Infinite Love part 61+62+63+64+65

Infinite Love part 61+62+63+64+65
Writer: Onima

রিক আমাকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দরি দিয়ে বেধে দিলো। এরপর মেশিনটা টেবিলে রেখে অন করল। আর তারটা আমার হাতের অনামিকা আঙ্গুলে বেধে দিলো। আমি এবার শব্দ করে কেদে দিয়ে আদ্রিয়ানকে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ ওদের এটা করতে বারণ করুন আমার খুব ভয় করছে। প্লিজ আদ্রিয়ান!
.
কিন্তু আদ্রিয়ান একি ভঙ্গিতে আপেল খাচ্ছে আর পায়ের উপরে রাখা পা টা নাড়িয়ে যাচ্ছে। ওর এই ভাবলেশহীনতা দেখে ওর দিকে আর তাকালাম না। রিক বাটন প্রেস করতে নিলেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে থাকলাম। কিন্তু রিক বাটন প্রেস করবে ঠিক তখনি লোড শেডিং হয়ে গেলো। সবাই বেশ অবাক হয়ে চারপাশে তাকালাম। এই সময় হঠাৎ লোড শেডিং কেনো হবে? ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওরা সবাই অবাক হয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে। কিন্তু আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আগের মতোই একমনে আপেল চিবিয়ে যাচ্ছে যেনো কিছুই হয়নি। রিক টেবিলে বারি মেরে বলল

রিক: হঠাৎ এইসময় লোডশেডিং কেনো হলো?
.
জয়: আর হলো তো হলো এখনই হলো?
.
রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখল ও কেমন ভাবলেশহীন ভাবে আপেল খাচ্ছে। সেটা দেখে রিক বললো।
.
– লোড শেডিং হয়ে গেলো আর তুমি নিশ্চিন্তে আপেল খাচ্ছো?
.
এটা শুনে আদ্রিয়ান আবারো আপেলে বাইট করতে গিয়েও থেমে গিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো রিক এর দিকে। তারপর বলল

– এমনভাবে বলছো যেনো এইমাত্র পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হয়ে গেলো আর আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে হবে? আরে লোড শেডিং হয়েছে ভাই। ইটস নরমাল হতেই পারে!
.
বলেই আপেলে কামড় বসালো। ওর এইরকম কথার কেউ আর কোনো উত্তর দিতে পারলোনা। আমি মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম এইভাবে আমাকে বাচিয়ে দেয়ার জন্যে। আজ সঠিক সময় লোডশেডিং টা না হলে আমার কী হতো আল্লাহ জানে। এবার রিক চিন্তিত হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
.
রিক: এখন কী করবো? ফাইলের কথা এর মুখ থেকে কীকরে বার করব?
.
আদ্রিয়ান: কাম অন ইয়ার? ছয় মাস পরিশ্রম করার পর ওকে এখানে নিয়ে এসছি। এখন যদি ফাইলটা কীভাবে নেবে সেটাও আমাকেই ভাবতে হয় তোমরা কী করবে?
.
রিক: তোমার কী মনে হয় ফাইলটা আমাদের জন্যে ইম্পর্টেন্ট না?
.
আদ্রিয়ান: যদি এতোই ইম্পর্টেন্ট হতো তো একটা পনেরো বছরের মেয়ে ওটা চুরি করতে পারতো না।
.
জয়: দেখো আদ্রিয়ান ঐ সময় তুমি ছিলেনা। তখনো তো তুমি এই গ্যাং জয়েন ও করোনি। ওই ঘটনার দুই মাস পরে জয়েন করেছো তাই তুমি সেদিনের পরিস্হিতি জানোনা।
.
আদ্রিয়ান: ছিলাম না বলেই ও ফাইলটা নিতে পেরেছ। কারণ আমি এতো বোকা নই যে আলমরী লক করে চাবিটা ওখানেই রেখে যাবো।
.
ওর কথায় সবাই চুপ হয়ে গেলো। হয়তো উত্তর দেবার মতো কিছুই নেই। আদ্রিয়ান এবার উঠে দাড়িয়ে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– আজ তাহলে নিয়ে যাই ওকে।
.
রিক: কিন্তু বললো না তো কিছু?
.
আদ্রিয়ান: এখন তো আর কিছু করার নেই তাছাড়া পালিয়ে তো অার যাচ্ছেনা ও? কোনো না কোনো উপায় ঠিক পেয়ে যাবো ওর মুখ থেকে কথা বের করার।
.
জয়: হুম আজ এমনিতেও আর কিছু করার নেই। এই মেয়ে যে এমনি এমনি বলবেনা ভালোই বুঝতে পারছি।
.
আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে আমার বাধন খুলে দিয়ে আমাকে হাত ধরে দাড় করিয়ে দিলো। তারপর কিছু না বলে সোজা হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো আমি কিচ্ছু বলিনি এমনকি তাকাই ও নি ওর দিকে। ওর প্রতি সব টান শেষ হয়ে গেছে আমার। চাই না ওকে আর আমি। এরকম একটা মানুষের আমার লাইফে কোনো জায়গা নেই যে আমাকে শুধু ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থে, যার কাছে আমার কষ্ট যন্ত্রণা বা প্রাণ কোনোটারই কোনো মূল্য নেই। আজ থেকে আমার কাছেও তোমার কোনো মূল্য নেই আদ্রিয়ান। এসব ভাবতে ভাবতেই গাড়িতে চলে এলাম, ও আমাকে বসিয়ে নিজেও বসে গাড়ি স্টার্ট করল। সারারাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বলিনি আমার চোখ দিয়ে অনরগল পানি পরে গেছে। বাংলোতে এসেই আদ্রিয়ান আমাকে নিয়ে সোজা ডাইনিং এ বসে পরল, তারপর অভ্র বলে ডাকতেই অভ্র নিচে এসে আমাদের অপজিটে বসে পরল। আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ নামিয়ে নিচে তাকিয়ে রইলাম। অভ্র একটু ইতোস্তত করে আদ্রিয়ানকে বলল

– Sir all okay?
.
– এখোনো অবধি।
.
অভ্র আর কিছু বললোনা কিছুক্ষণের মধ্যেই সার্ভেন্ট এসে খাবার সার্ভ করে দিয়ে গেলো। খেতে খেতে আদ্রিয়ান বলল
.
– অভ্র পেপারগুলো রেডি করে ফেলো
.
এবার অভ্রর সেই বিনয়ি ভাব চলে গেলো, চেহারায় হালকা বিরক্তি আর রাগ ফুটে উঠল তবে সেটা প্রতিহিংসার নয় অধিকারবোধের যেটা ওর মুখ দেখেই বুঝলাম, ও সেই রাগী মুখেই বলল
.
– কী দরকার এসব করার স্যার? আপনি কেনো ভাবছেন যে..
.
আদ্রিয়ান ওকে থামিয়ে মুচকি হেসে বলল
.
– এতো ভেবো না…
.
– দেখুন স্যার আপনাকে আমি মুখে স্যার বললেও আমার কাছে আপনি আমার ভাই তাই আপনি…
.
আদ্রিয়ান চোখ গরম করে বলল
.
– চুপচাপ খাও।
.
অভ্র মুখ কাচুমাচু করে মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ খেতে থাকল। আমিও চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছি। ওদের কথা কানে এলেও তাতে গুরত্ব দেবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম না। আদ্রিয়ান বিষয়ক কোনো কিছুতে আমার আর আগ্রহ নেই।

বিকেলে বিছানায় বসে বসে কান্না করছি আদ্রিয়ান চলে গেছে দুপুরেই। ওর আজকের ব্যবহার খুব বেশি আঘাত করেছে আমায়, কীকরে পারলো ও আমাকে এতোটা কষ্ট দিতে? ওই লোকগুলো আমার সাথে এতো খারাপ ব্যাবহার করলো কিন্তু ও কিচ্ছু বললো না? আর ওরা যখন আমাকে ইলেকট্রিক শক দিতে চাইলো তখনো ও চুপ করে রইলো, আমি ওর কাছে এভাবে রিকোয়েস্ট করার পরেও ও পাত্তাই দিলোনা। সত্যিই ওকে আমি চিনতে পারিনি। এই ছয় মাসে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকা হার্টলেস মানুষটাকে চিনতে পারিনি আমি। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা।
.
রাতে দরজা খোলার আওয়াজে শব্দে মাথা তুলে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো, তারপর এক হাতে দরজা লক করে খাবারের প্লেট টি টেবিলে রেখে আমার সামনে বসল। ওকে দেখেই আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছি ওকে আর সহ্য হচ্ছে না আমার। ও আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
.
– এতো কাদছো কেনো? মুখ চোখের কী অবস্হা হয়েছে দেখেছো?
.
আমায় এতো কষ্ট দিয়ে এখন জিজ্ঞেস করছে যে কাদছি কেনো? বেশ বিরক্তি নিয়ে বললাম
.
– খুব সুখে রেখেছেন তো আপনি আমাকে এতো সুখ আর সহ্য হচ্ছে না তাই কাদছি!
.
আদ্রিয়ান এবার একটু রেগে গিয়ে বলল
.
– এতো ত্যারা কথা বলো কেনো সবসময় সোজাসাপ্টা কথা বলতে পারোনা?
.
– না পারিনা! ইচ্ছে হলে কথা বলুন ইচ্ছে না হলে বলবেন না। আপনার স্বার্থসিদ্ধি হলেই তো হয় আমার সাথে এতো কথা বলে আপনার কী লাভ বলুন? ( মুখ ঘুরিয়ে বিরক্তি নিয়ে)
.
– আচ্ছা হয়েছে এবার খেয়ে নাও।
.
বলেই খাবারের প্লেট হাতে নিতেই আমি বললাম
.
– আমি নিজেই খেতে পারবো আমাকে দিন

