হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৮

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৮
নন্দিনী চৌধুরী

এক সপ্তাহ পার হয়েগেছে।শুভ্রতা এখন মহুয়ার কলেজে পড়ে।মহুয়ার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ তাই সে এখন কলেজে যায়না।তাই শিশির শুভ্রতাকে কলেজে পৌছে দেয় নিজের থানায় যাওয়ার সময়।এর মাঝে শুভ্রতা অনেক মানিয়ে নিয়েছে শিশিরদের সবার সাথে।সাবিনার ভালোবাসায় শুভ্রতা নিজের মায়ের ভালোবাসার অভাব কিছুটা হলেও ভুলতে পেরেছে।শুভ্রতা এখন নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে।শুভ্রতা চায়না সমাজের মানুষের কাছে সে কালো বলে ছোট হয়ে থাকুক।আর তাছাড়া সায়ানকেও সে দেখিয়ে দেবে সে কালো বলেও তুচ্ছ নয়।

শিশির নিজের রুমে চেয়ারে মাথায় হাত রেখে বসে আছে।গত এক সপ্তাহ আগে আয়না নামের একটা মেয়েও নিখোঁজ হয়েছে।মেয়েটার বাড়ি থেকে স্কুলের পথে বেরিয়েছিলো কিন্তু সে স্কুলে পৌছায়নি আর না বাড়িতে।মেয়েটার মা এসেছিলো এফায়ার করতে।শিশির বুজে উঠতে পারছেনা এই চক্রের পেছনে কারা আছে।শিশির বসে ছিলো তখন তার রুমের দরজার নক পরলো।
শিশির:আসুন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একটা উর্তি বয়সের মেয়ে।লেডি পুলিশ অফিসারের ড্রেস পরা চুল গুলো খোপা করা।মাথার ক্যাপটা হাতে নিয়ে ভিতরে আসলো।
শিশির:বলুন মিস মৌ।

মৌ:স্যার আপনার কথা মত স্কুল বাড়ির এরিয়া সব জায়গায় আমরা খোজ নিয়েছে। এবং জানতে পেরেছি কিছুদিন যাবত একটা ছেলের সাথে মেয়েটাকে কথা বলতে দেখা গেছে।অনেকের কথা মতে হয়তো ছেলেটা মেয়েটার প্রেমিক।আবার অনেকের কথা মতো ছেলেটা মেয়েটাকে বিরক্ত করে।তবে অনেক অবাক করা তথ্য মেয়েটার বান্ধুবিরা আমাদের দিয়েছে যে কিছুদিন যাবত নাকি মেয়েটার কাছে অনেক টাকা থাকে।মানে মেয়েটা নাকি প্রায় প্রায় তাদের সাথে শেয়ার করে কোন একজন নাকি ওকে সিনেমায় নায়িকা হবার সুযোগ দিবে বলেছে।মেয়েটার কাছে এতো টাকা নাকি তারাই দেয়।

শিশির:এর মানে তিন টাইপ ফাদঁ এরা মেয়েদের ধরার জন্য পেতেছে।এক বিয়ে করার কথা বলে,দুই কাজ দেবার না করে,আর তিন প্রেমের ফাদেঁ ফেলে।আমার মনে হয় এর সাথে একজন না অনেকে জরিত আছে।মিস মৌ আপনি হাসান কে নিয়ে আরো একবার অই সব জায়গা গুলোর থেকে খোজঁ নেন দেখেন অই ৩৩জন মেয়ে যে নিখোজ হয়েছিলো তাদের মদ্য কারো কি বিয়ে হবার কথা ছিলোকিনা বা কারো কাজ পাওয়ার বা কারো রিলেশনের।
মৌ:জি আচ্ছা স্যার।
শিশির:জি আপনি আসতে পারেন এখন।

মৌ বেরিয়ে আসে শিশিরের রুম থেকে নিজের জায়গায় এসে বসে আর বিড়বিড় করে বলে,
মৌ:আচ্ছা স্যার এমন কেন উনি কি আমার চোখের ভাষা বুজেনা আমার মনের কথা বুজেনা।অবশ্য বুজবে কিভাবে উনিতো তাকানিনা আমার দিকে।ইসস স্যার যদি বুজতো আমার ফিলিংস গুলো।
আয়নার মা বসে আছে ঘরের উঠানে।চোখ মুখ একদম নেতিয়ে গেছে তার মেয়ের চিন্তায়।সায়ানের মা বসে আছে তার পাশে।আয়না তার ও অনেক ভালোবাসার ছিলো।আজ এক সপ্তাহ মেয়েটা নিখোঁজ।কোথায় আছে কেউ জানতে পারলোনা।

