Infinite Love part 36+37+38+39+40

Infinite Love part 36+37+38+39+40
Writer: Onima

আমি পেছন ফিরে পালাতে যাবো দেখি ওই তিনজন আমাকে ঘিরে আছে আর সামনে তাকিয়ে দেখি ওই লোকটা পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি পাশ কাটিয়ে দৌড় দিতে গেলে লোকটা আমার হাত ধরে ফেলল। আমি ভয়ে ভয়ে কান্না করে দিয়ে বললাম, ” প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে, আমি কিচ্ছু জানিনা ওটা কোথায় আছে আমি জানিনা, প্লিজ যেতে দিন আমায়!” কিন্তু আমার এই আকুতি যেনো লোকটার কানেই ঢুকলোনা ও পকেট থেকে একটা ইনজেকশন সিরিন্জ বের করে সেটা হালকা পুশ করে চেক করল, সেটা দেখে আমার আত্না কেপে উঠল আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য আরো ছটফট করতে করতে বললাম, ” প্লিজ নাহ, please don’t do this, please!!” কিন্তু লোকটা এতোটাই হার্টলেস যে আমার কান্না তাকে একটুও গলাতে পারলোনা ও খুব নিষ্ঠুরভাবে আমার হাতে ইনজেকশনটা পুশ করে দিলো। আর আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম, ” আদ্রিয়ান”। ইনজেকশনটা খুব জোরেই পুশ করেছে তাই প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছি আর কেনো জানিনা আদ্রিয়ান নামটাই বেরিয়ে এলো মুখ দিয়ে।

ইনজেকশনটা পুরোটা পুশ করে সেটা ছুড়ে ওই তিনজনের একজনের হাতে দিয়ে দিল। আমার হাত প্রচুর ব্যাথা করছে। ব্যাথা প্লাস ভয়ে কান্না করতে করতে হাটু ভেঙে বসে পরলাম আমি, আমাকে বসে পরতে দেখে লোকটা হাত ছেড়ে দিলো। আমি ওঠার চেষ্টা করেও পরে গেলাম শরীর প্রচন্ড দুর্বল লাগছে। বার বার চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না, লোকটা পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি হাল ছেড়ে বসে কান্না করতে লাগলাম। এবার লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল আর আমি ভয় পেয়ে খুব কষ্ট করে বসে বসেই পেছাতে লাগলাম, পেছাতে পেছাতে দালানের সাথে লেগে গেলাম। লোকটা এসে পা দিয়ে আমার হাত পিসে ধরল। ব্যাথায় ‘ আহ’ করে উঠলাম আমি, প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছি, লোকটা খুব জোরেই চেপে ধরেছে। আমার শরীর নেতিয়ে পরছে আসতে আসতে মাথা ঘুরছে, মনে হচ্ছে কেউ আমার সব শক্তি শুষে নিয়েছে। লোকটা আমার হাতের ওপর পা রেখেই এক হাটু ভেঙ্গে বসলো আমার সামনে। আমি ব্যাথায় কান্না করে বললাম

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– প্লিজ ছাড়ুন খুব কষ্ঠ হচ্ছে আমার।
.
সেটা শুনে লোকটা আরো জোরে পিসে ধরল। আমি দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে ঠোট কামড়ে কাদছি, সহ্য করতে পারছিনা। লোকটা পাশের একজনকে ইশারা করতেই পাশের একজন বলল
.
– বাচ্চা মানুষ কেনো নিজের জীবনটা নষ্ট করছো? বলে দেও ওটা কোথায়? আমরা কিচ্ছু করবোনা তোমাকে। নইলে অকালে প্রাণটা যাবে।
.
আরেকজন বলল
.
– আর আমরা কাউকে এমনি এমনি মারি না। আমাদের দেয়া মৃত্যু খুব ভয়ংকর হয় তাই বলছি দিয়ে দাও ওটা।
.
ওই তিনজনের মধ্যে লম্বা করে লোকটা বলল
.
– এমনিতেও তোকে খুজতে তিন বছর লেগে গেছে। যেখানে এক মাসে তোর খোজ পেয়ে যাবার কথা। কিন্তু কেউ তো আছে যে তোকে আড়াল করে রেখেছিল, কিন্তু শেষমেস পেয়েই গেলাম তোকে! আর ওটা কে করেছে তা জানতে পারলে ওটাকেও শেষ করব আমাদের তিনটে বছর নষ্ট করার জন্য। আগে তোকে দেখি।
.
হেলমেট পরা লোকটা ধমক দিয়ে বলল
.
– Shut Up! ওকে রচনা শোনাতে আসেনি এখানে!

তিনজনেই চুপ হয়ে গেলো। অদ্ভুত লাগল এদের সবার ভয়েজ কেমন যেনো, ন্যাচরাল লাগছে না আমার কাছে। তারপর লোকটা আমার দিকে ঘুরে শান্ত গলায় বলল
.
– কোথায় আছে ওটা?
.
আমি মাথা নিচু করে হিচকি দিয়ে কাদছি এখন আমার মাথা ঝিম মেরে আছে। আমার মনে হচ্ছে যেকোনো মূহুর্তে অজ্ঞান হয়ে যাবো। লোকটা প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে বলল
.
– বলো!!
.
ওর ধমকে আমার পুরো শরীর কেপে উঠলো। আমার জীবনে আমি এরকম ধমক কারো কাছে খাইনি। এভাবে কেউ ধমক দিতে পারে আমি জানতামি নাহ। বাকি তিনজনও ভয় পেয়ে গেছে। আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– আম্ মি জানিনা।
.
লোকটা আমার হাতের ওপর থেকে পা সরিয়ে ইনজেকশন পুশ করা জায়গাটা ওর আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল। আমি চিৎকার ও করতে পারছিনা কারণ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পরছি আমি,সবটা ঝাপসা হয়ে উঠছে। ঠোট চেপে চোখের পানি ফেলছি , এতো কষ্ট এর আগে কেউ দেয়নি আমায়। লোকটা আরেকটু চাপ দিয়ে বলল
.
– বলবে কী না।

আমি মাথা নেড়ে না করলাম। কারণ কিছু বলার শক্তি আর নেই আমার। প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছি, তারওপর শরীরও অবস হয়ে আসছে। এবার লোকটা একটা গান বের করলো পেছন থেকে। তারপর আমার থুতনির নিচে রেখে গান দিয়ে আমার মাথাটা উচু করে ধরে বলল
.
– এবার বলবে নিশ্চই?
.
আমার সামনে সব ঝাপসা লাগছে। গলা আটকে আসছে। আমি ভাবছি আদ্রিয়ান যেনো এখানে না এসে পরে তাহলে ওরা ওকেও মেরে ফেলবে, সেটা হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা আমি। আমাকে কিছু বলতে না দেখে লোকটা গানটা আমার মাথায় চেপে ধরে, আরেক হাতে গাল দুটো খুব জোরে চেপে ধরে বলল
.
– ফর লাস্ট টাইম জিজ্ঞেস করছি ওটা কোথায়?
.
আমার সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলো ধীর ধীরে গা ছেড়ে দিলাম, আমার শুধু আদ্রিয়ানের চেহারাটাই মনে পরছে, ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো এরপর কী হয়েছে আমি জানিনা।
.
ধীরে ধীরে চোখ খোলার চেষ্টা করছি, মাথা ঝিম ধরে আছে হালকা ব্যাথাও করছে, প্রচন্ড দুর্বল লাগছে, চোখ খোলার শক্তিও যেনো নেই আমার। হাতেও অনেক ব্যাথা করছে। অনেক কষ্ঠে চোখ দুটো খুললাম। প্রথমে সব ঝাপসা লাগলেও ধীরে ধীরে সব স্পষ্ট হলো। সামনে তাকিয়ে দেখি আমার বাড়ির সবাই দাড়িয়ে আছে আব্বু আম্মুও এসে গেছে, ভাইয়ারা দাড়িয়ে আছে, ফুপার কোলে অন্ত, ওহি আর আপি আমার পাশে বসে আছে। মাথা এখোনো ঝিম ধরে আছে আমার শরীর খুব দুর্বল লাগছে, হটাৎ আপি বলল
.
আপি: ময়নাপ্পি জ্ঞান ফিরেছে ওর।
.
তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

আপি: তোকে বললাম আজ যেতে হবেনা মেডিকেলে, একটা কথা যদি শুনতি।
.
আম্মু: কারো কোনো কথা শোনে ও কী অবস্হা করেছে নিজের।
.
আব্বু: আহ মেয়েটা অসুস্হ এখন অন্তত বোকো না।
.
আমার মাথা কিচ্ছুক্ষণের জন্য ব্লাঙ্ক ছিলো, তখনকার কথা মনে পরতেই বুক ধক করে উঠলো, ভয়ে হাত পা কাপতে লাগল, হঠাৎ আদ্রিয়ানের কথা মনে পরল, ও ঠিক আছে তো? আমি অনেক কষ্টে উঠে বললাম
.
– আ্আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান কোথায়? বলছোনা কেনো ও ঠিক আছে তো!
.
পাশ থেকে আদ্রিয়ান বলে উঠল
.
– এইতো আমি, সি তোমার কাছেই আছে।
.
তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আমার হাত ধরেই বসে আছে, এতোক্ষণ খেয়াল করিনি। ওকে দেখে কিছু না ভেবে সকলের সামনেই ওকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলাম । ও আমাকে ধরতেই আমার কান্নার বেগ আরো বেরে গেলো। সবাই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– তোমার কিছু হয়নি তো?
.
ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।

– আজব তো সেন্সলেস হয়ে গেলে তুমি আর জিজ্ঞেস করছো আমি ঠিক আছি কিনা? আমার কী হবে?
.
– আদ্রিয়ান..
.
– চুপ! এখন চুপ করে আগে রেস্ট নাও পরে শুনবো।
.
বালিশ উচু করে দিয়ে আমাকে হেলান দিয়ে শুইয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর আপি এলো সুপ নিয়ে, আপির পরে বাকিরাও এলো। টি টেবিলে সুপ টা রেখে বলল
.
– এখন ভালো লাগছে?
.
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। আদ্রিয়ান বলল
.
– ভুলটা আমারি ছিলো আমার ওকে এভাবে একা রেখে যাবা ঠিক হয়নি। আমি ভেবেছিলাম কাজটা পাচ মিনিটে হয়ে যাবে কিন্তু এতোটা সময় লাগবে বুঝতে পারিনি।
.
আব্বু: আরেহ তুমি কী করে জানবে যে এরকম হবে?
.
আমি উত্তেজিত হয়ে আব্বুদের বললাম

– আব্বু ওরা এসে গেছে, ওরা খুজে পেয়ে গেছে আমাকে, মেরে ফেলবে আমাকে !
.
আপি উত্তেজিত হয়ে বলল
.
– কী বলছিস এসব? কী হয়েছে বলতো।
.
আমি ওদের সবটা বলতেই আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল
.
– কিন্তু আমিতো এসে দেখলাম তুমি গাড়ির সিটেই শুয়ে আছো! প্রথমে ভেবেছি ঘুমিয়ে গেছো কিন্তু অনেকক্ষণ ডাকার পরেও যখন উঠলেনা তখন বুঝলাম সেন্সলেস হয়ে গেছো
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমাকে তো ওরা চারজন..! তাহলে আমি গাড়িতে গেলাম কী করে? কী হয়েছিল আমি অজ্ঞান হবার পর? আমি বললাম
.
– কিন্তু আমাকে তো ওরা..
.
– আমার মনে হয় তুমি কোনো কারণে ডিপ্রেসড আছো তাই হয়তো..
.
– তাই কী? তুমি কী বলতে চাইছো? ওগুলো আমার ভ্রম?
.
– না আমি সেরকম কিছুই বলিনি। বাট
.
তখন আপি বলল
.
আপি: আদ্রিয়ান ঠিকি বলছে সকালের ঐ ঘটনার পর হয়তো তুই নার্ভাস হয়ে গেছিলি আর তাই হয়তো।
.
আমি: আপি তুমি বুঝতে পারছোনা এতোটা ভুল হবে আমার?
.
আম্মু: বার বার তোকে বলেছি ওসব ফেলে দে নইলে পুলিশকে দিয়ে দে কিন্তু শুনলে তো আমার কথা।
.
আব্বু: যেটা বোঝনা সেটা কেনো বলছো? ওকে বকে লাভ কী? ও যা করছে তার জন্য গর্ব হয় আমার
.
আম্মু: হ্যা সেই আমিতো কিছুই বুঝিনা তোমরা বাপ মেয়েই সব বোঝ ! মেয়েটার যদি কিছু হয়না তখন গর্ব কোরো..।
.
বলেই আম্মু হনহন করে চলে গেলো। আদ্রিয়ান বলল
.
আদ্রিয়ান: কী বিষয়ে কথা বলছো তোমরা?
.
আপি: বলবো তোমাকে একটু ফ্রি হই?

আমি মাথা চেপে ধরে বসে আছি হঠাৎ আমার ইনজেকশনটার কথা মনে পরলো। ইনজেকশনের দাগটা দেখালেই ওরা বিশ্বাস করবে আমি তাড়াতাড়ি হাতের দিকে তাকালাম, হ্যা দাগটা আছে আমি বললাম।
.
আমি: এই দেখো ইনজেকশনের দাগ। এখানেই ওই লোকটা ইনজেকশন পুশ করেছে আমায়।
.
দাগটা ওদের দেখাতেই আদ্রিয়ান আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: এটাতো ডাক্তার আঙ্কেল একটু আগে তোমাকে পুশ করেছে তোমার জ্ঞান ফেরানোর জন্য।
.
আপি: হ্যা আদ্রিয়ানতো ঠিকি বলছে এইটা তো ডাক্তার কাকু খানিক্ষণ আগেই তোকে দিয়ে গেছে।
.
এবার আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কীভাবে সম্ভব এটা? কী হচ্ছে কী আমার সাথে? সত্যিই ভুল ছিলো? কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? আমার স্পষ্ট সব মনে আছে।
.
আপি: এখন এসব ভাবতে হবেনা সুপটা খেয়ে নে
.
আদ্রিয়ান: হিয়া আমায় দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
.
আপি আদ্রিয়ানকে সুপটা দিয়ে চলে গেলো বাকি সবাইও চলে গেলো। আমি আদ্রিয়ানকে বললাম
.
– আদ্রিয়ান বিশ্বাস করো ওরা সত্যি এসেছিলো।
.
– হুম বুঝতে পেরেছি এবার এটা খেয়ে নাও।
.
– কিন্তু ওরা এসছিলো!
.
– আচ্ছা বুঝলাম তো, ওরা যদি এসেও থাকে তুমিতো এখন সেভ আছো তাইনা? কিচ্ছু করতে পারেনি তো ওরা! এটাই আসল কথা।
.
– হ্যা ত..
.
আদ্রিয়ান আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো। তারপর বলল
.
– এখন কোনো কথা না চুপচাপ খেয়ে নাও।
.
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে থাকলাম। আমাকে খাইয়ে দিয়ে হঠাৎ ই আদ্রিয়ান আমাকে জরিয়ে ধরল কিছুক্ষম জরিয়ে ধরে আমারে দুগালে আলতো করে দুটো চুমু দিলো। তারপর বালিশটা নামিয়ে আমাকে শুইয়ে দিয়ে আমার হাতে একটা চুমু দিলো। এই হাতটাই লোকটা পা দিয়ে পিসে ধরেছিলো তাই ব্যাথা পেয়ে ‘ আহ’ করে উঠলাম। ও জিজ্ঞেস করল
.
– কী হলো?
.
আমি মাথা নেড়ে বললাম কিছুনা। ও আমার হাত উঠিয়ে ইনজেকশন দেবা জায়গায় ঠোট ছুইয়ে বলল।
.
– সরি! আমার তোমাকে ওভাবে একা রেখে যাওয়া ঠিক হয়নি। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা ভয় পাবে যে সেন্সলেস হয়ে যাবে। আমার জন্যই এসব হলো। I’m sorry!