এবার ও চোয়াল বেশ শক্ত করে বলল
.
– দেখো অনি এই মুহুর্তে তোমার সাথে মিস বিহেভ করার ইচ্ছে আমার নেই। তোমাকে আমার হাতেই খেতে হবে তুমি চাও বা না চাও। চুপচাপ হা করো।
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম, তারপর বললাম
.
– আর কতদিন এভাবে জালাবেন আমাকে?
.
আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি সেটা তোমার কাছে জ্বালাতন মনে হচ্ছে? (শান্ত গলায়)
.
কেনো জানিনা ওকে আমার সহ্য হচ্ছেনা। ও খাইয়ে দিলে আমার খারাপ লাগেনা, কিন্তু এগুলো তো ওর নেকামো ড্রামা। ওর এইসব নাটক ই অসহ্য লাগছে তাই রাগী গলায় বললাম
.
– অবশ্যই জালাতন মনে হচ্ছে। জ্বালাতন ছাড়া আর কী এগুলো? আমি চাইছিনা আপনার হাতে খেতে তবুও জোর করে খাওয়াবেনই? কার ভালোলাগে এসব?
.
ও কিছু না বলে প্লেটের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে খাবারটা নারতে থাকল তারপর হাতে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আমার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল

– আর বেশিদিন জ্বালাবোনা তোমায়। আর কটা দিন এই সহ্য করে নাও।
.
– হ্যা সেই ! আপনার তো ফাইলটা দিয়ে কাজ, ফাইল হাতে পেলেই হয় আমাকে মেরে ফেলবেন নয়তো যদি দয়া হয় তো ছেড়ে দেবেন চিরকালের মতো। কারণ এই নাটকের প্রয়োজনীয়তাও তো তখন শেষ হয়ে যাবে। তাইনা?
.
উত্তরে আদ্রিয়ান কিছু না বলে আমায় খাওয়াতে থাকল। আমিও আর কিছু বললাম নাহ। বেশ কিছুক্ষণ পর খাবার যখন শেষের দিকে তখন হঠাৎই নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল
.
– আচ্ছা আমিতো বেশিরভাগ সময় রুমে এসে তোমাকে খাইয়ে দেই। তুমি তো একবারো জিজ্ঞেস করোনা আমি খেয়েছি কী না?
.
আমি এবার একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
.
– আপনার সত্যি মনে হয় আমার এসব জানার কোনো ইচ্ছে আছে?
.
– নেই?
.
– নাহ নেই। আপনি খেয়েছেন কী না সেটা জানার ইচ্ছে, আগ্রহ বা প্রয়োজনীয়তা কনোটাই আমার নেই, আপনি খেলে খান নয়তো না খেয়ে মরে জান I just don’t care বুঝেছেন?
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
.
– হুম বুঝলাম

বলেই আমাকে পুরোটা খাইয়ে দিয়ে সার্ভেন্ট ডেকে এনে ট্রে টা পাঠিয়ে দিলো। আমি ভাবছি যে সত্যিই তো ও কী খেয়েছে? পরেক্ষণেই মনে পরল কার কথা ভাবছি আমি এরকম স্বার্থপর হার্টলেস একটা মানুষকে নিয়ে আমি ভাববোনা একদমি না। যা খুশি করুকগে ও। ও সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে বলল
.
– অনি ঘুমিয়ে পরো এখন !
.
– আমি আমার বাড়ির লোকেদের সাথে কথা বলব
.
ও ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে বলল
.
– আমি আগেও বলেছি যে এখন সম্ভব নাহ।
.
বলে আবার ল্যাপটপে চোখ দিলো, এবার আমার রাগ উঠে গেলো কী ভাবে কী ও নিজেকে? আমি বেশ চড়া গলায় বললাম
.
– কেনো সম্ভব না? কী মনে করেন আপনি আমাকে? আপনার হাতের পুতুল যে আপনি যা বলবেন সেটাই শুনতে হবে আমাকে? আপনার ইশারায় চলতে হবে?
.
ও এবার ল্যানটপে চোখ রেখেই বলল
.
– অনি এই মুহুর্তে রাগ বাড়িওনা আমার। চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো।
.
– নাহ চুপ করবোনা। আমি কথা বলবোই নইলে…ন্ নইলে

উঠে গিয়েই আমি একটা শো পিছ ভেঙ্গে ফেললাম সেই শব্দ শুনে আদ্রিয়ান তাকালো আমার দিকে আমাকে এমন পাগলামী করতে দেখে ও রেগে আমার কাছে আসতে আসতে আমি আরেকটা শো পিছ ভেঙ্গে ফেললতেই আদ্রিয়ান এসে আমাকে ঘুরিয়ে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিয়ে এসে আমার গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
.
– ভালোভাবে বললে শুধতে ইচ্ছে করেনা তাইনা? আগেও বলেছি তোমার জেদ আমাকে দেখাতে এসো না। অার হ্যা আপাদত তুমি অামার হাতের পুতুলই, যা বলব যেটুকু বলবো চুপচাপ তাই আর সেটুকুই করবে, বুঝলে? আজ যা করেছো করেছো এরপর জেনো এরকম না হয়!
.
বলেই গাল ঝারা দিয়ে ছেড়ে দিলো, আমি গালে হাত বুলিয়ে হিচকি দিয়ে কাদতে কাদতে বললাম
.
– আপনি খুব খারাপ, খুব খারাপ আপনি! আপনি কাউকে ভালোবাসতে পারেন না, আপনার মধ্যে মন বলে কিচ্ছু নেই। You are a heartless person…
.
এবার আদ্রিয়ান নিজেই একটা শো পিছ ভেঙ্গে ফেলল তারপর চেচিয়ে বলল
.
– হ্যা আমি খারাপ, খুব খারাপ, আমার মন বলে কিছু নেই, I’m heartless.. and I’m happy for that.. understand? এবার আর একটাও কথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো।

বলেই ও হনহনিয়ে ব্যালকনি তে চলে গেলো আমিও খাটের ওপর হাটু গুটিয়ে বসে, হাটুতে মুখ গুজে কাদছি। এভাবে প্রায় ঘন্টার বেশি পার হয়ে গেলো ওরও কোনো সারাশব্দ নেই আমিও চুপচাপ কান্না করছি। হঠাৎ গিটারের আওয়াজ কানে এলো ব্যালকনি থেকে। কিছুক্ষণ কান পেতে শুনে বুঝতে পারলাম যে আদ্রিয়ান ই ব্যালকনিতে বসে গিটার বাজাচ্ছে। গিটার কোথায় পেলো? ব্যালকনিতে ছিলো নাকি? আমার মেজাজটা আরো খারাপ হলো, আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়ে উনি মনের আনন্দে গিটার বাজাচ্ছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ! সহ্য করতে না পেরে উঠে গেলাম ব্যালকনিতে গিয়ে আমি পুরো থমকে গেলাম আদ্রিয়ান এক পায়ের হাটু ভেঙ্গে আরেক পা মেলে দিয়ে ব্যালকনির দেয়াল ঘেসে বসে চোখ বন্ধ করে গিটার বাজাচ্ছে, চাদের আলো সরাসরি ওর মুখে পরছে। অমায়িক লাগছে ওকে, শার্ট টা খুলে ফেলেছে গায়ে শুধু চিকন স্লিভ এর পাতলা সাদা গেন্জি আর কালো জিন্স, ওকে দেখতে দেখতেই ও চোখ বন্ধ করে গাইতে শুরু করলো
.
– Milne hai mujhse ayi
Phir kyun jane tanhayi..
Kis mor pe hai layi… Aashiqui!
Khud se hain ya khuda se
Is pal mere ladaayi
kis mor pe hai layi… Aashiqui!
OoO Oo Oo Oo..
Aashiqui baazi hai taas ki
tutte bante Viswaas ki!
.
tuta hua, saaj hu main
khud se hi, naaraj hoon main
seene me kahin jo dabi hai
aisi koi aawaj hoon main
sun le mujhe tu bin kahe….
kab tak khamoshi dil sahe…
Aashiqui bazi hai taas ki
tut te bante viswaas ki!

Jane kyun main, sonctha hu
Khali sa main, ek raasta hu
Tune mujhe kahi kho diya hai
Ya main kahi khud lapata hu
aa dhun le tu phir mujhe
Kasme bhi du keya ab tujhe…
Ashiqui bazi hai taas ki
Tutte bante Viswaas ki!
.
Milne hain mujhse aayi
Phir kyun jane tanhayi
kis mor pe hai layi… Aashiqui!
Kudse hai ya khuda se
Is pal mere ladaayi
kis mor pe hai layi… Aashiqui!
OoO Oo Oo Oo
Aashiqui baazi hai taas ki
tutte bante Viswaas ki!

