Happily Married part 12 || Writer: Shaanj Nahar Sanjida

Happily Married part 12
Writer: Shaanj Nahar Sanjida

রিয়া, কাদিস না।হিয়া এমনটা ইচ্ছে করে নি।ও নিশ্চয়ই ভুল বুঝছে।(আলেয়া বেগম)
আমি জানি আমার মেয়েটা আমাকে খুব ঘৃনা করছে।(রিয়া বেগম কাদতে কাদতে)
তোর মেয়ে?তার মানে হিয়াকেই তুই ছেড়ে চলে এসেছিলি?(আলেয়া বেগম অবাক হয়ে)
হুম।হিয়া আমার সেই মেয়ে যাকে আমি ছেড়ে চলে এসেছি।কিন্তু আমার যে আর কোনো উপায় ছিল না।(রিয়া বেগম)
কেনো ফুপি?কি এমন হয়েছে যার জন্য তোমার কাছে কোনো উপায় ছিল না!(পিয়াস এসে)
পিয়াস তুমি কখন এলে?(রিয়া)

আমার মনে হচ্ছিলো কোথাও যেনো একটা গন্ডগোল আছে।যখন থেকে তুমি হিয়া আর আলিফের বিয়ের সময় হিমেল আংকেলের ছবি দেখেছো তখন থেকেই তোমাকে কেমন জানি অস্থির লাগছিলো।(পিয়াস ভ্রু কুঁচকে)
রিয়া বেগম চুপ করে আছে।
ফুপি চুপ করে থেকো না।আমি কিন্তু সবই দেখেছি হিয়া তোমাকে দেখে কীভাবে রিয়েক্ট করছে।ওইসব কিন্তু স্বাভাবিক না।(পিয়াস)
পরেই রিয়া বেগম আর উপায়নন্ত না পেয়ে সব কথা খুলে বললো পিয়াসকে।
কিন্তু ফুপি ওদের ছেড়ে আসাই কি তোমার কাছে একটা পথ মনে হয়েছে?(পিয়াস)
তাহলে আর কি করতাম?ও আমাকে সন্দেহ করতো।ভাইয়া মারা যাওয়ার আগে থেকেই কিছু মানুষের কুনজর পড়েছিল কোম্পানিতে।তখন কেউ কারো জান নিতেও পিছু পা হতো না।তোরা তো সবাই জানিস কোম্পানির জন্যই ভাইয়া আর ভাবীকে খুন করা হয়েছিল আর খুনটা ভাইয়ার বিজনেস পার্টনাররা করেছে।তারপর তাকে অ্যাকসিডেন্ট বানিয়ে দেয়া হয়েছে।ওদের কে ধরতে আমাকে একা কাজ করতে হতো।ওরা যদি হিয়ার খোজ পেয়ে যায় তাহলে আমাকে থামাতে হিয়ার ক্ষতি করতে পারতো।তাই আমি চাইলেও হিয়াকে নিজের সাথে কোম্পানিতে নিয়ে যেতে পারতাম না।(রিয়া বেগম)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিন্তু তুমি হিমেল আঙ্কেলকে বলতে পারতে?(পিয়াস)
হ্যা(তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)তোর হিমেল আঙ্কেল এইটা কোনো দিন চাইই নি যে আমি কোম্পানিতে যাই।মেয়েদের সফলতা সহ্য করতে পারে কজন পুরুষ?উনাকে আমি এতো করে বললাম আমার সাথে প্লিজ কোম্পানিতে যোগ দাও আমি একা পেরে উঠছি না।উনি দিলো না।উনার নাকি আত্মসম্মানে লাগবে।তাই আমিও উনার কাছ থেকে কোনো সাহায্য নিলাম না।আমারও তো আত্মসম্মানে লাগবে।তাই একটাই সব কিছু সামাল দিয়েছি।(রিয়া বেগম)
এখন বুঝতে পারলাম হিয়া মনি এতো জেদী কেনো?কারণ যার মা বাবাই এতো জেদী।তাদের এক মাত্র মেয়ে তো জেদী হবেই।(পিয়াস মনে মনে)