সায়ানের মা:ছোট আর কাদিঁস না।আল্লাহর কাছে দোয়া কর দেখ আল্লাহ আয়নাকে ফিরিয়ে দেবে।
আয়নার মা:ভাবি এটা আমার শাস্তি।আমি শুভ্রতাকে জ্বালিয়েছি। আর দেখো শাস্তি স্বরুপ আল্লাহ আমার মেয়েকেই নিয়ে গেছে।
সায়ানের মা আয়নার মায়ের কথায় চুপ হয়ে গেলো।আজকাল তার ছেলেটাও অনেক চুপচাপ হয়েগেছে।জানেনা এর কারন কি।
সায়ানের মা আয়নার মাকে শান্ত করছে।

রুমের ভিতরে বসে স্ত্রীর কান্না শুনে যাচ্ছে আজমির।চাইলেও সে কিছু করতে পারছেনা।অনেক অনুরোধ করেছে সে ফিরোজের কাছে তার মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু ফিরোজের একটাই কথা ধান্দায় নিজের মেয়ে আর পরের মেয়ে বলতে কিছু নাই।তবে আজমির মেয়েকে নিতে হলে ৫০লাক্ষ টাকা তাকে দিতে হবে।পাপ তার বাপকেও ছাড়েনা সেই দষা হয়েছে আজমিরের।অন্যের মেয়েদের পাচার করতে গিয়ে আজ তার নিজ ঘরের মেয়েই পাচার হতে চলেছে।৪০টা মেয়ে পুর্ন হলেই দুবাইয়ে পাচার হয়ে যাবে মেয়েগুলো।

আজমির ভয়ে পুলিশের কাছেও যেতে পারছেনা। তাহলে যে সে নিজেও ধরা পরে যাবে।আজমির ভেবে পাচ্ছেনা কোথা থেকে সে এতোগুলা টাকা পাবে।ব্যাংকে যা আছে তা দিয়েও হবেনা।
কলেজ থেকে মাত্র ফিরেছে শুভ্রতা।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সবার সাথে খেতে বসলো।খেতে খেতে অনেক গল্প করলো।শুভ্রতা খেয়ে এসে রুমে যাওয়ার সময় কি ভেবে শিশিরের রুমে আসলো।শিশিরের রুমের ব্যালকোনিতে গিয়ে দেখলো গোলাপ গাছে গোলাপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে।শুভ্রতার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।শুভ্রতা আবার পাইপে পানি এনে সব গাছে পানি দিয়ে গাছগুলো পরিচর্যা করলো।

তারপর বেরিয়ে আসলো শিশিরের রুম থেকে।রাতে শিশির বাড়ি ফিরে নিজের রুমে এসে দেখে তার ড্রেস খাবার সব রুমে দেওয়া।এটা নতুন কিছুনা এরকম রোজ সব এসে সে পরিপাটি পায়।শিশির জানে এগুলা শুভ্রতা করে দিয়ে যায়।কারন শিশিরের খুব ভুলা মন।কোথায় কি রাখে সে তা ভুলে যায়।তাই সাবিনা শুভ্রতাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে শিশিরের জিনিশ ঘুছিয়ে রাখার।শিশির ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেয়।আজকাল বয়েল ফুডের পাশাপাশি হাল্কা শুভ্রতা স্পেসাল লাইট খাবার খাচ্ছে সে।শুভ্রতার হাতে রান্না অনেক ভালো।তাই শিশির অল্প হলেও খায়।বেশি খাওয়া যাবেনা।পুলিশ মানুষ কিনা তাই ভুড়ি বাড়ানো যাবেনা।নাহলে অপরাধিদের ধরবে কি করে।শিশির খাওয়া শেষ করে বারান্দায় আসে।বারান্দায় এসে সেও দেখে গোলাপ গাছে ফুল ফুটেছে।শিশির গোলাপ গাছে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,

