Infinite Love part 31+32+33+34+35
Writer: Onima
-আমি খুব খারাপ, খুব খারাপ আমি। ও কেনো আমাকে এতো ভালোবাসে বলোতো? আমি ওর ভালোবাসার যোগ্যই নাহ। আমি.. আমিতো ওর ভালোবাসার মূল্যটুকুও দিতে পারছিনা। আমার জন্য শুধু আমার জন্য ছেলেটা এতো কষ্ট পাচ্ছে। Just because of me! ও আমার চেয়ে বেটার কাউকে ডিজার্ব করে যে ওকে কখনো কোনো কষ্ট দেবেনা, কিন্তু কেনো এতো ভালোবাসে ও আমায় কেনো? কেনো?
আপি অামাকে ছাড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
.
– কী হয়েছে বলতো এসব কেনো বলছিস?
.
আমি আপিকে পুরোটা না বললেও মূল পয়েন্ট টা বললাম। সবশুনে আপি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর বলল
.
– তো তোমার মতে তুমি আদ্রিয়ানের ভালোবাসার মূল্য দিতে পারছোনা?
.
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে কাদতে লাগলাম। সেটা দেখে আপি বলল
.
-তাহলে কাদছো কেনো?
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম আপির দিকে? আপি বলল
.
– কী হলো বলো কাদছো কেনো?
.
– আমার জন্য ও কতোটা কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে পারছো?
.
– হ্যা পারছি কিন্তু কষ্টতো ও পাচ্ছে তাতে তোমার এতো কান্নার কী হলো?
.
– কী বলতে চাইছো?
.
– মানে ওর কষ্ট দেখে তোমার বড়জোর মনখারাপ হতে পারে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু এতো কষ্ট কেনো পাচ্ছো যে কেদে ভাসিয়ে দিচ্ছো?
.
আমি আপির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কি বলছে আপি এসব? আমাকে চুপ থাকতে দেখে আপি বলল
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
– এর আগেও অনেক ছেলে তোমার পেছনে ঘুরেছে। একটা ছেলে বাড়ির সামনে এসে কীভাবে কেদেছিলো মনে আছে? আরেকবার তো একটা ছেলে হাত ও কেটেছিলো তোমার সামনে। কিন্তু তোমার তখন খারাপ লেগেছিলো, ওদের বুঝিয়েছিলে, বাড়ির ওইসব দিন মুড অফ করে বসে ছিলে কিন্তু এতটা কষ্ট তো পাওনি? এভাবে কাদোও নি। তাহলে আদ্রিয়ানের জন্য এভাবে কাদছো কেনো?
.
আমি ভাবছি সত্যিই তো আমি এতো কষ্ট কেনো পাচ্ছি। আমি আপির দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম সেটা দেখে আপি আমার মাথা ওর কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
.
– দেখ তোর মনের অনুভূতি একমাত্র তুই জানিস! আমি তোকে যাই বলি তোর মনে কোনো প্রভাব পরবেনা যতক্ষণ না তুই নিজে অনুভব করতে পারবি। আদ্রিয়ানের প্রতি তোর মনে কেমন বা কী অনুভূতি আছে সেটা আমি শত বললেও তুই বুঝবিনা যতক্ষণনা তুই নিজে বুঝতে চাইছিস।
.
আমি চুপ করে শুধু আপির কথাগুলো শুনছি আর বোঝার চেষ্টা করছি!
.
– শোন সত্যিকারের ভালোবাসাটা খুব কঠিন একটা জিনিস। তবে মজার ব্যাপার কী জানিস সত্যিকারের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করা যায় না। কেউ যদি কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসে তাহলে বিপরীত পাশের মানুষটি চাইলেও তা উপেক্ষা করতে পারেনা।
.
এটা শুনে আমি আপির দিকে মাথা উচু করে তাকালাম। আপি মুচকি হেসে বলল
– ভেবে দেখো ওরাওতো ভালোবাসতো তোমাকে, কিন্তু ওদের প্রতি তোমার মনে সহানুভূতি থাকলেও ওদের উপেক্ষা করতে পেরেছিলে তুমি। কিন্তু আদ্রিয়ানের ক্ষেত্রে তা হয়নি তুমি চেয়েও ওকে উপেক্ষা করতে পারছোনা কারণ তোমার প্রতি ওর ভালোবাসাটা সত্যিকারের ভালোবাসা কোনো মোহ নয়।
.
– তুমি বলতে চাইছ আমিও আদ্রিয়ানকে ভালোবাসি?
.
– সেটা তুমি ভালো বলতে পারবে। ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি যেটা তুমি নিজে না বুঝলে কেউ তোমাকে বোঝাতে পারবে না। কিন্তু তোমাকে বুঝতে চাইতে হবে
.
– হুম।
.
– এবার কান্না বন্ধ করে কিছু খেয়ে নে তারপর ঘুমিয়ে পর।
.
– আপি আমি সন্ধ্যে বেলা বিরিয়ানী খেয়েছি এখন আর কিছু খাবোনা।
.
– আচ্ছা খেতে হবেনা কিন্তু ঘুমিয়ে পর এখন। আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি মাথায়।
এটা শুনেই আমার আদ্রিয়ানের কীভাবে আমার কোলে শুয়ে বাচ্চাদের মতো বলছিলো মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে? ভাবতেই অজান্তেই হেসে দিলাম।
.
– কী ব্যাপার হাসছিস কেনো?
.
– না এমনি আপি আমার ফোনটা দেওতো?
.
– এখন গেমস খেলতে হবেনা অনেক কান্নাকাটি করেছো এবার ঘুমাও।
.
– আরেহ গেইমস খেলবোনা
.
– তাহলে?
.
– দেওইনা!
.
আপি ফোনটা দিতেই আমি কল মেসেছ চেক করলাম বাট নো মেসেছ নো কলস? ওর কী এখনো মন খারাপ? একটা কল করলে কী হয়? দূর! মুড অফ করে ফোনটা রেখে দিলাম। আপি বলল
.
– সবসময় ও কেনো কল মেসেজ করবে নিজেও তো করতে পারিস?
– আমি?
.
– তো কী আমি?
.
– আপি ঘুম পাচ্ছে মাথায় বিলি কেটে দাও!
.
– তুইও না।
.
বলেই আপি বিলি কাটতে লাগল আর আমি আদ্রিয়ানের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
আজ শুক্রবার ভাবলাম আজ বেশ অনেকক্ষণ ঘুমোবো কিন্তু সেটা আর হলোনা কারণ আজ নাকি আমার হোল ফ্যামিলি খালামনিদের বাড়িতে যাবে, তাই আমাকে ভোর বেলাই উঠতে হলো। আপির একটা প্রোগ্রামে যেতে হবে তাই আপি যাবেনা আর আমার মুড ঠিক নেই তাই আমি ঠিক করেছি আমিও যাবোনা। আমার একা বাড়িতে থাকা নিয়ে আম্মুর ঘোর আপত্তি থাকলেও আমার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হলো ওনারা ভোরবেলাই বেরিয়ে গেলো। পরে রইলাম আপি আর আমি। কিছুক্ষণ পরে আপি আর আমি ব্রেকফাস্ট করতে বসলাম। আম্মু আজকের সারাদিনের জন্য খাবার রান্না করে হট বক্সে রেখে গেছে।
.
কিন্তু সকাল থেকেই কিছু জিনিস ভাবাচ্ছে আমাকে, আপির বলা কথা গুলো শোনার পর কিছু প্রশ্ন গভীর ভাবে আমার মনে নাড়া দিচ্ছে। আমি আদ্রিয়ানের লাভ এট ফার্সট সাইট? কিন্তু কীভাবে? আদ্রিয়ানের সাথে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয় সেদিন কিন্তু ওর চেহারায় তেমন কোনো রিয়াকশন ছিলোই না। জীবনে প্রেম না করলেও এটুকু বুঝি যে প্রথম কাউকে দেখে প্রেমে পড়লে সাথে সাথেই চেহারা এতোটা স্বাভাবিক করা যায়না। ওয়েট আ বিট! সেদিন আমি আদ্রিয়ানকে প্রথম দেখেছিলাম তারমানে তো এটা না যে ওও আমায় সেদিনি প্রথম দেখেছে? তখনি আপির ডাকে ভাবনায় ছেদ পরে
– কীরে? খাওয়া ছেড়ে কী ভাবছিস?
.
– কিছুনা আসলে আপি আদ্রিয়ান বলেছে আমি ওর লাভ এট ফার্স্ট সাইট।
.
– ওহ.. কীহ! সেটা কীভাবে সম্ভব?
.
– সেটাইতো? ফার্সট মিটে ওকে দেখে আমার সেরকম কিছুই মনে হয়নি!
.
– আরে গাধি সেদিন তুই ওকে প্রথম দেখেছিস ও তোকে না। ও তো তোকে প্রথম দেখেছে এই বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্হায়।
.
আপির কথায় আমার হুস এলো। তাইতো? আমিতো ভুলেই গেছিলাম! তারমানে সেদিনি..হটাৎ করে আপি বলল
.
– হয়তো সেদিনি তোর প্রেমে পরেছে?
.
– হয়তো!
.
– অাচ্ছা তোরকি সত্যিই মনে হয় আদ্রিয়ানের প্রতি তোর কোনো ফিলিংস নেই?
– সত্যি বলতে ওর জন্য আমি ফিল করি কিন্তু সেই ফিলিংসটার নাম ভালোবাসা কী না সেটা বুঝে উঠতে পারছিনা!
.
– বোঝার চেষ্টা করেছিস?
.
– করেছি অনেকবার করেছি কিন্তু..
.
– কিন্তু কিছু প্রশ্ন তোর আর বুঝতে পারার মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়িয়ে অাছে। রাইট?
.
আমি হ্যা বোধক মাথা নাড়লাম!
.
– আদ্রিয়ান তোকে সত্যিকারের ভালোবাসে এটাতো মানিস?
.
– হুম
.
– তাহলে একটা কাজ কর আপাদত কিছুদিনের জন্য এই প্রশ্ন দ্বিধা গুলো সরিয়ে ফেল মন থেকে। আর শুধু ওকে নিয়ে ভাব!
.
– মানে?
.
– মানে কী হয়েছে কেনো হয়েছে এসব ভুলে যা। আর শুধু ওর কথা ভাব। তাহলেই তুই বুঝতে পারবি ওর প্রতি তোর যেই অনুভূতিটা আছে এটা ভালোলাগা না ভালোবাসা!
.
– কীভাবে?
– ভালোলাগা আর ভালোবাসা দুটোতেই প্রিয় মানুষটাকে পাওয়ার ইচ্ছা থাকে, একটা চাওয়া থাকে। কিন্তু সেই চাওয়ার ধরণটা থাকে ভিন্ন। তুমি যদি কাউকে তোমার মতো করে চাও তাহলে তাকে তোমার ভালোলাগে, কিন্তু যদি তাকে তুমি তার মতো করে চাও তবেই তুমি তাকে ভালোবাসো।
খেয়াল করে দেখবে যে তুমি ওর চিন্তায় থাকতে চাও, নাকি ওকে নিজের চিন্তায় রাখতে চাও? যদি তুমি কাউকে তোমার চিন্তায় রাখতে চাও তাহলে তোমার তাকে ভালোলাগে কিন্তু তুমি যদি কারো চিন্তার মধ্যে থাকতে চাও তাহলে তাকে তুমি ভালোবাসো!
.
আমি আপির কথাগুলো একধ্যানে শুনছি, আপি আবার বলল
.
– ভালোলাগায় স্বার্থ লুকিয়ে থাকে আর ভালোবাসা নিস্বার্থ হয়। ভালোলাগায় কারণ থাকতে হয় কিন্তু ভালোবাসা সমস্ত কারণের উর্ধে!
ভালোবাসার মানুষের কাছে তুমি নিজেকে মুক্ত মনে করবে, কিন্তু ভালোলাগার মানুষের কাছে তুমি অজান্তেই কোথাও না কোথাও বাধা পরে যাবে।
কাউকে ভালোলাগলে তুমি নিজে থেকেই তার কথা ভাবতে থাকবে, আর কাউকে ভালোবাসলে সে তোমার অজান্তেই তোমার ভাবনায় চলে আসবে।
ভালোলাগা যুক্তি নির্ভর ওকে যুক্তি ছাড়া বোঝানো যায়না কিন্তু ভালোবাসা সেটা সকল যুক্তির উর্ধে, তাকে কোনো যুক্তি তর্ক দিয়ে বোঝানো যায়না।
আমি হা করে আপির কথা শুনছি সত্যিই ভালোলাগা আর ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য এক চুল পরিমাণ যেটা খালি চোখে বোঝা যায়না। তারপর আমি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম
.
– বাহবা তুমিতো ভালোবাসা নিয়ে PhD করেছো দেখছি? কী ব্যাপার? সত্যিই সিঙ্গেল নাকি কিছু চলে?
.
– কিছু চললে তুই আগে জানতে পারতি! (মুচকি হেসে)
.
– হুমমম সেটা জানি। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে কোনটা হচ্ছে বলোতো?
.
– শোন আমি তোকে দুটোর মধ্যে পার্থক্য বলে দিয়েছি কিন্তু তোর ক্ষেত্রে কোনটা হচ্ছে সেটা তোকেই খুজে বের করতে হবে।
.
– হুম।
.
– কিন্তু তার জন্য তোর মনের দ্বিধা দন্দ গুলো আপাদতো সাইডে রাখতে হবে। বুঝলি?
.
– হ্যা
– আচ্ছা আমি এখন আসি হ্যা। সাবধানে থাকবি!