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওর দিকে এর হঠিৎ আশিকি টু ছবির আশিক হতে ইচ্ছে হলো কেনো ওর? আশিকি শব্দের মানে বোঝে ও? ওর কাছে তো ভালোবাসাটা একটা খেলা! সেইজন্যেই তো এরকম একটা পবিত্র বিষয় নিয়ে ও আমার সাথে অভিনয় করতে পারল, গেইম খেলতে পারল। তাই বিরক্তি নিয়ে ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও চোখ না খুলেই আবার গিটার বাজাতে লাগল, টিউন শুনে বুঝলাম যে এবারেও আশিকি মুভির গান ই গাইবে। ভাবতে ভাবতেই ওর গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম
.
– Oo oooo ooo ooooooo…
oo oooo ooo ooooooo
asaan nehi yahaa Aashiq ho jana
palko pe kaaton se sajana,,,
Aashiq ko milti hai gam ki saugate
sab ko na milti yeh khajana…….
Oo oooo ooo ooooooo
.
Baatoon se age
Wadoon se age
Dekhoo jara Tum kabhi ho…
Yeh toh hain Shoola
Yeh hain Chingari..
Yeh hain Jawaan aag bhii…
Oo Oooo ooo ooooooo
.
Jismon Ke Peechhe
Bhaage Ho Phirte
Utro Kabhi Rooh Mein ho..
Keya hain Aashiq
keya hai Aashiqui hai..
Hogi khabar tabh tumhe…
Oo oooo ooo ooooooo
.
Aasaan nehi yahaa Aashiq ho jana
Palko pe katoon se sajana
Aashiq ko milta hai gam ki suagate..
Sabko na milti yeh khajana…
Oo oooo ooo ooooooo..
Oo oooo ooo ooooooo

গান শেষ করে চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে দরজায় আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু চমকে গেলো তারপর নিজেকে কোনোরকমে সামলে উঠে দাড়িয়ে বলল
.
– একি তুমি ঘুমাও নি এখোনো?
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই না বোধক মাথা নাড়লাম। ও গিটারটা রেখে বলল
.
– রুমে এসো আমি মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি ঘুম চলে আসবে। আর হ্যা এটা নিয়ে কোনো বাড়তি কথা আমি শুনতে চাইনা।
.
বলেই পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলো আমি এতোক্ষণ ওর গানগুলো মন দিয়ে শুনছিলাম। এর আগেও ওর গান শুনেছি, কিন্তু আজ এমন মনে হলো যেনো মন থেকে গাইছিলো। আবারো নিজেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম যে কী ভাবছি আমি? যার মন বলেই কিছু নেই সে আবার মন থেকে কী করে গাইবে? ওর মতো মানুষের মধ্যে কোনো আবেগ থাকতেই পারেনা, আমার মনে ওর জন্যে আর কোনো জায়গা নেই..
বলেই পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলো আমি এতোক্ষণ ওর গানগুলো মন দিয়ে শুনছিলাম। এর আগেও ওর গান শুনেছি, কিন্তু আজ এমন মনে হলো যেনো মন থেকে গাইছিলো। আবারো নিজেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম যে কী ভাবছি আমি? যার মন বলেই কিছু নেই সে আবার মন থেকে কী করে গাইবে? ওর মতো মানুষের মধ্যে কোনই আবেগ থাকতেই পারেনা, আমার মনে ওর জন্যে আর কোনো জায়গা নেই। এসব ভাবতে ভাবতেই ওর ডাক পরল আদ্রিয়ানের

– অনি অনেক রাত হয়েছে, রুমে এসো!
.
আমি রুমে যেয়ে দেখি ও বেডে বসে আছে হেলান দিয়ে। আমি গিয়ে শুতে নিলেই ও ও আমার হাতের বাহু ধরে টেনে ওর কোলে শুইয়ে দিলো। তারপর আলতো হাতে মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল
.
– চোখ বন্ধ করো ঘুম এসে যাবে।
.
ওকে এখন কিছু বললে শুনবে না তাই কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম। চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরলাম।
.
সকালে আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলাম, আদ্রিয়ান অভাবেই বসে আছে তবে চোখ দুটো বন্ধ! আমি একটু নরতেই ও চোখ খুলে তাকালো, তারমানে ঘুমোয় নি? সারারাত জেগে ছিলো নাকি? এসব ভাবতে ভাবতেই ও বলল
.
– উঠে পরেছো?
.
আমি কিছু না বলে ওর কোল থেকে উঠে বসলাম। আদ্রিয়ান ও আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে গেলো, আমিও চুপচাপ খাটে বসে রইলাম কিচ্ছু ভালোলাগছে না, কাল রাতে কী বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি ওর সাথে? দূর কী ভাবছি আমি এসব? ও আমার সাথে যা যা করেছে আর করে চলেছে তার কাছে তো আমার করা ওই সামন্য খারাপ ব্যবহার কিছুই নাহ, এর চেয়ে বেশি খারাপ ব্যবহার ও ডিজার্ব করে, প্রায়
আধ ঘন্টা পরে ও বেরিয়ে এলো। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– ফ্রেশ হবে না?
.
– হুম হচ্ছি!
.
বলেই ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। বাট প্লেটে আজ খাবার অনেক বেশি। তাই আমি খাটে বসে বললাম
.
– আমি এতো খেতে পারবোনা।
.
– জানি আমি। এখানে আমাদের দুজনের খাবার ই আছে।
.
– ওহ ( বিরক্তি নিয়ে )
.
– হুম অাসলে তুমি তো আমায় খেতে বলবেনা আর না খেয়েও তো বাচতে পারবোতা তাইনা?
.
– হ্যা না বাচলে নিরীহ মানুষগুলোকে মারবেন কী করে?

আদ্রিয়ান কিছু না বলে হালকা হাসল তারপর আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল আর নিজেও খেলো।
.
আজ সারাদিন আদ্রিয়ান এখানেই ছিলো। সারাদিন সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করেছে আর একমনে কিছু একটা ভেবেছে। আমিও সারাদিন খাটে হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। ওর সাথে কোনো কথা বলিনি না ও আমার সাথে বলেছে। আচমকাই আদ্রিয়ান আমার সামে এসে বসে বললো
.
– ফাইলটা কোথায় আছে?
.
আমি কিছুক্ষণ ভূত দেখার মতো তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে তারপর একটা তাচ্ছিল্যের বাকা হাসি দিয়ে বললাম
.
– এখন কী বাংলোতেও এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্যে টর্চার করবেন?
.
আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো হয়তো রাগটা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, আমি হাত ভাজ করে বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল
.
– লিসেন! কথা না বাড়িয়ে বলো কথায় আছে?
.
আমি এবার ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– আপনার কী সত্যি মনে হচ্ছে আমি বলে দেবো? তিনবছর আগে নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে ফাইলটা নিয়েছিলাম আমি, ভবিষ্যতে বিপদে পরবো জেনেও ফাইলটা পুলিশকে দেইনি। এমনি এই ফাইলের জন্যেই আপনার মতো এক প্রতারকের প্রতারণারও স্বীকার হয়েছি, তবুও আপনার মনে হচ্ছে আপনাকে বলে দেবো ফাইলটা কোথায় আছে?
.
– আমি সবটা বুঝতে পারছি কিন্তু শুধু আজকের জন্য শেষবারের বিশ্বাস কর আমাকে। প্লিজ বলো ফাইলটা কোথায়?

– আপনাকে বিশ্বাস করার ফল একবার পেয়ে গেছি আমি এই দ্বিতীয়বার করবোনা মেরে ফেললেও বলবোনা…!
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে সামনের দিকে ঘুরে বসে দুই হাতে মুখ চেপে ধরে কিছুক্ষণ বসে ছিলো। তারপর হঠাৎ আমার গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
.
– বললেনা তো। ঠিক আছে।এরপর যেটা হবে তার জন্যে তুমি দায়ী থাকবে!
.
– চলে এলেন তো নিজের আসল রুপে? এই মুখে একটু আগে আবার বিশ্বাসের কথা বলছিলেন?
.
ও কিছু না বলে বাইরে চলে গেলো। আমিও ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। কেনো আদ্রিয়ান? কেনো এসব করছো তুমি? এতোগুলো নিরীহ লোকের প্রাণ নেয়ার কথা ভাবছোই বা কীকরে? আর তোমার মতো নৃশংস একজন মানুষকে চিনতেই পারলাম না এই ছয় মাসে।
.
আদ্রিয়ান আর আসেনি, সন্ধ্যেবেলা ঘরে বসে বোর হচ্ছি সেই সময় দরজায় নক পরল। নিশ্চই অভ্র, এই কয়দিনে চারদিনে ওর সম্পর্কে যা বুঝেছি ছেলেটা খারাপ না। সবসময় হাসিখুশি থাকে আর দুষ্টমির মুডে থাকে। হয়তো আদ্রিয়ানের সম্পূর্ণ খারাপ দিকটা ও জানেনা তাই ওর সাথে থাকে,তবে এ কদিনে ওর আমার হালকা ভাবও হয়েছে, আমার চেয়ে বয়সে বেশ বড় হলেও, একটা আলাদা রেসপেক্ট আর বিনয়ের সাথে কথা বলে আমার সাথে। হয়তো আদ্রিয়ানের বউ আমি সেই জন্য। আরেকবার নক পরতেই বললাম
.
– হ্যা আসুন
.
আসুন বলতেই অভ্র দুই হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো উত্তরে আমিও ছোট করে একটা হাসি দিলাম। ও খাটে বসে আমার দিকে কফি মগ এগিয়ে দিয়ে বলল

– আসলে আপনিও একা একা বোর হচ্ছিলেন আমিও হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম কফি খেতে খেতে দুজনে গল্প করি
.
আমি মুচকি হেসে কফিটা নিয়ে বললাম।
.
– আপনার স্যার রাগ করবেনা? আমার রুমে তো ওর অনুমতি ছাড়া কাউকে আসতেই বারণ করে দিয়েছে।
.
– স্যারের অনুমতি নিয়েই এসছি। ( হেসে দিয়ে )
.
আমি খাটের সাথে হেলান দিলাম আর অভ্র খাটের আরেক পাশে আসাম করে বসল। আমি কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম
.
– আপনার আর আপনার স্যারের সম্পর্ক টা কী? মানে ওকে আপনি স্যার বলে কেনো ডাকেন?
.
– কারণ আমি ওনার পি.এ। ইউ কে থেকেই ওনার সাথে আছি।
.
– কিন্তু আপনাদের দুজনের কথা শুনে মনে হয়না যে আপনারা বস এমপ্লয়ি। মাঝে মাঝে আপনাদের কথোপোকথন শুনে মনে হয় আপনারা ভাই। উনি আপনাকে মাঝে মাঝেই বড় ভাইর মতোই শ্বাসণ করেন যেমন…
.
আমাকে থামিয়ে দিয়ে অভ্র বলল
.
– যেমন চুল কাটছোনা কেনো? এতো কম খেলে কেনো? রাত জেগোনা? এতো দেরী করে টেবিলে এলে কেনো? তাইতো?

