Infinite Love part 46+47+48+49+50

Infinite Love part 46+47+48+49+50
Writer: Onima

এতো ভালো কেনো বাসে ও আমায়? আচ্ছা আমার কী ওকে নিজের সাথে জরানোটা ঠিক হলো? আমার জীবটা যে কতোটা অনিশ্চিত তাতো আমি জানি, যেকোনো সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে! তবে অবাক করা ব্যাপার এতো কিছুর পরেও ও একবারো জানতে চাইলো না ওরা কারা আর কেনো আমার পেছনে পরে আছে। কিন্তু ওর তো আরো আগেই জানতে চাওয়ার কথা। হয়তো বলার হলে আমি নিজেই আমি বলবো সেটা ভেবেই জানতে চায়নি। বলে দেবো ওকে? ওর তো অধিকার আছে আমার অতীত জানার। খাওয়ার মধ্যে আর কিছু বললাম না। হঠাৎ আমি ওর হাত ধরে আটকে দিলাম। ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি হাত ঘুরিয়ে ওর মুখের দিকে দিয়ে বললাম

– কাল থেকে কিছুই তো খাও নি, এখনো শুধু আমাকেই খাওয়াচ্ছো!
.
– তুমি কীকরে বুঝলে? (অবাক হয়ে!)
.
– এইটুকু তো চিনতে পেরেছি তোমাকে।
.
ও মুচকি একটা হাসি দিয়ে খাবারটা নিজের মুখে নিয়ে নিলো। এরপর নিজেও খেলো আমাকেও খাইয়ে দিলো, আমাকে খাইয়ে দিয়ে মুখ মুছিয়ে প্লেট রেখে এসে আমার পাশে বসে বলল
.
– এখন কেমন লাগছে?
.
– বেটার
.
– হাত ব্যাথা করছে?
.
– অল্প! ইনজেকশন দেয়া জায়গাটা জলছে ভীষণ। খুব জোরেই গেথেছিলো। How can be a man so heartless!
.
ও আমার গালে হাত রেখে বেশ করুন স্বরে বলল
.
– খুব লেগেছিলো তাইনা?
.
আমি কিছু বললাম না। হঠাৎ ও আমাকে ওর বুকের সাথে জরিয়ে নিলো। বেশ অবাক হলাম আমি অবাক হয়েই ওর পিঠে হাত রাখলাম। আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– আর কয়েকটা দিন এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
– মানেহ?
.
– অব্ আই মিন আই উইস সব ঠিক হবে।
.
– হুম।
.
আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
.
– কালকে রাতে ঘুমোতে পারিনি এখন একটু ঘুমোবো। ইচ্ছেতো করছে তোমার কোলে ঘুমোতে বাট তোমারো রেস্টের দরকার। সো রেস্ট করো আমি অাসছি। আর এখন এখানে কাউকে আসতে বারণ করেছি, ইউ নিউ এ সাউন্ড স্লিপ। সো টেইক রেস্ট।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো। ছেলেটা সত্যিই খুব ভালোবাসে আমাকে, কিন্তু আমি ভাবছি ঐ টেরোরিস্ট দের কথা। ওরা আমাকে নিয়ে গিয়েও ছেড়ে কেনো দিলো? আর ঐ ইনজেকশন? ওটা দেয়ার পরেই আমার সাথে এরকম হয়, অজ্ঞান হয়ে যাই আমি, আর অজ্ঞান হবার পরে যখন জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে অন্য কোথাও আবিস্কার করি, আসল ব্যাপারটা কী? কিছু তো একটা আছে যা আমি জানিনা, এটুকু বুঝলাম যে অনেক কিছু হচ্ছে আমাকে কেন্দ্র করে এবং সেটা আমার অগচরেই, কিন্তু কী হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছিনা। এসব চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি নিজেই বুঝতে পারিনি।
.
আপির ডাকে ঘুম ভাঙলো আপিকে দেখে একটা হাই তুলে উঠে বসে বললাম
.
– তোমরা থেকে গেছো?
.
– হুম বিকেলে যাবো। আন্টিরা রেখে দিলো দুপুরে না খেয়ে যেতে দেবে না।
.
– ওহ
.
– যা গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিচে খেতে আয়।
.
– হুম আসছি।
.
আপি চলে যেতেই আমি উঠে সাওয়ার নিয়ে ড্রায়ার দিয়ে চুলটা শুকিয়ে নিলাম তারপর নিচে চলে গেলাম, নিচে গিয়ে দেখি সবাই ডাইনিং এ বসে আমার জন্য ওয়েট করছে। আমি গিয়ে আদ্রিয়ানের পাশে বসে পরলাম। খেতে খেতে আমার সাথে ঘটা ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছে সবাই, কিন্তু আদ্রিয়ান চুপচাপ খাচ্ছে যেনো ওর কোনো ইন্টারেস্ট ই নেই ওই ব্যাপারে। মানিক আঙ্কেল বলল
.
আঙ্কেল: মেয়েটার সাথে এসব কিছু হচ্ছে, আর আমাদের তো পুলিশকে জানানো উচিত ব্যাপারটা তাইনা?

আব্বু: জানালে সমস্যা বারবে। পুলিশ তখন ফাইলটা চাইবে।
.
আঙ্কেল: হ্যা সেটাও ঠিক কিন্তু এভাবে আর কতোদিন। মেয়েটার জীবনের ঝুকিটা বেরে চলেছে।
.
আম্মু: তা বারলে বারুক, সেটা নিয়ে আপনার বন্ধুর কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
.
আব্বু: তুমি আবার এসব কথা বলছো?
.
আপি: আচ্ছা বাদ দাও এখন এসব। পরবর্তিতে আমরা একটু সতর্ক হতে হবে।
.
এদের কথার মাঝে কিছুই বললাম না আমি। বিকেলে আব্বুরা চলে গেলো। রাতে খাটে হেলান দিয়ে ভাবছি যে পরে কী হবে, আর কী কী হতে পারে আমার সাথে এর পর? হঠাৎ আদ্রিয়ান এলো রুমে এসে আমার পাশে হেলান দিয়ে শুয়ে পরল যেটা দৈখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– কী চাই?
.
ও একটু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল
.
– তোমাকে..
.
ওর ওই দুষ্টু হাসি দেখেই বুঝে গেলাম এই ছেলের মাথায় কী চলছে। তাই আমি বললাম
.
– দ্ দেখো এখন একদম কোনো দুষ্টুমি করবে না তাহলে কিন্তু..
.
ও উঠে আমার দিকে ঝুকে ভ্রু নাচিয়ে বলল
.
– কী করবে?
.
– কিচ্ছুনা সরুন..
.
– পারলে সরাও..

আমি অসহায়ভাবে তাকালাম ওর দিকে কারণ এটা ওও জানে আর আমিও জানি যে আমি ওকে সরাতে পারিনা যতক্ষণ না ও নিজে চায়। সেটা দেখে ও হালকা হাসল তারপর আমার গালে আলতো করে চুমু দিয়ে আবারো পাশে হেলান দিয়ে বসলো। আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল
.
– তোমার মন খারাপ ছিলো তাই একটু মজা করলাম।
.
আমি ওর বুকে কিল মেরে বললাম
.
– তুমি আসলেই অসভ্য
.
ও আমাকে দু হাতে জরিয়ে ধরে বলল
.
– কাল যা হয়েছে সেটা নিয়ে ভয়ে আছো তাইনা?
.
আমি কিছু না বলে ওকে আকরে ধরলাম, ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
.
– ভয় পেয়োনা আমি আছিতো। আর আমিতো বলেছি আমি থাকতে তোমাকে কিচ্ছু হতে দেবোনা। বিশ্বাস নেই আমার ওপর?
.
– নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে
.
– ভবিষ্যতে এই বিশ্বাসটা রাখতে পারবে?
.
– কেনো পারবোনা?
.
ও কিছু না বলে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল, ঐ দিনের পর আদ্রিয়ানের কেয়ারিং এর পরিমাণ আরো বেড়ে গেলো আগে মাঝে মাঝে গার্ড পাঠাতো কিন্তু এখন যতই কাজ থাক আর যতই ব্যাস্ত থাক। নিজেই ড্রপ করে আমাকে। এভাবেই আরো দুই সপ্তাহ কেটে গেলো এই দুই সপ্তাহে এক্কেবারে যত্ন করে রেখেছে আমাকে। আর ওর প্রতি আমার ভালোবাসাও আরো গভীর হয়েছে। কিন্তু সেই কথা এখোনো বলা হয়নি ওকে। বলা হয়নি যে আমিও ভালোবাসি ওকে।
.
ঘুম আসছিলো না চাই ছাদে গিয়ে রেলিং ধরে দাড়িয়ে আকাশ দেখছি, বেশ খানিক্ষণ পর আদ্রিয়ান আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল

– ঘুম আসছেনা?
.
– উমহুম।
.
– ভালোই হলো সারারাত প্রেম করতে পারবো
.
আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম
.
– ফালতু!
.
– কী ফালতু?
.
– কিছুনা, আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
.
– একটা কেনো একশোটা করো।
.
– আপনি একবারো জানতে চাইলেন না কেনো ওই টেরোরিস্ট রা আমার পেছনে পরে আছে? কী হয়েছিলো? ওদের সাথে আমার কী কানেকশন?
.
– ওসব জেনে আমি কী করবো? আমার যেটুকু জানার আমি জেনে নিয়েছি। আমি শুধু এটুকুই জানি যে ওরা তোমার ক্ষতি করতে চায় আর আমাকে যেকোনো মূল্যে তোমাকে প্রটেক্ট করতে হবে।
.
– হ্যা কিন্তু তাই বলে কারণটাই জানতে চাইবেন না?
.
– জেনে কী করবো?
.
– আমিতো জানাতে চাই
.
– দেখো অতীত ঘেটে মুড অফ করার মানে আছে? যা হয়েছে ভূলে যাও!
.
– কিছু অতীত পিছু ছাড়েনা আদ্রিয়ান, যেমন আমারটা ছাড়ছেনা। তাই আমি বলতে চাই তোমাকে সব
.
– কিন্তু..
.
– প্লিজ

– আচ্ছা বলো।
.
বলেই রেলিং এর ওপর বসল। আমিও উল্টো ঘুরে রেলিং এ হেলান দিয়ে বলতে শুরু করলাম
.
তিন বছর আগের কথা আমি তখন নিউ টেইন, তুমি আমাকে দেখার দুই মাস আগের ঘটনা এটা, ইদের শপিং এ বেরিয়েছিলাম আমরা হোল ফ্যামিলি। শপিং করে শ্যামলিতে আম্মুর বান্ধবী খুশি আন্টির বাড়িতে গেলাম সবাই ওখানে ইফতার করেই ফেরার কথা। খুশি আন্টির মেয়ে হাবিবার সাথে আমার বেশ ভালো বন্ধুত্ব তাই ওর সাথে গল্প করতে লাগলাম সোফায় বসে বাট ঘরে বসে থাকতে কোনো কালেই ভালো লাগেনা আমার তাই বললাম
.
– চলো বাইরে থেকে হেটে আসি!
.
– এখন?
.
– আরেহ কিচ্ছু হবেনা যাবো আর আসবো চলো তো!
.
আমার জেদের কাছে হার মেনে বাদ্ধ হলো বেরোতে, ও আর আমি রাস্তায় হাটতে ছিলাম। হঠাৎ ও বলল
.
– আরেহ ওই গলি আমি চিনি না ওখানে যাবো না। এদিকে চলো প্লিজ!
.
আমি ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে বললাম
.
– আরেহ অচেনা রাস্তায় হাটার মজাই আলাদা কোথায় যাচ্ছি নিজেরাও জানিনা কী চম্যকার ফিলিংস তাইনা?
.
– দেখো পরে বিপদে পরবো প্লিজ চলো।
.
– আরেহ ভয় পাচ্ছো কেনো আমি আছিতো চলো !
.
– কিন্তু..
.
ওর কোনো কথা না শুনে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলাম। এটাই আমার স্বভাব ছিলো যেটা কেউ বারণ করতো সেটার ওপর কৌতহল বেড়ে যেতো, সেটা না জানা অবধি আমি থামতাম না। কে জানতো আমার এই স্বভাবটাই আমার কাল হবে। বেশ অনেকটা হাটতে হাটতে দূরে একটা অর্ধেক হওয়া বিল্ডিং দেখতে পেলাম। পুরোপরি কম্প্লিট হয়নি হাফ হয়ে বসে আছে। এক্সাইটেড হয়ে বললাম
.
– ওয়াও! চলো ঐ বিল্ডিং টার ছাদে যাই। ছাদে দাড়িয়ে গোটা এলাকাটা দেখতে চমৎকার লাগবে।
.
– একদম না ! কাদের না কাদের বিল্ডিং তার ওপর অপরিচিত এলাকা আমি যাবোনা
.
– আরেহ তাতে কী কিচ্ছু হবে না এসো তো!

– আমি যাবোনা
.
তখন চলে আসলেই হয়তো ভালো হতো আবার হতোও না। কিন্তু ঐ যে আমার ঐ স্বভাবের কারণেই বললাম
.
– আচ্ছা ঠিকাছে তুমি চলে যাও আমি ওখান থেকে ঘুরে আসছি।
.
– কীহ? পাগল হয়ে গেছো তুমি?
.
– আরে কিছু হবে না যাও তো!
.
বলেই আমি এগিয়ে গেলাম। হাবিবা ভয়ে সত্যিই আসে নি আমার সাথে। আমি বিল্ডিংটার ভেতরে ঢুকে গেলাম। সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে লাগলাম। থার্ড ফ্লোর অবধি গিয়ে আমার পা আটকে গেলো কিছু লোকের কথপোকথন শুনে। তখন মস্তিষ্ক বলছিলো এখানে থাকাটা আর ঠিক হবেনা কিন্তু বেপরোয়া মনটা সেই কথাটা শুনলো না, নিজের অজান্তেই গলার আওয়াজ অনুসরণ করতে করতে এগিয়ে দেখলাম তিনজন কালো পোশাক পরা, মুখে কালো মুখস লাগান লোক চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। আর তাদের চারপাশে আরো কয়েকজন দাড়িয়ে আছে কালো পোশাক আর মুখস পরা। আমি পিলারের আড়ালে দাড়িয়ে এদের কথা শুনতে লাগলাম। চেয়ারে বসা একজন বলল
.
– সফটওয়্যার এর কম্প্লিট মডেল তৈরী হয়ে গেছে।
.
দাড়ানো একজন বলল
.
– Yes sir.. ফাইল তৈরী হয়ে গেছে, Here it is..
.
আমি ভাবছিলাম সফটওয়্যার? ফাইল? এরাকি ইন্জিনিয়ার? এরকম পোশাক কেনো তাহলে? চেয়ারে বসা আরেকজন বলল
.
– ইন্জিনিয়ার গুলোকে কী করেছো?
.
– সব গুলোকে শেষ করে দিয়েছি। এরা কোথাও গিয়ে মুখ খুলতে পারবেনা।
.
– গুড ভেরি গুড। আমাদের হয়ে এতো যত্ন করে সফটওয়্যার বানিয়ে দিলো মৃত্যু তো এদের পুরস্কার ছিলো। দুই বছরের সাধনার ফল অবশেষে আমাদের হাতে!
.
বলেই তিনজন হাসতে লাগল। ভয়েতে হাত পা কাপছে আমার। খুন করেছে এরা? ইন্জিনিয়ার দের? কিন্তু কেনো আর ওই সফটওয়্যার দিয়েই বা কী হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই লোকটা বলল
.
– এবার ঈদের জামাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ জমায়েত হবে তাইনা?
.
আরেকজন বলল
.
– হুমম আর ফিরবে এদের লাশ। এই সফটওয়্যার টা দিয়ে এক সাথে একি সময় কয়েক জায়গায় বিষ্ফোরোন ঘটাতে পারবো আমরা। আর পুলিশ কিচ্ছু করতে পারবেনা কারণ..
.
– কারণ ওই বোম ডিফিউস করতেও এই সফটওয়্যার টা লাগবে। এবার এই ফাইল দিয়ে ইদের আগেই সফটওয়্যার টা এক্টিভ করতে হবে
.
পিলে চমকে উঠল আমার এতো ভয়ংকর প্লানিং এতো গুলো মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে এরা? আমার আব্বু, চাচু, ভাইয়ারাও তো যায় ইদগাহে নামাজে, এরকম আরো কত লোকের বাবা ভাই স্বামি যাবে ওখানে, এটুকু বুঝতে পারলাম এই ফাইলটা না থাকলে এদের কোনো প্লানিং সাকসেকফুল হবেনা, নিমেষেই সব ভয় যেনো গায়েব হয়ে গেলো, মাথায় শুধু এটুকুই এলো যে ফাইলটা আমার এদের কাছ থেকে নিতেই হবে। আমি চুপচাপ ওখানে লুকিয়ে বসে আছি, ঐ তিনজন ইশারা করতেই বাকি লোকগুলো চলে গেলো ওখান থেকে। তারপর ঐ তিনজনের একজন ফাইলটা নিয়ে আলমারি জাতিয় একটা জিনিসে ফাইলটা রেখে লক করে চাবিটা আলমারির ওপরে রেখে বেলকনিতে চলে গেলো। হয়তো বুঝতেই পারেনি এখানে অন্য কেউ আসতে পারে তাই আর চাবিটা সাথে রাখেনি, যখন বুঝতে পারলাম ওরা এখন আসবেনা আমি আস্তে আস্তে আলমারিটার কাছে গিয়ে অনেক কষ্টে চাবিটা নামলাম কারণ আলমারিটা উচু। হঠাৎ ওদের আসার আওয়াজ পেয়ে আমি তাড়াতাড়ি আলমারির পাশে লুকিয়ে গেলাম। ওরা চলে গেলো দরজাটা চাপিয়ে হয়তো আবার আসবে নইলে চাপিয়ে রাখতো না লক করে যেতো, কিন্তু যা করার এখনি করতে হবে তাই আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আলমারিটা খুলে একটু খুজেই ফাইলটা পেয়ে গেলাম। ফাইলটা হাতে নিয়েই পায়ের শব্দ পেলাম তাই তাড়াতাড়ি ফাইলটা নিয়ে দেয়ালের সাথে লাগানো টেবিলের নিচে লুকিয়ে গেলাম। কিন্তু আলমারিটা বন্ধ করার সুযোগ ও পেলাম না। ওরা ভেতরে এসে দেখে আলমারি খোলা সেটা দেখেই চিৎকার দিয়ে বলে

– ওহ নো! তাড়াতাড়ি দেখ ফাইলটা আছে কীনা!
.
একজন তাড়াতাড়ি চেক করে এসে বলে
.
– স্যার ফাইলটা নেই।
.
লোকটা লোকটা উত্তেজিত হয়ে বলে
.
– নো নো নো… এটা হতে পারেনা, আমাদের দুই বছরের পরিশ্রম ওটা
.
আরেকজন বলল
.
– কুল! যেই নিক না কেনো সে এখানেই আছে, আমরা বেশিক্ষণ ধরে বাইরে যাই নি, তাই এতো তাড়াতাড়ি নিয়ে পালানো সম্ভব না, যেই হোক সে এই রুমেই আছে। খোজো ওকে, আজ ওর শেষ দিন!
.
বলেই ওরা সবাই গান বের করে আমাকে খুজতে লাগল। আমি ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসে ছিলাম, ভাবছিলাম কী করবো এখন আমি? কীভাবে পালাবো? ওরাতো নিশ্চিত আমাকে ধরে ফেলবে, আর ফাইল সহ ধরা পরলে আজকেই যে আমার শেষ দিন হবে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই!