“-~মানুষ তার প্রিয় মানুষটাকে মনের কথা জানাতে তোমাকে ব্যবহার করে গোলাপ রানী।তুমি এমন এক অতি ভালোবাসার জিনিশ যা নারীরা পেলে খুশি হয়ে যায়।পুরুষদের মনের কথা বলার মাধ্যম তুমি।
আচ্ছা আমিও কি শরৎ শুভ্রতাকে ভালোবাসি
গোলাপ রানি।সে যখন আমার আশে পাশে তাকে এক আলাদা কিছু অনুভব করি আমি।কিন্তু প্রথম দেখায় কি ভালোবাসা হতে পারে।
শরৎশুভ্রতা আমার কাছাকাছি থাকলে আমার হৃদয়ের স্পন্দন জানান দেয় যে শিশির শরৎ শুভ্রতা তোর কাছেই আছে।
জানিনা এটা ভালোবাসা কিনা।তবে সে আশে পাশে থাকলে নিজেকে খুব খুশি খুশি মনে হয়।”_~

সকাল থেকে মৌ আর তার সাথের লোকেরা সব গুলো মেয়ের বাড়ির থেকে শুরু করে নিখোঁজ হওয়া জাওগা সব জায়গায় আবার খোজ নিয়েছে।ফলাফল আগেও মতো শুন্য।
মৌ:উফ কেউ কিছু জানেনা আজব ভুতে এসে মেয়েগুলোকে নিয়েগেছে।সব হারামি কেউ মুখ খুলেনা।
হাসান:তাইতো মনে হচ্চে।
মৌ:চলো অইদিকটায় যাই।
মৌ আর হাসান সামনের দিকে গেলো।এখানে একটা টং এর দোকান আছে।মৌ দোকানদারকে জিজ্ঞেশ করলো,

মৌ:চাচা আপনি জানেন নিশ্চই এখানে থেকে বিগত এক বছর এখান থেকে ৩২টা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে।
চাচা:হো মা জানি।খুব খারাপ লাগছে শুইন্না।
মৌ:চাচা আপনি কি আমাদের বলতে পারবেন এই মেয়েগুলো নিখোঁজ হবার সময় আপনি কি কোনো সন্দেহ প্রবন কিছু দেখেছেন?
চাচা:উমমমম,,,হয় মা দেখছি দেখছি যহোনি কোনো মাইয়া এহনান্তে নিহোজ হয় তার ঠিক একদিন আগে রাইতে এহানে একটা লাল গাড়ি আইয়া বইয়া থাহে।আমার দোহান অনেক রাইত পর্যন্ত খোলা থাহায় আমি দেহি অনেকবার।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৭

মৌ:লাল গাড়ি কি প্রত্যেক মেয়ে নিখোঁজ হবার আগের দিন রাতে এখানে এসে থাকে?
চাচা:জি হো মা।
মৌ:আচ্ছা চাচা ধন্যবাদ।
হাসান:এই লাল গাড়ির কেসটা আবার কি?
মৌ:আমার মনে হচ্ছে ওই লাল গাড়িতেই করে মেয়েগুলোকে নেয়া হয়।
হাসান:উম তাই মনে হচ্ছে।চলো স্যারকে গিয়ে খবর গুলো জানাই।
মৌ:হুম চলো।

প্রিয়া আর রাহাতের রিলেশন বেশ ভালো গেলেও ইদানিং রাহাত প্রিয়াকে এভোয়েড করছে।প্রিয়া সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিজের শরীর রূপ দিয়ে রাহাতকে নিজের করে রাখার।কিন্তু একটা প্লে বয়ের কি আর একটা মেয়েকে দিয়ে হয়।রাহাত তাই।প্রিয়াকে ছাড়াও অনেকের সাথে ইন্টিমেট হয় সে যা প্রিয়া জানেনা।
শিশির শুভ্রতাকে কলেজে ড্রপ করে দিচ্ছে।

শুভ্রতা আড়চোখে তাকাচ্ছে শিশিরের দিকে।শিশির সেটা নোটিস করলেও কোনো কিছু বলছেনা।কলেজ গেটে এসে গাড়ি থামালো শিশির।শুভ্রতা গাড়ি থেকে নেমে গেলো।শুভ্রতা নেমে যাওয়ার সময় শিশির বললো,
শিশির:মিস শুভ্রতা সাবধানে কলেজে থাকবেন।ইদানিং জানেন নিশ্চই অনেক মেয়ে নিখোঁজ হচ্ছে।অপরিচিত কারো সাথে ভান বিনিময় করবেন না।মনে থাকে যেনো।নাউ বাই।
কথাটুকু বলে শিশির গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো।আর শুভ্রতা কলেজে ডুকলো।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ৯