Infinite Love part 51+52+53+54+55

Infinite Love part 51+52+53+54+55
Writer: Onima

বলেই চোখ বন্ধ করে নিলাম ওও বুকের মধ্যে জাপটে ধরলো আমাকে। সত্যিই আজকের এই রাতটা সারাজীবন মনে থাকবে আমার। ওর দেয়া সারপ্রাইজ, এতো স্পেশালি ট্রিট করা, ওর ভালোবাসা। নিজেকে সত্যিই খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। ভালোবাসি ওকে আমি ভীষণ ভালোবাসি..আদ্রিয়ান আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
.
– অনি বৃষ্টি হয়েছে সো কাল সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে, ডেকে দেবো সানরাইস দেখবে?
.
– হুম ডেকে দিও
.
– আচ্ছা ঘুমাও তাহলে
.
– এখানে?
.
– সমস্যা হবে তোমার? তাহলে রুমে চলে যাও।
.
– আর তুমি?

– আজকে না.. আমি চাইছিনা এমন কিছু হোক যেটা অনাকাঙ্ক্ষিত! আমরা দুজন দুজনের কাছে যতোই ক্লিয়ার থাকি ভুলটা ভুলই। আর আজকে রুমের পরিবেশটা একটু বেশিই এট্রাক্টিভ, তাই আমার না যাওয়াটাই বেটার। তোমার এখানে কনফরটেবল না লাগলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।
.
– আমিতো তোমার জন্যে বলছিলাম। আমি এখানেই ঠিক আছি।
.
– ওয়েট
.
বলেই আদ্রিয়ান ভেতরে চলে গেলো কিছুক্ষণপর একটা কম্বল এনে ওকে সহ আমার গায়ে জরিয়ে নিলো। তারপর আমার মাথাটা ওর বুকে চেপে ধরল। আমি বললাম
.
– আচ্ছা আদ্রিয়ান, সেলিব্রেশন তো ওয়ান ইয়ার এনিভারসিরিতেও করা যেতো, সিক্স মান্থেই কেনো?
.
– ভবিষ্যতের জন্যে কিছু ফেলে রাখতে নেই, কারণ ভবিষ্যতে কী হবে তা আমাদের জানা নেই।
.
– তোমার কেনো মনে হলো যে ভবিষ্যতে খারাপ কিছু হতে পারে?
.
– ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা মুসকিল তাই। আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে এবার ঘুমাও..
.
– হুম!
.
এরপর ওর বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আদ্রিয়ানের আলতো ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার, ওর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে পিটপিটে চোখে ওর দিকে তাকালাম ওর দিকে হয়তো অনেক্ষণ যাবত ডাকছে, কারণ এক দুই ডাকে ওঠার মেয়ে আমি না, কিন্তু তবুও এতো মিষ্টি স্বরে ডাকছে কীকরে? ও মুচকি হেসে আমার গালে কিস করে দিয়ে বলল
.
– Good morning sweetheart..
.
এই ছেলের কী বিরক্তি নেই এতোক্ষণ ধরে ডেকে তুলেও চোখে মুখে কন্ঠে কোনো বিরক্তি নেই? আমার ঘুম এখোনো কাটেনি, আমি একহাতে চোখ কচলাতে কচলাতেই বললাম
.
– Good morning…
.
এটুকু বলে আবারো ওর বুক মুখ গুজে চোখ বন্ধ করলাম। ও হালকা হেসে বলল
.
– আরেহ এই মেয়েতো আবার ঘুমুচ্ছে, আধা ঘন্টা ধরে ডেকে তুললাম আবার ঘুমুনোর জন্যে? একটু পরেই সানরাইস হবে, চলো ওঠো!
.
– উহু আরেকটু প্লিজ!
.
বলেই ওকে আরেকটু জোরে জরিয়ে ধরলাম। ও আমার মাথায় চুমু দিয়ে বলল
.
– আরো দেরীতে উঠলে ঘুম চোখে সানরাইস দেখে ফিল করতে পারবেনা, উঠোওওও
.
– নাহ! (ঘুম কন্ঠে)
.
– আচ্ছা মুসকিল তো! আচ্ছা উঠবেনা তো? ওয়েট!
.
বলেই আমার পেটে হালকা করে সুরসুরি দিতে লাগল, ওর সুরসুরিতে হাসতে হাসতে ঘুমও পালিয়ে গেলো। আমি ওর বুকে কিল মেরে বললাম
.
– বদ লোক একটা
.
– তোমারিতো। বাই দা ওয়ে এই পদ্ধতিটা কিন্তু দারুন বিয়ের পর তোমাকে এভাবেই ওঠাবো।
.
বলেই ও আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরল, বেশ কিছুক্ষণ পরেই সানরাইস হতে লাগল। দুই দু বার কক্সবাজার এসেও সানরাইস দেখতে পাইনি। বাট এবার দেখলাম। দুজনেই মন দিয়ে সানরাইস দেখলাম। তারপর রুমে গিয়ে বেডের দিকে তাকালাম বেডে সাজানো ফুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। কালকে রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জা আর সংকোচ দুটোই হচ্ছে, ও নিজে থেকে যদি থেমে না যেতো তাহলে কী হতো? আমিও তো ওকে একবারো আটকানোর চেষ্টাও করিনি, ও নিজেই নিজেকে না সামলালে হয়তো আমি আটকাতামো না, কিছু একটা হয়েছিলো আমার, ঐ মুহূর্তে দিন দুনিয়া ঠিক বেঠিক সব ভূলে গেছিলাম। কিন্তু লাকিলি ও ভোলেনি, এসব ভেবেই মুচকি হেসে তাকালাম ওর দিকে ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে, আমিও সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিজেকে সামলে বললাম
.
– এবার আরেকটু ঘুমোই?
.
– একদমি না। এখন ঘুমালে দুই ঘন্টাও ঘুমাতে পারবেনা পরে মাথাব্যাথা করবে, তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে এসো, আজকে সারাদিনি আমরা বাইরে কাটাবো!
.
– কীহ! এতো সকালে সাওয়ার? নো ওয়েহ
.
মাথা দুলিয়ে বললাম কথাটা। ও চোখ গরম করে তাকালো। আমি অসহায়ভাবে বললাম
.
– এসে নেই না। সন্ধ্যায় সাওয়ার নেওয়ার অভ্যেস আছে আমার ( ডাহা মিথ্যে কথা)
.
– তুমি যাবে?
.
– যাচ্ছিতো এতো রেগে যাবার কী আছে?
.
বলেই মুখ ফুলিয়ে ড্রেস নিয়ে সাওয়ার নিতে চলে গেলাম। এক ঘন্টার মতো সাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে দেখি বেডে কোনো ফুল নেই। আমি চুল মুছতে মুছতে অবাক হয়ে বললাম
.
– এগুলো পরিস্কার কে করলো?
.
– আমিই এসে যদি দেখে এলোমেলো তো মজা লুটবে, শয়তানগুলো।
.
– ফেলে দিয়েছেন তাতে আরো মজা নেবে!
.
– সে যাই হোক তৈরী হয়ে নেও ব্রেকফাস্ট করেই বেরোবো আমরা
.
– আজকে কোথায়?

– বেশ কয়েকজায়গায় যাবো গেলেই দেখতে পাবে।
.
বলে ও চলে গেলো। আমি রেডি হয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে গেলাম গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে ইফাজ ভাইয়াদের টিমও বসে আছে। আরে বাহ দুই দিনেই কতো ভাব হয়ে গেছে ওদের সাথে। আমি গিয়ে বসলাম আপির পাশে আপির আরেক পাশে ইফাজ ভাইয়া, বসতেই সব মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। আপি একটা খোচা মেরে বলল

– কেমন কাটলো কালকের রাত?
.
– এমনভাবে বলছো যেনো কালকে আমার বাসর রাত ছিলো?
.
আপি চোখ বড় বড় করে বলল
.
– তারমানে সত্যিই তোরা..
.
– কামন আপি তোমার মনে হয়?
.
সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। আমিতো লজ্জায় শেষ, সবার সামনেই কী বলছিলাম, এদের হাসতে দেখে ওহি বলল
.
– তোমরা কী দেখে হাসছো।
.
হঠাৎই আদ্রিয়ান এসে ওহিকে কোলে নিয়ে আমার পাশে বসে বলল
.
– এরা সব পাগল তাই অকারণেই হাসে!
.
আদিব ভাইয়া: হুম তা স্যার। রুমের বেডের ওপরের ফুলগুলো কোথায়? পেলাম না তো! ( দাত কেলিয়ে)
.
আদ্রিয়ান: তোর মাথায় ফেলেছি ইডিয়েট একেই তো এমন একটা কাজ করেছিস আর এখন জোক মারছিস।
.
ইশরাক ভাইয়া: আরেহ ভাই রাগ করছিস কেনো আমরা কিছু মনে করিনি তো!
.
জাবিন: তাহ ভাইয়া..

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান চোখ গরম করে তাকালো ব্যাস সবাই চুপ। সজীব, অর্ণব ভাইয়া পুরো চুপ কারণ যতোই হোক ওরা আমার বড় ভাই তাই এসব বিষয়ে ওদের মজা করাটা ঠিক হবে না। ইফাজ ভাইয়া বলল
.
– বাট আই হ্যাভ টু সে তোমাদের জুটিটা বেশ ভালো লেগেছে আমার। এক সাথে দেখলে মনে হয় “made for each other”
.
আদ্রিয়ান: থ্যাংকস ভাইয়া, বাট আপনার আদার পার্সন টা কোথায়?
.
এটা শুনে আপি ইফাজ ভাইয়ার দিকে তাকালো ইফাজ ভাইয়া তাকাতেই আপি চোখ সরিয়ে নিলো। আপির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাইয়া বলল
.
ইফাজ ভাইয়া: এখোনো হয়নি তেমন কেউ
.
আমি: কী বলেন? আপনার মতো ড্যাসিং হিরো টাইপ ছেলের গার্লফ্রেন্ড নেই।
.
ইফাজ ভাইয়া আপির দিকে তাকিয়েই বলল
.
– গার্লফ্রেন্ড দরকার নেই যাকে ভালোলাগবে সোজা বউ করে নিয়ে আসবো।
.
আপি তো নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে, আর আমরা মিটমিটিয়ে হেসেই যাচ্ছি।
.
খাওয়া শেষে সবাই বেরোলাম জিপ নিয়ে ইফাজ ভাইয়ারাও পাঁচজন এলো আমাদের সাথে..আদ্রিয়ান জিপ স্টার্ট দিতে দিতে বলল

– এবার আমরা “হিমছরি পাহাড়” যাবো।
.
এরপর অনেক্ষণ পর আমরা পৌছলাম। জিপ থেকে নেমে আমি তাকিয়ে আছি। আদ্রিয়ান এসে আমার পাশে দাড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে বলল
.
– এটাই হলো হিমছড়ি পাহাড়। 300 feet উচু পাহাড়। এখানকার হাইয়েস্ট উচ্চতা
.
– 300 feet?
.
– জ্বি।
.
– উপরে ওঠার জন্যে সিড়ি আছে চলো উঠবো আমরা।
.
– এতো উপরে?
.
– ভয় নেই চলো।
.
আমরা প্রথমে পাহাড়ের চারপাশে ঘুরলাম। এতোক্ষণে ওরাও ওপরে ওঠা শুরু করে দিয়েছে। উপরে ওঠার জন্যে সিড়িটাও সুন্দর, লোহার সিড়ি পাহাড়ের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ওপরে উঠে গেছে। আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগল আমি ওর হাত ধরে উঠছি আর চারপাশের পরিবেশ দেখছি দূরে সমুদ্রও দেখা যাচ্ছে। মাঝখানে এক জায়গায় বিশ্রামের জায়গায়ও আছে সেখানে বসে পানি খেয়ে বিশ্রাম করে আবারো ওঠা শুরু করলাম বেশ অনেকটা উঠে যাওয়ার পর হঠাৎই হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলে আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গেলো। ভয়ে বুক কাপছে অামার ও ঠিকসময়ে না ধরলে আজ কী হতো আল্লাহ জানে? ও দুহাতে আমাকে জাপটে ধরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার থেকে বেশি ও ভয় পেয়েছে। নিজেকে সামলে হাপাতে হাপাতে বলল

– কেয়ারফুল স্টুপিড! ভাগ্গিস আমি হাত ধরে নিয়েছিলাম নইলে কী হতো এখন?
.
বলেই একহাতে জরিয়ে নিলো আমাকে। ইফাজ ভাইয়া আর আপি আমাদের একটু সামনেই ছিলো। ওরা তাড়তাড়ি নেমে এলো।
.
ইফাজ ভাইয়া: অনিমা আর ইউ ওকে?
.
আপি: একটু সাবধানে হাটবি না?
.
আদ্রিয়ান: তা কেনো হাটবে। পারেতো শুধু পেঙ্গুইন এর মতো লাফাতে।
.
আমি ভয়ে জোরে শ্বাস নিচ্ছি সত্যিই কী হতো আজ? যদি আদ্রিয়ান না ধরতো?
.
ইফাজ ভাইয়া: আচ্ছা আর বকোনা ওকে, এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে মেয়েটা।
.
আদ্রিয়ান সাথে সাথেই আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি চমকে গিয়ে বললাম
.
– আরেহ কী করছো?
.
– একদম চুপ! একটাও কথা না।
.
বলেই আমাকে কোলে নিয়েই উঠতে লাগলো সিড়ি দিয়ে। আমি হা হয়ে দেখছি। ইফাজ ভাইয়া আর আপিও মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে এলো আমাদের পেছনে। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম আদ্রিয়ানের বেশ কষ্ট হচ্ছে তাই বললাম
.
– আদ্রিয়ান এবার নামিয়ে দাও আমাকে আমি যেতে পারবো
.
– আরেকটু আছে আমি পারবো নিতে
.
– কষ্ট হচ্ছে তোমার
.
– তোমার কিছু হলে এর থেকে হাজারগুন বেশি কষ্ট হতো।