– এক্সাক্টলি! আর আপনিও ওনাকে বড় ভাইয়ের মতোই সম্মান করেন। ব্যাপারটা বুঝলাম না।
.
অভ্র হালকা হেসে কফিতে একটা চুমুক দিলো তারপর বললো
.
– ম্যাম রামায়ণ পরেছেন?
.
– হুম কলেজে লাইব্রেরিতে পরেছি কেনো?
.
– রাজা রামচন্দ্রের সবচেয়ে বড় ভক্ত কে ছিলো?
.
– হনুমান?
.
– হুম সেটা সবাই জানে। এমনিতে হনুমান শ্রী রামের সেবক ছিলো কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে ওনাদের সম্পর্ক ছিলো ভাই আর বন্ধুর। শ্রীরাম হনুমান কে ততোটাই স্নেহ করতেন যতোটা লক্ষণ কে করতেন। ঠিক সেই রকমি আমি স্যারের পিএ হলেও উনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করে। যদিও আমি ওনার থেকে মাত্র এক বছরের ছোট, তবুও!
.
– আর আপনি?

অভ্র এবারেও একি ভঙ্গিতে হেসে বলল
.
– ঠিক যেভাবে শ্রী রামের জন্যে হনুমান এক লাভে সমুদ্র পার করেছিলো, পাহাড় তুলে নিয়ে এসছিলো আমি ওতোটা করতে না পারলেও আমার শেষ নিশ্বাস অবধি দিয়ে দেবো স্যারের জন্যে।
.
আমি বেশ অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। এতোটাই ভালোবাসে ও আদ্রিয়ানকে? কিন্তু ও কী জানে যে ওর স্যার রামচন্দ্র নয় আস্তো একটা রাবণ? হয়তো না, জানলে কী আর ওর মতো একজন মানুষকে এতো ভালোবাসতো? আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে অভ্র বলল
.
– তবে হনুমান আর আমার মধ্যে পার্থক্য কী জানেন ম্যাম?
.
– কী? ( কৌতুহল নিয়ে )
.
অভ্র দাত কেলিয়ে বলল
.
– হনুমানের লেজ ছিলো আমার নেই।
.
শুনে অামি ফিক করে হেসে দিলাম, অভ্রও হাসলো। আমি হাসতে হাসতে বললাম।
.
– আরেকটা মিল আছে!
.
এবার অভ্র‍ও কৌতূহল নিয়ে বলল

– সেটা কী?
.
– দুজনেই বানর। একজন বানরের মতো দেখতে বানর আরেকজন মানুষের মতো দেখতে বানর।
.
বলে আবারো হেসে দিলাম। অভ্র মুখ ফুলিয়ে বলল
.
– ম্যাম আপনিও? স্যার ও সেটাই বলে!
.
এটা শুনে মুখ গোমরা করে ওর দিকে ওও মুখ গোমরা করে আমার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ অভাবে তাকিয়ে থেকে দুজনেই ফিক করে হেসে দিলাম। এরপর দুজনেই গল্প করতে করতে একপর্যায়ে আমি বললাম
.
– আমাকে আপনি আপনি করে না বলে তুমি করেও তো বলতে পারেন।
.
এটা শুনে অভ্র আবারো হেসে বলল
.
– ওইযে বললাম স্যার আর আমার সম্পর্ক শ্রীরাম আর হনুমানের মতো।
.
– হুম তার সাথে আমাকে আপনি বলে ডাকার কী সম্পর্ক?
.
– হনুমান শ্রী রামের স্ত্রী সীতাকে মা বলে ডাকতো, ! আর আপনিও স্যারের স্ত্রী ‘মা’ বলে ডাকতে পারবোনা কিন্তু আপনি বলে তো সম্মান করতেই পারি। তবে আপনি কিন্তু আমাকে তুমি করে বলতেই পারেন। অন্তত দেবর হিসেবে। নানা পারেন বলছি কেনো? স্যারের মতো আজ থেকে আপনিও আমায় তুমি করে বলবেন ধরে নিন দেবর হিসেবে ভাবীর কাছে গিফট চাইছি? কী বলবেন তো?

– কিন্তু..
.
ও একটা কিউট ফেস করে বলল
.
– প্লিজ
.
তাই আমি হেসে দিয়ে বললাম।
.
– আচ্ছা
.
– থ্যাক্স এ লট।
.
এরপরে মগগুলো নিয়ে ও চলে গেলো। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি অভ্রের যাওয়ার দিকে। ছেলেটা আসলেই খুব ভালো! তবে আদ্রিয়ানের কথা মনে পরতেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। কেনো এমন করলে আদ্রিয়ান? কী ছিলোনা তোমার? সবাই কতো ভালোবাসে তোমাকে, এতো ভালোবাসা কজনের কপালে থাকে? তোমার পরিবার, আমার পরিবার, আদিব ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়া, অভ্র সবার প্রাণ তুমি, কিন্তু যেদিন তোমার আসল রুপটা ওদের সামনে আসবে সবাই মুখ ঘুরিয়ে নেবে তোমার থেকে। কেউ মুখও দেখতে চাইবেনা তোমার। সেই ধাক্কা তুমি সহ্য করতে পারবে তো আদ্রিয়ান?
.
পরের দিন ঘুম থেকে উঠেও আদ্রিয়ানকে পেলাম নাহ। সারাদিন এ আসেনি বিকেলে রুমে বসে বসে খাটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নানা রকমের কথা ভাবছি ঠিক সেইসময় দরজা খোলার আওয়াজে চোখ খুললাম, তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান এসছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– লাঞ্চ করেছো?
.
– নিচ থেকে খবর নিয়েই তো এসছেন তবুও জিজ্ঞেস করছেন কেনো?

আদ্রিয়ান কিছু না বলে আয়নার সামনে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল
.
– রেডি হও।
.
– আবার? ( অসহায় কন্ঠে )
.
– হুম
.
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। ওকে কিছু বলে যে কোনো লাভ নেই তার প্রমাণ গত পরশু দিয়ে দিয়েছে। বলেছে যখন যেতে আমাকে হবেই, তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চেন্জ করে চলে এলাম। আমি রেডি হয়ে বেরোতেই ও আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল আজ আমি কাদছি না, ভেতরে খুব করছে কিন্তু সেটা কার কাছে প্রকাশ করবো? যে সবসময় অভয় দিয়ে এসছে আজ সেই আমার সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ। ওখানে নিয়ে গিয়ে আজকেও আমাকে সেই রুমটাতে নিয়ে গেলো। কিন্তু ওখানে গিয়ে বেশ অবাক হলাম কারণ আজ ওই তিনজনের চোখে মুখে কোনো রাগ নেই, বরং সবাই বেশ খুশি, এটা দেখে ভাবনায় পরে গেলাম। আদ্রিয়ান আমার হাত ধরেই ওদের সামনের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজে একটা চেয়ারে বসল। আমি চুপচাপ বোঝার চেষ্টায় আছি যে এরা এতো শান্ত কেনো? এদের মনে কী চলছে? আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে দ্বীপ বলল
.
– তো তুমি মনোস্তির করেই নিয়েছো যে তুমি বলবেনা?

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। এতো নরমাল ভাবে খোশ মেজাজে জিজ্ঞেস কেনো করছে? কী করতে চলেছে এরা? এসব ভাবতে ভাবতেই জয় বলল
.
– কী হলো কী ভাবছো বলবে?
.
আমি শান্ত গলায় উত্তর দিলাম
.
– নাহ বলবোনা।
.
এটা শুনে সবাই মুচকি হাসলো আর আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে হাত চোখের সামনে নিয়ে হাতের নখ দেখছে। রিক এবার হেসে বললো
.
– কালকে তোমার গোটা ফ্যামিলিকে যদি এখানে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয় তাহলে?
.
আমি এবার বিষ্ফোরিত চোখে তাকালাম ওদের দিকে, বুক কেপে উঠলো আমার। আমি কাপাকাপা গলায় বললাম
.
– ও্ ওদের কেনো? ওদের ক্ কাউকে বলিনি অ্অামি ফাইরের কথা ওরা কিচ্ছু জানেনা। ওদের কে..
.
আমাকে থামিয়ে দিয়ে রিক বলল
.
– আমরা জানি সেটা সু…

এটুকু বলে আমার গালে হাত দিতে এলেই আমি মাথাটা একটু পেছনে নিতে নিতে আদ্রিয়ান রিকের হাতটা ধরে ফেললো। তারপর হাসি মুখেই বলল
.
– বিহেভ! ওয়াইফ ও আমার।
.
– ওওও সরি সরি ভূলেই গেছিলাম। আসলে চোখের সামনে এরকম মেয়ে থাকলে তাকে অন্যকারো বউ ভাবতে…
.
কথাটা শেষ করার আগেই আদ্রিয়ান ওর ঘারে হাত রেখে বলল
.
– উল্টোপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে মনোযোগ দেও।
.
আদ্রিয়ানের চোখ দুটো লালচে হয়ে গেছে। তবে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেগেছে। রিক এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– আমরা জানি যে তোমার ফ্যামিলি কিচ্ছু যানে না কিন্তু ওদের নিশানায় রেখে তোমার মুখ থেকে কথাটা বের করা সহজ হবে।
.
জয়: এবার তুমি ঠিক করো যে কী করবে?
.
আমি টোটলি শকড এদের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। কী করবো এখন আমি? কোন দিকে যাবো? আমি কান্না জরিত কন্ঠে বললাম
.
– দেখুন আমার ফ্যামিলিকে এসবের মধ্যে টানবেন না প্লিজ। ওদেরকে ছেড়ে দিন!
.
রিক: ন্যাকা কান্না বন্ধ করে বলো যে তুমি বলবে কী না?
.
– পারবোনা আমি বলতে। ( চিৎকার করে )
.
– তাহলে আর কী তোমার ফ্যামিলিকে আনতে হবে।
.
এরপর ও আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– মানতে হবে আদ্রিয়ান তোমায়। এমনি এমনিই মাত্র তিন বছরে এই টিমের চারজন বসের মধ্যে একজন হওনি। তুমি আজকে না বললে তো মাথাতেই আসতোনা আমাদের ওর ফ্যামিলির কথাটা।
.
আমি অবাক চোখে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে, ও আবারো ভ্রু কুচকে ওর নখ দেখছে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি আজ! কী করে পারলো ও এটা করতে? যেই পরিবারের সবগুলো মানুষ ওকে এতো ভালোবাসা দিয়েছে তাদের সাথে এটা করতে ওর বিবেকে বাধলোনা? এতোটা স্বার্থপর আর নিচ কীকরে হতে পারলো ও? আজ ও এটা প্রমাণ করে দিলো যে ওর মধ্যে মনুষ্যত্ব বলে কিচ্ছু নেই।