বলেই ওরা সবাই গান বের করে আমাকে খুজতে লাগল। আমি ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসে ছিলাম, ভাবছিলাম কী করবো এখন আমি? কীভাবে পালাবো? ওরাতো নিশ্চিত আমাকে ধরে ফেলবে, আর ফাইল সহ ধরা পরলে আজকেই যে আমার শেষ দিন হবে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই! আমি চোখ খিচে বন্ধ করে গুটিশুটি মেরে বসে আল্লাহকে ডাকছি। হঠাৎ মনে হলো এখন না হয় একটু পরে হলেও ওরা খুজে পেয়ে যাবে আমাকে কিন্তু এই ফাইলটা ওদের হাতে পরতে দেয়া যাবে না, কিন্তু কী করবো আমি কোথায় লুকোবো ফাইলটা। এদিকে ওরা আমাকে খুজেই চলেছে যেকোনো মুহুর্তে পেয়ে যাবে, আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম দেয়ালের নিচে দুই ইঞ্চির মতো গেভ আছে আর এখান দিয়ে কিছু ফেললে এক্কেবারে সেকেন্ড ফ্লোরের ব্যালকনিতে গিয়ে পরবে, ওপরে ওঠার সময় যা বুঝেছি ওখানটা ফাকাই থাকে। এরমধ্যেই ওদের একজন বলল

– স্যার কেউ নেই বোধহয় পালিয়েছে
.
লোকটা হুংকার দিয়ে বলল
.
– আরে না কোথায় আর পালাবে এখানেই আছে প্রত্যেকটা কোনা খোজ, সব জায়গায় সুচ পরিমাণ জায়গা বাকি রাখবি না।
.
এবার আমি নিশ্চিত যে আমি ধরা পরে যাবো তাই কিছু না ভেবেই ওই ফাকা দিয়ে ফেলে দিলাম ফাইলটা, কিন্তু ওরা আমাকে মেরে ফেললে তো এই ফাইলটা কোথায় আছে কেউ জানবেনা আর তাহলে ঐ সফটওয়্যার টাও নষ্ট করা যাবে না। আর যদি এদের হাতে আবার পরে যায়? এসব ভাবছিলাম হঠাৎ আমি যেই টেবিলের নিচে বসে আছি সেখানে কারো পায়ের ঊপস্হিতি পেলাম। ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্হা। যা ভাবলাম তাই হলো লোকটা নিচু হতেই আমাকে দেখতে পেয়ে গেলো! চিৎকার দিয়ে বলল
.
– স্যার পেয়েছি!
.
– বের কর !
.
লোকটা টেনে আমাকে টেবিলের নিচ থেকে বের করল তারপর টেনে ওই তিনজনের সামনে নিয়ে দাড় করিয়ে দিলো, তিনজনের মধ্যে একজন বিষ্ময়ের সাথে বলল
.
– আমিতো ভাবলাম কোনো ডিটেক্টিভ, বা কোনো অফিসার এসেছে আমাদের ডেরায়, কিন্তু এতো একটা মেয়ে তাও বাচ্চা!
.
আমি ভয়ে চুপ করে কাদছিলাম। কারণ আমি জানতাম না আমার সাথে কী হতে চলেছে, আরেকজন বলল
.
– হয়তো কেউ পাঠিয়েছে ওকে। এই কে পাঠিয়েছে তোমাকে?
.
আমি মাথা নিচু করে কেদেই চলেছি। লোকটা ধমক দিয়ে বন্দুক তাক করে বলল
.
– কী হলো বলো? নইলে এখানেই শেষ করে দেবো!
.
বন্ধুক দেখে আমার কান্নার বেগ আরো বেরে গেলো কাদতে কাদতে কাপা গলায় বললাম

– ক্ কেউ না
.
– তাহলে এখানে কী করতে এসেছিলে? কে বললো এই জায়গার কথা তোমাকে?
.
– অ্ আমি এমনি ঘুরতে এসছিলাম
.
লোকটা এসে আরো জোরে ধমকে বলল
.
– এটাকি পার্ক নাকি যে ঘুরতে এসছো? ফাইলটা কোথায়?
.
সারা শরীর কাপছে আমার প্রচন্ড ভয় করছে এই লোকগুলোকে, আল্লাহ জানে এখন কী করবে আমার সাথে। লোকটা মাথায় গান ঠেকিয়ে চিৎকার করে বলল
.
– ফাইলটা কোথায়?
.
আমি অনেক কষ্টে একটু সাহস জুগিয়ে বললাম
.
– আমি জানিনা, ক্ কোন ফাইলের কথা ব্ বলছেন আপনারা?
.
পাশের লোকটা আরেকটা লোককে বলল
.
– এইটুকু একটা মেয়ে ঐ ফাইলটা কেনো নেবে? বোধ হয় সত্যিই ঘুরতে এসছে

– বোকার মতো কথা বলছিস কেনো? ও ছাড়া কে আছে এখানে? নিশ্চই কেউ পাঠিয়েছে ওকে
.
– ঠিক! আর মেয়েটা যখন এখানে আছে ফাইলটাও এখানেই থাকবে, খোজ!
.
সবাই মিলে খুজতে লেগে পরল ফাইলটা, আমিতো জানি এটা এখানে পাবেনা তাই খুজেও কোনো লাভ নেই, একজন আমার হাত ধরে আমাকে আটকে রেখে দিয়েছে, সারা ঘর তছনছ করে খুজেও ফাইলটা না পেয়ে সবাই এসে বলল
.
– স্যার ফাইলটা নেই!
.
– ভালো করে দেখেছিস?
.
– জ্বি স্যার কিচ্ছু বাকি রাখি নি! পুরো রুম খুজেছি।
.
লোকটা এবার রেগে এসে আমার গাল চেপে ধরে বলল
.
– ফাইলটা কোথায় রেখেছো?
.
গালটা এতো জোরেই চেপে ধরে রেখেছে যে আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে, হঠাৎ আরেকটা লোক বলল
.
– এভাবে হবেনা, ওকে গোডাউনে নিয়ে চলো, সেখানে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিলেই সব গড়গড় করে বলে দেবে যে একে কে পাঠিয়েছে, কেনো এসছে, ফাইলটা কোথায় সব
.
শুনেই আমার আত্না কেপে উঠেছিল, সাথে নিয়ে যাবে মানে কী? ওখানে নিয়ে কী করবে আমার সাথে? সাহস দেখিয়ে এমন একটা কাজ করলেও এখন আমার ভীষণ ভয় করছে, এসব ভাবতে ভাবতেই সেই লোকটা আমায় টেনে নিতে লাগল। আমি কান্না করে দিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম
.
– আমি সত্যি কিছু জানিনা, আমি এখানে শুধু ঘুরতে এসেছিলাম, প্লিজ আমাকে যেতে দিন! আমি আর ভূলেও কখনো এদিকে আসবোনা
.
লোকটা ঘুরে আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে বললো
.
– সেটা তোমার এখানে ঢোকার আগে ভাবা উচিত ছিলো।
.
পাশের লোকটা বলল
.
– তবুও যদি তুমি বলে দাও যে ফাইলটা কোথায় রেখেছো তাহলে আমরা ছেড়ে দেবো তোমাকে
.
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতেই বললাম
.
– আমি সত্যিই জানিনা কিচ্ছু, ক্ কীসের ফাইলের কথা বলছেন আপনারা?
.
পাশে থাকা লোকটাও এবার হুংকার দিয়ে বলল
.
– এভাবে হবেনা। ঐ দরিটা নিয়ে আয়।
.
চমকে তাকালাম লোকটার দিকে দরি দিয়ে কী করবে? এরাকি সত্যিই আমাকে এদের সাথে নিয়ে যাবে নাকি? যদি সত্যিটা না বললে মেরে ফেলে আমাকে? ফেললে ফেলুক কিন্তু আমি বলবোনা ফাইলটা কোথায় আছে! দরিটা এনে লোকটার হাতে দিলো আমাকে বাধতে নিলেই আমি চিৎকার করে বললাম
.
– প্লিজ ছাড়ুন আমাকে। আমি জানিনা কিছু প্লিজ!

কিন্তু লোকটা কিছু না শুনে আমার হাত পেছনে নিয়ে বেধে দিয়ে মুখটাও কাপড় দিয়ে বেধে দিলো। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না কিন্তু আরো বেশি ছটফট করতে লাগলাম আর ইশারায় অনুরোধ করতে লাগলাম যাতে ছেড়ে দেয় আমাকে! কিন্তু সেদিকে তাদের কোনো খেয়ালি নেই তাড়া আমাকে নিচে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো তারপর গাড়ি স্টার্ট করলো। সবকিছুই এরা খুব দ্রুত করলো যেনো কেউ তাড়া করেছে। আমি ছটফট করে যাচ্ছি তাই ওদের মধ্যে একজন বিরক্ত হয়ে ভীষণ জোরে ধমক দিলো, ধমক খেয়ে আমি চুপ হয়ে গেলাম, চুপচাপ বসে কাদতে থাকলাম। খুব দ্রুত চলছে গাড়িটা, হঠাৎ আজানের শব্দ শুনতে পেলাম এতোক্ষণে নিশ্চই বাড়ির সবাই খুজে মরছে আমাকে। ওদের কথা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে খুব। হঠাৎ গাড়ি থামলো। গাড়ি থামার সাথে সাথেই আমাকে টেনে বের করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা হয়তো এদের সেই গোডাউন। আমি ভয়ে ভয়ে তাকালাম লোকগুলোর দিকে। একটা লোক একজনকে ইশারা করতেই আমার মুখে কাপড়টা নামিয়ে দিলো তারপর বলল
.
– বয়স কতো?
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম লোকটার দিকে? এখন কী আমার বায়োডেটা বানাবে নাকি? আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বলল
.
– বলো!
.
আমি চমকে গিয়ে কাপা কাপা গলায় বললাম
.
– প্ পনেরো
.
লোকটা হালকা হাসলো সাথে বাকি দুজন ও। তারপর লোকটা এক হাটু ভেঙ্গে বসে বলল
.
– এখনোতো লাইফের ওয়ান ফোর্থ ও পার করোনি, এতো তাড়াতাড়ি মরার শখ হলো যে?
.
আমার এবার ভীষণ ভয় করছে? সত্যিই কী মেরে ফেলবে নাকি আমাকে? আমি ভয়ে কাদোকাদো গলায় বললাম
.
– আমি সত্যিই জানিনা..
.
আর কিছু বলার আগেই লোকটা ধমকে বলল

– চুপ! আমাদের বোকা মনে হয় তোমার? ফাইলটা গায়েব ঠিক সেই সময় তুমিই ছিলে ওখানে আর অতো অল্প সময়ে অন্য কারো যাওয়া সম্ভব না তাই ড্রামা অফ করে বলে দাও কী করেছো ফাইলটা?
.
– আমি জানিনা।
.
দাড়িয়ে থাকা লোকটা এবার ভীষণ রেগে গিয়ে বলল
.
– ধ্যাত! জানিনা জানিনা এক গান লগিয়ে রেখেছে। শেষ বারের মতো ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করছি কী করেছো ফাইলটা নইলে তুমি নিজেও জানোনা কী হবে তোমার
.
এমনিতেই এর ধমক শুনেই কেদে দিয়েছি তার ওপর এসব হুমকি শুনে কান্নার বেগ বেরে গেলো! সেটা দেখে লোকটা আরো জোরে ধমকে বলল
.
– এই চুপ যত্তসব ন্যাকা কান্না! এই মেয়ে এভাবে মুখ খুলবেনা
.
বলেই কেচি জাতীয় কিছু একটা নিয়ে এলো, কিন্তু ধারালো না, মানে কাঠের এটা দিয়ে কিছু কাটা যাবেনা। এসে আমার সামনে বসে থাকা লোকটার হাতে দিলো। লোকটা হাতে নিয়ে বলল
.
– ফাইলটা কোথায় রেখেছো!
.
আমি কিছুই বললাম না শুধু মাথা নিচু করে কাদতে ছিলাম। লোকটা হঠাৎ আমার হাতের বাধন খুলে দিলো আমি বিষ্মিত চোখে তাকালাম। এরপর আমার বা হাত সামনে নিয়ে এসে মাঝখানের দুটো আঙ্গুল ধরল। আমি এখোনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি বুঝতে চাইছি যে কী করতে চাইছে এরা? হঠাৎ ই লোকটা আমার আঙ্গুল দুটো ওই ধারহীন কাঠের কেচিটার মাঝখানে রেখে জোরে চাপ দিলো! আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। লোকটা যেনো তাতেই পৈশাচিক আনন্দ পেলো। আরেকটু চাপিয়ে ধরে বলল
.
– বলো কী করেছো ফাইলটা?
.
ব্যাথায় অবস্হা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার, অনেক কষ্টে বললাম
.
– অ্আমি কোনো ফ্ফাইল দেখিনি।
.
আমার উত্তর হয়তো লোকটাকে আরো রাগিয়ে দিলো, আরো জোরে চাপ দিয়ে বলল
.
– ওহ দেখতেই পাওনি?

ব্যাথায় এবার জোরে জোরে কাদছি আমি কাদতে কাদতেই মাথা নেড়ে না বললাম, আমার হাত দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে। লোকটা এবার বিরক্ত হয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
.
– এভাবে বলবেনা ও ওই শিকটা গরম করে নিয়ে আয়
.
ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসে রইলাম। গরম শিক আনতে বলছে? এর মধ্যেই গরম শিক নিয়ে চলে এলো। শিকটার গা দিয়ে ধোয়া উড়ছে সেটা দেখেই ভয়ে আমি এবার বেশ শব্দ করেই কেদে দিলাম, লোকটা শিকটা নিয়ে আমার কাছে বসে বলল
.
– আমি চাইছিনা এটা ইউস করতে। তুমিকি বলবে নাকি?
.
– আমি জানিনা ( চিৎকার করে কেদে)
.
লোকটা আমার হাতে চেপে ধরল শিকটা আর আমি প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। এতোটা যন্ত্রণা সহ্য হলো না আমার তাই আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পরলাম, হঠাৎ পুলিশের গাড়ির হুইসেল এ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
.
– ওহ সিট! পুলিশ কীকরে চলে এলো
.
আরেকজন বলল
.
– এসব ভাবার সময় আর নেই পালাতে হবে!
.
– ফায়ারিং ও তো করতে পারি?
.
– আরে না না প্রিপারেশন নেই, টিকতে পারবোনা চল ভাগ ( সব গোছাতে গোছাতে)
.
– কিন্তু এই মেয়েটা?
.
– আরেহ এই মেয়েটাকে কী করবো
.
– একে নিয়ে ভাবার সময় নেই চল ভাগ
.
– ফাইল। (থেমে গিয়ে)
.
– কিচ্ছু করার নেই চল আয়
.
বলেই টেনে নিয়ে গেলো, আমাকে ওখানেই ফেলে দিয়ে চলে গেলো। সারাদিন না খেয়ে থাকা আর পোরা আর কাটা হাতের যন্ত্রণার কারণে আস্তে আস্তে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
.
আস্তে আস্তে চোখ খুললাম, আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম কোনো হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি। মাথা চেপে ধরে আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম হাতে ব্যান্ডেজ আঙ্গুলেও ব্যান্ডেজ করা। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন লোক ঢুকলো ভেতরে তার পোশাক দেখে বুঝলাম পুলিশ অফিসার। আমার পাশে বসে বলল
.
– এখন কেমন লাগছে?
.
আমি নিজেকে সামলে আসতে আসতে বললাম
.
– ভালো!
.
– কী নাম তোমার?
.
– অনিমা
.
– ওখানে কীকরে পৌছালে তুমি?

আমি ভাবলাম যে ফাইলের কথা অফিসারকে বলা যাবেনা। এর পেছনে কোনো লজিক আমার মাথায় আসে নি। শুধু এইটুকুই মনে হয়েছে যে এখন কিছু বলা যাবে না তাই আস্তে করে বললাম
.
– আমি বাড়ি যাবো।
.
অফিসার কিছু একটা ভেবে আমার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে আমার ফ্যামিলি মেমবারদের ডাকলো। তারপর হসপিটালেই আমাকে খাওয়ানোর ব্যাবস্হা করলো। আব্বুরা এসে আমাকে বাড়ি নিয়ে গেলো। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল যে কী হয়েছিলো আমার সাথে। ওদেরকে সবটা খুলে বললাম। সবটা শুনে আব্বু বলল
.
আব্বু: এভাবে হুটহাট করে তোমার ওখানে যাওয়াটা ঠিক হয়নি, হাবিবা যখন হাফাতে হাফাতে এসে আমাদের সবটা বলল তখন কী গেছিলো আমাদের ওপর দিয়ে বুঝতে পারছো?
.
আম্মু: বার বার তোকে বলেছি নিজের খেয়াল খুশি মতো চলা বন্ধ কর এখন দেখলিতো কোন বিপদে পরলি?
.
আব্বু: আচ্ছা হয়েছে। মামনী ফাইলটা কী তুমি পুলিশকে দিয়ে এসছো?
.
আমি মাথা নেড়ে না বললাম। হঠাৎ আমার মনে পরলো ওই ফাইলটাতো ওখানেই পরে আছে, যদি ওদের হাতে পরে যায়? আমি তাড়াতাড়ি সজীব ভাইয়াকে বললাম
.
– ভাইয়া তোমাকে বাইকটা বের করো
.
– কেনো?
.
– শ্যামলী নিয়ে চলো আমাকে।
.
– পাগল হয়ে গেছিস বুড়ি? এই শরীর নিয়ে শ্যামলী যাবি?
.
আম্মু: কোথাও যেতে হবে না চুপচাপ বসে রেস্ট করো
.
আমি আম্মুর কথায় পাত্তা না দিয়ে বললাম
.
– ভাইয়া চলো।
.
আব্বু: কিন্তু করতে কী চাইছো?
.
আমি: এসে বলছি।
.
বলেই ভাইয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম আর সৌভাগ্য ক্রমে ফাইলটা ওখানেই ছিলো কারো হাতে পরেনি ওটা নিয়ে বাড়ি চলে এলাম।
.
এতোক্ষণ আদ্রিয়ান চুপচাপ আমার কথা শুনছিলো বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
.
– বুঝলাম
.
– কী বুঝলে?
.
– আমার বউটা একটু বেশিই সাহসী। যতোটা পিচ্ছি ভাবতাম অতটাও না। ( আমার গাল টেনে)
.
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে কেমন গা ছাড়া ভাব একটুও অবাক হলনা আমার কথা শুনে যেনো এসব ন্যাচরাল। নিরবতা ভেঙ্গে ওই বলল
.
– পুলিশকে কেনো দিলেনা ফাইলটা?