এরপর একেবারে টপে নিয়েই নামালো আমাকে। আমি এখোনো বেশ নার্ভাস হয়ে আছি। আমাকে ভয় পেতে দেখে আদ্রিয়ান নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে আমার ভয় কাটাতে এটা ওটা করে, বলে আমাকে নরমাল করার চেষ্টা করতে লাগল বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে আমি নরমাল হয়েও গেলাম, এইখানথেকে সমুদ্র বেশ অনেকটাই দেখা যায়। এখানে বিশাল একটা দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও আছে যেটা দিয়ে সেন্টমার্টিন সহ বেশ কোয়েকটা দীপ দেখা যায়। হিমছড়ির ঝর্ণাও দেখলাম বেশ সুন্দর। বেশ কিছুক্ষণ ওখানে ঘুরে আমরা নিচে নামলাম নিচে নেমে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে সবাই মিলে লান্চ করলাম। লান্চ করে ওখানের এক জায়গায় বেঞ্চে বসে আমরা রেস্ট নিলাম। সজীব ভাইয়া জিজ্ঞেস করল
.
সজীব ভাইয়া: এবার কোথায় যাচ্ছি আমরা?
.
ইফাজ ভাইয়া: ‘ইনানী সি বিচ’ চলো বেশ সুন্দর জায়গা। এখান থেকে আধ ঘন্টার মতো লাগবে।
.
আদ্রিয়ান: Okay then what we are waiting for? Lets go..
.
এরপর সবাই পৌছলাম “Enani sea beach ” । জায়গাটা সত্যিই চমৎকার রুপসা বিচের মতো ফাকা না অসংখ্য বড় বড় পাথরে ভরা সি বিচ টা। রোদের কারণে সবাই সানগ্লাস পরে নিয়েছি।দূর থেকেই দেখছি। চারপাশে বিভিন্ন দোকান, খাবার সব আছে, আদ্রিয়ান বলল
.
আদ্রিয়ান: আগে এখানে ঘুরবে নাকি বিচে যাবে?
.
আপি: বিচেই আগে ঘুরি।

আমরা সবাঈ গেলাম বিচে অসাধারণ সুন্দর, সমুদ্রের গোটা পার জুরে বড় বড় ধুসর রং এর পাথর যার মধ্যে সাদা সাদা ফোটা আছে। এখানে পা ভেজানো যায় না পাথরের উপয দিয়েই হাটতে হয়। আপি আর ইফাজ ভাইয়া একটা পাথরের ওপর বসে গল্প করছে, বাকিরা হাটছে ছবি তুলছে, আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে হাটছে, আদ্রিয়ান বলল
.
– কেমন লাগছে?
.
– বেশ ভালো পরিবেশ, দুই বার কক্সবাজার এসেও এখানে আসা হয়নি। পাথর গুলোও বেশ সুন্দর।
.
ও ছোট বেশ কয়েকটা পাথর কুরিয়ে আমার ব্যাগে ভরে দিয়ে বলল
.
– রেখে দাও এগুলো। চলো বসি
.
– হুম
.
দুজনেই বসলাম একটা পাথরের ওপর। কিছুক্ষণ গল্প করলাম, তারপর ওখানে ছবি তুললাম। সবাই পাথরের ওপর বসে একসাথে গ্রুপ পিক তুললাম। এরপর সি বিচ থেকে উঠে আশেপাশের দোকান থেকে কেনাকাটা করলাম। এরপর ফুসকা আর আইসক্রিম খেয়ে সবাই মিলে ব্যাক করলাম হোটেলে।
.
ঐ দিন আর কোথাও যাই নি আমরা রাতে আপি বসে আছে ব্যালকনিতে আমি গিয়ে আপির পাশে দাড়িয়ে বললাম
.
– আচ্ছা আপি ইফাজ ভাইয়াকে কেমন লাগে তোমার?
.
আপি ভ্রু কুচকে বললো
.
– খারাপ কেনো লাগবে? ভালোই লাগে!
.
– শুধুই কী ভালোলাগে নাকি অন্যকিছু?
.
– অন্যকিছু মানে?
.
– হ্যালো তুমি এতোটাও অবুঝ না ওকেহ। তুমি জানো আমি কী মিন করছি
.
– বুঝেছি বাট এমন কিছুই হয়নি এখোনো। বাট ওর বিহেভে মনে হয় He likes me..
.
– and you?
.
আপি কিছু না বলে মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসত লাগল। আমিও যা বোঝার বুঝে গেলাম।

আজকে সবাই খুব এক্সাইটেড কারণ আজকে ক্রিকেট খেলবো আমরা সবাই। কাব্যের ইচ্ছের জন্যেই আদ্রিয়ান এই এরেন্জমেন্ট করেছে। তো টিম সিলেক্ট হলেও সমস্যা হলো আদ্রিয়ান কে নিয়ে। ও যেই টিমে থাকবে সেই টিমই জিতবে। ইফাজ ভাইয়া, অর্ণব ভাইয়া, জাবিন, আমি, ইফাজ ভাইয়াদের দলের ছয়জন একটিমে আর ইশরাক ভাইয়া, সজীব ভাইয়া, আপি, কাব্য, ইফাজ ভাইয়াদের আরো চারজন আরেক টিমে। এখন বাকি রইল আদ্রিয়ান আর আদিব ভাইয়া। আদ্রিয়ানের ক্রিকেট স্কিল সবাই জানে সো ও দুই টিমেরি কাম্য।
.
তো অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে টস হবে যেই টিম টস জিতবে সেই টিমেই আদ্রিয়ান খেলবে। তো সেই অনুযায়ী টস করার সিদ্ধান্ত নিলো। টসের রেসাল্ট দেখে আমরা রিতীমত শকড..
তো অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে টস হবে যেই টিম টস জিতবে সেই টিমেই আদ্রিয়ান খেলবে। তো সেই অনুযায়ী টস করার সিদ্ধান্ত নিলো। টসের রেসাল্ট দেখে আমরা রিতীমত শকড কারণ আদ্রিয়ান আমাদের অপজিট টিমেই পরেছে। আদিব ভাইয়া হতাশ স্বরে বলল
.
– ব্যাস হয়ে গেলো! এ ছেলে ব্যাটিং করতে নামলে আর দেখতে হবে না
.
সবাই ধরেই নিয়েছে যে জয়ী ঐ পক্ষই হবে। আমাদের দলের ক্যাপটেন ইফাজ ভাইয়া আর ঐ দলের আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান টস জেতার কারণে আগে বলিং করার ডিসিশনই নিলো।
.
তো প্রথমে আমাদের ব্যাটিং ছিলো। প্রথমে ভালো চললেও পরে আদ্রিয়ান এর বল করার পালা আসলো, তারপর এমন কিছু হলো যাতে আমরা সবাই শকড, এসেই উনি করলেন হেট্রিক। আর কী লাগে। আমার কপালে ওর বলিং এর সময়ই ব্যাটিং জুটলো, তারপর কী হয়েছে বলবোনা সেটা নাহয় ইতিহাস থাক, তবে যা হয়েছে তাতে আদ্ররিয়ান বেশ মন খুলে হেসেছে আর আমার ইচ্ছে করছিলো ব্যাট দিয়েই ওর মাথা ফাটাই। তো হলো এই যে আমরা 20 over a মাত্র 189 run করলাম, তাও সব ক্রেডিট ইফাজ আদিব আর অর্ণব ভাইয়ার। এরপর এলো ওদের পালা। প্রথমটা ভাইয়ারা ভালোই সামলাচ্ছিলো মোটামুটি সব আউট আছে ব্যাটিং এ ইশরাক আর সজীব ভাইয়া, বহু কষ্টে ইফাজ ভাইয়া সজীব ভাইয়াকে আউট করল, এরপরেই নামল আদ্রিয়ান। ইফাজ ভাইয়ার বলে আদ্রিয়ান বেশ ভালোই সামলাচ্ছিলো, কিন্তু ভাইয়ার বল শেষ হওয়ার পরেই 4/6 ছাড়া আর কিছু না। এমন হলে খুব শীঘ্রই টার্গৈট কম্প্লিট করে ফেলবে। আদিব ভাইয়া হাফাতে হাফাতে এসে বলল

আদিব ভাইয়া: একে সরানো আমাদের সাধ্যে নেই কারণ এসব বল ওর কাছে দুধভাত।
.
ইফাজ ভাইয়া: কিছুতো করতে হবে হারা যাবেনা।
.
আদিব ভাইয়া: কী করবেন?
.
ইফাজ ভাইয়া: অনিমা এবার তুমিই ভরসা!
.
আমি: অ্ আমি? আমি কী করবো?
.
ইফাজ ভাইয়া: যেভাবেই হোক ওর মাইন্ড ডিসট্রাক করো
.
বলেই চলে গেলো, ভাবছি যে ওর মাইন্ড ডিসট্রাক্ট কীভাবে করা যায়। এসব ভাবতে ভাবতে দেখলাম টার্গেট প্রায় ফিলাপের পথে, নাহ কিছু করতে হবে, ওর দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম ও প্রতিবার ব্যাটিং এর আগে একবার আমার কিছু তাকায়। কিছুক্ষণ চেষ্টার পর মগজের বাতি জ্বলল। আদিব ভাইয়া বল করতে রেডি হচ্ছে আদ্রিয়ান ও তৈরী। যখনি ও আমার দিকে তাকালো আমি ঠোটটা কিসের মতো করে একটা চোখ টিপ মারলাম, ও বেশ অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো, আমি সাথেসাথেই একটা ফ্লাইং কিস দিলাম, ব্যাস ওর এটেনশন শেষ আর সেই সুযোগেই আদিব ভাইয়া বল করলো, ভাইয়া মোটামুটি ভালো বল করে যার ফলসরুপ আউট, আর আমরা উইনার, আদ্রিয়ান আউট হয়ে আহম্মকের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাগী লুকে আমার দিকে তাকালো আমি একটা মুখ ভেংচি দিলাম। বাট মনে মনে ভীষণ ভয় পাচ্ছি যে আবার কী করে। সবাই বেশ অবাক আদ্রিয়ান আউট হয়েছে এককথায় অসম্ভব। এরপর জেতার সেলিব্রেশন করতে গিয়ে হলো আরেক সমস্যা, রবিন করে একটা ছেলে আমার পেছনই ছাড়ছেনা আঠার মতো চিপকে আছে আমার সাথে। আমি যথা সম্ভব ইগনোর করার চেষ্টা করলেও ভদ্রতার খাতিরে হেসে হেসে কথার উত্তর দিতে হচ্ছে। আমি বেঞ্চে বসতেই আমার পাশেও বসলো। দূর ছাই এখন সরতেও পারছিনা। রবিন একটা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল

– পানি খাবে?
.
আমিও একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
.
– নো থ্যাংকস
.
– কিছু কিনে আনবো?
.
– নাহ লাগবেনা
.
– একটা কথা বলবো?
.
– জ্বী বলুন?
.
– You are so pretty..সব ভাবেই খুব কিউট লাগে তোমাকে
.
বদলে আমি একটা কৃত্তিম হাসি দিলাম। বেশ অসস্হি লাগছে এবার আমার। ও আবারো কিছু বলবে আদ্রিয়ান এসে ওর কাধে হাত রেখে ওর পাশেই বসল। আদ্রিয়ানকে দেখেই তো আমার আত্মাপাখি ফুড়ুৎ। আমি নিশ্চিত আজ আমার কপালে দুঃখ আছে, প্রথমত আমার জন্যে হেরেছে আর দ্বিতীয়ত এই ছেলে উফফ। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে রবিনকে বলল
.
– বেশ ভালো প্রসংসা করতে পারো তো, তাও আমার বউয়ের। বেশ ভালো লেগেছে আমার।

আদ্রিয়ানের মুখে বউ শুনেই রবিনের কলিজা শুকিয়ে গেছে, অবাক হয়ে একবার আমার দিকে একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান একটা মেকি হাসি দিলো। বরিন ” সরি ভাইয়া” বলে চলে গেলো। ও চলে যেতেই আদ্রিয়ানের মুখের মেকি হাসিটা গায়েব হয়ে গেলো। রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি মনে মনে বললাম ” ভাগ অনি ভাগ” যেই উঠে চলে যেতে নেবো তখনি ও আমার হাত চেপে ধরল। আমি ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান দাতে দাত চেপে বলল
.
– কোথায় যাচ্ছেন?
.
আমি একটা শুকনা ঢোক গিলে বললাম
.
– আমি?
.
আদ্রিয়ান আশেপাশে তাকিয়ে বলল
.
– এখানে তো আর কেউ নেই?
.
– ইয়ে আসলে আপি.. হ্যা আপির কাছেই যাচ্ছিলাম
.
– হিয়া এখন এখানে নেই আপনি আমার সাথে চলুন
.
– কোথায় আছে আমি সেখানেই যাবো..
.
ও চোখ গরম করে তাকালো, আর আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। তারপর ও আমার হাত ধরে হাটা দিলো আমিও কিছু না বলে চুপচাপ ওর সাথে যেতে লাগলাম, ও সোজা আমার রুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে দাড় করিয়ে দরজাটা লক করে দিলো। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে হাত মোচরাচ্ছি আর আল্লাহ আল্লাহ করে যাচ্ছি। ও এসে আমাকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে দুই পাশে হাত রাখল, আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটা শুকনা ঢোক গিল্লাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো কিন্তু চোখে রাগ স্পষ্ট। মুখে মুচকি হাসি রেখেই বলল
.
– Kiss me..
.
আমিতো বড়সর থাক্কা খেলাম। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে বলল

– কী হলো? ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তো বেশ সুন্দরভাবেই ইশারা করছিলে? তখন দূরে ছিলাম তাই করতে পারোনি তাইনা? এখন তো কাছে আছি করো। বলেই আমাকে আরো কাছে টেনে নিলো
.
– আমিতো মজা..
.
– ওহহ মজা করছিলে কোনো ব্যাপারনা। এবার সিরিয়াসলি করো?
.
আমি চোখ বড় বড় করেই তাকিয়ে আছি। ও কিছুক্ষণ পর বলল
.
– তোমাকে খুব প্রিটি লাগে আর কী জেনো? হ্যা কিউট ও লাগে তাইনা?
.
এবার বেশ বুঝতে পারলাম ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যা হয়েছে তার জন্যে না ঐ ছেলের ঐ সব প্রসংশার জন্যেই রেগে আছে। ইচ্ছা করছে ঐ রবিনের বাচ্চাকে ধরে সাগরের জলে চুবাই। আদ্রিয়ান এবার ধমকে বলল
.
– কে বলেছিলো ওর পাশে বসতে
.
– আমি আগে বসে..
.
– সাট আপ ! উঠে যাওয়া যেতো না?
.
– আপনিই তো বলেন এগুলো ব্যাড ম্যানারস।
.
– একটা থাপ্পড় মারব। আমার কথা আমাকেই শোনাচ্ছো?
.
আমি চুপ করে আছি ও হঠাৎ করেই আমার গালে একটা কিস করে দিলো। তারপর আমার কাপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
.
– আমি আগেই বলেছি তোমার সৌন্দর্যের প্রশংসা শুধু আমিই করবো আর কেউ না! ভবিষ্যতে এই সুযোগ যেনো কেউ না পায় বুঝেছো?
.
– হুম
.
এবার ও একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল

– এবার দেও?
.
– কী? (ভ্রু কুচকে)
.
– কিসি দেও! তখন দেখাচ্ছিলে না
.
– আমি এমনিই মজা করেছিলাম
.
– কিন্তু আমিতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছি। তাই এখন তো করতেই হবে
.
– অ্ আমি পারবোনা।
.
– পারতে হবে।
.
আমি এবার করুন চোখে তাকালাম ওর দিকে ও নাক টেনে বলল
– এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই করতেই হবে নইলে ছাড়ছিনা
.
বুঝেছি যে ও কিস না নিয়ে ছাড়বেনা। তাই আমি চোখ বন্ধ করে ওর গলা আকরে ধরে পা উচু করে গালে একটা কিস করলাম। তারপর ওর দিকে না তাকিয়েই ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে সোজা চলে গেলাম আপি আর জাবিনের রুমে।

ঐদিন সন্ধ্যের পর হোটেল সি-স্টার ম্যানেজমেন্ট আদ্রিয়ানের ওনারে একটা পার্টি রেখেছে তো সবাই গেলাম সেখানে। আমি একটা সাদা স্টোনের পাড় দেওয়া জরজেটের কালো শাড়ি পরেছি, বিকেলে আদ্রিয়ানই আমাকে এটা দিয়ে গেছিলো পড়ার জন্যে। আপি হালকা করে সাজিয়ে দিয়েছে আমাক্র বাইরে বেরিয়ে দেখি আদ্রিয়ান দাড়িয়ে ফোন টিপছে। ও হোয়াইট শার্ট, কালো কোট, প্যান্ট পরেছে। তো সবাই মিলে চলে গেলাম, আদ্রিয়ান জোর করে ইফাজ ভাইয়াদেরও নিয়ে গেছে। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথেই হোটেল ম্যানেজমেন্ট ওয়েলকাম করলো আমাদের, ভেতরে পার্টিতে সবাই যে যার মতো মজা করছি আদ্রিয়ান অনেকের সাথেই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে হঠাৎ আমাকে আর আদ্রিয়ানকে কাপল ডান্সের জন্যে রিকোয়েস্ট করলো। আর আদ্রিয়ান ও হ্যা বলে দিলো কিন্তু আমিতো এর আগে কখনো কাপল ডান্স করিনি, অসহায় ভাবে। আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই ও চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো যে ও আছে আমার সাথে। গানটাও আদ্রিয়ানই সিলেক্ট করলো। এনিউস করার সাথে সাথেই সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠল। সকলের মাঝখানে আমরা দুজন গিয়ে দাড়াতেই মিউসিক বেজে উঠলো আদ্রিয়ান আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর হাত ধরতেই ও আমাকে ঘুরিয়ে ওর বুকে নিয়ে ফেললো তখনি গান বেজে উঠল

Tumko paya hain to jaise khoya hoon
Kehna chahu phirbi tumse keya kahoon (ii)
Kisi juban bhi Ulabs hi nehi
To jinme tum ho keya tumhe bata Sakoon
Main agar kahu tumsa haseen
kayanath mein nehi hai koyi
Tarife ye bhi to sach hai kuch bhi nehi
Tumko paya hai to jaise khoya hoon..

ওর এক হাত আমার কোমরে দিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার এক হাত ধরে আছে। হঠাৎ ও আমাকে ঘুরিয়ে দূরে নিয়ে আবারো টেনে কাছে এনে, হাত ধরে ঘুরিয়ে ওর বুকের সাথে আমার পিঠে লাগিয়ে নিয়ে এক হাতে আমার বা হাত ধরল আরেক হাত পেটে রাখল
.
Sokhi o mein dube yeh adayein
Chehere pe jhalke huyi hain
Julfoki ghane ghane ghatayein
Sansi dhalke huyi hain
Lehrata aachal hai jaise badal
Baho mein bhari hai jaise chadni
Rupki chadni..
Main agar kahu yeh dil kasi
Hai nehi kahi na hogi kavi
Tarife yeh bhi to sach hai kuch bhi nehi
.
আমি তাকিয়ে আছি ওর চোখের দিকে, আশেপাশে কিছুর দিকেই খেয়াল নেই। এতোক্ষণ গানের সাথে ও লিপ দিচ্ছিলো এবার আমার পালা কারণ এখন ফেমেল কন্ঠে গাইবে চার লাইন।

Tum huye meherbaan to hai yeh dastaan
Ooo tum huye meherbaan to hai yeh dastaan
Ab tumhara mera ek hai karba
tum jaha main uha..
.
ও মুচকি হেসে আমার হাতের উলটো পিঠে কিস করে টেনে ওর কাছে নিয়ে এলো
.
main agar kahu humsafar meri
Apsharaho tum yeah koyi pari
Tarife yeh bhi to sach hai kuch vi nehi..
Tumko paya hain to jaise khoya hoo
.
সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠলো। আদ্রিয়ান এখোনো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। জাবিন এসে বলল
.
– ভাইয়া?
.
বাট ও এখোনো আমার কোমর ধরে তাকিয়ে আছে আর সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। জাবিন এবার জোরেই বলল
.
– ভাইয়া?
.
এবার ওর হুস এলো হকচকিয়ে বলল
.
– হুম?
.
– গান শেষ হয়ে গেছে ভাইয়া!
.
ওও তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে ইতোস্তত করে বলল
.
– হ্যা জানি আমি

সবাই জোরে হেসে দিলো। এভাবেই হাসি মজা করে আরো তিনদিন থাকলাম কক্সবাজার। আরো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফিরে এলাম। ফিরে আসার দিন আপিকে ইফাজ ভাইয়া বিয়ের জন্যে প্যপোজাল ও দিয়েছে আর আপি বলেছে যদি আমাদের ফ্যামিলির আপত্তি না থাকে। তাই ভাইয়া এই সপ্তাহেই ওনার ফ্যামিলি নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবে আর আর আমার মতে আমাদের ফ্যামিলি না করবেনা কারণ ইফাজ ভাইয়া দেখতে ভালো, নিউরো সার্জন, সব দিক দিয়েই পার্ফেক্ট।
.
বাড়ি ফিরে এসে আমরা নিজেরাই আব্বু আম্মু, মামা মামীকে বললাম, তাড়া বললো আগে আসুক সব দেখে পড়েই সিদ্ধান্ত নেবো। সেইজন্য মামা মামীও চলে এলো আমাদের বাড়িতে, আসার তিনদিন পড়েই ইফাজ ভাইয়া তার বাবা মা আর কিছু ফ্যামিলি ম্যাম্বার নিয়ে এলো। মামা মামী আব্বু আম্মু সবারই পছন্দ হলো ভাইয়াকে ওনাদেরও আপিকে পছন্দ হলো। তো এই মাসেই বিয়ে ঠিক করা হলো, তিনদিন পর এনগেইজমেন্ট আর দুই সপ্তাহ পরেই বিয়ে। তো বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব ভাব তো লেগেই আছে।
.
বিয়ে ঠিক হতেই দৌড়ে রুমে গিয়ে আদ্রিয়ানকে ফোন দিলাম। ও ফোন রিসিভ করতেই খুশি হয়ে বললাম
.
– হ্যালো!
.
– কী ব্যাপার এতো খুশি যে?
.
– আপির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ইফাজ ভাইয়ার সাথে।
.
– সিরিয়াসলি? কবে?
.
– তিনদিন পর এনগেইজমেন্ট আর দুই সপ্তাহ পর বিয়ে

– ওয়াও!
.
– আমার খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে!
.
– আর আমার হিংসে হচ্ছে।
.
– কেনো?
.
– ইফাজ ভাই দুইদিনের প্রেমে বিয়ে করে ফেলছে আর আমি তিনবছর ধরে ভালোবেসেও এখোনো ঝুলে আছি।
.
আমি হেসে দিলাম ওর কথায় ও বিরক্ত হয়ে বলল
.
– হ্যা হ্যা হাসো হাসো, তোমারিতো হাসার সময়!
.
ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আপির রুমে গেলাম। আপি মাত্রই কথা বলা শেষ করলো ফোনে। আমি গিয়ে খোচা মেরে বললাম
.
– কীহ? প্রেম করছো?

– তুমি ও তো করো তোমার বরের সাথে!
.
– তা ঠিক। বাট তোমাদের সবকিছু কতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো তাই না?
.
– হুমম
.
আমি আপিকে জরিয়ে ধরে বললাম
.
– তুমি খুশি তো?
.
আপি মুচকি একটা হাসি দিলো। তিনদিন পার হয়ে গেলো আজকে আপির এনগেইজমেন্ট। আর সেটা এই বাড়িতেই হবে, সকাল থেকেই বাড়িতে নানা রকমের ব্যাস্ততা। আদ্রিয়ান সেই সক্কাল বেলা এসে এমনভাবে সবকিছু সামলাচ্ছে যেনো ও এইবাড়ির ছেলে আর এনগেইজমেন্ট ওর নিজের বোনের। বিকেল বেলা ইফাজ ভাইয়ারাও চলে এলো। সন্ধ্যের পর এনগেইজমেন্টের অনুষ্ঠান শুরু হলো। আপি আর ভাইয়াকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে ওরা দুজনেই হোয়াইট পড়েছে। আদ্রিয়ান আর আমি ব্লাক পরেছি। আমরা দুজন বেশ দূরত্ব নিয়েই দাড়িয়ে আছি আর আড়চোখে দেখছি দুজন দুজনকে। ওরা দুজন দুজনকে আন্টি পরিয়ে দিলো। এনগেইজভমেন্টের কাজটা ভালোভাবেই মিটে গেলো।

ছোটরা মানে ইয়াং সবাই গার্ডেন এরিয়ায় চলে গেলো ইনজয় করতে, আমি পরে যাবো বলে সবকিছু ঠিকঠাক করছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর গিয়ে দেখি ওরা বসে আছে আমি লেহেঙ্গা ঠিক করতে করতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই কেউ আমাকে জোরে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলো। আর সাথে সাথেই বিকট এক গুলি আওয়াজে পুরো পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেলো..
ছোটরা মানে ইয়াং সবাই গার্ডেন এরিয়ায় চলে গেলো ইনজয় করতে, আমি পরে যাবো বলে সবকিছু ঠিকঠাক করছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর গিয়ে দেখি ওরা বসে আছে আমি লেহেঙ্গা ঠিক করতে করতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই কেউ আমাকে জোরে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলো। আর সাথে সাথেই বিকট এক গুলি আওয়াজে পুরো পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেলো। আচমকা এমন ধাক্কা আর আচমকা গুলির আওয়াজে আমি প্রচন্ড ভয় নেয়ে গেছি। দু হাতে কান চেপে ধরে আছি। আস্তে আস্তে চোখে দেখলাম আদ্রিয়ান আমার পাশে পরে আজে। আমি “আদ্রিয়ান” বলে চিৎকার করে উঠলাম।

বুঝতে পারলাম ধাক্কাটা আদ্রিয়ান আমাকে দিয়েছে গুলিটা থেকে বাচার জন্য। যার ফলে ওর গুলি লাগার চান্স বেশি ছিলো। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমাদের দুজনের কারোরি কিছুই হয়নি। আদ্রিয়ান দ্রুত উঠে “ওই” বলে চিৎকার দিয়ে কারো একটা পেছনে ছুটে গেলো বুঝতে পারলাম ওই লোকটাই গুলি চালিয়েছে। আদ্রিয়ান একটা ইট তুলে লোকটার পায়ে ছুড়ে মারতেই লোকটা পরে গেলো। আমি অবাক হলাম এতো পারফেক্টলি কীকরে মারলো ইটটা? একদম পায়েই লাগল? এক্কেবারে এক্সপার্টদের মতো করে করল কাজটা। আদ্রিয়ান লোকটাকে উঠিয়ে মুখ বরাবর পাঞ্চ করে বলল
.
– কে পাঠিয়েছে বল। গুলি কেনো চালালি?
.
পাঞ্চটা এতোই জোরে করেছে যে মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আদ্রিয়ান আরেকটা ঘুষি মেরে চিৎকার করে বলল
.
– সাহস কী করে হলো আমার কলিজায় হাত দেবার। বল কে পাঠিয়েছে?