– its okay..তুমি কিকরে জানবে বলো?
.
ও ভাবছে আমি ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছি কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে ওদের কথা, ওই লোকটার সেই হিংস্র রূপ।
.
– এবার একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করো মাথা ব্যাথা কমে যাবে।
.
– উহু তোমার বুকে ঘুমোবো!
.
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আমার কপালে চুমু দিয়ে গিয়ে দরজাটা ভিরিয়ে দিলো, যদিও আদ্রিয়ান যতক্ষণ থাকবে এদিকে কেউ আর আসবেনা। তারপর ওর শার্ট টা খুলে ফেললো কারণ নিচে হোয়াইট বক্সার গেন্জি আছে। তারপর আমার পাশে শুয়ে পরল। আমি গিয়ে ওর বুকে আমার মাথা রাখলাম ওও দুইহাত দিয়ে আমাকে আকরে ধরে মাথায় চুমু দিলো। আমি ওকে জরিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম। কেনো জানিনা এই বুকে মাথা রাখলে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমি চুপচাপ ওর হার্টবিট শুনতে লাগলাম, ওর হার্টবিট আমার কাছে মন ভালো করার মিউসিক মনে হয়। ও আমাকে একটু টাইট করে ধরে বলল
.
– I love you..
.
আজ খুব ইচ্ছে করছে ওকে কিছু বলতে কিন্তু বললাম না। শুধু ওর বুকে একটা চুমু দিলাম, ও একটু কেপে উঠলো, পরক্ষণেই আমায় আরো জোরে জরিয়ে ধরল। আমিও মুচকি হেসে ওর হার্টবিট শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে গেলাম।
.
ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি বালিশে শুয়ে আছি চোখ কচলে ভালোভাবে পাশে তাকিয়ে দেখি আপু পাশে বসে ফোন টিপছে। আমি উঠে বসে এদিক ওদিক খুজতে লাগলাম। আপি ফোনে চোখ রেখেই বলল
.
– আদ্রিয়ানকে খুজছো?
.
– হুম মানে নাহ।
.
– থাক আর বলতে হবে না। ও চলে গেছে!
.
– ওহ।
.
– মন খারাপ হলো?
.
– আরেহ না ওর ও তো কাজ আছে তবুও যথেষ্ট সময় দেয় আমাকে!
.
– একটা জিনিস জানোতো ইউ আর সো লাকি!
.
– কেনো?
.
– আদ্রিয়ানের মতো একটা বর পাচ্ছো। এতো কেয়ারিং। তুমি সেন্সলেস থাকা অবস্হায় পুরো পাগলের মতো করছিলো। নিজের হাতে খাইয়ে দেয়, আর এতো সুন্দর আদর করে বুকে নিয়ে ঘুম পারাতে কজন পারে।
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম আপির দিকে। আপি ফোনে চোখ রেখেই বলল।
.
– এভাবে তাকানোর কিছু নেই আর লজ্জা পাবারো কিছু নেই তোমারি ফিয়ন্সে, গ্রিন কার্ড পাওয়াই আছে।
.
আমি মুচকি হেসে মাথা নিচু করলাম। আপি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আম্মু এলো ঘরে পেছন পেছন আব্বুও এলো। আম্মু আমার সামনে বসে বলল

– দেখো অনি আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা, ওটা তুমি কালকেই পুলিশের হাতে দেবে।
.
আবার শুরু হলো আম্মুর সেই এক কথা। ওই ঘটনার এক বছর পর্যন্ত এই এক কথাই বলেছে যদিও পরে পরে থেমে গেছে কিন্তু এখন আবার সেইসব ঘটনার পূণরাবৃত্তি হওয়াতে আম্মু ঘাবরে গেছে। আমি আম্মুর হাত ধরে বললাম
.
– দেয়ার হলে আরো আগেই দিতাম তুমি জানো আমি এটা করবনা।
.
আব্বু: দেখ মামনী তুমি যেটা করছো সেটা ঠিক! আমি বাবা হয়ে তোমাকে পিছিয়ে আসতে বলবোনা। তবে একটু সাবধান।
.
আম্মুকে অনেক কষ্টে সামলে আব্বুর সাথে পাঠিয়ে দিলাম। এবার আপি আমার কাধে হাত রেখে বলল
.
– এতো রিস্ক নেয়াকি ঠিক হচ্ছে? ওটা পুলিশের কাছে দিয়ে দে না। নিজের কাছে তো ক্লিয়ার থাকবি!
.
– পুলিশের কাছে গেলে কোনো না কোনো ভাবে কোড টা লিক হবেই। একবার যদি কোডটা লিক হয় কতো নিরীহ মানুষ মরবে তোমার কোনো ধারণা আছে?
.
– হ্যা কিন্তু
.
– আপি এখনকার আইনের রক্ষকরাই আইনের ভক্ষক। এতো মানুষের জীবনের রিস্ক কিকরে নেবো?
.
– তাই বলে নিজের জীবন বিপদে ফেলবি?
.
– মরার ভয় অমারো আছে আপি, হ্যা আমিও বাকি সবার মতো মরতে ভয় পাই, কষ্টকেও ভয় পাই কিন্তু আমার একার প্রাণের মূল্য এতোগুলো প্রাণের চেয়ে বেশি না।
.
– তোকে আটকানোর ভাষা নেই আমার কারণ তুই ভূল করছিস না। তবে যা করবি ভেবে করবি।
.
বলেই আপি চলে গেলো।

আমি ভাবছি আজ কী হলো আমার সাথে? ওরা সত্যিই খুজে পেয়ে গেছে আমায়? ওদের ভয়েস ই বা এমন লাগছিলো কেনো? আর তৃতীয় লোকটা কী বলছিলো? কে আড়াল করে রেখেছে আমায় এই তিন বছর? আর কেন? আমি হঠাৎ অজ্ঞান কেনো হলাম? আর অজ্ঞান হবার পরেই বা কী হয়েছিল? ওরা ছেড়ে দিলো কেনো আমায়? আর আমাকে আদ্রিয়ান গাড়িতে কীকরে পেলো? আর ইনজেকশন? এই দাগটা যদি ডাক্তার কাকুর ইনজেকশনের হয় তবে ওই লোকটার দেয়া ইনজেকশনের দাগ কোথায়? কিচ্ছু মেলাতে পারছিনা মাথা ধরে যাচ্ছে আমার, কী হচ্ছে এসব আমার সাথে?
আমি ভাবছি আজ কী হলো আমার সাথে? ওরা সত্যিই খুজে পেয়ে গেছে আমায়? ওদের ভয়েস ই বা এমন লাগছিলো কেনো? আর তৃতীয় লোকটা কী বলছিলো? কে আড়াল করে রেখেছে আমায় এই তিন বছর? আর কেন? আমি হঠাৎ অজ্ঞান কেনো হলাম? আর অজ্ঞান হবার পরেই বা কী হয়েছিল? ওরা ছেড়ে দিলো কেনো আমায়? আর আমাকে আদ্রিয়ান গাড়িতে কীকরে পেলো? আর ইনজেকশন? এই দাগটা যদি ডাক্তার কাকুর ইনজেকশনের হয় তবে ওই লোকটার দেয়া ইনজেকশনের দাগ কোথায়? কিচ্ছু মেলাতে পারছিনা মাথা ধরে যাচ্ছে আমার, কী হচ্ছে এসব আমার সাথে?
.
রাতে ডিনার করে শুয়ে শুয়ে ভাবছি আজকের কথাগুলো। বারবার ঐ হেলমেট পরা লোকটার সেই নিষ্ঠুরতা মনে পরছে, কতোটা হার্টলেস হলে কাউকে এভাবে কষ্ট দেয়া যায়? আচ্ছা সত্যি কী আমাকে মেরে ফেলবে ওরা? কিন্তু ওরা আজকে কেনো ছেড়ে দিলো আমাকে? আর ইনজেকশন টাই বা কীসের ছিলো? আমাকে ইনজেকশন পুশ করে কী লাভ হলো ওদের? এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে উঠল। ফোনটা নিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান ফোন করেছে, মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে বললাম

– হ্যালো!
.
– হাই ম্যাডাম! এখন কেমন আছেন?
.
– বেটার
.
– ঘুমিয়ে ছিলে তাই বলে আসতে পারিনি। সরি!
.
– বুঝতে পেরেছি। নো প্রবলেম!
.
– হুম ডিনার করেছো?
.
– হ্যা তুমি?
.
– নো। স্টিল ইন ল্যাব। একটু রেস্ট নিচ্ছি তাই কল করলাম।
.
– এভাবে না খেয়ে কাজ করার মানে কী? খেয়ে নাও এখন।

– খেতে গেলে কনসেনট্রেশন নষ্ট হয়ে যাবে।
.
– যেমন তুমি তেমন তোমার কাজ! কী এমন করো বলোতো ল্যাবে? ওই বিশাল বিশাল কম্পিউটারস আর যন্ত্রপাতি দিয়ে?
.
– আমি কাজ তো এগুলো নিয়েই সোনা! My passion…
.
– হুম… আমি আসবো একদিন তোমার ল্যাবে! কবে নিয়ে যাবে বলো?
.
– পরে নিয়ে আসবো একদিন
.
– আচ্ছা কালকেই যাই না, খুব ইচ্ছে করছে তোমার ল্যাবটা দেখতে!
.
– নাহ কাল না। সময় হলে আমিই নিয়ে আসবো।
.
– আজব ল্যাবটাই তো দেখবো এতেও সময় এর কী আছে? তুমি নিতে আসতে না পারলে আমায় এড্রেস দিয়ে দেও আমি নিজেই যাবো!
.
– বললাম তো এখন নাহ
.
– নাহ আমি কালকেই যাবো! প্লিজ!
.
– অনি সবসময় জেদ ভালোলাগেনা আমার! ( ধমকে)
.
আমি অবাক হয়ে গেলাম। ল্যাবটাই তো দেখতে চেয়েছি। তাই বলে এভাবে রিয়াক্ট করার কী ছিলো? আমি চুপ করে রইলাম, কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানও চুপ করে ছিলো। তারপর ও বলল

– I’m sorry..
.
আমি কিছু না বলেই চুপ করে রইলাম। ও আবার বলল
.
– সরি বললাম তো!
.
– হুম
.
– আচ্ছা কালকে কান ধরে সরি বলবো তাহলে হবে?
.
– দরকার নেই।
.
– আচ্ছা পরশু নিয়ে আসবো ল্যাবে। কিন্তু শর্ত আছে!
.
– আবার শর্ত?
.
– হুম আমার পারমিশন ছাড়া কোনো কিছুতে হাত দেবেনা ওকেহ?
.
– এমনিও দিতাম নাহ
.
– গুড! পুরশু মেডিকের থেকেই পিক করব আমি তোমাকে।
.
– ওকেহ।

এরপর কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে রেখে দিলাম ফোনটা। তারপর কেটে গেলো আরো একদিন। আদ্রিয়ানের সাথে আর দেখা হয়নি তবে কথা হয়েছে ফোনে! মেডিকেল থেকে বেরিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ওয়েট করছে আমার জন্য। আমাকে দেখেই গাড়ির দরজা খুলে দিলো আমিও ভালো মেয়ের মতো গাড়িতে বসে পরলাম ও সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো তারপর গাড়ি স্টার্ট করল। প্রায় দেড় ঘন্টা লাগল ওর ল্যাবে পৌছাতে ল্যাবে ঢুকে আমিতো পুরো হা করে আছি, এগুলো কী? বিশাল বিশাল মনিটর লাগানো দেয়ালে, কোথাকার তার কোথায় জোরা দেয়া আছে সেটা আল্লাহ আর এই আদ্রিয়ানই জানে। কতোরকম কী যন্ত্র, কতোগুলোর তো নামই জানিনা। বেশ কয়েকজন কম্পিউটারে বসে কী সব করছে সবাঈ ব্লু এপ্রোন পরা, একটু এগিয়ে আরেকটা রুমে গিয়ে দেখলাম আদিব ভাইয়া কম্পিউটারে মনোযোগ সহকারে কিছু করছে, গায়ে ব্লু এপ্রোন। আমাকে দেখে ভাইয়া উঠে এসে বলল
.
আদিব ভাইয়া: আরেহ ভাবি! তুমি এখানে?
.
আদ্রিয়ান: জেদ ধরে বসে ছিলো ল্যাব দেখবে তাই দেখাতে আনলাম।

আদিব ভাইয়া হেসে বলল
.
আদিব ভাইয়া: আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ও কারো কাছে বাধ্য থাকে? সিরিয়াসলি?
.
আদ্রিয়ান: এখোনো তো কোনো মেয়ের চক্করে পরোনি তাই জানোনা, যেদিন পরবে সেদিন বুঝবে এরা কী জিনিস। তোরতো সেই কপালো হয়নি এখোনো!
.
আদিব ভাইয়া: ওই তুই কি ইনডাইরেক্টলি আমাকে অপমান করলি?
.
– নাহরে আমি ডিরেক্টলি তোকে অপমান করলাম।

– আজ একটা গার্লফ্রেন্ড নাই তাই এগুলাও শুনতে হলো। এখনতো গান গাইতে ইচ্ছে করছে, “ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়”
.
আদ্রিয়ান একটা হাই তুলে চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে বলল
.
আদ্রিয়ান: সারাদিন ল্যাবে কম্পিউটারে মুখ গুজে রাখলে প্রিয়ার আর কী দোষ?
.
আদিব ভাইয়া: সেই ! দোষ তো তোর! কোথা থেকে কী সব উদ্ভট আইডিয়াস নিয়ে হাজির হোস আর আমি সেগুলো চেকাউট করতে করতে শহীদ হয়ে যাই।
.
আদ্রিয়ান: সে তো আমিও করি তাই বলেকি বউয়ের সাথে প্রেম করিনা? জিজ্ঞেস কর তোর ভাবিকে যে আমি কতো রোমান্টিক!
.
আমিতো আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছি ওদের দুজনের দিকে।
.
আদিব ভাইয়া: শালা তোর মতো মাল্টিট্যালেন্টেড না আমি।
.
আদ্রিয়ান: এই তো বুঝছোস। শুধু শুধুই কী বলি যে আমি তোর গুরু। এতো কাজ করেও নিজের বউকে কীভাবে সময় দেই আর তুই একটা গার্লফ্রেন্ড ও জোটাতে পারলি না। আফসোস্ আফসোস্।
.
আদিব ভাইয়া: দূর শালা মেয়ে মানেই ঝামেলা। দরকার নাই আমার। এমনিতেই ইউ কে তে মেয়েদের সাথে flirting করতে করতে আমি ক্লান্ত।

আদ্রিয়ান এবার ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে কামড় বসিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল
.
আদ্রিয়ান: কথাটা রেকর্ড করে নিলাম এখন যদি এটা আমি রাইমা কে শোনাই কেমন হবে? ( ভ্রু নাচিয়ে)
.
আদিব ভাইয়া চমকে তাকালো আদ্ররিয়ানের দিকে তারপর বলল
.
আদিব ভাইয়া: ‘ওই বিনা মুরগী কি আন্ডা বিনা কাপড়ে কী উগান্ডা,’ রাইমার কথা তুই জানলি কেমনে?
.
আদ্রিয়ান আপেলেটা ঘোরাতে ঘোরাতে বলল
.
আদ্রিয়ান: এইজন্যই তো আমি তোর গুরু। সব খবরই রাখি! নাম ফোন নাম্বার এড্রেস সব আছে।
.
আদিব ভাইয়া: গুরু না গরু। পাতালের খবরো থাকে এর কাছে। ( বিরবির করে)
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
আদ্রিয়ান: কিছু বললি?