– প্রথমে ভেবেছিলাম দিয়ে দেবো, কিন্তু পরে এইটা মাথায় এলো যে ঐ সফটওয়্যার এর মেইন হলো কোড টা, আর ঐ কোডটা লিক হওয়ার জন্যে পুলিশের পকেটে কটা টাকা ভরে দেওয়াই এনাফ। তাই আম্মু এতো বার বলা সত্যেও দেই নি পুলিশকে ওটা। ভরসা করতে পারিনি।
.
– হুমমম ঠিকি করেছো দিয়ে দিলে আসলেই প্রবলেম হয়ে যেতো। ( চিন্তিত স্বরে)
.
– মানে?
.
– নাথিং…তো এই হলো কাহিনী?
.
– হ্যা।
.
– তবে তুমি ঠিকি বলেছো, পুলিশকে ভরসা করা যায়না। যদি যেতো তাহলে..
.
– তাহলে?
.
– কিছুনা বাই দা ওয়ে! ফুল মুন নাইট আছে, তুমি আছো আমি আছি, সময়টা ঐসব কথা বলে ওয়েস্ট করার কী দরকার। তার চেয়ে বরং…
.
বলেই রেলিং থেকে নেমে দুই হাতে আমার কোমর জরিয়ে ধরে একদম কাছে নিয়ে এলো। ও টাচ করলেই সব ভূলে যাই আমি শরীর কাপতে থাকে,নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে, গলার স্বর আটকে যায়। আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
.
– ত্ তোমার মাথায় কী স্ সবসময় এগুলোই চলে নাকি? সময় নেই অসময় নেই ম্ মুডে চলে আসো
.
– তোমাকে দেখলে মুড এমনিই চলে আসে বেইবি
.
বলেই চোখ মারলো আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও আমার কোমর ধরে নিজের সাথে আরো গভীরভাবে মিশিয়ে নিলো। এরপর আস্তে আস্তে মুখটা এগিয়ে আনতে লাগলো, আমি কাপা গলায় বললাম
.
– ক্ কী কর্ করছো?

ও কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে ফিসফিসে গলায় বলল
.
– হুসস। Keep your mouth shut..
.
বলেই আবারো মুখটা এগিয়ে আনতে শুরু করলো আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম ওর নিশ্বাস আমার মুখে পরতেই আমি ওর টি শার্ট খামচে ধরলাম। ও হালকা করে আমার ঠোটে ঠোট ছুইয়ে সাথে সাথেই সরিয়ে নিলো। চমকে তাকালাম আমি এই প্রথম আমার ঠোটে স্পর্শ করলো ওও, সেটা এক সেকেন্ডের জন্যে হলেও করেছে তো, ওর চোখে চোখ পরতেই লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। ও থুতনি ধরে মুখটা উচু করতেই আমি চোখ বন্ধ করেই একটু নরে বললাম
.
– আদ্রিয়ান ছাড়ো।
.
– বললেই হলো? ছাড়ার জন্যে ধরেছি নাকি? আর আমার বউকে আমি আদর করছি তুমি বারণ করার কে?
.
বলে আমার বন্ধ দুচোখের পাতায় চুমু দিলো, আমি আরো শক্ত করে আকরে ধরলাম ওকে। এরপর দুই গালে পরপর দুটো কিস করে আমার নাকে নাক ঘষে
দিলো। আমি এখনো চোখ বন্ধ করেই ওর টি শার্ট খামচে ধরে আছি। ও আমার কানের লতিতে আলতো করে একটা বাইট করলো কেপে উঠলাম আমি। চোখ খুলে ফেললাম। ও কানে ফিসফিসিয়ে বলল
.
– এভাবে খামচে ধরে কিন্তু পাগল করে দিচ্ছো, পরে এই পাগলের পাগলামি গুলো সহ্য করতে পারবে তো?
.
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলাম। ও এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে কিস করতে শুরু করলো, আমি চোখ বন্ধ করে ওর হাত ধরলাম। একপর্যায়ে স্পর্শ গুলো এতোই গভীর হচ্ছিলো যে না পেরে আমি ঘুরে ওকে জরিয়ে ধরলাম। ওও দুহাতে আকরে ধরল আমাকে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর ও বলল
.
– একটা কথা ভাবলাম!
.
– কী?
.
– আমার বউটা মিথ্যেও বলতে পারে!
.
– কী মিথ্যে বললাম? ( অবাক হয়ে)

– তোমার কাছে ফাইলটা থাকা সত্যেও কী সুন্দর বললে যে জানো না!
.
– বড় কোনো ভালোর জন্যে মাঝে মাঝে ছোট খাটো মিথ্যে বলাটা অন্যায় না।
.
ও আমাকে সরিয়ে আমার দুই বাহুতে হাত রেখে বলল
.
– তুমি সত্যি এটা বিশ্বাস করো?
.
– হুম করিতো
.
– তারমানে কোন ভালো কাজের জন্যে যদি আমি তোমাকে কোনো মিথ্যে বলি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেবে?
.
আমি অবাক চোখে তাকালাম ওর দিকে তারপর মুচকি হেসে বললাম
.
– তুমি বলবে মিথ্যে তাও আমাকে হতেই পারেনা
.
ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো আমি কিছুই বুঝলাম না। তাই আমিও চুপচাপ ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। বেশ খানিক্ষণ পর ও বলল
.
– ফাইলটা কোথায় অনি?
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে হঠাৎ ও এই কথা জিজ্ঞেস করবে আশা করিনি। কাউকেই বলিনি কোথায় আছে ওটা ওকে বলব? ওকে তো বলাই যায় ফাইলটার ব্যাপারে, আদ্রিয়ানই তো কী বা হবে বললে?
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে হঠাৎ ও এই কথা জিজ্ঞেস করবে আশা করিনি। কাউকেই বলিনি কোথায় আছে ওটা, ওকে বলব? ওকে তো বলাই যায় ফাইলটার ব্যাপারে, আদ্রিয়ানই তো কী বা হবে বললে? যেই ওকে বলে দিতে যাবো ঠিক তখনি মাথায় এলো যে কী করছিলাম আমি? আমার ফ্যামিলির সবাই এতো করে জিজ্ঞেস করার পরেও বলিনি কারণ আমি ছাড়া অন্য কেউ জানা মানে তার জীবটাও বিপদে ফেলা। আমি নিজের জীবনকে বিপদে ফেলেছি কিন্তু আমার কাছের মানুষের জীবন বিপদে ফেলতে পারবো না। তাই আদ্রিয়ানকে বলে দিয়ে ওর লাইফ রিস্ক বাড়াতে পারবো না। তাই ইতস্তত করে বললাম
.
– হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে যে?
.
ও আকাশের দিকে তাকিয়েই ধীর কন্ঠে বলল
.
– এটাইকি উত্তর?

আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে বললাম
.
– নাহ মানে…
.
ও হুট করেই এসে আমাকে পেছন থেকে দু হাতে আকরে ধরে বলল
.
– আরে পাগলী.. আমি জাস্ট নরমালি জিজ্ঞেস করেছি, না বলতে চাইলে বলতে হবে না, এটা নিয়ে এতো গভীর ভাবনায় পরে যাবার কিচ্ছু হয়নি।
.
– আদ্রিয়ান ফাইলটা…
.
– যেখানেই থাক সেভ আছে তো এতেই হবে।
.
– আ’ম সরি। বাট এটা তোমার সেভটির বিষয় তাই..
.
ও আমাকে ওর ঘুরিয়ে আমার দু কাধে হাতের কনুইয়ের দিকটা রেখে ঘারে পিছনের দিকে দু হাত এক করে রেখে বলল
.
– আমার সেভটি নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা মেডাম। আপনি নিজের কথা ভাবুন।
.
আমি মুচকি হেসে ওর পেটের সাইডে হাত রেখে বললাম
.
– সেটার জন্যতো তুমি আছো..
.
– আর আমি যখন থা..
.
ওর আর কিছু বলার আগেই আমি ওকে জরিয়ে ধরলাম কারণ এরপর ও কী বলবে আমি জানি আর সেটা শুনতে আমি মোটেও ইচ্ছুক নই। ও দুহাতে নিজের সাথে আকরে ধরল আমাকে। বেশ খানিক্ষণ পর বলল
.
– এখোনো ঘুম আসছে না?
.
– আসছে না তো!
.
হঠাৎ ই কোলে উঠিয়ে নিলো আমাকে আমি বোকার মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু ওর সেদিকে পাত্তা নেই ও ছাদে রাখা দোলনায় আমাকে বসিয়ে দিলো। তারপর নিজে হেলাম দিয়ে বসে আমাকে টেনে ওর বুকে শুইয়ে একহাতের আঙ্গুল গুলো দিয়ে চুলগুলো নাড়তে থাকল বাট কিছু বললো না। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও বলল
.
– এখন কিছু বলতে হবে না চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো।
.
আমিও আর কিছু না বলে ওকে আকরে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলাম, কখন ঘুমিয়ে পরেছি নিজেই জানিনা।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে রুমের বেডে আবিষ্কার করলাম। আস্তে করে উঠে বসলাম, রাতের কথা মনে পরতেই বেশ অবাক হলাম আমিতো ছাদে ছিলাম! পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম এটা কার কাজ। ছাদ থেকে রুমে নিয়ে এলো টের ও পেলাম না? ঘরিতে তাকিয়ে দেখি এগারোটা বাজে। হায় আল্লাহ বিয়ের আগেই শশুর বাড়িতে এতো দেড়িতে ঘুম থেকে উঠি। অন্যকোনো পরিবার হলে নির্ঘাত কথা শোনাতো। কিন্তু ভাগ্য করে এমন পরিবার পেয়েছি। যেখানে নিজের বাবা মার মতো শশুর শাশুড়ি আছে, বন্ধু প্লাস বোনের মতো ননদ আছে, এন্ড মোস্ট ইমপর্টেন্টলি এতো ভালো একজন লাইফ পার্টনার আছে, যে আমাকে এতো ভালোবাসে।

এসব ভেবেই ওয়াসরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। প্রায় এক ঘন্টার মতো সাওয়ার নিয়ে একটা স্লিভলেস হোয়াইট গেন্জি আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরেই বেরিয়ে এলাম। রুমে এসেই চেন্জ করবো ভাবছিলাম তাই ওগুলো পরেই বেরিয়েছি, ওয়াসরুমে লং ড্রেসেজ চেন্জ করতে প্রবলেম হয় তাই। টাওয়াল দিয়ে আয়নার সামনে চুল মুছছি হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে আয়না দিয়েই তাকালাম। ও নো! আমিতো দরজা লক করতেই ভুলে গেছি। আদ্রিয়ান রুমে বলতে বলতে ঢুকলো
.
– অনি তোমার হয়নি আমি কখন..
.
আমার দিকে তাকিয়েই ও থমকে গেলো। আমি আয়না দিয়েই ওকে দেখছিলাম কিন্তু ওর চাহনী দেখে আস্তে আস্তে ঘুরে ওর দিকে তাকালাম বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, দেখারি কথা কারণ এভাবে তো এর আগে ও আমাকে দেখেই নি, ওও একটা ব্লাক বক্সার আর টাওজার পরে আছে, আমার তো কাপুনি শুরু হয়ে গেছে ভেতর দিয়ে। আমি একবার ওকে দেখছি একবার নিজেকে। নিজেকেই নিজের ব্রিটিশ স্টাইলে গালি মারতে ইচ্ছে করছে যে কেনো এভাবে বেরোলাম। ও আস্তে করে ভেতরে ঢুকে দরজাটা লক করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। সেটা দেখে তো আমার অবস্হা খারাপ, আমিতো ভাবলাম আমাকে এভাবে দেখে ও বাইরে চলে যাবে। কিন্তু এতো উল্টোটাই করলো মতলব কী ওর? আমিও যা কার কাছে কী আশা করছিলাম, ওর কাছ থেকে এতো ভদ্রতা আশা করাই দুরাশা। ও আস্তে আস্তে এগোচ্ছে আমার দিকে ওর চোখে অন্যরকম মাদকতা দেখছি আমি, আমি তাড়াতাড়ি টাওয়াল টা নিজের গায়ে জরিয়ে নিলাম। কিন্তু ওর মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না একই ভঙ্গিতে এগোচ্ছে আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছি পেছোনোর প্রশ্নেই ওঠে না কারণ আমার একটু পেছনেই বেড তাই এই মুহুর্তে পেছোনোটা আরো বেশি বিপদজনক। ও একপা একপা করে একদম আমার কাছে চলে এলো, কিছুক্ষণ ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। আমি পাশ কাটাতে চাইলে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল

– এভাবে পাগল করে দিয়ে পালাতে চাইছো? তাতো হবেনা। পাগল যখন করেই দিয়েছো তখন পাগলের পাগলামিও সহ্য করো এবার
.
একেই ওর এতোটা কাছে আসা তার ওপর ওর এসব কথা শুনে আমার অবস্হা একেবারেই করুন। আমি যে কিছু বলবো সেই শক্তিটুকুই পাচ্ছি না কাপুনির জন্য। ও এবার আমায় নিজের সাথে আরেকটু গভীরভাবে জরিয়ে নিয়ে নেশাক্ত বলল
.
– এভাবে আমার সামনে এসে পরাটা তোমার উচিত হয়নি!
.
আমার কাপুনি বেড়েই চলেছে। ওর গলার ভয়েজ আর শব্দগুলোও আমাকে কাপিয়ে রেখে দিচ্ছে। ওর ক্রমশ ঘন হতে থাকা নিশ্বাস আমার শরীরে আছড়ে পরছে। আমি কিছু বলার আগেই ও আমার গায়ে জরিয়ে রাখা টাওয়াল টা ধরল। আমি আকড়ে ধরলাম ওটা কিন্তু লাভ হলো না ও আস্তে আস্তে টেনে টাওয়ালটা গা থেকে সরিয়ে দিলো, আমি পুরো ফ্রিজ হয়ে গেছি ওর কাজে, আমার পরনের গেন্জিটা একটু শর্ট, কোমর অবধি টায় টায় হয় আর কি। ও ওর দুহাত আমার কোমরে রাখল, গেন্জিটা হালকা উপরে তুলে পেটে স্পর্শ করতেই কেপে উঠলাম আমি, ওর দিকে বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে থাকা চোখ দুটু আবেশে বন্ধ হয়ে গেলো। আমার কাপুনি আজকে থামার নামি নিচ্ছেনা, হঠাৎ ফিল করলাম ওর নিশ্বাস আমার মুখ থেকে এবার গলায় পরছে, গলায় ওর ঠোটের স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথেই ওর পিঠ আকরে ধরলাম আমি, গলায় মুখ রেখেই স্লো ভয়েজে বলল
.
– একেই তো এভাবে কাপছো তারওপর খামছে ধরে আছো। পরে কিছু করলে বলবে আমি অসভ্য

ওর কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলার মতো ক্ষমতা আমার এই মুহুর্তে নেই তাই চুপ করে আছি ওর স্পর্শগুলো ক্রমশই ভারী হচ্ছে আর আমি নিজেরর ঠোট কামড়ে ধরে তা সহ্য করে যাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষণ পর ও গলা থেকে মখ সরিয়ে নিলো। আর ওর চোখ গেলো আমার বা হাতে বাহুর ওপর থাকা তিলটার ওপর কিছুক্ষণ ওটার দিকে তাকিয়ে থেকে ঝুকে তিলটার ওপর পরপর তিনটে চুমু দিলো। কোমরে আরেকটু স্লাইড করতেই আমি ওকে ছাড়িয়ে আয়নার সামনে দাড়ালাম। ও আস্তে আস্তে এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখল। আমার দৃষ্টি নিচে আর ওর দৃষ্টি আয়নায় আমার প্রতিবিম্বের ওপর। ও আমার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিলো তারপর পিঠ থেকে চুলগুলো সরিয়ে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, সেটা বিরক্তির নয় অন্য কিছুর জন্য, যেটা আমি আয়নার প্রতিবিম্বে দেখেছি। ও ভ্রু কুচকেই বলল
.
– অনি ডু ইউ নো তোমার ওপর পিঠে বেশ সুন্দর একটা তিল আছে?
.
বেশ অবাক হয়ে বললাম
.
– কোথায়?
.
ও মুচকি হেসে আমার কাধ থেকে চার পাচ ইঞ্চি নিচে পিঠের মাঝখানে একটা কিস করল, আমি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে ওর হাট খামচে ধরলাম, তারপর ও বলল
.
– ঠিক এইখানে।

আমি অবাক হলাম আসলেই জানতামনা ওই তিলটার ব্যাপারে, ও কানের কাছে মুখ এনে বলল
.
– এখোনো তো অনেক কিছুই জানানো বাকি মেডাম, যা যা তোমার অজানা আছে নিজে জেনে সব জানিয়ে দেব তবে ধীরে ধীরে। এখোনোতো আরো অনেক কিছুই জানা বাকি তোমার আর আমারো।
.
আমি চোখ বন্ধ করে ওর হাত শক্ত করে ধরে আছি ওর প্রতিটা কথা আমাকে কাপিয়ে দিচ্ছে, হার্টবিট যেনো দৌড়াচ্ছে। ও আমাকে আস্তে করে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিলো তারপর গেন্জির নিচ দিয়ে কোমরে ধরল ওর এই স্পর্শে যেনো আমার পুরো শরীর অসাড় হয়ে পরছে, তারপর ও আমাকে একটু উচু করে ধরে প্রথমে ডানগালে আলতো কিস করল পরে বা গালে আমি চোখ বন্ধ করে ওর ছোয়াকে অনুভব করছি এরপর ও আমার দিকে আরেকটু ঝুকতে গেলেই দরজায় নক পরল, আমি চোখ খুললাম কিন্তু আদ্রিয়ান এর হুস নেই ও আমার ডানগালে আরো একবার কিস করলো, দরজায় আবারো নক পরায় আমি ওকে ডাকলাম
.
– আদ্রিয়ান?
.
– হুম? ( ঘোরের মধ্যে )
– আদ্রিয়ান দরজায় নক পরছে ? ( একটু জোরে)
.
আমার আওয়াজে ওর হুস এলো। খুবি বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকে একবার আমার দিকে তাকালো তারপর দরজার দিকে। মুখ বিরক্তির ‘চাহ’ টাইপ শক্ত করে বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। ওর ঐ অবস্হা দেখে আমার পেট হেসে হাসি আসছে কিন্তু বহুত কষ্টে সেটা চেপে রাখতে হলো কারণ এই মুহূর্তে হাসলে ফর সিওর ও আমাকে থাপ্পড় মারবে। তাই ঠোট চেপে হাসছি ও আমার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে তাকাতেই একটা ইনোসেন্ট মার্কা লুক নিয়ে বললাম

– কে?
.
– ভাবী আমি..!
.
আদ্রিয়ান বিরবির করে বলল
.
– হ্য তাতো অবশ্যই এই সময় এভাবে এসে মুডের বারোটা বাজাতে একমাত্র ওই পারবে।
.
আমি একটা ওরনা গায়ে জরিয়ে নিলাম তারপর দরজা খুলতে ই দেখলাম জাবিন দরজায় দাড়িয়ে দাত কেলাচ্ছে। জাবিন একটু উকি দিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান খাটে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। সেটা দেখে ওর হাসির রেখা আরো বড় হলো, হাসতে হাসতে বলল
.
– কী চলে?
.
সত্যি বলতে আজকে ওর এই ভূল সময়ে এন্ট্রি আমার মেজাজটাও একটু..বেশি না জাস্ট একটু বিগড়ে দিয়েছি তাই আমিও উলতো দাত কেলিয়ে বললাম
.
– ফগ চলছে।
.
আমার উত্তরে আমার ননদিনী একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। নিজেকে সামলে ভেতরে ঢুকে কোমরে হাত দিয়ে বলল
.
– ভাইয়া তোকে এখানে পাঠানো হলো ভাবীকে ডেকে দেবার জন্যে আর তুই এখানেই সেট হয়ে গেলি? কী করছিলি রে?