গুলির আওয়াজে বাড়ির সবাই হাজির হয়ে গেছে। আপি আমাকে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে আর আদ্ররিয়ান ঐ লোকটাকে মারছে ধরে। ভাইয়ারা দৌড়ে যেতে যেতে ঐ লোকটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি বসে লোকটাকে ধাক্কালো কিন্তু উঠলোনা লোকটা। পড়ে ইফাজ ভাইয়া পালস চেইক করে বলল
.
– He’s dead?
.
আমরা সবাঈ বড়সর ধাক্কা খেলাম। আদ্রিয়ানের মারে যে মরেনি সেটা সিউর, কারণ ও এতোটাও মারেনি যে মরে যাবে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন যে মরলো কীকরে? ইফাজ ভাইয়া সব চেক করে বলল
.
– এটা কীকরে সম্ভব? হঠাৎ কীকরে মরে গেলো?
.
হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান বলল
.
আদ্রিয়ান: পটাশিয়াম সায়ানাইড

ইফাজ ভাইয়া: What?
.
আদ্রিয়ান: ইয়েস। সুইসাইড করেছে।
.
সজীব ভাইয়া: কিন্তু তুমি কী করে সিউর হলে?
.
আদ্রিয়ান: এইসব ক্রিমিনালরা ধরা পরলে এটাই করে। আর ইফাজ ভাইয়া আপনি ওর জিব চেইক করতে পারেন। বাট সাবধানে করবেন হাতে না লাগে যেনো।
.
ইফাজ ভাইয়া চেইক করে বলল যে হ্যা আদ্রিয়ান যা বলেছে সেটা হবার চান্স আছে। আমি এখোনো কাপছি ভয়ে। আদ্রিয়ান এসে সবার সামনেই আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলল
.
– ভয় পেয়োনা আমি আছিতো! কিচ্ছু হবেনা তোমার !
.
পুলিশ এসে বডি নিয়ে গেছে, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে চেয়েছে বাট আদ্রিয়ান এর জন্যে বেশি করতে পারেনি।

ড্রয়িং রুমে বসে আছি আমরা। ইফাজ ভাইয়া ও জানে ব্যাপারটা তবে ওনাদের ফ্যামিলিকে সবটা বলা হয়নি অল্প কিছু বলে বুঝিয়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ান সোফায় আমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে বসে আছে এখোনো ভয়ে কাপছি আমি। আব্বু বলল
.
– এতোদিন তো শুধু তুলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতো কিন্তু এখনতো মারার চেষ্টাও করছে।
.
তখনি আদ্রিয়ান আমাকে এক হাতে জরিয়ে রেখেই বলল
.
আদ্রিয়ান: I don’t think so..
.
মামা: মানে?
.
আদ্রিয়ান: যারা ওর কাছ থেকে ফাইলটা চাইছে তারা আর যাই হোক ফাইল হাতে পাওয়ার আগে ওকে মারবেনা। মারার হলে আগেই মারতো। তিনবার বড় সুযোগ ছিলো ওদের কাছে।
.
ইফাজ ভাইয়া: আদ্রিয়ান ঠিকিই বলছে, আমারো তাই মনে হয়

আদ্রিয়ান: হুম ওকে অন্য কেউ মারতে চাইছে।
.
চাচ্চু: বাট কারা হতে পারে? আর কোথায়?
.
আদ্রিয়ান এবার আমাকে ছেড়ে এক হাতে আঙ্গুলের মধ্যে আরেকহাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে হাত মোট করে থুতনির নিচে রেখে হালকা ঝুকে বসে ধীর কন্ঠে বললো
.
– যারাই হোক আর যেখানেই থাক, দুনিয়ায় আর বেশিক্ষণ থাকবেনা..
.
বলেই একটা রহস্যজনক হাসি দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে, বাকি সবাই তাকালো, সবাই বেশ অবাক হলো, কিন্তু ওর কন্ঠে দৃঢ়টা এতো বেশি ছিলো যে কারোরই পাল্টা প্রশ্ন করার সাহস হলো না।

আরো কয়েকদিন কেটে গেলো, এরমধ্যে আমি বাড়ি থেকে বেড়োনোর সুযোগটাও পাইনি, আদ্রিয়ানের করা নির্দেশ যে বেড়োনো যাবে না, হিয়া আপুর বিয়ের আগে তো একদমি না। বাড়িতে গার্ডস ও রেখেছে। দুদিন ধরে আমাদের বাড়িতেই আছে আদ্রিয়ান, আব্বুই জোর করে রেখে দিয়েছে, কিন্তু কালকে আপির বিয়ের শপিং এ যাবে সবাই কিন্ত আমার বেরোনোও বারণ, আপির বিয়ের শপিং নিয়ে কতো প্লানিং ছিলো আমার সেগুলো ফ্লপ হয়ে যাবে? নো ওয়েহ, তাই আপির রুমে গেলাম। দেখলাম আপি খাটে বসে ফোন টিপছে। আপির পাশে বসলাম। আপি ফোন থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো আমার দিকে, আপি আমার দিকে তাকাতেই আমি দাত বের করে একটা হাসি দিলাম আর আপি ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে আমি হাসিটা আরো বড় করলাম, আপি ফোনটা রেখে হাত ভাজ করে বলল
.
– কী হলো এভাবে হাসছো কেনো?
.
আমি আপিকে আলতো হাতে হাগ করে বললাম
.
– আপি তুমিতো কত্তো সুইট কিউট আমার বেষ্ট আপি।
.
আপি ভ্রুটা কুচকে রেখেই বললো
.
– এতো পিরিত? কী গন্ডোগোল করে এসছো বলোতো?
.
– নাহ মানে কালতো শপিং এ যাবে তোমরা তাইনা?
.
– হুম তো?
.
– তো বলছিলাম কী আমিও যাবো! তুমি ব্যাপারটা ম্যানেজ করোনা প্লিজ!
.
অাপি আবারো ফোনটা নিয়ে ফোনে চোখ দিয়ে বলল
.
– আমার হাতে কিছুই নেই।
.
– আমার সোনা আপি প্লিজ!

– এতো বাটার আর ওয়েল আমার পেছনে খরচ না করে তোমার বর কে গিয়ে দেও, লাভ হলেও হতে পারে।
.
আপির দিকে তাকিয়ে আমি একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করলাম
.
আমি খাটে পা ঝুলিয়ে বস দাত দিয়ে নখ কাটছি আর আদ্রিয়ান খাটে হেলান দিয়ে দুটো পা ছড়িয়ে একটার ওপর আরেকটা রেখে, ল্যাপের ওপর ল্যাপটপ রেখে আই মিন কোলের ল্যাপটপ রেখে কাজ করছে। ওকে বলার সাহসটাই পাচ্ছিনা, এরমধ্যে দুইবার ও ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছে আর প্রতিবারি আমি মুখ থেকে হাত নামিয়ে মেকি হাসি দিয়েছি সেটা দেখে ও আবারো ল্যাপটপে চোখ দিয়েছে আর আমি আবারো দাত দিয়ে নখ কাটতে বিজি হয়ে গেছি, এবার আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে হালকা ধমকে বলল
.
– দাঁত দিয়ে নখ কাটছো কেনো ?
.
আমি ওর দিকে চমকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি হাত নামিয়ে নিলাম। এবার অন্যমনস্ক হয়ে থাকায় বুঝতেই পারিনি যে ও তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। আমি একটা মেকি হাসি দিলাম। ও ভ্রু কুচকে বলল

– কখন থেকে বসে আছো কীছু বলবে মনে হচ্ছে?
.
– হ্যা ম্ মানে না!
.
– হ্যা নাকি না?
.
নাহ ভয় পেলে চলবেনা বলেই দেই এসব ভেবে বললাম
.
– হ্যা
.
ও আবার ল্যাপটপে চোখ রেখে বলল
.
– হুম বলে ফেলো।
.
অনেকটা সাহস জুগিয়ে বললাম
.
– কালকেতো সবাই আপির বিয়ের শপিং এ যাবে
.
– হুম তো?
.
– আমি কী বলছিলাম কী যে…
.
– যে তুমিও যেতে চাও তাইতো?
.
– হুম ( অসহায়ভাবে)
.
ও এবার ল্যাপটপ টা অফ করে সাইডে রেখে বলল

– For your kind information… আপনার বাড়ি থেকে কোথাও বেড়োনো হচ্ছেনা। কী কী লাগবে বলে দিন আমি নিজে গিয়ে কিনে নিয়ে আসবো
.
– আরে ড্রেস কোনটা ভালোলাগবে আমি এখানে বসে কীভাবে বলবো?
.
– অনলাইনে দেখে নাও।
.
– এমন করছো কেনো সবাইতো যাবে বলো?
.
– অন্যকাউকে কিডন্যাপ করাও হয়না আর মার্ডারের চেষ্টাও করা হয়না।
.
নাহ যুক্তি দিয়ে একে পটাতে পারবোনা। একটু মাখন লাগিয়ে দেখি। আমি উঠে গিয়ে টুপ করে ও কোলে বসে পরলাম তার ঘারে দুহাত রেখে বললাম
.
– এমন কেনো করছো? তুমিনা আমার সব ইচ্ছে পূরণ করো এটা করবেনা।

– এখন যদি তুমি বলো তোমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করছে আমাকে কী সেই ইচ্ছেটাও পূরণ করতে হবে নাকি?
.
– আমিকি সেটা বলেছি নাকি? আমিতো জাস্ট শপিং এ যাবো বলেছি?
.
– সরি জানপাখি হবেনা।
.
আমি এবার মুখটা কালো করে ওর কোল থেকে নেমে বসে অন্য দিকে ঘুরে মুখ ফুলিয়ে কাদো কাদো গলায় বললাম
.
– থাক অনি বাদ দে তোর কথা কেউ শোনে না ইনফেক্ট কেউ তোকে ভালোই বাসেনা, সবাই মুখেই সব বলে। কতো ইচ্ছে কতো প্লানিং ছিলো আপির বিয়ের শপিং নিয়ে, তোর ইচ্ছের কারো কাছে কোনো দামই নেই।
.
বলেই কাদো কাদো মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম কিন্তু অনেক্ষণ হলো ওর কোনোও রেসপন্স না পেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে তো আমি অবাক ও আবারো ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে পরেছে, মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো এইবার এতো কিছু বললাম পাত্তাই দিলোনা, রাগ করে আমি ঠাস করে ল্যাপটপ টা অফ করে দিলাম সেটা বিছানায় আছাড় মেরে ফেললাম, ভাগ্যিস বিছানায় ফেলেছি নইলে আজ ল্যাপটপটার ইন্নালিল্লাহ হয়ে যেতো, তারপর রাগে কটমট করে বললাম

– দিতে হবে না পারমিশন যাবোনা আমি কোথাও, বাড়ি থেকে তো বেরোবোই না, রুম থেকেও বেরোবো না, যাচ্ছি আমি।
.
আমার কথাগুলো ও ঠোটে হালকা হাসি রেখে আর সেই বিখ্যাত ভঙ্গিতে মানে সুশান্ত সিং রাজপুত এর মতো করে ভ্রুজোড়া বাকিয়ে আমার কথাগুলো শুনছিলো। যেই আমি উঠে যেতে নেবো ও একটানে আমাকে ওর কোলে বসিয়ে দিলো। তারপর চুলগুলি কানে গুজে দিতে দিতে বলল
.
– যেতেই হবে?
.
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম, ও আমার গিলে কিস করে বলল
.
– আচ্ছা ঠিকাছে কালকে যাবে তুমি!
.
আমি খুশি হয়ে তাকালাম ওর দিকে, প্রচন্ড খুশি হয়ে বললাম
.
– সত্যিই?
.
– হ্যাঁ সত্যিই বাট আমিও যাচ্ছি তাহলে

– আপনার না কালকে ল্যাবে যাবার কথা ছিলো?
.
– কথা ছিলো বাট কী করব বউয়ের আবদার তো পূরণ করতে হবে না?
.
– আপনি না গেলেও হতো!
.
– তোমার হতো আমার না। I can’t take any risk..
.
– হুমম।
.
পরের দিন সবাই মিলে আপির বিয়ের জন্য শপিং করলাম। তবে সাড়া মার্কেট ঘুরে যেটাই আদ্রিয়ানের পছন্দ হয়েছে সেটাই কিনে নিয়েছে আমার জন্যে। মাঝেমাঝে কনফিউসড হয়ে যাচ্ছিলাম যে শপিংটা কার জন্যে করতে এসেছি আপির না আমার। পরিবারের সবাই খুব মজা হইহুল্লোর করে শপিং এর কাজ সম্পূর্ণ করলাম।

দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ কেটে গেলো কেনাকাটা, হাসিমজা বিভিন্ন রিচুয়ালস এর মধ্যে দিয়ে। বিয়ের সবকিছুর আয়োজন ওয়েডিং হাউস এ করা হয়েছে কারণ ভাইয়াদের বাড়ি সিলেটে আর সেখান থেকে বরযাত্রী রুপে আসাটা সম্ভব না। তাই আমরা দুপক্ষের সবাই ওয়েডিং হাউজেই থাকব। তবে হলুদের অনুষ্ঠানের পর ইফাজ ভাইয়ারা ভারা বাড়িতে চলে যাবে, সেখান থেকেই বড়যাত্রি আসবে।
.
সবাই চলে এসছি ওয়েডিং হাউসে। আজ আপি আর জিজুর হলুদ সন্ধ্যা। বিকেল থেকে প্রস্তুতি চলছে। ছাদের দুইপাশে বরাবর দুটো স্টেজ করা হয়েছে। সন্ধ্যের পর আপিকে সাজিয়ে দিয়ে আমি আদ্রিয়ানের দেওয়া হলুদ এর মধ্যে লালের কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা পরে নিলাম। তারপর হালকা মেকাপ করে, সামান্য কিছু অর্ণামেন্টস ও পড়ে নিলাম। হাতের চুড়ি গুলো গোছাতে গোছাতে নামছি হঠাৎ কেউ টান মেরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে নিলো, এখন আর চমকাইনা কারণ এখন ভালো করেই জানি যে কে হতে পারে। আদ্রিয়ান আমার বা সাইডের দেয়ালে হাত রেখে মুচকি হাসলো। আমি তো ওকেই দেখছি, একটা হলুদ পান্জবী, কালো জিন্স আর লাল চিকন ওরনা টাইপ একপাল্লা দিয়ে গলায় পরেছে, চুলগুলো আজকে বেশ চমৎকার ভাবে কপালে পরে আছে, উফ একছেলের ওপর কতোবার ক্রাশ খাবো? ও আরেক হাত আমার কোমরে রাখতেই হুস এলো আমার। ও মুচকি হেসে বলল
.
– লুকিং গর্জিয়াস! এটা কেনার সময় যেভাবে কল্পনা করেছি আর চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে একদম হলুদ পরী।
.
– তোমাকেও সুন্দর লাগছে একদম হলুদ জ্বীন!

বলেই ফিক করে হেসে দিলাম। ও পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, পুরো অবাক হয়ে বলল
.
– জ্বীন?
.
– হ্যা? সুন্দর লাগলে মেয়েরা যদি পরী হয় ছেলেরা তো জ্বীন ই হবে না?
.
আদ্রিয়ান হতাশাজনক একটা চাহনী দিয়ে বলল
.
– এসব এক্সকিউস শুধু তোমার পক্ষেই দেয়া সম্ভব।
.
বদলে একটু হাসলাম। ও আমার কোমোর ধরে ওর কাছে টেনে বলল
.
– যতো খুশি হাসো হলুদপরী, প্রোগ্রাম শেষ হতে দাও হলুদে স্নান করাবো তোমায়।
.
আমি ওর কাধে হাত রেখে বললাম।
.
– সে ঠিক আছে কিন্তু এতো তাড়তাড়ি তো সেই সুযোগ পাবে না? হলুদ মাখাতে পারো যদি একটা শর্ত মানতে পারো তো!
.
– আমি কোনো শর্তের ধার ধারিনা সোনা! আমি না চাইলে আমার হাত থেকে তোমায় কেউ বাচাতে পারবোনা।
.
– হুহ শর্ত পূরণের ক্ষমতা নেই সেটা বলো?
.
– আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই বেইবি।
.
– তাহলে মানো শর্ত।
.
– আচ্ছা বলো কী শর্ত?

