হৃদয়ের স্পন্দন শেষ পর্ব

হৃদয়ের স্পন্দন শেষ পর্ব
নন্দিনী চৌধুরী

তোড়জোর করে বিয়ে আয়োজন শুকরু হয়েছে।আর হবে নাইবা কেন।হাজার হোক দুটো বিয়ে বলে কথা।সাবিনা, ইকবাম,মিসেস ইকবাল ছেলেমেয়ের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি রাখছেন না।শুভ্রতাকে শুভ্রতার মা আর জাহিদ তাদের সাথে নিয়ে গেছে।বিয়ের আগ পর্যন্ত মেয়ে তাদের কাছে থাকবে।শিশির প্রথমে এতে রাজী হতে চাচ্ছিলোনা কিন্তু পরে রাজী হয়ে যায়।শুভ্রতা আর চাঁপাকে নিয়ে যায় শুভ্রতার মা।আগামিকাল হলুদ আর পরশু বিয়ে।সব আয়োজন সুন্দর ভাবে করা হচ্ছে।

নিজের রুম বসে বসে চোকলেট খাচ্ছে শুভ্রতা হঠ্যাৎ ফোনের রিং কানে আসতে শুভ্রতা ফোনের দিকে তাকায়।শিশিরের কল আসছে।শুভ্রতা ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।এটা নতুন কিছুনা এখানে আসার পর ৬/৯বার শিশির কল দেয়।শুভ্রতা কল রিসিভ করলো।
শুভ্রত:হ্যালো।
শিশির:কি করো?
শুভ্রতা:কিছুনা বসে আছি।ডাহা মিছা কথা শিশির যদি শুনে ও চোকলেট খাচ্ছে তাহলে বকবে?]
শিশির:শুনো একটু পর একটা পার্সেল যাবে।পার্সেলে যা পাবা সেগুলো দিয়ে রেডি হয়ে থাকবে আমি নিচে এসে ফোন দিবো তখন সাথে সাথে নেমে আসবা।
শুভ্রতা:এই রাতে!
শিশির:চুপ মাইয়া খালি বেশি কথাঁক।
শুভ্রতা:আচ্ছা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শিশির কল কেটে দিলো।কিছুসময় পর আসলেই একটা পার্সেল আসে।শুভ্রতা সেটা রিসিভ করে রুমে আনে।পার্সেল খুলে তার ভিতোরে একটা নীল কালারের শাড়ী চুড়ি মেচিং গহনা আর গাজরা পায়।শুভ্রতা সেগুলো নিয়ে রেডি হতে চলে যায়।রেডি হয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে নেয় একবার।এর মাঝেই শিশিরের কল আসে।শুভ্রতা কল পেয়ে নিচে চলে আসে।সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে।তাই আসতে করে বেরিয়ে আসে শুভ্রতা।শুভ্রতা বাহিরে বেরিয়ে এসে দেখে শিশির গাড়িতে বসে আছে।শুভ্রতা গিয়ে ওর পাশে বসলো।

শিশিরের একবার আড়চোখে তাকালো শুভ্রতার দিকে।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।দুইজনের কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা।শিশির একমনে ড্রাইভিং করছে।শুভ্রতা চুপ করে বসে আছে।দেখতে দেখতে ওরা চলে আসে একটা রিসোর্টে।শিশির শুভ্রতাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো গাড়ি থেকে।শুভ্রতাকে দাড়া করিয়ে ওর চোখটা বেধে দিলো শিশির।শুভ্রতা বুজতে পারছেনা শিশির কি করতে চাইছে।শিশির শুভ্রতাকে কোলে নিয়ে চলে আসে রিসোর্টের ছাদে।শুভ্রতার চোখ তখনো বন্ধ।শিশির শুভ্রতার চোখের বাধন খুলে দেয়।শুভ্রতা আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে চমকে যায়।পুরো ছাদে লাইটিং করা।গোলাপ ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজানো।মোমবাতি দিয়ে রাখা কিছু কিছু জায়গায়।শুভ্রতা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।শুভ্রতা পিছনে ফিরে কিছু বলতে যাবে তার আগে শিশির হাটু গেড়ে বসে পরে শুভ্রতার সামনে।শুভ্রতা অবাকের উপর অবাক।শিশির শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে,