আদ্রিয়ান প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকে জাবিনের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল
.
– তোর ভাবীকে মুগল সম্রাজ্যের পতনের কারণ বলছিলাম
.
জাবিন চিন্তিত ফেস বানিয়ে বলল
.
– আচ্ছা ভাবীতো সাইন্সের স্টুডেন্ট সেটা জেনে ভাবী কী করবে? আর তুইও তো সাইন্স নিয়েই পরেছিস তাহলে। তাহলে মুগল সম্রাজ্যের পতনের কারণ তুই কী করে জানিস?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– আমি কীকরে জানি মানে কী? ভূলে গেছিস আমি ওলরাউন্ডার।
.
– বিশ্বাস কর আমি জানতাম তুই ওলরাউন্ডার হলেও একটা দিক দিয়ে তুই আনারি সেটা হলো প্রেম আই মিন রোমান্স, জীবনেও কোনো মেয়ের ধারে পারেও যেতে দেখলাম নাহ। কিন্তু ভাবি আসার পর তো তুই হাই লেভেলের রোমান্টিক হয়ে গেছিস রে!
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে দু হাত ভাজ করে বোনের কথা শুনছে। জাবিন একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে শুরু করল
.
– না দেখ রোমান্টিকতার দিক দিয়ে তোর কতো উন্নতি হয়েছে? ভাবির রুমে ঢুকলে তুই দরজা লক করিস তো করিস, নক করার আগে লক আর খোলে না, মা বাবাও সেই জন্য আমাকে ডাকতে পাঠালো। কী লজ্জা বলতো!
.
আদ্রিয়ান দাড়িয়ে হাত আবারো ভাজ করে বলল

– তুই যাবি?
.
জাবিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
.
– তা তো যাবোই কিন্তু তুই এতো রোমান্টিক কীকরে হলি বলতো?
.
আদ্রিয়ান এবার রাগে কটমট করে বলল
.
– তুই যাবি না তাইনা?
.
– আরেহ রেগে যাচ্ছিস কেনো? যাচ্ছিতো। ভাবি আম্মু তোমাকে নিচে যেতে বলেছে।
.
বলেই কিছুটা যেয়ে কিছু একটা ভেবে আবারো ফিরে তাকিয়ে দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল
.
– বাই দা ওয়ে ভাইয়া মোগল সম্রাজ্যের পতনের কারণ কী ছিলো?
.
আদ্রিয়ান এবার তেরে গিয়ে বলল
.
– তোকে তো..!
.
জাবিন কে আর কে পায়? আদ্রিয়ান দরজা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেলো তারপর আমার দিকে তাকালো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। কোনোরকমে হাসি থামিয়ে ও বলল
.
– চেন্জ করে নিচে এসো!

বলেই চলে গেলো। তারপর আমিও চুল শুকিয়ে চেন্জ করে নিচে চলে গেলাম। নিচ গিয়ে দেখলাম সবারি খাওয়া শেষ শুধু আদ্রিয়ান বসে বসে তবলা বাজানোর স্টাইলে শব্দ করছে আমি গিয়ে বসতেই ও বললো
.
– তোমার জন্যে ওয়েট করতে করতে আমিতো হাফ ডেট। একটু বেশিই ওয়েট করাও ইয়ার!
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আন্টি এসে বলল
.
– দরকার হলে সারাদিন ওয়েট করবি তোর আর কী কাজ বল?
.
আদ্রিয়ান বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল
.
– সেই ! আমার আর কী কাজ বল? এতোসব খেতাবি তো লোকে আমার চেহারা দেখে দিয়েছে না?
.
জাবিন এন্ট্রি নিতে নিতে বলল
.
– তোর যা চেহারা দিতেই পারে!
.
আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আন্টির দিকে তাকিয়ে বলল
.
– আমিতো ওয়েট করেছিই। তিনবছর ওয়েট করেছি এখোনো ওয়েট করছি কিন্তু দেখো এমন দিন ও আসতে পারে যে তোমার বউমা সরি সরি মেয়েই আমার জন্যে ওয়েট করতে করতে অতিষ্ট হয়ে যায়?

এটা শুনে আমি খাওয়া ছেড়ে ওর দিকে তাকালাম তারপর ভেংচি কেটে বললাম
.
– বয়েই গেছে ওয়েট করতে
.
ও হেসে বলল
.
– হ্যা তাতো দেখতেই পেয়েছি। এক সপ্তাহ ছিলাম না তাতেই কেদে সমুদ্র করে ফেলেছে, আর তিনদিন হসপিটালেই পরে ছিলো
.
আমি মুখ ফুলিয়ে খাওয়ায় মনোযোগী হলাম কারণ কি আর বলবো? এভাবেই আরো দুই মাস পার হয়ে গেলো এর মধ্যে বাড়িও ফিরে এসছি। এই দুই মাস আরো সুন্দর ভাবে কেটেছে। ওর সাথে কাটানো বেশ কিছু মেমোরেবল মুহূর্ত তৈরী হয়েছে। মাঝরাতে হুটহাট করে আমাদের বাড়িতে চুপি চুপি এসে পরা, রাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘুরতে বেরোনো, নানারকম খুনসুটি আর কিছু ভালোবাসার মুহূর্ত দিয়েই কেটে গেলো।
.
রুমে বসে রেডি হচ্ছি কারণ আছ রাতে ডিনারের ইনভেটেশন আছে আদ্রিয়ানদের বাড়িতে। আমিতো বেশ খুশি দুই দিন পাক্কা দুই পর দেখবো ওকে। আমারো মেডিকেল অফ আর ওরো একটু চাপ বেশি কাজের। কানের দুল পরছি তখন আপি এসে বলল
.
– খুব খুশি খুশি লাগছে
.
আমি কিছু বললাম না জাস্ট আপির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দুল পরা কম্প্লিট করলাম। আপি হেসে বলল
.
– বাহবা আবার লজ্জা পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি নিচে আয় লেইট হয়ে যাবে তো।

– ওয়েট আসছি।
.
আপি চলে গেলো আমিও রেডি হয়ে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে বেরিয়ে গেলাম। এরপর সন্ধ্যের মধ্যেই পৌছে গেলাম ঐ বাড়িতে। কিন্তু ড্রয়িং রুমে সবাই থাকরেও আমার হিরোকে দেখতে পেলাম না। সবাই নানা কথা জিজ্ঞেস করছে আর আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিচ্ছি। কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছিনা হঠাৎ জাবিন বলল
.
– ভাবি কেমন আছো?
.
আমি এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বললাম
.
– ভালো
.
– ভাইয়াকে খুজছো?
.
– হুম,( অন্যমনস্ক হয়ে) নাহ! ইয়ে মানে
.
– ওপরে চলে যাও রুমে আছে

এই প্রথম মেয়েটা একটা ভালো কাজ করলো ইচ্ছে করছে একটা কিস করে দি। কিছু না ভেবেই আস্তে আস্তে ওপরে চলে গেলাম। ওর রুমের দরজা চাপানো আমি দরজায় দাড়িয়ে ভেতরে ঢুকবো কী ঢুকবোনা ভাবতে ভাবতেই চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুললো আদ্রিয়ান আর আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো যা আমাকে পাগল করতে যথেষ্ট। একটা বক্সার আর টু কোয়াটার প্যান্ট পড়া, চুলগুলো এলোমেলো, কপাল পুরো ভরতি ওর এলোমেলো চুলে বুঝতে পারলাম ঘুম থেকে উঠেছে। দু দিন পর ওকে দেখে মুচকি হেসে পা উচু করে ওর কাধে থুতনি রেখে জরিয়ে ধরলাম আমি ওও সাথেই নিজের সাথে আরো মিশিয়ে ধরলো, বেশ অনেকটা সময় দুজন দুজনেকে জরিয়ে ধরে ছিলাম। যেনো দুই দিন না দুই বছর ধরে দেখিনি একে ওপরকে।এরপর আমাকে ছেড়ে আমার কপালে বেশ সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে এবার নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বলল
.
– দু দিন দেখিনি জানো কতোটা মিস করেছি। ইচ্ছে করেই ভিডিও কল করিনি তাহলে সামনে দেখার আকুতি আরো বেড়ে যেতো। I missed you so much yaar..
.
– I missed you too
.
– I missed you three
.
দুজনেই চমকে তাকালাম তাকিয়ে দেখি ওহি কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি আর আদ্রিয়ান একে ওপরকে ছেড়ে ভ্রু কুচকে তাকালাম তারপর ওর দিকে।
.
– ভাইয়া তোমার সাথে তো আরি!
.
আদ্রিয়ান ওহির সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল
.
– কেনো আপুমনি?
.
– তুমি খালি ছোট আপুকেই মিস করেছো আমাকে করো নি?

– ওলে আমার সোনা কে বলল তোমাকে মিস করিনি আমার আপুকেও তো এত্তোগুলা মিস করেছি।
.
বলেই ওকে কোলে তুলে নিলো। ও বলল
.
– তুমিতো ছোট আপুকে হাগ করে বললে
.
আদ্রিয়ান আর আমি দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আদ্রিয়ান নিজেকে সামলে ওহির গালে চুমু দিয়ে বলল
.
– তোমাকে কিস করে বললাম। হ্যাপি?
.
ওহি খিলখিলিয়ে হেসে বলল
.
– ওটাতো ছোট আপুকেও করেছো
.
আমি চোখ বড়বড় করে তাকালাম আদ্রিয়ান অসহায়ভাবে বলল
.
– সেটাও দেখেছো?
.
– হুম।
.
– আচ্ছা আপুমনি ছোট আপির সাথে নিচে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
বলে ওহিকে নামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– ওহিকে নিয়ে নিচে যাও আমি আসছি
.
– ওকেহ।
.
আদ্রিয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেলো আমিও ওহিকে নিয়ে নিচে নামলাম। নিচে নেমে বিভিন্ন গল্প করতে করতে আদ্রিয়ান ও চলে এলো এসে কিছুক্ষণ গল্প করে হঠাৎ করেই আব্বুকে বলল

– আঙ্কেল এখন ভ্যাকশন চলছে অনির মেডিকেল নেই আর সবাই মোটামুটি ফ্রি তাই আমি ঠিক করেছি আমরা কক্সবাজার ঘুরতে যাবো। আপনাদের আপত্তি আছে।
.
আব্বু: আপত্তি কেনো থাকবে তোমরা ঘুরবে ঘোরো কিন্তু ছোটরাই যাও আমরা আর গিয়ে কী করবো।
.
আদ্রিয়ান: আমি সব এরেন্জমেন্ট কালকের মধ্যে করে ফেলবো আর পরশুই বেরোবো। কারো সমস্যা আছে?
.
সজীব ভাইয়া: কালকেই?
.
আদ্রিয়ান: হ্যা প্রবলেম?
.
সজীব ভাইয়া: নাহ ভালোই হবে ছুটিটা ভালো ভাবে কাটানো যাবে।
.
আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে ঘুরতে যাবো? ওয়াও! হঠাৎ আদ্রিয়ান আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল
.
– ওখানে সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্যে
.
আমি অবাক হলাম ওর কথায় সারপ্রাইজ? কক্সবাজার গিয়ে? ওখানে কী সারপ্রাইজ দিতে চলেছে ও আমাকে? কী এমন করতে চলেছে ওখানে গিয়ে ও?
আমি অবাক হলাম ওর কথায় সারপ্রাইজ? কক্সবাজার গিয়ে? ওখানে কী সারপ্রাইজ দিতে চলেছে ও আমাকে? কী এমন করতে চলেছে ওখানে গিয়ে ও? এখন তো আমার বার্থ ডে ও না? কারণ আমার বার্থ ডে তো অক্টোবর আর এখন মে মাস, এমন তো স্পেশাল কিছুই নেই দেন? ও আবারো বলল
.
– তোমার মাথার সাইজটা ছোট তাই আমার কথা ধরবেনা। ব্রেইনে চাপ দিয়ে কী লাভ।
.
আমি একটু বিরক্ত হবার ভংগিতেই তাকালাম ওর দিকে। আর ও এমনভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো কিছুই বলে নি। হঠাৎ কাব্য বলল
.
কাব্য: ভাইয়া ওখানে গিয়ে কিন্তু ক্রিকেট খেলবো !
.
আদ্রিয়ান: ওখানে ক্রিকেট?
.
কাব্য: হ্যা প্লিজ! তুমি চাইলেই এরেন্জ করতে পারবে ব্যাপারটা
.
আদ্রিয়ান: আচ্ছা দেখছি।

আপি: এই তোর ক্রিকেট ছাড়া মাথায় আর কিছু আসে না? ছেলেটা কী রোবট? একসাথে কত কিছু করবে?
.
আদ্রিয়ান: নো প্রবলেম আমি পারব। ওকে বকো না বাচ্চা মানুষ তো। আমি তো এই বয়সে সারাদিন ক্রিকেট নিয়েই থাকতাম।
.
আপি: সিরিয়াসলি? তুমিও খেলাধুলো করতে? তোমার রেসাল্ট হিস্ট্রি দেখে তো মনে হয় তুমি সারাদিন বই নিয়েই পরে থাকতে।
.
আদ্রিয়ান: আরে ওভাবে বইয়ের পাতায় ডুবে যাওয়ার মতো পড়ুয়া কোনো কালেই ছিলাম না। হ্যা তবে পরীক্ষা র সময় বইয়ের ওপর সময়টা বেশি দেওয়া পরতো ঐ আর কি।
.
এরমধ্যেই আন্টি স্নাকস নিয়ে এলো আর ঠিক সেই সময় আদিব আর ইশরাক ভাইয়া এন্ট্রি নিলো। এসেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বসে পরল। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে আর কক্সবাজারের সবকিছুর প্লানিং করছে। আড্ডা শেষে প্লান করলাম বাড়ির গার্ডেন এরিয়ায় সবাই মিলে বসে গল্প করবো। যে ভাবা সেই কাজ সবাই গার্ডেন এরিয়ায় গিয়ে গোল হয়ে বসে পরলাম। তবে আজকে আদ্রিয়ানের অপজিটে না ওর পাশেই বসলাম। সবার হাতেই একটা করে কোকাকোলা ক্যান। হঠাৎ অর্ণব ভাইয়া বলল
.
– অনি আজকে তুই একটা গান কর

আমি হকচকিয়ে তাকালাম ভাইয়ার দিকে, আপি, সজীব ভাইয়া, কাব্য ও তাল দিলো। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি ইতস্তত করে বললাম
.
– খালি গলায় গাইব?
.
আদ্রিয়ান একটু বাকা হেসে বলল
.
– আমি গিটার বাজাচ্ছি।
.
হঠাৎ জাবিন বলল
.
– তার চেয়ে বরং ডুয়েট গাও ভাইয়া আর ভাবী।
.
সবাই সায় দিলো জাবিনের কথায় আর আমি ওর দিকে তাকালাম ও মুচকি হেসে চোখের ইশারায় গাইতে বলল। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন যেনো একটা ফিল হলো বুকটা ভার হয়ে এলো, এমন কেনো হলো হঠাৎ বুঝতে পারলাম না, আদ্রিয়ানের ও মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো, চাপা কষ্ট হচ্ছে একটা, আদ্রিয়ান গিটারে সুর তুললো আমি চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করলাম

– Tu mujhe chor jaye, yeh nehi ho sakta sathiya..
Mere bato mein teri fiqar sada
Mere yaado mein teri fiqar sada
Main jo vi hoon tum hi to ho..
Mujhe tumse mili upni aada..
.
আমি চোখ বন্ধ করেই আছি হঠাৎ ওর গলার আওয়াজ পেলাম
.
– keu ki tum hi ho ab tum hi ho
Zindegi ab tum hi hoo..
cheyan bhi mera dard bhi
Meri ashiqui ab tum hi hoo
.
– tum hi hoo.. tum hi hoo
farz bhi mera marz bhi
cheyan bhi mera dard bhi
Meri ashiqui ab tum hi hoo..
.
হঠাৎ বুকের ভেতর যন্ত্রনার পরিমাণ আরো বেড়ে গেলো চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো, ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ দুটোতেও জল জমেছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে আমার ও সেই ছলছল চোখ নিয়েই আমার দিকে তাকিয়ে

– Tere liye bhi jiya main
khud ko jo yu de diya hain
Tere wafa ne mujhko samhala
Sare gamo ko dil se nikaala
main jo mit bhi geya to wajod mera
sada tujhme rahe jinda..
hmm.. kiu ki tum hi ho ab tum hi ho
Zindgi ab tum hi hoo..
cheyan bhi mera dard bhi
meri ashiqui ab tum hi hoo..
.
– Tum hi ho.. tum hi hoo
Zindegi ab tum hi hoo
cheyan bhi mera dard bhi
meri ashiqui ab tum hi hoo
.
সবাই খুব জোরে হাতে তালি দিলো ও আর আমি দুজনেই ওদের আড়ালেই চোখের কোনে জমা পানিটা মুছে নিলাম। জাবিন বলল

– সেই ছিলো গানটা বাট তোরা এই মুভিটার গানই কেনো গাইলি? কেনো যেনো এই মুভির গান কোনো কাপল গাইলে আমার মনে হয় তাদের শেষ পরিণতি এই মুভির মতোই হবে।
.
বুকটা ধক করে উঠলো আমার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওও অদ্ভুতভাভে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কিন্তু নিজেদের পরোক্ষনেই সামলে নিলাম।
.
বেশ মজা করার পর সবাই ভেতর চলে গেলো। আমি ডাইনিং স্পেস দিয়ে ঘুরছি হঠাৎ হাটে হ্যাচকা টান অনুভব করলাম। কেউ একজন টান মেরে রুমের ভেতর নিয়ে গেলো আমি না দেখে চেচাতে যাবো তার আগেই মুখ চেপে ধরল। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান, মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো, এই ছেলে সবসময় এরকম করে এভাবে হুটহাট টেনে নেবার মানে কী? ও মুখ ছেড়ে বলল
.
– এভাবে চেচাও কেনো হু? এতদিনেও বোঝনি তোমাকে এভাবে কে টানতে পারে।
.
– আজব তো এভাবে হুটহাট টানে কেউ? ভয় লাগেতো।

– এইজন্যেই তো এভাবেই টানি তোমার ভীত মুখটা অসাধারণ সুন্দর।
.
– তুমি..
.
– হুস.. চুপ থাকো এখন।
.
বলেই নিজের সাথে জরিয়ে নিলো আমাকে। তারপর বলল
.
– খুব বেশি জরিয়ে ফেলেছি তোমার সাথে নিজেকে ইয়ার। মাত্র দুদিন না দেখেই অবস্হা খারাপ হয়ে গেছিলো আমার। থাকতে পারবোনা তোমাকে ছাড়া।
.
– হুম
.
– তুমি এতো ভালো গান গাও জানতামি নাহ। বাট চোখে পানি ছিলো কেনো?
.
– তাতো তোমারো ছিলো!
.
– আসলে কেনো জানিনা একটা অদ্ভুত চাপা কষ্ট হচ্ছিলো হঠাৎ। কেনো সেটাই বুঝতে পারছিনা। নিশ্বাস আটকে আসছিলো।

আমারো তো একি ফিল হয়েছে। এটা কীকরে সম্ভব? দুজন মানুষের একই সময় একি অনুভূতি হওয়া? তবুও নিজেকে সামলে বললাম
.
– হুমম। আচ্ছা হঠাৎ কক্সবাজার যাওয়ার ইচ্ছে কেনো হলো?
.
– ওইযে বললাম সারপ্রাইজ!
.
– এখন তো স্পেশাল কিছু নেই তাহলে সারপ্রাইজ কীসের জন্যে?
.
– যেখানে তুমি মানুষটাই আমার কাছে এতোটা স্পেশাল তখন স্পেশাল দিনের কী দরকার?
.
– কথায় পারবোনা তোমার সাথে
.
– চেষ্টাও করোনা
.
– হুহ। এবার ছাড়ো নিচে ওয়েট করছে সকলে।
.
– সবসময় খালি পালাতে চাও কেনো বলোতো? একবার বিয়েটা হোক তারপর দেখবো কীকরে পালাও।
.
– দেখা যাবে!