আমি ওর গালে আঙ্গুল স্লাইড করে বললাম
.
– আমাকে হলুদ মাখাবে কিন্ত তোমার হাতে কোনো হলুদ লাগতে পারবেনা
.
– তাহলে আমি হলুদ তুলবো কীকরে যদি হাতই ইউস না করি?
.
– সেটা তুমি জানো!
.
বলেই ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে এলাম আর মনে মনে ভীষণ খুশি হলাম যে ফর ফার্স্ট টাইম ওকে হারাতে পারবো। আপির আর জিজুর গায়ে হলুদ সুন্দর ভাবে হয়ে গেলো। এখন বিভিন্ন নাচ গান হচ্ছে জিজু আর আপু দুজন দুই স্টেজে বসে আছে। মিউজিসিয়ান রা মিউসিক বাজাচ্ছে আর শিল্পিরা কেউ নাচছে কেউ গাইছে। হঠাৎ আদ্রিয়ান এসে বলল
.
– উপায় কিন্তু আমি পেয়ে গেছি তুমি তৈরী তো?
.
– হুহ দেখা যাবে
.
– হুম দেখো মন ভরে দেখো, আজ তোমায় ছাড়ছিনা।
.
– stupid
.
বলেই একটা মুখ ভেংচি কেটে চলে যাচ্ছিলাম ওপাশে কিন্তু আর্ধেক যেতেই আদ্রিয়ানের কন্ঠে ভেসে এলো
.
– Jo bhida tere….
.
আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকালাম। মিউজিসিয়ানরা মিউসিক বাজানো শুরু করে দিয়েছে, ওর দিকে অবাক হয়ে তাকাতেই ও একটা চোখ মারলো আর মিউসিকের সাথে নাচতে লাগল, পাশে বাকি কয়েকজন তো আছেই। আমি দুই হাত ভাজ করে মুখে হালকা হাসি রেখে ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে, ও হেটে এসে আমার পেছনে এসে ঘুরতে ঘুরতে গাইলো

– Jo bhida tere naino se tanka
Toh aashiq surrender hua
Jo bhida tere naino se tanka
Toh aashiq surrender hua…..
Tune sharma ke window se jhanka
Toh aashiq surrender hua
Aa sun o ri gori
Mohabbat mein tohri
Na jaane kab june se December hua…
.
সামনে গিয়ে আমাকে কাছে টেনে আবার ঘুরিয়ে দুরে দিয়ে সামনে গিয়ে তাল দিয়ে গাইল
Tune English mein ..
Tune English mein jab humko danta
Toh aashiq surrender hua
Pyar se maara gaalon pe chanta
Toh aashiq surrender hua….

এবার আমিও মাঝে গিয়ে ওর বুকে একটা ধাক্কা মারলাম। সবাই জোরে সিটিও দিতে লাগল। ও একটু অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে পরক্ষণেই মুখে হাসি ফুটলো ওর আমি ডোন্ট কেয়ার বাব নিয়ে তাল দিয়ে গাইলাম
Hey look mera ye awesome
Adayein beautiful hai
Jaanti hoon main tujhe
Tu kitna bloody fool hai, oye!
.
এটুকু বলতেই ওর হাসি ফুস হয়ে গেলো আর পান্জাবীর হাতা ফোল্ড করে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে আবারো গাইলাম
Hey look ye mera awesome
Adayein beautiful hai
Jaanti hoon main tujhe
Tu kitna bloody fool hai,oye!

Janti hoon main tujhe
Tu kitna bloody fool hai…..
.
বলেই ওকে মুখ ভেংচি দিলাম আর ও হেসে দিলো। এরপর দুজনে একইসাথে একই তালে নাচতে লাগলাম
Are shadiyon ka season
Na April fool hai
Kaise hum keh de
Ki haan ji haan qubool hai
Innocency se face maine dhanka
Toh aashiq surrender hua
Jo bhida mere….
Jo bhida mere naino se tanka
Toh aashiq surrender hua
Surrender hua…..

বলেই আদ্রিয়ানের কপাল বরাবর ধাক্কা দিলাম। এরপর কিছুক্ষণ ও আর কিছুক্ষণ আমি নাচলাম। তারপর আদ্রিয়ান আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে গাইল
Are bhagyewan maan bhi ja
Ladna befizool hai
Pyaar dikhe na kya
Aankhon mein padi dhool hai
Pyaar dikhe na kya
Aankhon mein padi dhool hai….
.
আমি ওকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। কিন্তু কোথা থেকে আমার সামনে এসে বাকিদের সাথে তাল দিয়ে গাইতে লাগল
Are taj mahal banwana
Shah jahan ki bhool hai
Uske pas paisa
Apne haath mein toh phool hai
.
হাটু ভেঙ্গে বসে পেছন থেকে একটা ফুল বের করে দিলো আমায় আমিও মুচকি হেসে নিয়ে হাতে বাড়ি দিতে দিতে ওর দিকে তাকালাম। আর ও আমার চোখে চোখ রেখেই গাইল
Tune gusse main….
Tune gusse main phone mera kaata
Toh aashiq surrender hua
Jo bhida mere….

আদ্রিয়ান ভাব ভাব নিয়ে চলে যেতে নিলেই
.
aye mister
.
বলতেই ও ঘরলো আর আমি বললাম
.
Jo bhida mere naino se tanka
.
এরপর দুজনে একসাথেই গাইলাম
.
Toh aashiq surrender hua
Haan surrender hua….
Ho surrender hua….
Are surrender hua..

নাচ শেষ হতেই সবাই হাততালি দিলো, হঠাৎ ও একবাতি হলুদ এনে বলল
.
– আমিতো তোমাকে মাখাতে পারবোনা তুমিই মাখিয়ে দাও!
.
আমি মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ হাতছাড়া কেনো করবো? তাই দুহাতে বেশি করে হলুদ নিয়ে ওর মুখে গলায় মাখিয়ে দিয়ে কেটে পরলাম, হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হবার পর আমি আপির কাছে যাবো তার আগেই আদ্রিয়ান এসে আমাকে টেনে ফাকা রুমে নিয়ে গেলো। আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– কী হলো?
.
– শর্ত পূরণ করতে হবে তো!
.
বলেই ডেভিল স্মাইল দিয়ে এগোতে লাগল আমি পেছাতে পেছাতে বললাম
.
– তুমি কিন্তু হাতে হলুদ লাগাতে পারবেনা?
.
– তো তোমাকে কে বলল আমি হাতে হলুদ লাগিয়েছি?
.
– তো ক্ কীভাবে লাগাবেন শুনি?
.
উত্তরে ও ওভাবেই ডেভিল হেসে এগোতে লাগল আমার দিকে। বুঝতেই পারলাম এই ছেলের মতলব ভালো না।

পেছাতে পেছাতে এক্কেবারে দেয়ালের সাথে লেগে গেলাম আমি আর ওও একই ভঙ্গিতে এগিয়েই আসছে, ও আমার একদম কাছে এসে আমার দুইপাশে দেয়ালে হাত রাখল তারপর ওর মুখটা আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগল ও আস্তে আস্তে মুখটা এগিয়ে আমার গালে ওর গাল লাগাতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ও আমার ডান গালে ওর গাল ঘষে তারপর আবার বা গালেও ওর গাল ঘষে দিলো। আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেলে ও আমার কোমর টেনে ধরে ওর কাছে নিয়ে আমার গালে আর সারা গলায় ওর মুখ ঘষে দিলো। তারপর আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল

– বলেছিলাম না আমার কাছ থেকে তোমাকে কেউ বাচাতে পারবেনা..
আমি চোখ বন্ধ করে আছি ও আমার মুখে ফু দিতেই আস্তে আস্তে তাকালাম ওর দিকে। লজ্জা শিহরণ রাগ তিনটাই হচ্ছে আমার। এটুকু বুঝলাম না যে ও নিজে নিজেকে হলুদ মাখাতে কেনো বলছে? হাউ ডাফার আই এম!
পেছাতে পেছাতে এক্কেবারে দেয়ালের সাথে লেগে গেলাম আমি আর ওও একই ভঙ্গিতে এগিয়েই আসছে, ও আমার একদম কাছে এসে আমার দুইপাশে দেয়ালে হাত রাখল তারপর ওর মুখটা আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগল ও আস্তে আস্তে মুখটা এগিয়ে আমার গালে ওর গাল লাগাতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ও আমার ডান গালে ওর গাল ঘষে তারপর আবার বা গালেও ওর গাল ঘষে দিলো। আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেলে ও আমার কোমর টেনে ধরে ওর কাছে নিয়ে আমার গালে আর সারা গলায় ওর মুখ ঘষে দিলো। তারপর আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল

– বলেছিলাম না আমার কাছ থেকে তোমাকে কেউ বাচাতে পারবেনা..
আমি চোখ বন্ধ করে আছি ও আমার মুখে ফু দিতেই আস্তে আস্তে তাকালাম ওর দিকে। লজ্জা শিহরণ রাগ তিনটাই হচ্ছে আমার। এটুকু বুঝলাম না যে ও নিজে নিজেকে হলুদ মাখাতে কেনো বলছে? হাউ ডাফার আই এম! এখন নিজেকেই নিজের বকতে ইচ্ছে করছে যে কেনো ওমন শর্ত দিলাম। ধুর! ও আমার গালে ওর আঙ্গুল স্লাইড করতে করতে বলল
.
– নেক্সট টাইম থেকে আমাকে চ্যালেন্জ করার আগে ভেবে করবে।
.
আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম ওর দিকে আবার ও বলল ও আমার কোমর ধরে নিজের সাথে আরো গভীরভাবে মিশিয়ে নিয়ে আমার ডান গালে ডিপলি একটা কিস করে, নাকে নাক ঘষে দিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো, আমিও কিছুক্ষণ আহম্মকের মতো তাকিয়ে তরপর মুখ ফুলিয়ে আপিদের কাছে চলে গেলাম। আপির রুমে আমার সব মেয়ে কাজিন রা আজে, আমি গিয়ে বসতেই আপি ভূত দেখার মতো করে চমকে গিয়ে বলল

– কীরে তোকে এভাবে হলুদে স্নান কে করালো?
.
আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম
.
– কে আবার ঐ খবিশ তোমাদের সবার প্রাণপ্রিয় আদ্রিয়ান!
.
সবাই হেসে দিলো। সবার হাসির আওয়াজে খেয়াল হলো যে কী বলেছি, লজ্জায় নিজেই মাথা নিচু করে ফেললাম, আমার চাচাতো বোন নূর আপু বলল
.
– আরেহ জিজু তো হাই লেভেলের রোমান্টিক, কী সুন্দর করে মাখিয়েছে হলুদ বল!
.
আর সাবরিনা বললো
.
– আর কী সুন্দর নাচলো বল আমিতো প্রথম দেখাতেই হাই ভোল্টেজের ক্রাশ খেয়েছি। যদি জিজু না হতো সিউর লাইন মারতাম
.
আমি সাবরিনার পিঠে চাপড় মেরে বললাম
.
– একদম আমার বরের দিকে নজর দিবিনা। ওটা শুধু আমার জিনিস!
.
সবাই অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে, আমি আবারো লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি ইস কী সব বলে ফেলছি আজ মুখ ফসকে। কনোরকম লজ্জা কাটিয়ে বললাম
.
– দেখো বিয়ে কিন্তু আমার না আপির তো আপিকে নিয়ে মজা করো না আমায় নিয়ে পড়লে কেনো?

এরপর সবাই মিলে আপিকে বিভিন্ন কথা বলে খোচাতে লাখলাম, অনেক্ষণ হাসি ঠাট্টা করে আমরা সবাই আপির রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সবাই কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে এসে দেখি অর্পি ইশু আর ঐশি, ওদের দেখেই মাথাটা হাই স্কেলে গরম হয়ে গেলো! ওদেরকে আমি সন্ধ্যায় আসতে বলেছি আর ওরা কী না এখন এলো? আমি গিয়ে রাগে কটমট করে বললাম
.
আমি: আপনারা এসছেন তাহলে?
.
অর্পি: সরি ইয়ার! বাট বিশ্বাস কর আরো আগেই এসছি
.
আমি: কখন?
.
ইশু: যখন তুই আর জিজু নাচছিলি!
.
আমি: তাহলে এতোক্ষণ আসিস নি কেনো?
.
ঐশি: আরে আন্টি ডেকেছিলো একটু
.
আমি: ও আচ্ছা চল আয়
.
এরপর আমার কাজিনদের সাথে ওদের আলাপ করে হাটতে হাটতে এগোচ্ছি দেখি আদ্রিয়ানরা দাড়িয়ে কথা বলছে। হঠাৎ করেই আদিব ভাইয়া বলে উঠল
.
আদিব ভাইয়া: আরে ভাবি তোমারও সারা মুখেগলায় হলুদ দেখছি আবার আদ্রিয়ানেরও? কী ব্যাপার?
.
জাবিন: আরে ভাইয়া বুঝতে পারছোনা? শুধু শুধু কেনো এসব জিজ্ঞেস করে ব্যাচারদের লজ্জা দিচ্ছো?
.
এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি শুরু করল, আদ্রিয়ান ভ্রু জোরা কুচকে রাইমা আপুকে বলল
.
আদ্রিয়ান: রাইমা… আদিব না..
.
আদিব ভাইয়া হকচকিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ানকে বলল