“প্রথম যেদিন এক মায়াবী মুখের নারীকে আমার কোলে উঠিয়েছিলাম সেদিন সে অজ্ঞান ছিলো।কারো অজ্ঞান হয়ে যাওয়া মুখুস্রি যে এতো মায়াবি লাগতে পারেত তা তাকে না দেখলে জানতাম না।২য়বার তার সাথে দেখা হয় একদিন রাতে রাস্তায়।সেদিন তাকে নিয়ে আসি নিজের বাড়িতে।তারপর রোজ তার মায়াবী মুখ আমার সামনে থাকতো।তারপর সে হয়ে গেলো আমার ঘরের রানী আমার মনের ঘরের রানী।আজ আমি আবার ও তার কাছে চাইছি হবে কি তুমি আমার মনের রানী।দেবে কি আমাকে তোমায় ভালোবাসতে।হবে কি তুমি আমার হৃদয়ের “হৃদয়ের স্পন্দন “।

শুভ্রতার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে।কাপাকাপা হাতে শিশিরের হাত থেকে ফুল গুলো নেয় শুভ্রতা।শিশির শুভ্রতার হাতের পিঠে একটা চুমু দিয়ে একটা আংটি পড়িয়ে দেয়।শিশির উঠতেই শুভ্রতা ওকে জরিয়ে ধরে।শিশির ও পরম আদরে আর যত্নে জরিয়ে নেয় তার ভালোবাসাকে তার বউকে।শিশির শুভ্রতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“আজ কি তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে পারি?”
শুভ্রতা শিশিরের কোথায় খুব লজ্জা পায়।শুভ্রতাকে লজ্জা পেতে দেখে শিশির বলে,
“আমি কি ধরেনেবো চুপ থাকা সম্মতির লক্ষ্যন।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে আছে।শিশির শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো।তারপর নিয়ে আসলো ওদের বুক করা রুমে।রুমে এনে শুভ্রতাকে শুয়ে দিলো খাটে।শিশির শুভ্রতার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোটঁ ডুবিয়ে দিলো।শুভ্রতাও আজকে হারিয়ে যাচ্ছে শিশিরের মাঝে।আসতে আসতে শিশির শুভ্রতার পুরো দেহের মাঝে মিশে যায়।আজকে এক হয়ে যাচ্ছে তাদের ভালোবাসা।
সকালে,,,

শুভ্রতা ঘুম থেকে উঠে দেখে সে শিশিরের মাঝে লেপ্টে আছে।শুভ্রতা এতে অনেক লজ্জা পায়।তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় সে।কালকের শাড়িটাই আবার পরে নেয় সে।শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে শিশির উঠে গেছে।শিশিরের দিকে তাকাতে কেমন জানি লজ্জা লাগছে তার।শিশির জিনিশটা বুজতে পেরে উঠে গিয়ে শুভ্রতাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর দুই গালে কামড় দিলো আর বললো,
তুমি যতবার লজ্জা পাও আমি ততোবার দুইটা টোমেটো খেতে পারি।আর এতো লজ্জা পেতে হবেনা।লজ্জা তো কাল আমি ভেংগেই দিছি তাইনা।

শুভ্রতা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
শুভ্রতা:দূর সরেন তো বাসায় যেতে হবে চলুন।
শিশির:কোথাও যেতে হবেনা।সবাই এখানেই আসছে।আমাদের বিয়ে এখানেই হবে।
শুভ্রতা:এখানে।
শিশির:হ্যা এখানে আমার পাশের রুমটা তোমার।ওখানে তোমার সব কিছু দেওয়া আছে।তুমি অই রুমে যাও।সবাই চলে এসেছে প্রায়।
শুভ্রতা:আচ্ছা ঠিক আছে।