রাতে ডিনার করে ফিরে এলাম বাড়িতে। ভেতরে ভেতরে আমি খুব এক্সাইটেড কক্সবাজার যাবো বলে। যদিও এর আগেও গেছি কিন্তু এখন তো আমার স্পেশাল মানুষটার সাথে যাবো ভাবতেই ভালো লাগছ। আরেকটা দিন কেটে গেলো এরমধ্যে আদ্রিয়ানের সব কিছুর এরেন্জমেন্ট করা হয়ে গেছে, আমাদের প্যাকিং ও।
.
পরের দিন সকালে আমরা সবাই রেডি হয়ে বেরোলাম। নিচে গিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ানরা ওয়েট করছে। আমরা দশজন, এক গাড়িতে আমি, আদ্রিয়ান, আপি, জাবিন আর ওহি। আরেকটাতে আদিব ভাইয়া ইশরাক ভাইয়া, কাব্য, অর্ণব ভাইয়া, সজীব ভাইয়া। সকাল দশটা বাজেই রওনা দিলাম। বাই রোডে ঘোরার মজাই আলাদা তাই ফ্লাইট বুক করেনি আদ্রিয়ান। বিভিন্ন হাসি ঠাট্টা আর আনন্দের মাধ্যমে শেষ হলো আমাদের চৌদ্দ ঘন্টার লং জার্নি। এর মধ্যে লাঞ্চ, স্নাক্স, ডিনার মাঝপথে করে নিয়েছি আমরা। অবশেষে পৌছালাম “হোটেল মিডিয়া” তে বেশ ভালো আর সুন্দর ও। রুপসা সি বিচ এর সবচেয়ে কাছে। পৌছতে পৌছতে রাত বারোটা বেজে গেলো।

হোটেলে ঢুকতেই হোটেল ম্যানেজম্যান্ট আমাদের কে গ্রানডলি ওয়েলকাম করলো। Because here is Adriyan Abrar Juhayer. আমাকে আর আদ্রিয়ানকে বড় একটা ফুলের বুকে দিলো। বাকিদেরও দিয়েছে বাট আমাদের মতো না। সমস্যা হলো রুমের চাবি নিতে গিয়ে, ইশরাক ভাইয়া- সজীব ভাইয়া এক রুমে, অর্ণব ভাইয়া- কাব্য একরুমে, আপি-জাবিন-ওহি এক রুমে, আদ্রিয়ান- আদিব ভাইয়া একরুমে, শুধু আমার জন্যেই একা একটা রুম। আমি রাগে কটমট করে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে ও সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে উপরে তাকিয়ে সিটি বাজাতে লাগল, সবাই মুখ টিপে হাসছে। সবাই খুব ক্লান্ত তাই এখন সবাই রুমে গিয়ে রেস্ট করে কালকে থেকে ঘোরাঘুরি শুরু করব, আমি এক ড্রাম রাগ নিয়েই নিজের রুমে গেলাম, গিয়েতো আমি অবাক বেশ সুন্দর করে সাজানো রুমটা, বেশ বড় বেড, পাশে সোফা, বড় টিভি, ফ্রিজ, কাবার্ট টাইপ সবকিছুই আছে, লাগেজ টা থেকে একটা টপস আর প্লাজো বের করে ওয়াসরুম থেকে সাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে চুল মুছতে মুছতে বাইরে এসে বেড থেকে ফোনটা তুলে দেখি আদ্রিয়ানের মেসেজ।

” Long journey kore ascho akhon Chupchap ghumiye poro kalk sokale ami eshe tomar ghum vanghabo, be ready?”
.
মেসেজটা দেখে নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম। সত্যিই পাগল ছেলেটা আমিও রিপ্লে লিখলাম
.
– ” Dekha Jabe?”
.
তার উত্তরে ও “???” পাঠিয়ে দিলো আমিও হেসে শুয়ে পরলাম, বাইরে বৃষ্টি পড়ছে তাই একটা কম্বল গায়ে জরিয়ে নিলাম।ক্লান্ত থাকার কারণে খুব তাড়াতাড়ি ই ঘুমের দেশে তলিয়ে।
.
ঘুম ভেঙ্গে সেই চিরচেনা বডি স্মেল পেলাম। কেউ একজন নিজের বুকে আস্টেপিস্টে জরিয়ে ধরে আছে আমাকে। আর সেটা কে আমি চোখ না খুলেও অনায়াসে বলতে পারি। তাই চোখ বন্ধ করেই মুচকি হেসে ওকে জরিয়ে ধরে বললাম।
.
– Good morning..
.
– morning…
.
– ভেতরে কীকরে?
.
– আমার কাছে ডুবলিকেট চাবি আছে।
.
আমি চোখ মেলে ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে, তারপর বললাম
.
– তারমানে তুমি আমার রুমের ডুবলিকেট চাবি নিয়ে রেখেছো?
.
– হ্যা তো!
.
– আর আমাকে এভাবে একা এক রুমে রাখার মানে কী?
.
– এই রুমে যদি অন্য কেউ থাকত তাহলে আমি এভাবে আসতে পারতাম সুইটহার্ট?

আমি উঠে ওর গায়ে একটা বালিশ ছুড়ে বললাম
.
– অসভ্য ছেলে একটা
.
ও টেনে আমাকে নিজের কাছে নিয়ে বলল
.
– আমার অসভ্যাতামী কী তোমার খুব বেশি খারাপ লাগে।
.
আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম আর ও ভ্রু নাচালো! কী বলবো আমি আর, সত্যিই ওর স্পর্শগুলো আমাকে অন্যরকম অনুভূতি দেয়, কোনো একটা সুখের রাজ্যে হারিয়ে যাই আমি, হার্টবিট বাড়তেই থাকে। আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলাম। ও হঠাৎ করেই বলল
.
– আর আমার কী দোষ? তুমিই আমার সামনে এমন এমন ভাবে চলে আসো নিজেকে সামলানোই কষ্টকর হয়ে যায়
.
– ওও এখন যতো দোষ আমার?
.
– তোমারি তো! সেদিন তুমি ওয়াসরুম থেকে যেভাবে বেরিয়েছিলে আমিতো..
.
আমি আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও আমাকে চোখ মেরে বলল
.
– বাই দা ওয়ে ইউ অয়ার লুকিং সো হট!
.
ওর কথা শুনে কাশি উঠে গেলো আমার, নিজেকে সামলে রাগী ফেস বানিয়ে বললাম
.
– তুমি কী জানো তুমি একটা উচ্চমাত্রার অসভ্য হয়ে গেছো?
.
– কেনো আমি আবার কী করলাম?

– প্রথমে তো কতো ভালো সেজে থাকতে কথাই বলতে না দরকার ছাড়া, এনগেইজমেন্টের পর থেকেই নিজের রং দেখাতে শুরু করেছো। বাই দা ওয়ে সত্যিই কী এতো ভালো ছিলে নাকি ইউ কে তে মেয়েদের সাথে এসবি করতে ?
.
– নাউজুবিল্লাহ! কী বলো এসব? আমি পিওর সিঙ্গেল ছিলাম।
.
– থাকলেই ভালো!
.
এবার ওও একটু সিরিয়াস হয়ে বলল
.
– একটা সত্যি কথা বলব?
.
– বলো..
.
– আমার জীবনের প্রথম নারী তুমি এবং শেষ নারী তুমিই হবে। আমি প্রথম তোমাকেই অন্য নজরে দেখেছি এই চোখ সেই নজরে আর কাউকে দেখতে পারবেনা, আমি প্রথম তোমাকেই স্পর্শ করেছি অন্য কাউকে আর সেই অধিকার দিতে পারবোনা।
.
– এতোটা বিশ্বাস তোমার নিজের ওপর?
.
– উমহুম এতোটাই বিশ্বাস আমার তোমার ওপর!
.
আমি একটু অবাক হলাম ওর কথায় ও মুচকি হেসে বলল
.
– হুম আমার বিশ্বাস আছে তোমার ওপর তুমি আমায় তোমাকে ছেড়ে যেতেই দেবেনা। এমন কোনো কারণই তৈরী হতে দেবেনা যার জন্যে আমায় তোমাকে ছেড়ে যেতে হয়!

আমি কিছু না বলে ওর বুকে মাথা রেখে ওকে আরো জোরে জরিয়ে ধরে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর হঠাৎ দরজায় নক পড়ল। আদ্রিয়ান আমাকে ছেড়ে গিয়ে দরজাটা খুললো, কফি নিয়ে এসছে। কফি নিয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। সাওয়ার নিওনা, একটু পর সবাই মিলে বিচে যাবো দেন এসে সাওয়ার নিও।
.
– কটা বাজে?
.
– সাড়ে ছয়টা
.
– আরেকটু আগে উঠলেই তো সানরাইস দেখতে পেতাম
.
– পেতেনা কজ আকাশ মেঘলা সেইজন্যেই ডাকিনি
.
– ওহ!
.
– আরে মন খারাপ করছো কেনো আমরা কী আজকেই ফিরে যাবো নাকি। আছিতো কয়েটকা দিন।
.
– হুম
.
বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। হাত মুখ ধুয়ে এসে তাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে দেখলাম আদ্রিয়ান বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। টাওয়ালটা রেখে গায়ে একটা স্কার্ফ ঝুলিয়ে ওর কাছে গিয়ে দাড়াতেই আমার হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিলো। বেলকনি দিয়ে সমুদ্র স্পষ্ট দেখা যায়। দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম হঠাৎ ও কফিতে চুমক দিতে দিতে বলল
.
– কেমন লাগছে?

– বেশ ভালো এখান থেকে সমুদ্রটা ভালো দেখা যাচ্ছে। আগেরবার হোটেল কল্লোর এ উঠেছিলাম ওখান থেকে সমুদ্র খুব একটা ভালো দেখা যেতো না।
.
– জানি এইজন্যেই মিডিয়া তে উঠলাম।
.
– আচ্ছা তুমি তো বলেছিলে কী একটা সারপ্রাইজ দেবে?
.
– হুম দেবোতো সময় হোক।
.
– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
.
– কী কথা?
.
– তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে প্রথম থেকে ইগনোর করতে চেয়েছিলে, কিন্ত তুমিতো আমাকে ভালোবাসতে তাহলে ইগনোর করতে চেয়েছিলে কেনো?
.
ও আনমনে বললো
.
– মায়ায় জরাতে চাইনি!
.
আমি বেশ অবাক হলাম ওর কথায়। অবাক হয়েই বললাম
.
– কেনো?
.
এবার ওর হুস হলো কোনোরকমে নিজেকে সামলে বলল
.
– ছিলো কিছু কারণ!
.
– মানুষ কারো মায়ায় পরতে তখনি চায়না যখন সেই মানুষটাকে সে ঘৃণা করে অথবা সেই মানুষটির হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
.
এটা শুনে ও তাকালো আমার দিকে, আমি বললাম

– আমাকে ঘৃণা করার তো কোনো কারণ নেই, আর বাকি রইলো হারিয়ে যাবার কথা, আমার কী হারিয়ে যাবার চান্স আছে? এমনিতে তো কোথাও যাবোনা যদি না মরে…
.
আর কিছু বলার আগেই ও এক ঝটকায় আমাকে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো, প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে হয়ে বলল
.
– কোথ্থাও হারাবেনা তুমি, ক্ কিচ্ছু হতে দেবোনা আমি তোমার, অ্ আমি নিজের বুকের মধ্যে আগলে রাখব তোমাকে, ক্ কাউকে ছুতেও দেবোনা। কেউ যদি সেই চেষ্টাও করে একদম শেষ করে দেবো, সবকিছু হ্ হ্যা সব কিছু জালিয়ে দেবো আমি যদি তোমার কিছু হয়।
.
বলেই আরো শক্ত করে ধরল নিজের সাথে, যেনো পারলে ওর বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতো আমাকে, আমিতো পুরোপরি শকড ওর কাছে। ওর সারা শরীর কাপছে, এমনভাবে আমাকে আকরে ধরে আছে যেনো কেউ আমাকে ওর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে আর ও আমাকে ছাড়বেনা কিছুতেই নাহ। ওর শরীর পুরো ঘেমে গেছে কাপুনি আরো বারছে। কী এমন বললাম আমি যে ও এতো হাইপার হয়ে গেলো?
বলেই আরো শক্ত করে ধরল নিজের সাথে, যেনো পারলে ওর বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতো আমাকে, আমিতো পুরোপরি শকড ওর কাজে। ওর সারা শরীর কাপছে, এমনভাবে আমাকে আকরে ধরে আছে যেনো কেউ আমাকে ওর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে আর ও আমাকে ছাড়বেনা কিছুতেই নাহ। ওর শরীর পুরো ঘেমে গেছে কাপুনি আরো বারছে। কী এমন বললাম আমি যে ও এতো হাইপার হয়ে গেলো? আমিতো জাস্ট নরমালি বললাম কথাটা। যেই ছেলে ওরকম ভয়ংকর টেরোরিস্টরা তুলে নিয়ে গেছে শুনেও এতোটা হাইপার হয়নি তেমন গুরত্বই দেয়নি সেই ছেলে এই সামান্য কথায় এতোটা হাইপার হয়ে গেলো। আমি ফিল করলাম ও এখোনো থরথর করে কেপেই চলেছে আর ঘামছেও। আমি ওর পিঠে হাত রেখে বললাম
.
– আদ্রিয়ান?
.
আমার আওয়াজ শুনে ও আরো শক্ত করে ধরল আমায় এতোই শক্ত করে ধরে আছে যে আমার লাগছে এবার। তাই বললাম
.
– আদ্রিয়ান আমার লাগছে
.
ও সাথে সাথেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
.
– S.. So..Sorry
.
কিন্তু ও এখনো ঘামছে আর কাপছেও প্রচুর আমি ওর দুই গালে হাত রেখে বললাম

– কী হয়েছে তোমার?
.
ওকে দেখে এবার ভয় লাগছে আমার, ও কিছু বলছে না শুধু কাপছে। এতোটা নার্ভাস আর হাইপার ওকে প্রথম দেখলাম আমি। ও রেলিং ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। আমি ওর কাধে হাত রেখে বললাম
.
– আর ইউ ওকে?
.
– ইয়াহ। তুমি ভেতরে যাও আমি আসছি।
.
আমিও কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলাম, কারণ বুঝতে পারলাম ওকেহ একটু একা ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন, বেশ কিছুক্ষণ পর এসে বলল
.
– জানপাখি রেডি হয়ে নেও ওরা রেডি হয়ে গেছে বিচে যাবো।
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে একটু আগেই কতোটা হাইপার ছিলো আর এখন কতো নরমাল। আমি নিজেকে সামলে বললাম
.
– ওকেহ!
.
– আর হ্যা সাদা বা হালকা রং এর কিছু পরোনা ভিজতে হবে কিন্তু ওখানে।
.
– হুম
.
আমি চেন্জ করে বেরিয়ে এলাম দেখলাম ওও রেডি হয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে পা থেকে মাথা অবধি স্কান করলো আমি একটা নেভি ব্লু লং টপ আর কালো জিন্স পরেছি। ওও একটা চেক শার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরে আছে। আমাকে স্কান করে তারপর লাগেজ থেকে একটা কালো ওরনা বের করে পরিয়ে দিয়ে বলল
.
– Now it’s perfect..
.
– যাওয়া যাক?
.
– হ্যা চলো।
.
নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্যে। আমাদের দেখে ওরা মুখ টিপে হাসলো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– What?

সবাই হকচকিয়ে গিয়ে একসাথে একসুরে বলল
.
– Nothing…
.
দেখলাম একটা বড় কালো জিপ দাড় করানো আছে, আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– এটা কার?
.
আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– তোমার বরের
.
– তোমার জিপ ও আছে?
.
– জ্বী মেডাম এবার চলুন।এটা দিয়ে পরে ঘুরবো বিচ তো কাছেই এটার এখন দরকার হবে না।
.
আমরা পায়ে হেটেই সবাই বিচে চলে গেলাম। ” Rupsha sea beach” ওখানে গিয়ে ভাইয়ারা আপি জাবিন সবাই কিছুক্ষণ বিচের ধারে আড্ডা দিলাম এবার সমুদ্রে নামার পালা। সবাই যাওয়ার পর আমি যাবো তার আগেই আদ্ররিয়ান আমার হাত ধরে বলল
.
– সি এখানে কতো মানুষ, এদের সামনে রোমান্স করতে আমার আপত্তি নেই কিন্তু তুমি লজ্জা পাবে আর এতো কষ্ট করে এখানে এসে নিরামিষ ভাবে কাটাবো নাকি?
.
– তো কী করবেন শুনি?
.
– এসো আমার সাথে!
.
– কিন্তু ওরা?
.
– আরে ধুর ওরা ইনজয় করছে করতে দেও না আমাদের মধ্যে কাবাবে হাড্ডি হবে কেনো?
.
– তুমি আসলেই..
.
– হুম জানি কী বলবে চলো তো…
.
বলেই আমার হাত ধরে বেশ অনেকটা পথ হেটে নিয়ে গেলো চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম ফাকা sea beach কেউ নেই। আমি সন্দেহে দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– As I know যে নির্দিষ্ট এরিয়া ছাড়া এভাবে বিচের পাশে কাউকে আসতে দেয়না। তাহলে আমারা কীকরে?