– আরেহ তোর বউ তুই যা খুশি তাই করবি এতে কার বাপের কী?
.
সবাই বেশ অবাক হলো আদিব ভাইয়ার এই হঠাৎ পাল্টি মারা দেখে। হঠাৎ সাবরিনা আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বলল
.
– শুধু কী বউকেই হলুদ মাখাবেন? আমরাও তো আছি আমাদেরকেও মাখান!
.
মেজাজটাই খারাপ হলো এতো নেকামি কীসের? এরপর আমার সব বোনেরা গিয়েও ধরল, এমনকি আমার বান্দরনী থুরি বান্ধবীরাও। আদ্রিয়াপ পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাড়িয়ে আছে। একবাটি হলুদ ওর হাতে দিয়ে সকলেই লাগিয়ে দেবার জন্যে জোর করছে। আমার তো রাগে গা জলছে আদ্রিয়ান সবার দিকে হতাশভাবে তাকিয়ে যেই হলুদের বাটিতে হাত লাগাতে যাবে আমি গিয়ে হলুদের বাটিতে হাত আগাতে যাবে ঠিক তখনি আমি গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ওর হাত থেকে হলুদের বাটিটা ফেলে দিয়ে বললাম
.
– এই যাহ পরে গেলো! থাক তোদের আর হলুদ লাগাতে হবেনা চল আপির কাছে চল, বলেই ওদের সবাই কে টেনে নিয়ে এলাম, পেছনে একবার তাকিয়ে দেখলাম যে আদ্রিয়ান হাসছে। ওদের নিয়ে আপির রুমের কাছে এসেতো আমরা টোটালি শকড! কারণ আমরা তাকিয়ে দেখি আপি দেয়ালের সাথে লেখে লজ্জামিশ্রিত মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর ওর সামনেই ইফাজ ভাইয়া দেয়ালে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে। আমরা তাড়াতাড়ি সরতেই নূর বলল
.
– আপু আর জিজুর রোমান্স টাইম চলছে চল এখন
.
ঐশি: হ্যা চল
.
আমি: আরেহ যাবো মানে? লুকিয়ে লুকিয়ে হবু বর বউয়ের রোমান্স দেখতে যে কী মজা জানিস?
.
অর্পি: রাইট! যাবো কেনো?
.
বলেই সবাই মিলে দরজার আরালে লুকিয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলাম। ইফাজ ভাইয়া বলল
.
– কী হলো কতক্ষণ ধরে আমিই বকবক করে যাচ্ছি তুমি কিছু বলো?
.
– কী বলবো?
.
সাথে সাথেই ইফাজ ভাইয়া আপির কোমরে হাত দিয়ে বলল

– কিছুই বলার নেই?
.
আপি কাপাকাপা গলায় বলল
.
– ন্ নাহ
.
আমি মিটমিটিয়ে হাসছি হঠাৎ আমার কাধে কেউ হাত রাখতেই সরিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম
.
– এই চুপ দেখতে দে তো
.
কিন্তু আবারো হাত রাখল আমি আবারো সরিয়ে দিয়ে বললাম
.
– আরে দেখতে দে না খালি, ডিসটার্ব কেনো করছিস?
.
এটুকু বলতেই কেউ একজন আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল
.
– তা জানপাখি ওদের রোমান্স দেখে কী রোমান্স করার ট্রেনিং নিচ্ছো আমার সাথে করবে বলে?
.
এই আওয়াজ শুনেই আমি চমকে তাকালাম পেছনে আদ্রিয়ানকে দেখেতো আমার চোখ চরাগগাছ, বেশ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, পাশে তাকিয়ে দেখি আমার বোন আর বান্ধবীরা একটু দূরে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে আর আদিব ভাইয়ারাও দাড়িয়ে হাসছে। আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই ও রাগী ভাবে ফিসফিসিয়ে বলল
.
– তোমার এই অভ্যাসটাও আছে জানতানাম না তো?
.
এ এখন নিশ্চই আমাকে বকবে, আমি একটা ঢোক গিলে বললাম
.
– আসলে..
.
আমাকে বলতে না দিয়ে আরো বেশি অবাক করে দিয়ে ও বেশ উৎসাহ নিয়ে বলল
.
– চলো দেখি কী বলে!
.
বলেঈ ওদের সবাইকে ইশারা করলো এসে শোনার জন্যে ওরাও আস্তে আস্তে এসে আমাদের পেছনে দাড়িয়ে গেলো আর আমি কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে তারপর হালকা হেসে শুনতে লাগলাম। আদ্রিয়ান আমার দুই কাধে হাত রেখে হালকা ঝুকে শুনছে। ইফাজ ভাইয়া আপিকে বলল
.
– আচ্ছা I love you টা অন্তত বলো

– বিয়ের পর
.
– আরে না। দেখো বিয়ের আগেই যদি আই লাভ ইউ বলে দাও তাহলে একটা লাভ মেরেজ লাভ মেরেজ ফিল হবে আর না বললে তো সেই এরেন্জ মেরেজ ফিলিং ই থেকে যাবেহ। try to understand…
.
ইফাজ ভাইয়ার কথা শুনে এখন আমার পেট ফেটে হাসি আসছে, কোনোরকমে হাসি আটকে রাখছি, সবারই এক অবস্হা। বহু জোরাজোরির পরে অবশেষে আপি বলল
.
– I love you..
.
– I love you too
.
বলেই ইফাজ ভাইয়া আপির কপালে একটা কিস করে জরিয়ে ধরল। আদ্রিয়ান বলল
.
– অনেক হয়েছে এদের প্রেম এবার একটু জ্বালাই
.
বলেই জোরে সিটি মারলো। সাথে সাথেই ইফাজ ভাইয়া আপিকে ছেড়ে দিলো আর ওরা দুজনেই চমকে তাকালো এদিকে। সেটা দেখে আদ্রিয়ান শব্দ করেই হেসে দিলো সাথে আমরাও হেসে দিলাম। আপি আর ইফাজ ভাইয়া দুজনেই লজ্জা পেয়েছে। আমি ভেতরে গিয়ে দাত কেলিয়ে বললাম
.
– কী ভাইয়া? ডিসটার্ব করলাম?
.
আদ্রিয়ান একটু ঠেস মেরে বলল
.
– কীসের ডিসটার্ব? আরে ভাইয়া কালকেই তো বাসর তাইনা? তা কালকের জন্যেও কিছু বাচিয়ে রাখুন?
.
সবাই এই নিয়ে হাসাহাসির রোল ফেলে দিলো, ইফাজ ভাইয়া মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের কাধে হাত রেখে বলল
.
– তুমি অন্তত এই কথা বলোনা এই ছয়মাসে কী কী করে বেরিয়েছো আমার শালাটার সাথে আর কতোবার হাতেনাতে ধরা পড়েছো সেই খবর আছে আমার কাছে। আর এখোনো কী কী করে বেরাচ্ছো তার প্রমাণ কিন্তু তোমাদের মুখে গলায় বেশ সুন্দর ভাবে লেপ্টে আছে।
.
সাথেসাথেই আমার আর আদ্রিয়ানের মুখ কাচুমাচু হয়ে গেলো। আর আমাদের অবস্হা দেখে ইফাজ ভাইয়া আর আপি দুজনেই শব্দ করে হেসে দিলো সাথে বাকি সবাইও। এবার ওদের ছেড়ে আমাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু হয়ে গেলোহ। আমি আর আদ্রিয়ান অসহায়ভাবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার ওদের দিকে তাকালাম।
.
ইফাজ ভাইয়ারা সবাই চলে গেছে ভারা বাড়িতে আপাদত আর কোনো কাজ নেই ভোর পাঁচটায় সবাই যাবো সামনের পুকুর থেকে আপিকে গোসল করানোর পানি আনতে এটাই নাকি নিয়ম। তারপর সবাই মেহেন্দি পরব, তারপর আপিকে গোসল করিয়ে বাকিরা গোসল করব। সবাই ঘুমোতে চলে গেছে কারণ ভোর পাঁচটায় উঠতে হবে। অনেক মেহমান তাই সিঙ্গেল রুম কারো ভাগ্যেই নেই। কিন্তু আমার এটা ভেবে কষ্ঠ লাগছে যে এই শীতের মধ্যে আমাকে এখন গোসল করে এই হলুদগুলো ধোয়ার জন্যে। এসব ভেবে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে যাবো ঠিক সেইসময় আদ্রিয়ান এসে আমার হাত ধরল। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম

– তুমি? ঘুমাওনি?
.
– যা ভেবেছিলাম তাই এই রাতে গোসল করতে যাচ্ছো? ( বেশ রেগে)
.
– তো এই হলুদ নিয়ে ঘুমাবো নাকি?
.
– তার জন্যে গোসলের কী দরকার?
.
– তাহলে হলুদগুলো তুলবো কীকরে?
.
– বুদ্ধি খাটালেই বুঝতে পারতে, বদ্ধি খাটিয়ে তো জীবনে কিছু করোনা।
.
– মানে?
.
– বসো আমি আসছি
.
বলেই আমাকে একটা ছোফায় বসিয়ে চলে গেলো। আমি বেশ অবাক হলাম কোথায় গেলো ও আর কী বা করতে চলেছে? কিছুক্ষণের মধ্যেই ও ফিরে এলো ও একটা বড় সাইজের বাটি ভর্তি পানি একটা টিসু বক্স আর একটা রুমাল নিয়ে এলো। এসে আমার সামনে বসতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম
.
– এসব দিয়ে কী হবে?
.
– বেশি কথা না বলে চুপ থাকো! ( ধমকে)

অমিও আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম, ও প্রথমে একটা টিস্যু নিয়ে মুখ গলা বেশ ভালো ভাবে ঘষে ঘষে মুছে দিলো, তারপর আরেকটা টিস্যু নিয়ে হালকা করে মুছে রুমালটা ঐ বাটির পানিতে ডুবিয়ে তারপর হালকা চিপড়ে আমার সাড়া মুখ গলা ভালোভাবে মুছে দিয়ে বলল
.
– নাও এবার মুখ আর গলা ধুয়ে এসো তাহলেই হবে।
.
আমিও মাথা নেড়ে ওয়াসরুম গিয়ে মুখ গলা ধুয়ে এসে দেখি আদ্রিয়ান এখোনো বসে আছে সেটা দেখে বললাম
.
– ঘুমোবেন না?
.
– হুম চলোনা ছাদে যাই ওখানে কেউ নেই।
.
– ছাদে কেনো? রুমে গিয়ে ঘুমান
.
– রুমে তো অনেকে আছে তোমাকে নিতে পারবোনা আর এখানেও হিয়া, আর্পিতা, ঐশর্য ওরা ঘুমচ্ছে।
.
– আমাকে কেনো লাগবে?
.
– উফফ এতো কথা বলোনা তুমি..
.
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলো আমিতো হা করে তাকিয়ে আছি এই ছেলের দিকে। ও আমাকে সোজা ছাদে নিয়ে গিয়ে দেয়াল ঘেষে ফ্লোরে বসে আমাকে ওর বুকে জরিয়ে নিয়ে বলল
.
– এখন আর কোনো কথা বলোনা খুব ক্লান্ত লাগছে, ঘুমোবো!
.
আমি আর কিছু না বলে ওকে জরিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। একসময় আস্তে আস্তে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরের দিন সকালে বেশ সুন্দর করে সবাই বাঙ্গালী স্টাইলে হলুদ চেকের শাড়ি পড়েছি। আমি চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছি আর সাজিওনি, ঘুমের রেস কাটেনি এখোনো, সবাই পুকুর পারে পানি অানতে যাবো, দেখলাম আদ্রিয়ান আর আদিব ভাইয়া কালো জিন্স আর বক্সার গেন্জি পরে গলায় গামছা ঝুলিয়ে বিভিন্ন কাজ করছে, আমাকে দেখেই ও কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো পরে বুকের বা পাশে হাত রেখে আদিব ভাইয়াকে খোচা মেরে বলল
.
– মার ডালেগি একদিন ইয়ে মুঝে!
.
আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে মুচকি হাসতে হাসতে চলে এলাম। পুকুর থেকে পানি এনে তারপর মিহেদী পরতে বসলাম সবাই। আমাকে মেহেদী পরানোর সময় মেয়েটা জিজ্ঞেস করেছিলো যে আদ্রিয়ানের নাম লিখবে কী না কিন্তু আমি বলেছি না শুধু ফার্স্ট ওয়ার্ড টা যেনো লেখে তাও এমন ভাবে সহজে যেনো চোখে না পরে। তো মেহেদী পরে বাইরে হাটছি। হঠাৎই আদ্রিয়ান এসে আমার হাত দুটো টেনে সামনে নিয়ে বলল
.
– কী ব্যাপার মেহেদী পরেছো আর আমার নাম লেখনি?
.
– ফার্স্ট ওয়ার্ড লেখা আছে পারলে খুজে নাও! Studen of the year মুভির একটা ডায়লগ আছে, ” বয়ফ্রেন্ড কা নাম মেহেন্দী মে ছুপা হোনা চাইয়ে, আগার উসনে ঢুন লিয়া তো ও জানাম জানাম কা রিশতা হোতা হ্যা”
.
ও আমার কোমর জরিয়ে ধরে বরুণ ধাওয়ান স্টাইলে বলল

– তো ম্যা ঢুনডু?
.
– ঢুনডো!
.
ও খুব ভালো করে হাত দুটো পর্যবেক্ষণ করে বেশ সহজেই পেয়ে গেলো। আর আমি মুখ ভেংচি দিয়ে হাতের মেহেদী ওর গালে ভরিয়ে দিয়ে চলে এলাম ও শব্দ করে হাসলো।
.
আপিকে গোসল করানোর পর বিভিন্ন কাছের মধ্যেই দুপুর হয়ে গেলো আপিকে সাজানো হচ্ছে, শুধু একটা ব্যাপারেই মন খারাপ হচ্ছে যে আপিকে ছেড়ে থাকতে হবে, খুব কান্নাও পাচ্ছে এসব ভেবেই আপির পাশে বসলাম, আপি আমার গালে হাত রেখে বলল
.
– মন খারাপ করিসনা আর সাবধানে থাকবি বুঝলি?
.
আমি আপিকে হালকাভাবে জরিয়ে ধরে বললাম
.
– হুম!
.
– আর ভয় পাস না আদ্রিয়ান আছে তোর সাথে তোর কিচ্ছু হবেনা
.
– হুম এখন শুধু ঐ সফটওয়্যার টা ডিসএবেল করতে পারলেই হতো। অনেক বড় দ্বায় থেকে মুক্তি পেতাম
.
আপি কিছু একটা ভেবে চমকে গিয়ে বললো
.
– এক সেকেন্ড! আদ্রিয়ান তো এতো বড় একজন ইন্জিনিয়ার সফটওয়্যার সম্পর্কে ওর বেশ ভালো ধারণা তুই তো জানিস, ওই তো চেষ্টা করলে পারবে সফটওয়্যার টা নষ্ট করতে!
.
আমি বড়সর ধাক্কা খেলাম ঠিকই তো! আদ্রিয়ানকে বললেই তো হতো! ওর কাছে ফাইলটা দিলেই তো হয়! আমার মাথায় এতোদিন কেনো আসেনি এটা। আপিকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আম্মুরা সব চলে এলো। আর কিছু বলা হলোনা আমার!