আমি রাত করে কেনো বাসায় ফিরতাম তা নিয়ে ওর সাথে আমার ঝগড়া হতো।পিয়াস তখন ছোটো। ও রাতে একা থাকতে ভয় পেতো।ভাইয়া ভাবীর পর ওদের টার্গেট ছিলো পিয়াস ওকে এমনি একা ছাড়তে আমার ভয় হতো।যতই হোক ছোটো থেকে ওকে লালন পালন করেছি।তাই রাতে বেশিরভাগ সময়টাই ওকে দেয়ার চেষ্টা করতাম।তোর হিমেল আঙ্কেলকে বলেছিলাম যে চলো আমরা ও বাড়িতে গিয়ে থাকি কিন্তু তাতেও নাকি উনার আত্মসম্মানে লাগবে।(রিয়া বেগম রেগে)
তাহলে আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে রাখতে?(পিয়াস)
কেনো রাখবো?আমারও তো আত্মসম্মান আছে!ও আমার সাথে ও বাড়িতে থাকবে না, ওর আত্মসম্মানে লাগবে বলে আমিও তোকে এই বাড়িতে আনি নি আমার আত্মসম্মানে লাগবে বলে।(রিয়া বেগম)
পিয়াস মাথায় হাত দিয়ে
কেউ কারো থেকে কম না।(মনে মনে)

সেদিন হিয়ার যখন খুব জ্বর ছিলো আমি কিছুই জানতাম না।সেদিনই আমাদের ওই হত্যাকারী গুলোকে ধরার কথা ছিলো।আমি আরেক অফিসার সেখানে as a couple সেই হোটেলে যাই।সেখানে সারারাত খোজার পর ওদের ধরতে পারে তারা।আমিও তাদের সাথেই ছিলাম আমার ভাইকে যারা মেরেছে তাদের আমি নিজের হাতে ধরতে চেয়েছিলাম।এই কারণে আমার ফোনও সাইলেন্ট ছিলো আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।যখন ওই হত্যাকারী গুলো ধরা পড়লো।আমি ফোন হাতে নিতেই হিয়ার খবর শুনতে পাই।আমি তখন ছুটে গিয়েছিলাম হসপিটালে।তারপর সব কিছু ঠিকই চলছিলো কিন্তু তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে প্রেসার দিতো কেস তুলে নেয়ার জন্য।এইজন্যই আমার সংসার বরবাদ করতে ওরা আমাকে বিভিন্ন ম্যাসেজ দিতো কল করতো।অনেক নম্বর দিয়ে বিরক্ত করতো,হুমকি দিতো।তোর আঙ্কেল ছিলো অনেক সাদাসিধে আমি উনাকে এইসব কিছু বলে বিরক্ত করতে চাইনি।ভেবেছি ওরা যখন কোর্টে শাস্তি পাবে তখন বলবো।যখন কোর্টে আমি জিতে যাই তখন আমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি তোর আঙ্কেলকে যা যা হয়েছে সব বলার জন্য।কিন্তু তোর আঙ্কেল আমার হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিলো।জানতেও চাইলো না কিছু।তাই আমিও বলিনি।উনি যদি ডিভোর্স নিয়ে খুশি থাকে তবে থাকুক।(রিয়া বেগম)

আবারও জেদ!তোমরা বুঝতে পারছো না তোমরা নিজেদের জেদের স্বীকার হয়েছো!একজন জেদ ধরেছে কিছু জিজ্ঞেস করবে না,আরেকজন জেদ ধরেছে কিছু বলবে না!তোমরা বুঝতে পারো নি এই জেদ তোমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।আর তোমাদের এই জেদের স্বীকার শুধু তোমরা না ওই হিয়া মনিও হয়েছে।তোমরা শুধু নিজেদের জেদটাকে দেখলে আর ওইটা আজ তোমাদের এই অবস্থায় এনে দাড় করিয়ে ছাড়লো।শুনে রাখো এইসব যদি হিয়া শুনে তাহলে তোমাদের ওর হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।চাকু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তোমাদের অবস্থা নাজেহাল করে ঝাড়বে ওই মেয়ে।কারণ ওর জীবনের যতো কষ্ট হয়েছে শুধু মাত্র তোমাদের জেদের জন্য।
বলেই পিয়াস বেরিয়ে গেলো।
রিয়া বেগম সেখানে বসে পিয়াসের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