– সবাইকে আসতে দেয়না। কিন্তু স্পেশাল কেউ পিরমিশন চাইলে আসতে দেয়
.
– হুম বুঝলাম
.
– কী বুঝলে?
.
– তোমার মাথার সবকটা তার ছেড়া।
.
ও মুচকি হেসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে নিয়ে বলল
.
– হুম আর সেগুলো তুমিই ছিড়েছো। এখন মুমেন্ট টা এনজয় করো।
.
আমি কনুই দিয়ে ওর পেটে একটা খোচা মেরে ওর থেকে একটু দূরে এসে হাত ভাজ করে দাড়ালাম। ও আস্তে করে এসে আমার কোমরে হাত রেখে আমায় ওর দিকে ঘোরালো আমি নিচের দিকে তাকিয় আছি। ও এক হাতে আমার কোমর জরিয়ে আরেক হাতে আমার মুখটা উচু করে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো, তারপর আমার মুখের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মুখটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আনতে লাখল। আমি ওকে ছাড়িয়ে উল্টো ঘুরতেই ও পেছন দুহাত দিয়ে আমার পেট জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বলল
.
– আমার কাছ থেকে পালানোটা তোমার এবিলিটিতে নেই তাই সেই চেষ্টাও করোনা।
.
– হুহ হয়েছে ছাড়ো।
.
– ধরলেই খালি ছাড়ো ছাড়ো করতে থাকো কেনো হুম?
.
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম আদ্রিয়ান আমার কানে একটা কিস করতেই হালকা কেপে উঠলাম আমি, ওকে ছাড়িয়ে পেছনে না তাকিয়েই হেটে হেটে এগিয়ে যেতে লাগলাম। বাতাসে আমার চুল পোশাক সব উড়ছে আমি একটু উচু জায়গাতেই উঠে পেছনে তাকালাম তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান এখোনো ওখানেই দাড়িয়ে অাছে। আমি তাকাতেই একটা হাসি দিলো তারপর ওখানেই দুই পা ক্রস করে হাটু ভেঙ্গে বসে পরল আমিও ওখানেই বসে পরলাম। দুজন দুজনকে দূর থেকে দেখছি আর মুচকি মুচকি হাসছি। বেশ কিছুক্ষণ পর ও উঠে এগিয়ে আসতে লাগল আমি সেখানেই বসে আছি ও এসে একদম আমার গা ঘেসে বসে পরল। আদ্রিয়ান একহাতে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– এখানেই থাকবে নাকি সমুদ্রের কাছে যাবে?
.
– এতো তাড়া কেনো?
.
– আমার মনে হচ্ছে সমুদ্র আমাদের টানছে নিজের দিকে। ওর তীব্র ঢেউ ও আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী হতে চাইছে হয়তো। দেখো কীভাবে ফুলে উঠছে। উকি দিয়ে দেখছে আমাদের
.
– তুমি তো ইন্জিনিয়ার, প্রকৃতি প্রেমী কবে থেকে হলে?

– কোথায় যেনো শুনেছি নারী হলো প্রকৃতির রূপ। তাই আমার মনে হয় যে একবার কোনো নারীর প্রেমে পরে সে প্রকৃতির প্রেমে এমনিতেই পরে যায়।
.
– বাহবা। সাহিত্য চর্চাও করা আছে দেখছি? কোন বইয়ের লাইন এটা?
.
– মন থেকে বললাম বেবি কোনো বইয়ের লাইন না। এখন চলো।
.
বলেই আমার হাত ধরে নিয়ে সমুদ্রের দিকে নিয়ে যেতে লাগল আমিও চুপচাপ যাচ্ছি ওর সাথে। সমুদ্রে নামার আগে ও আমার সামনে এসে বসে পায়ের দিকে হাত বারালেই আমি একটু পিছিয়ে বললাম
.
– কী করছো?
.
ও একটু বিরক্ত হয়ে বলল
.
– উফফ আমাকে অামার কাজ করতে দাও।
.
বলেই আমার পায়ের কাছে বসে নিজের হাতেই আমার জিন্স ফোল্ড করে দিয়ে উঠে দাড়ালো। আমি বললাম
.
– এটা আমিও করতে পারোতাম
.
– আমি করেছি সমস্যা কী?
.
বলেই হাত ধরে হাটা দিলো স্যান্ডেল আরো আগেই খুলে রেখেছি। এরপর সমুদ্রে পা ভেজালাম। হালকা ঢেউয়ের স্রোত যখানে থামছে সেখানেই দাড়িয়ে আছি আমরা। ও ঘুরিয়ে একদম আমাকে ওর কাছে নিয়ে গেলো তারপর কোমরে হাত রাখল আমিও মুচকি হেসে পা উচু করে ওর কাধের দুপাশে কনুই রেখে পেছনে দুই হাত এক করে ওর দিকে তাকালাম ওও আমার দিকে তাকালো, দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি বেশ কিছুক্ষণ পর ও মুচকি হেসে ভ্রু নাচালো আমি সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিলাম, বাতাসে আমার মুখের ওপর পড়া চুলকে ও আলতো হাতে সরিয়ে দিলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে তাকালাম ওর দিকে ও আমার গালে কিস করার জন্যেই ঝুকছিলো, আমি দুষ্টুমি করে ওর পায়ের পাতায় বেশ জোরেই পারা মারলাম ও ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে কিন্তু আমি একটু হেসে ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম ও বোকার মতো তাকিয়ে রইলো আমি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে দ্রুত কয়েক কদম পিছিয়ে সাগরের পার দিয়েই দৌড় দিলাম পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ও কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে পরক্ষণেই দুষ্ট হেসে আমার পেছনে দৌড়তে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ দৌড়নোর পর ও পেছন থেকে এক হাতে আমার পেট আর ওপর হাতে গলার নিচের দিক জরিয়ে ধরে ফেললো, এরপর আমাকে ঘুরিয়ে এক হাতে আমার কোমর জরিয়ে আরেক হাতে আমার পেটে সুরসুরি দিতে লাগল আমি ওর বুক ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু বরাবরই ব্যার্থ হচ্ছি। আমি হাসতে হাসতেই বললাম

– আদ্রিয়ান থামো প্লিজ!
.
কিন্তু কে শোনে কার কথা ওও হাসছে আর ক্রমাগত সুরসুরি দিয়েই যাচ্ছে। সুরসুরি দিতে দিতেই বলল
.
– আমার সাথে দুষ্টুমি হাম? তোমার চেয়ে কয়েকগুন বেশি দুষ্টুমি আমি করতে পারি বেইবি।
.
বলেই একহাতেই বেশ খানিকটা উচুতে উঠিয়ে ফেললো আমাকে আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে ও ওভাবে আমাকে উঠিয়েই হাসতে হাসতে ঘুরতে লাগল, ওর কান্ড দেখে ওর কাধের ওপর হাত রেখে আমিও হাসছি। বেশ কিছুসমপর দুজনেই ক্লান্ত হয়ে বসে পরলাম ভেজা বালিতেই। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আবারো একদফা হেসে নিলাম। আদ্রিয়ান শুয়ে পরল ওখানে হাত ছড়িয়ে আমিও শুয়ে পরলাম ওপর হাতের মাথা রেখে। এভাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর ও বলল
.
– অনেকতো হলো পা ভেজানো এবার সমুদ্রর স্নান টা সেরে নি।
.
– ন্ নাহ
.
– কেনো? আমিই তো লজ্জা পাওয়ার কী আছে?
.
– লজ্জা পাবার কিছু নেই মানে কী তুমি কী ছেলে না নাকি?
.
– সব ছেলে আর আমিকি এক হলাম?
.
– আলাদা কী? ( দুষ্টমী করে)
.
ও এবার এক হাতে ভর দিয়ে আমার দিকে ঝুকে বলল
.
– পার্থক্য কী সেটাকি প্রাকটিক্যালি বুঝিয়ে দেবো।
.
আমি ওকে সরিয়ে উঠে বসলাম। ও হঠাৎ উঠে বুক পকেট থেকে ফোন বের করল। আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– এটা ভেজেনি?
.
– না বুক পকেটে ছিলো তাই কিছুই হয়নি।
.
বলেই সেলফি মুড অন করে বেশ কয়েকটা ছবি তুললাম দুজনে এরপর ও আমার আর আমি ওর সিঙ্গেল ফোটো তুললাম কিছু। তারপর ও ওর শার্ট খুলে ফেললো নিচে পাতলা ব্লাক বক্সার। ও শার্টের মধ্যে ওর ফোনটা রাখল তারপর আমার কাছে এসে আমার গা থেকে ওরনাটা নিয়ে নিলো তারপর গিয়ে শুকনা বালিতে রেখে আসলো ওগুলো। তারপর আমার কাছে এসে কোলে তুলে নিলো আমাকে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সমুদ্ররে নামতে লাগল। আমি বললাম
.
– আমি নিজেই যেতে পারতাম আদ্রিয়ান
.
– আমিও তো নিতে পারছি অনি

বলেই আমার দিকে তাকালো আর আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দুজনেই হেসে নিলাম। এরপর ও আমাকে আমার প্রায় বুক পর্যন্ত পানিতে নামালো আর ওর প্রায় পেট পর্যন্ত। পানির নিচ দিয়েই আমার কোমর ধরে আছে। এতো বড় বড় ঢেউয়ে আমার বেশ ভয় লাগছে তাই আদ্রিয়ানকে বললাম
.
– আরেকটু কম পানিতে চলোনা আদ্রিয়ান আমার ভয় লাগছে।
.
ও আমাকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে বলল
.
– কিচ্ছু হবেনা আমি আছিতো।
.
বলেই আমার কোমর ধরে উচু করে আরেকটু গভীরে গেলো তারপর আমাকে সহই ঢুব মারলো আর সাথে সাথেই উঠে গেলো। আমি হাফাতে হাফাতে বললাম
.
– উফ এমন করে কেউ ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি
.
ও হাসতে হাসতে বললো
.
– এতো ভয় পাও কেনো তুমি?
.
এরপর ও আমাকে আরেকটু কম পানিতে নামিয়ে আমায় ছেড়ে দিয়ে নিজে সমুদ্রে ইনজয় করতে লাগল। আমিও নিজের মতো করে ইনজয় করছি। হঠাৎ আমাকে ও পানির ছিটা দিলো রেগে আমি বেশ অনেকটা পানিই ওর দিকে ছুড়ে দিলাম। এরপর দুজনেই দুজনের দিকে পানি ছুড়তে লাগলাম। বেশ খানেক্ষণ এরোকম হাসি মজা খুনসুটি করে কিছু একটা ভেবে দুজনেই থমকে গেলাম। আদ্রিয়ান আর আমি দুজনেই তাড়াতাড়ি উঠে এলাম। আমরাতো এদিকে কাউকে কিছু বলে আসিনি নিশ্চই খুজছে ওরা আমাদের আদ্রিয়ান আমার হাতে ওরনাটা দিয়ে বললো
.
– জানপাখি তাড়াতাড়ি করো নইলে আজকে বকুনি একটাও মাটিতে পরবে না!
.
আমি ভ্রু কুচকে গায়ে ওরনা জরাতে জরাতে বললাম
.
– মার নিচে পরেনা শুনেছি কিন্তু বকুনি নিচে পরবেনা? সেটা কীভাবে?
.
– ঐ হলো এবার চলো বেবি।
.
বলেই আমার হাত ধরে দ্রুতপদে হাটা দিলো। বেশকিছুক্ষণের মধ্যে পৌছেও গেলাম, গিয়ে দেখি তারা সবাই বসে ডাবের পানি খাচ্ছে আর রাগে ফুসছে। আমাদের দেখেই আদিব ভাইয়া আদ্রিয়ান কে বলল
.
আদিব ভাইয়া: আরে ভাই বউ নিয়ে রোমান্স করতে যাবি খুব ভালো কথা। তো বলে যাবিতো যে কোন চুলায় যাচ্ছিস?
.
ইশরাক ভাইয়া: এক্সাক্টলি এখন তোরা হারিয়ে গেছিস নাকি সমুদ্রে ডুবে গেছিস কীকরে বুঝতাম

আদ্রিয়ান একটা ডাব নিয়ে খেতে খেতে বলল
.
আদ্রিয়ান: তোরা কী মাথা মোটা আমার বউ আর আমি দুজনেই গায়েব তোদের বোঝা উচিত ছিলো
.
জাবিন: তা ভাবী কী কী করলে?
.
আমি কিছু বলব তার আগেই আদ্রিয়ান বলল
.
– মোগল সম্রাজ্যের পতনের কারণ প্রাকটিক্যালি দেখছিলো।
.
জাবিনের সাথে সাথে সবাই চুপ হয়ে ডাব খাওয়ায় মনোযোগী হলো। হঠাৎ খেয়াল করলাম সবাই থাকলেও আপি নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে আপি কই? জাবিন আঙ্গুলের ইশারা দিয়ে দেখালো। আমিতো তাকিয়ে শকড আপি একটা ছেলের সাথে বসে কথা বলছে হেসে হেসে। আদ্রিয়ান একটা খোচা মেরে বলল
.
– তোমার দুলাভাই আসার সময় হয়ে গেছে।
.
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আপি আর ঐ ছেলেটা এলো আমরা সবাই দেখছি ছেলেটাকে নট ব্যাট, 6 feet এর মতো লম্বা, ওয়েল বডি ফিটনেস, দেখতেও ভালো, ভালোই মানাবে আপির সাথে। ছেলেটার নাম ইফাজ, নিউরো সার্জন। ওনিও ঘুরতেই এসেছেন এখানে। বারোজন আছে ওনারা। আর ইনসিডেন্টলি আমরা একি হোটেলে উঠেছি। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করলাম আমরা।
.
সি বিচে যে যার মতো ইনজয় করছি হঠাৎ এমন কিছু দেখলাম যা দেখে আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান সানগ্লাস পরে আছে, বেশ কোয়েকটা মেয়ে ওকে ঘিরে সবাই নানারকম কথা বলছে কেউ সেলফি তুলছে, আবার কেউ গাল টেনে দিচ্ছে। ওও খুব হেসে হেসেই কথা বলছে ওদের সাথে, হঠাৎ একটা বিদেশি টাইপের মেয়ে এসে ওর গালে কিস করে দিলো। যা দেখে যেনো আমার মাথায় বিস্ফোরণ হলো। আদ্রিয়ান হকচকিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে একটু দূরে সরে গেলো। হঠাৎ জাবিন
.
– দেখোছো ভাবি একেই বলে পুরুষ মানুষ। ভূলেই গেছে তুমি এখানে আছো।
.
আমি কটমটে চোখে জাবিনের দিকে তাকালাম ও সাথে সাথে চোখ সরিয়ে দাত দিয়ে নখ কাটতে লাগল। আমি রাগে ফুসতে ফুসতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম ওর চোখও আমার দিকে পরতেই ও একটা ঢোক গিলল। কোনরকমে ওদের কাটিয়ে এদিকে চলে এলো। কিন্তু আমি রেগে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম ওও চেষ্টা করেছে কথা বলতে কিন্তু আমি বলিনি, টোটালি ইগনোর করে গেছি। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে কেনাকাটা করে ফিরে এলাম হোটেলে এসে ওরা আলাদা হতেই আমি আপিকে চেপে ধরলাম। বাট আপি জাস্ট বন্ধুত্ব হয়েছে বলে ব্যাপারটা চেপে গেলো। বাট সবাই বুঝলাম যে আপির মনের মধ্যে ঘন্টা বেজে গেছে।
.
হোটেলে ফিরে যে যার রুমে চলে গেলাম আমি ভালোভাবে সাওয়ার নিয়ে রুমে এসে চুল শুকিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে চলে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে, গিয়ে দেখি ইফাজ ভাইয়ারাও আছে আর মজার ব্যাপার আপির পাশেই বসেছে ইফাজ ভাইয়া, দুজনেই আস্তে আস্তে কথা বলছে। আর সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। খেতে খেতে আদ্রিয়ান বলল

– খেয়ে রেস্ট করে দুপুরের লান্চের পর আমরা রামু মন্দির যাবো
.
কাব্য : রামু মন্দির?
.
ইফাজ ভাইয়া: হুম এখানকার সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির
.
আদ্রিয়ান: এক্সাক্টলি 100 feet এর বৌদ্ধ মূর্তি আছে ওখানে।
.
খাওয়ার মাঝে আদ্রিয়ান বেশ কয়েকবার তাকিয়েছে আমার দিকে কিন্তু আমি ইগনোর করেছি। খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলাম রেস্ট করতে শুয়ে শুয়ে কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ আমার কপালে কারো ঠোটের স্পর্শ পেয়ে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ওকে দেখেই আমার মাথা গরম হয়ে গেলো উঠে বসে বললাম
.
– আপনি? আপনি কেনো এসছেন এখানে? কোনো মেয়ের রুমে পারমিশন ছাড়া আসতে লজ্জা লাগেনা?
.
– আমার বউয়ের রুমে আমি এসছি লজ্জা কেনো করবে?
.
– কে বউ কার বউ আমি কারো কোনো বউকে চিনিনা।
.
ও আমাকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আমি চিনলেই হব
.
আমি ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বললাম
.
– ডোন্ট টাচ মি।
.
– আরে এতো রাগ করছো কেনো। ওরা আমার কাছে এসেছে আমার কী দোষ?
.
আমি ওর বুকে ধাক্কা দিয়ে বললাম
.
– কী দোষ মানে অফকোর্স সব দোষ তোমার। ওরা কেনো আসবে তোমার কাছে সেই পারমিশন দেবে কোনো তুমি?
.
– তো কী তাড়িয়ে দিতাম? ব্যাড ম্যানার্স বেবি ( অসহায় ভাবে)
.
– একদম ম্যানার্স শেখাবেনা আমাকে। সাহস কতো ঐ মেয়েদের? আমার জিনিস আমি এখোনো ঠিকভাবে টাচ করলাম না, অন্য কেউ এসে গালে কিস করবে, গাল টেনে দেবে কেনো? ( চিৎকার করে)
.
– What..What did you say? ( অবাক হয়ে)
.
– আমার মাথা..