কিছুক্ষণের মধ্যে বরযাত্রী ও চলে এলো আমরা সব বোনেরা এমনকি আদ্রিয়ানরা সবাই মিলেই এদের বেশ হেনস্তা করলাম। আদ্রিয়ান এর একেকটা আইডিয়া শুনে আমরা সব থ! যে এমন একটা ছেলের মাথায় ও এসব বুদ্ধি আসে? ইফাজ ভাইয়ার জুতা লুকোনোর জায়গা পাচ্ছিলাম না। শেষে আদ্রিয়ান বুদ্ধি দিলো আপির পায়ে পরিয়ে দেওয়ার ওখানে কেউ খুজতে যাবেনা। বেশ হাসি মজা আনন্দের মাঝেই ভালোভাবে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। আপিদের বাসর এই ওয়েডিং হাঊজেই হবে তারপর কাল সকালে যাবে সিলেট। আপিকে আর ভাইয়াকে বাসর ঘরে দিয়ে সবাই রিলাক্সে বসলাম
.
কিন্তু আমার মাথার কথাই চলছে যে আদ্রিয়ান কে ফাইলটা দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। তারপর আদ্রিয়ান ঐ সফটওয়্যার ডিসএবল করে দিলেই আমি এক বড় দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবো, নিশ্চিন্ত হবো
কিন্তু আমার মাথায় একটা কথাই চলছে যে আদ্রিয়ান কে ফাইলটা দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। তারপর আদ্রিয়ান ঐ সফটওয়্যার ডিসএবল করে দিলেই আমি এক বড় দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবো, নিশ্চিন্ত হবো। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখ গেলো আদ্রিয়ানের দিকে ও কথা বলছে ভাইয়াদের সাথে।
.
রাতে ঘুম আসছিলো না তাই ব্যালকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি। কাল আপি চলে যাবে ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে আছে। হঠাৎ কেউ আমার পেট জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখল। ছোঁয়াতেই বুঝতে পারলাম এটা আদ্রিয়ান তাই আস্তে করে চোখটা বন্ধ করে নিলাম ও আমার কাধে হালকা করে ঠোট ছুইয়ে আস্তে করে বলল

– মন খারাপ?
.
– হুম
.
– দুদিন পরে তো আবার আসবে হিয়া?
.
– হুম
.
– কী হুম হুম করছো, ঘুমোবেনা?
.
– ঘুমোতে ইচ্ছে করছে না!
.
– বললেই হলো? চলো আমি মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি, মন খারাপ করোনা!

এরপর ওর বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম। চোখ বন্ধ করেই ভাবছি যে ওকে কী বলব ফাইলের কথা এখন? না থাক আগে এই বিয়ের ঝামেলাটা মিটুক তারপর। ও মাথায় বিলি কাটতে কাটতেই বলল
.
– কী ভাবছো?
.
– কিছুনা
.
– তো ম্যাডাম আমাকেও মিথ্যে বলার চেষ্টা করছে?
.
– না আসলে..
.
– আরে মজা করছিলাম!
.
– হুম

– জানো প্রথমে একটা ভয় কাজ করতো যে তুমি কখনো আমাকে অবিশ্বাস করবে না তো? আমার না বলা কথা গুলো বুঝে নিতে পারবে তো? কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই কারণ এখন আমি জানি সাড়া পৃথিবীও যদি আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয় তবুও তুমি আমাকেই বিশ্বাস করবে, আর আমার মুখে কিছু বলতে হবে না আমার চোখ দেখেই আমার মনের কথা পড়ে ফেলতে পারবে।
.
– যদি এমন না হয়?
.
ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
.
– তাহলে ভাববো আমার বিশ্বাসটাই ঠুনকো ছিলো!
.
আমি কিছু না বলে ওকে আরো জোরে আকরে ধরলাম।

পরেরদিন সকালে আপিকে নিয়ে চলে যাবে। কাল থেকে মন খারাপ থাকলেও এখন আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে খুব কান্না পাচ্ছে, আপিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে, আপি মামা মামীকে জরিয়ে ধরে প্রচুর কাদলো, এখন আম্মুকে জরিয়ে ধরেও কাদছে আব্বু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা নিয়মটা এতো অদ্ভুত কেনো? জীবনের এতো দীর্ঘ একটা সময় যাদের কাছে থেকে পাড় করেছি তাদেরকে ছেড়েই চলে যেতে হয়? যেই বাড়িতে শৈশবের প্রতিটা স্মৃতি লেগে থাকে সেই বাড়িতে থাকার কোনো অধিকারই মেয়েদের নেই, নিজেরি বাবা মা ভাই বোন সব কাছের মানুষদের ছেড়ে নতুন একজনের সাথে চলে যেতে হয় নতুন এক পরিবারে নতুন এক পরিবেশে। সেখানেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। বাবার রাজ্যের রাজকুমারী তখন অন্যকারো রাজ্যের রাণী হয়ে যায়, তখন আর রাজকুমারীদের মতো রাজ্য বিলাশ করা তাকে শোভা দেয় না তাকে রাণীর মতো সেই নতুন রাজ্যকে সামলাতে হয়। নিজেরি বাড়িতে আসে তখন অতিথী হয়ে। সত্যি এইরকম ত্যাগ একমাত্র মেয়েদের পক্ষেই করা সম্ভব।
.
এসব ভাবতে ভাবতেই আপি এসে আমায় জরিয়ে ধরে কেদে দিলো, আমিও আর চোখের পানি আটকাতে পারলাম না এতোক্ষণ অতিকষ্টে আটকে রাখা চোখের পানি এবার বেরিয়ে এলো আপিকে ধরে কেদে দিলাম। আপি কাদতে কাদতেই বলল
.
– নিজের খেয়াল রাখবি আর একদম নিজের খেয়াল খুশি মতো চলবিনা, ফুপা আর আদ্রিয়ানের কথা শুনে চলবি।
.
– হুম
.
– আর হ্যা কিছু হলেই একদম দরজা আটকে বসে থাকবি না, বকে খোলানোর জন্যে আমি কিন্তু থাকবোনা
.
আমি আবার আপিকে জরিয়ে ধরে শব্দ করে কেদে দিলাম, আপিও কাদছে। ইফাজ ভাইয়া আমাদের দুজনকেই সামলানোর চেষ্টা করছে, আমার কান্নার আওয়াজ শুনে আদ্রিয়ান ও ছুটে এসে উত্তেজিত হয়ে বলল
.
– কী হয়েছে এভাবে কাদছো কেনো? ব্যাথা পেয়েছো? কোনো সমস্যা?
.
ইফাজ ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল
.
– ওয়ে বউ পাগল এদিকেও দেখ আমার বউটাও কাদছে। বউকে কাদতে দেখে দিন দুনিয়া ভূলে যাস নাকি? [ ইফাজ ভাইয়া আদ্রিয়ানকে এখন তুই করেই বলে]
.
আদ্রিয়ান: হুম বাট এভাবে কাদছো কেনো তোমরা? দুদিন পরতো আবার দেখা হবে নাকি?
.
এভাবেই দুজনে বহু কষ্টে আমাদের সামলালো। এরপর আপির বিদায় ও হয়ে গেলো কিন্তু আমার মন কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।
.
আপি চলে যাওয়ার পর আমি ছাদে গিয়ে দেয়াল ঘেসে বসে নিরবে কাদছি। রোজ সকালে আপির ডাকে ঘুম ভাঙ্গা, তারপর গল্প করতে করতে কফি খাওয়া, এক সাথে টেবিলে খেতে বসা, মন খারাপ থাকলে আপির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরা আর আপির আলতো হাতে মাথায় বিলি কেটে দেওয়া, কোথাও গেলে সাজিয়ে দেওয়া, সবকিছু শেয়ার করা এসব কিছুই চোখে ভাসছে। হঠাৎই আদ্রিয়ান ও আমার পাশে বসে পরল, আমি ওর দিকে তাকাতেই ও আমাকে টেনে ওর বুকে জরিয়ে ধরল, তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল কিন্তু কিছু বললো না, আমিও কিছু না বলে ওকে জরিয়ে ধরে কাদতে থাকলাম।

সন্ধ্যে হয়ে এসছে আমি আমার রুমে বসে আছি, দুপুরের আগেই চলে এসছি আর আদ্রিয়ানরাও চলে গেছে। রুমে বসে ফাইলটার কথা আদ্রিয়ানকে কীকরে বলব সেটাই ভাবছি, ভেবেছিলাম বিয়ের ঝামেলার পড়েই আদ্রিয়ানকে বলব কিন্তু মন ভালো ছিলোনা তাই আর বলা হয়নি। এখন তো আদ্রিয়ান ও চলে গেছে এখন কীকরে বলব ওকে? কিন্তু বলতে তো হবেই দেরী করা ঠিক হবে না, প্রতিটা সেকেন্ড এখন খুব গুরত্বপূর্ণ যেকোনো সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে। ঠিক করলাম যে ফাইলটা নিয়ে এখনি যাবো আদ্রিয়ানের কাছে, তাই ফাইলটা আনতে যেতে গিয়েও থেমে গেলাম। নাহ আগে আমাকে আদ্রিয়ানের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে তারপর যা করার করবো তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে আদ্রিয়ানকে ফোন করলাম কিন্তু ফোন বন্ধ পেলাম, সিট! এই সময় ফোনটা সুইচড অফ থাকতে হলো। বেশ কয়েকবার ট্রাই করেও লাভ হলোনা, সারারুমে পায়চারী করছি আর ভাবছি যে কী করা যায়? হঠাৎ কিছু একটা ভেবে জাবিনকে ফোন করলাম বেশ কয়েকবার রিং হবার পর ও ফোনটা ধরে বলল
.
– হ্যা ভাবি বলো?
.
– আআ জাবিন তোমার ভাইয়া কী বাড়িতে আছে?
.
– নাহ তো ভাইয়াতো সেই লান্চ করে বেরিয়েছে আর আসেনি। বলেছে দেরী হবে আসতে কিন্তু কেনো?
.
– আসলে ওর ফোনটা বন্ধ তাই
.
– ওহ আসলে ভাইয়া ল্যাবে থাকলে মাঝে মাঝে ফোনটা অফ রাখে
.
– ওহ আচ্ছা থ্যাংকস।

বলেই ফোনটা রেখে দিলাম আচ্ছা ও কী ল্যাবে আছে? হয়তো ! ওখানেই যেতে হবে আমায়, এখন একটা মুহুর্ত ও নষ্ট করতে চাইনা আমি। একটা সাদা টপস কালো জিনস পড়া ছিলাম তার ওপরে কালো একটা ওরনা পরে ছাড়া চুলগুলোতে কোনোরকম চিরুনি চালিয়ে একটা পার্স নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। কোনোরকমে সবার চোখের আড়ালে বেড়িয়ে একটা সি এন জি নিয়ে সোজা আদ্রিয়ানের ল্যাবের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
.
প্রায় ঘন্টার ও বেশি সময় পর পৌছে গেলাম ওর ল্যাবে। কিন্তু ল্যাবের দরজায় এসে আমি অবাক হলাম আজ কোনো সিকিউরিটি গার্ড নেই কেনো? তবুও সেটা পাত্তা না দিয়ে আমি ভেতরে চলে গেলাম কিন্তু সেখানে গিয়ে আরেকদফা অবাক হলাম কারণ মেইন গেইটও লক করা না, আমি আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকলাম, কিন্ত ভেতরে গিয়ে আরেকদফা অবাক হলাম, চারপাশ অন্ধকার আর কেউই নেই; ল্যাব কী বন্ধ? যদি ল্যাব বন্ধ থাকে তাহলে কোনো দরজাই লক করা না কেনো? আমি ঐ অন্ধকারেই ফোনের টর্চ অন করে কোনোরকমে আদ্রিয়ানের কেবিনটা তে ঢুকলাম, অন্ধকারে বেশ ভয় করছে, আদ্রিয়ান বলে কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু কাউকেই খুজে পেলাম না! কাউকে না পেয়ে ফিরে যেতে নেবো তখনি চোখ পড়ল সেই বন্ধ রুমটাতে ভাবলাম ওখানে নেই তো? ঐ দরজা দিকে এগিয়ে গিয়েও থেমে গেলাম ওখানে থাকলে তো আদ্রিয়ান সাড়া দিতো আর আগের বার আদ্রিয়ান আমাকে ঐ রুমে যেতেও বারণ করেছে, তাই না যাওয়াই ভালো এটা ভেবে ফিরে যেতে নেবো তখনি থেমে গেলাম, আগেই বলেছি কেউ আমাকে যেটা করতে বারণ করে সেটার প্রতি কৌতুহল আমার আরো বেরে যায়। তাই নিজের সেই কৌতূহল কে দমাতে পারলাম না এগিয়ে গেলাম রুমটার দিকে কিন্তু কে জানতো ঐ রুমে গিয়ে আমি এমন এক সত্যের সম্মুখীন হবো যা আমার সবকিছু এলোমেলো করে দেবে?