আদিব ভাইয়া: নাহ রে তুই তো আমার কলিজার বেস্ট ফ্রেন্ড। সবে পটেছে মেয়েটা। শুরু হবার আগেই শেষ করে দিস না ভাই। তোর এই ল্যাব সামলে বহুত কষ্টে একটাকে পটানোর সুযোগ পেয়েছি। খবরদার কোন কাটি করবিনা।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– তুই কী আমাকে রিকোয়েস্ট করছিস?
.
– তোকে রিকোয়েস্ট করবো কোন দুঃখে?
.
এটা শুনে আদ্রিয়ান ফোনটা হাতে নিলো সেটা দেখে আদিব ভাইয়া তাড়াতাড়ি বলল
.
আদিব ভাইয়া: ভাই ভাই আমিতো মজা করছিলাম! আমি তো রিকোয়েস্ট ই করছিলাম। প্লিজ ভাই এমন করিস নাহ!
.
আদ্রিয়ান হেলান দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: স্টাইলটা ভালো লাগলোনা, আবার ট্রাই কর। বিনয়ের সাথে বল!
.
আদিব ভাইয়া: এই বিনয় টা আবার কে? একে কোথায় পাবো?
.
আদ্রিয়ান: থাক পেতে হবেনা
.
বলে যেই ফোন টিপতে যাবে তখনি আদিব ভাইয়া আদ্রিয়ানের সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে বলল

আদিব ভাইয়া: নাহ নাহ! গরু জ্বী থুরি গুরুজ্বী। আপনিতো মহান। সর্বগুনসম্পন্ন ব্যাক্তি, দেশের গর্ব, জাতির ভবিষ্যৎ, লক্ষ লক্ষ মেয়ের বাশ নাহ মানে ক্ ক্রাশ। আপনিতো দয়ার সাগর এই অধম শীর্ষের ওপর একটু দয়া করুন, না হলে আমার রিলেশনটা শুরু হবার আগেই শেষ করবেন না। আপনার শরীর দিয়ে তো দয়া বেয়ে বেয়ে পরে, সেখান থেকে একটু দয়া দান করুন। ( দাতে দাত চেপে)
.
আদ্রিয়ান: হচ্ছে হচ্ছে আরেকবার ট্রাই কর হয়ে যাবে।
.
আদিব ভাইয়া এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: রাখ তোর রিকোয়েস্ট! আমি আর পারমু না, ভার মে যাউক গার্লফ্রেন্ড
.
আদ্রিয়ান: আচ্ছা তাহলে..
.
আদিব ভাইয়া করুন ভাবে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ঠোট চেপে হাসছে, আমি এতোক্ষণ বহুত কষ্টে নিজের হাসি চাপিয়ে রেখেছি এবার আদিব ভাইয়ার জন্য মায়া হলো তাই আদ্রিয়ানকে বললাম
.
আমি: আদ্রিয়ান এটা কিন্তু ঠিক না। তুমি রাইমা আপুকে কিচ্ছু বলবেনা।
.
আদিব ভাইয়া: দেখ আমার বোনটারো মায়া হচ্ছে আমাকে দেখে তুই কতো নিষ্ঠুর। (বেবি ফেস করে)
.
আদ্রিয়ান: ওয়ে বোনের ভাই এতো ওভার এক্টিং এর দরকার নেই। আমার বউ যখন বলছে তখন বলবোনা বাট শর্ত আছে!

আদিব ভাইয়া: এবার আবার তোর কোন গুষ্টি উদ্ধার করতে হবে? (বিরক্ত হয়ে)
.
আদ্রিয়ান: তোর ভাবি, তুই, আমি কেউ দুপুরে খাই নি, আপাদত কাউকে দিয়ে খাবারটা আনা।
.
আদিব ভাইয়া: যাচ্ছি! ( মুখ বাকিয়ে)
.
আদিব ভাইয়া যেতেই আদ্রিয়ান শব্দ করে হেসে দিলো আমিও হেসে দিলাম এতোক্ষণ অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছি।
.
আদিব ভাইয়া কাউকে একটা খাবার আনতে বলে এলো তারপর খাবার আসতে আসতে আমরা তিনজন আড্ডা দিতে লাগলাম আর আমি মাঝে মাঝে দুই বন্ধুর খুনসুটি দেখতে লাগলাম। তারপর আমি উঠে গিয়ে ল্যাবটা দেখতে থাকলাম। আমি হেটে হেটে দেখছি ল্যাবটা হঠাৎ সাইডে আরেকটা রুম দেখলাম দরজা লাগানো, সব রুম তো খোলা এটা আটকানো কেনো? আমি আস্তে আস্তে গেলাম ওদিকে, আমি গিয়ে ওই দরজায় হাত দিতে গেলেই আদ্রিয়ান টান মেরে সরিয়ে দিলো আমায়। আচমকা টানে ভয় পেয়ে গেলাম আমি! আদ্রিয়ান একটু রেগেই বলল
.
– এদিকে কেনো এসছো?
.
– আসলে দেখতে এসছিলাম

– দেখার জন্য গোটা ল্যাব আছে ওখানে যেতে হবেনা
.
– কিন্তু ওখানে..
.
– কিচ্ছু নেই ওখানে।
.
বলে একপ্রকার টেনেই নিয়ে এলো আমায়। গিয়ে দেখি খাবারো এসে গেছে। তারপর তিনজনেই খেতে বসলাম। খেতে খেতে আদিব ভাইয়া বলল
.
আদিব ভইয়া: প্রেমে আসলেই জ্বালা রে ভাই। সবে গার্লফ্রেন্ড জুটলো এর মধ্যেই একে নিয়ে কতো ঝামেলা।
.
আদ্রিয়ান: সবে তো শুরু দেখ কী কী করতে হয়! আমি তো বুঝতেছি কী জ্বালা। কিছু বললেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে। আবার একটু ধমকালেই ভ্যা ভ্যা করে কাদবে। আর কিছু একটা বললে সেটা করতেই হবে নইলে আবার কথাই বলবে না।
.
আমি দাত কটমট করে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম ওর দিকে এসব বলে আমার দিকে চোখ পরতেই ও থতমত খেয়ে গেলো। হয়তো ভূলেই গেলো আমি এখানে আছি। শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল
.
– আমিতো মজা করছিলাম।

আদিব ভাইয়া হো হো করে হেসে দিয়ে বলল
.
– কী হলো মিঃ সের? সের গিরি শেষ?
.
আদ্রিয়ান একবার আমার দিকে তাকালো আমি রেগে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আদিব ভাইয়া আবার বলল
.
– ভাই তোকে ভয় পেলে সেই লাগে। তোর এইরকম ফেস দেখাটা ধুমকেতু দেখার মতো সৌভাগ্যের ব্যাপার।
.
আদ্রিয়ান চোখ গরম করে তাকালো আদিব ভাইয়ার দিকে সেটা দেখে আদিব ভাইয়া এমন একটা ইনোসেন্ট ফেস করলো যেন সে সবে আকাশ থেকে টুপ করে পড়ল সে কিছুই জানেনা।
.
আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ খেতে থাকলাম। আদ্রিয়ান আমার দিকে কয়েকবার তাকালেও আমি তাকাইনি।
.
খাওয়ার পরে আদিব ভাইয়া ফোনে কথা বলতে বলতে কোথাও গেলো। আমি আর আদ্রিয়ান চুপচাপ বসে আছি। হঠাৎ একটা মেয়ে এলো কফি নিয়ে। মেয়েটাকে সুক্ষভাবে দেখছি বেশ সুন্দরী, একটা হাটু অবধি স্কার্ট আর শার্ট পরেছে। এই মেয়ে এখানে কেনো? মেয়েটা আমার কফিটা টেবিলে রাখলেও আদ্রিয়ান এর সামনে গিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে কফিটা বাড়িয়ে ন্যাকা সুর দিয়ে বলল
.
– ইউর কফি স্যার!
.
আমার রাগ লাগছে প্রচুর এতো আদিক্ষেতা কীসের হ্যা! ‘ইউর কফি স্যার’ হুহ নেকিরানী কোথাকার!
আদ্রিয়ান ফোনে চোখ রেখেই ভ্রু কুচকে বললো

– টেবিলে রেখে যাও।
.
মেয়েটা টেবিলে কফি রেখে কফিটা রেখে চলে গেলো। আমার রাগ বেরেই যাচ্ছে এমন মেয়ে এখানে কেনো? মেয়েটা যেতেই আমি ভ্রু কুচকে আদ্রিয়ানকে বললাম
.
– মেয়েটা কে?
.
আদ্রিয়ান একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে তাকিয়ে বলল
.
– আমাকে এসিস্ট করে।
.
আমি আর কিছু বললাম না মাথা প্রচুর গরম হয়ে আছে, খাটাশ কোথাকার এইজন্যই আসতে দিতে চায়নি আমায়। ওর সুন্দরী সুন্দরী assistant দের দেখে ফেলবো তো!
.
এরমধ্যেই আদিব ভাইয়াও চলে এলো কিন্তু আপাদত আমি রাগ করতে ব্যাস্তহ হঠাৎ আমার চোখ গেলো দেয়ালে ঝোলানো কিছু পোশাকের ওপর। এগুলোতে বোম ডিফিউসড করে যারা তারা পরে, কিন্তু এগুলো আদ্ররিয়ানের ল্যাবে কেনো? আমি আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম
.
আমি: আচ্ছা ওইগুলো তো বোম ডিফিউস করার সময় লোকেরা পরে তাইনা? তোমাদের কাছে কেনো ওগুলো?
.
আদ্রিয়ান: ল্যাবে অনেক কাজে ব্লাস্ট হবার চান্স থাকে, সেসব কাজ করার আগে এগুলো পড়তে হয়।
.
আমি: কিন্তু এটাতো ক্যামিকেল ল্যাব না যে..

আদিব ভাইয়া: আরেহ ক্যামিকেল ল্যাব ছাড়া কী ব্লাস্ট হয়না নাকি?
.
আমি: হ্যা কিন্তু..
.
আদ্রিয়ান: এই মেয়েটাও না প্রশ্নবোধক চিন্হের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকে। এখন চলো মাই ডিয়ার বউ।
.
আমি: একদম বউ বলবে না আমাকে!
.
আদ্রিয়ান: তো কী বলবো?
.
আমি: কিচ্ছুনা। কিচ্ছু বলতে হবেনা।
.
আদ্রিয়ান: সিওর?
.
আমি: হান্ড্রেট পারসেন্ট।
.
আদ্রিয়ান আদিব ভাইয়ার কাছে গিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: এখন গেলাম আর শোন নাম্বার আমার কাছেই আছে কিন্তু উনিশ বিশ করলেই বলে দেবো।
.
আদিব ভাইয়া: শালা বেচে থাকতে শান্তি দিবিনা তুই।
.
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল

আদ্রিয়ান: চিন্তা করিসনা মরে গেলে শান্তি পেয়ে যাবি।
.
নিমেষেই আদিব ভাইয়ার মুখটা মলিন হয়ে গেলো, আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল
.
আদিব ভাইয়া: মাঝে মাঝেই এসব উল্টাপাল্টা কথা বলিস, এটা বুঝোস না যে তুই আমার আত্না। তুই চলে গেলে আমি থেকে কী করবো!
.
আদ্রিয়ান: আচ্ছা ড্রামা হলে আমায় ছাড়। আমার বউয়ের সামনে আমায় জরিয়ে ধরছিস বউ মাইন্ড করবে।
.
আদিব ভাইয়া হেসে দিলো ওর কথা শুনে। কিন্তু ওদের কথোপোকথন আমায় ভাবাচ্ছে। এসব কথার মানে কী? সব গুছিয়ে আমাকে নিয়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে আসতেই হঠাৎ একটা মেয়ে ‘AD’ বলে এসে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরল। আদ্রিয়ান সাথে সাথেই সরিয়ে দিলো। আমার তো রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেছে যদিও আদ্রিয়ান ধরেনি সরিয়ে দিয়েছে কিন্তু অন্য মেয়েই বা ধরবে কেনো!
.
মেয়েটি: AD.. কতদিন পর দেখলাম তোকে..!
.
আদ্রিয়ান: তুই দেশে কবে এলি? আর এখানে?
.
মেয়েটি: আরে তোর সাথেই দেখা করতে এলাম। এনগেইজমেন্ট এর দাওয়াত ও দিলিনা।
.
আদ্ররিয়ান: একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো সব তাই।
.
মেয়েটি: ওহ ! ও কে? ( আমাকে উদ্দেশ্য করে)

আদ্রিয়ান: কিচ্ছুনা
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। মানে কী? আমি কিচ্ছুনা?
.
মেয়েটি: কিচ্ছুনা মানে?
.
আদ্রিয়ান: তুই বুঝবিনা। এবার বল পারমানেন্টলি চলে এসছিস?
.
মেয়েটি: নাহ কালকেই চলে যাবো। ওখানেই সেটেল হয়ে গেছি।
.
আদ্রিয়ান: ওহ। আচ্ছা তাহলে আসি!
.
মেয়েটি: হ্যা চল বাই।
.
মেয়েটি চলে যেতেই আদ্রিয়ান আমাকে বলল
.
– ও আমার..
.
– আমি জানতে চাইনি

বলেই গাড়িতে বসে পরলাম ও এসে আমার সিটবেল্ট বেধে গাড়ি স্টার্ট দিলো আমি ওর সাথে কোনো কথাই বলিনি আর ও খালি মুচকি মুচকি হাসছিলো যা আমার রাগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়ি পৌছে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভেতরে চলে গেছি তাকাইওনি ওর দিকে।
.
রাতে শুয়ে শুয়ে রাগে ফুসছি আজকে সারাদিনের কথা ভেবে। ফোন বাজতেই দেখি আদ্রিয়ান রিসিভ করে কানে ধরে রাখলাম। ও বলল
.
– হ্যালো।
.
– হুম বলুন কী বলবেন।
.
– যাহ বাবা আমি আবার কী করলাম রেগে আছো কেনো?
.
– কে বললো আমি রেগে আছি, কিছু বলার থাকলে বলুন নইলে রাখলাম।
.
– হয়েছে কী বলবেতো?
.
– কিছুইনা
.
– আমাকে আসতে হবে?
.
– মানেহ

– মানে, আমার একমাত্র বউ রাগ করলে রাগ ভাঙ্গাতে তো আসতেই হবে।
.
– ধপবাজ একটা।
বলেই ফোনটা রেখে দিলাম। ঢং আমি কিচ্ছুনা? বলবোই না কথা। তারপর কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ফিল করালাম কারো নিশ্বাস আমার মুখে পরছে। ঘুমের ঘোরে পাত্তা না দিলেও কী মনে করে তাড়াতাড়ি তাকালাম তাকিয়ে তো আমি শকড্ কেউ আবছা অন্ধকার কেউ আমার দুপাশে হাতের ভর দিয়ে ঝুকে আছে চিৎকার করতে গেলেই আমার মুখটা চেপে ধরে বলল
.
– চুপ! ইডিয়েট ! এটা আমি!
.
ভালোভাবে খেয়াল করলাম এটা আদ্রিয়ান। ওকে দেখে মনে মনে নিশ্চিন্ত হলাম। ও খুব বিরক্তি নিয়ে বলল
.
– সামনে পিছে না দেখে এভাবে চেচাও কেনো? তোমার এই চেচানোটাই তোমার কাল হয়! আগেও হয়েছে আর ভবিষ্যতেও হবে!
.
ওর কথার আগা গোরা কিছুই বুঝলাম নাহ তাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম। ও বিরক্ত হয়ে বলল
.
– কী হলো কিছু বলছোনা কেনো?