শুভ্রতা বেরিয়ে আসলো আর চলে আসে পাশের রুমে।অনেকটা সময় পর শিশির ওকে ডাক দেয় শুভ্রতা শিশিরের কাছে আসে।দুজনে গিয়ে নিচে থেকে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।এর মধ্য চলে আসে সবাই।বিয়ের সব কিছু এখানে সব।সব এরেজমেন্ট করা হয়েছে।সবাইকে যার যার রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো।শুভ্রতাকে এখানে দেখে কেউ কিছু জিজ্ঞেশ করেনি।কারন শিশির বাসায় বলেছে শুভ্রতা তার সাথেই আছে।মৌ,হাসান ও এসেছে সবার সাথে।
পরেরদিন,,,

আজকে শিশির,শুভ্রতা,মহুয়া,মেহেদির গায়ে হলুদ।সব আয়োজন খুব সুন্দর ভাবে করা হচ্ছে।মহুয়া,শুভ্রতাকে লাল হলুদ মিশানো একটা শাড়ি পরানো হয়েছে।সাথে কাচা ফুলের গহনা।মেহেদি শিশিরকে হলুদ রং এর পাঞ্জাবি পরানো হয়েছে।চারজনকে স্টেজে নিয়ে আসা হয়েছে।একে একে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো।সবাই ওদের হলুদ ছুঁয়ে দিচ্ছে।আসতে আসতে শেষ হলো ওদের হলুদ অনুষ্ঠান।
আজকে সেই অধিক অপেক্ষিতপ্রহর।আজকে ওদের বিয়ে।বিয়ের দিন সকালে শুভ্রতার মামা মামি এসেছে রিসোর্টে।মামা মামিকে দেখে শুভ্রতা অনেক অবাক হয়।শুভ্রতা মামা মামিকে শিশির নিয়ে এসেছে।

সায়ান আসেনি কারন সায়ান দেশের বাহিরে চলে গেছে।শুভ্রতার মামা মামি লজ্জায় কথা বলতে পারছেনা শুভ্রতার সাথে।তবুও শুভ্রতার কাছে মাফ চাইছে।তাদের ভুলের সাজা তারা পেয়েছে।শুভ্রতার মামি শুভ্রতার কাছে অনেক মাফ চেয়েছে।শুভ্রতার মামাও অনেক মাফ চেয়েছে।শুভ্রতা তাদের মাফ করে দিয়েছে।কারন সব যখন ভালো হচ্ছে আর রাগ করে থেকে কি লাভ।শুভ্রতার মামারা মাফ পেয়ে চলে আসে।তাদের মতে তারা শুভ্রতার থেকে মাফ চেয়েছে এই অনেক।কিন্তু শিশির তাদের যেতে দেয়না।শুভ্রতার মামা মামি শারমীনের কাছেও মাফ চেয়েছে।বিকালে শুভ্রতা আর মহুয়াকে সাজাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সন্ধ্যার পর তাদের নিয়ে আসা হয়েছে।শুভ্রতা মহুয়াকে লাল বেনারশি পরানো হয়েছে সাথে মেচিং গোল্ড এর গহনা।শিশির মেহেদিকে গোল্ডেন শেরোওয়ানি পরানো হয়েছে।চারজনকে স্টেজে বসানো হয়েছে।কিছুক্ষনের মাঝে কাজী চলে আসে।শুরু হয় বিয়ে পরানো।কাজী শিশিরকে কবুল বলতে বললে শিশির ফোরফোর করে কবুল বলে দেয়।শুভ্রতার বলতে সময় লাগে।এদিকে আবার মহুয়াকে কবুল বলতে বললে সে ফোরফোর করে কবুল বলে দেয় আর মেহেদি একটু আসতে বলে।দুই ভাই বোনের এমন অবস্থা দেখে মৌ বলে,

তোমাদের দুই ভাইবোনকে দেখে মনে হচ্ছে তোমাদের বিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।একটু আসতে ধিরে কবুল বললে কি কাজী পালিয়ে যেতো।আল্লাহ কি বিয়ে পাগলরে।
মৌ এর কথায় সবাই হেসে দেয়।এবার হলো বিদায় পালা।এই একটা সময় শত হাসি খুশি থাকলেও এই সময় এসে আর হাসি খুশি থাকা যায়না।নিজের স্বজন ছেড়ে চলে যাওয়াটা যে কত কস্টের।মহুয়া সাবিনা শিশিরকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করলো।শিশিরের চোখেও পানি।আদরের বোন এক মাত্র।আজ চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে।শুভ্রতা তার মাকে ধরে কান্না করলো।২য় বারের মতো বিয়ে হলেও বিদায় বেলা সবার জন্যেই যে কান্নার।গাড়িতে করে উঠিয়ে দেওয়া হলো মহুয়াকে।এরপর শিশির শুভ্রতাকে উঠিয়ে দেওয়া হলো গাড়িতে।বাড়িতে এসে কিছু নিয়ম কানুন মেনে ওদের বাসর ঘরে দিয়ে আসা হলো।