বলে ধাক্কিয়ে বের করে দিলাম আমার রুম থেকে। দূপুরে লান্চের একটু পরেই সবাই বেরিয়ে গেলাম রামু মন্দির এর উদ্দেশ্যে। এরমধ্যে আদ্রিয়ানের সাথে কোনো কথা বলিনি। আমাদের সাথে ইফাজ ভাইয়া আর তার দুই বন্ধুও এসছে। আধা ঘন্টারো বেশি সময় পর আমাদের জিপ দুইটা থামলো রামু মন্দিরের সামনে। বেশ বড় বৌদ্ধ মন্দিরটা বৌদ্ধ দেবের বিভিন্ন মূর্তি আর আর ঠিক মাঝখানে 100 feet এর সোনালী রং এর বৌদ্ধ মূর্তি যেই মূর্তিটায় বৌদ্ধদেব এক হাতে মাথা রেখে সেই হাতে ভর দিয়ে শুয়ে আছেন। বিভিন্ন ছবি তুললাম সেই মূর্তিটার সাথে আর আদ্রিয়ানের সাথেও বেশ কয়েকটা তুললাম কারণ সবাই ছিলো বাট কোনো কথা বলিনি। মন্দিরের বিভিন্ন সেবকদের সাথে কথা বলল আদ্রিয়ান, একজন সেবক আমাদের পুরো মন্দির ঘুরিয়ে দেখালো আর বর্ণণা করলো কোনটা কী, ঘুরতে ঘুরতে একবার ও আমার কাধে হাত রাখতেই হাতটা সরিয়ে দিলাম আমি। ওও আর কিছু বললোনা অন্য দিকে চলে গেলো, যা বাবাহ উল্টো রাগ করলো? রামু মন্দিরের বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর সন্ধ্যার দিকে ফিরে এলাম হোটেলে, জিপে আমি বা আদ্রিয়ান কেউ কারো সাথে কথা বলিনি।
.
সন্ধ্যায় আর আদ্রিয়ান আমার রুমে আসেনি, রাতে রুমে বসে ভাবছি যে আদ্রিয়াধকে কল দেবো কী না হঠাৎ ই আদ্ররিয়ান আমার রুমে এসে আমার পাশে বসল। একেই সকালে ঐ কান্ড করেছে তার ওপর বিকেলে উল্টো আমার উপরেই রাগ দেখালো হুহ বলবোনা কথা তাই উল্টো ঘুরে বসলাম। হঠাৎ ও বলল
.
– আমি তোমার ওপর সবটা চাপিয়ে দিয়েছি তাইনা?
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে ও একটু মলিন হেসে বলল
.
– এই যে তোমার অজান্তেই তোমার সাথে এনগেইজমেন্ট করলাম, তুমিতো জানতেই না যখন জানতে পারলে তখন তোমার কিছুই করার ছিলোনা। বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হলো আমায়। এগুলো তো চাপিয়ে দেওয়াই তাইনা?
.
বলেই ও বেলকনিতে চলে গেলো আমি এখনো শকের মধ্যে আছি কী বললো এগুলো ও? আমি নিজেকে সামলে তাড়াতাড়ি বেলকনিতে গিয়ে তাড়াতাড়ি ওর পাশে দাড়ালাম। আদ্রিয়ান আমাকে দেখে বলল
.
– আমি খুব স্বার্থপর এর মতো কাজ করেছি তাই না? একবারো জানতেও চাইনি তুমি কী চাও। আমার তোমার মতামত নেয়া উচিত ছিলো। মাঝেমাঝে মনে হয় তুমি আমাকে মেনে নিয়েছো কারণ তোমার কাছে আর কোনো অপশনই খোলা রাখিনি আমি, বাধ্য করেছি তোমায় আমি। I’m sorry yaar..
.
আমার চোখ ছলছল করছে কী বলছে ও এগুলো? আমি বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছি ওকে। ওকে যে আমি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি সেটা কী ও বোঝে না। কেনো এসব বলে কষ্ট দিচ্ছে আমাকে? ও আবারো বলল

– এখন তো মনে হচ্ছে তোমার সাথে এতোটা ঘনিষ্ট হয়েও ঠিক করিনি আমি। হয়তো সেগুলোও বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছো।
.
– আদ্রিয়ান..?
.
ও এবার আমার দিকে তাকালো তাকিয়ে দেখলো আমার চোখ পানিতে ভরে উঠেছে সেটা দেখে ও আমাকে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আরে পাগলী কাদছো কেনো? আমি জাস্ট আমার ভূলগুলো বললাম এতে তোমার কোন দোষ নেই।
.
– তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না আদ্রিয়ান। আমি আগেও বলেছি আমি কম্প্রমাইস করি না। যদি আমি তোমাকে মানতে না পারতাম তাহলে এতোটা এগোতেই দিতাম না। আমি বাধ্য হয়ে কিছুই করিনি আদ্রিয়ান।
.
– আচ্ছা সরি! কান্না বন্ধ করো!
.
বলেই আমার চোখ মুছে দিলো। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে রেলিং ধরে দূরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ওখানে রাখা চেয়ারে বসে পরল কিছুক্ষণ নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রাখলো তারপর বলল
.
– জানো মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো আবার মাঝে মাঝে মনে হয় মানিয়ে নিচ্ছো। ভীষণ দোটানায় ভুগছি, কখনো মনে হয় অন্যায় করেছি তোমার সাথে
.
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওর কথা শুনে। বারবার না চাইতেও কষ্ট দিয়ে ফেলি আমি ওকে। খুব ইচ্ছে করছে বলতে যে আদ্রিয়ান আমিও ভালোবাসি তোমাকে কিন্তু কোন এক জড়তার কারণে বলতে পারছিনা। আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু হাসতে পারলো না। ও উঠে দাড়িয়ে তাকালো আমার দিকে। কিন্তু ওর ঐ মলিন মুখ দেখতে পারছিনা আমি, এখন ওর মুড ঠিক করতে হবে যেভাবেই হোক। তাই আমি বললাম
.
– আদ্রিয়ান চোখটা বন্ধ করোতো
.
ও ভ্রু কুচকে বলল
.
– কেনো?
.
– করোই না আর আমি বলার আগে খুলবেনা কিন্তু!
.
– বাট হোয়ায়?
.
– করবে কী না?
.
– আচ্ছা করছি।
.
বলেই ও চোখ বন্ধ করলো
.
– খুলবেনা কিন্তু আদ্রিয়ান
.
– ওকেহ

আমি গিয়ে ওর পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে দাড়ালাম তারপর পা উচু করে ওর গলা আকড়ে ধরলাম ও চোখ বন্ধ করেই ভ্রু কুচকালো, কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওর ডান গালে আলতো করে কিস করলাম ওর ঠোটে হালকা হাসি ফুটলো , এরপর ওর বাম গালেও কিস করলাম ওর ঠোটে ঝুলে থাকা হাসির রেখাটা বড় হলো। আমি এক হাতে ওর ঘার ধরে আরেক হাতে ওর গালে হাত বুলাতে লাগলাম। আসার একদিন আগেই সেভ করেছে তাই এখনো তেমন দাড়ি না উঠলেও টাচ করলে হালকা হালকা ফিল হয়, আমাকে ওর গালে হাত বুলাতে দেখে ও আবারো ভ্রু কুচকালো তবে ঠোটে হাসি ঝুলে আছে। আমি ওর দুকাধে হাত রেখে আলতো করে ওর গলায় ঠোট ছোয়ালাম ও একটু কেপে উঠল, সাথেসাথেই আমার কোমরে হাত রাখল। আমি আবারো ওর গালে হাত বুলাতে লাগলাম। ও ভ্রু কুচকে আছে আর ঠোটে হালকা হাসি। ওর গলায় নাক দিয়ে একটু স্লাইড করেই সাথে সাথেই ওর কাছ থেকে দূরে সরে দাড়ালাম। ওকে চোখ খুলতে বলে এক সেকেন্ড ও দেরী না করে রুমে এসে খাটে বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি আমি ভাবতেও পারছিনা যে আমি এগুলো করেছি? আমি? নিজেরই লজ্জা করছে এখন। আদ্রিয়ান কে রুমে আসতে দেখে দাড়িয়ে গেলাম ওর চোখে চোখ রাখতেই লজ্জা করছে আমার। ও এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বলল
.
– একটুখানি মুড অফ করলে যদি বউয়ের এমন আদর পাওয়া যায় তাহলে আমি সারাদিন মনখারাপ করে থাকতে রাজি।
.
আমি লজ্জায় কিছু বলতে পারছিনা ও আমাকে ঘুরিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
.
– কালকে তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে। So be ready..
.
– কালকে?
.
– হুম কালকে তোমাকে যেই সারপ্রাইজ দেবো আই সোয়ার তুমি চমকে যাবে।
.
কথাটা বলেই আবার আমাকে জরিয়ে ধরল। আমি ভাবছি কী এমন সারপ্রাইজ দেবে যে আমি চমকে যাবো? আমাকে চমকে দেবার মতো কী করতে চলেছে ও? তবে যাই হোক আমিও এক্সাইটেড এটা দেখার জন্য যে কাল কী হয়
কথাটা বলেই আবার আমাকে জরিয়ে ধরল। আমি ভাবছি কী এমন সারপ্রাইজ দেবে যে আমি চমকে যাবো? আমাকে চমকে দেবার মতো কী করতে চলেছে ও? তবে যাই হোক আমিও এক্সাইটেড এটা দেখার জন্য যে কাল কী হয়। ও আমার গালে একটা কিস করে চলে গেলো।
.
পরের দিনটায় সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পরল যার ফলে কারোই বেরোনো হলো না। কিন্তু সেদিন সবাই আড্ডা দেবার বদলে নিজেদের মধ্যে কীসব প্লানিং এ ব্যাস্ত হয়ে আছে। আর আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। যার কাছে জিজ্ঞেস করছি সেই এটা ওটা বলে কাটিয়ে দিচ্ছে। আদিব ভাইয়াকে দেখতে পেলাম ফোনে কীসব করতে করতে আসছে, দেখেই ডাকলাম
.
– ভাইয়া?
.
– হুম বলো
.
– আজকের কোনো প্লানিং আছে নাকি? সবাই ব্যাস্ত আপনারা

– প্লানিং? নো, কোনো প্লানিং নেই তো! কী আবার প্লানিং হবে। তুমি চিপস খাও।
.
বলেই আমার হাতে একটা চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো, আজব? কেউ কিছু শেয়ারই করেনা আমার সাথে? আমার কোনো মূল্যই নেই কারো কাছে? যা খুশি করুক আমার কী? আমি চিপস খাচ্ছি আর ভাবছি এসব হচ্ছেটা কী? হঠাৎ পেছন থেকে আদ্রিয়ান এসে জরিয়ে ধরে বলল
.
– কী দেখছো?
.
আমি ওর মুখে একটা চিপস ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম
.
– কী হচ্ছে বলোতো? সবাই নিজেদের মধ্যে ব্যাস্ত?
.
ও চিপস চিবোতে চিবোতে বলল
.
– তো এই বৃষ্টির মধ্যে আর কী করবে?
.
– হুম তাও ঠিক।
.
বলেই আরেকটা চিপস খাইয়ে দিলাম ওকে। ওও খেতে লাগল। হঠাৎ নজর পরল আপি আর ইফাজ ভাইয়ার দিকে দুজনে বেঞ্চে বসে গল্প করছে। আদ্রিয়ান আমার কাধে থুতনি রেখে চিপস চিবোচ্ছে। আমি ওর মুখে আরো একটা চিপস দিতে দিতে চিন্তিত ফেস করে বললাম
.
– তুমিকি সেটাই ভাবছো যেটা আমি ভাবছি?
.
ও চিপসটা মুখে নিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল
.
– হুমম। খুব শিঘরোই বিয়ের দাওয়াত পাবো।
.
– ভালোই হবে তাহলে
.
হঠাৎ ই আদ্রিয়ান একটু অসহায় কন্ঠে বলল
.
– তুমি এতো বাচ্চা কেনো হলে বলোতো?
.
– মানেহ?

– মানে তুমি যদি হিয়ার মতো বড় হতে তাহলে আমাকে ওয়েটিং লিস্টে থাকতে হতো না এক্ষুনি বিয়ে করতে পারতাম তোমাকে।
.
– আমি ছোট?
.
– ছোটই তো ১৮ বছরের পিচ্ছি বাচ্চা।
.
বলেই আমার কাধে একটা চুমু দিলো। আমি কাধটা সংকোচিত করে বললাম
.
– আদ্রিয়ান আমরা বাইরে আছি অনেকে আছে এখানে দেখলে কী ভাববে?
.
– ওকে চলো রুমে যাই, ওখানে কেউ দেখবেনা।
.
আমি ওর পেটে কুনুই দিয়ে খোচা মেরে বললাম
.
– অসভ্য।
.
– একে ভালোবাসা বলে বেইবি। By the way get ready for tonight…
.
বলেই চোখ মেরে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমার মুখে চিপস ঢুকিয়ে চিবোতে চিবোতে ভাবছি যে What is gonna happen tonight?
.
সারাদিন বোরিং ভাবেই কাটলো। সন্ধ্যায় রুমে বসে গেমস খেলছি আর ভাবছি অসভ্যটা একবারো জ্বালাতে এলোনা কেনো, আজ তো ওর সারপ্রাইজ দেবার কথা আমাকে সেটার কী হলো? হঠাৎ ফোনে মেসেজ এলো মেসেজ চেক করে দেখলাম আদ্রিয়ানের ই মেসেজ যেটাতে লেখা আছে
.
” Ready hoye niche chole esho.. fast! Kono prosno korbe na”
.
আমি অবাক হলাম এখন নিচে যেতে হবে তাও রেডি হয়ে স্ট্রেন্জ! আমি একটা কালো লং গোল জামা, ব্লু জিন্স আর ব্লু ওরনা পরলাম, চুল আচরে ছেড়ে দিয়েই নিচে চলে গেলাম। নিচে নামতেই আবারো মেসেজ এলো।
.
” Sea beach a chole aso”

এখন আমাকে একা একা সি বিচ যেতে হবে? ধুর ভাল্লাগেনা! আবারো টুং করে উঠলো
.
“don’t worry! You are not alone”
.
আজব! আমি কী ভাবছি তাও বুঝে যাচ্ছে? এটুকুতো সিওর যে ও আমাকে দেখছে, আশেপাশে তাকালাম কিন্তু কাউকে পেলাম না। একগাধা রাগ নিয়েই সি বিচে গেলাম। একেই সন্ধ্যে হয়ে গেছে তারওপর এসব? আবারো মেসেজ এলো
.
” Ba dik diye hatte thako”
.
আমি বা দিকে সোজা হাটতে আছি যতই হাটছি পরিবেশ ততোই জনমানবহীন হয়ে যাচ্ছে এবার আমার ভয় করছে। পুরো জায়গাটা অন্ধকার আমি ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। হঠাৎ পেছন থেকেই কেউ আমার চোখ ধরল আমি প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারলাম এটা আদ্রিয়ান। তাই আমি বললাম
.
– এসব কী আদ্রিয়ান?
.
ও কানের কাছে মুখ এনে বলল
.
– তোমার জন্য সারপ্রাইজের এরেন্জমেন্ট
.
বলেই একটা কাপড় দিয়ে চোখ বেধে দিয়ে বলল
.
– চুপচাপ যেখানে নিয়ে যাচ্ছি চলো।
.
বলেই আমার দুই বাহু ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আমার বুকের মধ্যে টিপটিপ করছে যে না জানি কী সারপ্রাইজ দেয় ও আমাকে। পথ যেনো শেষি হচ্ছেনা আমি অধৈর্য হয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান কোথায় যাচ্ছি আমরা?
.
– উফফ এতো অধৈর্য কেনো তুমি। গেলেই দেখতে পাবে।
.
আমিও আর কিছু বললাম না চুপচাপ যেতে থাকলাম ওর সাথে হঠাৎ ও থেমে গেলো। আমার কানের কাছে এসে বলল
.
– Are you ready?
.
– Yeah
.
– Here is your surprise…
.
বলেই আস্তে করে আমার চোখের বাধন খুলে দিলো। আমি চোখ খুলে তাকালাম। তাকিয়েতো আমি শকড বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই সারপ্রাইজ দিতে এনছে ও আমাকে? আমি টোটালি ফ্রিজড হয়ে আছি।

কী এমন দেখলাম? আসলে আমি বিচের একটু দূরে দাড়িয়ে আছি দূরে সমুদ্রের পানিতে হাজারো জলজলে মুক্তা ছড়িয়ে আছে, মনে হচ্ছে আজ আকাশের সাথে সমুদ্রেও তারা উঠেছে। ঠিক তার পরে যেখানে সাগরের ঢেউয়ের স্রোত আর পৌছচ্ছে না, সেখানে প্রদিপের মতো দুই সিরিতে সাজিয়ে রাখা তবে আমি যে বরাবর দাড়িয়ে আছি সেই বরাবর রাস্তা করে দেওয়া আছে যাওয়ার জন্যে যেমন তেমন রাস্তা না ফুল বেছানো রাস্তা, প্রদিপগুলো সামনেই ঘনকরে ফুলের পাপড়ি বিছাতে বিছাতে মাঝখান দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে, লুডো স্টাইলে। অসংখ্য ফুলের পাপড়ি আর ফুল ছেটানো পুরো বিচে সাগরের জলেও মুক্তোর সাথে ফুলের পাপড়িও আছে। এবার চারপাশে তাকালাম চারপাশে অসংখ্য ফুল মোমবাতি আর প্রদিপ দিয়ে সাজানো। আর ঠিক আমার সামনে একটু দূরে রং বেরং এর মোমবাতি আর ফুলদিয়ে লেখা
HAPPY SIX MONTH ANNIVERSARY MY LADY
আমি একহাতে মুখ চেপে ধরলাম। আমিতো ভূলেই গেছিলাম আমাদের এনগেইজমেন্টের আজ ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। এতো সুন্দর পরিবেশ জাস্ট মুগ্ধ করে রেখেছে আমায়, চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে আমার। আদ্রিয়ান পেছন থেকে আমাকে জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বলল
.
– Happy six month anniversary sweetheart কেমন লাগল? It was your dream right?
.
– তুমি কী করে জানলে?
.
ও অামাকে ছেড়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল
.
– Sorry আসলে তোমার ডাইরীটা পরে নিয়েছিলাম আর সেখানেই লেখা ছিলো। তাই তো সমুদ্রে ঘুরতে আসা।
.
আমি চারপাশে আবারো তাকালাম। হঠাৎ ও বলল একটা জিনাস মিসিং আছে, সেটাও কম্প্লিট করছি ওয়েট বলেই গুনতে শুরু করলো
.
– 10, 9,8,7,6,5,4,3,2,1
.
সাথে সাথেই অসংখ্য ফানুস উড়তে লাগলো চারপাশ দিয়ে। আমি জাস্ট শকড, অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য এমন মনে হচ্ছে যেনো সমুদ্রের ভেতর থেকেই ফানুস গুলো উঠছে। হঠাৎ আকাশে বিষ্ফোরোনের মতো করে লেখা উঠলো
” I LOVE YOU”
আমি এবার দুহাতে মুখ চেপে ধরে আছি চারপাশের এই অমায়িক সৌন্দর্য তার ওপর আকাশের হয়ে চলা এসব কান্ডে আমি এক কথায় শিহরিত। ছোটবেলা থেকেই সপ্ন ছিলো কেউ ঠিক এইভাবেই আমার যেকোন একটা স্পেশাল দিন সেলিব্রেট করবে, জাস্ট একটা সপ্ন ভেবেই ডাইরীর পাতায় লিখে রেখেছিলাম বাট আমি ভাবতে পারিনি যে কেউ একজন সত্যিই আসবে আমার জীবনে যে আমার সব সপ্নকে পূরণ কর দেবে। এরকম এরেন্জমেন্ট করা মোটেও সহজ ব্যাপার ছিলোনা। আমার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল আদ্রিয়ান সাথেসাথেই আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল
.
– এতো কষ্ট করে এতকিছু এরেন্জ করলাম কী তোমার চোখে পানি দেখার জন্য?
.
– সবসময় চোখের পানি কষ্টের হয়না।
.
– জানি কিন্তু আমি তোমার মুখে শুধু হাসি দেখতে চাই বুঝলে।

আমি আর কিছু না বলে ওকে জরিয়ে ধরে বললাম
.
– Thank you so much…
.
ও দুহাতে জরিয়ে নিলো আমায় বেশ কিছুক্ষণ পর ছাড়িয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল
.
– Give me your hand my lady..
.
আমি মুচকি হেসে ওর হাত ধরলাম। ও হাত ধরেই ফুল বেছানো সেই রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেলো আমাকে। আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য দেখছি। একটু এগোতেই একটা টেবিল দেখলাম টেবিলটাও সাছানো সুন্দর করে, টেবিলে একটা কেক আর একটা কোলড্রিংক এর বোতল আর দুটো গ্লাস রাখা। আমি ওর দিকে তাকাতেই ও মুচকি হেসে নাইফ ধরিয়ে দিলো আমার হাতে আর ও পেছনে দাড়িয়ে আমার হাতের ওপর হাত রেখে কেকটা কাটলো। তারপর একটা পিস নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরল আমি অর্থেক খেয়ে বাকি অর্ধেক ওর হাত থেকে নিয়ে ওর মুখে দিলাম। ও সেটা খেয়ে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ও গিয়ে অপজিটে বসল। সাগরের টেউয়ের আওয়াজ, চারপাশের স্বর্গীয় পরিবেশ আর আমার এই প্রিয় মানুষটার সাথে অনুভব করছি আমি। ও দুটো গ্লাসে সফট ড্রিংক ঢেলে আমার দিকে একটা এগিয়ে দিলো আর নিজে একটা নিলো। ও আমার চোখে চোখ রেখে গ্লাসে চুমুক দিলো। আমিও দিকে তাকিয়েই খেতে থাকলাম। কেউ কিছুই বললাম না। কিছুক্ষণ পর ও উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে সাগরের পারে দাড় করিয়ে বলল
.
– সব তোমার জন্যে। Go and feel it…
.
আমি দৌড়ে চলে গেলাম সাগরের ওখানে চারপাশে মুক্ত জ্বল জ্বল করছে আমি আনন্দে আত্নহারা হয়ে ঘুরে ঘুরে সব দেখছি দুহাতে মক্ত তুলে নিয়ে ওপরের দিকে ছুড়ে মারছি যা আবার সাগরে গিয়েই পড়ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আদ্ররিয়ান আমার কোমর ধরে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো তারপর হাতের মুঠোয় করে অানা ফুল গুলো ফু দিয়ে আমার মুখে ফেললো। সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি। ও আমাকে আলতো করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল
.
– I love you my life…
.
আমি কিছু না বলে ওকে আকরে ধরলাম ও আমার মাথায় থুতনি রাখল। এরপর আমাকে ছেড়ে হাত ধরে হাটতে লাগল। আমিতো জাস্ট পরিবেশটাই দেখছি। কী চমৎকার ভাবে ডেকোরেট করা। একটু পর দুজনেই বসলাম নিচে। আমি চারপাশটা আরেক দফা দেখে ওকে বললাম
.
– এতো কিছু কীকরে করলে?
.
ও ওর বুকে আমাকে টেনে নিয়ে বলল
.
– তোমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমি সব করতে পারি। আর এটা আমাদের সিক্স মান্থ এনিভারসিরি উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য উপহার ছিলো।