.
– ওকেহ বাই
.
– বাই।
.
আপি চলে গেলো আর আমি দরজা লাগিয়ে আপির বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে ফোনটা চেক করলাম। যাহ বাবা! এখনো নো মেসেজ নো ফোন? এটা কী হচ্ছে? দূর ভাল্লাগেনা। এসব ভেবেই ফেসবুকে গেলাম। দেখি বাবু সাহেবের রিকোয়েস্ট এখনো পেন্ডিং। কালকেইতো আমার আইডি ঘাটলো তখন নিজেরটা একসেপ্ট করলেই পারতো? মেসেজ রিকোয়েস্ট আছে দু একটা গিয়ে চেক করে দেখি আদ্রিয়ানের মেসেজও আছে চারদিন আগের মেসেজ? হায় আল্লাহ আমিতো চেক ও করিনি তাড়াতাড়ি ওপেন করে দেখি
.
” accept kora na kora it’s up to you.. jekhane asol jinistai pending sekhane id r ki?”
কেনো জানি একটু খারাপ লাগল মেসেজটা দেখে। নাহ রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করেই ফেলি পেন্ডিং রাখাটা আর আর ঠিক হবেনা। তাই কনফার্ম করে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ ওর আইডাটা ঘাটলাম। কিন্তু কমেন্টস চেক করিনি কেনো জানি ইচ্ছে করলোনা একা একা বোর হচ্ছি। মাথাটাও ব্যাথা করছে তাই কিচেনে গেলাম। এরপর ঠিক সেভাবেই কফি বানালাম যেভাবে আদ্রিয়ান শিখিয়েছে। অাবারো হাসি ফুটে উঠল মুখে। রুমে গিয়ে ভাবলাম আচ্ছা আপিতো ঠিকি বলেছে সবসময় ওই কেনো ফোন করবে? আমিওতো করতে পারি। এটা ভেবেই ফোনে আদ্রিয়ানের নাম্বারটা বের করলাম ডায়াল করতে গিয়েও প্রথমে থেমে গেলাম। পরে কিছু না ভেবেই ডায়াল করলাম। একটু বাজার পর কেটে দিলো। আজব কাটল কেনো? রাগ করে আছে নাকি? একটু পরেই ফোন বেজে উঠল। ও এই ব্যাপার তা আমার ফোনে কী ব্যালেন্স ছিলোনা নাকি? আমি ফোনটা রিসিভ করতেই বেশ খুশি খুশি কন্ঠেই বলল
.
– হেই, আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে? তুমি নিজে ফোন করলে আমায়।
.
– ওহ ভুল করে ফেলেছি না? আচ্ছা রাখছি।
.
– এক থাপ্পড় মারবো আমি সেটা বলেছি?
.
– তো কি বললেন?
– মিস করছিলাম তোমায়!
.
– হুম সেইজন্যই তো কাল থেকে নো মেসেজ নো কল।
.
– আসলে মনটা খারাপ ছিলো! এই তুমিকি আমার ওপর রাগ করেছো? ওই গার্লফ্রেন্ড, বউরা যেমন করে?
.
– হয়তো !
.
– তাই? তা বউয়ের রাগটা কী করলে ভাঙবে?
.
– ভেঙ্গে গেছে আপনার ভয়েজ শুনে
.
– আর ইউ ওকেহ? মানে জ্বর আসেনি তো? তুমি এসব বলছো?
.
– কেনো? বলতে পারিনা?
– নাহ বাট কোনো কমপ্রমাইস করছোনা তো? কালকের ওই ব্যাপারটার জন্য? দেখো অনি কাল আমি একটু বেশিই আপসেট হয়ে গেছিলাম তাই বলে ফেলেছি ওসব, তুমি এগুলো নিয়ে ভেবোনা। নিজের ওপর চাপ দেয়ার কোনো দরকার নেই। টেইক ইউর টাইম! কোনো কম্প্রমাইসিং এর দরকার নেই।
.
– আমি কখনো কম্প্রমাইস করিনা। করার হলে তখনি করতাম যখন আপনি আমাকে জরিয়ে ধরে কাদছিলেন। যা বলছি মন থেকেই বলছি!
.
– আর ইউ সিওর?
.
– একদম। তা ব্যাস্ত আছেন, ফোন করে ডিসটার্ব করলাম?
.
– আই উইস এভাবে রোজ তুমি আমাকে ডিসটার্ব করতে!
.
আমি কিছুই বললাম না খালি হাসলাম। উনি আবার বলল
.
– কী করছো?
– কফি খাচ্ছি! নিজে বানিয়েছি!
.
– ওয়াও! আমার ট্রেইনিং কাজে লাগল তাহলে? বাড়িতে কেউ নেই?
.
– নাহ সবাই খালামনি দের বাড়ি গেছে। আর আপি তার ফ্রেন্ডের বাড়ি গেছে।
.
– ওহ তো আমাকে নিজে থেকে ফোন করলে যে? কোনো কারণ নাকি মিস করছিলে আমাকে?
.
আমি চুপ করে আছি সেটা দেখে ও বলল
.
– কী হলো বলো?
.
– সত্যি বলবো?
– বললে সত্যিই বলো?
.
– করছিলাম হয়তো!
.
– যাক তাহলে মিস তো অন্তত করছিলে এটাই অনেক!
.
-এক কাজ করো ল্যাপটপে ডেটা অন করো আমি ভিডিও কল দেবো!
.
– আচ্ছা
.
তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ খুলে ডেটা অন করলাম কেনো জানি আজ আমার মধ্যেই একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও কল দিলো আমি তাড়তাড়ি নিজেকে ঠিক করে রিসিভ করলাম। কিন্তু রিসিভ করার সাথে সাথেই আমার সব খুশি গায়েব হয়ে গেলো। ও বলল
– কী হলো বেইবি? হাসিটা হাওয়া হয়ে গেলো কেনো?
.
আমিতো অবাক হয়ে ওকে দেখছি। কী হাল করেছে নিজের? চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, চুলগুলো আজকেও এলোমেলো, কালকেও ও এভাবে এলোমেলো ছিলো কিন্তু সেটা রাগের কারণে। কিন্তু আজকে শুধুই বিষন্নতা দেখছি আমি! কিন্তু তবুও মুখে একটা হাসি লেগে আছে এটা সত্যিকারের হাসি। হয়তো আমার এইটুকু করাতেই ওর মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু ওর এই কষ্টের কারণ শুধু আমি? ওকে এভাবে দেখে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরল। ব্যাপারটা হয়তো ও বুঝতে পারলো। তাই বলল
.
– আরে পাগলি কাদছ কেনো? আ’ম অলরাইট! আসলে কালকে রাত জেগে কাজ করেছিতো তাই মুখ চোখ এমন হয়ে আছে, এরকম মাঝেমাঝেই হয়। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!
.
ওর কথা শুনে আমার কান্না থামার বদলে বেরে গেলো। ও এবার বলল
.
– ইউ নো অনি আজকে আমিও মটু পাতলু দেখেছি। নট ব্যাড! আরেকটা জিনিস ভাবলাম।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। উনি আবার বললো
.
– জাবিন এর জন্য ওরাই ঠিক আছে। একদম পারফেক্ট। কিন্তু সমস্যা একটাই কাকে সিলেক্ট করি? মোটকাকে নাকি পাতলা টা কে? আইডিয়া দেওনা!
.
– আপনি জাবিনকে মটু বা পাতলুর সাথে বিয়ে দেবেন?
.
– কেনো না? ওর এমনিতেই শখ হিরোয়িন হওয়া! আর ভেবে দেখ মটু বা পাতলুর বউ হলে কতো ফেমাস হয়ে যাবে? কত কার্টুন পাগলী ছেকা খাবে সেটাই ভাবছি!
.
আমি আর না হেসে পারলাম না ফিক করে হেসে দিলাম। আমার হাসি দেখে ওও একটা প্রশান্তির হাসি দিলো। আমি হাসতে হাসতে বললাম।
.
– সেই কার্টুন পাগলীদের মধ্যে কিন্তু আমিও আছি!
.
উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন।
.
– সিরিয়াসলি?
.
– হুম।
.
– এটাই দেখা বাকি ছিলো!
.
– আরো অনেক কিছুই বাকি আছে!
এভাবেই কিছুক্ষণ কথা বলে কথা বলে রেখে দিলাম। ভালো লাগছে এখন। টেডিটাকে জরিয়ি চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। হঠাৎ মাথায় এলো সেই প্রশ্ন গুলো। আচ্ছা আদ্রিয়ান যদি আমাদের বাড়িতেই আমাকে প্রথম দেখে থাকে তাহলে সেদিন থেকেই ও আমাকে ভালোবাসে? এক সেকেন্ড! আপি বলেছিলো সেদিন ও আমার মাথায় হাত বুলিয়েছিলো, এমনকি কপালে কিস করতে গেছিলো! কিন্তু প্রথম দেখায় যতই ভালোলাগুগ না কেনো একটা মেয়ের এতো কাছে যাওয়া যায়? তাও আদ্রিয়ানের মতো ছেলে? এতটাই আবেগ প্রবন হয়ে গেছিলো? এটাও সম্ভব? আর ওকে যখন মেডিকেলে দেখলাম তখন কেনো ওমন বিহেভ করছিলো যে আমাকে চেনেই না। এরপর যতবার দেখা হয়েছে কেনো বলেনি ও আদ্রিয়ান? আর ওকে এই বাড়িতে দেখাটাও একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। সেদিন যদি আমি মেডিকেল যেতাম তাহলেতো আমি জানতেই পারতাম না AD ই আদ্রিয়ান। তাই বলতে গেলে ওর আসল পরিচয়টা আমি এক্সিডেন্টলি জেনে গেছি। এনগেইজমেন্ট এর ব্যাপারটাও হাইড করা হলো আমার থেকে। উফ আপি বলেছিলো এসব আপাদত না ভাবতে কিন্তু আমার মাথায় বারবার এসবি আসছে।
মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার এসব ভেবে। আচ্ছা সবটা কি এতোটাই স্বাভাবিক যতটা দেখে মনে হচ্ছে? কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।
মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার এসব ভেবে। আচ্ছা সবটা কি এতোটাই স্বাভাবিক যতটা দেখে মনে হচ্ছে? কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। সব ঘোলাটে লাগছে। মনে হচ্ছে কোথাও একটা গন্ডগোল তো আছে। কিন্তু কী? আচ্ছা আমিকি বেশিই ভাবছি? মে বি! হয়তো আমিই ব্যাপারটাকে জটিল করছি। হয়তো তেমন কোনো কারণ নেই এসবের পেছনে আমিই বেশি পাকাচ্ছি। হ্যা আমিই বেশি ভাবছি! আপি ঠিকিই বলেছে এসব আপাদত ভুলে যেতে হবে। এসব ভেবেই ঘুমিয়ে পরলাম। আমি এমনি দিন রাত সময় অসময় নেই আমি যেকোনো জায়গায় আরামসে ঘুমিয়ে যেতে পারি, শুধু মাথা রাখার জন্য একটা জায়গাই যথেষ্ট।
ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটনে খুব বিরক্তি নিয়েই আমি ফোনটা সামনে আনলাম কিন্তু নামটা দেখে বিরক্তি আরো বাড়লো কারণ কলটা আম্মু করেছে। এখন নিশ্চিত আম্মুর ভাঙ্গা রেকর্ডার চালু হবে! রিসিভ করে বললাম।
.
– হ্যালো আম্মু?
.
– হ্যা কী করছ?
.
– আপাদত তোমার ভাঙ্গা.. আই মিন তোমার সাথে কথা বলছি।
.
– সেটা আমিও দেখেছি লান্চ করেছো?
.
– নাহ!
.
– কটা বাজে খেয়াল আছে? এখনো লান্চ করোনি কেনো?
.
– ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
.
– এই অবেলায় কেউ ঘুমোয়?
– কোথায় লেখা আছে যে ঘুমটা রাতের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি?
.
– এই কথা পেচাবেনা একদম। যাও গিয়ে গোসল করে খেয়ে নাও।
.
– আচ্ছা বাই
.
– আরে..
.
কেটে দিলাম নইলে সেই একি পেচাল শুরু করবে! তারপর কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে আস্তে আস্তে উঠে গোসল করে, নামাজ সেরে লান্চ টাও করে নিলাম। এরপর পড়তে বসলামে একটু। ঘন্টা দুই পড়ার পর টাইম দেখলাম সারে পাঁচটা বাজে, আপিরো আসতে দেরি হবে। আদ্রিয়ানের কথা মনে পড়ছে হঠাৎ ওর ভয়েজটাও শুনতে ইচ্ছে করছে খুব। ফোনটা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করে ওকে কল দিয়ে দিলাম। যথারীতি কলটা কেটে নিজে ব্যাক করল। খুব বিরক্ত হলাম। এমন করার কী দরকার। তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললাম।
– আসসালামুয়ালাইকুম।
.
– ওয়ালাইকুমাসালাম। কী ব্যাপার? আজকে খুব বেশিই মিস করছো বোধ হয়?
.
– ততেমন কিছু নাহ।
.
– ও তার মানে মিস করছিলে না?
.
– সেটা কখন বললাম?
.
– তার মানে মিস করছিলে?
.
– সেটাও বলিনি।
.
– তাহলে কী বললে শুনি?
.
– একা একা ভালোলাগছিলো না তাই..
.
– তাহলে যেতেই পারতে ওদের সাথে
.
– ইচ্ছে ছিলোনা।
.
– খুব বেশি একা লাগছে?
.
– হুম
– তাহলে দরজাটা খোলো।
.
– কেনো? ( অবাক হয়ে)
.
– খোলোই নাহ।
.
– আপনি..
.
তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই চমকে গেলাম আদ্রিয়ান ওর সেই কিলার স্মাইল দিয়ে দাড়িয়ে অাছে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। ও ভ্রু নাচিয়ে বলল
.
– কী সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো?
.
– horrible!! আপনি মানে এখন এখানে?
.
– ভেতরে যেতে দেবেনা নাকি?
.
আমি তাড়াতাড়ি সরে দাড়ালাম। উনি ভিতরে ঢুকে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বললেন
.
– আসলে আঙ্কেল ফোন করে বলল ওনারা আজ আসতে পারবেনা। রাতে হিয়া আর তুমি একা থাকবে বাসায় তাই আমি চলে এলাম। জাবিন, রিয়া, আদিব, ইশরাক ও আসছে।
– আপনারা রাতে থাকবেন এখানে?
.
– ইয়েস বেইবি!
.
– ওহ কখন আসবে ওরা?
.
– সন্ধ্যার পরে।
.
– ওহ।
.
– ততোক্ষণ আমরা রোমান্স করি। (চোখ মেরে)
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকতেই ও বলল
.
– আরে আমিতো মজা করছিলাম এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো?
.
– আপনি যেমন আপনার মজাও ঠিক তেমন।
.
এটা শুনে উনি হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে ওনার কোলে বসিয়ে দিলো, তারপর আমার কোমর জরিয়ে ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলল
.
– আমি কেমন?
আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
.
– জজানিনা
.
উনি আমাকে আরো নিজের দিকে টেনে বলল
.
– সত্যি জানোনা?
.
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম। সেটা দেখে উনি মুচকি হেসে আলতো করে আমার গালে কিস করলো। আমি চোখ বন্ধ করে ওনার টিশার্ট খামচে ধরলাম। এরপর উনি আমার চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে কপালে আলোতো করে ঠোট ছোয়ালো। এরপর কানে ঠোট ছুইয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
.
– I Love you!
আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি। ঠিক তখনি কাশির আওয়াজে দুজনেরি হুস এলো তাড়াতাড়ি তাকিয়ে দেখলাম। ‘ আদিব ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়া, জাবিন, রিয়া সব্বাই দাঁড়িয়ে হাসছে। এতক্ষণে খেয়াল করলাম আমি আদ্রিয়ানের কোলে বসে আছি আর আদ্রিয়ান আমার কোমর জরিয়ে রেখেছে। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি আমার কোমর ছেড়ে দিলো আর আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালাম, আদ্রিয়ান ও দাড়িয়ে গেলো।
.
আদিব ভাইয়া: ভাই রোমান্স করবি ভালো কথা! দরজাটা লাগিয়ে তো নিবি।
.
ইশরাক ভাইয়া: সেই! কী সুন্দর খোলা ড্রয়িংরুমে বসে রোমান্স করছে।
.
জাবিন: কেস যে এতোদূর এগিয়েছে আমরাতো জানতামি নাহ!
.
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেরে বলল
.
আদ্রিয়ান: তোরা এখন? তোদেরতো সন্ধ্যার পরে আসার কথা ছিলো রাইট?
.
আদিব: এসে ডিসটার্ব করলাম তাইনা?
.
আদ্রিয়ান: বাজে কথা বাদ দিয়ে বস।
সবাঈ বসে আড্ডা দিতে লাগল। আর আমি এখনো লজ্জাটা কাটিয়ে উঠতে পারছিনা। কী ভাবলো ওরা এ অবস্হায় দেখে। কিন্তু ওই খাটাশটা কী সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে বসে গল্প করছে যেনো কিছুই হয়নি, এর মধ্যেই আপিও চলে এলো। এসে বলল
.
আপি: আরেহ তোমরা এসে গেছো! ফুপা ফোন করে বলেছিলো তোমারা থাকবে আজকে তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম।
.
আদ্রিয়ান: যাও আগে ফ্রেশ হয়ে এসো তারপর কথা বলি।
.
আপি: হ্যা তোমরা গল্প করো আমি এখনি আসছি।
.
আপি চলে গেলো আর ওরা আবার গল্প করতে লাগল আর আমি এলিয়েনের মতো চুপচাপ বসে ওদের কথা শুনছি। কিছুক্ষণ পর আপিও চলে এলো। এসে আপিও জয়েন করল। কিছুক্ষণ পর আদিব ভাইয়া বলল
.
আদিব ভাইয়া: ভাবি প্লিজ পাকোরা আর কফি খেতে ইচ্ছে করছে, বানিয়ে আনো।
আদ্রিয়ান ফিক করে হেসে দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: ও বানাবে পাকোরা? তাহলেই হয়েছে !
.
আমি: দেখুন একদম লেগপুল করবেননা আমি এখন কফি বানাতে পারি। আপনিই তো সেদিন…
.
বলেই জিবে কামড় দিলাম। আর আপি বলল
.
– এইজন্যেই তো বলি যে মেয়ে কিচেনের ধারে পারে যায়না সে কফি কিকরে বানালো।
.
এই নিয়ে সবাই একদফা হাসি ঠাট্টা করল আর আমি অবোধ বালিকার মতো বসে রইলাম। হঠাৎ কলিং বেল বাজল আপি গেলো খুলতে। সজীব আর অর্ণব ভাইয়াও এসছে। এসেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করল।
.
আপি: তোরা চলে এলি যে?
.
সজীব ভাইয়া: তোরা মজা করবি আমি কেনো বসে থাকবো? আর বেশি করে কোলড্রিংকস এনেছি।
আপি: এককাজ করো তোমরা সবাই ছাদে চলে যাও এগুলো নিয়ে আমি পাকোরা আর কফি বানিয়ে আনছি।
.
আদ্রিয়ান: আমিও হেল্প করছি তোমায়!
.
আপি: তুমি রান্না জানো?
.
আদ্রিয়ান: ওই মোটামুটি!
.
আপি: চলো তাহলে দেখি কতদূর পারো!
.
আমিতো অবাক এই ছেলে রান্নাও পারে? আপি আর আদ্রিয়ান চলে যেতেই আমরা সবাই ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে লাইট না জালিয়ে আমরা মম জালালাম। সেই সুন্দর লাগছে পরিবেশটা। ছাদে সবাই গোল হয়ে বসলাম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজা করতে করতে আপি আর আদ্রিয়ানও চলে এলো খাবার নিয়ে। আদ্রিয়ান আমার অপজিটে বসল। সবাই খাওয়া শুরু করলাম, খেতে খেতেই আপি বলল
.
আপি: এগুলা কিন্তু প্রায় সবি আদ্রিয়ান করেছে আমি জাস্ট হেল্প করেছি।
.
আমি অবাক অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে ও লজ্জামিশ্রিত হাসি দিলো। এরপর বেশ ঘন্টাখানেক গল্প করার পর আপি বলল
আপি: আমি তোমাদের জন্য ডিনারের ব্যাবস্হা করছি।
.
আদ্রিয়ান: দরকার নেই। আমি ওর্ডার করে দিয়েছি
.
আপি: তার কী দরকার ছিলো?
.
আদ্রিয়ান: ছিলো! এখন এনজয় করো।
.
আদিব ভাইয়া: আদ্রিয়ান একটা গান করনা
.
ইশরাক: হ্যা এডি গান কর একটা।
.
আপি: আদ্রিয়ান তুমি গানও গাইতে পারো?
.
আদ্রিয়ান: আরেহ না সেরকম নাহ।
.
আদিব ভাইয়া: সেরকম গান করে। আরে গা না।
জাবিন: ভাইয়া গা না। কতোদিন তোর গান শুনিনা।
.
সজীব ভাইয়া: আদ্রিয়ান গাও সবাই বলছে।
.
আমারো খুব লোভ হচ্ছে ওর গান শুনতে তাই বললাম।
.
– সবাই বলছে যখন গান না!
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে একবার তাকিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: গিটার হবে?
.
কাব্য: এখনি আনছি!
.
কাব্য দৌড়ে চলে গেলো গিটার আনতে। আর জাবিন বলল
.
জাবিন: আমরা বলছিলাম হচ্ছিলো না যেই বউ বলল ওমনি রাজি হয়ে গেলো।
.
আমি বেশ লজ্জা পেলাম। কাব্য গিটার নিয়ে এসে আদ্রিয়ানের হাতে দিলো। সবাই নরে চরে বসল আমিও আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। আদ্রিয়ান প্রথমে গিটারে টুংটাং করে আসতে আসতে সুর তুললো তারপর আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করল
Hmmhm hmmhmmm hmmhm hmmmm
hmmhm hmmhmmm hmmhm hmmmm
Dehliz pe mere diki jo rakhi hai tune kadam
Tere nam pe mere zindegi likhdi mere humdam
Ha sikha main ne jina jina kaise jina ha sikha maine jinaa mere humdam
Na sikha kaise jina jina kaise jina na sikha jina tere bina humdam
সবাই তালে তালে তুরি বাজাতে লাগল আর আমি অবাক হোএ ওকে দেখছি। ও আমার দিকে তাকিয়েই গাইল
Hmmhm hmmhmmm hmmhm hmmmm
Sacchi se hai ye tarfein
dilse jo main ne kari hain….
.
Sacchi se ai yeh tarifein
dilse ho main ne kari hain
Jo tu mila hai saji hai
duniya mere humdam..
Asmaa mila jami ko mili adhe adhe pure hai hum
Tere nam pe mere zindegi likhdi mere humdam
Ha sikha maine jina jina kaise jina ha sikha maine jina mere humdam
Na sikha kaise jina jina kaise jina
na sikha kaise jina mere humdam..
hmmhm hmmhmmm hmmhm hmmmm
hmmhm hmmhmmm hmmhm hmmmm…
সবাই জোরে হাততালি দিলো সেই আওয়াজেই আমার ঘোর কাটল। এতো ভালো গান গায় ও? এ ছেলের আর কতো রূপ আছে?
.
রিয়া: খেয়াল করেছো? ভাইয়া কিন্তু পুরোটা গান ভাবির দিকে তাকিয়ে গেয়েছে।
.
সবাই হাসল এই ব্যাপারটা নিয়ে আর আদ্রিয়ানের গানের প্রশংসাও করল, অনেক্ষণ গল্প করে ডিনার করে সবাই চলে গেলাম ঘুমোতে। আমি,আপি আমার রুমে, জাবিন রিয়া আপির রুমে, অর্ণব ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়া, সজীব ভাইয়া এক রুমে আর আদ্রিয়ান, আদিব ভাইয়া এক রুমে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
মাঝরাতে ফোন এলো এসময় কে ফোন করবে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান। পাশে আবার আপি আছে তাই কোনোরকম রিসিভ করে ফিসফিসিয়ে বললাম
.
– হ্যালো!
.
– তাড়তাড়ি ছাদে চলে এসো।
.
– এখন? কেনো?
.
– এসোই না!
.
– আচ্ছা।
যাক আপি টের পায়নি পা টিপে টিপে চলে গেলাম ছাদে গিয়ে দেখি কেউ নেই। আজব ডাকলো কেনো। এদিক ওদিক খুজছি ওকে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরল আমায়। প্রথমে চমকালেও পরে বুঝতে পারলাম এটা আদ্রিয়ান। নিজেকে স্বাভাবিক করে আমি বললাম
.
– ডাকলেন কেনো?
.
– সবাই ঘুমিয়ে আছে তাই ইচ্ছে করল বউয়ের সাথে রোমান্স করি।
.
বলেই আমাকে ছেড়ে ছাদে টেবিল থেকে একটা কফির মগ নিজে নিয়ে এগিয়ে দিলো আমার দিকে। আমি সেটা নিয়ে বললাম
.
– কফিও এনেছেন?
.
– ইয়েস বেবি! আজ রাত দুজন ছাদেই কাটাবো।
.
– মানে? আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমোবো আমি।
.
– সরি বাট আজ তা হচ্ছে না।
.
বলেই রেলিং এর ওপর বসল। আমি ভয় পেয়ে বললাম।
.
– আরে পরে যাবেনতো!
.
– পরবোনা। চাইলে তুমিও বসতে পারো!
– না বাবাহ আমার ভয় লাগে।
.
– এতো ভয়?
.
– হুম।
.
উনি শান্ত গলায় বলল
.
– এতো ভয় নিয়ে ওমন রিস্কি একটা কাজ করতে বুক কাপলোনা।
.
আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– কোন কাজ?
.
– ওইযে ডাক্তারি পরছো। সার্জারি করা কতো রিস্কের তাইনা। ওটাই বলছিলাম।
– ওহ! যেভাবে বললেন। আমিতো ভাবলাম কী না কী ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছি।
.
উত্তরে উনি খালি একটু হাসলো। আমারতো ঘুম পাচ্ছে তাই একটু রাগী মুডে বললাম।
.
– আচ্ছা এতো রাতে এরকম পাগলামীর মানে কী?
.
উনি সুর দিয়ে বললেন
.
– Yeh subha phir ayegi yeh shame phir ayegi
Yeh nasdikiyaan phir kaha? (ভ্রু নাচিয়ে)
.
আমি হেসে দিলাম তারপর রেলিং এ হেলান দিয়ে দাড়লাম। আর ওনাকে দেখতে থাকলাম। চাদের আলো পরছে ওনার মুখে কী সুন্দর লাগছে যেনো কোন এন্জেল। উনি উপরের দিকে তাকিয়ে বলল
– আমাকে দেখছো?
.
আমি থতমত খেয়ে বললাম
.
– কই নাতো!
.
উনি হালকা হেসে কফির মগে তাকিয়ে বলল
– Again lying..
.
তারপর আবার ওপরে তাকালো আর বলল।
.
– চাঁদটা কত সুন্দর তাইনা?
.
– হুম। ভীষণ
– কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানো চাঁদ এতো সুন্দর হলেও ওর গায়ে কলঙ্ক থাকে। কিন্তু তবুও ওর আলোক সৌন্দর্যের এতোই ক্ষমতা যে ওর কলঙ্ক সহজে কারো চোখে পরেনা। সেটা চাঁদের বিচক্ষণতা নাকি যারা দেখছে তাদের মুর্খতা সেটা একটা প্রশ্ন!
.
আমি অবাক হয়ে শুনছি ওনার কথা ওনার কথার কিছুই আমার মাথায় ঢুকছেনা।
– কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানো চাঁদ এতো সুন্দর হলেও ওর গায়ে কলঙ্ক থাকে। কিন্তু তবুও ওর আলোক সৌন্দর্যের এতোই ক্ষমতা যে ওর কলঙ্ক সহজে কারো চোখে পরেনা। সেটা চাঁদের বিচক্ষণতা নাকি যারা দেখছে তাদের মুর্খতা সেটা একটা প্রশ্ন!
.
আমি অবাক হয়ে শুনছি ওনার কথা ওনার কথার কিছুই আমার মাথায় ঢুকছেনা। হঠাৎ এসব কেনো বলছেন উনি? আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– মানে?
.
– ভুল বললাম?
.
– নাহ বাট এতো সিরিয়াস মুডে বলার কী ছিলো?
.
– কথাটাই তো সিরিয়াস। কেনো ভয় পেয়েছো?
.
– ভয় পাবার কী আছে!
.
– সেটাই।
বেশ কিছুক্ষণ দুজনে চুপ ছিলাম। তারপর হঠাৎ আদ্রিয়ান রেলিং থেকে নেমে আমাকে কোলে উঠিয়ে নিলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কী করছে ও? ও আমাকে রেলিং এ বসিয়ে দুই বাহু ধরল। আমি এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে তারপর বলল
.
– এখন যদি তোমাকে ফেলে দেই নিচে?
.
– জানি ফেলবেন না। (মুচকি হেসে)
.
– এতো বিশ্বাস?
.
– এই কয়দিনে এতোটুকুতো চিনেছি!
.
উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে দিলেন। তারপর আমাকে নামিয়ে বললেন
.
– কিছু খাওনা না নাকী? এই অবস্হা কেনো ওজনের!
.
– মোটেই না আমার ওজন ঠিকঠাকই আছে!
.
– ঘন্টা! তোমার চেয়ে আমার ডামবেলের বেশি ওজন!
– হুহ।
.
– কফিটা শেষ?
.
– হুম
.
– মগটা দেও
.
আমি ওনাকে মগ দিতেই উনি মগগুলো নিয়ে টেবিলে রাখতে গেলো আর আমি রেলিং ধরে দাড়িয়ে হাওয়াটা ফিল করতে লাগলাম। আমার পরনে টিশার্ট আর প্লাজো ওপরে একটা চাদর জরিয়ে এসছি! হঠাৎ উনি আমার পেছনে দাড়িয়ে আমার দুই হাতের ওপর দিয়ে রেলিং এ হাত রাখল। তারপর বলল
– এখনো ঘুম পাচ্ছে?
.
– নাহ ঘুম অনেকটাই কেটে গেছে।
.
উনি কাধের কাছ থেকে চাদরটা হালকা সরিয়ে একটা কিস করল আমি চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য পাশে গিয়ে দাড়ালাম। উনি এবার এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে বলল
.
– সবসময় এভাবে পালাও কেনো আমার থেকে?
.
এটা বলে উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। তাকিয়ে দেখি উনি হাতা কাটা নীল একটা গেন্জি পরা, আরেহ একটু আগেতো কালো ফুল হাতা গেন্জি পরা ছিলো! আমি অবাক হয়ে বললাম।
– আপনার গেন্জি কোথায় ?
.
– খুলে রেখেছি!
.
– এই শীতের মধ্যে? এলিয়েন নাকি আপনি?
.
– তেমনি কিছুই।
.
– হ্যা সে তো বোঝাই যায়। মাঝে মাঝে মাথায় পাগল ভর করে।
.
উনি আলতো আমারে কোমরে হাত রাখল। সাথে সাথে আমার শরীরে 440 ভোল্টের ঝটকা লাগল। এটা ওনার প্রথম স্পর্শ না কিন্তু তবুও কিছু একটা আছে এই ছোয়ায় যেটা আমাকে কাপিয়ে দিচ্ছে। এরপর আমার কপালের মাঝখানে গভীরভাবে একটা চুমু দিলো। তারপর আমার দুই গালে হাত রেখে কপালে ওনার কপাল ঠেকিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো আমিও চোখ বন্ধ করে আছি নিজের অজান্তেই ওনার পেটের দুপাধে হাত চলে গেলো আমার! এভাবে কতক্ষণ ছিলাম নিজেরাও জানিনা। হঠিৎ উনি আমার চুলের রিবন খুলে দিলো তার নেশাক্ত কন্ঠে বলল
– তোমার চুলের ঘ্রাণে একটা নেশা আছে। যেই নেশায় সারাদিন ডুবে থাকা যায়। তোমার চোখে চোখ পরলে যখন তুমি চোখ নামিয়ে নেও তখন সেই নামিয়ে নেয়া চোখেই আমি হারিয়ে যাই। আমার হালকা স্পর্শেও যখন তোমার গাল লাল হয়ে ওঠে তখন সেই গালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দেয়া থেকে নিজেকে আটকাতে পারিনা। আমার ছোয়ায় যখন তুমি চোখ বন্ধ করে নেও সেটাও আমাকে মোহিত করে। ইউ নো তোমার সবকিছুই আমাকে অদ্ভুতভাবে টানে।
আমি এখনো চোখ বন্ধ করেই ওনার কথা শুনছি। ওনার বলা প্রতিটা শব্দ আমার হৃদপিন্ডে জোরে জোরে আঘাত করছে। হারিয়ে ফেলছি আমি নিজেকে ওনার মধ্যে। এটাই কী ভালোবাসা? সেটা বুঝতে না পারলেও এটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পরেছি।
উনি হঠাৎ আমার বন্ধ ডান চোখের পাতায় কিস করল, আবারো কেপে উঠলাম, হার্ট ভিষণ জোরে বিট করতে লাগল। আমি ওনার কাছ থেকে সরে যেতে চাইলে উনি আমার হাত ধরে আটকে দিলেন। তারপর পেছন থেকে আমার দুই হাতের ওপর হাত রেখে জরিয়ে ধরলেন আমায়। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে স্লো ভয়েজে বলল
– নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে আর কত পালাবে? মস্তিষ্ক খুব স্বার্থপর হয় তাই সে সুখ দিলেও শান্তি দিতে অক্ষম, কিন্তু মন নিঃস্বার্থ হয়ে কাজ করে, তাই সেটা আর কিছু দিতে পারুক আর না পারুক শান্তি দিতে পারে। তাই একবার মনের কথা শুনে দেখতে পারো।
.
বলেই চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নিতে থাকলো, আমার আজ কী হচ্ছে আমি নিজেও জানিনা গভীরভাবে আটকা পরে যাচ্ছি আমি ওর কথার জালে। এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আমার।
হঠাৎ ও আমার কাধের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওনার মুখ দিয়ে স্লাইড করতে লাগল। আমি আবারো হাই ভোল্টেজের শক খেলাম। ওনার এক হাত আমার পেটের ওপরে আছে আমি শক্ত করে সেই হাত চেপে ও ধরলাম। ক্রমেই ওর স্পর্শগুলো গভীর হতে থাকলো। কিন্তু আমিতো আর নিতে পারছিনা। এর আগে ওর এর চেয়ে ভয়ংকর স্পর্শ আমি সহ্য করে নিয়েছি কিন্তু আজ পারছিনা। এটার কারণকি ওর প্রতি জন্মানো আমার অনুভূতি নাকি অন্য কিছু? নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি আমি মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো
– আদ্রিয়ান প্লিজ ছাড়ো।
.
কথাটা বলে আমি নিজেও চমকে গেলাম। আদ্রিয়ানেরও হাত আলগা হয়ে গেলো, আমাকে ছেড়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে। আমিও আহাম্মক হয়ে গেছি, নিজের অজান্তেই কিভাবে তুমি বেরিয়ে গেলো মুখ থেকে । উনি অবাক হয়েই বলল
.
– তুমি আমায় তুমি করে বললে?
.
– আসলে ভুলে বেরিয়ে গেছে। সরি!
.
এবার উনি আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে অদ্ভুত এক চাহনী দিয়ে বলল
.
– ভুল করেছো শাস্তিতো দেবোই!
.
ওনার চাহনি আর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো একটা ঢোক গিলে বললাম
.
– ককী শাস্তি?
.
– তোমাকে..
.
– আমাকে?
.
– তোমাকে আমায়..
আমি এবার করুন চোখে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমার দিকে ঝুকে আসতেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি আমার কানে ঠোট ছুইয়ে বলল
.
– তোমাকে আমায় আজ থেকে তুমি করেই বলতে হবে!
.
আমি চোখ খুলে তাকালাম ওনার দিকে উনি হেসে বলল
.
– কী বলবে তো?
.
– আজ থেকেই?
.
– হুম। নাকি আজও এক্সকিউস দেবে? শাস্তি মেনে নেবার সৎ সাহস নেই?
.
– ওকে ডান! শাস্তি যখন দিয়েছেন তখন তো মেনে নিতেই হবে। ( মুচকি হেসে)
.
– দ্যাট মিনস আমাকে তুমি করে বলবে?
– নাহ।
.
– কীহ একটু আগেই তো বললে বলবে?
.
– আমিতো মজা করছিলাম
.
– ওহ!
.
বলেই আমাকে ছেড়ে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলাম বাবু সাহেব রাগ করেছে। হঠাৎ আমার কী হলো কে জানে? আমি দুষ্ট হেসে ওনার হাত ধরে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। উনি ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে! আমি কিছুক্ষণ সেই দুষ্ট হাসি দিয়েই তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। আর উনি ভ্রু কুচকে আছে হয়তো বুঝতে চাইছে ব্যাপারটা কী? আমি আলতো করে জরিয়ে ধরলাম ওনাকে।
হ্যা এই প্রথম আমি নিজে থেকে ওকে জরিয়ে ধরলাম। আমার সাথে কী হচ্ছে আমি জানিনা। কী করছি কেনো করছি বুঝতে পারছিনা। শুধু এটুকু জানি আদ্রিয়ানের সাথে নিজের অজান্তেই আমি জরিয়ে যাচ্ছি যেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নাহ।
.
আদ্রিয়ান এখোনো আমাকে ধরেনি হয়নো এখনো ব্যাপারটা হজম হয়নি। তাই হজমি বরি হিসেবে আমিই ওকে জরিয়ে ধরেই বললাম
– যেটা পারোনা সেটা করতে যাও কেনো? জানো আমার ওপর রাগ করে থাকা তোমার এবিলিটিতে নেই তবুও সেই চেষ্টা করছ ?
.
ও যেনো অবাকের ওপর আরেক দফা অবাক হলো। আমাকে ছাড়িয়ে দুই বাহুতে হাত রেখে বলল
.
– অনি তোমাদের ছাদে ভূত আছে? আগে বলোনিতো?
.
আমিতো অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। পরে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ভ্রুটা অটোমেটিক কুচকে গেলো আমার । সমসময় আমি ওর মুডের বারোটা বাজাই আর আমার মুডের তেরোটা বাজিয়ে এভাবে শোধ নিলো? আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম।
.
– ভূত? এখানে ভুত কোথা থেকে আসবে? আর আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন?
.
ও অবাক হয়েই বলল
.
– কিছুক্ষণ আগে অবধি করতামনা কিন্তু একটু আগে ওটা কী ছিলো?
.
– ও আপনার মনে হচ্ছে আমার ওপর ভূত ভর করেছে? তাই আমি এসব করেছি?
– নাহ মানে নইলে তুমি নিজে থেকে আমাকে…
.
এবার বেশ রাগ লাগল আমায় লেগপুল করছে? তাই রেগেই বললাম
.
– কেনো আপনি তো আমার ফিয়ন্সে, আমি আপনাকে জরিয়ে ধরতেই পারি তুমি করে বলতেই পারি। সো হোয়াট? এতো রিয়াক্ট করার কী হলো?
.
– আরেব্বাস ভুতের মুখে রাম নাম?
.
– ভূত যদি নিজেই ভূতের খপ্পরে পরে তখন তো রামই ভরসা।
.
এতোক্ষণ মজা করলেও এবার আদ্রিয়ান আমাকে কাছে টেনে কানের পিছে চুল গুজে দিয়ে বলল
.
– তুমি টাই ঠিক আছে! আর আপনি বলবেনা ঠিকাছে?
.
– হুম ( মাথা নিচু করে )
– তখনতো জরিয়ে ধরলে এখন ধরবেনা?
.
আমি মাথা নিচু করে না বোধক মাথা নারলাম। ও মুচকি হেসে নিজেই জরিয়ে ধরল আমাকে তারপর বলল
.
– জানো তোমার মাথাটা বুকে রাখলে আমার সব টেনশন সব কষ্ট মুহূর্তেই চলে যায় নিজেকে একদম মুক্ত মনে হয়।
.
– একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
.
– কী কথা?
.
– আপনি আই মিন তুমি বলেছিলে আমি তোমার লাভ এট ফার্স্ট সাইট। কিন্তু কিভাবে? আর প্রথম কোথায় দেখেছো আমাকে? আর তোমারর সাথে দেখা হবার পর নিজের আসল পরিচয় কেনো দেওনি? কেনো বলোনি তুমিই আদ্রিয়ান? আর কেনই বা আমাকেই ভালোবাসলে?
.
মুহূর্তেই আদ্রিয়ানের হাত আলগা হয়ে গেলো আমাকে ছাড়িয়ে শান্ত গলায় বলল
.
– এসব নিয়ে পরে কথা বলব।
– পরে কেনো এখনি শুনি কখন কীভাবে কী হলো আমারো তো জানা দরকার?
.
– বললাম তো সময় হলে জানাবো!
.
– আরেহ এখন প্রবলেম কী সামান্য একটা প্রশ্ন?
.
এবার ও একটু ধমকের সুরে বলল
.
– অনি আমি বললাম তো পরে বলব ফোর্স কেনো করছ?
.
ওর কথায় একটু কষ্ট পেলাম তাই সরি বলে একটু দূরে সরে দাড়ালাম, আর চুপচাপ চাদ দেখতে লাগলাম। সামান্য একটা প্রশ্নই তো করেছি তাই বলে এভাবে রিয়াক্ট করবে? কিছুক্ষণ পর ও এসে আমাকে ওর দিকে ঘোরালো তারপর গালে হাত দিয়ে বলল
.
– সব বলবো তোমাকে কিন্তু সময় এলে। ততোদিন একটু ধৈর্য ধরো!
.
আমি কিছু বলছিনা চোখ নামিয়ে রেখেছি। ও আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
.
– বিশ্বাস করো তো আমায়?
আমি এবার ওর দিকে তাকালাম তারপর হ্যা বোধক মাথা নাড়লাম। ও আমার গালে হাত রেখেই বলল
.
– এতেই হবে! আমি প্রমিস করছি যেদিন সময় আসবে সেদিন সবটা বলবো!
.
আমি এবার একটা মুচকি হাসি দিলাম। ছাদের দেয়ালের সাথে লাগিয়ে বেশ বড় একটা তোষক বেছানো। এই তোষকের ওপরে বসেই আমরা সন্ধ্যাবেলা আড্ডা দিচ্ছিলাম। ও সেই তোষকের ওপর গিয়ে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে হাত দিয়ে আমাকে ইশারা করল যাওয়ার জন্য, আমি ওর পাশে হেলান দিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলাম, দুজনেরি চোখ ছিলো চাঁদের দিকে। আদ্রিয়ান ঠিকি বলেছে চাঁদ এর আলোকশক্তির ক্ষমতা অনেক বেশি তাইতো ওর গায়ের কলঙ্কে সহজে কেউ বুঝতে পারে না।
আদ্রিয়ান হঠাৎ আমাকে ওর বুকে টেনে নিলো। আর আমিও শান্ত ভাবে ওর বুকে মাথা রেখে হার্ডবিট শুনতে লাগলাম। হ্যা মায়ায় পরে গেছি আমি ওর। মনে হচ্ছে ও এক অদ্ভুত ইন্দ্রজালে আটকে ফেলেছে আমাকে যেখান থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে এটুকু বুঝতে পারছি ও আমার মনের মধ্যে এতোটাই জায়গা দখল করে ফেলেছে যে ও কোনো কারণে আমাকে ছাড়লে আমার অনেকটা জায়গা শুন্য হয়ে যাবে, যা আমাকে নিঃস্ব করার জন্য যথেষ্ট । হুমহ! ফেসে গেছি ওর ভালোবাসার জালে!
আদ্রিয়ান হঠাৎ আমাকে ওর বুকে টেনে নিলো। আর আমিও শান্ত ভাবে ওর বুকে মাথা রেখে ওর হার্ডবিট শুনতে লাগলাম। হ্যা মায়ায় পরে গেছি আমি ওর। মনে হচ্ছে ও এক অদ্ভুত ইন্দ্রজালে আটকে ফেলেছে আমাকে যেখান থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে এটুকু বুঝতে পারছি ও আমার মনের মধ্যে এতোটাই জায়গা দখল করে ফেলেছে যে ও কোনো কারণে আমাকে ছাড়লে আমার অনেকটা জায়গা শুন্য হয়ে যাবে, যা আমাকে নিঃস্ব করার জন্য যথেষ্ট । হুমহ! ফেসে গেছি ওর ভালোবাসার জালে! হঠাৎ আদ্রিয়ান বলল
– ফেসে তো তুমি অনেক আগেই গেছো!
.
আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম। আমিতো মনে মনে বলছিলাম! আর ও কোন ফেসে যাবার কথা বলছে? বললো তো বললো তখনি বলল যখন আমি এসব ভাবছিলাম? এটাকি কাকতলীয় নাকি অন্য কিছু? আমি অবাক হয়েই বললাম।
.
– কোথায় ফেসে গেছি? আর কবে ফেসে গেছি?
.
– কিছুনা
.
বলেই আমাকে দুই বাহুতে আকরে ধরে মাথায় একটা চুমু দিলো। আমি খেয়াল করলাম ওর শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। এই শীতে গেন্জিটা খুলতে কে বলেছে? আমি বললাম
.
– শীত লাগছেনা? শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে তো?
.
– লাগছে বাট এখন গেন্জি আনতে কে যাবে?
.
– এক কাজ করুন আমার চাদরটা নিয়ে নিন শীত কম লাগবে একটু !
.
– সে ঠিক আছে বাট আবার আপনি?
আমি জিবে কাপড় দিয়ে বেবি ফেস করে বললাম
.
– সরি! আসলে অভ্যেস তো বেরিয়ে আসে। আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে।
.
উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বলল
.
– এতো কিউট করে বলতে হয়? জানোনা আমি পাগল হয়ে যাই?
.
– তুমিতো পাগল ই। এবার চাদর টা নিন মানে নাও।
.
বলে মুচকি হেসে চাদরটা খুলে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। ও আমাকে অবাক করে দিয়ে চাদরটা আমার হাত থেকে নিয়ে আমাকে সহ নিজের গায়ে জরিয়ে নিলো। আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম
.
– এটা কী হলো?
.
– শীত কী আমাদের একা লাগবে নাকি? তোমার লাগবে না?
.
– হুম।
.
বলে ওর বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর ও আমার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল
– জানো যেদিন প্রথম আমি তোমাদের বাড়িতে আসি আমার চোখ শুধু তোমাকেই খুজছিলো! কিন্তু তোমার দেখাই পাচ্ছিলাম না আর কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছিলাম নাহ। ভেবেছিলাম তুমি বাড়িতে নেই। পরে যখন ওয়াসরুমে যাবার জন্য নিচের ওই রুমটাতে গেলাম আমি জাস্ট স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম তোমায় দেখে। মনে হচ্ছিলো আমার সামনে একটা ঘুমন্ত সুন্দরী শুয়ে আছে। বড্ড এলোমেলো ছিলে সেদিন তুমি, ছোট চুলগুলো মুখের ওপর পরে ছিলো, প্লাজো হালকা উপরে উঠে ছিলো, ঘুমন্ত ওই মুখটাতে পৃথিবীর সমস্ত পবিত্রতা জেনো ভর করে ছিলো! চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। পরে চাদর জরিয়ে দিয়েছিলাম তোমার গায়ে আর কপালের চুলগুলো সরানোর পর তোমার কপালে একটা চুমু একে দিতে খুব ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু নিজেকে আটকে নিয়েছিলাম কারণ তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আর তখনো আমাকে চিনতেই না তাই ওটা করা ঠিক হতো না।
আমিতো পুরো অবাক তারমানে সেদিন আমার গায়ে চাদর আপি দেয়নি ও দিয়েছিল? হঠাৎই কিছু একটা মনে হতে ওকে প্রশ্ন করলাম
.
– তুমি বললে তুমি আমাকে খুজছিলে? তারমানে তুমি সেদিনের আগেই আমাকে দেখেছো ? কিন্তু কোথায়?
.
এটা শুনে যেনো আদ্রিয়ান যেনো হুসে এলো। এতোক্ষণ হয়তো ঘোরের মধ্যে বলে ফেলেছে কথাগুলো। নিজেকে সামলে বলল
.
– অনি আবারো এসব প্রশ্ন কেনো? আমি তো যা বলার বলেছি তাহলে?
.
– কিন্ত কেনো আদ্রিয়ান? আমাকে প্রথম কোথায় দেখেছো এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর দিতে কী সমস্যা?
.
– অনেককিছু বাইরে দিয়ে সামান্য মনে হলেও সেটা অনেকসময় খুব ভয়ংকর সত্যি হয়ে সামনে আসে।
.
– আচ্ছা বলতে হবেনা আপনাকে আমি আসছি!
.
আমি চলে যেতে নিলেই ও আমাকে টেনে বুকে জরিয়ে বলল
.
– ঠিকাছে তুমি যখন এতো করেই জানতে চাইছো আমি বলবো তবে একটা শর্তে!
.
– কী শর্ত? ( ভ্রুস কুচকে?)
– আমি শুধু এটুকুই বলবো যে প্রথম কোথায় আর কীভাবে তোমাকে দেখেছি। আর কিচ্ছু না আর তুমিও আর কোনো পাল্টা কোনো প্রশ্ন করবেনা ওকেহ?
.
– কিন্তু..
.
– ওই একটা শর্তেই বলতে পারি
.
আজব এমন কেনো ও? যাই হোক নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো! যেটেকু জানতে পারি সেটুকুই অনেক। তাই বললাম
.
– আচ্ছা।
.
– তিন বছর আগে ইউ কে থেকে দেশে এসছিলাম বিশেষ এক কারণে। তো বাবা একদিন বলল আঙ্কেল আর মামনী মানে তোমার আব্বু আম্মু দেখতে চায় আমাকে তাই দেখা করতে, আমিও ফ্রি ছিলাম তাই এসেছিলাম দেখা করতে কিন্তু মাঝরাস্তায় বৃষ্টি শুরু হয়। দেশের ভেজা সবুজ প্রকৃতি দেখতে দেখতেই পৌছে গেলাম তোমাদের বাড়িতে গাড়িটা স্লো করে যেই গেইট দিয়ে ঢুকতে যাবো তখনি..
.
বলেই থেমে গেলো আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
.
– তখন কী?
.
আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে আমাকে আরেকটু জোরে জরিয়ে ধরে বলতে শুরু করল
– তখন আমার চোখ আটকে গেলো গার্ডেন এরিয়ায়, অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, আমি যেনো অন্য এক ঘোরে চলে গেছিলাম। গাড়ি থেকে নেমে এলাম নিজের অজান্তেই। আমার চোখ শুধু গার্ডেন এরিয়ায় বৃষ্টি বিলাস করতে থাকা এক পিচ্ছি মায়াবিনীর ওপর।
মেয়েটার বয়স হয়তো পনেরো-ষোল বছর হবে। একটা সাদা কুর্তি আর কালো জিন্স টাকনুর অনেকটা ওপরে ফোল্ড করে রেখেছে। মুখে এক অমায়িক হাসি। দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টিবিলাসে মেতে আছে সে। আর আমি?
আমিও পুরো ভিজে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেদিকে খেয়াল ছিলোনা আমার আমিতো আমার সেই মায়াবিনীর মায়ায় নিজেকে জরিয়ে ফেলছিলাম। নিজের বাইশ বছরের জীবনে কখনো কোনো মেয়েকে ভালোলাগাতো দূর সেরকম নজরে দেখতেও ইচ্ছে করেনি, কিন্তু ওই পিচ্ছি মেয়েটার থেকে চোখ সরছিলোই না আমার। মেয়েটার মধ্যে যে বাচ্চামো ভাবটা প্রবলভাবে আছে সেটা দেখেই বোঝা জাচ্ছিলো। পুরো গার্ডেন জুরে লাফাচ্ছিলো পিচ্ছিটা, মাঝে মাঝে দুহাতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে নিজের মুখেই ছুড়ে মারছিলো, আবার কখনো চোখ বন্ধ করে দুহাত বাড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ কর ঘুরছিলো। আমি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মুগ্ধ হয়ে ওর প্রতিটা চলন দেখছিলাম।
কিন্তু মেয়েটার সেদিকে কোনো খেয়ালি ছিলোনা ওতো নিজের দুনিয়ায় মত্য ছিলো, প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলো, কেউ যে ওকে এতো গভীরভাবে দেখছে সেদিকে ওর কোনো খেয়ালই নেই
আমি অবাক হয়ে শুনছি ওর কথা ও আবারো বলল
– ভেজা প্রকৃতির মধ্যে যেনো হারিয়ে গেছিলো ও আর আমি ওর মধ্যে। বুঝতে পারছিলাম যে না চাইতেও ওই মায়াবিনীর মায়ায় জরিয়ে গেছি আমি, বৃষ্টির ফোটায় ওর ভেজা হালকা গোলাপি ঠোট আরো সিন্ধ লাগছিল, ওর চুল থেকে বেয়ে পরা পানিগুলো ঝর্ণার ধারার চেয়েও আকর্ষণীয় লাগছিলো, ওর ভেজা চোখের পাপড়িতে হারিয়ে ফেলছিলাম নিজেকে। ও যেনো এক বিশাল মায়াজাল বিস্তার করেছিলো নিজের মধ্যে যেটা যে কাউকে ওর মায়ায় পরতে বাধ্য করবে। আর আমিতো শুধু মায়ার পরিনি জরিয়ে গেছিলাম ওর সাথে। ওর গায়ে পরা প্রতিটা বৃষ্টি ফোটার প্রতি হিংসে হচ্ছিলো আমার কীভাবে ছুয়ে দিচ্ছিলো ওকে। বুঝতে আর বাকি থাকেনি যে আমি এই পিচ্ছিকেই ভালোবেসে ফেলেছি! যেই আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কখনো লাভ শব্দটাতেও বিশ্বাস করতো না তার লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়ে গেলো ভাবা যায়? তখন মাথায় শুধু একটা কথাই এসছিলো যে ওকে আমার চাই সেটা যেভাবেই হোক।
.
আমি অবাক হয়েই বললাম
.
– তারপর?
.
– মেয়েটার বেশ কয়েকটা ছবিও তুলে নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি থেমে গেলো আর মেয়েটা থম মেরে দাড়িয়ে গেলো। একদম বাচ্চাদের মতো গাল আর ঠোট ফুলিয়ে আকাশের দিকে তাকালো! তারপর মাটিতে পা দিয়ে একটা আঘাত করে। হনহন করে হেটে ভেতরে চলে গেলো। ওর কান্ড দেখে আমার হাসিও পাচ্ছিলো আবার ওর মন খারাপ দেখে কষ্টও হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো বৃষ্টি নামানোর ক্ষমতা যদি আমার থাকতো ! তাহলে পিচ্ছিটাকে খুশি করতে পারতাম। তবে এটা ঠিক করে ফেলেছিলাম যে ওই মেয়েটাকে আমি নিজের করবই আর সেটা যেকোনো মূল্যে। আর সেই পিচ্ছি মেয়েটা হলো
.
– আমি!
.
– হুম আমার মায়াবিনী। আর দেখো আমি আমার কথা রেখেছি। আজ তুমি আমার বুকে আছো!
আমার মনে পরল সেই দিনটার কথা, সেদিনতো আমি নিজের মধ্যেই ব্যাস্ত ছিলাম। কিন্তু কেউ যে আমায় এতো নিখুতভাবে দেখছিলো আমিতো জানতামি না! কিন্তু ও বাড়ির ভেতরে কেনো এলোনা? তাই জিজ্ঞেস করলাম
.
– কিন্তু তুমি সেদিন ভেতরে আসোনি কেনো?
.
আদ্রিয়ানের মুখে এতোক্ষণ একটা তৃপ্তির হাসি ছিলো যেটা নিমেষেই মিলিয়ে গেলো। গম্ভীরভাবে বলল
.
– বলেছিলাম না পাল্টা কোনো প্রশ্ন করবে না?
.
– কিন্তু..
.
– কথার খেলাপ হচ্ছে কিন্তু?
.
– আচ্ছা বলতে হবেনা।
.
এরপর আমার মাথায় নিজের ঠোট ছুইয়ে বলল
– জানো তিনটা বছর কতোটা মিস করেছি তোমাকে? একদিনের ওই কয়েক মিনিটে তোমার মায়ায় এমনভাবে জরিয়ে গেছিলাম যে মনে হচ্ছিলো তুমি আমার কতো যুগের চেনা। ওই মুহূর্তের ছবি আর স্বৃতি নিয়েই ছিলাম এই তিনবছর। এরপর যখন দেশে এলাম তখন তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি তাই পরের দিনি চলে এসছিলাম। কিন্তু তোমাকে ওভাবে দেখবো ভাবিনি তবে দেখে এটুকু বুঝেছি আমার পিচ্ছিটা একটু বড় হয়েছে আর আরো মায়াবী হয়ে উঠেছে। তোমাকে দেখে চিনতে একটুও দেরী হয়নি। কারণ এটাই ভালোবাসার টান। এই তিন বছরে না দেখলেও তোমার সাথে নিজেকে গভীরভাবে জরিয়ে ফেলেছি আমি।
.
আমি কিছু না বলে ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম। ও আবারো বলল
.
– ভালোবাসা খুব অদ্ভুত জানো? কখনো ভাবিনি কাউকে এতোটা ভালোবাসবো, কেউ আমার অস্তিত্বে এভাবে মিশে যাবে। I love you Oni.. যাই হোক না কেনো আমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো নাহ। বিশ্বাস করো আমি সেটা সহ্য করতে পারবোনা। সব সহ্য করলেও তোমার দেয়া আঘাত আমি সহ্য করতে পারবোনা। তাই আর যাই হয়ে যাকনা কেনো কখনো আমার বুকে আঘাত কোরোনা আর করলেও এমনভাবে করো যাতে মরে যাই। কারণ বেচে থাকলে সেটা আরো বেশি যন্ত্রণার হবে।
– ( আমিও যে না চাইতেই আপনার সাথে জরিয়ে গেছি আদ্রিয়ান। আপনি যদি কোনো কারণে আমার বিশ্বাস ভাঙ্গেন আমিও তা সহ্য করতে পারবোনা বেচে থেকেও মরে যাবো।)
.
– অনেক কথা হয়েছে আমি মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও কাল মেডিকেল যাবেতো?
.
– হুম।
.
আমি চোখ বন্ধ করে ওকে জরিয়ে ধরলাম আর ওও আমার মাথায় বিলি কাটলে লাগল। আমি ওর বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলাম, ও বিলি কাটতে কাটতে গম্ভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে। একসময় আস্তে আস্তে দুজনেই ঘুমিয়ে গেলাম।
.
ভোরে পাখিদের কিচিরমিচির আর কপালে কারো আলতো স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাকিয়ে দেখি এখনো আবছা অন্ধকার আর আমি আদ্রিয়ানির বুকে, একটা হাই তুলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম, আদ্রিয়ান জেগে গেছে মুচকি হেসে গালে কিস করে বলল
.
– Good morning
.
– morning..(মুচকি হেসে চোখ ডলতে ডলতে)
.
– ঘুম ভালো হয়েছে?
– হুম..(তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমলে সেটা খারাপ হতে পারে?) আপ.. তোমার?
.
– তুমি বুকে থাকলে সবকিছুই ভালো হয়!
.
আমি মুচকি হাসলাম। ও আমাকে বুক থেকে তুলে বলল
.
– এখন রুমে যাও নিলে হিয়া জেগে গেলে নিজেই লজ্জা পাবে।
.
– এইরে আমিতো ভুলেই গেছিলাম। আমি যাই হ্যা?
.
বলেই উঠলাম। ও বলল..
.
– আস্তে যাও পরে যেওনা।
.
– ওকেহ
.
বলেই তাড়াতাড়ি রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আপি ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। যাক বাচা গেলো! আমি চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরলাম। তারপর চোখ বন্ধ করতেই আমকে চমকে দিয়ে আপি বলল
.
– প্রেম করা শেষ?
আমি চমকে তাকালাম আপির দিকে। আপি ওদিকে ঘুরেই বলেছে কথাটা। আমি লাফিয়ে বসে বললাম
.
– তুমি জেগে আছো
.
আপি এবার ঘুরে তাকিয়ে বলল
.
– একটু আগেই উঠেছি।
.
– আসলে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছিলো তো তাই একটু হেটে এলাম। আদ্রিয়ানের সাথে আমি দেখাই করিনি ও নিশ্চই ঘুমচ্ছে ( মেকি হাসি দিয়ে)
.
আপিও এবার বসল তারপর ভ্রু নাচিয়ে বলল
.
– আমি কখন বললাম যে তুমি আদ্রিয়ানের সাথে ছিলে?
.
এইরে ওভার এক্সাইটমেন্টে কী বলে ফেললাম। আপি আবার বলল
.
– তা মাঝরাতে থেকে ভোর পর্যন্ত শুধু হেটেছো?
.
আমি অসহায়ভাবে বললাম
– কখন বেরিয়েছি সেটাও দেখেছো?
.
– হুম সুইটহার্ট বেরোনোর সময় দেখেছি আর ফেরার আগেই উঠে গেছি।
.
– আসলে আপি..
.
আপি হেসে দিয়ে বলল
.
– আসলে নকলে আমাকে বোঝাতে হবেনা। ওটা তোদের পারসোনাল ব্যাপার তোরাই বোঝ। আমি যাই গিয়ে তোদের ব্রেকফাস্টের ব্যাবস্হা করি গিয়ে তুই তো এখন ঘুমাবি। আমি যাই
.
বলেই আপি চলে গেলো আর আমি ও কোল বালিশ জরিয়ে আদ্রিয়ানের বলা কথাগুলো ভাবছি। ও তিন বছর ধরে ভালোবাসে আমাকে? তাও ওভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে প্রেমে পরেছে আমার? সিরিয়াসলি? এসব ভাবতে ভাবতেই আরেক দফা ঘুম দিলাম।
.
আবার ঘুম ভাঙলো আপির ডাকে আমাকে তুলে বলল
.
– আর কত ঘুমাবি এবার ওঠ। ব্রেকফাস্ট রেডি, নিচে সবাই ওয়েট করছেতো।
.
– আচ্ছা তুমি যাও আমি একেবারে রেডি হয়ে আসছি।
আমি ফ্রেশ হয়ে একটা বেবি পিংক কুর্তি, হোয়াইট জিন্স, হোয়াইট স্কার্ফ পরে, কানে এস কালার বল রিং পরে, চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে নিচে নামলাম। নিচে গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। আমাকে দেখেই আদ্রিয়ান বলল
.
– উফ এলেন মহারাণী। ওয়েট করতে করতে তো আমরা শহীদ হয়ে যাচ্ছি গো?
.
– থামবে তুমি?
.
সাথে সাথেই সবাই একসাথে সুর দিয়ে বলল
.
সবাই: তুমি…
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
আদ্রিয়ান: এভাবে গান ধরার কী আছে? আমির বউ আমাকে তুমি করে বললে তোমাদের কী?
.
আমিতো লজ্জায় শেষ একেই ওদের সামনে তুমি বলে ফেলেছি তারওপর আদ্রিয়ানের ওসব কথা।
আদিব ভাইয়া: আরে ভাবি লজ্জা পেয়োনা। আমরাই তো। নো চাপ!
.
জাবিন: সেই.. কতদিন আর আপনি আপনি করবে বলো এটাতো হবারি ছিলো বরং একটু দেরিতেই হলো
.
আদ্রিয়ান: এক থাপ্পড় মারবো চুপচাপ খা।
.
আপি: হ্যা সেই অনির সাথে এখন আদ্রিয়ানও লজ্জা পাচ্ছে বুঝছোনা কেনো জাবিন?
.
আদ্রিয়ান: ওসব আমি পাইনা কিন্তু আমার বউটা তো পায় ওকে সেভ করে রাখাতো আমার ডিউটি।
.
আদিব ভাইয়া অন্যমনস্ক হয়ে বলল
.
আদিব ভাইয়া: হুম ওকে সেভ রাখতেই তো এতোকিছু!
.
আপি: মানে?
.
আদিব ভাইয়া: নাহ কিছুনা আরেকটা পরোটা দেও।
.
আদ্রিয়ান আমাকে ওর পাশে বসিয়ে মাথা নিচু করে খাচ্ছে। কি হলো কিছুই বুঝলাম নাহ।
এরপর সবাই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল। হঠাৎ ইশরাক ভাইয়া বলল
.
ইশরাক ভাইয়া: জানিস ইন্ডিয়াতে কালকেও একটা ব্লাস্ট হয়েছে অনেক মানুষ মারা গেছে।
.
সজীব ভাইয়া: তাই নাকি টেরোরিস্ট দের হামলা নিশ্চই? এরাও যে কী কী করছে কয়েক বছর ধরে
.
ইশরাক ভাইয়া: হ্যা ভাই। শুনেছি ওরা একটা সফটওয়্যার ও তৈরী করেছিল ব্লাস্ট করার জন্য কিন্তু কোনো কারণে মডেল ফাইল হারিয়ে গেছে। তাই কিছু করতে পারছেনা। ওই ফাইলটা ওদের হাতে আসলে খুব বড় কিছু হয়ে যেতে পারে। দেশের মারাত্নক ক্ষতি হবে। কত মানুষ মারা যাবে বলা মুসকিল। ওদের মধ্যে চারজন ধরা পরেছিলো থার্ড ডিগ্রিতে এটুকু স্বীকার করেছে।
.
আমার হাত পা কাপছে প্রচুর ঘামছি আমি।
.
জাবিন: কী মারাত্নক? ওরা নতুন মডেল বানাতে পারেনি?
.
ইশরাক ভাইয়া: নাহ তার জন্য কোড লাগবে। যেটা ওই ফাইলে আছে!
.
জাবিন: লাইক ফেসবুক পাসওয়ার্ড?
.
আদ্রিয়ান: কী শুরু করেছিস তোরা? এসব কথা থাক। এই বিষয়ে কোনো আলোচনা যাতে না হয়! ( ধমকে)
আমার হাত থেকে জুসের গ্লাস পরে গেলো। কানে শুধু তিনটে ওয়ার্ড বাজছে ‘ব্লাস্ট’ ‘টেরোরিস্ট’ ‘কোড’। আমার হাত পা প্রচুর কাপছে। আদ্রিয়ান আমাকে ধরলো আপিও ছুটে এলো। আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে শ্বাস আটকে আসছে। তিন বছর আগের সেই ঘটনাতো আমি প্রায় ভূলেই গেছিলাম কিন্তু আজ সেগুলো আবার সামনে ভেসে উঠলো, মনে পরতেই মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো, ” ছাড়বেনা ও রা আম্ আমাকে মেরে ফেলবে আমায়, সবাইকে শেষ ক্ করে দেবে, আমি দেব্ দেবোনা ওটা ওদের মেরে ফ্ফেললেও দেবোনা দে্বোনা। আস্তে আস্তে সব ঝাপসা হয়ে গেলো আমার
আমার হাত থেকে জুসের গ্লাস পরে গেলো। কানে শুধু তিনটে ওয়ার্ড বাজছে ‘ব্লাস্ট’ ‘টেরোরিস্ট’ ‘কোড’। আমার হাত পা প্রচুর কাপছে। আদ্রিয়ান আমাকে ধরলো আপিও ছুটে এলো। আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে শ্বাস আটকে আসছে। তিন বছর আগের সেই ঘটনাতো আমি প্রায় ভূলেই গেছিলাম কিন্তু আজ সেগুলো আবার সামনে ভেসে উঠলো, মনে পরতেই মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো, ” ছাড়বেনা ও রা আম্ আমাকে মেরে ফেলবে আমায়, সবাইকে শেষ ক্ করে দেবে, আমি দেব্ দেবোনা ওটা ওদের মেরে ফ্ফেললেও দেবোনা দে্বোনা। আস্তে আস্তে সব ঝাপসা হয়ে গেলো আমার..
চোখে মুখে ঠান্ডা কিছুর পরা অনুভব করে আস্তে আস্তে তাকালাম। কারো দুই বাহুতে আবদ্ধ হয়ে আছি, তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান আমাকে দুই বাহুতে জরিয়ে রেখেছে ওর মুখে চিন্তার ছাপ তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আপি আমার আরেক পাশে বসে আছে আর সবাই চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে, এবং আমি ড্রয়িং রুমে আছি! কী হয়েছিল মনে পরতেই আবার ভয় লাগতে শুরু করল তবে এবার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। আদ্রিয়ান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
.
– Are you okay?
.
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। আপি পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল
.
– পানিটা খেয়ে নে
.
আমি গ্লাস নিতে গেলে আদ্রিয়ান সেটা নিয়ে নিলো তারপর আমাকে খাইয়ে দিলো। হঠাৎ জাবিন বলল
.
জাবিন: কী হয়েছিল তোমার ভাবি? আর তখন এসব কী বলছিলে?
.
ইশরাক ভাইয়া: কারা মেরে ফেলবে তোমাকে আর কী দেবেনা?
.
আমি কী বলব সেটাই ভাবছি। ভয়ে এখনো আমি একটু একটু করে কাপছি। ওই দিনটাকে তো আমি ভূলতে চাই, প্রায় ভূলেও গেছিলাম, তবে আবার কেনো?
.
আপি: আসলে..
.
আদ্রিয়ান: থাক বাদ দাও এসব। এমনিতেই ও নার্ভাস হয়ে আছে এসব ছাড়ো এখন।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে ও ব্যাপারটা এতোটা সহজভাবে কীকরে নিচ্ছে? ওর তো সবচেয়ে বেশি কৌতূহল থাকার কথা। তাহলে?
.
সজীব ভাইয়া: হ্যা সেটাই ভালো। ওসব থাক আর ওর সামনে এই বিষয়ে কোনো আলোচনারও দরকার নেই। আমার আগেই থামানো উচিত ছিলো তোমাদের!
.
জাবিন: কিন্তু ব্যাপারটা কী?
.
আদ্রিয়ান: জাবিন! বললাম তো এসব বিষয় বাদ দিতে।
.
আপি: আদ্রিয়ান ওকে বকছো কেনো ছোট মানুষ। অনি তুই রেস্ট কর গিয়ে। আজ যেতে হবেনা মেডিকেল।
.
আমি: নাহ আপি আজ যেতে হবে ইমপর্টেন্ট ক্লাস আছে।
.
আদ্রিয়ান: কিন্তু এখন কেমন ফিল করছো?
.
আমি: বেটার
.
আদ্রিয়ান: Okay then I will drop you..
.
আমি: Okay..
এরপর আদ্রিয়ান সবার সামনেই আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো আমি না করেছিলাম কিন্তু ওর ওই চোখ রাঙানি দেখে আর কিছু বলা হয়নি। আর বাকি সবাই দায়িত্ব নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিলো।
.
খাওয়া শেষে আমরা বেরিয়ে পরলাম। আদিব ভাইয়ারা একটা গাড়িতে চলে গেলো, আপিও ভার্সিটি চলে গেলো, বাড়িতে আমার তিন ভাই রয়ে গেলো আজ ওদের বেরোনোর নেই। আমি আর আদ্রিয়ান আদ্রিয়ানের গাড়িতে করে মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আদ্রিয়ান ড্রাইভ করছে আর আমি পাশের সিটে বসে আছি। কিন্তু আমি এখোনো ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। বারবার সেই ঘটনা ভাসছে চোখের সামনে। তাই সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। হঠাৎ আদ্রিয়ান বলল
.
– এতো কী ভাবছো?
.
আমি চোখ মেলে বাট ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম
.
– কিছুনা
.
– ভয় পাচ্ছো?
.
– কী বিষয়ে?
.
– সেটাতো তুমি ভালো জানবে!
.
– নাহ সেরকম কিছু নাহ
.
– ওহ। বাট একটা জিনিস মনে রেখো ভয় পাওয়াটা সব জায়গায় মানায় না কিছু কিছু সময় ভয় কে ভূলে যেতে হয় কারণ তখন বাচার সেটাই একমাত্র উপায় হয়ে দাড়ায়।
.
হটাৎ এসব কেনো বলছে ও? কিন্তু যা বলছে সেটা ঠিকি। এখন ভয় পেয়েও আমার কোনো লাভ নেই যা করার করেই ফেলেছি সেখান থেকে ফিরে আসা তো আর সম্ভব নাহ। আদ্রিয়ান আবার বলল
– আর হ্যা আমি বেচে থাকতে তোমার কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে নাহ।
.
এটা শুনে তাকালাম ওর দিকে ওও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
.
– বিশ্বাস আছে আমার ওপর?
.
– ( আছেতো। অনেক বেশি আছে। বাধ্য করেছো থাকতে। না চাইতেও ওনেকটা বেশিই জরিয়ে গেছি তোমার সাথে, নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। ঠিক হচ্ছে নাকি ভুল ভাবতেই মন চায়না!)
.
আমাকে কিছু বলতে না দেখে আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– তবে আবেগে গা ভাসিয়ে দিয়ো না এক পর্যায়ে ডুবে যাবে। আর সেখান থেকে বেরোতে পারবেনা গভীরে তলিয়ে যেতে থাকবে।
.
– তুমি..
.
– চলে এসছি।
.
তাকিয়ে দেখলাম এসে গেছি মেডিকেলে। ও সিটবেল্ট খুলে আমাকে নামনোর পর আমি মুচকি হেসে বললাম
.
– বাই।
.
– নো বাই। আমি আপনাকে ক্লাস অবধি ছেড়ে তবেই যাবো।
.
– মানেহ? আমিকি বাচ্চা যে আমাকে ক্লাস অবধি দিয়ে আসতে হবে?
ও কিছু না বলেই আমার হাত ধরে হাটা দিলো ভেতরে।
.
– আপনি…
.
সাথে সাথেই ও দাড়িয়ে পেছন ফিরে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। আমি বুঝতে পেরে বললাম
.
– নাহ মানে তুমি এরকম কেনো হ্যা সবসময় হাত ধরে নিয়ে যাও, এভাবে বাচ্চাদের মতো ট্রিট করার মানে কী?
.
ও আবার হাত ধরে রেখেই হাটা দিলো। আজব আমি কাকে কী বললাম। এতো দুই কানের কম্প্লিট ইউস করল! এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো? দাড়াও দেখাচ্ছি, আমি দাড়িয়ে গেলাম। ও পেছনে ঘুরে যথারীতি ভ্রু কুচকে বলল
.
– কী হলো দাড়ালে কেনো?
.
– তুমি আমার হাত না ছাড়লে আমি যাবোনা।
.
ও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা বাকা হাসি দিলো এরপর বলল
.
– তাই?
.
এর এই ‘তাই’ শব্দটায় আমি বিশাল রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি তাই আমতা আমতা করে বললাম
.
– হুম তাই
উনি এবার আমার হাত ছেড়ে দিলেন। আমিতো মহা খুশি হোলাম এই ভেবে যে এই হিরো মার্কা ভিলেনটাকে হার মানাতে পেরেছি। তাই মনে মনে যেই ডান্স শুরু করব ঠিক তখনি আমার খুশির গুড়ে এক বস্তা বালি দিয়ে ও আমার হাতের কবজির অনেকটা ওপরে ধরে হাটতে লাগল। আমিতো অবাক কী হচ্ছে এটা? নো ম্যা হার নেহি মানুঙ্গি, কিন্তু আফসোস শরীরের সব শক্তি প্রয়োগ করেও ওর ওই এক হাতের শক্তির সাথে পেরে উঠলাম নাহ। তাই বাধ্য হয়েই হাল ছেড়ে দিলাম। সেই বেদনার ঘায়ে মরিচের গুড়া দিয়ে আদ্রিয়ান বলল
.
– কী বেইবি ব্যাটরি ডাউন?
.
আমি কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে হাটতে লাগলাম আর আদ্রিয়ান সেটা দেখে একটু শব্দ করে হাসলো।
ভেতরে গিয়ে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো কজ ম্যাক্সিমাম মেয়ে গুলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার হিরোর দিকে, কেনো ওকেই কেনো? বাংলাদেশে ছেলের অভাব যে ওকে এভাবে দেখতে হবে? আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম। নেভি ব্লু শার্ট , ব্লাক জিন্স, হোয়াইট কেচ, শার্টের সামনের তিনটা বোতাম খোলা, সেখানে আবার সানগ্লাস ঝোলানো, কপালে পরে থাকা চুল। আজ প্রথম ওনার লুক দেখে রাগ হচ্ছে। এতো স্টাইল করে আসতে কে বলেছে? Who?
Just a minute! Am i jealous? আমি জেলাস ফিল করছি? সিরিয়াসলি?
হ্যা করছি তো কী হ্যা করতেই পারি আমারি তো বর আই মিন হবু বর। আমার ফিয়ন্সে কে অন্যকেউ এভাব ড্যাবড্যাব করে কেনো দেখবে? আচ্ছা ফিল্মেতো দেখি ভালোবাসলেই জেলাসি হয়! তারমানে আমিও কী? সে যাই হোক আপাদত খুব বিরক্ত হচ্ছি আমি এই মেয়েদের ওপর আর তার চেয়ে বেশি আদ্রিয়ানের ওপর। এতো সুন্দর হতে কে বলেছে ওকে?
.
আমাকে ক্লাসরুমের সামনে এনে আদ্রিয়ান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল
.
– নাউ বাই
.
– হুম বাই।
.
ও হাটা দিতেই অামার মনে হলো ওই পেন্তিদের সামনে দিয়ে আমার কিউট সুন্দর ভোলাভালা জামাইটা যাবে? আমি তাড়তাড়ি ডাক দিলাম
.
– শোনো
ও দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকিলো আমি গিয়ে ওর সামনে দাড়ালাম ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অামি গিয়ে ওর শার্ট থেকে সানগ্লাসটা সরিয়ে ওর হাতে দিলাম। ও একবার আমার দিকে তাকালো একবার সানগ্লাসের দিকে! এরপর আমি ওর শার্টের দুইটা বোতাম লাগিয়ে দিলাম গলারটা খোলাই রাখলাম। ও অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দেখলো তারপর ভ্রু নাচিয়ে বলল
.
– এটা কী হলো?
.
– সেটা তোমার না জানলেও চলবে আর হ্যা যাওয়ার সময় সোজা হেটে চলে যাবে ডায়ে বায়ে তাকাবে না একদম।
.
এটা শুনে ও ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে। আমিও ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে “ভাগ মিলখা ভাগ” ফিলিংস নিয়ে ক্লাসে ঢুকে গেলাম। ঐশিদের সাথে আড্ডা দিতে দিতেই স্যার চলে এলেন। আর আমি ক্লাসে মন দিলাম।
.
ক্লাস শেষে বাইরে এসে আমিতো অবাক। কারণ আদ্রিয়ান দেয়ালে এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি ঐশিদের দিকে তাকালাম ওরা হাত নেড়ে আদ্রিয়ানকে হাই দিলো আদ্রিয়ান ও হাত নাড়ল। তারপর ওরা সবাই কেটে পরল আমি তো হা করে তাকিয়ে রইলাম যে এভাবে চলে যাবার কী হলো? আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাসছে। আমি ভ্রু কুচকে
ওর কাছে গিয়ে কোমরে হাত রেখে বললাম
.
– এতো হাসির কী হলো?
.
ও হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হবার ভান করে বলল
.
– নো! কিছুই হয়নিতো! কী হবে?
.
– আর বাই দা ওয়ে আপন.. তুমি যাও নি?
.
– নাহ। তোমাকে নিয়ে এখন যাবো!
– আজকে কাজ নেই তোমার?
.
– আছে! তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে তারপর যাবো!
.
– এতোক্ষণ দাড়িয়ে ছিলে?
.
– হ্যা তো।
.
হঠাৎ ঐ মেয়েগুলোর কথা মনে পড়ল তাই ভ্রু কুচকে বললাম।
.
– সত্যি করে বলোতো এতোক্ষণ কী করছিলে?
.
– মানেহ!
.
– ডায়ে বায়ে তাকাওনি তো?
.
– কী বলছো পাগলের মতো?
– নাহ কিছুনা চলো!
.
– হুম চলো।
.
আসার সময় আবারো একি ঘটনা, চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আমার জামাইটাকে। দাতে দাত চেপে হাটতে লাগলাম। ভালোলাগেনা ছাই। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম একটা মেয়ে এমন ভাবে দেখছে যেনো জামাইটা ওর। ওমা এ দেখি এগিয়েও আসছে। আমার আর সহ্য হলোনা তাই আমি আদ্রিয়ানে বাহু জরিয়ে ওর সাথে ঘেষে হাটতে লাখলাম। এটা দেখে মেয়েটার একটু থেমে গেলো, আমি ভাবলাম আরেকটু ডোস দেয়া যাক। তাই আদ্রিয়ান কে বললাম
.
– আমার কাধে হাত রাখো!
আদ্রিয়ান এমনিতেই ওর বাহু জরিয়ে হাটাতে অবাক তারপর আবার এটা শুনে এবার ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে। আমি বললাম
.
– কী হলো রাখো!
.
ও কিছু বুঝতে না পেরে অসহায়ের মতো হাত রাখল আমার কাধে সেটা দেখেও মেয়েটা একটু ভাবনায় পরলেও কিছু একটা ভেবে আবারো এগোতে লাগল। আমি আদ্রিয়ানকে বললাম
.
– আমার মাথায় একটা কিস করো।
এবার আদ্রিয়ান দাড়িয়ে গেলো চোখ বড় বড় করে তাকালো আমার দিকে। কিছুক্ষণ আহম্মকের মতো তাকিয়ে থেকে ডানে বায়ে ভালো করে দেখলো ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ চারপাশ দেখার পর কী বুঝলো কে জানে? একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার মাথায় চুমু দিলো। সেটা দেখে ঐ মেয়েটার চেহারার রং বদলে গেলো, কাচের গ্লাস ভাঙার মতো ওর মন ভাঙার আওয়াজ যেনো আমি স্পষ্ট শুনলাম, সাথে বাকি মেয়েদেও আর আমি মনে মনে হু হা হা করে হাসতে লাগলাম। ঠিকিই আছে অামার জামাইর ওপর নজর? কিন্তু আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও ঠোট চেপে হাসছে। এরপর গিয়ে গাড়িতে বসেও দেখলাম হেসেই যাচ্ছে মুচকি মুচকি। এবার খুব বিরক্ত হয়েই বললাম
.
– এতো হাসছো কেনো হ্যা কী হয়েছে?
.
এবার ও শব্দ করে জোরে জোরে হাসতে লাগলো, আর কিছুক্ষণ এর জন্য ওর ওই হাসিতে যেনো হারিয়ে গেলাম আমি, কিন্তু নিজেকে সামলে বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম
.
– আজব! কী হচ্ছে এসব?
.
এবার ও হাসি থামিয়ে বলল
– তুমি যে এতো হিংসুটে সেটাতো আগে জানতাম না?
.
– হিংসে? আমি কেনো হিংসে করবো আর কাকে করব? ক্ কী সব বলছো?
.
– ও রিয়েলি? তুমি মেডিকেলের ওই মেয়েদের নিয়ে জেলাস ফিল করছিলে না?
.
– জেলাসি তাও তোমার জন্য? হুহ আমার কী আর কাজ নেই নাকি?
.
– ওহ তার মানে ওরা আমায় ওভাবে দেখছিলো তাতে তোমার কিছু যায় আসে না?
.
– নাহ একদম নাহ।
.
– সিওর
.
এবার আমি আমার ব্যাগটা ওর মুখে ছুড়ে মেরে বললাম
– অফ কোর্স আমি জেলাস! তোমাকে অন্যকেউ কেনো ওভাবে দেখবে হ্যা? শুধু তো দেখছিলো না একেবারে চোখ দিয়ে যেনো গিলে খাচ্ছিলো। একেক জনের মনে যেনো লাড্ডু ফুটছিলো। আর তুমি বলছো am i jealous or not? Ya I’m jealous…(চেচিয়ে)
.
এক নিশ্বাসে বলে ফেললেনা কথা গুলো। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও থুতনিতে হাত রেখে শুনছে। যেনো আমি চরম বিনোদন দেবার মতো কিছু বলে ফেলেছি। আমার মেজাজ আরো খারাপ হলো তাই বললাম
.
– তুমিও আছো এতো স্টাইল এতো ভাব এতো মুড নিয়ে চলতে কে বলে হ্যা? অার শার্টের বোতাম খুলে রাখবে না, বুঝলে? তোমাকে ওভাবে শুধু আমিই দেখবো। Cause you are mine..
.
এতোক্ষণ ও মজা নিয়ে শুনলেও এবার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আর আমিও বোকা বনে গেছি যে কী বললাম আমি এসব, কীকরে বিনা কোনো সংকোচে বলে ফেললাম কথাগুলো? হঠাৎ ও আমাকে জরিয়ে ধরল তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
.
– আমি তোমারি তো! যতদিন বেচে থাকবো তোমারি থাকবো। মরে গেলে সেটা ভিন্ন বিষয়।
ওর মরার কথা শুনে কেনো জানিনা বুকটা ধক করে উঠল। আমি ওনার বুকে মাথা রেখেই বললাম
.
– হঠাৎ মরার কথা কেনো বলছো?
.
– আরেহ মরতে তো হবেই না? আজ না হলে কাল? সেটাই বলছি।
.
– হুম কিন্তু এসব বলার দরকার আছে?
.
– কেনো? কষ্ট হয়?
.
– জানিনা!
.
আদ্রিয়ান একটু হাসলো তারপর মাথায় একটা চুমু দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল। দুজনেই চুপ করে আছি গাড়িটাও আদ্রিয়ান খুব স্লো চালাচ্ছে। হঠাৎ রোড সাইডে ফুচকা দেখতে পেলাম, যেই গাড়ি থামাতে বলবো ওমনি সেদিনের কথা মনে পরল, ওর সেই রাগী মুর্তি, বাবাগো! তাই ইচ্চেটাকে দমিয়ে চুপ করে বসে রইলাম। হঠাৎ গাড়ি থামালো। আমি জিজ্ঞেস করলাম
.
– কী হলো
ও কিছু না বলে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ধরে হাটতে থাকলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম আমাকে নিয়ে ফুচকার দোকানের দিকেই যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ও ফুচকার দোকানে গিয়ে বলল
.
– মামা এক প্লেট ফুচকা দাও তো একদম ঝাল ছাড়া।
.
ফুচকাওয়ালা মামা আইচ্ছা বলে ফুচকা বানাতে লাগল। আমিতো সেই খুশি ফুচকা খাবো ওয়াও! ওকে জিজ্ঞেস করলাম
.
– তুমি খাবেনা?
.
– ইউ নো আমি খাই না!
.
– খাওনা তো কী হলো আজ খাও!
.
– নাহ তুমিই খাও।
.
আমি একটা মুখ ভেংচি দিলাম। ফুচকা দিতেই আমি একটা মুখে দিয়ে খেতে থাকলাম আর ভাবলাম ওকেতো আজ ফুচকা খাওয়াবই। তাই একটা ওর সামনে ধরে বললাম
– খাও!
.
– নো তুমি খাও আমার দেখেই ভাল্লাগছেনা খাবো কী?
.
– আরেহ জাস্ট একটা
.
– না..
.
– ওকে ফাইন তাহলে আমিও খাবোনা।
.
– আরে এগুলো কেমন বাচ্চামি?
.
– ওসব জানিনা বাট তুমি না খেলে আমিও খাবোনা।
.
ও বিরক্ত হয়ে বলল
.
– আচ্ছা দাও
.
আমি খুশি হোয়ে ওর মুখে একটা দিয়ে দিলাম, ও প্রথমে মুখ কুচকে চিবোতে লাগলো কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর ফেস রিয়াকশন বদলে গেলো। আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম
.
– কেমন?
– হুম নট ব্যাড।
.
– আরো দেবো?
.
– নাহ থাক আর খাবোনা
.
– ওকেহ
.
– আচ্ছা তুমি যখন এতো করে বলছো তাহলে দাও!
.
আমি হেসে দিলাম ওর কথায় আর ওও একটু লজ্জা পেলেও সেটা বুঝতে না দিয়ে রাগী মুডে বলল
.
– হাসার কী হলো
.
আমি হাসি থামিয়ে বললাম
.
– নাহ কিছুনা। ঝাল কেমন খাও?
.
– মোটামুটি
.
তারপর ফুচকাওয়ালা মামাকে বললাম
.
– মামা হালকা ঝাল দিয়ে এক প্লেট ফুচকা দিন তো!
মামা ফুচকা দিতেই ও প্লেটটা হাতে নিয়ে একবার ফুচকার প্লেট দেখছে একবার টক পানির দিকে তাকাচ্ছে। সেটা দেখে আমি ভ্রু কুচকে
.
– বললাম কী হলো খান?
.
ও অসহায় ভাবে বলল
.
– কীভাবে কী করে এসব?
.
আমি এবার জোরেই হেসে দিলাম আর ও অসহায় ভাবে প্লেট দেখছে। তারপর আমি ওকে ভালোভাবে দেখিয়ে দিলাম যে কীভাবে কী করতে হবে ও আমাকে ফলো করে খুব সহজেই খাওয়া শিখে গেলো।
.
ফুচকা খেয়ে আমরা আবার গাড়িতে ফিরে এলাম তারপর আবার ও গাড়ি স্টার্ট করল। কিন্তু খেয়াল করলাম গাড়িটা একটা নিড়িবিলি গলিতে যাচ্ছে। আমি আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম
.
– কোথায় যাচ্ছি আমরা?
.
– আসলে সামনে আমার একটু কাজ আছে। জাষ্ট পাঁচ মিনিট লাগবে ওকে।
.
– ওকেহ।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর খুব নিড়িবিলি একটা গলিতে গাড়ি থামলো। লোক নেই বললেই চলে। দুপাশে বিশার দালান শুধু। আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে বলল
.
– এখানে থাকো আমি আসছি!
.
– এখানে?
.
– হুম আমি যাবো আর আসবো!
.
– কিন্তু..
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো আদ্রিয়ান। আমি কিছুক্ষণ গাড়িতে বসে থেকে নামলাম গাড়ি থেকে, চারপাশে একটা মানুষও নেই। আদ্রিয়ান এখানে কি করতে আসলো? আর আমাকে এখানে একা রেখে চলে গেলো। আমারতো ভয় লাগছে। অনেক্ষণ হয়ে গেলো বাট আদ্রিয়ানের খোজ নেই।
Infinite Love part 26+27+28+29+30
কিছুক্ষণ এসব ভাবতে ভাবতে পেছনে হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম। খুব ভয় করছে এখন, আস্তে আস্তে ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি তিনজন লোক আসছে, তাদের দেখেই আমার বুক কেপে উঠল, কম্প্লিট কালো পোশাক মুখেও কাপড় টাইপের মুখশ জরানো লোকগুলোর । চোখ দুটু ছাড়া সাড়া শরীরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না এদের। এরা আমার দিকেই আসছে, আমার ভয়ে হাত পা কাপছে মস্তিষ্ক বলছে পালাতে কিন্তু হাত পা ভিষণ কাপছে নড়তেও পারছিনা। সেই দিনটার কথা আবারো মনে পরে গেলো, চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে আমার, ওরা খুব কাছে চলে এলো আমার, আমি এবার একপা করে পেছাতে লাগলাম। মন শুধু বলছে ‘ আদ্রিয়ান কোথায় তুমি?’ কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না ওরা ক্রমশ এগোচ্ছে আর আমি পেছাচ্ছি, ওদের সবার চোখে যেনো আগুন জলছে, সেটা আমার ভয় আরো বারিয়ে দিচ্ছে। পেছাতে পেছাতে আমি কারো সাথে ধাক্কা খেলাম। পেছন ফিরে দেখি কালো পোশাক পরা আরেকজন দাড়িয়ে আছে, বাকি তিনজনের তবুও চোখ দেখা যাচ্ছিলো কিন্তু ওর সেটাও দেখা যাচ্ছেনা, কালো জ্যাকেট,কালো জিন্স, কালো সু, কালো হ্যান্ড গ্লাভস আর একটা হেলমেট পড়া। বুঝতে পারলাম ও এদেরি একজন।
আমি পেছন ফিরে পালাতে যাবো দেখি ওই তিনজন আমাকে ঘিরে আছে আর সামনে তাকিয়ে দেখি ওই লোকটা পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি পাশ কাটিয়ে দৌড় দিতে গেলে লোকটা আমার হাত ধরে ফেলল। আমি ভয়ে ভয়ে কান্না করে দিয়ে বললাম, ” প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে, আমি কিচ্ছু জানিনা ওটা কোথায় আছে আমি জানিনা, প্লিজ যেতে দিন আমায়!” কিন্তু আমার এই আকুতি যেনো লোকটার কানেই ঢুকলোনা ও পকেট থেকে একটা ইনজেকশন সিরিন্জ বের করে সেটা হালকা পুশ করে চেক করল, সেটা দেখে আমার আত্না কেপে উঠল আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য আরো ছটফট করতে করতে বললাম, ” প্লিজ নাহ, please don’t do this, please!!” কিন্তু লোকটা এতোটাই হার্টলেস যে আমার কান্না তাকে একটুও গলাতে পারলোনা ও খুব নিষ্ঠুরভাবে আমার হাতে ইনজেকশনটা পুশ করে দিলো। আর আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম, ” আদ্রিয়ান..”