বাসর ঘরে সেদিনের মতো ঘোমটা দিয়ে বসে আছে শুভ্রতা।আজ মনের মধ্য কোনো ভয় বা জোরোতা নেই।আছে একবুক ভালোবাসা আর লজ্জা।শিশির দরজা খুলে রুমে আসলো।সেদিনের মতো আজকেও শুভ্রতা শিশিরকে সালাম করলো।শিশির শুভ্রতাকে উঠিয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলো।তারপর দুজোনে নামাজ পরে নিলো।শুভ্রতা নামাজ শেষ করে বারান্দায় আসলো।শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে একটা কালো রং এর শাড়ি পরেছে।চুল গুলো খুলা।বাহিরে বাতাস থাকায় চুল গুলো উড়ছে।শিশির পিছন থেকে এসে শুভ্রতাকে জরিয়ে ধরলো।শুভ্রতার খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো শিশির।শুভ্রতা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

শুভ্রতা:আচ্ছা শিশির আপনি কেন আমাকে ভালোবাসলেন।যেখানে আমি কালো।আমার গায়ের রং এর জন্য কেউ আমাকে ভালোবাসতোনা।সবাই আমাকে তুচ্ছ করতো।এমনকি সায়ান ভাই ও আমাকে কত অপমান করেছে।সেখানে আপনি সব দেখেও আমাকে ভালোবাসলেন কেন।

শিশির শুভ্রতার প্রশ্ন শুনে শুভ্রতাকে ওর দিকে ঘুরালো।কপালের চুল গুলো কানে গুজে দিতে দিতে বললো,
শিশির:সুন্দর্যের প্রেমে পরে কি লাভ যদি সেই সুন্দর্যে কালিমা লেপে থাকে।সুন্দর্য সারাজীবন থাকেনা।সারাজীবন থাকে ভালোবাসা।আজ যদি আমি সুন্দর্য দেখে বিয়ে করতাম বা ভালোবাসতাম তাহলে এক সময় অই সুন্দর্য কমে গেলে।আমার সেই মানুষটাকে ভালোলাগতোনা আর।তখন নতুনত্ব খুজতে থাকতাম।কিন্তু আজ আমি ভালোবেসে তোমাকে যে বিয়ে করেছি।এই ভালোবাসা কিন্তু যাবেনা কারন আমি তোমাকে ভালোবেসেছি তোমার গায়ের রংটাকে না।আর ভালোবাসার কোনো কারন নেই।মানুষ কারনে অকারনে প্রেমে পরে।আর আমিও তোমাকে কোনো কারন ছাড়াই ভালোবাসি।

শুভ্রতা শিশিরকে জরিয়ে ধরে বলে,
শুভ্রতা:আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।আমাকে ছেড়ে যাবেননা প্লিজ।আপনাকে ছাড়া বাঁঁচবোনা আমি।
শিশির:এই শিশির কি তার শরৎশুভ্রতাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে।তাহলে ছেড়ে যাবে কিভাবে।তুমিতো আমার জীবন।
শিশির শুভ্রতাকে কোলে তুলে নেয় আর বলে,
শিশির:আজ আবার আমাদের ফুলসজ্জা হবে কি বলো বউ।
শুভ্রতা:??।
শিশির হেসে শুভ্রতাকে নিয়ে পারি জমালো ভালোবাসার সাগরে।তাদের এই ভালোবাসার সাক্ষি এই রুমের দেয়াল জানালই হয়ে থাকলো।