হিয়াদের বাড়িতে
সব শুনলাম বাবা কিন্তু হিয়া এখন কোথায় থাকতে পারবে আপনি জানেন?(আলিফ)
আমাদের পুরনো বাড়িতে হতে পারে!(হিমেল সাহেব)
আচ্ছা তাহলে আমি আসি।
বলেই আলিফ বেরিয়ে আসতে লাগলো তখনই পিয়া বললো,,
ভাইয়া আমিও যাই আপনার সাথে।(পিয়া)
না।তুমি এখানে আংকেলের খেয়াল রাখো।
বলেই আলিফ বের হতে যাবে তখনই দেখলো পিয়াস।
পিয়াস কিছু বলবি?(আলিফ বের হতে হতে)
হিয়াকে যে করেই হোক দুই পক্ষের কথা শুনার জন্য রাজি করা!(পিয়াস)
আমি বুঝতে পারছি।
বলেই আলিফ গাড়িতে উঠে চলে গেলো।
পিয়াস একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

হিমেল সাহেব,পিয়াস আর পিয়া হিয়াদের বাড়িতে বসে আছে।একটু পরেই পিয়া হিয়ার রুমে গিয়ে হিয়াকে ফোন দিলো।দুইবার ফোন বেজে গেলো কেউ ধরলো না।পরেরবার রিং বাজতেই হিয়া ধরলো,,
আমি হেলো বলতেই ওপাশ থেকে কড়া গলায় পিয়া বললো,,
তোকে এখন হাতের কাছে পেলে কষে একটা থাপ্পর মারতম।(পিয়া রেগে)
কেনো?আমি কি করছি!(আমি)
তুই কি করেছিস?তুই ভাইয়ার সাথে ঝগড়া কেনো করেছিস?(পিয়া)
উনি আমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেছে কেনো?(আমি)
কষ্ট?তুই জানিস কষ্ট কি?দেখ আমি আর আলিফ ভাইয়া হিমেল আংকেলের কাছ থেকে রিয়া আন্টির বেপারে সব শুনেছি।তাই এখন ওইসব বলে কিছু হবে না।(পিয়া)
উনি নাকি আমাকে সহ্য করেছে?এইটার কোনো কথা তোর কাছে হবে?(আমি)

সহ্য করেছেই তো।তুই ভাব এমন একটা দিন গেছে তুই উনার সাথে ভালো করে কথা বলেছিস।উনার জীবনে আসার পর থেকেই একটার পর একটা কান্ড করেই যাচ্ছিস।উনি কোনো দিন কিছু বলেনি।হাসি মুখে সব কিছু সহ্য করেছে।তোর সব ভুল ত্রুটি গুলো উনি ঠিক করে গেছে।কোনো কমপ্লেইন করেনি।আর আজ উনি না জেনে তোর করা কান্ডের উপর একটু কথা শুনিয়েছে বলে তুই এত রেগে আছিস উনার উপর।তাহলে ভাব তুই কি কি করেছিস উনার সাথে?উনি যদি ওইসব ধরতো তাহলে তো তোর কষ্টের সীমা থাকতো না।তুই উনার করা ভুল করে একটা ভুল ক্ষমা করতে পারছিস না,আর উনি তোর ভুলের উপর ভুল ক্ষমা করে আসছে।নিজের জেদ একটু ছাড়।ছেড়ে চোখ খুলে দেখ।না হলে পালাতে পালাতে এতো দূরে পালিয়ে যাবি যে ফিরে আসার কোনো পথ খোলা থাকবে না।আর আলিফ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।অন্তত উনার ভালোবাসার একটু সম্মান করিস।

বলেই পিয়া রাগে ফোনটা কেটে দিলো।
আমি ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়লাম।কারণ পিয়ার প্রতিটা কথাই ঠিক।ভুলটা আমারই।আলিফ তো কিছুই জানতো না।না জেনে বলেছে।কিন্তু আমি তো সব জানতাম।আমি ওকে বলতে পারতাম আমার এমন করার কারণ। আলিফকে যদি আমি হারিয়ে ফেলি আমার অনেক কষ্ট হবে।দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো আমি।এটা ভালোবাসা নাকি জানি না।