দ্বীপ: কিন্তু একটা গোটা ফ্যামিলি তুলে আনা সহজ কাছ হবে না।
.
রিক: কঠিন ও হবেনা সাবধানতার সাথে লোক লাগিয়ে তুলে আনতে হবে ব্যাস।
.
আদ্রিয়ান এবার মুখ খুলল। ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– তাই আমাদের টিমের যেখানে যারা আছে সবাইকে একজায়গায় আনতে হবে।
.
রিক: নাহ সব না অর্ধেক আনলেই হবে।
.
আদ্রিয়ান: সব আনলে সুবিধা হতো
.
রিক: অর্ধেকই যথেষ্ট
.
আদ্রিয়ান: ওকেহ!
.
আমি স্তব্ধ হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি। এতো দিন ও আমার সাথে যা যা করেছে আমি মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু আমার পরিবারের সাথে এরকমটা করার চিন্তা করে ও ঠিক করেনি। এতোটা নিচ কাজ করতে দুবার ভাবলোনা ও?

ওদের সাথে কথা বলে আদ্রিয়ান আমাকে নিয়ে এলো ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। আদ্রিয়ান আর আমি পেছনের সিটে বসে আছি, আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ফোন চাপছে। আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে আর আমার শরীর কাপছে তবে সেটা কষ্ট বা ভয়ের জন্যে নয়। ওর করা কাজের আজ ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গেছি আমি। রাগে সারা শরীর কাপছে আমার। কীকরে করলো ও এটা? রাস্তায় আছি বলে কিছু বলছিনা ওকে! বাংলোতে বসে দরজা লক করে ও সোজা ওয়াসরুম চলে গেলো। আমি খাটে চুপচাপ বসে চোখের পানি ফেলছি আর রাগে কাপছি। কিছুক্ষণ পর ও বেরিয়ে এসে আমার এই অবস্হা দেখে ভ্রু কুচকে বলল
.
– কী হয়েছে এমন করছো কেনো?
.
ওর এই কথাটাই আমার রাগের আগুনে ঘি এর মতো কাজ করলো আমি উঠে দাড়িয়ে ওর বুখে ধাক্কা দিয়ে বললাম
.
– কী ভাবেন আপনি নিজেকে? যা খুশি তাই করবেন? কীকরে পারলেন এটা করতে
.
বলেই ওর বুকে আরো একটা ধাক্কা দিলাম ও আরেকটু পিছিয়ে গেলো
.
– আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ আপনাকে এতোটা ভালোবাসা দিয়েছে আর আপনি?
.
বলে আবারো ধাক্কা মারলাম ও এবারেও পিছিয়ে গেলো

– কী হলো উত্তর কেনো দিচ্ছেননা কেনো করলেন এটা? এতোটা অমানুষ কীকরে হলেন? একবারো ওদের দেয়া স্নেহ মমতা ভালোবাসার কথা ভাবলেননা। How can be you so heartless? ( চিৎকার করে)
.
আজ আমি আর নিজের মধ্যে নেই। আমার সব ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে গেছে। ওকে আরেকবার ধাক্কা দিতে গেলেই ও আমার হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল
.
– প্লিজ শান্ত হও।
.
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম
.
– টাচ করবেনা আপনি আমাকে। আপনার সম্পূরটাই তো মিথ্যে। আপনি কারো হতে পারেননা! কারো কাছে থাকার যোগ্যতা নেই আপনার। পরিবার, বন্ধু, ভালোবাসা এসব কিছু আর যাই হোক অন্তত আপনার জন্যে নয়। আপনি এসবের যোগ্যই নন বুঝলেন?
.
আদ্রিয়ান ঠান্ডা গলায় বলল
.
– হ্যা বুঝেছি। Now cool down
.
বলে আমাকে ধরতে আসলেই আমি সরিয়ে দিয়ে আমার হাতের বেসলেট টা ইশারা করে বললাম
.
– আর হ্যা এই্ এই্ এইটা পরিয়ে আপনি আপনার সেই মিথ্যে ভালোবাসার বলেছিলেন তাইনা? আপনার সেই মিথ্যে নাটকের শুরু করেছিলেন। তাহলে এটা কেনো রাখব আমি আমার হাতে? এটার আর কোনো ভ্যালু বা মর্জাদা নেই আমার কাছে।
.
এটুকু বলে যেই বেসলেট টা খুলতে যাবো আদ্রিয়ান হাত ধরে ফেলে বলল
.
– Oni don’t you dare to do this. এ্ এটা খুলবেনা!
.
আমি ওর কথা পাত্তা না দিয়ে ওর হাত ছাড়িয়ে খুলতে গেলে ও বলল
.
– প্লিজ খুলোনা ওটা।
.
কিন্তু আমি ওটা খুলে সজোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারলাম। যার ফলে A আর O জোরা লাগানো যেই ডিজাইন টা ছিলো সেটা বেসলেট থেকে খুলে পরে গেলো। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ নিচে ভেঙ্গে পরে থাকা বেসলেট টার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর ধীরপায়ে এগিয়ে ওগুলো কুরিয়ে নিয়ে বাইরে চলে গেলো। ও চলে যেতেই আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম। তারপর জোরে জোরে কাদতে লাগলাম। আমি চাইনি এটা করতে, আমি স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবিনি যে আমি এটা করবো। তুমি আজ আমাকে বাধ্য করেছো আদ্রিয়ান।

রাতে আদ্রিয়ান দ্রুতপদে রুমে এসে হাত ধরে দার করিয়ে দিলো আমাকে তারপর হাতে বেসলেট টা পরিয়ে দিলো। আমিতো অবাক কারণ ভাঙ্গা অংশটা জোরা লাগানো! ও জোরা লাগাতে গেছিলো এটা? ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– নেক্সট টাইম এটা হাত থেকে খুললে আমি কী করবো নিজেও জানিনা। সো বি কেয়ারফুল।
.
বলেই ও ফ্রেশ হতে চলে গেলো আর আমি খাটে বসে বেসলেট টা দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল
.
– খেয়েছো?
.
– হুম
.
আদ্রিয়ান সার্ভেন্টকে ফোন করে ওর জন্যে খাবার আনতে বলল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– দুপুর থেকে এখোনো কিছু খাইনি আসলে খাওয়ার সময় পাইনি খুব খিদে পেয়েছে, আর ক্লান্ত ও লাগছে হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছেনা একটু খাইয়ে দেবে?
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে। এর আগে কখনো খাইয়ে দিতে বলেনি আমায়। কিন্তু ওর সব কার্যকলাপগুলো মনে পরতেই চোয়াল শক্ত করে বললাম
.
– আপনার মনে হয় আমি এসব ন্যাকামোর মুডে আছি?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললো
.
– এতে ন্যাকামোর কী দেখলে?
.
– আমার কাছে ন্যাকামোই এগুলো। প্রতিবন্ধি না আপনি! নিজে পারলে খান না পারলে যা খুশি করুন।
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আমার দিকে যেটা ওর দিকে না তাকিয়ে ও বুঝেছি আমি। তারপর বলল
.
– আচ্ছা।