পরেরদিন,,,
আজকে অদের বৌভাত।সেন্টারে করা হচ্ছে চারজনের বৌভাত।শুভ্রতা মহুয়াকে অনেকেই দেখছে আর প্রশংসা করছে।এদের মাঝে একজন মহিলা সাবিনাকে সবার সামনেই বলে,
মহিলা:কিগো শিশিরের মা দেশে কি মাইয়ার অভাব ছিলো। এরকম কালো কুচকুচে মেয়ে বিয়ে দিলা ওরকম রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে।কই এই মেয়ে আর কই শিশির।
মহিলাটার কথায় অনেক লজ্জা আর কস্ট পায় শুভ্রতা।সাবিনা কিছু বলবে তার আগে শিশির সেখানে এসে মহিলাটাকে বলে,

শিশির:আপনাকে কি এখানে আমার বউয়েএ গায়ের রং বিচার করতে আনা হয়েছে নাকি আমার বউকে দেখতে আসতে বলা হয়েছে।কার্ডে আমি নিশ্চই লেখে দেইনি আমার বউকে দেখতে এসে তার গায়ের রং নিয়ে এখানে তামাসা করবেন।শুনুন আমার বউ যেমন তেমন আমার কাছে মাসাল্লাহ।সে কালো হলেও সে আমার কাছে অপুরুপ সুন্দরি।আশা করি আমার বউকে এরপর থেকে কোনোদিন এভাবে বলবেননা।শুধু আমার বউ কেন কাউকে এভাবে বলার অধিকার আপনার নেই।আপনার ঘরেও তো মেয়ে আছে সুন্দরি কই এখনোতো বিয়ে দিতে পারলেন না।কারন তার যে চরিত্র তার গুনেই বিয়ে দিতে পারছেননা।এখন বলেন এতো সুন্দর হয়ে কি লাভ যদি চরিত্র হয় কালো।মনে রাখবেন সব সুন্দর সুন্দর নয় আবার সব কালো কালো নয়।

শিশিরের কথায় মহিলাটা অনেক লজ্জা পায়।তবুও নিজের ভুল বুজতে পেরে ক্ষমা চায় ওদের কাছে।বৌ ভাত অনুষ্ঠান শেষ করে শুভ্রতা যায় ওদের বাড়িতে আর মহুয়া আসে এই বাড়িতে।
রাতে শুভ্রতা বসে আছে সোফায়।শিশির বাহিরে কথা বলছে জাহিদের সাথে।কথা শেষ করে শিশির রুমে আসে।রুমে এসে দরজা লাগিয়ে শুভ্রতার পাশে বসে।
শিশির:কি ভাবছো?
শুভ্রতা শিশিরকে দেখে অকে জরিয়ে ধরে বলে,
শুভ্রতা:আমাকে এতোটা আগলে রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।আপনাকে জীবনে পেয়ে ধন্য আমি।

শিশির শুভ্রতাকে জরিয়ে নেয় আদরে আর বলে,
“জীবনের শেষ অব্দি আমি তোমার পাশে আছি।কোনোদিন একটা আঁচ লাগতে দেবোনা তোমাকে।”
শুভ্রতা পরম স্নেহে আবেশে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে শিশিরের বুকে।
৪বছর পর,,,,,,,
হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়ানো শুভ্রতা শিশির, মহুয়া মেহেদি,মৌ হাসান আর আবির।আজকে চাঁপার ডেলিবারি হবে।
শিশিরের কোলে ওর ছেলে শান্ত।মেহেদির কোলে ওর মেয়ে মাহি।মৌ কে হাসান বসিয়ে দিয়েছে কারন মৌ প্রেগন্যান্ট।হাসান মৌ বিয়ে করেছে দুইবছর হলো।হাসান মৌকে খুব সাহস করে নিজের মনের কথা বলে।আর মৌ রাজী হয়ে যায়।বিয়ে হয়ে যায় ওদের।
চাঁপার আবিরের সাথে বিয়ে হয়েছে।আবির শিশিরের বন্ধু।শিশিরের বাড়িতে এসে চাঁপাকে ওর পছন্দ হয়ে যায়।আর তারপর বিয়ের প্রস্তাব দেয় ও।আর শিশির ও রাজী হয়ে যায়।কারন আবির খুব ভালো ছেলে।১বছর হয়েছে ওদের বিয়ের।