অন্যদিকে
পিয়া হিয়ার রুমে বসে কাদতে লাগলো।তখনই পিয়াস এসে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।পিয়া পিয়াসকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো,,
আমি কি ঠিক করেছি হিয়াকে এতগুলো কথা বলে?হিয়া তো এমনিই কতো কিছু ফেস করেছে ।ওর মনে এতো কষ্ট ছিলো।আমি জানতেই পারলাম না।আর এখন আমি ওকে আরো কথা শুনালাম।(পিয়া কাদতে কাদতে)
পিয়াস পিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
তুমি একদম ঠিক করেছ।তোমার এই কথা গুলো শুনে হিয়া মনিকে একটু হলেও ভাবতে হবে ওর আর আলিফের সম্পর্কটা।আর জেদের কারণে কোনো সম্পর্ক শেষ হতে দেয়া যাবে না।বিয়ে এমন একটা সম্পর্ক যাকে কথায় কথায় ভাঙ্গা যায় না।এইটা হিয়াকেও বুঝতে হবে আর ওদের বাবা মাকেও।

অন্যদিকে
আমি হাটু মুড়ে বসে বসে কাদছি।তখনই হিয়া হিয়া বলে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকলো আলিফ।
আলিফ তাকিয়েই দেখলো হিয়া কাদঁছে।এই প্রথম ওকে কাদতে দেখেছে।কাদলে ওর মুখটা অনেক মায়াবী লাগে,চোখটা অসহায় লাগে।আলিফ তাড়াতাড়ি ফ্লোরে বসে হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
আলিফ আমাকে জড়িয়ে ধরতেই আমি ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম
আলিফ তুমি এসেছো?আমি ভেবেছিলাম তুমি আসবে না।তুমি রাগ করে থাকবে।(আমি কাদতে কাদতে)
আমি কি করে আমার চড়ুই পাখির উপর রাগ করে থাকবো?তুমি কাদঁছ কেনো?আমি তো তোমাকে কোনদিন কাদতে দেখিনি।তুমিও তো বলেছো বুঝ হওয়ার পর তুমি কখনও কাদো নি।তাহলে এখন কেনো কাদঁছো?(আলিফ হিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।তাই আপনাআপনি আমার চোখে পানি চলে আসছিল।(আমি চোখ মুছতে মুছতে)
তারমানে আমাকে হারানোর ভয়?(আলিফ খুশি হয়ে)
এতো খুশি হয়ে লাভ নেই।আমি এখনও রেগে আছি।(আমি মুখ ফুলিয়ে)
আচ্ছা তাহলে আমি স,,,
আলিফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ওর মুখ চেপে ধরে বললাম,,
আগে আমি বলবো,,
সরি।
আলিফ মুচকি হেসে আমার কপালে চুমু দিল।

Happily Married part 11

কিছুক্ষণ পর
আলিফ সোফায় বসে আছে আর আমি চুপ করে ওর কোলে শুয়ে আছি।
আমাদের এই পুরনো বাড়ি একতলার।এখানে চারটা রুম আছে।একটা বড়ো বসার ঘর সেখানেই রয়েছে খাবার টেবিল।টেবিলের পাশেই একটা ছোট্ট রুমে রয়েছে রান্নাঘর।কয়েকবছর ধরে এখানে না থাকার কারণে সব জায়গাতে ধুলাবালি জমে আছে।আমি এসে সোফাটা পরিষ্কার করেছি।কেনো জানি ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে এই বাড়িতেই আসতে ইচ্ছে করলো।তাই চলে আসলাম।
হিয়া?(আলিফ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)
হুম?(আমি)
দরজা খুললে কি করে?(আলিফ)
খুব রাগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম।এখানে এসে দেখি মস্ত বড় এক তালা মারা।তাই রাগে একটা পাথর এনে তালা ভেঙ্গে দেই।(আমি)
তোমার দাড়াই সম্ভব।ভালো যে কারো মাথা ভাঙো নি।(আলিফ হাসতে হাসতে)
আমিও হাসতে লাগলাম,,

কিছুক্ষণ পর
আলিফ?(আমি)
হুম।(আলিফ)
আমি দুই পক্ষের কথা শুনবো।(আমি)
আমারও তাই মনে হয়।(আলিফ)
আজকের রাতটা এখানেই থাকি কালকে যাবো বাড়িতে।তুমি পিয়াস ভাইয়াকে বলবে উনার ফুপিকে যেনো কালকে সকালে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।(আমি)
আচ্ছা।এখন ঘুমাও।অনেক রাত হয়েছে।(আলিফ)
হুম।(আমিও গুটিশুটি মেরে আলিফের কোলে কথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম)

Happily Married part 13