এটুকু বলেই সার্ভেন্ট কে ফোন করে খাবার আনতে বারণ করে দিলো। তারপর বেডে শুয়ে পরলো, আমার মনে মনে একটু খারাপ লাগল বললোতো খিদে পেয়েছে না খেয়েই শুয়ে পরল? তারপর আবার ভাবলাম আবার ওর কথা ভাবছি আমি? কবে শিক্ষা হবে আমার? তারপর আমি শুতে নিলেই ও আমাকে টেনে ওর বুকে জরিয়ে ধরে মাথায় একটা চুমু খেলো। তারপর একহাতে জরিয়ে নিয়ে আরেক হাতে মাথায় বিলি কাটতে লাগল, ওকে না করলেও শুনবেনা তাই ওভাবেই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম
এটুকু বলেই সার্ভেন্ট কে ফোন করে খাবার আনতে বারণ করে দিলো। তারপর বেডে শুয়ে পরলো, আমার মনে মনে একটু খারাপ লাগল বললোতো খিদে পেয়েছে না খেয়েই শুয়ে পরল? তারপর আবার ভাবলাম আবার ওর কথা ভাবছি আমি? কবে শিক্ষা হবে আমার? তারপর আমি শুতে নিলেই ও আমাকে টেনে ওর বুকে জরিয়ে ধরে মাথায় একটা চুমু খেলো। তারপর একহাতে জরিয়ে নিয়ে আরেক হাতে মাথায় বিলি কাটতে লাগল, ওকে না করলেও শুনবেনা তাই ওভাবেই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে উঠে দেখি আদ্রিয়ান এখোনো, ঘুমোচ্ছে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে নয়টা বাজে কিন্তু আদ্রিয়ান তো এতোক্ষণ ঘুমোয় না? ঘুমোলে
ঘুমোক তাতে আমার কী? আস্তে করে আমার পিঠ থেকে ওর হাত সরিয়ে উঠে ওর বুক থেকে উঠে বসলাম। তারপর ওয়াসরুম থেকে এসে দেখি এখোনো ঘুমোচ্ছে। ওর ফোনের দিকে দেখলাম, ফোনটা দেখে হাতে নিতে গিয়েও থেমে গেলাম যদি ধরা পরলে সেদিনের মতো রেগে যায়? পরে ভাবলাম নতুন করে কী আর করবে? ভেবেই ফোনটা নিলাম কিন্তু অন করেই পরলাম ফেসাদে। পাসওয়ার্ড দেওয়া আর সেদিন স্ক্রিন লাইট জালিয়েই চলে গেছিলো তাই পাসওয়ার্ড দিতে হয়নি। এখন? কিন্তু আমাকে তো ওদের সাবধান করতেই হবে আজকেই তো ওদের নিয়ে আসবে বলেছে। আমি কী পাসওয়ার্ড লিখব ভেবে পাচ্ছিনা আদ্ররিয়ানের নাম, আন্টির নাম, জাবিনের নাম সব লিখলাম বাট হলোনা, পরে মনে পরলো আমার নাম লিখবো? কিন্তু ও কেনো আমার নাম পাসওয়ার্ড দেবো। তবুও ট্রাই করলাম Onima, Oni দুটো লিখেই কিন্তু কোনো লাভ হলোনা। আমিও আসলেই বোকা এতোকিছুর পরেও ভেবেছিলাম ওর ফোনের পাসওয়ার্ড আমার নামে হবে? হঠাৎ ই আদ্রিয়ান পেছন থেকে বলল
.
– যেদিন মস্তিষ্ক দিয়ে না ভেবে নিজের মন দিয়ে ভাববে সেদিন শুধু ফোনের নয় আমার মনের পাসওয়ার্ড ও পেয়ে যাবে।
.
চমকে পেছনে থাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করেই আছে। আমি কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলাম, ও চোখ বন্ধ করেই ঘুমজরানো কন্ঠে বলল

– কটা বাজে?
.
– সাড়ে নটা।
.
এটা শুনে ও তাড়াতাড়ি উঠে বসলো তারপর একটা হাই তুলে বলল
.
– হাহ! এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি আজ?
.
আমি কিছু বললাম না তাই ও নিজেই বলল
.
– ফ্রেশ হয়েছো?
.
– হুম।
.
ও আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। এরপর ব্রেকফাস্ট করার আনিয়ে আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলল
.
– কালকে রাতে খাইয়ে দিলে কী হতো?

– আপনাকে নিজের হাতে যত্ন করে খাওয়ানোর মতো কোনো মহৎ কাজ করেন নি আপনি। আপনি যা করেছেন তাতে আপনাকে একটা জিনিসই খাওয়াতে ইচ্ছে করছে আমার। বিষ! হ্যা নিজের হাতে বিষ খাওয়াতে ইচ্ছে করছে আমার।
.
আদ্রিয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে প্লেটে কিছুক্ষণ স্পুন ঘসলো তারপর মুচকি হেসে বলল
.
– আপাদত তোমার ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারছিনা। কারণ এখন চাইলেও আমি মরতে পারবোনা কিছু কাজ অসম্পূর্ণ আছে এখোনো সেগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে।
.
আমি ওর কথা বুঝলাম না তাই কিছু বলব তার আগেই আদ্রিয়ানের কল এলো। আদ্রিয়ান ফোন রিসিভ করে ব্যালকনিতে চলে গেলো। আমি ও ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে ভাবছি আজ আবার কী করতে চলেছে ওরা? কিছুক্ষণ পর ও এসে ফোন পকেটে ভরতে ভরতে বলল
.
– মিস করছিলে না পরিবারের সবাইকে? কথা বলতে চাইছিলে? আজ নিয়ে ছয় দিন ধরে দেখা যায় না, আজ একটু পরেই দেখা হয়ে যাবে ওদের সবার সাথে
.
– তারমানে ওদের সবাইকে?
.
– হ্যা নিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

কথাটা শুনেই আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরল। আজ আমার জন্যে আমার পরিবারের সকলকে এতোটা সাফার করতে হচ্ছে। ওদেরকে বিপদে পরতে হলো শুধু আমার জন্যে। আমি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ ওদেরকে ছেড়ে দিতে বলুন। আপনি তো জানেন যে ওরা সবাই এসবের মধ্যে নেই। প্লিজ ওদের ক্ষতি করবেন না।
.
এটুকু বলেই কেদে দিলাম। আদ্রিয়ান আমার পাশে বসে চোখ মুছে দিতে দিতে বলল
.
– আগেই বলেছিলাম বলে দাও। তখন তুমি আমাকে বলে দিলে এটা করতে হতোনা।
.
– শুধু মাত্র একটা ফাইলের জন্যে আপনি?
.
– দেখো এখন জ্ঞানের কথা একদম শোনাবেনা আমাকে। চুপচাপ রেডি হয়ে নাও। আজ নিশ্চই বলবেনা যে যাবেনা কারণ তোমার পরিবার আছে ওখানে।
.
আমি উঠে দাড়িয়ে কোনোরকমে বললাম
.
– রেডি হতে হবেনা চ্ চলুন আমি এ্ এভাবেই যাবো।

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
.
– টিশার্ট আর টাওজার পরে যাবে ওদের সামনে? ঐ রিক কে দেখাতে যে তোমার বডিসেইপ কতো পার্ফেক্ট? যাতে আজকে আরো ভালো কোনো কম্প্লিমেন্ট দেয়?
.
ওর কথা শুনে বিরক্ত প্লাস অবাক হয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান আপনি…
.
কিন্তু আমাকে থামিয়ে দিয়ে ও জোরে ধমক বলল দিয়ে বলল
.
– চুপ! যাও গিয়ে চেন্জ করে এসো।

এই মুহূর্তে ধৈর্য না থাকলেও বাধ্য হয়ে চেন্জ করতে হলো। আদ্রিয়ান ড্রাইভিং করছে আর আমি ওর পাশে বসে আছি। শুধু ভাবছি আমার জন্যে আমার ফ্যামিলির যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। হঠাৎ কিছু মনে পরতেই আমি বললাম
.
– এই ছয় মাসে আমি আপনার ফ্যামিলিকে যতোটা চিনেছি.. আমি নিখোজ, আমার বাড়ির সবাই ভেঙ্গে পরেছে। তাই আমার সিক্স সেন্স বলছে আপনার ফ্যামিলি আর আদিব ইশরাক ভাইয়াও ম্যাক্সিমাম টাইম আমাদের বাড়িতেই থাকছে সবাইকে সামলাত?
.
– হুম সেটাই হয়েছে। ( ড্রাইভিং করতে করতে)
.
– তারমানে আমার পরিবারের সাথে ওদেরও তুলে নিয়ে আসার চান্স আছে?
.
– 90%
.
এবার আমি চরম মাত্রায় অবাক হলাম তারপর রেগে গিয়ে বললাম
.
– আর আপনি তবুও এতো শান্ত?
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে ড্রাইভিং করছে। আমি আবারও বললাম
.
– আদ্রিয়ান ওরা যখন আপনার সত্যিটা জানবে কতো কষ্ট পাবে বুঝতে পারছেন? ওরা সবাই ঘৃণা করবে আপনাকে! সবাই মুখ ফিরিয়ে নেবে আপনার থেকে। আর আপনার তাতে কিচ্ছু এসে যায় না?
.
আদ্রিয়ান ড্রাইভিং করতে করতে চোয়াল শক্ত করে বলল
.
– নাহ।
.
আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপরে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সামনে থাকলাম। আজ বেশ বুঝতে পারছি যে আমাকে এক বড় দ্বিধায় পরতে হবে। খুব ভয়ও করছে আমার যে কী হবে আজ?

গাড়ি থেকে নামার পর সোজা ওই রুমে নিয়ে গেলো। ওখানে শুধু দ্বীপ আর দুজন কালো পোশাকপরা লোক ছিলো। আদ্রিয়ান দ্বীপকে বলল
.
– ওকে নিয়ে ওদের কাছে যাও আমি আসছি
.
দ্বীপ আমাকে নিয়ে গিয়ে সোজা ছাদের নিয়ে গেলো ছাদে গিয়ে আমি টোটালি শকড। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো, নিজেরই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে আজ। আমার চোখের সামনে আমার পরিবারের সবাই দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ওদেরকে কালো পোশাক পরা লোকেরা ঘিরে রেখেছে। তবে সবাই থাকলেও সুলতানাপ্পি, ওহি, অন্ত আর কাব্য নেই। আমাকে দেখেই আব্বু আম্মু কেদে দিলো। আর অাপি আমার নাম নিয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে ডেকে উঠল। পাশে তাকিয়েই আমি আরো আতকে উঠলাম কারণ আঙ্কেল, আন্টি মানে আদ্রিয়ানের বাবা মা, জাবিন এমনকি আদিব ভাইয়া, ইশরাক ভাইয়াও আছে। হঠাৎই আন্টি বলল
.
– অনিমা দেখোনা ওরা কী বলছে আমার আদ্রিয়ান নাকি এই টিমের বস। তুমিই বলো এটা হয়? তুমিতো জানো ও কী তাইনা?
.
আমি মাথা নিচু করে কেদে দিলাম। আমার এই আচরণ হয়তো ওনাদের উত্তর দিয়ে দিয়েছে তবুও আঙ্কেল কাপা কাপা গলায় বলল
.
– ক্ কীরে মা বল এসব ম্ মিথ্যে।
.
আদিব ভাইয়া: অনিমা বলছোনা কেনো?
.
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কান্নাই করে যাচ্ছি। হঠাৎ আব্বু ডাকল