ঐ রুমটার দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। আমি কাপা কাপা পায়ে ঢুকলাম কিন্তু চারপাশটা ভীষণ অন্ধকার তাই টর্চের আলোর সাহায্যে আস্তে আস্তে বহু কষ্টে সুইচটা খুজে পেলাম, সুইচটা অন করতেই সাড়া রুমে আলো জলে উঠলো, চারপাশে তাকিয়ে তো আমি শকড, কতো রকমের তার, কম্পিউটার প্রজেক্টর, আরো কী কী সব যন্ত্রপাতি, আমি তো ভেবেছি কী না কী আছে ওখানে। এসব ভেবে চলে যেতে নেবো কিন্তু বা পাশে একটা কাবার্ড দেখে দাড়িয়ে গেলাম, এখানে কাবার্ড? কী আছে ওটায়? আমি নিজের অজান্তেই আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম কাবার্ডের দিকে, কিছুক্ষণ কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে খুললাম ওটা অদ্ভুতভাবে কোনো তালা লাগানো নেই, কিন্তু ভেতরে যা দেখলাম তাতে আমি সম্পূর্ণ শকড! এমন কিছু দেখবো মোটেও আশা করিনি আমি। আমার পা দুটো থরথর করে কাপছে কারণ

ঐ কাবার্ডে একটা কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স, কালো হেলমেট, কালো গ্লাভস রাখা। এই পোশাক গুলো চিনতে আমার একটুও দেরী হয়নি, কীকরে ভূলবো এই পোশাকগুলো আমি? কিন্তু এগুলো আদ্রিয়ানের ল্যাবে? ওগুলো হালকা সরিয়ে আমি আরো অবাক বন্দুক ও রাখা আছে ওখানে! এবার আমি আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা ভীষণ ব্যাথা করছে মাথাটা আর তার চেয়ে বেশি ব্যাথা করছে বুকে। এগুলোর মানে তো একটাই যে.. নাহ এটা কীকরে সম্ভব? ওও এরকম করতে পারেনা আমার সাথে এটা সম্ভব না, এটা আমার দুঃস্বপ্ন হ্যা নিশ্চই এটা আমার দুঃস্বপ্ন।

কাপাকাপা হাতে কাবার্ড টা বন্ধ করে দিয়ে কোনোরকমে দুকদম এগিয়ে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না হাটু ভেঙ্গে বসে পরলাম, নিশ্বাস আটকে আসছে আমার, গোটা দুনিয়া অন্ধাকার লাগছে, মরে যেতে ইচ্ছে করছে, এইরকম সত্যির মুখোমুখি আমাকে কেনো করালেন আল্লাহ? সব আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে, কাজ আছে বলে আমাকে ঐ নিড়িবিলি গলিতে নিয়ে যাওয়া আর তারপরেই আমার ওপর অ্যাটাক হওয়া, এরপর আমাকে মেডিকেল থেকে পিক করতে আসতে দেরী হওয়া আর ঠিক সেইদিনি আমার কিডন্যাপ হওয়া, এসব শুনেও ওর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকা যেনো এসবি স্বাভাবিক, বিষয়টাকে অতোটা গুরত্ব না দেওয়া সব ক্লিয়ার হচ্ছে আজ তারমানে ঐ চতুর্থ লোকটা আর কেউ নয় আদ্রিয়ান নিজে? ও একজন টেরোরিস্ট? কিন্তু এটা কীকরে সম্ভব? ওতো একজন ইন্জিনিয়ার আর যেমন তেমন নয় বড় একজন ওও কেনো এসবের সাথে যুক্ত থাকবে? কিন্তু এগুলো তো মিথ্যে না এটাতো নিশ্চিত যে আদ্রিয়ানই সেই চতুর্থ লোক।
.
কয়েক মিনিট মাথাটা টোটালি হ্যাং ছিলো ওভাবেই হাটু ভেঙ্গে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলছিলাম। এরপর ভাবলাম আচ্ছা আদ্রিয়ান তো আমাকে ভালোবাসে তাহলে কীকরে আমার সাথে এরকমটা করল? আস্তে আস্তে সবকিছু পরিষ্কার হলো, তারমানে আদ্রিয়ান কখনো আমাকে ভালোই বাসেনি, ও যা করছে আর করেছে শুধুমাত্র ফাইলটার জন্য, ওরা জানতো যে আমি এভাবে ফাইলটা ওদের দেবোনা আর তারজন্যেই ও আমার সাথে নাটক করেছে? শুধুমাত্র ফাইলটার জন্যে? এতো নিখুত অভিনয়? আমি এবার প্রচন্ড জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, বুকের বা পাশে ভীষণ ব্যাথা করছে। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আছ জেনো কান্নাও আমার কাছে আসতে অনিহা প্রকাশ করছে। এতো বড় প্রতারণা?
.
– কেনো করলে এটা আদ্রিয়ান? এভাবে ঠকাতে পারলে আমাকে তুমি? আমার অনুভূতি নিয়ে এভাবে খেলার কী খুব দরকার ছিলো? তোমার ভালোবাসটা অভিনয় হলেও আমিতো তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি, নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি, কিন্তু তুমি সেই ভালোবাসা নিয়েও গেইম খেললে? কীকরে পারলে এটা করতে? তুমি বলেছিলে আমার দেয়া আঘাত নাকি তুমি সহ্য করতে পারবেনা বেচে থাকলেও জীবিত লাশ হয়ে যাবে, কিন্তু আঘাত তো তুমি আমাকে করলে আদ্রিয়ান জীবিত লাশ বানিয়ে দিলে আমায়। আজকের পর তোমাকে আর মেনে নিতে পারবোনা আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া বেচে থাকাটাও যে মৃত্যুর চেয়েও বেশি যন্ত্রণার। খুব বেশি প্রোয়জন ছিলো আমার ইমোশন নিয়ে এভাবে খেলার?

ভীষণ ভয় করছে আদ্রিয়ান যে কতোটা ভয়ংকর সেটা এখন বুঝতে পারছি একবার যদি ও বুঝতে পারে আমি সব জেনে গেছি তাহলে ও কী করবে সেটা আল্লাহ ই জানে। কিছুক্ষণ অভাবেই বসে থাকার পর মনে হলো না আমাকে এখান থেকে যেতে হবে, বাড়িতে গিয়ে সব ঠিক করতে হবে আদ্রিয়ানকে ভালোবেসে যেই ভূল আমি করেছি সেটা সংশোধন করতেই হবে। আপাদত অামাকে পালাতে হবে এখান থেকে আদ্রিয়ান এসে পরার আগেই, এসব ভেবে উঠে দাড়াতেই ফোন বেজে উঠলো, স্ক্রিনে ‘ Adriyan’ নামটা দেখেই আমার বুক কাপতে লাগল, হাত প্রচুর কাপছে, গলা শুকিয়ে আসছে। আদ্রিয়ান ঠিকি বলেছিলো সময় নিজের সাথে সবকিছু বদলে দেয়, ফোনের স্ক্রিনে যার নাম দেখলে আমার ঠোটের কোনে হাসি ফুটতো, আজকে সেই নামটা দেখেই আমার ভয়ে হাত পা কাপছে গলা শুকিয়ে আসছে। আমি কাপা কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে বললাম
.
– হ্ হ্যালো!
.
– জাবিন বলল তুমি নাকি আমার খোজ করছিলে? খুব বেশি মিস করছিলে সুইটাহার্ট?
.
– ন্ নাহ আ্ সলে আম্ মি এমনিই আ্ আরকি..
.
– হুমম তো কোথায় আছো জানপাখি? ( খুব ঠান্ডা গলায়)
.
ওর ঐ ঠান্ডা গলা শুনেই আমার বুক ধক করে উঠলো, ও কী জেনে গেছে? তবুও নিজেকে সামলে বললাম
.
– ব্ বাড়িতে বাড়িতেই আছি!
.
– তুমি ভয় পাচ্ছো না তো?
.
– ন্ নাহ ভ্ ভয় কেনো প্ পাবো?
.
– সেটাই ভয় পেয়োনা আমি আছিতো! যেটুকু ভয় পাচ্ছো সেটুকুও কেটে যাবে ধীরে ধীরে।
.
– মান্ নে?
.
– কিছুনা Just take your time.. and your time start now… TikTik TikTik TikTik ( স্লো ভয়েজে)
.
আমার হাত থেকে ফোন পরে গেলো আমি এবার নিশ্চিত ও জানে যে আমি সব জেনে গেছি, কীসের সময় দিলো আমাকে? ন্ নাহ আমাকে পালাতে সবে এখান থেকে, যেকরেই হোক।

আমি তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে পার্সে ভরে দরজার কাছে গিয়ে চমকে গেলাম দরজা খুলছে না, আমি জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগলাম কিন্তু খুলছে না। কিন্তু এটা কীকরে হতে পারে এখানে তো কেউ ছিলোনা আর দরজাও খোলা ছিলো। লাইটও অফ হয়ে গেলো, বেশ কয়েকবার ধাক্কানোর পর আমি ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকার করতে লাগলাম
.
– কেউ আছেন? প্লিজ দরজাটা খুলুন, আমি ভেতরে আটকে আছি, আমাকে বেরোতে হবে প্লিজ খুলুন। কেউ আছেন? কেনো আটকে রেখেছেন আমাকে? প্লিজ খুলুননা দরজাটা? প্লিজ?
.
কিন্তু কারো কোনো সাড়া পেলামটা একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে একটা টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলাম চিৎকার করে কাদছি আমি, কেনো এমন হলো আমার সাথে? আমার সাথেই কেনো? কাউকে নিজের সবটা ভালোবাসাটা কী এতো বড় অপরাধ যে তার দাম আমাকে এভাবে দিতে হচ্ছে? হাটু ভেঙ্গে হাটুতে মুখ গুজে হিচকি দিয়ে কাদছি আমি, জানিনা আর আমার এই কান্নার শেষ কোথায়! এটুকু বুঝতে পারছি যে জালে আমি আটকে গেছি সেখান থেকে বেরোনো এতো সহজ হবে না।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দেই মাথা তুলে তাকালাম, কেউ একজন এগিয়ে আসছে আমার দিকে দরজা দিয়ে যেটুকু আলো আসছে তাতেই তার অবয়ব দেখা যাচ্ছে। আমি নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে বসলাম। লোকটা এসে লাইট জালালো আর আলো জলতেই লোকটার মুখ স্পষ্ট হয়ে গেলো। লোকটার মুখ দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, হ্যা স্বয়ং আদ্রিয়ান দাড়িয়ে আছে, কালো একটা টিশার্ট, আর কালো জিন্স পরে আছে। ও আস্তে অাস্তে আমার কাছে আসতে লাগল আর আমি ততোই গুটিয়ে বসলাম, ও এসে আমাকে হাত ধরে দাড় করিয়ে দিয়ে বলল

– এখানে কেনো এসেছিলে?
.
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে কাদছি, ভয়ে সারা শরীর কাপছে আমার ও জোরে ধমকে বললো
.
– কান্না বন্ধ করো আর বলো
.
আমি কেপে উঠলাম ওর ধমকে। কাপা কাপা গলাতে বললাম
.
– ত্ তোমার সাথে দ্ দেখা করতে!
.
– কেনো?
.
এবার কী বলবো খুজে পাচ্ছি না ও এবার থুতনি ধরে মুখটা উচু করে বলল
.
– আমাকে বোকা মনে হয় তোমার? এখানে কেনো এসছো আর এসে কী জেনেছো আর কতোটা জেনেছো সব জানি আমি! তাই নাটক বন্ধ করো ওটা করা আমার কাজ তোমাকে সুট করেনা
.
বলেই আমার চোখের পানি মুছে দিলো কিন্তু ওর কথা শুনে আমার সারা হাতপা কাপছে। ও আমার চুল কানে গুজে দিতে দিতে বললো
.
– এখানে আসা তোমার উচিত হয়নি, এখনি এসব করতে চাইনি কিন্তু করতে হবে কিচ্ছু করার নেই।
.
ওর এই কথা শুনে আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি যে এখন আমার সাথে যা হবে তা মোটেও ভালো কিছু হবে না কিন্তু আমাকে পালাতে হবে যেকরেই হোক। আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম ঐ ধাক্কার জন্য ও প্রস্তুত ছিলোনা তাই ওকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে সুবিধা হয়েছে আমার। আমি পেছন থেকে আদ্রিয়ান এর গলা স্পষ্ট পেলাম ও চিৎকার করে বলছে
.
– অনি স্টপ দেয়ার! তুমি চাইলেও এখান যেতে পারবেনা, স্টপ!

Infinite Love part 46+47+48+49+50

কিন্তু আমি ওর কথা কানে নিলাম না আমার ভয় পেলে চলবেনা কিন্তু দ্বিতীয় তলায় এসেই দেখলাম কেচিগেইট তালা লাগানো, সিড়ি দিয়ে আদ্রিয়ানের নামার আওয়াজ পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি ওখানের একটা রুমে ঢুকে গেলাম গোটা রুমে অসংখ্য টেবিল আর তার ওপর কম্পিউটার আমি ছুটে গিয়ে কর্ণারের টেবিলের পিছে লুকিয়ে গেলাম। টেবিলের পিছে গুটিসুটি মেরে বসে আছি আর আল্লাহকে ডাকছি। কী অদ্ভুত যেই মানুষটার কাছে আমি সবচেয়ে নিরাপদ ফিল করতাম তার থেকেই আজ আমাকে পালাতে হচ্ছে।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান রুমে ঢুকলো কিছুক্ষণ চারপাশে খুজে ঠান্ডা বলল
.
– অনি ! বেরিয়ে এসো।
.
আমি মুখ চেপে ধরে বসে আছি, প্রচুর কান্না পাচ্ছে ও আবারো বলল
.
– দেখো এই ল্যাবের প্রতিটা কোণ চিনি আমি তাই তুমি বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবেনা, বেরোও!
.
কেপে উঠলাম ওর কথায় সত্যিই তো বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবোনা আমি। ও এবার একটা টেবিলে বারি মেরে বলল
.
– অনি আমি জানি তুমি এখানেই আছো লাস্ট বার বলছি ভালোয় ভালোয় বেরিয়ে এসো নইলে তোমার কী হাল হবে তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা! So come out!!
.
ওর প্রতিটা কথা আমার বুকে কম্পনের সৃষ্টি করছে কিন্তু না আমি এতো সহজে হারবোনা শেষ অবধি চেষ্টা করবো!
.
– ওহ তুমি নিজে থেকে বেরোবেনা তাইতো? ঠিক আছে আমিও দেখি তুমি কতোক্ষণ লুকোতে পারো!
.
বলে ও সারারুম জুরে খুজতে লাগল আমাকে , আমি চোখ খিচে বন্ধ করে বসে আছি, একবার ওর হাতে পরে গেলে আমার সাথে আজ কী হবে তা আল্লাহ জানে! গুটিসুটি মেরে বসে এটাই ভাবছি। হঠাৎ আমার পেছন থেকে কেউ বলে উঠল
– হাইড এন্ড সিক খেলা শেষ?

Infinite Love part 56+57+58+59+60