এবার আমার রাগ লাগল, ইডিয়েট! আমার মুখটা চেপে ধরে আছে আর বলছে কথা বলছিনা কেনো? দিলাম হাতে একটা কামড়। ও সাথে সাথেই হাত সরিয়ে হালকা ঝাড়া মেরে বলল
.
– আহ! এভাবে কামড়াচ্ছো কেনো রাক্ষসী!
.
– তুমি মুখ চেপে ধরে বলছো কথা বলছিনা কেনো? সো ফানি!
.
ও আসাম করে বসে বলল
.
– সরি খেয়াল করি নি!
.
আমিও উঠে বসলাম তারপর বললাম।
.
– তুমিও তো আমাকে সেদিন কামড়ে ছিলে, আমি রাক্ষসী হলে তুমি কী?
.
ও দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে বিছানায় আয়েস করে শুয়ে বললেন
.
– লাভার! কারণ ওটাকে লাভ বাইট বলে বেইবি!
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম ওর দিকে। লাভ বাইট? সিরিয়াসলি? আমি আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছি। ও টান মেরে আমাকে ওর বুকের ওপর ফেলে বলল
.
– এবার বলো রাগ করেছো কেনো?

– আগে তুমি বলো তুমি কী করে এলে ভিতরে?
.
– কাব্য খুলে দিয়েছে দরজা। শালা মেরা বহুত কামকা হ্যা।
.
– কচু ! যেমন দুলাভাই তেমন শালা। এক্কেবারে হিট জুটি।
.
ও আমার চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললো
.
– এবার বলো কী হয়েছে।
.
এবার আমার মেজাজ সত্যি খারাপ হলো, সারাদিনে জমানো রাগটা একসাথে মাথায় চারা দিয়ে উঠলো তাই রেগে ওর ওপর থেকে উঠে কোমরে হাত দিয়ে বসলাম। ও উঠে বসে একটা ঢোক গিলে বললো
.
– হয়েছেটা কী?
.
– কী হয়েছে?
.
বলেই আমার টেবিল থেকে স্কেলটা নিলাম। সেটা দেখে ও বললো
.
– অনি স্কেল দিয়ে কী করবে?
.
– কী করবো? বাদর পিটিয়ে মানুষ বানাবো।

বলেই খাটে উঠে ওর বাহুতে বেশ জোরেই একটা বারি দিলাম। ও বলল
.
– আউচ! অনি এটা কিন্তু ঠিক না এটলিস্ট কী করেছি সেটাতো বলবা।
.
বলেই আদ্রিয়ান একটা বালিশ এনে সামনে ধরল!আমি ওকে বাড়ি মারছি আর ও বালিশ দিয়ে নিজেকে সেভ করার চেষ্টা করছে
.
– আমি কথায় কথায় মুখ ফুলিয়ে থাকি? কান্না করি?
.
– আরেহ আমিতো ‘আউচ’, আমি মজা করছিলাম
.
– আমি জেদ ধরে বসে থাকি?
.
– হ্যা সেটা ঠিক। ‘এই’ না না আমি ওটাও মজা করছিলাম।
.
– আর ওই কফি দিতে এসছিলো ওই মেয়েটা। ওই মেয়েটা তোমার এসিস্টেন কেন? হ্যা? এই জন্যই যেতে দিতে চাও নি আমাকে ল্যাবে।
.
– না না সোনা বিশ্বাস করো ওই মেয়েটা জাস্ট আমার ইয়ে, ধ্যাত্তেরি আই মিন পিএ।
.
– ইয়ে নাকি পিয়ে সেটা পরে বুঝবো কিন্তু ওরকম মেয়ে কেন থাকবে তোমার ল্যাবে।
.
– আচ্ছা ঠিকাছে আমি কালকেই বের করে দেব ওকে ল্যাব থেকে ওকে?
.
– দেবো না দিতে হবে।

– হ্যা তাই করবো এবার ‘আহ’ এবার তো থামো! লাগে তো!
.
আদ্রিয়ান খাট থেকে নেমে গেলো আমিও নেমে গেলাম আর ওকে মারতে লাগলাম ও যথারীতি বালিশ দিয়ে আটকাতে লাগল। বারি গুলো ওর গায়ে কম বালিশে বেশি পরছে।
.
– আর ঐ মেয়েটার কে হ্যা ওর সামনে আমি কিচ্ছুনা হয়ে গেলাম।
.
– ‘আরেহ’ ওটাতো তুমি বলেছিলে আমায় যে কিচ্ছুনা বলতে তাইতো বললাম। ( অসহায় ভাবে)
.
– আমার সাথে মজা হচ্ছে হ্যা?
.
– আমার ঘারে কটা মাথা বলো?
.
– আবার?
.
– সরি সরি, আর কিছু?
.
– হ্যা ওই মেয়েটা কে? কোথা থেকে টপকালো? আর জরিয়ে ধরল কেনো তোমায়?
.
– আরে আমার ইন্টার কলেজ ফ্রেন্ড। ইন্টারের পর ইন্ডিয়াতে চলে গেছে ওখানেই সেটেল আছে! বিদেশি কালচারে অভ্যস্ত তো তাই জরিয়ে ধরেছে আমিতো ধরিনি বলো।

– ধরলে হাত কেটে দিতাম। আর শুধুই বন্ধু তো?
.
– হ্যারে বইন, ধ্যাত্তরি মানে বউ আর কী!
.
– আর এসব ফাজলামো করবে আমার সাথে?
.
– যতদিন দুনিয়াতে স্কেল থাকবে ততোদিন অন্তত নাহ।
আরেহ সব তো মেনে নিলাম এবার তো থাম মেরি মা থুরি বউ। কেউ যদি ভূলেও জানতে পারে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের বিয়ের আগেই বউয়ের হাতে স্কেলের বারি খেয়েছে আমার রেপুটেশনের কী হবে জাস্ট থিংক বেইবি। আরেহ! কোন পাগলের প্রেমে পরলাম আল্লাহ নোস্
– যতদিন দুনিয়াতে স্কেল থাকবে ততোদিন অন্তত নাহ।
আরেহ সব তো মেনে নিলাম এবার তো থাম মেরি মা থুরি বউ। কেউ যদি ভূলেও জানতে পারে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের বিয়ের আগেই বউয়ের হাতে স্কেলের বারি খেয়েছে আমার রেপুটেশনের কী হবে জাস্ট থিংক বেইবি। আরেহ! কোন পাগলের প্রেমে পরলাম আল্লাহ নোস্
.
– কী বললেন আমি কী?
.
– কই কী বললাম? আমিতো কিছুই বলিনি! এবারতো থামো প্লিজ।
.
– না থামবো না আমাকে পাগল বলা?
.
এবার আদ্রিয়ান নিজেকে সেভ করা থামিয়ে দিয়ে বলল
.
– থামবে না?

– না থামবোনা
.
– থামবেনা তো?
.
– নো নেভার।
.
এবার ও আমার হাত তা ধরে ফেললো তারপর ওর এক হাত দিয়ে আমার দুই হাত পেছোনে মুড়িয়ে ধরে, তারপর আরেক হাতে স্কেল টা নিয়ে নিলো। তারপর ভ্রু নাচিয়ে বলল
.
– এবার কে কাকে মারবে?
.
এতোক্ষণ রাগের বসে এসব করলেও এখন মাথায় এলো আমি কী করছিলাম? এবার এই ছেলে আমার সাথে কী করবে কে জানে? কিন্তু সেই ভয় ওকে বুঝতে না দিয়ে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলাম। ও বিরক্ত হয়ে বলল
.
– এভাবে লাফাচ্ছো কেনো পেঙ্গুইনের মতো।
.
– আমি.. যাই হোক ছাড়ো
.
– আগে এই ছটফটানি বন্ধ করো..।
.
আমি নিজেকে ছাড়াতে আরো ছটফট করতে লাগলাম। আমি বললাম
.
– করবোনা..
.
– করবেনা?
.
– নাহ।
.
– সিওর?
.
– হান্ড্রেট পার্সেন্ট।
.
আদ্রিয়ান স্কেলটা ফেলে দিলো তারপর আমার কাধের চুলগুলো সরিয়ে গভীরভাবে একটা কিস করল। আমার ছটফটানি অটোমেটিক থেমে গেলো। শান্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। ও কানের কাছে এসে বলল

– মিস পেঙ্গুইন তোমাকে কীকরে শান্ত করতে হয় আমি জানি!
.
নিজেকে অনেক কষ্টে স্বাভাবিক করে বললাম।
.
– তুমি কী জানো যে তুমি একটা চরম মাত্রার অসভ্য?
.
– আমি অসভ্য?
.
– হুম অসভ্যই তো!
.
– তাই না?
.
– হ্যা তাই
.
– দেখাচ্ছি..
.
আমাকে ছেড়ে ওর গেন্জির হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগল, আমি দুই কদম পিছিয়েই ছুট লাগালাম। ও আমাকে ধরার চেষ্টা করছে আর আমি কনোরকমে বেচে যাচ্ছি আরকি, দুজনেই খাটের চারপাশ দিয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলাম এক পর্যায়ে আদ্রিয়ান খাটের উপর দিয়ে এসে আমাকে ধরে ফেললো তার কোমর জরিয়ে ধরে বলল
.
– আমি অসভ্য?
.
– কোন সভ্য লোক মাঝরাতে একটা মেয়ের ঘরে এসে এসব করে আমার জানা নেই।

– মেয়েটা আমার বউ
.
– এখনো হইনি!
.
আমার বা হাত উচু করে ধরে আঙ্গুলের রিং টা ইশারা করে বলল
.
– এটা আমার পারিবারিক ভাবে পাওয়া গ্রিন কার্ড বুঝলে
.
তারপর বেসলেট টা দেখিয়ে বলল
.
– আর এটা আমার পার্সোনাল গ্রিন কার্ড, নিজস্বভাবে করে নিয়েছে। সো পুরো রাইট আছে।
.
– তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝিনা আমি!
.
– তোমারতো মাথায় সমস্যা কীকরে বুঝবে?
.
– তুমিকি ইনডাইরেক্টলি আমাকে পাগল বললে?
.
– নাহ তো আমি ডিরেক্টলি তোমাকে পাগলী বললাম
.
আমাকে পাগল থুরি পাগলী বলা? দিলাম এক ধাক্কা কিন্তু বেডের এতো কাধে থাকার পরেও ওকে বেডে ফেলতে আমায় তিনটে থাক্কা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দিতে হয়েছে। তারপর কিছু না ভেবেই ওর ওপর উঠে বসে বললাম
.
– আমি পাগলী? তোমাকে তো আমি আজ মেরেই ফেলবো।

বলেই ওর বুকে কিল ঘুসি মারতে লাগলাম। ও আমকে থামাতে থামাতে বলল
.
– আরেহ ! পাগলিটা আবার ক্ষেপেছে রে। আরে বাবাহ মজা করছিলাম তো।
.
কিন্তু আমি কিচ্ছু না শুনে মেরেই যাচ্ছি এলোপাথাড়ি তারপর ওর গেন্জির কলার ধরে বললাম
.
– আমাকে পাগল বানিয়ে মজা হচ্ছে। তোমাকে মেরে ভর্তা করবো আজ।
.
এবার ও আমাকে ঘুরিয়ে শুইয়ে দিয়ে আমার উপর উঠে বসল। যদিও আমার ওপর কোন ভর দেয়নি কারণ ও আমার দুপাশে হাটুর ওপর ভর দিয়ে বসেছে। তারপর আমার দুই হাত বেডে চেপে ধরে বলল।
.
– আজ তোমার সাহসটা বেশি বেরে গেছে? তোমার মতো সুচের খোচায় তো সুতোও নরবে না আর আমাকে মারছো? ( ধমকে)
.
একটু ভয় পেয়ে গেলাম। ঠিকি তো! কী হচ্ছে আমার আজকে? এতো সাহস কোথা থেকে আসছে কে জানে? অকারণে ফেসে যাচ্ছি। ও আবার বলল
.
– কী হলো হাওয়া ফুস? তুমি জানো আমার এক পাঞ্চে কতো বডি বিলডার ও নক আউট হয়ে গেছে আর তুমি একটা পুচকি মেয়ে আমায় মারতে এসছো? আমি যদি আমার 50% শক্তি কাজে লাগিয়ে তোমায় একটা হিট করি তোমায় খুজে পাবে কেউ? ( রেগে)
.
আমি কিছু না বলে অসহায়ভাবে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলাম।
.
– এখন চুপ করে আছো কেনো? আমার কলার ধরে তো এতোক্ষণ বেশ ধমকাচ্ছিলে বকরবকর করছিলে, কিছু বলছি না বলে যা ইচ্ছে করবে? সাহস কী করে হয় তোমার? (বেশ জোরে ধমকে)

ওর ধমকে আমি কেদেই দিলাম। চোখ দিয়ে পানি পরে গেলো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলাম। সেটা দেখে ও বলল
.
– Stop crying !
.
আমি চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারছি নাহ। ও আমার উপর থেকে উঠে খাটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিলো তারপর মাথা চেপে ধরল। আমিতো কেদেই যাচ্ছি। ও মাথা চেপে ধরেই বলল
.
– কান্না বন্ধ করতে বলেছি! ( শান্ত গলায়)
.
আমার অভিজ্ঞতা বলছে এর পরের সেনটেন্স টা এতোই জোরে হবে যে আমি কেপে উঠবো। কিন্তু তবুও কান্না থামাতে পারলাম না। আমার ধারণাকে সঠিক প্রমাণ করে ও জোরে ধমকে বলল
.
– অনি!
.
আমার কান্নার বেগ এবার আরো বেরে গেলো। ও এবার আমাকে টেনে ওর বুকে নিয়ে গেলো তারপর এক হাতে জরিয়ে ধরে অন্য হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে বলল
.
– সরি এসপেক্ট করোনা, ভুল করেছো তাই বকেছি। সো সরি বলার প্রশ্নেই ওঠেনা
.
আমি অবাক হয়ে গেলাম ওর কথায়। ও আবার বলল
.
– যা খুশি করো কিন্তু কখনো আমার কলার ধরবেনা। I don’t like this at all..