– মামনী..
.
আব্বুর ডাক শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না ছুটে ওদের কাছে যেতে নিলেই কেউ এসে আমার হাত ধরে ফেললো। তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান। আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ যেতে দাও আমাকে ওদের কাছে।
.
– যাবেতো ! আগে এটুকু বলো ফাইলটা কোথায় আছে?
.
আমার এতোক্ষণের নিরবতা আর আদ্রিয়ানের এই ব্যবহারেই ওরা সবাই বুঝে গেছে যে আদ্রিয়ান সম্পর্কে যা শুনেছে সব সত্যি। সবাই আদ্রিয়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, গলার স্বর হয়তো আটকে গেছে সবার। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ।
.
তখনি পেছন থেকে রিক এসে বলল
.
– আরে যেতে দেবো তো তোমাকে তোমার ফ্যামিলির কাছে আগে বলে দাও ফাইলটা কোথায়? আর নাহলে তোমার পরিবারের কেউ জীবিত থাকবে না। রাইট আদ্রিয়ান?
.
আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– অবিয়াসলি।
.
এটুকু শুনেই আমার বুক কেপে উঠলো, বহু কষ্টে আদিব ভাইয়া মুখ খুলল, কাপা কন্ঠে বলল
.
– অ্ আদ্রিয়ান তুই?
.
কিন্তু আদিব ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে রিক বলল
.
– সরি আদ্রিয়ান ওখানে তোমার ফ্যামিলিও ছিলো জানতাম না। আসলে সবাইকে চিনি না তো তাই…

আদ্রিয়ান চোয়াল শক্ত রেখে বলল
.
– নো প্রবলেম এতে প্লানের কোনো চেন্জ হবেনা।
.
এবার সবাই নিশ্চিত হয়ে গেলো যে আদ্রিয়ান এদেরি একজন। আঙ্কেল অবাক হয়ে বলল
.
আঙ্কেল: আদ্রিয়ান তুমি এটা কীকরে করলে?
.
আব্বু: বিশ্বাস করে আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলাম আর তুমি..?
.
আদ্রিয়ান চুপ করে আমার হাতের কনুই এর নিচের দিক টা ধরে রেখে দাড়িয়ে আছে। তখনি রিক বলল
.
রিক: আরেহ আঙ্কেল এতো হাইপার হচ্ছেন কেনো? রেখেছে তো আপনার ভরসার মান। আপনি বলেছেন বলেই তো বিয়ে করে নিজের কাছে রেখেছ আপনার মেয়েকে।
.
আব্বু অবাক হয়ে বলল
.
আব্বু: আমি ক..
.
কিন্তু আব্বুকে বলতে না দিয়ে আদ্রিয়ান বলল
.
আদ্রিয়ান: ব্যাস! অনেক কথা হয়েছে এবার আসল কাজে আসা যাক

আব্বু: কিন্তু ও কী বললো বিয়ে…
.
এবারেও আব্বুকে থামিয়ে দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: আঙ্কেল এতোক্ষণে নিশ্চিই বুঝে গেছেন আমাকে যেমন জানতেন আমি একদমি তেমন নই! তাই এই মুহুর্তে সবাই চুপ থাকুন।
.
আঙ্কেল: আদ্রিয়ান তুমি?
.
আদ্রিয়ান: সবাই মানে সবাই ( চেচিয়ে )
.
আদ্রিয়ানের এই রুপ দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে। সবাই ভয়ে যতোটা না চুপ হয়ে গেছে তার চেয়ে বেশি ওর এই রুপ দেখে কারো মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা। জয় ও এলো, এরপর রিক বলল
.
– তো মিস.. আই মিন মিসেস অনিমা তুমিকি বলবে?
.
– নাহ বলবোনা না আমি ( কেদে কেদে)
.
– আচ্ছা? তাই নাকি? তো…
.
রিক সোজা গিয়ে আব্বুর মাথায় বন্দুক ধরতেই আমি ছটফট করতে লাগলাম কিন্তু আদ্রিয়ান হাত ধরে রাখায় যেতে পারছিনা। আমি ভয়ে কেদে দিয়ে বললাম

– প্লিজ ওটা নামান, লেগে যাবে..
.
তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– প্লিজ আদ্রিয়ান ওনাকে ওটা নামাতে বলো।
.
আদ্রিয়ান কিছু বললোনা কিন্তু রিক বলল
.
– নামিয়ে দেবো যদি বলো যে ফাইলটা কোথায় আছে।
.
আব্বু: মামনী আমার যা হবার হোক তুমি বলবেনা।
.
রিক আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– কী তোমার বাবার কথাই শুনবে নাকি আমাদের কথা?

বলেই আব্বুর মাথায় আরো জোরে বন্দুক জোরে ধরল। সেটা দেখে আমি শব্দ করে কেদে দিলাম কী করবো এবার আমি? কোন দায়িত্ব পালন করবো? কোন দোটানায় ফেললেন আমাকে আল্লাহ? বাকি সবাই এখোনো স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের এই রুপ দেখে তারা কেউ এখোনো হজম করে পারেনি। আমি এবার আদ্রিয়ানের দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম, কিন্তু আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে ভাবলেশহীনভাবে দাড়িয়ে আছে। তখনি জয় বলল
.
– এভাবে শুনবেনা ও।
.
এটুকু বলে ইশারা করতেই সবার মাথাতেই বন্দুক ধরল যা দেখে আমি চিৎকার করার শক্তিও পাচ্ছিনা, নিশ্বাস আটকে আসছে। রিক আমার সামনে এসে বলল
.
– যদি না বলো তাহলে কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে তোমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাবে সেটা সহ্য করতে পারবেতো ?
.
আমি এবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে আদ্রিয়ানকে বললাম

– আদ্রিয়ান প্লিজ আদ্রিয়ান ওদের বন্দুক নামাতে বলুন প্লিজ আপনারা যা বলবেন আমি করবো, প্লিজ।
.
আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলাতে বলল
.
– ফাইলটা কোথায় আছে বলো।
.
আমি স্হির চাহনীতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম ও আবারো বলল
.
– কী হলো বলবে?
.
আব্বু বাকি সবাই এমনকি আঙ্কেল ও বলছে যাতে না বলি। আর আমি পাথরের মতো দাড়িয়ে আছি ওনাদের কথা আমাদের কানে ঢুকেও যেনো ঢুকছেনা। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল
.
– সুট…
.
আমি চমকে গিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান না..
.
কিন্তু ওরা গুলি চালাতে গেলেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে বললাম
.
– আমাদের বাড়িতেই আছে ফাইলটা।
.
সবাই থেমে খেলো। আব্বু আমাকে ধমক অবধি দিলো যে কেনো বলে দিলাম। আর রিকদের মুখে বিজয়ের হাসি। রিক উৎসাহিত হয়ে বলল
.
– বাড়িতে কোথায়?
.
আমি কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ান বলল
.
– এমন ভাবে জিজ্ঞেস করছো জেনো ওদের বাড়ির সব খুটিনাটি তোমার জানা? কাল ওকে নিয়েই ওদের বাড়ি যাবো তারপর ঐ বের করে দেবে।

রিক: হুম কিন্তু রিস্ক হয়ে যাবেনা? যদি পুলিশ এটাক করে?
.
আদ্রিয়ান: এখানে এখন আমাদের অর্ধেক টিম আছে। অাজকের মধ্যেই যেখানে আমাদের যতো লোক আছে সব নিয়ে এসে, এলার্ট হয়ে, তারপর যাবো ওদের বাড়ি।
.
জয়: কিন্তু সবাইকে একজায়গায় আনাটা ঠিক হবে?
.
আদ্রিয়ান: কিচ্ছু করার নেই ফাইলটা পেতে হলে রিস্ক নিতে হবে।
.
রিক: হ্যা আর কাল অবধি এরা সবাই আমাদের কবজাতেই থাকবে!
.
আদ্রিয়ান: হুম।
.
আঙ্কেল: আদ্রিয়ান তুমি কী করছো এসব?
.
আদ্রিয়ান চুপ করে আছে তাই আব্বু বলল
.
– তারমানে তুমি এতোদিন যা যা করেছো সব অভিনয় ছিলো? আমার মেয়েটাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে, ভালোবাসো বলেছিলে সব নাটক ছিলো?
.
আদ্রিয়ানের কিছু বলার আগেই রিক বলল
.
– মানতে হবে আদ্রিয়ান তোমার এক্টিং স্কিল খুব হাই। কেউ ধরতে পারলোনা তোমার নাটক?
.
আদ্রিয়ান এবার বাকা হেসে রিকের কাধে হাত রেখে বলল
.
– আমার এক্টিং স্কিল কতোটা তার ধারণা করা তোমার পক্ষে সম্ভব নাহ। তিন বছর ধরে দাবার একেকটা গুটি খুব সাবধানতার সাথে চেলেছি। Now it’s time for checkmate!
.
রিক ওরা আর কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে গেলো ওরা নিচে যেতেই আদ্রিয়ান তাকালো সবার দিকে, সবার চোখেই আদ্রিয়ানের প্রতি রাগ ঘৃণা দুটোই আছে। আদ্রিয়ান হাত দিয়ে ইশারা করে বলল সবার মাথা থেকে বন্দুক নামিয়ে সরে দাড়াতে সবাই তাই করল। আমি চেয়েও যেতে পারছিনা ওদের কাছে কারণ আদ্রিয়ান ধরে রেখেছে আমায়। আব্বু এগিয়ে এসে উত্তেজিত হয়ে বলল
.
– তারমানে তুমিই আমার মেয়েকে এতোদিন নিজের কাছে আটকে রেখেছিলে ঐ ফাইলের জন্যে? আর ঐ ছেলেটা কী বলছিলো? কী করেছো তুমি আমার মেয়ের সাথে? কীসের বিয়ে?

