে নিয়েছে।এখন শুভ্রতার থেকে তার ডিটেইলস নিয়ে ফ্রম ফিলাপ করতে হবে।কাল সকালে শুভ্রতার সাথে কথা বলবে সে।
বাবার রুমে এসে বসে আছে আজমির।বাবার পাশে বসে বাবার হাত ধরলো সে।বাবা তার ঘুম।আজমির কেদেঁদিলো আর বলতে লাগলো,

বাবা অনেক বড় ভুল করেফেলেছি আমি অনেক বড় ভুল।নিজের ভুল ডাকতে গিয়ে এক সাথে দুজনকে মেরে ফেলেছি আমি।বাবা তুমি ঠিক বলেছিলে একদিন আমাকে পস্তাতে হবে।বাবা আজকে আমার মেয়ে অদের স্বিকার হয়েগেছে।এতোদিন আমি অন্যের মেয়ে বোন স্ত্রীকে শিকার বানাতাম আজ আমার নিজের মেয়ে আয়না ওখানে ফেসেঁ গেছে।বাবা আমি এভার কিভাবে ওকে বাচাঁবো।কি বলবো আমি আয়নার মাকে।বাবা আমার পাপ আমাকে ধরে ফেলেছে।

ছেলের কান্নার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে তাকালেন তিনি।ছেলের কথা গুলো সব শুনতে পেয়েছেন।কিন্তু চাইলেও কিছু বলতে পারছেননা।তার পাপের সাজাও আল্লাহ তাকে দিয়েছে।একটা ফুলের মতো মেয়েকে বাপ মা হারা করেছেন তিনি।আল্লাহ তাইতো তার এই অবস্থা করেছেন।
সকালে,

শুভ্রতা ফজরের নামাজ পরে গার্ডেনে আসলো।এখনো আকাশে সূর্য উঠেনি হালকা বাতাস আর হাল্কা অন্ধকার।হাটতে অনেক ভালো লাগছে শুভ্রতার।শুভ্রতা একা একা হাটছে তখম পিছন থেকে একটা ডাক শুনে থমকে যায় সে।
“মিস শরৎশুভ্রতা”
শুভ্রতা পিছনে তাকিয়ে দেখে শিশির দাড়িয়ে আছে জগিং সুট পরে।শুভ্রতা আসতে করে বললো,
শুভ্রতা:জি।
শিশির:এতো সকালে এখানে তাও আবার এতো পাতলা জামা পরে।।ঠান্ডা লাগবে জানেন সেটা।
শুভ্রতা:জ.জি।
শিশির:এই নেন চাদরটা গায়ে দিয়ে নেন।

শিশির শুভ্রতার দিকে চাদরটা এগিয়ে দিলো।ষুভ্রতা চাদরটা নিয়ে গায়ে জরিয়ে নিলো।
শিশির:আপনার কলেজের ফ্রম নিয়েছি আপনার বায়োডাটা আমাকে দিলে ফিলাপ করবো ফর্মটা।
শুভ্রতা:জি আচ্ছা এখোনি দিবো?
শিশির:না সকালে নাস্তার টেবিলে দিয়েন।
শুভ্রতা:আচ্ছা।
শুভ্রতা আর কিছু না বলে চলে আসে।কেমন জানি অসস্তি লাগে তার।শুভ্রতা চলে যাওয়ার পর শিশির নিজ মনে বলতে থাকে,
“তুমি শিশির ভেজা শরৎশুভ্রতা”
“তুমি হৃদয়ের এক অন্যরকম মাদকতা”
“তুমি আমার জীবনের এক প্রবাহিত প্রহেলিকা”
“তুমি এই শিশিরের হৃদয়ের এক আলাদা”

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৬

” #হৃদয়ের_স্পন্দন ”
শিশির কথাটুকু বলে জগিং করতে চলে যায়।
সকালে শুভ্রতা সাবানাকে খাবার বানাতে সাহায্য করছে।সাবানা অনেক না করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।শুভ্রতা কি ভেবে আজকে শিশিরের জন্য আলুর পরাটা বানালো সাথে মুরগির মাংস আর বাটার।শুভ্রতা এই দুইদিনে দেখেছে শিশির তেমন লাইট খাবার খায়না।সব সময় হাফ বয়েল খাবার খায়।আর সকালে হয় কর্নফ্লাক্স নাহলে শুধু ফ্রুটস খায়।আজকে শুভ্রতা কি মনে করে এগুলা বানালো।
খাবার টেবিলে শিশির এগুলা দেখে চমকে গেলো।মায়ের দিকে অবাক চোখে তাকালে সাবিনা বলে,
সাবিনা:এগুলো আমি না শুভ্রতা বানিয়েছে।তোর যদি খেতে না ইচ্ছে করে তাহলে আমি অন্য কিছু নিয়ে আসছি।

শিশির:না থাক লাগবেনা।আমি খাচ্ছি।
শিশির দুইটা পরাটা খায় বাটার আর একোটূ মুরগির মাংস দিয়ে।খেতে খেতে মনে মনে বলে,
আল্লাহ সবাই সব দেন না আসলেই।কাউকে অঘাত রুপ দেয় কিন্তু গুন দেয়না।কাউকে গুন দেয় রুপ দেয়না।শুভ্রতার রুপ আগুন করা না হলেও তার গুন সব আগুন করা।মাসাল্লাহ।
শিশির নাস্তা করে শুভ্রতার থেকে সব ডিটেলস নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

এদিকে আয়নার মা কেঁদে যাচ্ছেন।গতকাল থেকে তার মেয়ে নিখোঁজ।সকালে বেরিয়েছে স্কুলের জন্য কিন্তু আর বাড়ি ফেরেনি।সবাই তাকে হন্যে হয়ে খুজেও কোনো খোজ পায়নি।আয়নার বাবা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিভাবে তার স্ত্রীকে বলবে তার মেয়ে যে নারী পাচারকারীদের হাতে বন্দি।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৮