সিট! আমি ওর গেন্জির কলার ধরেছিলাম? নিজেকেই নিজের চর মারতে ইচ্ছে করছে এখন। এতো বোকা কেনো আমি! আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ও বলল
.
– অন্যকেউ হলে হাতটাই হয়তো রাখতাম না। কিন্তু জাস্ট তুমি বলে বেচে গেলে, আর আজ প্রথম ভূল বলে শুধু বকলাম নইলে ঠাটিয়ে মারতাম একটা।
.
আমি ঠোট ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে, তারপর চোখ নামিয়ে বললাম।
.
– সরি!
.
উনি মুচকি হেসে আমার চুলগুলো নেড়ে দিয়ে বলল
.
– পিচ্চি একটা!
.
– আমি মোটেও পিচ্চি নই। I’m 18.
.
– ওলে বাবালে! নাক টিপলে দুধ বেরোয় সে মেয়ে আবার 18।
.
বলেই আমার নাকটা টিপে দিলো আর আমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে রিলাম ওর দিকে। ও আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল
.
– এটা আমার জিনিস আর নেক্সট টাইম আমার পারমিশন ছাড়া এটা ঝড়াতে দেখলে, সত্যিই থাপ্পড় মারবো।
.
তারপর আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
.
– কষ্ট সহ্য করতে শিখতে হবে। নিজের ভালোর জন্য হলেও অনেক সময় কষ্ট সহ্য করতে হয়। আবার নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকেও কষ্ট দিতে হয়। ইমোশনাল ফুল হয়ে পৃথিবীতে টিকে থাকা যায় না। সিচিউশন বুঝে বিহেভ করতে হয়। তাই শক্ত করে নাও নিজেকে, সহজে কাদবে না।
.
ওর বেশিরভাগ কথাই আমি বুঝতে পারিনা। কী বলে কেন বলে ওই জানে তাই আমি সেদিকে অার পাত্তা দিলাম নাহ। তারপর ও বলল
.
– রাগ কমেছে?
.
লে হালুয়া! এতোক্ষণ আমাকে এভাবে বকে এখন জিজ্ঞেস করছে আমার রাগ কমেছে কি না? আর আমাকে বলে যে আমি পাগল?
.
– কী হলো এখোনো রেগে আছো?
.
আমি মাথা নেড়ে না বললাম। তারপর ও আমাকে সরিয়ে উঠে বসে বলল
.
– এখন যাই ওকেহ! কেউ দেখলে প্রেসচিজ পানচার হয়ে যাবে! শালাবাবু ওয়েট করছে ড্রয়িং রুমে বসে।
.
– হুম।

ও মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। ও যেতেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো ইদানিং ওর প্রতি আজব এক অনুভূতি কাজ করে। ওর সবকিছুই ভালোলাগে। এসব ভেবেই বালিশটা জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
এভাবেই কেটে গেলো বেশ কয়েকটা দিন এই কয়দিনে মেডিকেল, বাড়ি আর আদ্রিয়ানের সাথেই কেটে গেলো। তবে ওই দিনের পর আমার ওপর এখোনো কোনো আক্রমণ হয়নি হয়তো সুযোগ পায়নি, কারণ আদ্রিয়ান আমাকে একা ছাড়েই না কখনো। মেডিকেল ছাড়া কোথাও ওর পারমিশন ছাড়া বেড়োনো বারণ আমার, মেডিকেলেও হয় ও নিজে পৌছে দেয় অথবা ওদের বাড়ির কোনো ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দেয়। তবে এইকয়েকদিনে ওর প্রতি আমার অনুভূতিগুলোও আরো গভীর হয়েছে। ওর কেয়ারিং, শাসণ, ধমক সবকিছুই মনে দাগ কাটছে আমার। নিজের এতো কাজের মধ্যেও আমায় যথেষ্ট সময় দেয়। মাঝরাতে এসে সারপ্রাইজ দেয়া, লং ড্রাইভ এ যাওয়া, মাঝে মাঝে ওই গ্রামের দাদুর সাথে দেখা করে আসা, প্রতি শুক্রবার রিকশায় করে ঘোরা, এই শীতের রাতেও লুকিয়ে আইসক্রীম খেতে যাওয়া, মাঝে মাঝে ওর ওই রাগ আর বকুনিও মিস হয়নি। খুব ভালোই কাটছিলো দিনগুলো!
.
একদিন হঠাৎ রাতে ঘুমের মধ্যে ফোন বেজে উঠল। ঘুম ঘুম চোখে কোনোরকমে না দেখেই ফোন রিসিভ করে বললাম
.
– কে? ( ঘুম কন্ঠে)
.
– আমি আদ্রিয়ান।
.
– এখন আবার কেনো?
.
– তাড়াতাড়ি বাইর চলে এসো!
.
– কেনো?

– বিয়ে করব আমরা তাই!
.
আমি উঠে বসে বললাম
.
– ওয়াও! পালিয়ে বিয়ে! খুব ইন্টেরেস্টিং হবে ব্যাপারটা। পারিবারিকভাবে এনগেইজমেন্ট হবার পরেও পালিয়ে বিয়ে করার মজাই আলাদা।
.
– হয়ে গেছে? মজা পাওয়া শেষ? এবার এসো!
.
– রাত সাড়ে তিনটে বাজে আদ্রিয়ান, এখন কী?
.
– এসো বলছি।
.
– আচ্ছা আসছি!
.
আমি একটা রেড শর্ট টপ আর ব্লাক জিন্স পরা ছিলাম, উপরে একটা লং সুয়েটার পরে আর চুলগুলো আচরে বেরিয়ে গেলাম। খুব সাবধানে কেউ যেনো টের না পায় সেভাবেই বেরিয়ে এলাম, নিচে গিয়ে দেখি ও একটা বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি ওবাক হয়ে বললাম
.
– বাইক কোথায় পেলে?

– এটা আমার নিজের বাইক বেইবি।
.
– এতোদিন কেনো আনোনি?
.
– ইচ্ছে করেনি চালাতে আজ ইচ্ছে করল।
.
– কেনো?
.
– তুমি বলেছিলে না, তোমার অনেক দিনের সখ না ভোররাতের শহর ঘুরে দেখা?
.
– হুম তো?
.
– আমার বউয়ের সখ আমি অপূর্ণ কীকরে রাখি?
.
– মানে?
.
– এখন আমরা বাইকে করে ঘুরবো।
.
– সিরিয়াসলি?
.
– ইয়াপ বেইবি
.
বলেই উঠে বসলো বাইকে তারপর স্টার্ট দিয়ে বললো
.
– এসো?

আমিও উঠে পরলাম আর ও বাইক স্টার্ট করলো। মিডিয়াম স্পিডে বাইক চালাচ্ছে ও! রাস্তা প্রায় ফাকা বললেই চলে তবে ট্রাক চলছে মাঝে মাঝে। অসম্ভব ভালো লাগছে এই পরিবেশ। ওকে জরিয়ে ধরে ফিল করছি এই পরিবেশ। ভোররাতের শহরটাও যে এতো সুন্দর লাগে জানতামি নাহ। হঠাৎ ও বলল
.
– আইসক্রিম খাবে?
.
– এতোরাতে কে তোমার জন্য আইসক্রিম পার্লার খোলা রাখবে?
.
ও বাইক থামিয়ে বলল
.
– খাবে কী না বলুন বেগম সাহেবা। আপকে লিয়ে জান ভি হাজির হ্যা।
.
আমি নেমে কোমোরে হাত দিয়ে বললাম
.
– আচ্ছা সবসময় এগুলো কেনো বলতে হবে? তুমি যদি আমার জন্য নিজের জান দেও তবেহ আমি থেকে কী করবো?
.
ও আবার টেনে নিজের কাছে এনে বলল
.
– এতোটা কাছের কবে থেকে হলাম?
.
ওর চোখে চোখ রেখে ঘোরের মধ্যেই বললাম

– সময়ের হিসেব তো করিনি তাইতো হারিয়ে গেছি! কী করছি কখন করছি কেনো করছি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।
.
ও কিচ্ছু না বলে বুকে জরিয়ে ধরল আমায়। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো কিন্তু এই দীর্ঘশ্বাসের কারণ বুঝতে পারলাম না আমি! বেশ কিছুক্ষণ জরিয়ে ধরে রেখে তারপর ছেড়ে দিয়ে বলল
.
– চলো।
.
তারপর আবার বাইকে করে বেশ কিছুক্ষণ পর একটা আইসক্রিম পার্লারের সামনে বাইক থামলো। অদ্ভুতভাবে পার্লারটা খোলা আমি বেশ অবাক হয়েই বললাম
.
– এই সময় এটা খোলা কেনো?
.
– খোলা ছিলোনা খুলিয়েছি।
.
– তুমি..
.
– হ্যা চলো।
.
বলেই ভেতরে নিয়ে গেল তারপর আইসক্রিম অর্ডার করল। একটা কিন্তু বড় সাইজ। এখন বেশিরভাগ সময়ই এমন করে যা কিনে একটাই কেনে পরে দুজন মিলে খেতে হয়। আইসক্রিম আসার পর ওটা নিয়ে আমরা বাইরের বেঞ্চে বসলাম। ও বাটিটা নিয়ে প্রথমে নিজে এক চামচ মুখে দিলো তারপর সেটা থেকে এক চামচ আমার দিকে এগিয়ে দিলো আমি মুখে দিতে গেলে সেটা ঘুরিয়ে নিজেই খেয়ে নিলো। ভিষণ রাগ উঠল আমার আমি সোজা ধাক্কা দিয়ে আইসক্রিম এর বাটিটাই ফেলে দিলাম। তারপর মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম। এটা নতুন কিছু না আইসক্রিম খেতে এলে ও প্রায় এমন করে! ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল

– এটা কী হলো?
.
– ঠিকি হয়েছে তুমি সবসময় এমন করো!
.
ও মুচকি হেসে আমার গালটা টেনে দিয়ে বলল
.
– এমন না করলে তোমার ওই নাক ফুলানো রাগী ফেসটা কীকরে দেখতাম?
.
– তুমি.. আসলেই একটা..
.
– অসভ্য! আই নো বেইবি। নো চাপ।
.
তারপর আরেকটা আইসক্রিম বক্স এনে নিজেও খেলো আর আমাকেও খাইয়ে দিলো। এরপর পার্লারের সামনে বাইকটা পার্ক করে দুজনে বেশ কিছুক্ষণ হাটলাম এই নিরিবিলি রাস্তাটা ধরে আমি ওর হাতের বাহু জরিয়ে হাতের সাথে মাথা থেকিয়ে হাটছি। আমি হাটতে হাটতেই বললাম
.
– ভাবলেই অবাক লাগে জানো দেড় মাস আগেও আমি তোমাকে চিনতাম না এখন?
.
– আর এখন তোমার সবটা জুরেই শুধু আমি!খ
.
– সেটা কখন বললাম?
.
– বলতে হয়না আমি বুঝি!

– কচু!
.
– হা হা হা
.
– এভাবে হাসছো কেনো? ( ভ্রু কুচকে)
.
– তোমার বাচ্চামার্কা কথা শুনে!
.
– হুহ
.
কিচুক্ষণ চুপ থেকে আদ্রিয়ান বলল
.
– ভালোবাসো আমায়?
.
আমি চমকে তাকালাম ওর দিকে কী বলব বুঝতে পারছিনা নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছি, আমিকি ভালোবাসি ওকে? আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই বলল
.
– থাক বলতে হবেনা। কিন্তু বলার ইচ্ছে হলে বলে দিও। বলা তো যায়না কখন চলে যাই।
.
আমি চমকে তাকিয়ে বললাম

– কোথায় যাবে?
.
– যেখান থেকে ফেরা যায় না।
.
আমার পা দুটো থেমে গেলো। আমি অবাক করে বললাম
.
– আদ্রিয়ান কী সব বলছো এসব?
.
– আরেহ বি প্রাকটিক্যাল! মৃত্যু কী নোটিস দিয়ে আসে?
.
– তাহলেতো আমিও মরতে পারি।
.
– থাপ্পড় মারবো একটা!
.
– ওহ নিজের বেলায় সব ওকেহ আর আমি বললেই দোষ!

বলেই ওকে জরিয়ে ধরলাম। কেনো জানিনা ওর মরার কথা শুনলেই আমার দুনিয়া থেমে যায় আর ও এসব কেনো বলে আল্লাহ জানেহ। ও আমাকে জরিয়ে ধরে কিছু বলবে তার আগেই চারপাশে কারো উপস্হিতি টের পেলাম। আমরা দুজন দুজনকে ছেড়ে চারপাশে তাকালাম। তাকিয়েই আমি চমকে গেলাম। এই মূহুর্তে এসব আশা করিনি আমি। আমি ভয়ে আদ্রিয়ানের পেছনে চলে গেলাম আর ওর জ্যাকেট খামচে ধরলাম..
বলেই ওকে জরিয়ে ধরলাম। কেনো জানিনা ওর মরার কথা শুনলেই আমার দুনিয়া থেমে যায় আর ও এসব কেনো বলে আল্লাহ জানেহ। ও আমাকে জরিয়ে ধরে কিছু বলবে তার আগেই চারপাশে কারো উপস্হিতি টের পেলাম। আমরা দুজন দুজনকে ছেড়ে চারপাশে তাকালাম। তাকিয়েই আমি চমকে গেলাম। এই মূহুর্তে এসব আশা করিনি আমি। আমি ভয়ে আদ্রিয়ানের পেছনে চলে গেলাম আর ওর জ্যাকেট খামচে ধরলাম..
আমার খুব ভয় করছে। এরা এখানে কী করে এলো? আমি মনে মনে ভাবছি এখন কী হবে? আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম ও ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– কী চাই?
.
এটা শুনে ওরা একটু হেসে উঠলো। জ্বি হ্যা চারজন transgender এসে এক কোমরে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে, যাদেরকে আমরা হিজরা বলে জানি! ছোটবেলায় এক অনুষ্ঠানে এরা এসে বেশ হাঙ্গামা করেছিলো তখন থেকেই এদের দেখে ভয় লাগে আমার তবে আদ্রিয়ানকে দেখে বুঝলাম ও খুব বিরক্ত!
.
ওদের মধ্যে একজন কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে এসে বললো!
.
– মাঝরাতে এভাবে বেরোইছিস কীছের জইন্য?
.
বলেই আদ্রিয়ানকে কুনুই দিয়ে খোচা মারলো। আদ্রিয়ান রেগে বলল
.
– What the hell? গায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?

এটা শুনে ওরা আবার হেসে দিলো আর বলল
.
– বাপরে সাহেব তো আবার ইনজেরি ও বলতাছে।
.
বলে আবার দাত কেলাচ্ছে, আদ্রিয়ানের তো রাগে অবস্হা খারাপ। আমি আস্তে করে একটু দূরে সরে দাড়ালাম। আমি জানি এখন এখানে এক কমিডি সিন হবে আর আমি হবো একমাত্র দর্শক। ওদের মধ্যে একজন বলল
.
– সাহেব বউ নিয়া বের হইছেন নাকি অন্য জিনিস?
.
আদ্রিয়ান এবার হাতা ফোল্ড করতে করতে আশেপাশে তাকিয়ে বলল
.
– ও আমার বউ না অন্যজিনিস সেটা আপনাদের না জানলেও চলবে তবে এখন না কেটে পরলে আমি কী জিনিস সেটা বুঝতে পারবেন। (ধমকে)
.
ওর এই রূপ দেখে ওরা একটু দমে গেলো মনে হয়। আমি ভাবছি যা এত তাড়তাড়ি সিন শেষ হয়ে যাবে? ওদের মধ্যে একজন বলল
.
– আরে সাহেব রাগেন ক্যান আমরাতো এমনেই মজা করতাছিলা।
.
– মজা করা শেষ এবার আসুন দয়া করে!
.
ওদের মধ্যে একজন বলল
.
– আরেব্বাস এ তো মোগো বাসায় নিতে চাইছে। চলেন আমরাতো এক পায়ে খারা।

আদ্রিয়ান এবার উপরের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– আল্লাহ কই ফাসাইলা?
.
এরপর নিচে ওদের তাকিয়ে বলল
.
– আমি আপনাদের যেতে বলেছি যেতে যেতে ( হাত দিয়ে দেখিয়ে)
.
– রাস্তাডা কী আননের? যে আননের কতায় যামু?
.
আদ্রিয়ান এবার চোখ গরম করে তাকালো।
.
আমিতো ফ্রি তে বিনোদন নিচ্ছি। পেট ফেটে হাসি আসছে।
.
– আন্নে এতো রাগ দেহান কেন কন দিহি?
.
আদ্রিয়ান এবার মুখে একটা হাসি দিয়ে বলল
.
– আমি মানুষটাই এমন খালাম্মা
.
আমি ফিক করে হেসে দিলাম। আবার ভাবলাম সুর পাল্টালো কেনো? হয়তো বুঝেছে এভাবে হবেনা।
.
লাল শাড়ি পরা একজন এসে আদ্রিয়ানের গাল টেনে দিয়ে

– আপনে জানেন আপনে কতো সুন্দর
.
– নাহ এইতো আপনি বললেন জেনে গেলাম। (দাতে দাত চেপে)
.
এভাবে কিছুক্ষণ আদ্রিয়ানকে টিজ করতে লাগলো যদিও আদ্রিয়ান বেশ সুন্দরভাবে সামাল দিচ্ছে! একপর্যায়ে আদ্রিয়ান এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল
.
– কী চাই কী আপনাদের বলুনতো।
.
– কিছুনা সাহেব কয়টা পয়সা দিয়ে দিন চলি যাই!
.
– তা সেটা এতোক্ষণ বললেই হতো এতো ড্রামার কী আছে বুঝি না!
.
– ড্রাম? ড্রাম কোত্তে এলো?
.
আদ্রিয়ান চরম বিরক্তি নিয়ে মানিব্যাক থেকে টাকা ওদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
.
– আমার মাথা থেকে এবার বিদায় হন।
.
টাকা নিয়ে এরা হেলতে দুলতো চলে গেলো আর আদ্রিয়ান দুই হাত জোর করে বলল
.
– বাচলাম! কোথা থেকে চলে আসে।

এবার আমি শব্দ করে হেসে দিলাম এতোক্ষণ চেপে রাখা হাসিটা এবার বেরিয়ে এলো। ও রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা?
.
আমি হাসতেই বললাম
.
– সিনটা সেই ছিলো। ফোন আনলে ভিডিও করে রাখতাম।
.
ও এবারো রাগী দৃষ্টি দিলো আমার দিকে। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওদের মতো এক্টিং করে বললাম
.
– সাহেব আপনি জানেন আপনি কতো সুন্দর।
.
– তোমাকে তো..
.
বলেই আমার দিকে এগিয়ে এলো আর আমিও ছুট লাগালাম কিন্তু বেশিক্ষণ ওর থেকে বাচতে পারলাম না। ও পেছন থেকে আমার পেট আর গলা জরিয়ে ধরে ফেলল তারপর আমাকে ঘুরিয়ে সুরসুরি দিতে লাগল। আর ছোটবেলা থেকেই আমার সুরসুরি বেশি। আমি বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ স্টপ

– কেনো এতোক্ষণ তো খুব হাসি পাচ্ছিলো এবার হাসো বেশি করে হাসো।
.
– আরেহ এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।
.
– একদম ঠিক হচ্ছে।
.
– প্লিজ আর না
.
কিন্তু কে শোনে কার কথা এরপর দুজনেই রাস্তার পাশের উচু করা জায়গাটায় বসে পরলাম। কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর আরো কিছুক্ষণ বাইক করে ঘুরলাম। এরমধ্যে বিভিন্ন করম খুনশুটিতো আছেই। ভোরে বাড়ি এসে বাইক থেকে নেমে বললাম
.
– Thank you so much!
.
– কেনো?
.
– আমার ইচ্ছেটাকে পূরণ করার জন্য!
.
ও বাইক থেকে নেমে বলল
.
– কে বললো আমি তোমার ইচ্ছে পূরণ করেছি? আমিতো আমার ইচ্ছে পূরণ করেছি?

– মানেহ?
.
ও আমার দুই বাহুতে হাত রেখে বলল
.
– মানে তোমার ইচ্ছেটাইতো আমার ইচ্ছে, তোমার সবকিছুই তো আমার তাইনা?
.
বলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে জরিয়ে ধরল আমাকে, আমার মাথার ওপর ওর থুতনি রেখে বলল।
.
– তোমার জন্য সব করতে পারি আমি। শুধু একটা রিকোয়েস্ট করবো তোমাকে, যেটা আগেও বলেছি।
.
– কী রিকোয়েস্ট ?
.
– আমার ভালোবাসাকে কখনো ছোট করো না, যাই হয়ে যাক না কেন বুকে আঘাত করোনা, যদি বেচেও যাই তো মেনে নিতে পারবোনা, কারণ বুকের আঘাতের ব্যাথা কোনোদিন কমেনা।
.
– এসব কেনো বলছো? আমি কেনো তোমাকে আঘাত করবো? আর ওরকমটা আমি ভাবতেও পারিনা।
.
– সময় অনেক বিচিত্র জিনিস জানো? নিজের সাথে সবকিছু বদলে দেয়। আজ যেটা তুমি ভাবতেও পারছোনা কাল হয়তো সেটা করতে তোমার হাতও কাপবে না।
.
– আদ্রিয়ান আমি..
.
– যাকগে বাদ দাও এসব।

এরপর আমাকে ছেড়ে গালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– বাই
.
– বাই
.
– হুম যাও!
.
আমি চলে এলাম ভেতরে দুই বার পেছনেও তাকালাম, ওও তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। কেনো জানিনা আমার ওকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা। ওর মুখে মুচকি হাসি থাকলেও কোনো এক কারণে ওর মধ্যে ঝড় চলছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি, কিন্তু তার কারণ জানিনা।
হঠাৎ ও ডাকলো আমায়
.
– অনিমা
.
আমি পেছনে তাকিয়ে বললাম
.
– জ্বি!
.
ও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ল অর্থাৎ কিছুনা। এরপর চলে এলাম আমি ভেতরে। রুমে গিয়ে ছোয়েটার টা খুলে শুয়ে পরলাম। আরো একদিন কেটে গেলো তবে এরমধ্যে আদ্রিয়ানের কোনো ফোন বা মেসেজ আসেনি। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি কী হলো? আজ একবারো ফোন করলোনা না মেসেজ, খুব ব্যাস্ত নাকি? মনটা ভালো লাগছেনা আজ মেডিকেল অফ তাই দেখাও হচ্ছেনা এসব ভেবেই ঘুমিয়ে পরলাম আমি।

আপির ডাকে ঘুম ভাঙলো এগারোটায়। উঠে দেখি আপি কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে!
.
– আপি.. আরেকটু ঘুমোতে দিলে কী হতো?
.
– এগারোটা বাজে আর কতো?
.
– এগারোটা বেজে গেছে? ( হাই তুলে)
.
– হ্যা ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এসো!
.
– ওকেহ আসছি যাও।
.
ব্রেকফাস্ট করে এসে সোফায় বসলাম কফি নিয়ে, আব্বু পেপার পড়ছে। আপিও এসে বসলো। বাড়ির সবাই ড্রয়িং রুমেই আছে একেকজন একেক জায়গায়। হঠাৎ আব্বু বলে উঠল
.
আব্বু: উত্তরার সমাবেশে কালকে একটা ব্লাস্ট হয়েছে।
.
শুনেই চমকে উঠলাম আমি। আপি তাড়তাড়ি আমার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে গেলো আর আমার হাত চেপে ধরল। আম্মু চোখ গরম করে তাকালো আব্বুর দিকে। আব্বু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। আমি কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম
.
– কজন মারা গেছে?
.
আম্মু: তোর এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা।

আমি: আম্মু প্লিজ! আব্বু বলেন।
.
আব্বু: এটাইতো আজব ব্যাপার অদ্ভুতভাবে কেউ একজন আগে থেকেই সবাইকে সতর্ক করে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটা কে করেছে আর সে কীভাবে জানল সেটাই প্রশ্ন তবে একটা পোরা লাশ পাওয়া গেছে। হয়তো লোকটা সরতে পারেনি সময় মতো।
.
আমি: এটা কীকরে সম্ভব?
.
আব্বু: সেটাইতো..!
.
আমি রুমে চলে গেলাম কিচ্ছু ভালোলাগছেনা আদ্রিয়ানের ও কোনো খবর নেই। এবার নিজেই ফোন দিলাম কিন্তু ফোনটা সুইচড অফ বলছে। মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো বার বার ফোন করার পরেও ফোনটা সুইচড অফ ই বলছে। এভাবেই বিকেল হয়ে গেলো কিন্তু এর মধ্যে আদ্রিয়ানের ফোন বন্ধই বলছে এবার খুব টেনশন হচ্ছে। ড্রোয়িং রুমে সোফায় বসে ভাবছি ওর কথা। হঠাৎ আপি এসে বলল
.
– কী হলো?
.
– টেনশন হচ্ছে খুব
.
– কেনো?
.
– আপি..
.
এরমধ্যেই আব্বু এসে বলল।

আব্বু : মামনী আদ্রিয়ানের সাথে কথা হয়েছে তোর?
.
আমি: দুদিন যাবত হয়না কেনো?
.
আব্বু: মানিক ফোন করেছিলো আদ্রিয়ান নাকি বাড়ি ফেরেনি, ফোনও বন্ধ, আর কোথায় আছে কেউ জানেনা।
.
শুনে আমার হাত পা কাপতে লাগল। আমি কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম
.
– ক্ কবে থেকে ফেরেনি ও?
.
আব্বু: পরশু রাত থেকে।
.
শুনে আমি আরেক দফা অবাক হলাম ওইদিন রাতেই তো আদ্রিয়ান আমার সাথে ছিলো তারমানে তারপর থেকেই..
.
আব্বু: আমাকে যেতে হবে ওই বাড়ি। ভাবী ভেঙ্গে পরেছে, মানিক ও কান্নাকাটি করছে।

আম্মু: চলো আমিও যাবো।
.
আব্বু: মামনী যাবি তুই?
.
আমি ঘোরের মধ্যে আছি কিছুই মাথায় ঢুকছেনা আমার, আব্বু আবার বলল
.
আব্বু: মামনী!
.
আমি: হুহ!
.
আব্বু: নিজেকে সামলাও কিচ্ছু হয়নি ওর, হয়তো কোনো কাজে গেছে। যাবে তুমি ওই বাড়িতে?
.
আমি: হুম
.
আব্বু: হিয়া তুইও চল। মেয়েটা এখনি ভেঙ্গে পরেছে ওকে সামলানোর জন্য তোকে লাগবে।
.
আপি: আচ্ছা চলো।
.
আমরা গাড়ি করে রওনা হলাম এখনো আমি একটা ঘোরে আছি মাথা ব্যাথা করছে প্রচুর কী হলো এটা? আর কেনো হলো?
.
আদ্রিয়ান দের বাড়িতে যেতেই দেখি আন্টি প্রচুর কাদছে। আঙ্কেলও ভেঙ্গে পরেছে, জাবিনও নিঃশব্দে কাদছে। আদিব ভাইয়া মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে আছে, ইশারাক ভাইয়া গম্ভীর হয়ে বসে আছে। আমি এখনো পাথরের মতো দাড়িয়ে আছি। আব্বুকে দেখে মানিক আঙ্কেল এসে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো।

আব্বু: আরে কাদছিস কেনো। দেখ ও তো বাচ্চা, কোনো কাজে গেছে হয়তো তোদের বলতে পারেনি!
.
মানিক: প্রথমে আমারাও সেটাই ভেবেছি কিন্তু দুদিন কেটে গেলো এরমধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই ওর সাথে। ও একঘন্টার জন্য বাইরে গেলেও আমাদের জানিয়ে যায় সেখানে দুদিন হয়ে গেছে বুঝতে পারছিস?
.
আম্মু আন্টিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
.
আদিব ভাইয়া: এক্সাক্টলি আর ও এতোটাও ইরেসপন্সিবল নয়। আর অফিসিয়াল কোনো কাজে গেলেতো আমি অন্তত জানতাম তাইনা।
.
আব্বু: তুমি সিওর আদ্রিয়ান অফিসিয়াল কোনো কাছে জায়নি?
.
আদিব ভাইয়া: একদম আঙ্কেল তবে ইউ কে তে কোন কাজে যেতে পারে কিন্তু সেটা গেলেও তো বলে যাবে তাইনা?
.
আমি ধপ করে সোফায় বসে পরলাম এতোক্ষণ না কাদলেও এবার কান্না পাচ্ছে ভিষণ কান্না পাচ্ছে। আপি এসে জরিয়ে ধরল আমায়। সবার মধ্যেই একটা চাপা কষ্ট কাজ করছে কারণ এ কয়দিনে এটুকু বুঝেছি আদ্রিয়ান সবার কলিজা। ওর কিছু হলে কেউ মানতে পারবেনা ও ছেলেটাই এমন।

এভাবে আরো দুটো দিন কেটে গেলো কিন্তু আদ্রিয়ান এর খবর নেই কোনো। সবাই টেনশনে পাগল হয়ে গেছে। কারো খাওয়া নাওয়া ঘুম কিচ্ছু নেই। পুলিশ ডাইরি করা হয়েছে কাল, আজ সকালে আমরা আবার এসছি ওদের বাড়িতে, সবাই চুপচাপ ড্রয়িং রুমে বসে আছি, হঠাৎ পুলিশ এলো বাড়িতে। পুলিশকে দেখে মানিক আঙ্কেল আব্বু আদিব ভাইয়া ছুটে গেলো গিয়ে বলল
.
– অফিসার কোন খবর?
.
– আসলে স্যার যেদিন থেকে নিখোজ হয়েছে, স্যারের ফোনের লাস্ট লোকেশন উত্তরাতেই ছিলো, ঠিক সেদিনই উত্তরায় ব্লাস্ট হয়, আর ওখানে মাত্র একটাই ডেডবডি পাওয়া গেছে, পোড়া।আর ওইটার আইডেনটিটি পাওয়া যায়নি তাই এখনো মর্গেই আছে। আর তাই আমরা ডাউট করছি..
.
এটুকু বলতেই আন্টি অজ্ঞান হয়ে গেলো আর আর আমি কোনোরকম সোফা ধরে বসে পরলাম। আম্মু আর জাবিন ধরে আন্টিকে ভেতরে নিয়ে গেলো। আদিব ভাইয়া রেগে বলল
.
আদিব: আপনি কী বলতে চাইছেন অফিসার ওটা আ..
.
আর কিছু বলতে পারলোনা ভাইয়া নিজের চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে নিলো।
.
অফিসার: না আমি সেটা বলিনি আমরা জাস্ট ডাউট করছি। যেহেতু মুখ চেনা যাচ্ছেনা তাই আমরা ওই লাশের সাথে মানিক স্যারের ডি এন এ টেষ্ট করা
.
মানিক আঙ্কেল: কোন দরকার নেই! ওটা আবার আদ্রিয়ান হতেই পারেনা।

অফিসার: সেটা হলে আমরাই বেশি খুশি হবো! স্যার আমাদের দেশের একজন মূল্যবান সম্পদ বলতে পারেন। আমরাও ওনাকে হারাতে চাইবোনা। তাই কাল সকালে টেস্ট করাতে হবে আশা করি আসবেন।
.
বলেই অফিসার চলে গেলো। আমি এখনো পাথরের মতো বসে আছি। চোখ দিয়ে পানি পরছে শুধু। ইশরাক ভাইয়া বলল
.
ইশরাক ভাইয়া: আঙ্কেল আমার মনে হয় টেষ্ট করিয়ে আসলেই ভালো হয় অন্তত মনের দিক দিয়ে শান্তি পাবো
.
আব্বু: হ্যা সেটাই আমরা জানি ওটা আদ্রিয়ান নাহ কিন্তু তবুও মনে তো শান্তি থাকবে।
.
মানিক আঙ্কেল বিদ্ধস্ত কন্ঠে বলল
.
মানিক আঙ্কেল: আর যদি ওটা আদ্রিয়ান হয়?
.
আদিব ভাইয়া: আঙ্কেল কী বলছেন হতে পারেনা এটা আদ্রিয়ান। ওর এভাবে আমাদের ছেড়ে যেতে পারেনা।
.
ইশরাক ভাইয়া: কিন্তু ওর ফোনের লাস্ট লোকেশন?
.
আমার আর সহ্য হলোনা আমি দাড়িয়ে চিৎকার করে বললাম

– প্লিজ স্টপ দিস! কিচ্ছু হয়নি ওর, হতে পারে না। তোমাদের যা টেস্ট করানোর করিয়ে নেও, আমার না কোনো রিপোর্টের দরকার আছে আর না কোনো মনের শান্তির, আমি জানি ও যেখানেই আছে ঠিক আছে।
.
বলেই কাদতে কাদতে বেরিয়ে এলাম ওদের বাড়ি থেকে একা একাই নিজের বাড়ি চলে এলাম।
.
রুমে গিয়ে ডাইরি থেকে আদ্ররিয়ানের ছবিটা বের করে দেয়াল ঘেসে বসে পরলাম। ওর ছবিটা দেখতে লাগলাম কী সুন্দর হাসি, আর কত সুন্দর লাগছে ওকে, কতো প্রনবন্ত। কোথায় ও, সত্যিই কী সুস্হ আছে? ওর সাথে কাটনো মূহুর্ত গুলো চোখে ভাসছে, হঠাৎ ওর বলা সেই কথাটা মনে পরল, “বলার হলে বলে দেও বলাতো যায়না কখন চলে যাই।” “যেখান থেকে ফেরা যায় না”। কথাটা মনে পরতেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো, ডুকরে কেদে উঠলাম আমি। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। মুখ থেকে একটা কথাই বেড়িয়ে এলো।
“কোথায় তুমি আদ্রিয়ান?”
.
রুমে গিয়ে ডাইরি থেকে আদ্ররিয়ানের ছবিটা বের করে দেয়াল ঘেসে বসে পরলাম। ওর ছবিটা দেখতে লাগলাম কী সুন্দর হাসি, আর কত সুন্দর লাগছে ওকে, কতো প্রানবন্ত। কোথায় ও, সত্যিই কী সুস্হ আছে? ওর সাথে কাটনো মূহুর্ত গুলো চোখে ভাসছে, হঠাৎ ওর বলা সেই কথাটা মনে পরল, “বলার হলে বলে দেও বলাতো যায়না কখন চলে যাই।” “যেখান থেকে ফেরা যায় না”। কথাটা মনে পরতেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো, ডুকরে কেদে উঠলাম আমি। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। মুখ থেকে একটা কথাই বেড়িয়ে এলো।
“কোথায় তুমি আদ্রিয়ান?” নিশব্দে দেয়ালে হেলান দিয়ে কাদছি, আজ চোখ কিছুতেই বাধ মানতে চাইছেনা, আদ্রিয়ান তুমিকি বুঝতে পারছোনা সবাই কতো কষ্ট পাচ্ছে? আমি কতো কষ্ট পাচ্ছি? কেন এমন করছো? কেনো আসছো না তুমি? তুমিতো আমার চোখের পানিও সহ্য করতে পারোনা তাইনা? দেখো কীভাবে কাদছি আমি, কেনো এসে বকছোনা আমাকে? কেনো আমার চোখ দুটো মুছে দিচ্ছোনা? কেনো? অন্য সময় তো ঠিকি ‘stop crying’ বলে ধমকে দিতে তাহলে এখন কেনো আসছো না?
.
বুক থেকে উঠিয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললাম

– ওই স্টুপিড পুলিশ অফিসার বলছে তুমি নাকি ওই ব্লাস্টে.. তুমিই বলো আদ্রিয়ান এটা হতে পারে? তুমিতো আমাকে বলেছিলে না যে তুমি আমার কোনো ক্ষতি হতে দেবেনা? আর এটাতো সবাই জানে যে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কখনো কথার খেলাপ করেনা। ওরা কেনো বুঝছেনা সেটা? কীসব ফাল্তু টেষ্ট করাবে বলছে, ওরা কেনো বুঝছেনা এসবের কোনো দরকার নেই, ওটা তুমি হতেই পারোনা।
.
কিছু একটা ভেবে আবার ওর নাম্বারে ডায়াল করলাম, কিন্তু এবারো ঐ অসহ্যকর যন্ত্রমানবী সেই একি কথা বলে চলেছে যা আমি মোটেও শুনতে ইচ্ছুক নই। রেগে আছাড় মারলাম ফোনটাকে, এবার শব্দ করেই কাদছি। আর ভালোলাগছেনা এসব, সবকিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। একেই কী ভালোবাসার কষ্ট বলে? ভালোবাসি আমি ওকে? হয়তো বাসি নইলে এতো কষ্ট কেনো হবে আমার? শুধুই মায়া? এতোদিন একসাথে কাটায়েছি সেই মায়া সেই টান থেকেই এই কষ্ট? শুধু মায়ায় পরে এতোটা কষ্ট হয়। এখন ভালোবাসা আর মায়ার টানের এই হিসাব নিকাশ করার মতো মানসিক পরিস্থিতি তে নেই আমি। এখন শুধু আমার আদ্রিয়ানকে চাই। শুধু একটাই কথা মাথায় চলছে যে ওকে ছাড়া থাকতে পারবোনা আমি, I need him.. এটা টান, নাকি মোহ, নাকি আমি ভালোবাসা আমি জানিনা জানতে চাইও না কিন্তু আমি এইটুকু ভালোভাবেই বুঝে গেছি, ওকে ছাড়া আমি নিঃস্ব একেবারেই নিঃস্ব। এসব ভেবেই নিজের মাথাটা চেপে ধরলাম দুইহাত দিয়ে ভীষণ ব্যাথা করছে মাথাটা, কেউ যেনো খুব ভারী কিছু একটা চাপিয়ে দিয়েছে আমার মাথায়, আসতে আসতে দেয়ালের সাথে মাথা থেকিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলাম।

হঠাৎ মেঘে গুরুম করে উঠল। বেলকনির দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম মেঘ করেছে আকাশে চারপাশটা অন্ধকার। সবে ফেব্রুয়ারি মাস শীত কাটেনি এখোনো পুরোপুরি ভাবে। এই সময় এইভাবে আকাশে মেঘ করাটা প্রকৃতির সাভাবিক আচরণের বিরুদ্ধে বলা যায়, হয়তো প্রকৃতিও আমার কষ্টে কষ্ট পেতে চাইছে, এসব ভেবে নিজেই নিজের ওপর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম যে দূর এও আবার হয় নাকি? এটাতো কোনো রূপকথার রাজকন্যার গল্প না যে তার দুঃখে প্রকৃতিও শোক পালন করবে। আমি আস্তে করে উঠে গুটি গুটি পায়ে বেলকনিতে রেলিং ধরে দাড়ালাম।

চারপাশটা মেঘে অন্ধকার করে ফেলেছে, হালকা হালকা গুরুম শব্দ করে নিজের উপস্হিতি জানান দিচ্ছে, হালকা বাতাস বইছে চোখ বন্ধ করে সেই বাতাসকে অনুভব করলাম। বুকের মধ্যেও যেনো মেঘ জমে আছে, ভার হয়ে আছে বুকটা। হঠাৎ পানির ফোটা অনুভব করলাম তাকিয়ে দেখি মেঘ এর ঘনত্ব এতই বেশি ছিলো যে সে আর আকাশে ভেসে থাকতে পারেনি তাকে বৃষ্টি হয়ে ঝরতেই হলো। বেশ জোরেই বৃষ্টি পরছে, সেই বৃষ্টিতে ছিটে অাসা পানিগুলো আমার চোখে মুখে বারি খাচ্ছে, চোখ বন্ধ করেই সেটা উপভোগ করছি আমি, হঠাৎ মনে পরলো আদ্রিয়ানও তো আমাকে এই বৃষ্টিতেই প্রথম দেখেছিলো না? এই বৃষ্টিই আদ্রিয়ানকে আমায় উপহার দিয়েছিলো, ভাবতেই নতুন করে এই বৃষ্টির প্রতি ভালোলাগা জন্মালো, বৃষ্টিবিলাশ করতে ছোটবেলা থেকেই আমি ভালোবাসতাম, বৃষ্টি পরলে কেউ ঘরে রাখতে পারতো না আমায় তবে আজ ভিজতে মন চাইছে না তাই চোখ বন্ধ করে ফোটাগুলোই অনুভব করছি। আর আদ্রিয়ান এর সাথে কাটানো কিছু মুহুর্তকে মনে করছি। কতো দুষ্ট মিষ্টি স্মৃতি জরিয়ে আছে ওর সাথে।

একদিন মেডিকেল থেকে বেরোতেই আদ্রিয়ানের ফোন এসছিলো। আমি ভাবলাম এখন আবার কেনো? এসব ভেবেই ফোনটা রিসিভ করে বললাম
.
– হ্যা বলো
.
– আজকে পেছনের গেইট টা দিয়ে বের হও।
.
– কেনো?
.
– আমি বলছি তাই
.
– তুমি এসছো এখানে?
.
– Yup sweetheart come fast..
.
– আচ্ছা আসছি ( হাসতে হাসতে)
.
পেছনের গেইট দিয়ে বেরিয়ে দেখলাম হিরো সাহেব গাড়ির সাথে হেলাম দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে কোমরে হাত রেখে বললাম
.
– আজ আবার কী?
.
– গেলেই দেখতে পাবে বেবি! চলো তো!
.
আমি গিয়ে গাড়িতে বসলাম আর ওও বসল। এরপর বেশ কিছুক্ষণ পর রোড সাইডে গাড়ি থামালো, পাশে তাকিয়ে দেখি একটা বাগান বেশ বরোসরো। আমি দেখে জিজ্ঞেস করলাম
.
– এখানে?
.
– তোমার বাগান পছন্দ রাইট?
.
– হ্যা কিন্তু এখানে?
.
– চলো দেখাচ্ছি।

ও হাত ধরে নিয়ে গেলো বাগানে, একটা জায়গায় দাড় করিয়ে দিলো আমায় এরপর কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে দুটো ক্লাপ বাজানোর সাথে সাথেই বৃষ্টি শুরু হলো। যখন বুঝতে পারলাম বৃষ্টি হচ্ছে আনন্দে আত্নহারা হয়ে ফিল করতে লাগলাম আর ও গাছের সাথে হেলান দিয়ে দেখছে। হঠাৎ মনে পরল যে আকাশ তো পরিস্কার ছিলো আর তাছাড়া এই ডিসেম্বর মাসে বৃষ্টি কোথা থেকে এলো? আমি আদ্রিয়ানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। ও এবার একপা একপা করে আমার কাছে এলো এরপর আস্তে করে আমার কোমর ধরে ওর সাথে লাগিয়ে গেলো, দুজনেই ভিজছি, ওর মুখের পানিগুলো ফোটায় ফোটায় আমার গায়ে পরছে। শীতের মধ্যে ভিজে আছি তার
ওপর ওর এতো কাছে তাই কেপে কেপে উঠছি। ও আমার কানে ঠোট ছুইয়ে স্লো ভয়েজে বলল
.
– তোমার খুশির জন্য ডিসেম্বর এ বৃষ্টি নামানোটা অসম্ভব কিছু না
.
তারপর আমার কপালে সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে উপরে ইশারা করলো। উপরে তাকাতেই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো, কিন্তু এসব তো একা করা সম্ভব না? তাই আমি আশেপাশে তাকালাম তাকিয়ে দেখি একটু দূরে আদিব ভাইয়া আর ইশরাক ভাইয়া গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আবুলের মতো দাত কেলাচ্ছে! আমি অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে বললাম
.
– এসবের কী দরকার ছিলো?

– তোমার ঐ বৃষ্টিবিলাসী রূপটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো! যেই রূপটা দেখে প্রথম আমি ঘায়েল হয়েছিলাম।
.
– এমন কী দেখেছিলে আমার মধ্যে?
.
– সেটার ব্যাখ্যাই তো করতে পারবোনা। শুধু এটুকু জানি সেদিনি আমি আমার মায়াবিনীর মায়ায় জরিয়ে গেছিলাম যেখান থেকে বেরোনো সম্ভব না।
.
বলেই আমার মুখ থেকে চুল সরিয়ে গালে একটা চুমু দিলো আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম
.
– কী হচ্ছে? ভাইয়ারা দেখছে তো!
.
ও ভ্রু কুচকে ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– যখন বর বউ রোমান্স করে তখন বাকিদের চোখ কোথায় থাকতে হয়?
.
আদিব আর ইশরাক ভাইয়া একসাথে বলল
.
– উপরে…
.
আদ্রিয়ান ঝাড়ি দিয়ে বলল
.
– তো তোরা এদিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?

ওনারা তাড়াতাড়ি উলতো ঘুরে ওপরে তাকিয়ে আকাশ দেখতে লাগলো। আমিতো অবাক। এরা তিনজনেই পাগল। নইলে এরকম করে কেউ? আদ্রিয়ান এবার দুই হাত দিয়ে কোমার ধরে মুচকি হেসে বলল
.
– এবার হয়েছে?
.
– পাগল আপনি?
.
– তোমার জন্য হতেই পারি? প্রেমের জন্য পাগল হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই সমস্যা কোথায়?
.
আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও আমার গালটা টিপে দিয়ে বলল
.
– এসব তোমার মাথায় ঢুকবেনা, যেদিন ভালোবাসবে সেদিন বুঝবে।
.
এরপর ও আমাকে একটা গাছের সাথে লাগিয়ে ধরল তারপর খুব কাছে চলে এলো এমনিতেই শীতে কাপছি তারওপর ওর এসব কান্ড। ও গলায় লেপটে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো, কেপে উঠলাম আমি ওর পেটের সাইডের গেন্জি খামচে ধরলাম, ও ওর মুখ দিয়ে আমার গলায় হালকাভাবে স্লাইড করছে কিন্তু কিছু বলছেনা আর আমি চেয়েও কিছু বলতে পারছিনা সব কথা যেনো আটকে গেছে। অনেকটা সময় যাওয়ার পরেও ও ছাড়ছেনা তাই ওকে ঠেলে সরাতে গেলে ও আরো শক্ত করে আমাকে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো আর আরো গভীরভাবে স্পর্শ করতে লাগলো যেনো এই ডিস্টারবেন্স ওর পছন্দ হলো না। আমিও আর ছাড়ানোর চেষ্টা করিনি কারণ বুঝে গেছি যে এর যতক্ষণ মন না চাইবে ছাড়বেনা, তাই বাধ্য হয়ে ঠোট চেপে ওর স্পর্শগুলো সহ্যকরে নিচ্ছি। বেশ কিছুক্ষণ পর আমার গলা থেকে মুখ উঠিয়ে ও আমার গালে আলতো করে ঠোক ছোয়ালো দ্বিতীয়বারের মতো কেপে উঠলাম আমি। তারপর আমার গালে ওর গাল ঘসে দিলো। আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি। ও আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে আস্তে করে বলল

– I love you..
.
– হুম।
.
– শুধু হুম?
.
– আর কী?
.
আদ্রিয়ান রিক্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো তারপর মুচকি হেসে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– নাহ কিছুনা
.
হঠাৎ আদিব ভাইয়া করুন স্বরে বলল
.
– কীরে তোদের হলো? আকাশ দেখতে দেখতে তো চোখদুটু ঝলসে গেলো।
.
আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: শালা তোদের জন্যে প্রেমটাও ঠিকমতো করতে পারবোনা।
.
আদিব ভাইয়া: আচ্ছা? এতো খাটাখাটুনি করে এমন একটা সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ তৈরী করে দিলাম আর তুই বলছিস আমরা তোর প্রেমে বেগরা দেই?

ইশরাক ভাইয়া: এগুলা মহা অবিচার। পাপ! পাপ!
.
আদ্রিয়ান: ওয়ে ড্রামাবাজস্। ড্রামা শেষ হলে এদিকে ঘোর।
.
দুজনে ঘুরে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। আদিব ভাইয়া বলল
.
আদিব ভাইয়া: দেখ ভাই তোদের রোমান্স দেখার শখ আমার একদমি নেই। একটুতো লজ্জা রাখ।
.
আদ্রিয়ান: এখন আবার কী?
.
ইশরাক ভাইয়া: আগে বউকে তো ছাড়!
.
আদ্রিয়ান খেয়াল করল ও আমার কোমর ধরে ওর সাথে মিশিয়ে রেখেছে তাই তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলো। আমি চোখ গরম করে তাকালাম ওর দিকে আর ও মাথা চুলকোতে লাগল
.
আদিব ভাইয়া: হইছে আর লজ্জা পেতে হবেনা। আমরা গাড়িতে আছি তোরা আস্তে আস্তে আয়।
.
ইশরাক ভাইয়া: হ্যা আমরাতো ডিসটার্ব ই করি।
.
আদ্রিয়ান: চুপ কর ইডিয়টস। চল আয়!
.
বলেই দুই হাত বাড়িয়ে দিলো, আদিব আর ইশরাক ভাইয়াও এগিয়ে গেলো। আদ্রিয়ান দুই হাতে দুই বন্ধকে জরিয়ে ধরল। আর আমি হাত ভাজ করে দাড়িয়ে ওদের তিনজনকে দেখছি, কাজল পরা থাকলে তিনজনকেই কালো টিকা দিয়ে দিতাম যাতে কারো নজর না লাগে। এরপর আদিব ভাইয়ারা চলে গেলো, আমি এগোতে গেলেই ও আমার হাত ধরল আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাতেই ও গাছের শিকরের উপর বসে আমাকে ওর কোলে বসিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– কী করছো?
.
ও আমার মাথাটা ওর বুকে চেপে ধরে বলল
.
– কিছু শুনতে পাচ্ছো?

– তোমার হার্ডবিট
.
– কী বলছে প্রতি বিটে?
.
– কী?
.
– I love you mayabini
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে ও মুচকি হেসে বলল
.
– এটাই বলে আমার হার্ড, ওর প্রতি বিটে শুধু তুমিই থাকো।
.
– এতো ভালোবাসার কারণ?
.
– কারণ তো মোহে থাকে ভালোবাসায় নাহ।
.
– আমিই কেনো?
.
– সেটাতো আমারো প্রশ্ন।
.
আমি আর কিছু বললাম না খালি ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম
.
– অনি!
.
– হুম

– তোমার কিন্তু একটা বদ অভ্যাস তৈরী হচ্ছে।
.
– কী?
.
– মনোযোগ দিয়ে আমার হার্ডবিট শোনা।
.
– এতে বদ অভ্যাস এর কী দেখলে?
.
– আমি যখন থাকবোনা তখন এটাকে মিস করবে তো।
.
– আদ্রিয়ান? মৃত্যু পথযাত্রীও এতো এসব বলেনা যত তুমি বলো। এমনভাবে বলো যেনো তুমি নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে বসে আছো?
.
– আছিতো!
.
– মানেহ?
.
– মানে মানুষের জীবনের কঠিন কিছু সত্যি থাকে তার মধ্যে মৃত্যু অন্যতম। না চাইলেও আমাদের প্রিয় মানুষটাকে শেষ বিদায় জানাতে হয়।
.
আমি একটু শক্ত করে ওকে জরিয়ে ধরলাম অজান্তেই চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরল। আদ্রিয়ান আমাকে জরিয়ে ধরে বলল

– আরে পাগলী কাদছো কেনো? আর যদি সেরকম কিছু হয়ও তবুও আমি কিন্তু তোমায় ছাড়ছিনা ওকেহ। আমি পৃথিবীতে থাকি আর না থাকি তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি থাকব। তোমার প্রতিটা হার্ডবিটে আমি থাকবো, ইনফ্যাক্ট তোমার প্রতিটা রন্ধ্রেও আমি থাকবো।
.
আমি নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছি। কেনো জানিনা খুব কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ ই ও আমার পিঠে চাপড় দিয়ে বলল
.
– আবার ভূত হোয়েও আসতে পারি, তোমার কাধে ভর করতে কিন্তু পেন্তির কাধে ভূত কীকরে ভর করবে সেটাই প্রশ্ন।
.
আমার কয়েক সেকেন্ড লেগেছে ওর কথাটা বুঝতে। বুঝতে পেরে আমি বললাম
.
– আদ্রিয়ান..
.
বলেই ওকে কিলঘুসি মারতে লাগলাম আর ও যাথরীতি হাসতে হাসতে আমাকে শান্ত করতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
.
ওসব ভেবেই আনমনে হেসে দিলাম। বৃষ্টির ছিটায় বাস্তবে ফিরলাম। কখনো ভাবিনি ওকে এতোটাও মিস করবো। আবারো সেই বিষাদ মনকে গ্রাস করলো। বৃষ্টির ফোটাগুলোকে আবার চোখ বন্ধ করে ফিল করছি। আদ্রিয়ানের বলা প্রতিটা কথা কানে বাজছে ওর পাগলামো, কেয়ারিং, ভালোবাসা সবকিছু যত মনে পরছে বুকটা ততোই ভার হয়ে আসছে। চোখ দিয়ে বিরতিহীনভাবে পানি পরছে। হাতের বেসলেট আর রিং টার দিকে তাকালাম। অগুলোকে ছুতে কান্নার বেগ আরো বেরে গেলো। হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম, তাকিয়ে দেখি আপি আপিকে দেখে জরিয়ে ধরে কেদে দিলাম। আপি আমার পিঠে হাত রেখে বলল
.
– দেখ এভাবে কান্নাকাটি করিস না শরীর খারাপ করবে তো কিচ্ছু খাস ও নি সকাল থেকে।
.
– আপি আদ্রিয়ান..
.
– কিচ্ছু হয়নি আদ্রিয়ানের প্লিজ নিজেকে শান্ত কর।

– ও কেনো আসছেনা আপি? সবাই কী সব উল্টোপাল্টা বলছে।
.
– ওরা কেউ জানেনা কিছু তাই বলছে এসব প্লিজ খেয়ে নে সোনা খাবার এনেছি আমি
.
– আমি খাবোনা
.
– থাপ্পড় মারবো কিন্তু অনি! তুমি না খেয়ে থাকলে কী আদ্রিয়ান চলে আসবে? এরকম বাচ্চামো কেনো করছো?
.
আমি মাথা নিচু করে কাদতে লাগলাম। আপি টেনে আমাকে নিজের বুকে জরিয়ে বলল
.
– দেখ আদ্রিয়ান এসে যদি জানে তুই ওর জন্য না খেয়ে এভাবে অসুস্হ হয়ে পরেছিস তাহলে কত কষ্ট পাবে ছেলেটা আর কতো রাগ করবে
.
– আপি..
.
– কোনো কথা না এখন চুপচাপ খেয়ে নে।
.
আপি জোর করেই খাইয়ে দিলো তবে বেশি একটা খেতে পারলাম নাহ। তারপর আমাকে নিজের কোলে শুইয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো।
.
এভাবেই আরো দুইটা দিন কেটে গেলো, হ্যা আঙ্কেল ডিএনএ টেস্ট করাতে যায়নি কারণ আন্টি আমি কেউ রাজি হইনি। আর এই দুই দিনে আদ্রিয়ানের কোনো খবরও পাইনি। এখন বেশিরভাগ সময় আদ্রিয়ানের বাড়িতেই কাটিয়েছি আমরা সবার অবস্হাই খারাপ, আদিব ভাইয়া এতোদিন শক্ত হয়ে সবাইকে সামলালেও এখন নিজেই ভেঙ্গে পরছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই আমরা আদ্রিয়ানদের বাড়ি থেকে বেরোবো এমন সময় পুলিশ অফিসার এসে হাজির হলো। আদিব ভাইয়া বললো

আদিব ভাইয়া: অফিসার?
.
অফিসার: এডি স্যারের বাইক পেয়েছি আমরা, উত্তরায় যেখানে ব্লাস্ট হয়েছে ঠিক তার একটু দূরেই ঝোপের মধ্যে পরে ছিলো।
.
শুনেই আমি চমকে তাকালাম অফিসারের দিকে, কারো মুখে কোনো কথা নেই সবাই চুপ করে আছে। অফিসার আবার বলল
.
অফিসার: আর বাইকের গায়ে আমরা রক্তও পেয়েছি হয়তো সেটা স্যারের রক্ত।
.
আমি যেনো পুরো পাথর হয়ে গেছি। আন্টিও শব্দ করে কাদছে। আঙ্কেল নিজের বুক হাত দিয়ে চেপে রইল, আর আদিব ভাইয়া ছলছল চোখে অফিসারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একপা একপা করে পিছিয়ে সোফায় বসে পরল। আমি একদৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকিয়ে আছি আমার কেমন লাগছে আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা। অফিসার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
.
অফিসার: আমি বুঝতে পারছি অাপনাদের অবস্হা কিন্তু এবার মানিক স্যারকে ডি এন এ টেস্ট করাতেই হবে ঐ ডেড বডির সাথে আর বাইক এ লেগে থাকা রক্তের সাথেও। আর বডিটাও আর বেশিদিন মর্গে রাখা যাবেনা, এখন এটা আর পার্সোনাল ইসু নেই। আমি আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন।
.
নিজেকে অনেক কষ্টে সামরে আদিব ভাইয়া বলল
.
– ইয়েস অফিসার। আমরা কালকে আসবো।
.
– থ্যাংক্স।
.
বলেই অফিসার বেরিয়ে গেলো আমি এখনো পাথরের মতোই বসে আছি জাবিন এসে আমার জরিয়ে ধরে বলল।
.
জাবিন: ভাবি প্লিজ নিজেকে সামলাও, ওরা বললেই তো হলোনা বলো, এই ফুলিশ রা তো কতোকিছুই বলে সবকি সত্যি হয় নাকি?
.
আপি: এক্সাক্টলি! তুই এতো ভাবিসনা।
.
আমি চোখ দিয়ে ধীর গতিতে পানি পরছে, সেদিনের মতো বাড়ি চলে এলাম। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি ওর সাথে সারারাত বাইকে ঘুরে বেড়ানোর কথা, আচ্ছা ও কী বুঝতে পেরেছিলো এমন কিছু হবে? তাইকি হারিয়ে যাবার ঠিক আগের মুহুর্তটা আমার সাথে কাটিয়েছিলো? কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা, কতোমতে পার করলাম সেদিন রাত। তারপর আরো একটা দিন চলে গেলো। সবাই বসে আছি আদ্রিয়ানের বাড়িতে কাল সেমবল নিয়েছে, অফিসার আজকে রিপোর্ট নিয়ে আসবে সবাই চিন্তায় অস্হির হয়ে আছে। হাত পা কাপছে সবার, যদি DNA ম্যাচ করে যায়? আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা। আদ্রিয়ান নেই সেটা মানতে পারবোনা আমি। আমার সারা শরীর কাপছে। হঠাৎ ই কলিং বেল বাজল। জাবিন গিয়ে খুলে দিয়ে এলো অফিসার আসার সাথে সাথে আদিব ভাইয়া ছুটে গেলো অফিসারের কাছে। আঙ্কেল ওঠেনি সেই সাহস তার আর নেই হয়তো। সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।

Infinite Love part 31+32+33+34+35

আদিব ভাইয়া: অফিসার রিপোর্ট কী বলছে? ম্যাচ করেনি তাইতো?
.
অফিসার চুপ করে আছে, আমি জামা খামচে ধরে বসে আছি। আদিব ভাইয়া রেগে বলল
.
অফিসার: স্পিক আপ অফিসার কী আছে রিপোর্টে?
.
অফিসার: I’m sorry but… DNA ম্যাচ করে গেছে।

কথাটা শোনার সাথে সাথে আমার সময় যেনো ওখানেই থেমে গেলো। আমার কানে শুধু এটুকুই বাজছে যে DNA ম্যাচ করে গেছে। আর কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছিনা আমি নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে বার বার আদ্রিয়ানের বলা কথাগুলোই কানে বাজছে। ‘আমি কিন্তু তোমায় ছাড়ছিনা ওকেহ, আমি পৃথিবীতে থাকি আর না থাকে তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি থাকবো, তোমার প্রতিটা হার্ডবিটে আমি থাকবো, ইনফ্যাক্ট তোমার প্রতিটা রন্ধ্রেও আমি থাকবো।’ ‘ খুব ভালোবাসি তোমায় মায়াবীনি, প্লিজ আর যাই করো আমায় ছেড়ে যেয়োনা?’ ‘ I love you’ আমার চোখে সেই মুহূর্তটা ভাসছে যখন শেষবার ও আমাকে পেছন থেকে ডেকেছিলো কিন্তু কিছু না বলে মুচকি হেসে তাকিয়ে ছিলো। ওর মুখে হাসি থাকলেও চোখে অন্যকিছু ছিলো, সেটাকি আমাকে শেষবারের মতো দেখে নেবার অনুভূতি ছিলো? এতোটা স্বার্থপর কীকরে হলে আদ্রিয়ান? এভাবে ঠকালে আমাকে? কেনো? মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজাটা টেনে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। শেষবার ওর সেই ছলছল চোখে মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকা মুখটাই মনে পরছে। আস্তে আস্তে সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো আমার…

Infinite Love part 41+42+43+44+45