আমি কিছু না বলে ওর কাধে মাথা রাখলাম। ছয় মাস হয়ে গেলো? ছয় মাস আগেও এই ছেলেটাকে আমি চিনতামো না। কিন্তু হঠাৎ একদিন বাড়িতে ওর বিষয়ে আলোচনা হলো। যেই আমি কাউকে নিয়ে কোনোদিন ইন্টারেস্ট দেখাইনি সেই আমি শুধু মাত্র ওকে না দেখেই ওর বিষয়ে জানার জন্যে মরিয়া হয়ে গেলাম। আপির কাছে কী বাচ্চামোটাই না করেছি। নিজের অজান্তেই ওকে নিয়ে কল্পোনার জগত তৈরী করলাম। একবার তো দেখা হয়েও হলোনা আমার ঘুমের জন্যে। এরপর এলো সেই দিন ওর সাথে হওয়া প্রথম দেখা, কিন্তু সেটাও বেশ মজার ছিলো। ওর সাথে ধাক্কা খেয়ে সিড়ি দিয়ে পরে যাওয়া তারপর ওর সেই এটিটিউট আমার চোখে পানি দেখে বকা দেওয়া। প্রথম কোনো ছেলের ওপর ক্রাশ খেয়েছিলাম সেদিন। এরপর ভাগ্য বার বার আমাদের দেখা করালো কখনো বুয়েটে, কখোনো কার্জনে। কিন্তু আমি ওকে জানতাম AD হিসেবে আমিতো বুঝতেই পারিনি এই সেই আদ্রিয়ান যাকে নিয়ে আমি এক কল্পনার জগত বানিয়েছি। আর প্রতিবার দেখাতেই ওর আমার প্রতি করা ডোন্ট কেয়ার ভাব আমার খারাপ লাগতো, কেনো? সেটা নিজেও বুঝতে পারতাম না, আবার পরোক্ষনেই ও এমন কিছু করতো যা আমাকে দিধায় ফেলে দিতো যে ও কী চায়? সেটা ফুচকায় ঝাল খেয়ে নেবার জন্য অতো কেয়ার আর বকা হোক বা আমার ওরনায় হাত দেবার অপরাধে তার হাতটাই ভেঙ্গে দেওয়া হোক। কখনো এমন ভাব করতো আমি ওর কাছে কোনো মেটারি করিনা আবার কখোনো মনে হতো আমিই ওর সব। এরপর এলো সেই দিন যেদিন জানতে পারলাম এডি ই হলো আদ্রিয়ান, তাও জানতে পারলাম ওকে ব্যাট দিয়ে মারতে গিয়ে। সত্যিই হাস্যকর। তারপরে নবীন বরনেই ওর ওই কাজ সত্যিই শকিং ছিলো। এরপর এলো সেই দিন ওর বার্থডে পার্টিতে গিয়ে জানতে পারলাম ওর এনগেইজমেন্ট, সেটা শুনে বুকের কোথাও একটা চাপা কষ্ট হচ্ছিলো, কিন্তু কেনো সেটা বুঝিনি। আশ্চর্যজনক ভাবে জানলাম ওর এনগেইজমেন্ট আর কারো নয় বরং আমার সাথে। নিউসটা শুনে যেনো ঝটকা খেয়েছিলাম আমি এরপর আব্বু আর আঙ্কেলের কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। তারসাথে এই প্রশ্ন ও মনে উঠেছিল যে ও আমাকে ভালোবাসে কী না? এনগেইজমেন্টের পরে তিনদিন ওর কথা না বলা কষ্ট দিয়েছিলো আমাকে কিন্তু এরপরেই ও এমন সব কিছু মুহুর্ত দিলো আমাকে যা ওর প্রতি জন্মানো অভিমান তো মেটালোই সাথে ওর প্রতি তীব্র ভালোলাগাও জন্মালো, চকলেট খাওয়ানো থেকে শুরু করে ঐ দাদুর প্রতি ওর ভালোবাসা আর চিন্তাধারা। এরপর ওর করা সেই কনফেশন যা আমাকে কাপিয়ে রেখেছিলো। এরপর যেদিন প্রথম আমার এতো কাছে এলো রাগের বসে আসলেও সেই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নাহ। ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত কেমন স্পেশাল ফিল করিয়েছে আমায়। তারপর আমাকে জরিয়ে ধরে ওর কান্না নাড়িয়ে দিয়েছিলো আমার মন। নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম যে He loves me a lot. তারপর থেকে আমার মনেও ওর জন্যে অনুভূতি বাসা বেধেছিলো। আর সময়ের সাথে সেটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিলো। এরপর ও মিসিং না হলে তো জানতেই পারতাম না যে কারো জন্যে এতোটাও পাগলামী করতে পারি আমি। তখনি বুঝতে পারলাম he’s my lifeline
এভাবেই ছয়মাস কাটলো ওর সাথে হাসি মজা খুনশুটিতে। এসব কল্পনা করেই ওর দিকে তাকালাম। ওর বাহু জরিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ওকে পাগলের মতো চাই আমি, ওকে একটা দিন না দেখতে পেলে সেই দিনটা বিষের মতো লাগে আমার কাছে। ওর সাথে যখন থাকি তখন মনে হয় আর কিচ্ছু চাই না আমার, এমন মনে হয় যেনো ওর ঐ বুকে মাথা রেখেই সারাজীবন পার করে দিতে পারবো আমি। মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু ওর জন্যেই বেচে আছি আমি। একেই তো ভালোবাসা বলে তাইনা। আপির বলা সব কথাগুলো আজ মিলে গেছে। ভালোবাসি আমি ওকে খুব ভালোবাসি।

হঠাৎ ও বলল
– কী ভাবছো?
.
– ছয় মাস হয়ে গেলো তাইনা?
.
– হুম সময় খুব দ্রুত চলে যায়। তবে এই ছয়মাস খুব গুরত্বপূর্ণ আমার জন্যে কারণ এই ছয় মাসে আমি তোমাকে পেয়েছি একদম নিজের করে।
.
বলে আমার গাল থেকে চুল সরিয়ে গালে একটা কিস করল। আমি ওকে ছাড়িয়ে উঠে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ওও উঠে এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে মুখ স্লাইড করতে লাগল, চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আমি। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন ও থামছেই না তখন ঘুরে ওর বুকে মুখ গুজে ওকে আকরে ধরলাম আমি। ওও দুহাতে আকরে ধরে আছে আমাকে। ও ওভাবেই আমাকে জরিয়ে আমার কাধে মুখ দিয়ে স্লাইড করতে লাগল। ওর ছোয়া যতো গভীর হচ্ছে আমি ততোই ওকে জাপটে ধরছি। আমি চোখ বন্ধ করেই ওকে আকরে ধরে বললাম
.
– I love you Adriyan
.
ও সাথে সাথেই থেমে গেলো। ওর হাতও আলগা হয়ে এলো আমাকে ছাড়িয়ে দুবাহুতে হাত রাখল। আমি চোখ বন্ধ করেই আছি, নিশ্বাস ক্রমস ঘন হচ্ছে আমার, আস্তে আস্তে খুলে তাকালাম ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ও কাপাকাপা গলায় বলল
.
– তুমিকি কিছু বললে?
.
আমি জোরে শ্বাস নিতে নিতেই বললাম
.
– I love you…
.
– কী বললে?
.
একটু বিরক্ত হলাম। আমিকি এতোটাই আস্তে বলছি? যাই হোক বলে যখন ফেলেছিই তখন আর কী করার তাই একটু জোরেই বললাম
.
– Adriyan I love you….
.
– অ্ আরেকবার বলো?
.
আমি এবার মুচকি হেসে ওর থেকে বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে গেলাম তারপর ওর দিকে তাকালাম ও অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি এবার চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বললাম
.
– I LOVE YOU ADRIYAN…

আমার গলার আওয়াজ রাস্তার পাশের পাহাড়গুলোতে লেগে বারবার প্রতিধ্বনি হতে লাগল। আমি আস্তে আস্তে তাকালাম ওর দিকে, আদ্রিয়ানের মুখে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠলো ওও কয়েককদম পিছিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে। আমি আর এক মুহূর্ত দেরী না করে দৌড়ে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলাম ওও দুহাতে আমায় জরিয়ে ধরে বলল
.
– I love you ..
.
– I love you too…
.
অনেকটা সময় দুজন দুজনকে ওভাবেই জরিয়ে ধরে ছিলাম। হঠাৎ মেঘে গুরুম করে উঠলো। আদ্রিয়ান বলল
.
– এখন ছাড়ো যেত হবে
.
– উহু ( ওর বুকে মুখ গুজে)
.
– বৃষ্টি নামবে তো!
.
– নামতে দাও
.
– ভিজে যাবো আমরা
.
– ভিজতে দাও
.
– ঠান্ডা লেগে যাবে তো
.
– লাগতে দাও
.
– জ্বর আসবে কিন্তু
.
– আসতে দাও
.
– তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
.
– completely..
.
বলতে না বলতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো আমি এখোনো ওর বুকে মুখ গুজে ওকে জরিয়ে ধরে আছি। ওও আমাকে ছাড়িয়ে আমার কপালে চুমু দিলো, তারপর আস্তে করে আমার কোমরে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে দিলো। ওর মুখের পানি ফোটায় ফোটায় আমার মুখে এসে পরছে। ও আস্তে আস্তে ওর মুখটা আমার দিকে এগিয়ে এনে আমার কপালে কপার আর নাকে নাক লাগিয়ে নাক নাক ঘষে দিলো, তারপর ওর হাত দিয়ে আমার মুখের ভেজা চুলগুলো সরিয়ে গালে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করলো আমি চোখ খুলে ওর দিকে তাকালাম। ও আমার গায়ে লেপ্টে থাকা ওরনাটা গা থেকে নিয়ে নিলো আমি সরে আসতে গেলে ও ওরনা দিয়ে আমার কোমর পেচিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে এলো। ও আমার গলার দিকে ঝুকতেই চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি ওর আমার গলায় পরপর কিস করেই যাচ্ছে। আমি থামচে ধরালাম ওকে। কিছুক্ষণ পর ও আমার গলা ছেড়ে দুই গালো কিস করলো আর থুতনিতেও আলতো করে ঠোট ছোয়ালো। বৃষ্টির বেগ বাড়তেই আমি ওকে ছাড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে থাকলাম। ও পেছন থেকে জরিয়ে ধরল আমাকে। অামি চোখ বন্ধ করে ওর ছোয়া আর বৃষ্টির ফোটা দুটোই অনুভব করছি। হঠাৎ বাজ পড়তেই আমি চমকে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম ওকে। ওও জরিয়ে ধরল। ওর বুকে মুখ গুজেই বললাম

– এতো কেনো ভালোবাসো আমায়?
.
– আচ্ছা বলতে পারবে সূর্য পূর্ব দিকেই কেনো উঠে? নদী পাহাড় থেকে নেমে এতো দূরের পথ পারি দিয়ে সাগরেই কেনো মেশে? একমাত্র আগুনেই কেনো সবকিছু পোড়ে?
.
– জানিনা তো!
.
– ঠিক সেভাবেই তোমাকে ভালোলাগার হাজারটা কারণ থাকলেও ভালোবাসার কোনো কারণ আমার জানা নেই।
.
– হুম
.
এবার চলো অনেক্ষণ ভিজেছো এবার ঠান্ডা লেগে যাবে। বলেই আমার হাত ধরে হাটা দিলো। আমাকে নিয়ে সোজা হোটেলের সেকেন্ড ফ্লোরে গেলো। সেখানে আপিরা, ইফাজ ভাইয়ারা আমাদের উইস করলো, এমনকি হোটেল ম্যানেজম্যান্টে পক্ষ থেকেও কেট কাটতে হলো। আমিতো অবাক এই প্রথম সিক্স মান্থ এনিভারসিরি তাও এনগেইজমেন্টের এভাবে সেলিব্রেট করতে দেখলাম। আমরা ভেজা থাকায় তাড়াতাড়ি ই ছেড়ে দিলো আমাদের।
.
আমার সাথে আদ্রিয়ান কেও আমার রুমে পাঠিয়ে দিলো, কেনো বুঝলাম না রুমে ঢুকেতো আমরা শকড পুরো রুম সাজানো ক্যান্ডেল দিয়ে, আর বেড ও সাজানো ফুল দিয়ে। আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে আদিব ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলল
.
– ইডিয়েট রুমটা সাজাতে বলেছি আমি বেড সাজিয়েছিস কেনো?
-…
– আরে তাই বলে বেড সাজাবি?
-…
– রাখ তোর বোঝাবুঝি। তোরা বুঝিস আমিও বুঝি কিন্তু পাবলিক বুঝবে?
-…
– আচ্ছা রাখ।
.
ফোন রেখেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– I am sorry..জানতাম না ওরা এগুলা করেছে।
.
– Its ok.. তুমি আগে গিয়ে ফ্রেশ হও আমার টাইম লাগবে।

কিছুক্ষণ পর ও একটা বক্সার আর টাওজার পরে চুল মুছতে মুছতে বের হলো। আমিও একটা রেড টপস আর প্লাজো নিয়ে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখি ও খাটে বসে ফোন চাপছে। রুমটা অন্ধকার ক্যান্ডেলের আলো জ্বলছে আর সেই আলোতেই দেখা যাচ্ছে ওকে, খাটে হেলান দিয়ে ফোন দেখছে। ওর চোখে চোখ পরতেই আমি চোখ সরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছতে লাগলাম। হঠাৎ আয়না দিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান ফোনটা রেখে নিজের বক্সার গেন্জিটাও খুলে ফেললো এই প্রথম খালি গায়ে দেখলাম আমি ওকে, রেগুলার জিম করা একজন চ্যামকে খালি গায়ে কেমন লাগছে সেটা নাই বললাম। বুকের ভেতর টিপটিট করছে এখন আমার । আমি চুল মুছে টাওয়ালটা রেখে কাপাকাপা পায়ে খাটে গিয়ে বসলাম। আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খাটে শুয়ে পরল, ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমিও শুয়ে পরলাম ওর পাশে। বাইরে প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি পরছে আর বাজও। হঠাৎ ও আমার ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে বলল
.
– তিন বছরের অপেক্ষা আর ছয় মাসের চেষ্টার পর আজকে তুমি সেটাই বললে যেটা শোনার জন্য আমার মন তৃষ্ণার্ত হয়ে ছিলো
.
আমি কিছুই বললাম না চোখ বন্ধ করে আছি কিছুক্ষণচ চুপ থেকে ও বলল
.
– আরো একবার বলো না প্লিজ
.
আমি চোখ বন্ধ করেই বললাম
.
– I Love you…
.
ও কিছু বললো না একহাতে ভর দিয়ে আমার দিকে ঝুকে বলল
.
– আবারো বলো
.
– I love you adriyan..
.
ও এবার আমার ওপর আধশোয়া হলো। আমার তো হার্ট বিট তীব্র গতিতে ছুটছে, বুক কাপছে। ও আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার কোমরে হাত রাখলো। ওর ঠোটে হালকা হাসি ঝুলে আছে আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে টপের সামনের দুটো বোতাম খুলে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এক হাতে ওর ঘার আকরে ধরলাম আরেক হাতে বিছানার চাদর। ও ওর ওর মুখ দিয়ে আমার গলায় স্লাইড করছে আর মাঝে মাঝে চুমু দিচ্ছে আরেক হাত আমার কোমরে স্লাইড করতে করতে পিঠে নিয়ে গেছে। আমি আর নিজের মধ্যে নেই ওর স্পর্শে আমি যেনো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি। আমি হাত দিয়ে ওকে সরাতে গেলে ও আমার ডান হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ওর বা হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে বিছানায় চেপে ধরল হাতটা। ওর ডান পা দিয়ে আমার পায়ে স্লাইড করতে লাগল। এবার শুধু স্লাইড আর চুমু না ও আমার গলায় হালকা বাইট ও দিতে লাগল। আজ ও নিজের মধ্যে নেই, বেশ কিছুক্ষণ পর ও ওর হাত আমার টপের জিপে চলে গেলো। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে আছি। কিন্তু জিপটা টানতে গিয়েও ও থেমে গেলো। আমার ঘারে ডিপলি একটা কিস করে বিছানায় শুয়ে পরল আমি উঠে ওর লোমহীন খালি বুকে মাথা রে চোখ বন্ধ করলাম, ওর হার্ট খুব জোরে বিট করছে, কিছুক্ষণ পর ও উঠে বসলো এরপর দুহাতে নিজের মুখ চেপে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। আমিও আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। তারপর ও গেন্জিটা পরতে পরতে বলল

Infinite Love part 41+42+43+44+45

– ব্যালকনিতে চলো। রাতে আমরা আর রুমে আসবোনা।
.
বলেই চলে গেলো। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিলাম তারপর টপের বোতাম দুটো লাগিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেগি ও নিচে এক পা ছড়িয়ে আর আরেকপা ভেঙ্গে বসে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। বৃষ্টি আর নেই এখন তবে হালকা বিদ্যুত চমকাচ্ছে। আমি ওর কাধে মাথা রেখে বললাম
.
– Don’t feel guilty.. আমি কিচ্ছু মনে করিনি।
.
– I know! ঐ বিষয়ে ভাবছিনা আমি।
.
– তো চুপ করে আছো কেনো?
.
ও আমাকে এক হাতে জরিয়ে বলল
.
– I love you so much yaar..
.
আমি ওর বুকে মাথা রেখে বললাম
.
– I love you too..
.
বলেই চোখ বন্ধ করে নিলাম ওও বুকের মধ্যে জাপটে ধরলো আমাকে। সত্যিই আজকের এই রাতটা সারাজীবন মনে থাকবে আমার। ওর দেয়া সারপ্রাইজ, এতো স্পেশালি ট্রিট করা, ওর ভালোবাসা। নিজেকে সত্যিই খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। ভালোবাসি ওকে আমি ভীষণ ভালোবাসি..।

Infinite Love part 51+52+53+54+55