এই ৪বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে।সাবিনা মারা গেছেন।শুভ্রতার মা ও মারা গেছেন।ইকবাল, মিসেস ইকবাল এখন শিশিরদের সাথে আছেন।জাহিদকেও দেখাশুনা করে শুভ্রতা।ওর ভাইয়ের দেখা শুনাও করে।শান্তের বয়র সবে ২বছর হলো।একদম বাবা পাগল ছেলেটা।বাবাকে পেলে আর কিছু লাগেনা।শিশিরের জান তার ছেলে।যখন শুনেছিলো শুভ্রতা প্রেগন্যান্ট আনন্দে কেঁদে দিয়েছিলো।সাবিনা চলে যাওয়ার পর এদের নিয়েই শিশিরের দুনিয়া।

ওটির লাইট বন্ধ হতেই দরজা খুলে একজন নার্স তোয়ালে পেচিয়ে বাবুকে নিয়ে আসে।নার্স এসে আবিরের কোলে ওর মেয়েকে দেয়।একদম আবিরের মতো দেখতে হয়েছে মেয়ে ওর।চাঁপাকে একটু পর কেবিনে দেবে।একে একে শুভ্রতা মহুয়া মৌ সবাই বাবুকে কোলে নেয় আদর করে।কিছুক্ষন পর চাঁপাকে কেবিনে দিলে।সবাই গিয়ে দেখা করে আসে।আবির বাবুকে নিয়ে চাঁপার কাছে যায়।বাবুকে চাঁপার কোলে দিয়ে একটা চুমু দেয় ওর কপালে।চাঁপার আজ একটা সুখি পরিবার হলো।
হাসপাতাল থেকে সবাই যার যার বাসায় চলে আসে।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২২

রাতে শুভ্রতা শান্তকে ঘুম পারিয়ে বারান্দায় আসলো।শিশির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষন দুজনে চুপ থাকার পর হঠ্যাৎ শিশির শুভ্রতার সামনে এক গুচ্ছ গোলাপ দিয়ে বলে,
শুভ বিবাহবার্ষিকী আমার বউ।আজ আমাদের প্রথম বিয়ের ৪নাম্বার বিবাহো বার্ষিকি।আজকের দিনে তোমাকে আরিয়ান হয়ে প্রথমে বিয়ে করেছিলাম।নিজের ঘরে এনেছিলাম।
শুভ্রতা শিশিরের থেকে গোলাপ গুলো নিলো।
শুভ্রতা শিশিরকে জরিয়ে ধরে বলে,
এই ৪বছর আমার পাশে আমাকে ভালোবেসে গেছেন।আগামিতেও এভাবে যেনো আপনাকে আমি ভালোবাসতে পারি আপনার পাশে থাকতে পারি।অনেক ভালোবাসি আপনাকে আমি।
শিশির শুভ্রতাকে কাছে এনে ওর ঠোঁটে
একটা শক্ত চুমু দিয়ে বলে,

শিশির:আমিও আমার শরৎ শুভ্রতাকে অনেক ভালোবাসি।তা আমাকে কি গিফট দিবেন মেডাম।
শুভ্রতা:উম কি গিফট তাইতো।আচ্ছা আপনার হাতটা এদিকে দেন।
শিশির শুভ্রতার দিকে হাত বারিয়ে দিল।
শুভ্রতা শিশিরের হাতটা নিজের পেটের উপর রেখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
শিশির এই হাসির মানে বুজতে পারলো।আজ আবার ২বারের মতো আরেক সুখ তার জীবনে আসছে।শিশির শুভ্রতাকে কোলে তুলে নিলো খুশিতে আর বলতে লাগলো,

“তুমি এই শিশিরের জীবনে এমন এক”
খুশির প্রেহেলিকা যার কোনো শেষ নেই”
“এই শিশিরের হৃদয় যতবার স্পন্দন হয়”
“ততোবার তোমার নাম শুনতে পায়”
“কারন তুমি এই শিশিরের হৃদয়ের ”
“হৃদয়ের-স্পন্দন?”

(লেখাঃ নন্দিনী চৌধুরী) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন