Infinite Love part 41+42+43+44+45

Infinite Love part 41+42+43+44+45
Writer: Onima

কথাটা শোনার সাথে সাথে আমার সময় যেনো ওখানেই থেমে গেলো। আমার কানে শুধু এটুকুই বাজছে যে DNA ম্যাচ করে গেছে। আর কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছিনা আমি নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে বার বার আদ্রিয়ানের বলা কথাগুলোই কানে বাজছে। “আমি কিন্তু তোমায় ছাড়ছিনা ওকেহ, আমি পৃথিবীতে থাকি আর না থাকি তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি থাকবো, তোমার প্রতিটা হার্ডবিটে আমি থাকবো, ইনফ্যাক্ট তোমার প্রতিটা রন্ধ্রেও আমি থাকবো।” ” খুব ভালোবাসি তোমায় মায়াবীনি, প্লিজ আর যাই করো আমায় ছেড়ে যেয়োনা?” “I love you”

আমার চোখে সেই মুহূর্তটা ভাসছে যখন শেষবার ও আমাকে পেছন থেকে ডেকেছিলো কিন্তু কিছু না বলে মুচকি হেসে তাকিয়ে ছিলো। ওর মুখে হাসি থাকলেও চোখে অন্যকিছু ছিলো, সেটাকি আমাকে শেষবারের মতো দেখে নেবার অনুভূতি ছিলো? এতোটা স্বার্থপর কীকরে হলে আদ্রিয়ান? এভাবে ঠকালে আমাকে? কেনো? মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজাটা টেনে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। শেষবার ওর সেই ছলছল চোখে মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকা মুখটাই মনে পরছে। আস্তে আস্তে সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো আমার, চারপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা, মস্তিস্ক যেনো শূণ্য হয়ে আছে, দাড়িয়ে থাকার শক্তিও পেলামনা ধপ করে বসে পরলাম ফ্লোরে, কেউ হয়তো এসে ধরলো আমাকে, কিন্তু কে সেটা দেখার বা বোঝার মতো অবস্হা আমার মস্তিস্কের নেই, ওর বলা প্রত্যেকটা কথা হৃদপিন্ডে গিয়ে আঘাত করছে, “You are special for me very special for me”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি জানি তুমি আমাকে এখোনো ভালোবাসতে পারোনি কিন্তু আমিতো বাসি খুব ভালোবাসি আর এটাই যথেষ্ট আমার জন্য” শ্বাস আটকে আসছে আমার, জীবন যেনো এখানেই থেমে গেছে, ‘ I love you mayabini’ কথাটা বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমার কানে। সব দুঃসপ্ন মনে হচ্ছে ভয়ংকর দুঃসপ্ন, ঘুম ভাঙলেই যেনো সব ঠিক হয়ে যাবে আদ্রিয়ান আবার আমার মাথাটা ওর বুকে লাগিয়ে বলবে, ‘I love you”, কপালে চুমু দিয়ে জরিয়ে ধরে বলবে, “আমি আছিতো তোমার সাথে” চোখ মুছে দিয়ে ধমকে বলবে, ” বলেছিনা এটা আমার জিনিস, আমার পারমিশন ছাড়া একদম কাদবে না”। কিন্ত এই সপ্ন শেষ কেনো হচ্ছেনা? ঘুম কেনো ভাঙছেনা আমার? আদ্রিয়ান প্লিজ সবসময়ের মতো আমার গালে চুমু দিয়ে “Good morning sona” বলে জাগিয়ে দাও আমাকে আমি আর এই সপ্ন নিতে পারছিনা। আমার শরীর অবস হয়ে আসছে, মাথা প্রচন্ড ভারী লাগছ, আস্তে আস্তে চোখ দুটোও বন্ধ করে নিলাম আমি।

মুখে আলো অনুভব করে আস্তে আস্তে নিজের চোখ দুটো খুললাম আমি, মাথা ধরে আছে প্রচন্ড, চারপাশে সাদা দেয়াল, নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম হসপিটালের ড্রেস পরা, হাতে সেলাইন ক্যানেল লাগানো, বুঝতে পারলাম হসপিটালে আছি। হঠাৎ সেসব কথা মনে পরল, ডেড বডি, ডি এন এ ম্যাচ। এসব মনে পরতে উত্তেজিত হয়ে গেলাম চিৎকার করতে লাগলাম, আমার চিৎকার শুনে আব্বু, আম্মু, আপি, আঙ্কেল জাবিন সবাই চলে এলো।
.
আপি: অনি কী করছিস কী শান্ত হ প্লিজ। অসুস্হ তুই।
.
আমি: আপি ওরা কী বলছিলো হ্যা? ক কী বলছিলো এসব, ওসব ফাল্টু রিপোর্ট!
.
আব্বু: মামনী শান্ত হয়ে আমাদের কথাটা শোন
.
কিন্তু আমি কারো কথা শুনতেই ইচ্ছুক নই ওই ফুলিশের বাচ্চা ওসব উল্টোপাল্টা কথা কেনো বলল?
.
আমি: নাহ বললেই হলো নাকি যে ম্যাচ করে গেছে, ওটা আদ্রিয়ান? ওরা সবাই মিথ্যে বলছে সবাই মিথ্যে বলছে। সাহস কীকরে হলো? কেনো বললো ম্যাচ করেছে? (চিৎকার করে)
.
আপি: হ্যা ম্যাচ করেছে কিন্তু..

আপিকে কিছু না বলতে দিয়ে আমি একটানে ক্যানেল খুলে ফেললাম তারপর বেড থেকে নেমে বেরিয়ে যেতে নিলেই সবাই আটকালো আমাকে কিন্তু আমি নাছড় বান্দা সবাইকে ছাড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলাম আমার শুধু মাথায় একটাই চিন্তা আমি আদ্রিয়ানের কাছে যাবো, এনিহাউ! একপর্যায়ে দুজন নার্স আমার দুই হাত ধরে ফেললো আমি ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে করতে বললাম
.
– ছাড়ো আমাকে আমি আদ্রিয়ানের কাছে যাবো জাস্ট লিভ!
.
কিন্তু ওই ঘারতেরা নার্স দুটো ছাড়ছেই না তাই বহু কষ্টে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে কেবিনের বাইরে চলে গেলাম, টান মেরে ক্যানেল খোলার কারণে হাত দিয়ে রক্ত পরছে আমার কিন্তু I don’t care আমিতো আদ্রিয়ানের কাছে যাবো। কিন্তু বেশিদূর যাবার আগেই ওরা ধরে ফেললো আমায়, আবারো টেনে কেবিনে নিয়ে বহু কষ্টে শুইয়ে দিলো। আমার পরিবারের সবাই আমায় কিছু বলতে চাইছে কিন্তু আমি শুনতে নারাজ। আমি শুধু চিৎকার করে বলছি, ” যেতে দাও আমায়, জাস্ট লেট মি গো ডেম ইট” কিন্তু কেউ শুনছেই না আমার কথা। তারপর ডাক্তার এসে তাড়াতাড়ি আমার হাতে ইনজেকশন পুশ করে দিলো। আস্তে আস্তে শক্তি কমে এলো আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম আমি।
.
কপালে কারো ঠোটের স্পর্শে চোখ খুলে তাকালাম তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান বসে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। যখন বুঝতে পারলাম তাড়াতাড়ি উঠে ওকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলাম ও আমার ধরতেই আরো জোরে কাদতে কাদতে বললাম
.
– দেখোনা আদ্রিয়ান ওরা কীসব বলছিলো তোমাকে নিয়ে, জানো কতোটা ভয় পেয়েছিলাম, কোথায় ছিলে তুমি।

ও আমাকে ছাড়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো
.
– আমিতো এখানেই আছি আর ছিলাম ও। আমি কোথাও যাইনি। বলেছিলাম না তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি থাকবো? তোমার হার্ডবিটে আমি থাকবো? তারপরেও এতো কান্নাকাটি কেনো করছো হুম? কান্না থামাও তুমি জানোনা তোমার চোখে পানি দেখলে আমার কষ্ট হয়।
.
– তুমি আর কোথাও যেওনা প্লিজ!
.
– আরে বোকা আমিতো কোথাও যাই নি আর যাবোও না
.
– প্রমিস?
.
– পাক্কা প্রমিস!
.
বলেই আমার গালে একটা চুমু দিলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি সামনে কেউ নেই কোথায় গেলো আদ্রিয়ান? আমি উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে লাগলাম
.
– আদ্রিয়ান? আদ্রিয়ান? কোথায় তুমি?
? আদ্রিয়ান?
.
আপি পাশে সোফায় শুয়ে ছিলো আমার আওয়াজে ছুটে এলো!

অাপি: কী হয়েছে, আরেহ কী করছিস? কী?
.
আমি: আদ্রিয়ান.. আদ্রিয়ান কোথায়?
.
আপি: শান্ত হ প্লিজ, আদ্রিয়ানের আসা সম্ভব না। প্লিজ থাম হাত থেকে রক্ত পরছে।
.
আমি: আরে ও এসছিলো! কোথায় রেখেছো তোমরা ওকে? বলো?
.
আপি: প্লিজ থাম সোনা বস একটু আমি সব বলছি তোকে!
.
আমি: নাহ আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা আদ্রিয়ান কোথায় ( চেচিয়ে) কোথায় আদ্রি্ আদ্রিয়ান..
.
আস্তে আস্তে কন্ঠস্বর ছোট হয়ে এলো আবার সবকিছু ঝাপসা হয়ে এলো চোখের সামনে।
.
আবারো চোখ খুলে নিজেকে সেই কেবিনের বেডেই আবিস্কার করলাম, কখন রাত হচ্ছে কখন দিন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা, প্রতিবারই জ্ঞান ফিরলে মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ পরেই চোখ খুলছি, কদিন ধরে এসব হচ্ছে কে জানে? হাত প্রচন্ড ব্যাথা করছে দুই দুই বার ক্যানেল টেনে খোলার ফল এটা। এখন কেউ নেই কেবিনে তাই কোনোরকমে উঠলাম শরীর খুব দুর্বল লাগছে মনে হচ্ছে দুই তিনদিন কিচ্ছু খাইনি, হঠাৎ আদ্রিয়ানের কথা মনে পরতেই মন অশান্ত হয়ে গেলো উঠে বাইরে যেতে নেবো তখনি হাতের স্যালাইনের ক্যানেলে হাতে টান খেলাম। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো তৃতীয় বারের মতো টান মেরে খুলে ফেললাম। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম। তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দেয়াল ধরে ধরে বহু কষ্টে বাইরে এলাম। বাইরে যেতেই দেখি আব্বু আপি আর আদিব ভাইয়া বসে আছে। আদিব ভাইয়া আমাকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে বলল

আদিব ভাইয়া: আরেহ তুমি আবার উঠে এসছো। দেখ বইন তোরে কোলে তুলে কেবিনে নিতে নিতে আমি শেষ। তিনদিন ধরে হসপিটালে ঘুম হারাম করে বসে আছি আর আপনি খালি উঠছেন আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান যব করে আবার ঘুমিয়ে পরছেন। ঘুম কুমারি হয়েছো?
.
আমি অবাক হলাম আদিব ভাইয়ার কথায় এই পরিস্হিতিতে এভাবে কথা বলছে। আর আমি তিনদিন ধরে তিনবার অজ্ঞান হয়েছি?
.
আপি: আর তুই আবার হাতের ক্যানেল খুলেছিস?
.
আব্বু: এসবের কোন মানে হয় মামনী।
.
আমিতো অবাক এরা এতো স্বাভাবিক কীকরে? তবুও বললাম
.
– আ্ আদ্রিয়ান
.
আদিব ভাইয়া: ধ্যাত তোর আদ্রিয়ান। ওই শালার নাম নিতে নিতে কানের পোকা নারিয়ে দিলো! ওইটায় জাহান্নামে আছে তোমার এতো কী?
.
আমি হা করে তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে, এই ভাইয়া তো সেদিন ও আদ্ররিয়ানের জন্য কেদে দিয়েছিল এখন এসব বলছে? এসবের মানে কী? সবাই এতো স্বাভাবিক কীকরে কী হচ্ছে এসব? আমি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বললাম

– কী সব বলছো তোমরা? সরো সামনে থেকে আমি আদ্রিয়ানের কাছে যাবো সরো সামনে থেকে!
.
আপি: আরে আমার কথাতো শোন।
.
আমি: বললাম তো তোমাদের ফালতু কথা তোমাদের কাছেই রাখো কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি!
.
বলেই ওদের পাশ কাটিয়ে দেয়াল ধরে ধরে সামনে না তাকিয়েই হাটতে হাটতে কারো সাথে ধাক্কা খেলাম। সামনে না তাকিয়ে পাশ কাটাতে গিয়েও থমকে গেলাম এই স্মেল আমার চেনা.. আমি আস্তে আস্তে তাকালাম সামনের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক। হ্যা আদ্রিয়ান দাড়িয়ে আছে। কিন্তু হয়তো ভুল দেখছি আমি, আগের বারের মতো কল্পনা, চোখ বন্ধ করলেই চোখ খুলে ওকে আর পাবোনা তাই চোখের পলক ফেলতেই ভয় করছে। যদি আবার হারিয়ে যায়? ও কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আস্তে আস্তে ওর গালে হাত রাখলাম। এরপর আস্তে আস্তে আবার সব ঘোলা হয়ে এলো আমার আস্তে আস্তে শরীরটা ছেড়ে দিলাম।
.
ভার হয়ে থাকা মাথা নিয়ে আবারো পিট পিট করে তাকালাম তবে এবার আর নিজেকে সেই অসহ্যকর কেবিনে না কারো বুকে আবিস্কার করলাম এই বুকটা তো টা তো আমার চেনা ভীষণ চেনা। আমি আস্তে আস্তে মাথা উচু করে তাকালাম তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আমাকে ওর বুকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে, চোখ মুখ কেমন যেনো হয়ে আছে, চোখের পাপড়ি গুলোও ভেজা, কেদেছে নাকি? ভালোকরে খেয়াল করলাম কপালে চিকন করে একটা ব্যান্ডেজ ওর কপালে ব্যান্ডেজ কেনো? কী হয়েছে ওর? হঠাৎ সবটা মনে পরতেই আবার ভয় হলো ও কী সত্যি নাকি আমি সপ্ন দেখছি। এসব ভেবেই ওর গালে আস্তে করে হাত রাখলাম। ও চোখ খুলে ফেললো তাড়তাড়ি আমাকে দেখে বলল

– উঠে গেছো?
.
আমি এখনো তাকিয়ে আছি ওর দিকে বুঝতে চেষ্টা করছি এটাকি সপ্ন নাকি সত্যি ও সত্যিই এসেছে? আল্লাহর কাছে দোয়া করছি এটা যেনো সপ্ন না হয়। ও আমার মাথায় চুমু দিয়ে বলল
.
– কী অবস্হা করেছো এ কয়দিনে নিজের? এরকম কেউ করে? তুমি জানো তোমার এমন অবস্হার কথা শুনে কী অবস্হা হয়েছে আমার আর যখন এসে তোমার এই অবস্হায় দেখলাম তখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছিলো। সবকিছু আমার জন্য হলো।
.
আমি এখোনো ফেলফেল করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও আমাকে আরো শক্ত করে ধরে বলল
.
– আ’ম সরি সোনা। বিশ্বাস করো আমি বুঝতে পারিনি এরকমটা হবে।
.
এতোক্ষণে আমার কাছে ক্লিয়ার হলো যে এটা সপ্ন না। আর যখন বুঝতে পারলাম যে সত্যিই আদ্রিয়ান, তখন ফুপিয়ে কেদে উঠলাম। সেটা দেখে ও উত্তেজিত হয়ে আমার মাথাটা ওর বুকে চেপে ধরে বলল
.
– Please don’t cry.. সরি বললাম তো।
.
আমি এবার আরো জোরে জোরে কাদতে লাগলাম। আদ্রিয়ান আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
.
– একয়দিন কেদে কেদে শরীরের কী অবস্হা করেছো বুঝতে পারছো? আমি এসে গেছিতো। কান্না থামাও প্লিজ!

কিন্তু আমার কান্নার বেগ বেরেই চলেছে, কিছুতেই নিজের কান্না থামাতে পারছিনা। এরমধ্যেই সবাই এলো রুমে। সবাই মানে দুই পরিবারের সব্বাই। আদ্রিয়ান আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেই বলল
.
– হিয়া লুক তোমার বোন কীভাবে কাদছে। আরেহ আমিতো এখন এসে গেছি নাকি?
.
আপি: তুমি আর কথা বলোনা! যা করলে। তোমার মতো ইন্টিলিজেন্ট ছেলের কাছে এটা আশা করা যায় না।
.
আঙ্কেল: শুধু হাত পায়ে ব্যান্ডেজ বাধিয়ে এসছে বলে। নইলে জীবনে যেটা করিনি সেটাই করতাম। যেই ছেলের পিচ্ছি কালেও গায়ে হাত তুলিনি তাকে এই বুড়ো বয়সে মারতাম।
.
ব্যান্ডেজ এর কথা শুনেই ওর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ওর কপালের সাথে ডান হাতের কবজি পুরোটাই ব্যান্ডেজ করা, বা হাতের কুনুই এর দিকটা ব্যান্ডেজ করা পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি বা পায়ের হাটুর নিচে অনেকটা জায়গা ব্যান্ডেজ। একটা হাতা কাটা নীল গেন্জি আর কালো টু কোয়াটার প্যান্ট পরা। আমি কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম
.
– কী হয়েছে এতো ব্যান্ডেজ কেনো?
.
ও আমার মাথাটা আবার বুকে চেপে ধরে বলল
.
– কিছুনা সোনা তুমি কাদো!

সবাই হেসে দিলো ওর কথায়। কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। কী থেকে কী হচ্ছে এগুলা?
.
আব্বু: তবে আদ্রিয়ান এটা কিন্তু তুমি একদমি ঠিক করো নি। কী অবস্হা হয়েছিলো সবার জানো তুমি? তোমার মায়ের কী হাল হয়েছে দেখতে পেয়েছো! আর আমার মেয়েটা তো তিনদিন হসপিটালে পরে ছিলো।
.
আমি ভালোভাবে বুঝলাম হয়তো আদ্রিয়ানদের বাড়িতেই আছি। আদ্রিয়ান নিচু কন্ঠে বলল
.
– সরি আঙ্কেল।
.
সজীব ভাইয়া: একবার তো জানাবে নাকি?
.
আদ্রিয়ান: আমি কীকরে জানবো এখানে এতো কান্ড ঘটে বসে আছে।
.
আদিব ভাইয়া গম্ভীর ভাবে দরজায় দারিয়ে আছে। আদ্রিয়ান আমার মাথাটা ওর বুকে রেখেই ভয়ে ভয়ে আদিব ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল।
.
– ভাআআআইই
.
আদিব ভাইয়া চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান আমাকে ছেড়ে ঊঠে আস্তে আস্তে এক পা টেনে টেনে আদিব ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলল

– দেখ দুইটায় মিলে দুই গালে ঠাস ঠাস করে চর মেরেছিস কিচ্ছু বলিনি। ইশরাইক্কা একচোট বানি শুনিয়ে থাপ্পড় মেরে চলে গেলো জানি একটু পর সুর সুর করে এসে পরবে। তুই এখোনো রাগ করে থাকবি?
.
আদিব ভাইয়া তবুও কিছু বলছেনা। আদ্রিয়ান বলল
.
– ওহ আমি না ফিরলেই বোধ হয় মানুষ বেশী খুশি হতো।
.
আদিব ভাইয়া ঠাস করে আদ্রিয়ানের গালে থাপ্পড় দিয়ে জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানো হেসে ধরলো ভাইয়াকে। আদিব ভাইয়া কান্না জরিত কন্ঠে বলল
.
– শালা তোর কোনো ধারনা আছে কী যাচ্চিলো এখান দিয়ে। সবাইকে সামলাতাম না নিজেকে? এরকম করে কেউ? জানিস ডেডবডির কথা শুনে সবার আত্না শুকিয়ে যাচ্ছিলো। আর ঐ মেয়েটাকে দেখ তিনদিন ধরে সেলাইনের ওপর বেচে আছে। পাগলই হয়ে গেছিলো প্রায়।
.
আদ্রিয়ান করুন চোখে আমার দিকে তাকালো আমি এখোনো ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে কারণ ব্যাপারটা ক্লিয়ার না আমার কাছে। আদ্রিয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল
.
– Sorry বললাম তো!

হঠাৎ আন্টি এসে বলল
.
আন্টি: চুপ! বেয়াদপ ছেলে এখন সরি বলা হচ্ছে? নিজের কী সুন্দর হাল করে এসছে। আমাদের সবাইকেতো অর্ধেক জানে মেরে ফেলেছিলি।
.
আদ্রিয়ান অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইলো আন্টির দিকে। আন্টি আমার কাছে এসে বলল, মেয়েটা তিনদিন ধরে কিচ্ছু খায়নি, সর এখন ওকে খাইয়ে দেবো। আর তোমরাও সবাই নিচে যাও জাবিন খাবার বারছে। সবাই চলে গেলো। আদ্রিয়ান বেবি ফেস করে বলল
.
আদ্রিয়ান: খালিকি বউকেই খাওয়াবে ছেলেটাও যে না খেয়ে আছে তার হাতেও কিন্তু ব্যান্ডেজ করা নিজে খেতে পারবেনা।
.
আন্টি আদ্রিয়ানের পিঠে একটা চাপড় মারল। আদ্রিয়ান বলল
.
– আহ মম ইটস্ হার্টিং। ব্যাথা পেয়েছিলাম এখানে!
.
আন্টি: ঠিক হয়েছে বদ ছেলে একটা। দুজনের টাই এনেছি দুজনকেই খাইয়ে দেবো।
.
আদ্রিয়ান খাটে উঠে আমার পাশে বসলো। ওর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক কিছু গেছে ওর অপর দিয়ে যেটা সবাইকে বুঝতে দিচ্ছেনা কী সুন্দর নরমালি বিহেভ করছে। ওর ব্যান্ডেজ গুলোও দেখছি ব্যান্ডেজ করা জায়গা ছাড়াও আরো অনেক জায়গা কাটা ছিলে যাওয়া আছে যা শুকিয়ে গেছে।
.
এরপর আন্টি আমাদের দুজনকে খাইয়ে দিতে লাগল।
.
আদ্রিয়ান: ওমম্ মনে হচ্ছে এক যুগ পর তোমার হাতে খাবার খাচ্ছি।

আন্টি: আবার কথা বলছিস তুই?
.
আদ্রিয়ান বাচ্চাদের মতো করে মুখ ফুলিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: এমন করছ কেনো? কতোবার সরি বলেছি বলোতো?
.
আন্টি: হইছে আর ঢং করতে হবে না।
.
এভাবেই দুজন খুনসুটিময় কথা বলতে লাগল, আমি আন্টির হাতে খাচ্ছি আর এদের মা ছেলের খুনসুটি দেখছি, যেনো মা ছেলে না এরা বন্ধু।
.
কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা আদ্রিয়ান এতোদিন কোথায় ছিলো? কোনো যোগাযোগ কেনো করেনি? সবাই মিলে ওকে বকলোই বা কেনো? কী করেছে ও? আর আদ্ররিয়ানের শরীরে এতো ব্যান্ডেজ? এগুলো কীসের? আর ওই অফিসার ই বা বললো কেনো ডি এন এ ম্যাচ করে গেছে?
কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা আদ্রিয়ান এতোদিন কোথায় ছিলো? কোনো যোগাযোগ কেনো করেনি? সবাই মিলে ওকে বকলোই বা কেনো? কী করেছে ও? আর আদ্ররিয়ানের শরীরে এতো ব্যান্ডেজ? এগুলো কীসের? আর ওই অফিসার ই বা বললো কেনো ডি এন এ ম্যাচ করে গেছে? আন্টি খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা আদ্ররিয়ানের রুম। তবে সবথেকে বেশি অবাক হলাম সামনের দেয়ালে বড় করে আমার একটা ছবি ঝুলছে, এটা আমার সেই তিন বছর আগের বৃষ্টিতে ভেজা অবস্হায় তোলা! ছবিতে আমি দুহাত বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোটা অনুভব করছি। আমি অবাক হয়ে আদ্রিয়ান কে বললাম

– এটা?
.
– তিনবছর ধরে আছে আমার কাছে। সেদিনি তুলে নিয়েছিলাম
.
আমার ছবিটার ঠিক পাশেই ওর বিশাল একটা ছবি টানানো, চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আরো অনেক ছবি টানানো, ওর চেয়ে আমার ছবি বেশি টেবিলেও আমার ছবি আর আমার বেশিরভাগ ছবিই কানডিন। নিজেও জানিনা কখন কীভাবে তুলেছে। কী করেছে কী এই ছেলে এভাবে আমার এতো ছবি ঘরে টানিয়ে রেখেছে? বাড়ির লোকেরা কী ভেবেছে? ও নোহ! তখন ইমোশাল হয়ে খেয়াল না করলেও এখন মনে পরলো যে বাড়ির ছোট বড় সবার সামনে ও আমাকে জরিয়ে ধরে ছিলো, ইস্ কী লজ্জা, এই ছেলেটাও না, ও আমার ঔষুধ গুলো খুলে হাতে দিতে দিতে বলল
.
– তিনদিন হসপিটালে পরে ছিলে? তাও সেন্সলেস হয়ে? এসবের মানে হয়? এরকম আর কক্ষনো করবেনা জানপাখি। তুমি জানো যখন জানতে পারলাম তুমি হসপিটালে আছো তখন কেমন লেগেছিলো আমার?
.
আমার আবার সেই ডেডবডির কথা মনে পরল আমি আবারো কেদে দিলাম। ও আমাকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আরেহ বোকা মেয়ে আবার কাদে আমি এসে গেছি তো!
.
– ডেড বডি! জ্ জানো ঐ ডেডবডির কথা শুনে আমার কী অবস্হা হয়েছিলো? যদি সত্যিই কিছু হয়ে যেতো আমিতো মরে…( কাদতে কাদতে)
.
আদ্রিয়ান আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো আর বলল

– চুপ একদম চুপ! তোমার কিছু হতেই পারেনা। আমি বলেছিনা আমি তোমার নিঃশ্বাসে থাকব? হার্ডবিটে থাকবো? এগুলোই যদি থেমে যায় তাহলে তো আমার অস্তিত্বই শেষ হয়ে যাবে। আর আমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব তোমার।
.
তারপর আমার ঔষধ টা খাইয়ে দিয়ে বুকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আর কখনো এরকম করোনা। আমি থাকি বা না নাকি তোমাকে থাকতে হবে, আমি না বাচলেও তোমাকে বাচতে হবে, যদি আমার কিছু হয়েও যায় তবুও তুমি বাচবে, এটাই জানবে যে আমি আছি তোমারমধ্যেই আছি, আর তারচেয়েও বড় কথা আমি তোমাকে না বলে কোথাও যাবোনা।
.
হঠাৎ ওর ব্যান্ডেজ গুলো দেখে মনে পরল যে যে ও তো ভিষণ চোট পেয়েছে কিন্তু কীভাবে?
.
– আচ্ছা তুমি কোথায় ছিলে এইকয়দিন? আর হাতে পায়ে মাথায় এতো ব্যান্ডেজ কেনো?
.
– অবব্ কিছুনা এমনিই আরকি!
.
-আমি বলছি
.
পেছনে তাকিয়ে দেখি আদিব আর ইশরাক ভাইয়া রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অসহায়ভাবে তাকিয়ে একটা ডোক গিলে বলল

– ভাই চুপ কর না কেনো ফাসাচ্ছিস এই নিরিহ বাচ্চাকে?
.
আদিব ভাইয়া: বাচ্চা? তুই বাচ্চা? শয়তান আমরাতো তোকে টাইট দিতে পারিনি তোর এই ব্যান্ডেজের জন্য।
.
ইশরাক ভাইয়া: এক্সিডেন্ট করে এসছিস তাই নইলে এক সপ্তাহ আমাদের ঘুম হারাম করার ফল বুঝিয়ে দিতাম।
.
এক্সিডেন্ট শুনেই চমকে গেলাম অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে তারপর ইশরাক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– এক্সিডেন্ট?
.
ইশরাক ভাইয়া: হ্যা ভাবি এই উজবুক টা..
.
আদ্রিয়ান: চুপ কর না রে!
.
আদিব ভাইয়া: না চুপ করবেনা। আমরা তো কিছু বলতে পারিনি তাই অনিমাই শিক্ষা দেবে তোকে।
.
আদ্রিয়ান: আরেহ..

এরপর আদিব ভাইয়া যা বলল সব শুনে আমি অবাকের শেষ প্রান্তে? আদ্রিয়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম আর আদ্রিয়ান অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । আমার অবাক চাহনী ধীরে ধীরে রাগান্বিত হতে থাকলো আর আদ্রিয়ান একটা শুকনা ঢোক গিলল। আসলে আদিব ভাইয়ার বর্ণণা অনুযায়ী ঘটনাটা ছিলো এরোকম।
.
আমি DNA ম্যাচ করার কথা শুনেই অজ্ঞান হয়ে যাবার পর। আপি এসে ধরেছে আমাকে। সবার মধ্যেই আর্তনাদের রেশ দেখা দিচ্ছে। আদিব ভাইয়া হাটু ভেঙ্গে বসে পরেছিলো, আন্টি নাকি জোরে জোরে কাদছিলো, আঙ্কেল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলো। সবাই তাদের সবথেকে প্রিয় মানুষটাকে হারানোর যন্ত্রনা অনুভব করছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অফিসার বলল
.
-আরেহ উত্তেজিত হবেন না। ডি এন এ ব্লাড এর সাথে ম্যাচ করেছে ডেড বডির সাথে নাহ।

সবাই তখন যেনো আত্নায় পানি ফিরে পেলো কিন্তু এখন নতুন চিন্তা মাথায় জেকে বসলো যে আদ্রিয়ান এর রক্ত বাইকে? তাহলে আদ্রিয়ান কথায়? ঠিক আছে তো? সেসব চিন্তা আপাদত বাদ দিয়ে সবাই আমার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে লাগল কিন্তু যখন সেটা পারলোনা তখন আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। সেদিন রাতে আর আমার জ্ঞান ফেরেনি, স্যালাইন ইনজেকশন দিয়েই আমার চিকিৎসা চলছিলো। পরেরদিন ভোরবেলা ওরকম কান্ড করে আমি আবার সেন্সলেস হয়ে যাই আর আদিব ভাইয়া নাকি কোলে করে আমাকে কেবিনে এনেছে। আর সেদিন বিকেলেই ফোন আসে কেউ ফোন ধরার অবস্হাতে নেই বলে আদিব ভাইয়াই ধর হ্যা ফোনটা আদ্রিয়ানেরই ছিলো, ফোন টা ধরে যখন বুঝলো ওটা আদ্রিয়ান তখন একদফা ঝাড়ল, এরপর সবাইকে জানালো ও ঠিক আছে আর ইউ কে তে আছে, কেমব্রিজ এ কাজে এসছে, তারপর ওকে এখানকার পরিস্হিতি বাড়ির সবার অবস্হা আর স্পেশিয়ালি আমার অবস্হা জানানো হলো। সেটা শুনে আদ্রিয়ান সেদিনি ফেরার ব্যাবস্হা করে ফেললো। এর মধ্যে আমি আরো দুইবার উঠে অজ্ঞান হয়ে গেছি।

আদ্রিয়ান ফেরার পর সোজা হসপিটালেই আসে আর ও যখন এসছে তখনি জ্ঞান ফেরে আমার আর বাইরে সরাসরি আমাকে ই দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে ওর ওপরেই পরেছিলাম। আমাকে এই অবস্হায় দেখে ও কেদে দিয়েছিলো নাকি! তারপর ঐ মুহুর্তেই আমাকে কোলে করে হসপিটাল থেকে সোজা বেরিয়ে এসছিলো কারো কোনো কথা শোনেনি। আব্বু আর আঙ্কেল মিলেই হসপিটালের ফরমালিটিস কম্প্লিট করে এসছে। বাড়িতে এনে সোজা ওর রুমে আমাকে শুইয়ে দিয়ে তারপর নিচে নেমে আসে। নিচে আসতেই ওকে ভাইয়ারা আর আঙ্কেল ধোলাই দিতে চেয়েছিলো কিন্তু ওর ব্যান্ডেজ দেখে আর কিছু বলেনি। সব্বাই জেকে ধরে ওকে যে কেনো আসেনি আর কী হয়েছিলো? এতো ব্যান্ডেজ কেনো শরীরে। তারপর ও বলে ওর ফোন এসছিলো ইউ কে যেতে হবে কেমব্রিজ এ কোনো একটা কাজে, কিন্তু ও কাউকে কিছু বলেনি কারণ সবাই মন খারাপ করবে, ও ভেবেছিলো একেবারে গিয়ে জানাবে সবাইকে, যেদিন যাবে সেদিন সকালে উত্তরা কোন এক কাজে যায় আর ওর বাইক এক্সিডেন্ট হয়, এক্সিডেন্ট এ ফোনটা ঝোপের পাশের নালায় পরে যায় আর ওর যখম ও হয় প্রচুর কিন্তু ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে বলে কোনোরকম ফাস্টএইড নিয়েই চলে যায় ইউ কে তে ওখানে গিয়ে হয় আরেক বিপদ ক্যামব্রিজ থেকে বেরোনোর পরেই ওর গাড়ির বরসর এক্সিডেন্ট হয় আর ওকে হসপিটালে ভর্তি হতে হয়। সবাই এক্সিডেন্টের খবর শুনে উত্তেজিত হবে বলে আর জানায়নি এক্কেবারে মোটামুটি সুস্হ হয়ে যোগাযোগ করেছে কিন্তু এখানে এতোকান্ড হয়ে বসে আছে ও জানতোই না।

আমি রাগী ভাবে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি। সবাই এটাই বলতে চাইছিলো আমাকে? আর শেষে সবাই এইজন্যেই স্বাভাবিক ছিলো? আদিব ভাইয়া বলল
.
আদিব ভাইয়া: নেও ভাবি এবার একে তুমিই শিক্ষা দাও।
.
ইশরাক ভাইয়া: হ্যা একদম ছাড়বেনা ভাবি।
.
আদ্রিয়ান: ওই তোরানা আমার বন্ধু? কই একটু বাচিয়ে দিবি তা না করে উল্টে ফাসাচ্ছিস?
.
আদিব ভাইয়া: তুই কাজটাই করেছিস এমন।
.
আমি এখোনো রাগী ভাবে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে। ইউ কে যাবে সেটা জানানোর প্রয়োজন মনেই করে নি আর এক্সিডেন্ট করেছে সেটাও জানায়নি? কিন্তু আমি যতদূর জানি ও তো এতোটাও ইরেস্পন্সিবল না তাহলে? এরকম টা কেনো করল? কেনো জানি খটকা লাগছে।

আদিব ভাইয়া: ইউ কে যাচ্ছিস আমাকে তো বলতে পারতি?
.
আদ্রিয়ান: আরে আমি কিকরে জানবো এখানে ব্লাস্ট হয়েছে, একটা ডেডবডি পেয়েছে আবার আমার ফোনের লাস্ট লোকেশন ওখানেই ছিলো?
.
ইশরাক ভাইয়া: হ্যা তুমি কীকরে জানবে? কী করে করলি এটা? তুই তো এতো ইরেসপন্সিবল নাহ!
.
আদিব ভাইয়া: যাকগে এবার তুমি তোমার বউকে সামলাও আমরা যাই।
.
ইশরাক ভাইয়া: হ্যা অল দ্যা বেস্ট।
.
আদিব ভাইয়ারা চলে যেতেই আদ্রিয়ান অত্যন্ত অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকালো আমি খাটে হেলান দিয়ে শোয়া ছিলাম ওভাবে থেকেই দুই হাত ভাজ করে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ও আমার সামনে এসে বললো
.
– দেখো সবাই অনেক বকেছে এখন তুমিও রাগ করে থেকোনা।
.
আমি চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে আছি সেটা দেখে ও আরো করুন কন্ঠে বলল

– সরি বললাম তো। এমন কেনো করছো? আমি তো জানতাম না বলো এখানে এসব হয়েছে!
.
এবারেও আমি কোন রেসপন্স করলাম না। ও এবার একটু কষ্ট করেই উঠে খাটে বসলো হাটুর নিচে ব্যান্ডেজ থাকায় একটু কষ্ট হচ্ছে। তারপর আল্লাদি গলায় বলল
.
– এই সোনাপাখি! প্লিজ রাগ করে থেকোনা। আর কখোনো এরকম করবোনা এই দেখো কান ধরছি।
.
বলেই আমার সামনে হাত ক্রস করে কান ধরে কিউট করে বলল
.
– সরি!
.
ওর এই ফেস আর ভয়েজ শুনে যে কেউ গলে যাবে আর ও তো আমার দূর্বল জায়গা আমিতো গলতে বাদ্ধো তবুও নিজের ভাব বুঝতে না দিয়ে চলে এলাম ওখান থেকে সোজা বেরিয়ে গিয়েই জাবিনের সাথে দেখা হলো, জাবিন তাড়তাড়ি এসে বলল
.
– একি ভাবি তোমার তো রেস্ট করার কথা বেরিয়েছো কেনো?
.
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম
.
– আমাকে তোমার রুমে নিয়ে চলো ওখানেই রেস্ট করবো আমি।
.
জাবিন কিছুক্ষণ অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
.
– চলো

এরপর জাবিন আমাকে ওর রুমে নিয়ে গেলো রুমে নিয়ে বসে কিছুক্ষণ কাটানোর পরেই জাবিন জিজ্ঞেস করলো
.
– ভাইয়ার ওপর রাগ করে আছো?
.
– হুম
.
– ঠিক করেছো একদম ঠিক। যেমন কর্ম তেমন ফল। তবে বেশিক্ষণ রাগ করে থেকোনা হ্যা আমার ভাইটা আবার বেশি কষ্ট পাবে।
.
– বাহ এখনি ভাইয়ের দলে চলে গেলে?
.
– আরেহ না না তেমন কিছুই না।
.
এভাবেই দুজন গল্প করতে করতে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দিলাম কিন্তু এর মধ্যে কয়েকবার আদ্রিয়ান রুমের আশেপাশে উকি দিয়ে গেছে কিন্তু ঢোকার সাহস পায় নি। একবার ঢুকেই পরল ভেতর দেখে জাবিন আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বিরক্তির মতো ফেস বানিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলল
.
জাবিন: তুই এখানে কেনো?
.
আদ্রিয়ান: কেনো মানে? আমার অনির সাথে কথা আছে!
.
জাবিন: ভাবি তুমিকি কারো সাথে কথা বলতে চাও?
.
আমি মুখ খুরিয়ে বললাম
.
– একদমি না।
.
জাবিন: শুনে নিয়েছিস এবার বিদেয় হহ
.
বলে ঠেলে বের করে দিয়ে দরজা অফ করে দিলো। এরপর জাবিন আমার দিকে তাকালো আর আমি জাবিনের দিকে এরপর দুজনেই অট্টহাসিতে দিতে থাকলাম।
.
দুপুরে খাওয়ার পরেও ওকে ইগনোর করে জাবিনের রুমে গিয়ে শুয়ে একটা ঘুম দিলাম। জাবিনের ডাকেই ঘুম ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি জাবিন কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি মুচকি হেসে ওর কাছ থেকে কফির মগটা নিয়ে নিলাম তারপর বললাম

– কটা বাজে?
.
– সন্ধ্যে সাতটা বাজে।
.
– হোয়াট? আব্বু আম্মু কোথায়?
.
– ওনারাতো চলে গেছে?
.
– চলে গেছে মানে? আমাকে না নিয়েই?
.
– তোমার এখন কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা।
.
– মানেহ?
.
– মানেহ তুমি কয়েকদিন এই বাড়িতেই থাকছো আর সেটা আমার ভাইয়ের কথাতেই হচ্ছে
.
– মানে টা কী? তোমার ভাই বলল আর আব্বু আম্মু মেনে নিলো?
.
– মেনে না নিয়ে উপায় আছে? ড্রয়িং রুমে সোজা বলে দিয়েছে যে তুমি কয়েকদিন এখানেই থাকবে, উনি সেটাই চায়।
.
– সবার সামনেই বলল?
.
– হ্যা!

খবিশ আমার মান সম্মানের ফেলুদা বানিয়ে দিলো! সবার সামনে ওভাবে বলে আমাকে রেখে দিলো? দুর ভাল্লাগেনা! তবে ভালোই হলো কয়েকটা দিন আদ্রিয়ানের সাথে থাকতে পারবো।
.
জাবিন: কী খুশি হয়েছো তো?
.
আমি: অব আমি কেনো খুশি হবো
.
জাবিন: হ্যা হ্যা বুঝি বুঝি।
.
বলেই শিশ দিতে দিতে চলে গেলো। এই মেয়েটা আসলেই পাকা। একটু বেশি বেশিই বোঝে।
.
রাতে ডিনারের সময় ওকে পুরো দমে ইগনোর করেছি, যদিও বেচারা দুপুর থেকেই চেষ্টা করছে কথা বলার কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছি না। রাতে জাবিনের রুমে বসে গল্প পরছি। হঠাৎ জাবিন বলল
.
– আমার ভাইটাকে আর কতো কষ্ট দেবে এবার মাফ করে দেওনা।
.
– কষ্ট হচ্ছে?

– হচ্ছেতো ! আমার একটা মাত্র ভাই।
.
– আমি কথা বলবোনা ওর সাথে।
.
– হুম কিন্তু বিকেল ভরে তো ওর বুকেই ঘুমালে।
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম
.
– কীহ?
.
– জ্বি। তুমি ঘুমোতেই ভাইয়া ঘরে ঢুকে আমাকে বের করে দিয়েছে রুম থেকে তারপর নিশ্চই বুকে নিয়ে শুয়ে ছিলো তোমাকে
.
– তুমি ঢুকতে দিলে কেনো?
.
– ওর সাথে আমি পারি নাকি?
.
এরমধ্যেই হঠাৎ আদ্রিয়ান রুমে এলো। ওকে দেখেই জাবিন দাড়িয়ে গিয়ে বলল
.
– আবার তুই? কী চাই?
.
আদ্রিয়ান একবার আমার দিকে একবার জাবিনের দিকে তাকিয়ে বলল

– আমার বউ!
.
– এখানে কারো বউ নেই যা ভাগ!
.
– দেখ পুটি এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। আমার বউ চাই ব্যাস।
.
জাবিন এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– ভাবি এখানে কী কারো বউ আছে?
.
আমি চারপাশে খোজার ভান করে বললাম
.
– কই নাতো এখানেতো কারো বউ নেই!
.
আদ্রিয়ান এবার অসহায় ফেস করে তাকালো আমাদের দিকে, জাবিন বলল
.
– জেনে গেছিস এবার ফোট!
.
আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে জাবিন কে আমার দিকে ইশারা করে বললো
.
– ঐ টা কে?
.
– আমার ভাবি?
.
– ভাবি কাকে বলে?
.
– এটাও জানিস না গাধা, ভাইয়ের বউকে!
.
– ওও তাই? তা আমি তোর কে হই?
.
– একমাত্র ভাই
.
– তাহলে তোর ভাবি আমার কী হয়?
.
– তুই আসলেই বলদ। কে যে তো সাইনটিস্ট প্লাস ইন্জিনিয়ার বানালো আল্লাহ জানে। অবশ্যই তোর বউ। ( ভাব নিয়ে)
.
– ঠিকি বলেছিস আমি আসলেই বলদ তাহলে আমার বউ মানে তোর ভাবি কোনটা?
.
– এইটা ( আমাকে দেখিয়ে)

বলেই জাবিন জিকে কামড় দিলো, আমি চোখ গরম করে তাকালাম ওর দিকে। এহ আসছে আমার বুদ্ধিমতি আমার জামাইটারে বলদ বলছে তুই কী? আমার আদ্রিয়ান কী ঘাস খেয়ে ইন্জিনিয়ার হয়েছে? ওর বুদ্ধির সাথে তোর মতো মেয়ে পারবে? ও যে কথার প্যাচে তোর মুখ দিয়েই স্বিকার করিয়ে নিলো যে আমি ওর বউ সেটাও বুঝলিনা হাদি অন্যকে আবার বোকা বলে।
.
জাবিন অসহায় ভাবে বলল
.
জাবিন: এটা কী হলো?
.
আদ্রিয়ান: তুই যে বোকা সেটা আবারো প্রমাণিত হলো।
.
জাবিন বোকার মতো তাকিয়ে রইলো আর আদ্রিয়ান আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– কী করছেন?
.
– আমার বউ নিয়ে যাচ্ছি
.
বলেই আমাকে কোলে করেই হাটা দিলো আর জাবিন বোকার মতো হা করে তাকিয়ে রইলো। সাথে আমিও ঘটনার আকষ্মিকতায় আমরা দুজনেই হা। এই ছেলে তো মহা শেয়ানা। যাই হোক আমি এতো তাড়াতাড়ি গলছি না নেভার!
বলেই আমাকে কোলে করেই হাটা দিলো আর জাবিন বোকার মতো হা করে তাকিয়ে রইলো। সাথে আমিও ঘটনার আকষ্মিকতায় আমরা দুজনেই হা। এই ছেলে তো মহা শেয়ানা। যাই হোক আমি এতো তাড়াতাড়ি গলছি না নেভার। আমি বেশ রাগী গলায় বললাম

– কী হচ্ছেটা কী? নামান আমাকে!
.
আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জাবিনের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– রাতে দরজা লক করে শুবি আর কেউ জিজ্ঞেস করল বলবি আমার বউ মানে তোর ভাবি তোর সাথেই তোর রুমে আছে বুঝলি?
.
জাবিন দুই হাত পেছনে নিয়ে শয়তানী হাসি দিয়ে দুলতে দুলতে বলল
.
– তাতে আমার লাভ?
.
আদ্রিয়ান ডাবল শয়তানী হাসি দিয়ে বলল
.
– লাভ কী হবে জানিনা কিন্তু লোকসান ব্যাপক!
.
সেটা শুনেই জাবিনে মুখের হাসি উরে গেলো অসহায় ফেস করে বলল
.
– মানে?
.
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আমাকে কোলে নিয়েই জাবিনের চারপাশে একটা রাউন্ড মেরে বলল
.
– ধর কাল থেকে যদি তোর পকেট মানি অফ হয়ে যায়? আর ফোনটা ল্যাপটপটা গায়েব হয়ে যায়? কেমন হবে? ( ভ্রু নাচিয়ে)

বুঝতে পারলাম বেচারী মাইকা চিপায় ফেসে গেছে। জাবিন আবুলের মতো হেসে বলল
.
– আরেহ ভাইয়া আমিতো মজা করছিলাম। তুই আমার একমাত্র বড় ভাই আমিকি তোর কথা না শুনে পারি বল?
.
আদ্রিয়ান বিরবির করে বলল ‘সুবিধাবাজ’। যেটা জাবিন শুনতে না পেলেও কাছে থাকার কারণে আমি শুনতে পেলাম। জাবিন ভ্রু কুচকে বলল
.
– কিছু বললি?
.
– নাহ যেটা বলছি সেটা করিস!
.
– ওকেহ।
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো এতোক্ষণ আমি দুই ভাই বোনের রিয়ালিটি কমেডি শো দেখছিলাম, যেটার একমাত্র দর্শক আমি। কিন্তু ও আমাকে নিয়ে হাটা শুরু করতেই আমার হুস এলো আমি আবারো বললাম
.
– কী হলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? যাবোনা আমি আপনার সাথে!
.
আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়েই হাটতে হাটতে বলল

– আমার বউ আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমার তাতে কী?
.
– মানে কী? আমাকে তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন আর বলছেন আমার কী? আজব?
.
আদ্রিয়ান দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– তোমাকে কে নিচ্ছে আমিতো আমার বউকে নিচ্ছি।
.
– আপনি..
.
আর কিছু বলতে পারলাম না কারণ তার আগেই আদ্রিয়ান আমার গালে সময় নিয়ে খুবি সফটলি একটা কিস করল। আমার সারা শরীর কাপছে, ও এখন ওর ঠোট আমার গালেই রেখছে। এরপর ও আস্তে করে ওর গালের সাথে আমার গাল স্লাইড করে সরে এলো। আমি চোখ বন্ধ করে ওর গলা আকরে ধরে আছি। ও সরে যেতেই আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। ও মূচকি হেসে আবারো হাটা দিলো আমি আর কিছু বললাম না, কারণ একে কিছু বলে লাভ নেই। এ কয়দিনে ওকে যা চিনেছি ও একদমি একরোখা টাইপ, নিজে যেটা ভালো মনে করে সেটাই করে, আর একবার কিছু করবে বলে ঠিক করলে সেটা করেই দম নেয়। ছেলেকে কেউ বলে কিছু করাতে পারেনা। হঠাৎ মনে হলো ওর ব্যান্ডেজ গুলোর কথা ওর তো হাতেও ব্যান্ডেজ আর পায়েও, কীভাবে হাটছে আমায় কোলে নিয়ে? কষ্ট হচ্ছে না? ও একপা খানিকটা টেনেই হাটছে, আমি বললাম
.
– আমাকে নামিয়ে দিন আমি হাটতে পারি।
.
– তুমি সাথে থাকলে আমার ব্যাথা লাগেনা জানপাখি, দূরে থাকলেই লাগে, আর তোমার কাছ থেকে দূরে থাকার ব্যাথার কাছে এই ব্যাথা কিছুই না।

আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে ও কীকরে বুঝলো যে আমি ওর ব্যাথার কথা ভেবেই নামাতে বলেছি? ও আমাকে সোজা ওর রুমে নিয়ে গিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো, তারপর দরজা লক করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। আমি হেবলার মতো ওর কান্ড দেখছিলাম। আমাকে ওর রুমে নিয়ে আসার মানে কী? কিছুক্ষণ পর ও ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল
.
– ফ্রেশ হলে হয়ে এসো যাও!
.
– মানে কী আমাকে এখানে কেনো এনেছেন হ্যা? আমি জাবিনের রুমে যাবো।
.
– একটা থাপ্পড় মারবো। কখন থেকে আপনি আপনি করে যাচ্ছো। আর আজ রাতে এখানেই থাকবে তুমি।
.
আমি বিছানা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে বললাম।
.
– কীহ? বাড়ির সবাই কী ভাববে?
.
– কেউ জানলে তবে তো। এইজন্যেই তো জাবিনকে ডোজ টা দিয়ে এলাম
.
– খাটাশ একটা ( বিড়বিড় করে)
.
– What?

– n-no-nothing..
.
– nothing..?
.
– হুম।
.
– তুমি আজ এই রুমেই থাকছো।
.
– কী স্ সব বলছেন আমি এখানে থাকতে পারবোনা
.
– কেনো?
.
– ক্ কেনো মানে কী? আমি আপনার রুমে কী করে থাকতে পারি?
.
– কেনো সমস্যা কী? নাকি বিশ্বাস করতে পারছোনা আমাকে?
.
– মানে?
.
– মানে…

বলেই টাওয়ালটা রাখল তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে লাগল আর আমি পেছাতে লাগলাম, ও বাকা হেসে এগোচ্ছে আমার দিকে আর আমি পেছাচ্ছি। হঠাৎ ই দেয়ালে লেগে গেলাম, এ এসে আমার বা পাশের দেয়ালে হাত রেখে একটু ঝুকলো। তারপর বলল
.
– যদি কিছু করে ফেলি?
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম ওর দিকে ও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমার কোমরে আলতো করে হাত রাখল আর আমার সেই বিখ্যাত কাপুনি শুরু হয়ে গেলো। ও আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল
.
– এভাবে কেপোনা জানপাখি, নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয় তো!
.
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম ও মুচকি হেসে আমার গাল টেনে বলল
.
– মজা করছিলাম।
.
– আপনি কীন্তু..
.
– আরেকবার আপনি বললে সত্যি সত্যি থাপ্পড় মারবো। (ধমকে)
.
ধমক খেয়ে আমি চুপ হয়ে গেলাম। ও রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমাকে কোলে করে সোজা বেডে গিয়ে আমাকে কোলে নিয়েই বসলো। তারপর খুব জোরে কোমর চেপে ধরে রাগী গলায় বলল

– এতো রাগ দেখানোর কী আছে? কতবার সরি বলেছি? সেই দুপুর থেকে ইগনোর করে যাচ্ছো! এতো সাহস কোথায় পেলে?
.
আমিতো ভয়ে চুপ করে আছি। যতই ফটর ফটর করি আসলেতো ওকে আমি ভীষণ ভয় পাই! তাই চুপ করে আছি। ও আমাকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলল
.
– আচ্ছা সরি বলছিতো!
.
এবার মেজাজটা সত্যিই খারাপ হলো সারাদিনের পুশে রাখা রাগটা মাথায় চারা দিয়ে উঠলো। রাগে বিছানার ওপর উঠে দুই হাটুর ওপর ভর দিয়ে বসে একটা বালিশ ছুরে মারলাম ওর দিকে। রাগী গলায় বললাম
.
– সরি? সরি বলা হচ্ছে? Do you have any idea যে আমার কেমন লাগছিলো? ওই এক সপ্তাহ কী গেছিলো আমার ওপর দিয়ে? আর তুমি জাস্ট সরি বলে সবটা কাটিয়ে দিতে চাইছো?
.
আদ্রিয়ান এর রাগী মুখটা নিমেষেই কালো হয়ে গেলো। অসহায় কন্ঠে বলতে নিলো
.
– আসলে..
.
কিন্তু ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বললাম
.
– রাখো তোমার আসলে নকলে! তোমার কোনো খবর না পেয়ে কী হচ্ছিলো আমার জানো তুমি? না খেতে পারছিলাম আর ঘুমোতে, তারপর ঐ ব্লাস্ট ঐ ডেডবডি বাইকে রক্ত, আর ঐ যখন ওই ফুলিশ আই মিন পুলিশ অফিসার বলেছিলো যে ডি এন এ ম্যাচ করে গেছে তখন তো আমার দুনিয়াই থেমে গেছিলো। আর তুমি সরি বলছো!
.
বলতে বলতে আবারো কেদে দিয়েছি। আর ও করুণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আবারো বললাম
.
– তুমি বলো তুমি আমাকে কাদতে দেখতে পারোনা কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কী জানো তুমি আমাকে এই এক সপ্তাহে যতোটা কাদিয়েছো এর আগে আমাকে এতোটা কেউ কাদায়নি।
.
– অনি আমি..
.
– কী হ্যা বুঝতে পারোনি? তাইতো? কী বুঝতে পারোনি? ইউ কে যাবার আগের রাতটা আমার সাথে থেকেও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না। গিয়েও ইনফর্ম করলেনা একবারো মনে হয়নি যে আমি টেনশন করতে পারি? চিন্তা হতে পারে। যে ছেলে এক ঘন্টার জন্যেও বাইরে গেলে জানিয়ে যায় সে এক সপ্তাহ ধরে বাড়ি না ফিরলে বাড়ির মানুষের অবস্হা কী হতে পারে বুঝতে পারোনি তুমি?
.
আদ্রিয়ান চুপ করে আছে কিচ্ছু বলছেনা। আমি খাট থেকে নেমে সোজা বেলকনিতে গিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ও এসে আমাকে ঘুরিয়ে চোখ মুছে গিয়ে আমাকে ওর বুকে জরিয়ে নিয়ে বলল

– আর কখোনো এরকম করবোনা। প্লিজ আর কেদোনা
.
আমি ছাড়াতে লাগলাম ওকে কিন্তু ওর সাথে পেরে উঠলাম না তাই শান্ত হয়ে ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম
.
ও আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– তুমি আমার ওপর রাগ করে থাকলেতো আমার অনেক কষ্ট হয় জানপাখি। খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা?
.
আমি কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ওর বুকে মাথা রেখে ওর কথা শুনছি।
.
ও আমাকে কোলে নিয়ে বেডে বসালো তারপর খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আমাকে ওর বুকে নিয়ে বলল
.
– কথা বলবেনা আমার সাথে?
.
আমি ওর বুকে মুখ গুজে মাথা নাড়ালাম অর্থাৎ নাহ। ও আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
.
– আচ্ছা বলতে হবে না, আমি বলছি তুমি শোন। জানো তোমাকে প্রথমযখন দেখেছিলাম তারপর থেকেই তোমাকে মিস করতাম। তোমার ছবিগুলো দেখেই তিনটা বছর কাটিয়েছি কিন্তু মিস করলেও থাকতে পারতাম, কিন্তু তোমার সাথে দেখা হবার পর তোমার মায়ায় আরো জরিয়ে পরলাম। এখন তোমাকে ছাড়া প্রতিটা মুহুর্ত একেকটা যুগের মতো মনে হয়। তোমাকে যখন মেডিকেলে দেখলাম ইচ্ছে করছিলো তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকি, দুচোখ ভরে দেখে নেই কিন্তু সব ইচ্ছে চাইলেও পূরণ করা যায়না, প্রথম কিছুদিন তোমাকে ইগনোর করতে চাইলেও পারিনি বার বার চোখ শুধু তোমার দিকেই যেতো পারতামনাআ তোমায় এরিয়ে চলতে।
.
আমি অবাক হয়ে শুনছি ওর কথা গুলো। ও প্রথম থেকে ইচ্ছে করেই আমাকে ইগনোর করতো? ও আবারো বলতে শুরু করল

সেদিন যখন ফুচকা খেতে গিয়ে তুমি ঝাল খেয়ে কষ্ট পাচ্ছিলে, তোমার ঐ অবস্হা সহ্য হচ্ছিলো না। তোমাকে ওভাবে কষ্ট পেতে দেখে আমারো নিজের ওপর রাগ হচ্ছিলো আর নিজের ওপর রাগটাই তোমার ওপর ঝেড়েছিলাম।
এরপর যেদিন ওই বাইকার তোমার ওরনায় হাত লাগিয়ে ছিলো সহ্য হয়নি আমার, ওই দুজনকে তো মেরে ছিলামি আর যে তোমার ওরনায় হাত দিয়েছিল তার দুটো হাতই ভেঙ্গে দিয়েছিলাম।
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওরদিকে। ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
.
– এটুতেই অবাক হলে নবীন বরণে শাড়ির নিচ দিয়ে তোমার কোমর দেখা যাচ্ছিলো, আর ওখানের কয়েকজন বাখাটে তোমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছিলো, তোমার গলার নিচের তিলটা নিয়েও বাজে উক্তি করেছে। তাই আগে ওগুলোকে হসপিটালে পাঠিয়েছিলাম তারপর তোমার সাথে কী করেছি তাতো জানোই।
.
ও নোহ এইজন্যই সেদিন আদিব ভাইয়া ওরকম হন্তদন্ত হয়ে চলে গেছিলো?
.
– জানো এক্সিডেন্টের পর তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো। হসপিটালের বেডে শুয়ে শুধু তোমার কথাই ভাবছিলাম। আমিও খুব মিস করছিলাম তোমাকে!
.
ওনার এসব কথা শুনে ওনার ওপর থেকে রাগ নিমেষেই চলে গেলো। সত্যিই কাছের মানুষের ওপর রাগ করে থাকা যায় না। উনি মুচকি একটা হাসি দিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
.
– তোমাকে ছাড়া কাটানো প্রত্যেকটা সেকেন্ড আমি মিস করি তোমাকে ভীষণ মিস করি। কিন্তু কখনো যে আমার জন্যেও তোমাকে এতো কষ্ট পেতে হবে ভাবিনি সত্যিই ভাবিনি। আ’ম সরি!
.
আমি এখনো কিছু বলছিনা চুপচাপ ওর কথা শুনছি। ও আবারো বলল
.
– তবে I promise যে আজকের পর তোমাকে না বলে আমি কোথাও যাবোনা।
.
– প্রমিস?
.
– পাক্কা প্রমিস! এমনকি পরকালেও নাহ
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে। ও বললো
.
– হুম মৃত্যুর আগেও তোমাকে শেষ বিদায় জানাতে ভুলবো না।
.
– কী সব বলছো এসব। আর কীভাবেই বা জানাবে?

– আদিত্য রয় কাপুর এর মতো।
Bhula de na mujhe
Hai Al bidah tujhe..
.
খবিশ খালি আজেবাজে কথা বলে তুমি চলে গেলে আমি থেকে কী করবো? তাই রেগে বললাম
.
– চুপ করবে তুমি শুধু আজেবাজে কথা।
.
– তোমাকে থাকতে হবে অনি।
.
– এই তুমি আমার না বলা কথাগুলো কিকরে বুঝে যাও বলোতো?
.
– বুঝতে হয় জানপাখি। শুধু ভালোবাসলে হয়না ভালোবাসার মানুষের না বলা কথাগুলোও বুঝে নিতে জানতে হয়। কারণ আমরা সবসময় মুখে যেটা বলি সেটাই যে মনের কথা হবে এমন কোনো কথা নেই।
.
– হুম
.
– ভবিষ্যৎ এ তুমি আমার না বলা কথা গুলো বুঝবে তো? আমার মুখে বলা কথাগুলোকে না ধরে আমার মনের কথা পরতে পারবে?
.
– চেষ্টা করব।
.
– প্রমিস করছো?
.
– পাক্কা প্রমিস করছি।
.
দুজনেই হেসে দিলাম। এরপর ও বিভিন্ন কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে থেমে গেলো আমি ওর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে দেখলাম ও ঘুমিয়ে আছে। এত্তো কিউট কেনো ও? ও যেভাবেই থাকে সেভাবেই সুন্দর লাগে ওকে। কপালে করা ব্যান্ডেজেও কী সুন্দর লাগছে। কপালে পরে থাকা চুলগুলো ওর সেই কিউটনেসকে আরো বারিয়ে দেয়। ও যে স্মোকিং করেনা তা ওর ঠোট দেখলেই বোঝা যায়। সরু বেবিপিংক ঠোট দুটো চেহারার সাথে এক্কেবারে মানানসই। এই এক্সিডেন্ট আর প্রেসারের চক্করে সেভ ও করেনি, তাই খোচা খোচা দাড়ি আছে গালে। হাতদিয়ে ছুয়ে দিলাম ওর গালের দাড়িগুলোকে। ও মাঝে মাঝে খুব অদ্ভুত স্টাইলে ভ্রু কুচকায় এক ভ্রু উপরে তুলে আরে ভ্রুনি নিচে কোনাকুনি এঙ্গেলে, বলিউডের সুশান্ত সিং এর মতো! খুব কিউট লাগে তখন।

ওর দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছি। অাচ্ছা ওর প্রতি এতো ভালোলাগা কাজ করা, ওর সবকিছুই ভালোলাগা, নিজের অজান্তেই ওকে নিয়ে ভাবা এটাকি ভালোবাসা না? অন্য মেয়েরা ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে জেলাস ফিল করা, ওকে নিয়ে পসেসিভ থাকা একেকি ভালোবাসা বলেনা? ওর অনুপস্হিতি আমাকে দুর্বল করে দেওয়া, ওকে ছাড়া নিজের জীবন মূল্যহীন মনে হওয়া ওর জন্য এতো হাইপার হওয়া, ওর ছোয়ায় অসস্তির বদলে অন্তরকম অনুভুতি হওয়া, doesn’t it mean love? ওর প্রতি আমার এই সব ফিলিংস এর নাম কী ভালোবাসা না? Of course it means love… হ্যা আজ আমি মানতে বাধ্য I love him, ভালোবেসে ফেলেছি আমি ওকে। আজ আর কোনো কনফিউশন নেই এই ব্যাপারে যে আমি ওকে ভালোবাসি। এসব ভেবেই মুচকি হেসে ওর গালে আলতো করে চুমু দিলাম ও ঘুমের মধ্যেই হালকা কেপে উঠলো আমি হালকা হেসে ওর বুকে মাথা রেখ ওকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম

ওর দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছি। অাচ্ছা ওর প্রতি এতো ভালোলাগা কাজ করা, ওর সবকিছুই ভালোলাগা, নিজের অজান্তেই ওকে নিয়ে ভাবা এটাকি ভালোবাসা না? অন্য মেয়েরা ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে জেলাস ফিল করা, ওকে নিয়ে পসেসিভ থাকা একেকি ভালোবাসা বলেনা? ওর অনুপস্হিতি আমাকে দুর্বল করে দেওয়া, ওকে ছাড়া নিজের জীবন মূল্যহীন মনে হওয়া ওর জন্য এতো হাইপার হওয়া, ওর ছোয়ায় অসস্তির বদলে অন্তরকম অনুভুতি হওয়া, doesn’t it mean love? ওর প্রতি আমার এই সব ফিলিংস এর নাম কী ভালোবাসা না? Of course it means love… হ্যা আজ আমি মানতে বাধ্য I love him, ভালোবেসে ফেলেছি আমি ওকে। আজ আর কোনো কনফিউশন নেই এই ব্যাপারে যে আমি ওকে ভালোবাসি। এসব ভেবেই মুচকি হেসে ওর গালে আলতো করে চুমু দিলাম ও ঘুমের মধ্যেই হালকা কেপে উঠলো আমি হালকা হেসে ওর বুকে মাথা রেখে ওকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম। আজ সত্যিই ওর হার্ডবিট এ “I love you mayabini” কথাটা ফিল করতে পারছি। সেই স্পন্ধন শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে কারো আলতো ডাকে ঘুম ভাঙলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে এক হাতে চোখ ডলে একটা হাই তুললাম তারপর বুঝতে পারলাম আমি আদ্রিয়ানের বুকেই শুয়ে আছি। আমি মাথা উচু করে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, ও মুচকি হেসে আমার গালে একটা কিস করে বলল
.
– Good morning
.
আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম
.
– morning..
.
ও আমাকে নিজের বুকে জরিয়ে রেখেই বলল
.
– তুমি জানো তোমার প্রতিটা রূপ ই ঘায়েল করার মতো?
.
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– মানেহ?
.
– মানে এইযে তোমার ঘুমন্ত মুখটা জাস্ট এখানে গিয়ে লাগে।

বুকের বা পাশে হাত রেখে বলল কথাটা। আমি ভ্রু কুচকেই তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল
.
– তোমার মুখের ওপর পরে থাকা চুল আর বন্ধ চোখ যেনো একটা ঘুমন্ত মায়াকুমারী। আর ঘুম থেকে ওঠার পর তোমার ওই এলোমেলো রুপটা আরো ঘায়েল করে আমাকে।
.
বলে আমাকে ঘুরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কোমরে হাত রাখল হালকা করে স্লাইড করল। আমতো পুরো থ মেরে আছি, আমার গালে নাক ঘষতে ঘষতে বলল
.
– তোমাকে এভাবে এলোমেলো ভাবে দেখলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। তুমি ছাড়া আর কিচ্ছু ভাবতে মন চায় না।
.
বলেই আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো, এক প্রকার পাগলের মতো কিস করতে লাগল গলায়। আমি জানি এখন শতো চাইলেও একে সরাতে পারবোনা তাই সেই বৃথা চেষ্টা না করলাম না। ও আমার সারা গলায় ওর মুখ দিয়ে স্লাইড করছে আর মাঝে মাঝে কিস করছে, আজ ওর ছোয়ায় একটা উন্মাদোনা দেখছি আমি, যেনো ও নিজের মধ্যে নেই আর আমিও যেনো হারিয়ে যাচ্ছি ওর মধ্যে। বেশ অনেকটা সময় পর ও আস্তে আস্তে আমার গলা থেকে মুখ সরিয়ে নিলো তারপর আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– একদিন সত্যিই পাগল করে দেবে তুমি আমাকে
.
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম
.
– হয়েছে এবার ছাড়ো। যেতে হবে নইলে কেউ দেখলে বাজে হবে ব্যাপারটা।
.
ও আমাকে আরো জোরে জরিয়ে ধরে বলল
.
– আরেকটু থাকো প্লিজ!
.
– একটুও না কেউ দেখতে পেলে কী ভাববে?
.
– যা ভাবার ভাবুক আমি ছাড়ছি না।
.
– তুমি আমাকে বাচ্চা বলো এখন তো নিজেই বাচ্চামো করছো। প্লিজ ছাড়ুন
.
– উফ! এই চলো না বিয়ে করে ফেলি। আর দূরে সরিয়ে রাখতে পারছিনা তোমাকে!
.
আমি হেবলার মতো তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে সেটা দেখে ও বলল

– দেখোনা বিয়ে হয়নি বলে কতো লিমিটেশন মেইনটেন করে চলতে হয়। তুমিই বলো নিজের ভালোবাসার মানুষের এতো কাছে থাকলে কোনো লিমিটেশন মানতে ইচ্ছে করে?
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, ও ভ্রু নাচিয়ে বলল
.
– হোয়াট? ভুল বললাম। দেখোনা আজ যদি তুমি আমার বিয়ে করা বউ হতে তাহলে তোমার ঐ ঘুম থেকে ওঠা এলোমেলো রুপ দেখে নিজেকে এতো কষ্টে কন্ট্রোল করতে হতো? কখন..
.
আমি হা করে তাকিয়ে আছি ছেলেটার দিকে এর মুখে কিচ্ছু আটকায় না যা ইচ্ছে তাই বলে দেয়!
.
– তুমি আসলেই একটা যাচ্ছে তাই।
.
– এইজন্যই তো বলি চলো বিয়েটা করে ফেলি তারপর বুঝিয়ে দেবো আমি কী! কিন্তু আমাদের ফেমিলি মেমবার রা বুঝছেই না ব্যাপারটা!
.
আমি হেসে ওর নাকটা টিপে দিয়ে বললাম
.
– দিল্লি এখোনো বহুত দূর !
.
বলেই ওকে ছাড়িয়ে উঠে গেলাম। আর ও এক্কেবারে বাচ্চাদের মতো মুখটা ফুলিয়ে বসে রইলো, সেটা দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না, ওর কাছে গিয়ে ওর গালে আলতো করে একটা কিস করে দিলাম, ও বোধ হয় ১৭৬০ ভোল্টের শক খেলো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, আমি দৌড়ে দরজার কাছে যেতেই চেচিয়ে বলল
.
– ডোজ টা বেশি হয়ে গেলো ওভার ডোস হলে সামলাতে পারবে তো?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেংচি দিলাম। আর ও বুকে হাত দিয়ে ‘হায়’ বলে কোলবালিস নিয়ে পরে যাওয়ার স্টাইলে শুয়ে পরল, আমি আর না দাড়িয়ে সোজা বাইরে চলে গেলাম তারপর একপ্রকার দৌড়ে জাবিনের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকলাম, নিজের কাজেই নিজে অবাক হয়ে গেছি কীকরে করলাম এটা আমি? I kissed on his check? ঘুমন্ত অবস্হায় দেয়াটা এক কথা কিন্তু এভাবে.. দূর এবার ওর সামনে গিয়ে দাড়াবো কীকরে আমি? যা হবে পরে দেখা যাবে এসব ভেবে জাবিনের দরজায় নক করলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর জাবিন চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে আমাকে দেখে বলল

– আরেহ ভাবি, তোমাদের প্রেম করা হয়ে গেছে?
.
– ভেতরে আসতে দেবে? নাকি ইউ টার্ন মারবো?
.
– না না এসো এসো!
.
আমি ভেতরে ঢুকতেই দরজা লক করে দিলো, আমি গিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসলাম ওও পাশে বসে বলল
.
– এত্তো সকালে চলে এলে যে? আমিতো ভাবলাম সারারাত রোমান্স করে তোমারা এখন ঘুমোবে!
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম ওর দিকে। ও দুষ্টু হেসে বলল
.
– কেস কতোদূর এগোলো ভাবি?
.
– কীসের কেস? (অবাক হয়ে)
.
– মানে কী কী হলো?
.
বুঝতে পারলাম এই মেয়ে কী মিন করছে আস্তো বজ্জাতনি! আমি তবুও না বোঝার ভান করে বললাম
.
– কী হবে? কীছুই হয়নি!
.
– হ্যা তাতো তোমার গলার ঐ লাল লাল র‍্যাসেস্ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আমি থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি গলায় হাত দিলাম। দুই ভাই বোনের ওপরেই রাগ লাগছে। সবসময় আমার ইজ্জতের ফালুদা বানায়, আদ্রিয়ান কে কাচাই চিবোতে ইচ্ছে করছে এভাবে করে কেউ? নিজেকে সামলে বললাম
.
– এগুলোতো এ্এলার্জি থেকে হয়েছে।
.
জাবিন হাসতে হাসতে বলল
.
– হ্যা সেটাতো বুঝতেই পারছি
.
– মানে?
.
– ইস সারারাত আমার ভাইয়ের আদর খেয়ে এখন মানে বলছে!
.
আমিতো অবাকের শেষ প্রান্তে। এই মেয়ে বলে কী? রেগে বললাম
.
– মারবো ধরে পাকা মেয়ে একটা! আমাদের তোমার এরকম মনে হয়?
.
– নাহ কিন্তু দুজনের যা প্রেম… একজন নিরুদ্দেশ শুনে আরেকজন আধ পাগল হয়ে হসপিটালের বেডে তিন দিন সেন্সলেস হয়ে থাকে। আবার আরেকজন তো সারারুম জুরে তোমার ছবি টানিয়ে রেখেছে, সারাদিন তোমার নামই জব করে।
.
– হুম তো? ( ভ্রু কুচকে)
.
– এতো প্রেম এতো ভালোবাসা দুজনের এতো কাছাকাছি থেকে নিজেদের কতোটা কন্ট্রোল করতে পরো তাতো তোমরাই জানো!
.
আমি ওকে চাপড় মেরে বললাম
.
– অসভ্য মেয়ে!

– আরেহ সমস্যা কী? ফিয়ন্সে তোমরা, বিয়ে হবে তোমাদের তাইনা?
.
– হবে হয় নি এখোনো?
.
– হুম! তা ঠিক।
.
এরপর দুজনে গল্প করতে করতে ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে গেলো। ব্রেকফাস্ট টেবিলে একসাথে খেতে বসেছি তবে আজ আদ্রিয়ান আমার পাশে বসেছে। সবাই মিলে বিভিন্ন কথা বলতে বলতে খাচ্ছি হঠাৎ পায়ে সুরসুরি অনুভব করলাম। আমি হতাশাজনক ভাবে ভাবলাম আজকেও বিড়াল? সেদিন এই বিড়ালের চক্করেই ফেসে গেছিলাম আজ ছাড়ছিনা বলে হালকা ঝুকলাম দেখার জন্য তাকিয়েতো আমি শকড। বেড়াল নাহ আদ্রিয়ানই পা দিয়ে আমার পা স্লাইড করছে। আমি ওর দিকে তাকালাম ও নিচের দিকে তাকিয়ে একমনে খাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে, খবিশ একটা। সবার সামনে কিছু বলতেও পারছিনা ওর স্লাইড করতে করতে কিছুনা ওপরে উঠে গেছে আমি খেতেও পারছিনা শান্তিতে আমি চোখ গরম করে তাকালাম ওর দিকে সেটা দেখে ও ওর জালাতন করার পরিমাণ কমার বদলে আরো বাড়িয়ে দিলো! আমি এবার করুন চোখে তাকালাম ওর দিকে সেটা দেখে ও থেমে গেলো। আমিও সস্থির নিশ্বাস নিয়ে খেতে থাকলাম।
.
খাওয়া শেষে ছাদে গিয়ে জাবিনের সাথে অনেক্ষণ গল্প করলাম। বাড়িতেও কথা বললাম। আর আম্মুর কিছু স্পেশাল এডভাইস তো আছেই তার মধ্যে অন্যতম হলো আদ্রিয়ানের সামনে সামলে চলবে। ভাবতেই হাসি পায়! জাবিন কলেজ চলে যাবার পর ছাদের সিড়ি দিয়ে নামতে যাচ্ছি তখনি আমার হ্যাচকা টান মেরে কেউ দেয়ালের সাথে লাগিয়ে নিলো, আমি প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও দেখলাম এটা আদ্রিয়ান, আদ্রিয়ান আমার পাশে দেয়ালে হাত রেখে বলল
.
– সকালে ওটা কী ছিলো?
.
– কক্ কোনটা?
.
ও এবার ইনোসেন্ট ফেস করে বলল
.
– আমার মতো অসহায় অবলা একটা ছেলেকে এভাবে কিস খাচ বাংলায় চুম্মা দিয়ে চলে গেলোতে। একেতো একপ্রকার ইজ্জতহরণ বলে।
.
বলেই ইনোসেন্ট একটা ফেস করল আমিতো হা করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, ও অসহায়? আবার অবলাও? আমার একটা কিসে ওর ইজ্জতহরণ হয়েছে? তাহলে ও আমার সাথে যা যা করে সেগুলোতে আমার কিছু হয়না? ও আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখ ফুলিয়ে বললো

– এভাবে দেখছো কেনো আমি জানি আমি খুব হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাবে?
.
– আমি কেনো আপনাকে দেখতে যাবো। হুহ যে একটা চেহারা নাম আবার পেয়ারা।
.
– What was that?
.
– ওসব আপনি বুঝবেন না ছাড়ুন আমাকে
.
– এতো তাড়াতাড়ি না, সকালে অভার ডোজ দিয়ে ফেলেছো, এখন এর ফল তোমাকে তো একটু ভোগ করতেই হবে!
.
বলে মুখটা এগিয়ে আনতেই আমি মাথাটা একটু পিছিয়ে বললাম
.
– দদেখো এটা কিন্তু ঠিক না!
.
– কোনটা?
.
– তোমাকে একটা কিস করেছি তাতে নাকি তোমার ইজ্জত হরণ হয়ে গেছে তাহলে তুমি যেটা করছো তাতে আমার কিছু হবেনা?
.
– একদমি না আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই আমি টাচ করলে কিছু হবেনা! কিন্তু তুমিতো আমাকে ভালোবাসোনা তাই তুমি টাচ করলে আমার ইজ্জতহরণ হয় বুঝলে।
.
আমি অবাক ওর কথায় একটা আবার কেমন যুক্তি? আমি ভ্রু কুচকে বললাম

– এটা আবার কীরকম এক্সকিউস?
.
ও আমার মাথায় একটা টোকা মেরে বলল
.
– এসব লিজেন্ডদের ব্যাপার তোমার ঐ ছোট্ট মাথায় ঢুকবেনা।
.
– আমি ঢোকাতে চাইয়ো না যেতে দাও আমায়?
.
– বললাম না এতো সহজে না?
.
বলেই আমাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিলো, আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
.
– দ্ দেখো
.
– আরেহ এতো তাড়া কেনো তোমার? দেখবোতো ! বিয়েটাতো হতে দাও, বিয়ের আগেই দেখে নিলে ব্যাপারটা ভালো দেখাবেনা।
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম দিকে। ও আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
.
– তখন কিন্তু তুমি বারণ করলেও শুনবোনা।
.
বলে আবারো মুখটা এগিয়ে আনতেই আমি বললাম
.
– আন্টি..
.
বলতেই ও আমায় ছেড়ে দিলো আমি দৌড় দিতে নিলেই ও আমার হাত ধরে ফেলল তারপর বলল
.
– এটাকে কি সিনেমা পেয়েছো? যে তুমি আন্টি বলবে আমি ভয় পেয়ে ছেড়ে দেবো আর তুমি পালিয়ে যাবে?
.
– তোমার মাথায় এতো বুদ্ধি কেনো বলোতো?

– এমনি এমনি এতোগুলো অ্যাওয়ার্ডস ঘরে আনিনি বেইবি। এইটা খাটাতে হয়েছে ( নিজের মাথায় ইশারা করে)
.
– আচ্ছা ছাড়ুন না কেউ দেখলে কী ভাববে?
.
– এখন এখানে কেউ আসবেনা সুইটহার্ট!
.
বলেই আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে। ঘারে নাক ঘসতে লাগল। আমি ছাড়াতে চাইলে ছাড়ার বদলে আরো জরিয়ে নিচ্ছে নিজের সাথে
.
– আদ্রিয়ান এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।
.
– কোনটা?
.
– তোমার মাথা! ছাড়ো আমাকে
.
– তোমাকে ছেড়ে দিলে আমি কী নিয়ে থাকবো হুম?
.
বলেই জরিয়ে ধরল আমাকে আমিও মুচকি হেসে জরিয়ে ধরাম ওকে। এভাবেই কেটে গেলো এক সপ্তাহ এই একসপ্তাহ ওদের বাড়িতেই ছিলাম আম্মু বেশ কয়েকবার বলেছে চলে যেতে কিন্তু আন্টি আদ্রিয়ান ইন ফ্যাক্ট আমার শশুর বাড়ির কেউই আমাকে এক মাসের আগে ছাড়বেনা তাই বাধ্য হয়েই থাকতে হলো! আমাকে আদ্রিয়ানের পাশের একটা রুমেই দেয়া হয়েছে, তাও আদ্রিয়ানের কথাতেই আর কেনো? তাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা। মেডিকেলেও নিয়মিত যাতায়াত করছি, তবে আদ্রিয়ান এখোনো একা ছাড়েনা আমায় হয় নিজে সাথে থাকে আর বেশি কাজ পরে গেলে ওর গার্ডস। ব্যাপারটা আমার কাছে বিরক্তিকর লাগলেও কিছু করার নেই সে তার সিদ্ধান্তে অটল। তবে আমি কিছুদিন ধরে ফিল করছি যে কেউ আমাকে ফলো করছে ভয় করে যদি ওরা আবার অাসে, আমার কিছু হয়েগেলে আদ্রিয়ান পাগল হয়ে যাবে এটা বুঝতে পারছি। প্রথমে কয়েকদিন মনের ভুল ভাবলেও এখন আমি নিশ্চিত যে কেউ বা কারা আমাকে ফলো করে, হিংস্র পশু যেমন ঝোপের মধ্যে হরিণ শিকারের জন্য ওত পেতে থাকে আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে সেভাবেই নজরে রাখছে , ভেবেছিলাম আদ্রিয়ানকে বলবো ব্যাপারটা, কিন্তু ওর কাজের চাপ বেশি তাই কয়েকবার বলতে চেয়েও বলিনি।

আজ মেডিকেল থেকে বেরিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আসেনি। বেশ অবাক হলাম। ও তো এরোকম করে না! কাজের জন্যে নিজে না আসতে পারলে গার্ডসহ গাড়ি পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু আজ কী হলো? ওকে ফোন করলাম কিন্তু ফোন লাগছেনা কয়েকবার ট্রাই করেও পেলামনা কিছুক্ষণ ওয়েট করার পরেও যখন পেলাম না তখন নিজেই হাটতে লাগলাম সিএনজি খোজার জন্য। বেশ অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ করে খুব দ্রুত গতিতে আমার সামনে কালো একটা গাড়ি থামলো, গাড়িটা এতোটাই জোরে এসে থামলো যে আমি চমকে গেলাম, এক্কেবারে আমার সামনেই থেমেছে। রেগে কিছু বলতে যাবো তার আগেই দরজা খুলে একজন বেরিয়ে এলো তাকে দেখেই আমার আত্না শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্হা কারণ এ সেই চারজনের মধ্যে একজন, কারণ সেদিনের মতোই কালো কাপড় পড়া আর চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। আমি চিৎকার করার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। গাড়ির ভেতরে ঢুকে আমি আরো শকড। পাচজন আছে গাড়িতে সবাই একি রকম কালো পোশাক পরা। সবারই শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে আর কিছু না। তবে সেইদিনেরর চতুর্থ বেক্তি নেই এখানে সেটা বুঝতে পারলাম। আমি জোরে চিৎকার করে বললাম
.
– Help please help!
.
আমার চিৎকার শুনে পাচজনেই জোরে হেসে দিলো হাসতে হাসতে ওদের মধ্যে একজন বললো
.
– চেচিয়ে লাভ নেই, গাড়ির বাইরে তোমার আওয়াজ পৌছবে না তাই চেচিয়ে কানের পোকা নারিও না
.
আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আরো জোরে চেচাতে লাগলাম। আমার বা পাশে বসা লোকটা একটা গান আমার গলায় ঠেকিয়ে খুব জোরে ধমক দিয়ে বলল
.
– চুপ! আরেকটা টু শব্দ করলে মেরে দেবো একদম।

লোকটার ধমকে আমি ভয় পেয়ে চুপ হয়ে মাথা নিচু করে কাদতে লাগলাম। আরেকজন বলল
.
– বস বলেছে গায়ে হাত না লাগাতে নইলে বুঝিয়ে দিতাম আমরা কী জিনিস!
.
– আরেহ বস নিজেই হাত লাগাবে আগে কোডটা একবার হাতে আসুক। ওই গাড়ি স্টার্ট দে!
.
গাড়ি স্টার্ট করতেই আমি ছটফট করতে লাগলাম চেচাতে লাগলাম। সেটা দেখে আমার দুপাশে বসে থাকা দুজন আমার দুই হাত হাত চেপে ধরে রাখল আমি আরো জোরে চেচাতেই সামনের সিটে বসে থাকা লোকটা বন্দুক আমার কপালে ঠেকিয়ে বলল
.
– একটুও ছটফট না ওকে? নিজের ভালো চাইলে চুপ করে থাকো। খুন করতে হাত কাপেনা আমাদের।
.
আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম
.
– কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? প্লিজ যেতে দিন আমায়, আমি কিচ্ছু জানিনা।
.
– Shut Up.. ওই এই মেয়ে বেশি পেচাচ্ছে হাতমুখ বেধে দে।
.
আমি ছাড়ানোর জন্য আরো ছটফট করে বললাম
.
– নাহ প্লিজ এটা করবেন না। ছেড়ে দিন আমাকে, আমি সত্যিই জানিনা কিছু!

কিন্তু ওরা আমার কোনো কথা না শুনে আমার হাত দুটো পেছনে নিয়ে বেধে দিলো, মুখটাও একটা কালো কাপড় দিয়ে বেধে দিলো। আমি ছোটার জন্য ছটফট করছি আর চোখের পানি ফেলছি। ইশারায় ওদের অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছি আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য কিন্তু ওরা শুনলোই না । একটা গোলিতে গিয়ে আমার চোখ ও বেধে দিলো। বেশ কিছুক্ষণপর বুঝতে পারলাম গাড়ি থেমেছে ওরা আমাকে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে কোথাও নিয়ে যেতে লাগল কিন্তু কোথায় সেটা বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ আমার চোখের বাধন খুলে দিলো চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম পুরনো কোনো বিল্ডিং এর ডাইনিং স্পেস দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে, আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করেও ছাড়া পেতে পারিনি
.
একটা রুমে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ফেললো আমাকে বেশ কয়েক জায়গায় ব্যাথা পেয়েছি মুখ বাধা তাই চেচাতেও পারছিনা, ওদের দিকে ঘুরে দেখলাম পাচজনেই ঘিরে দাড়িয়ে আছে আমাকে, এই মুহুর্তে ওদেরকে ভীষণ ভয় করছে আমার, আমি আস্তে আস্তে পিছিয়ে দেয়ালের সাথে গিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে রইলাম, ওরা হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আচ্ছা ওরাকি আর ফিরতে দেবেনা আমাকে? আমার পরিবারকে কী আর দেখতে পাবোনা আমি? আর আদ্রিয়ান? ওকে কী আর দেখতে পাবোনা কখনো? ও পারবে আমাকে ছাড়া বাচতে?
একটা রুমে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ফেললো আমাকে বেশ কয়েক জায়গায় ব্যাথা পেয়েছি মুখ বাধা তাই চেচাতেও পারছিনা, ওদের দিকে ঘুরে দেখলাম পাচজনেই ঘিরে দাড়িয়ে আছে আমাকে, এই মুহুর্তে ওদেরকে ভীষণ ভয় করছে আমার, আমি আস্তে আস্তে পিছিয়ে দেয়ালের সাথে গিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে রইলাম, ওরা হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আচ্ছা ওরাকি আর ফিরতে দেবেনা আমাকে? আমার পরিবারকে কী আর দেখতে পাবোনা আমি? আর আদ্রিয়ান? ওকে কী আর দেখতে পাবোনা কখনো? ও পারবে আমাকে ছাড়া বাচঁতে? আমি মুখ দিয়ে হালকা শব্দ করে ওদের অনুরোধ করছি ওদের আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য কিন্তু ওরা সেটা কানেই তুলছে না। ওদের মধ্যে একজন ধমকি দিয়ে বলল
.
– ওই চুপ! হাত মুখ বেধে রেখেছি তবুও জালিয়ে যাচ্ছে। তিনটে বছর ধরে এই এর জন্য আমাদের ঘুম হারাম করে রেখেছে।
.
একটা গান বের করে বলল
.
– ইচ্ছেতো করছে এটাকে এখানেই শুট করে দেই..
.
আমি ভয় পেয়ে চুপ করে হাটু ভাজ করে দেয়ালের সাথে লেগে বসে রইলাম, কারণ এদের কিছু বলে যে কোনো লাভ নেই সেটা বুঝে গেছি।
.
এবার ওরা ওদের মধ্যে কথা বলতে লাগল
.
– ওই গান নিচে নামা পাগল হয়ে গেছিস? ও মরলে এই জন্মে আর কোড পাওয়া লাগবেনা। আর সেটা হলে বসরা আমাদের ছেড়ে দেবে?
.
– সহ্য হচ্ছে না এই মেয়েকে, দুই বছরের সাধনার পর সফটওয়্যার টা কম্প্লিট হয়েছে আর মেয়ে, সব কিছুতে জল ঢেলে দিলো। একেতো..
.

বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলো, একজন ওকে আটকে বলল
.
– আরে থাম! এসব নিয়ে আমাদের ভেবে লাভ নেই বসকে ফোন করছি উনি এসেই ওর সাথে যা করার করবে।
.
– চারজনেই আসবে?
.
– নাহ দুজন এবরোট গেছে, আরেকজন তো চিটাগাং, দেশে যে আছে তাকেই দে।
.
বলেই কাউকে একটা ফোন করলো। কারা ওদের বস? এটুকু তো বুঝলাম যে ওদের বস একজন না। এদের অনেককেই পরিচিত লাগছে, তিন বছর আগে সেইদিন হয়তো ছিলো। কিন্তু যাই হয়ে যাক আমি কিছুতেই ওদের বলবোনা, মেরে ফেললেও না। কিন্তু এবার ওরা এতো সহজে ছাড়বে বলেও মনে হচ্ছে নাহ। ব্যাগটাও তো ডাইনিং স্পেস এ পরে আছে, থাকলেও কিছু করতে পারতাম না কারণ হাত তো বেধে দিয়েছে ওরা, এসব ভাবতে ভাবতেই একজন বলল
.
– এই মেয়ে
.
আমি লোকটার দিকে তাকাতেই বলল
.
– যদি নিজের ভালো চাও তো স্যার আসলে ঠিক যা জিজ্ঞেস করবে চুপচাপ উত্তর দিয়ে দিবে। নইলে আজকে উনি তোমার সাথে কী করবে সেটা তুমি কল্পোনাও করতে পারছো না
.
আমি হাত মোচরাচ্ছি আর কান্না করছি, তিন বছর আগেও ঠিক এভাবেই বেধে রেখেছিলো আমাকে, সেই দিনের মতো কী আজকেও আমাকে..? ভাবতেই আত্না কেপে উঠলো আমার ছাড়া পাওয়ার জন্য আরো ছটফট করতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ওদের একটা ফোন এলো আর সবাই বেরিয়ে গেলো দরজাটা লাগিয়ে, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম রুমটা পুরো ফাকা। কিচ্ছু নেই গোটা রুমে! শুধু একটা টেবিল আছে আর দুটো চেয়ার। প্রচুর কান্না পাচ্ছে আমার, হাটুতে মুখ গুজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলাম। আমিতো জানতাম এগুলোই হবে আমার সাথে! কিন্তু এখন এতো ভয় কেনো করছে আমার? ওরা আমার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য যা খুশি করতে পারে, আচ্ছা বাড়িতেতো সবাই চিন্তা করছে, আদ্রিয়ান ও নিশ্চিত খুজছে আমাকে, এসব ভেবেই কান্না করছি, খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেক্ষণ পর দরজা খোলার আওয়াজে মুখ তুলে তাকালাম, একপা একপা করে কেউ ভেতরে ঢুকলো, আস্তে আস্তে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে লোকটার অবয়ব স্পষ্ট হতেই লোকটাকে দেখে পিলে চমকে উঠলো আমার, এতো সেই লোকটা সেদিনের ঐ চতুর্থ লোকটা, ওর পোশাক দেখেই আন্দাজ করলাম, হুবহু সেদিনের মতোই পোশাক পরা। লোকটা ধীরে ধীরে আমার কাছে এসে দাড়ালো তারপর এক হাটু ভেঙ্গে বসতেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম, প্রচন্ড ভয় করছে আমার লোকটাকে এর সেদিনের সেই ভয়ংকর রুপ এখোনো ভূলতে পারিনি আমি। লোকটা ওর হাত আমার দিকে এগিয়ে দিতেই আমি ভয় পেয়ে আরো নিজেকে গুটিয়ে নিলাম কিন্তু ও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমার মুখের কাপড় টা নামিয়ে দিলো, আমি অবাক হয়ে তাকালাম লোকটার দিকে, লোকটা বলল

– তোমাকে এখানে কেনো আনা হয়েছে জানো?
.
আমি চুপ করে রইলাম। সেটা দেখে উনি আমার পাশে দেয়ালে হাত রেখে অনেকটা ঝুকে বলল
.
– আমার প্রশ্নের উত্তর না দেয়াটা আমি পছন্দ করি না, যাই হোক এবার মেইন পয়েন্টে আসি..
.
লোকটার এই শান্ত কথা আমার কাছে খুব ভয়ংকর লাগছে, কারণ এর শান্ত কন্ঠও ভয়ংকর হুমকির মতো শোনাচ্ছে, তারওপর কন্ঠস্বর ও অস্বাভাবিক। খুব ভয় করছে একে দেখে, ভয়ে ভয়ে বললাম
.
– য্ যেতে দিন আমায়
.
– আমার কথার মধ্যে কথা বলার সাহস করোনা একদম, ভাবতেও পারবেনা কী করবো তোমার সাথে! ( ধমকে)
.
আমি ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম, লোকটা আমার থুতনি ধরে মাথাটা উচু করে বলল
.
– সোজাসাপ্টা ভাবে জিজ্ঞেস করছি, ফাইলটা কোথায়?
.
আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছি চোখ দিয়ে পানি পরছে। লোকটা ধমকে বলল
.
– স্পিক আপ!
.
চমকে চোখ খুললাম আমি, ওর ধমকে কেদেই দিলাম আমি, কাপা গলায় বললাম .
– ক্ কীসের ফাইল?
.
– ওহ বুঝতেই পারছোনা কীসের ফাইল তাইনা?
.
বলেই আমার গাল চেপে ধরল তারপর রাগী গলায় বলল
.
– তোমার ফালতু নাটক দেখার সময় নেই আমার, চুপচাপ ফাইলটা কোথায় আছে বলে আমাদের হাতে দিয়ে দেও। ছেড়ে দেবো তোমাকে। otherwise..
.
বলে গালটা আরো জোরে চেপে ধরলো, ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার,
.
– পুলিশের কাছে মুখ না খুললে কী করে জানো? প্রথমে ফার্স্ট পরে সেকেন্ড পরে থার্ড ডিগ্রি দেয়, কিন্তু আমি থার্ড ডিগ্রি দিয়েই শুরু করি। আর আমার থার্ড ডিগ্রি পুলিশের চেয়েও ভয়ংকর।
.
লোকটার কথায় কেপে উঠলাম আমি। থার্ড ডিগ্রি মানে কী? কী করবে এরা আমার সাথে? আমি করুন চোখে তাকালাম লোকটার দিকে। অদ্ভুত লাগছে লোকটাকে এভাবে হেলমেট পরে মুখ ঢাকার মানে কী? লোকটা ঝাড়া দিয়ে আমার মুখটা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো তারপর একটা চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দিলো তারপর আবারো আমার কাছে এসে আমার মুখটা বেধে দিয়ে চলে গেলো! আমি জোরে জোরে কান্না করছি মুখ বেধে রাখার কারণে তেমন শব্দ হচ্ছে না। হাত ভিষণ জালা করছে হয়তো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে হয়তো ছিলে গেছে। ওভাবেই কাদতে কাদতে কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি।

হঠাৎ মুখে পানির ঝাপটায় জেগে গেলাম, হুট করে এভাবে জেগে যাওয়ায় সারা শরীর কাপছে আমার সামনে তাকিয়ে দেখি আবারো সেই হেলমেট পরা লোকটা হাতে একটা গান নিয়ে দাড়িয়ে আছে, সাথে আরো দুইজন, আমি কোনোরকমে নিজেকে গুটিয়ে বসলাম। লোকটা আবার বসে আমার মুখে কাপর নামালো তারপর বলল
.
– তো? কী ঠিক করলে বলবে না?
.
– আমি জানিনা! জানিনা কোথায় আছে ফাইলটা
.
লোকটা আমার দিকে হাত বারাতেই সাইডে সরে গেলাম কিন্তু ও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমার বা হাতের বাহু ধরে টেনে দ্বার করালো, হাতের বাধন খুলে দিলো, ঐ দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– পানির বোতল টা আন
.
লোকটার নজর অন্যদিকে, দরজাটাও খোলা সেই সুযোগে আমি পালানোর জন্য দৌড় দিলাম, বাইরে বেরিয়ে অবাক হয়ে গেলাম কোন দিক দিয়ে বেরোবো আমি, আন্দাজ করে বা দিক দিয়ে দৌড়তে লাগলাম সিড়িও পেয়ে গেলাম, কিন্তু নামার পরেই সামনে তিনজন এসে দাড়ালো। সাইড কাটিয়ে দৌড় দিলাম কিন্তু আরেকটা সিড়ির অর্ধেক নামতেই আরো দুজন পথ আগলে দাড়ালো, আমি এদের দেখে পেছাতে লাগলাম পেছাতে পেছাতে সিড়িতে আটকে পরে গেলাম, সিড়ির ওপরে পরে খুব বাজে ভাবে ব্যাথা পেয়েছি, খুব কান্না পাচ্ছে এখন। পেছন থেকে ওই তিনজন ও এসছে, আমি কান্না করতে করতে বললাম
.
– প্লিজ আমাকে যেতে দিন! প্লিজ! ( চিৎকার করে)
.
কিন্তু আমার কথা কানে না নিয়ে ওদের মধ্যে একজন আমার হাত ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগল। পরে গিয়ে পায়ে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু এতোক্ষণে বুঝে গেছি এদের এসব বলে লাভ নেই দে আর হার্টলেস। তাই কিছু না বলে চুপ করেই রইলাম। লোকটা আমাকে টেনে আবারো ঐ রুমে নিয়ে ফ্লোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। এমনিতেই পরে ব্যাথা পেয়েছি তারওপর এইভাবে ফেলে দেয়াতে আরো বেশি লাগল। আস্তে আস্তে উপরে তাকিয়ে দেখি সেই লোকটা পায়ের ওপর পা তুলে বসে আসে চেয়ারে। আমি অবাক হচ্ছি একে দেখে সারাদিন হেলমেট পরে থাকতে পারে মানুষ? এদের মতো কালো মুখস পরলেও তো হয়, হেলমেট কেনো? লোকটা উঠে এসে আমার সামনে বসে বলল
.
– গোল্লাছুট খেলাটা খুব মজার না?
.
আমি ভয় মিশ্রিত চোখেই থাকিয়ে আছি লোকটার দিকে। লোকটা আবারো বললো
.
– কিন্তু এই খেলায় পাকা না হলে বেশিক্ষণ টেকা যায় না যেমন তুমি পারলেনা। What did you think? এখান থেকে বেরোনো এতো সোজা?

আমি চুপ করে আছি লোকটা ধমকে বলল
.
– হতটা খুলে দিতেই পালাতে চাইলে? খুব সাহস তাইনা?
.
বলেই আমার হাত ধরে দাড় করিয়ে নিয়ে চেয়ারে বসালো আর লোকটা অপজিটে বসে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল
.
– ক্লান্ত নিশ্চই?
.
আমি কিছু না ভেবেই পানি খেয়ে নিলাম কারণ এখন এটা খুব দরকার ছিলো আমার ! পানি খেয়ে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলাম। কিছুক্ষণ চুপ থেকে লোকটা এবার বলল
.
– দুই বছর মানে বোঝ?
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম লোকটার দিকে। লোকটা বলল
.
– ৭৩০ দিন মানে ১৭৫২০ ঘন্টা মানে ১০৫১২০০ মিনিট মানে ৬৩০৭২০০০ সেকেন্ড। অনেকটা সময় তাইনা?
.
আমি কিছু না বলে ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে। লোকটা টেবিলের ওপর হাত রেখে ঝুকে বলল
.
– অনেকটা সময় তাইনা? এই দীর্ঘ সময়ে পরিশ্রম করে একটা সফটওয়্যার বানানো হলো, কিন্তু.. এই 730 দিনের কঠোর পরিশ্রমে জল ঢেলে দিলো একটা পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়ে, জাস্ট একটা পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়ে।
.
শেষের সেনটেন্স টা হুংকার দিয়ে বলেই টেবিলে জোরে বারি মারলো, সাথে সাথেই কেপে উঠলাম আমি। প্রচন্ড রাগী গলায় বলল
.
– ঐ পুচকি মেয়েটার জন্য দুই বছরের সাধনার ফল ঐ সফটওয়্যার টা কোনো কাজেই লাগাতে পারলাম না আমরা। কারণ আমাদের সেই মডেল ফাইলটাই মেয়েটা চুরি করে নিলো! ভাবা যায়? ১৫ বছর বয়সের একটা মেয়ে টেরোরিস্ট দের ডেরায় ঢুকে তাদেরি ফাইলটা চুরি করে নিয়ে গেলো? ইন্টারেস্টিং না?
.
বলেই টেবিলে রাখা বন্দুকটা তাক করলো আমার দিকে, আমি এবার শব্দ করে কেদে দিলাম, লোকটা জোরে ধমক দিয়ে বলল
.
– Shut Up..এখন কাদছো কেনো? এটা তো তোমার সেদিনি ভাবা উচিত ছিলো যে তুমি কাদের সাথে শত্রুতা করছো। এখন ভয় পাচ্ছো কেনো? মৃত্যুর খেলায় নিজেকে জরিয়ে ফেলেছো, এতো সহজে মুক্তি পাবে না! তিন তিনতে বছর নষ্ট হয়ে গেছে তোমার জন্য, এর দামতো দিতে হবে তোমাকে তাইনা? এবার বলো কোথায় ফাইলটা?

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই বলল
.
– আ.. কোনো নাটক না ওকেহ?
.
হঠাৎ আদ্রিয়ানের বলা কিছু কথা মাথায় এলো, “যখন তোমার মাথা খাটানো দরকার তখনি সেটা কাজ করা বন্ধ করে দেয়” ” ব্রেইন ইউস করে কাজ করতে পারোনা?” “কিছু ক্ষেত্রে ভয় পেলে চলেনা কারণ তখন বিপদকে মোকাবেলা করাই বাচার একমাত্র রাস্তা হয়” আমি অনেকটা সাহস জুগিয়ে বললাম
.
– হারিয়ে ফেলেছি।
.
লোকটা আবারো টেবিলে বাড়ি দিয়ে বলল
.
– মজা করছো? আমাদের এতো সাধনার ফল ওটা আর তুমি বলছো হারিয়ে ফেলেছো?
.
– এতো নিরীহ মানুষের জীবণ নিয়ে খেলার পরিকল্পনাকে আপনি সাধনা বলছেন? লজ্জা করছেনা? আপনারা মানুষ?
.
– জ্ঞান দিচ্ছো? আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো? হঠাৎ এতো সাহস কোথায় পেলে? আমার মুখে মুখে তর্ক করার পরিণাম জানো?
.
বলেই উঠে এসে আমাকে দাড় করিয়ে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে বলল
.
– ভদ্র ভাষা তোমার জন্য না। তোমাকে তো আমার স্টাইলেই বোঝাতে হবে।
.
আমি ভয়ে পেয়ে পিছিয়ে দেয়ালের সাথে লেগে বসলাম। লোকটা গান ঘোরাতে ঘোরাতে আমার সামনে এসে দাড়ালো। লোকটা আমার সামনে বসে ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে টান দিলো। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম আমি।
.
– ফাইলটা দেবে কী না?
.
– লাগছে আমার প্লিজ ছাড়ুন
.
লোকটা আরো জোরে টেনে ধরে বলল।
.
– লাগছে তাইনা? ওয়েট আ বিট!
.
বলেই পেছনে ঘুরে বলল

– সিরিন্জটা নিয়ে আয়। ফাস্ট
.
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে সিরিন্জ দিয়ে কী হবে? আবারো ইনজেক্ট করবে আমাকে? কিছুক্ষণের মধ্যেই ইনজেকশন সিরিন্জ নিয়ে এলো। লোকটা সেটা হাতে নিয়ে আমার দিকে এগুতেই আমি একটু পিছিয়ে কেদে দিয়ে বললাম
.
– প্লিজ এটা দেবেনটা।
.
– কষ্ট হয় খুব তাইনা?
.
বলেই আমার হাত টেনে ওর কাছে নিয়ে গেলো, আমি কান্না করতে করতে বললাম
.
– প্লিজ নাহ!
.
লোকটা হাতের মধ্যে খুব জোরে ঢুকিয়ে দিলো সুইটা হাতে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। পুরোটা ইনজেকশন পুশ করে বলল
.
– শুধু শুধুই কাহিনী করছো। বলে দিলে তোমারো এতো কষ্ট করতে হয়না আর আমাদেরও এতো প্যারা নিতে হয়না।
.
কিন্তু আমার আস্তে আস্তে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে মাথা ধরে আসছে। পুরো হাত ব্যাথায় ছিরে যাচ্ছে, লোকটা আজকেও আমার ইনজেকশন পুশ করা জায়গাটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল। কিন্তু কিছু বলার শক্তি পাচ্ছিনা তাই চোখ খিচে বন্ধ করে কাদতে লাগলাম, লোকটা আমার থুতনি ধরে মাথা উচু করে অনেকটা ব্যাঙ্গ করেই বলল
.
– is it hurting?
.
আমি সহ্য করতে পারছিনা তাই বাধ্য হয়েই মিনতির স্বরে বললাম
.
– প্লিজ!
.
লোকটার হয়তো একটু মায়া হলো তাই আমার হাত ছেড়ে দিলো। আমার সেদিনের মতোই সবকিছু ঝাপসা লাগছে, শরীর দুর্বল লাগছে, আস্তে আস্তে আবারো সব কিছু অন্ধকার হয়ে এলো।
.
রোদের আলো চোখে পরতেই আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। শরীর অসম্ভব দুর্বল লাগছে, হাতের সেই যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথাতো আছেই, মাথাটাও প্রচন্ড ভার লাগছে, অনেক কষ্টে ভালো করে চোখ খুলে দেখলাম আমি একটা বিল্ডিং এর কেচিগেইট এর পাশে পরে আছি। বেশ অবাক হলাম এটা কীভাবে সম্ভব? ওরা ছেড়ে দিলো আমাকে? এতো সহজেই? অনেক কষ্টে উঠে বসলাম। হঠাৎ বাড়ির কথার মনে পরলো, পাশে তাকিয়ে আরেক দফা অবাক হলাম আমার ব্যাগটাও আমার পাশেই রাখা। আমি তাড়াতাড়ি ফোন বের করে দেখি ফোনটাও সুইচড অফ! ড্যাম ইট! ব্যাগ চেক করে দেখলাম টাকা ঠিকঠাকই আছে, যাক তাহলে বাড়ি ফিরতে পারবো। আস্তে আস্তে উঠে বাইরে এলাম কিন্তু গোলিটা চিনতে পারছিনা, কোথায় আমি, হাটতেও কষ্ট হচ্ছে, অনেক কষ্টে লোকেদের জিজ্ঞেস করে মেইন রোড এ উঠলাম। এরপর আর সমস্যা হয়নি, সোজা আদ্রিয়ানদের বাড়িতেই গিয়ে নামলাম। ভেতরে গিয়ে দেখি সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। সকলেই চিন্তিত, আর সেই চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু যে আমি সেটা বুঝতেই পারলাম। আদিয়ান ফ্লোরে সোফায় হেলান দিয়ে হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে, আমাকে দেখতে পেয়ে ওহি চেচিয়ে বলল

– ছোট আপি।
.
সাথে সাথেই সবাই তাকালো আমাকে দেখতে পেয়ে সবাই ছুটে আমার কাছে এসে নানা রকম প্রশ্ন করতে লাগল। ‘কোথায় ছিলাম’ ‘কী হয়েছে’ ‘আমার এরকম অবস্হা কেনো সব। হঠাৎ আপি বলল
.
– Wait.. আগে ওকে একটু বসতে দাও। ওকে কতো টায়ার্ড লাগছে দেখছোনা? কী অবস্হা হয়েছে।
.
বলে আপি আমাকে ছোফায় বসিয়ে পানি খেতে দিলো। পানি খেয়ে বেশ কিছুক্ষণচুপ করে রইলাম আমি। বাড়ির সবাই খুব চিন্তিত, আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম ও গম্ভীর ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা ও তখনি করে যখন নিজের রাগ চেপে রাখে।
.
আম্মু: এবার বলো কাল থেকে বাসায় ফিরলেনা কেনো কোথায় ছিলে?
.
আপি: ফোনটাও বন্ধ ছিলো, তোর ধারণা আছে কী গেছে এখান দিয়ে।
.
আন্টি: তোরা দুজন কী পেয়েছিস বলতো। একজন এক সপ্তাহ ইউকে তে বসে রইলো না জানিয়ে আরেকজন একদিন বাড়ির বাইরে থেকে এলো। আরে আমাদের তো চিন্তা হয় নাকি।
.
আমি গভিরভাবে আদ্রিয়ানকে দেখছি। এক্কেবারে চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ আব্বু বললো
.
– আরেহ তোমরা মেয়েটাকে বলতে তো দেবে কী হয়েছে? মামনী বল কী হয়েছিল? কোথায় ছিলি?
.
আমি শুরু থেকে সব কিছু বললাম ওদের। বলতে বলতে কেদে দিয়েছি। আপি জরিয়ে ধরল আমাকে
.
আব্বু: কী শুরু করেছে কী ওরা?
.
আম্মু: আগেই বলেছিলাম ফাইলটা পুলিশকে দিয়ে দে। আমার কথাতো দামি নেই।
.
আব্বু: বোকার মতো কথা বলোনা। ফাইলটা পুলিশকে দিলেও কী ওরা ওকে ছেড়ে দেবে?
.
মানিক আঙ্কেল: কীসর ফাইল? আর কারা ওরা?
.
আব্বু: বলবো তোকে এসব ঝামেলা যাক।
.
হঠাৎ আদ্রিয়ান উঠে এসে আমার হাত ধরে দাড় করিয়ে দিলো। রাগী চোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল

– আমি বলেছিলাম যে একা না বেরোতে, বলেছিলাম?
.
– হু হুম
.
– তাহলে বেরোলে কেনো?
.
এইরে ভীষণ রেগে গেছে, আমি ভয়ে কাপা কাপা গলায় বললাম
.
– ত্ তোমার আসতে লেইট হচ্ছিলো অ্ আর ফোনটাও ল্ লাগছিলো না ত্ তাই।
.
– তাই কী ওয়েট করা যেতোনা আমার?
.
– ক্ করেছিলাম তো!
.
– ও রিয়েলি? কতোক্ষণ ওয়েট করেছো বিশ মিনিট ত্রিশ মিনিট এক ঘন্টা?
.
– প্ পনেরো মিনিট
.
আদ্রিয়ান এবার প্রচন্ড রেগে ধমক দিয়ে বলল
.
– Shut up! এই টুকু ওয়েট সহ্য হলোনা তোমার! ইডিয়েট ইচ্ছে করছে..
.
বলেই হাত ওঠালো আমার দিকে আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম। নাহ থাপ্পড় মারেনি, জাবিন চিৎকার করে বলল
.
জাবিন: ভাইয়া? কী করছিস?
.
আন্টি: পাগল হয়ে গেছিস তুই? ছোট ও ভুল করে ফেলেছে তাই বলে তুই…
.
আম্মু: কীসের ছোট? এতো বড় হয়ে গেছে নিজের ভালোমন্দ বোঝেনা ও? সেই ছোটবেলা থেকেই বেপরোয়া ভাবে চলে মারাই উচিত ওকে?
.
আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম ও একটু ইতোস্তত করে তাকালো আমার দিকে, হয়তো গিল্টি ফিল হচ্ছে। আমি দৌড়ে রুমে চলে এলাম। খাটে বসে বসে কাদছি, কালকে এমনিতেই ঐ সাইকোদের ঐসব টর্চার সহ্য করতে হয়েছে তার ওপর আবার ও এমন বিহেভ করলো আমার সাথে? আমাকে সবার সামনে মারতে যাচ্ছিলো? বেশ কিছুক্ষণ পর কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে তাকালাম। আদ্রিয়ান খাবারের প্লেট নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে আছে। ওকে দেখে চোখ মুছে উলটো ঘুরে বসলাম। ও দরজাটা লক করে খাবারটা টি টেবিলে রেখে আমার খাটে বসলো। আমি আরচোখে ওকে একবার দেখে চোখ সরিয়ে নিলাম। ও একটা ফার্সএইড বক্স এনে আমাকে ঘোরালো আমি সরতে নিলে ধমকে বলল

– একটা কথা বললে এবার সত্যিই মারবো।
.
এরপর হাতের ছিলে যাবা ঔষধ লাগিয়ে দিলো আমি ভয়ে নরলামো না যদি সত্যিই মারে? বা হাত একটু বেশি কেটেছে ওখানে ব্যান্ডেজ করতে হলো। ওখানে ওর ঠোট ছুইয়ে আস্তে করে বললো
.
– Sorry..
.
আমি কোনো রেসপন্স করলাম না আবারো ঘুরে বসলাম। ও আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে বলল
.
– সরি বললাম তো!
.
আমি হাত ছাড়িয়ে আবার ঘুরতে নিলেই ও আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুই বাহুতে হাত রেখে বলল
.
– আর কক্ষনো এমন করবোনা প্রমিস! এবার তো মাফ করে দাও প্লিজ!
.
আমি এবার ওকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলাম, ও আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বলল
.
– আ’ম সরি। আসলে রেগে গেছিলাম খুব। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কী হতো ভাবতে পারছো? এখন থেকে আমার যতোই লেইট হোক তুমি একা বেরোবেনা ওকেহ?
.
– হুম।
.
– গাড়িতে ওরা কোনো মিস বিহেভ করে নি তো?
.
– ন্ না শুধু ধমকেছে। কিন্তু ঐ লোকটা…
.
বলেই ফুপিয়ে কেদে দিলাম। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাতের ইনজেকশন দেয়া জায়গায় আলতো করে কিস করে বলল
.
– I’m sorry..
.
আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– একটা কাজের জন্য কতোবার সরি বলবে?
.
ও মুচকি হেসে বলল
.
– ওসব বুঝবেনা তুমি। এবার এসো খেয়ে নেও।

Infinite Love part 36+37+38+39+40

বলে যেই আমাকে সরাতে যাবে আমি ওর কুনুই এর উল্টো সাইডে হাত রাখতেই ও ‘আহ’ করে উঠল। আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– কী হলো?
.
– নাহ কিছুনা
.
– কিন্তু ওখানে..?
.
– আরে কিছুনা খেয়ে নেও।
.
বলেই প্লেট টা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে খাচ্ছি, কিন্তু ও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে এক মনে খাইয়ে চলেছে আমাকে।
.
এতো ভালো কেনো বাসে ও আমায়? আচ্ছা আমার কী ওকে নিজের সাথে জরানোটা ঠিক হলো? আমার জীবটা যে কতোটা অনিশ্চিত তাতো আমি জানি, যেকোনো সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে! তবে অবাক করা ব্যাপার এতো কিছুর পরেও ও একবারো জানতে চাইলো না ওরা কারা আর কেনো আমার পেছনে পরে আছে। কিন্তু ওর তো আরো আগেই জানতে চাওয়ার কথা। হয়তো বলার হলে আমি নিজেই আমি বলবো সেটা ভেবেই জানতে চায়নি। বলে দেবো ওকে? ওর তো অধিকার আছে আমার অতীত জানার..

Infinite Love part 46+47+48+49+50