আমি মাথা নিচু করে আছি। আদ্রিয়ান আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল
.
– বিয়ে করেছি আমি ওকে।
.
– কীহ? অনি তুই ওকে বিয়ে করেছিস? ও কতবড় জানোয়ার সেটা জেনেও তুই কীভাবে?
.
– ওর কোনো দোষ নেই আঙ্কেল আমি ওকে জোর করে বিয়ে করেছি ওকে।
.
এটা শুনে সজীব ভাইয়া তেরে এসে বলল
.
– তোমার সাহস কীকরে হলো? আমার বোনের সাথে এসব করার?
.
উত্তরে আদ্রিয়ান কিছু বললোনা। আপি শুধু কাদছে কান্নার জন্যে কিছু বলতে পারছেনা। ইফাজ ভাইয়া আপিকে সামলাতে সামলাতে বলল
.
– আমার মনে হয়েছিলো অনি খুব লাকি যে তোর মতো একজনকে পেয়েছে যে ওকে এতো ভালোবাসে কিন্তু আজ তো মনে হচ্ছে যে তুই ওর জীবনে আসাটা ওর জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
.
আপি কাদতে কাদতেই বলল
.
– এতোটা নিচে কীকরে নামলে আদ্রিয়ান? ওর একবারো ভাবলেনা?
.
ইফাজ ভাইয়া আবারো বলল
.
– কতো বয়স বলতো মেয়েটার? এই বয়সেই ওকে এতোবড় ধাক্কা না দিলেও পারতি। জোর করে বিয়ে করা, নিজের কাছে এভাবে আটকে রাখা না জানি আর কী কী করেছিস মেয়েটার সাথে। তোদের মতো টেরোরিষ্ট দের কাছে তো কিছুই অসম্ভব না।
.
আম্মু: নিজের ছেলে ভেবেছি তোকে, তার দাম এভাবে দিলি? আমার মেয়টাকে…

এটুকু বলেই কেদে দিলো আম্মু। সবাই আদ্রিয়ানকে নানা কথা শোনাচ্ছে আঙ্কেল আন্টিতো পুরো পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে। নিজের ছেলের এইরকম রুপ কারোরই কাম্য নয়। তবে অবাক করা বিষয় আদ্রিয়ান একটা কথারও উত্তর দিচ্ছেনা চুপচাপ শুনছে। তাও ওর চোখ দুটো নিচের দিকে। হঠাৎ আদিব ভাইয়া এগিয়ে এলো কালো পোশাক পরা লোকগুলো বাধা দিতে গেলে আদ্রিয়ান ইশারা করে আসতে দিতে বলল। আদিব ভাইয়া এসে কিছুক্ষণ আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে থেকে ঠাস করে ওর গালে চর বসিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে দিলো! আমি এক হাত দিয়ে মুখ চপে ধরলাম। এতোটাও ভাবিনি। তবে আদ্রিয়ান কিচ্ছু না বলে শান্ত চোখেই আদিব ভাইয়ার দিকে তাকালো। আদিব ভাইয়া ওর বুকে একটা ধাক্কা মেরে বলল
.
– কী বলেছিলি আমাকে তুই? যে তুই অনিকে বাচাতে টেরোরিস্ট দের খুজছিস, ওদের সবাইকে ধরার জন্যে? ওই গান আর পোশাক সেইজন্যই? কিন্তু আজ কী জানলাম তুই নিজেই একজন টেরোরিস্ট! যে কী না নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে একটা নিষ্পাপ মেয়ের পুরো জীবনটাই নষ্ট করে দিলো? আরে কী দোষ ছিলো মেয়েটার? ভালোই তো বেসেছিল তোকে তার এতোবড় পূরস্কার দিলি?
.
আদ্রিয়ান এখোনো আদিব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে এবার ইশরাক ভাইয়াও এলো এসে ওর সামনে দাড়িয়ে বলল
.
– একদিন গর্ব করে বলতাম যে তুই আমাদের বন্ধু, কিন্তু আজ এটা ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে যে তোর মতো একটা লোকের সাথে আমাদের পরিচয় ছিলো! যে কী না দেশদ্রোহী। নিজের দেশের নিরীহ মানুষগুলোকে মারতে যার হাত কাপেনা।
.
আদিব ভাইয়া আবারো ওর বুকে ধাক্কা মেরে বলল
.
আদিব ভাইয়া: কীসের বন্ধু ও? কারো বন্ধু হবার যোগ্যতা নেই ওর! ও তো একটা জানোয়ার যে শুধু সম্পর্কগুলো নিয়ে খেলতে জানে! ওকে শত্রু বলতেও আজ লজ্জা হচ্ছে আমার। ওর মতো কোনো বন্ধু থাকার চেয়ে নিসঙ্গ থাকা ভালো।
.
আদ্রিয়ান একটা টু শব্দও করলোনা শুধু তাকিয়ে আছে ওর বন্ধুদের দিকে। আদিব ভাইয়া আর ইশরাক ভাইয়া আর কিছু না বলে দূরে সরে গেলো ওর থেকে।
.
এবার আঙ্কেল ওর সামনে এসে দাড়ালো, আদ্রিয়ান চোখ নামিয়ে নিলো আঙ্কেল ছলছল চোখে বলল
.
– তোমার গায়ে হাত তুলবোনা আমি কারণ তোমার মতো ছেলেকে ছুলে আমার হাত নোংরা হয়ে যাবে
.
আদ্রিয়ান একবার আঙ্কেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নিলো। আঙ্কেল বলল

– কাল অবধি তোমাকে নিয়ে গর্ব করে বলতাম ও আমার ছেলে, কিন্তু আজকে আফসোস হচ্ছে এটা ভেবে যে তুমি আমার ছেলে! আল্লাহ যেনো এরকম সন্তান আর কারো ঘরে না দেয়, এইরকম ছেলে থাকার থেকে নিঃসন্তান থাকা হাজারগুন ভালো। যদি তোমার এই আসল চেহারা আগে দেখতে পেতাম, তাহলে এই মেয়েটার জীবনটা এইভাবে দ্বায়িত্ব নিয়ে নষ্ট করতাম না।
.
আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে হাত মুঠো করে দাড়িয়ে আছে, কাউকে বাধা দিচ্ছেনা কিছু বলতে এমন মনে হচ্ছে যেনো ও শুনতে চাইছে যে সবাই আর কী কী বলতে পারে। আঙ্কেল আব্বুর কাছে হাত জোর করে বলল
.
– মাফ করে দে আমায়, ঐ অমানুষের কথা শুনে যদি আমি তোর কাছে তোর মেয়েটাকে না চাইতাম তাহলে হয়তো আজ..
.
– তুই মাফ চাইছিস কেনো? অামার মেয়ের কাছে অপরাধী আমরা সবাই,কেউই ওই জানোয়ার টাকে চিনতে পারিনি। ওর হাতে তুলে দেওয়ার চেয়ে আমার মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিলেও ভালো হতো অন্তত এই নরক যন্ত্রণা ভোগ করতোনা মেয়েটা।
.
এবার আন্টি ধীর পায়ে গিয়ে আদ্রিয়ান এর সামনে গেলো আদ্রিয়ান নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে হয়তো চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা। হঠাৎ আন্টি এলোপাথারি তিন চারটা থাপ্পড় মারলো আদ্রিয়ানকে। তারপর বলল
.
– এইসব দেখার আগে তোর মরা মুখ কেনো দেখালো না আল্লাহ আমাকে?
.
আমি চমকে তাকালাম আন্টির দিকে, কিন্তু আদ্রিয়ান তাকায়নি, ওকে দেখে মনে হচ্চে ও একটা পাথর যার শুধু অস্তিত্ব আছে প্রাণ নেই। পরোক্ষণেই ভাবলাম ওযা করেছে এর চেয়ে ভালো কোনো কথা ডিজার্ব ও করেনা। আন্টি আবার বলল

– ছোটবেলা থেকেই আমার গর্বের কারণ ছিলি তুই! তোর একেকটা গুন দেখে সবাই যখন জিজ্ঞেস করতো ছেলেটা কার? বুক ফুলিয়ে বলতাম আমার ছেলে ও। একসময় আমি ভাবতাম যে তুই আল্লাহর আমাকে দান করা এক আশির্বাদ নইলে এমন একটা ছেলে আমার কোল আলো করে আসে? কিন্তু আজ বুঝতে পারছি তুই আসলে একটা অভিশাপ। নইলে আমার পেটে জন্ম নেয়া ছেলে এতো জঘন্য কাজ করতে পারে? আগে যদি জানতাম যে তুই এইরকম তৈরী হবি তাহলে জন্মের পরেই মেরে ফেলতাম আমি তোকে। কিন্তু আমার গর্ভে জন্ম নিয়ে তুই তো আমার গর্ভকেও অভিশপ্ত করে দিয়েছিস।
.
আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলাম। কথাগুলোতো আমার ই সহ্য হলোনা আদ্রিয়ান কীকরে সহ্য করে নিলো? আমিও কী ভাবি? ও তো একটা হার্টলেস, ও মনে এগুলো প্রভাব ফেলেনা। হঠাৎ জাবিন চিৎকার করে কান্না করে বলল
.
– চুপ করো তোমারা ! কেনো আমার ভাইয়াকে এভাবে বলছো?
.
তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

– ভাইয়া? কী হয়েছে তোর? বলনা ভাইয়া? তুই ঠিক আছিস তো? এগুলো কেনো করেছিস তুই? আমি জানি আমার ভাইয়া একটু পাজি কিন্তু খারাপ না। তুই খারাপ কিছু করতে পারিস না। কোনো সমস্যায় আছিস তুই? কী হলো বল? প্লিজ ভাইয়া।
.
দীর্ঘসময় পর আদ্রিয়ান এবার চোখ তুলে তাকালো জাবিনের দিকে, তারপর মুচকি হাসলো! তবে হাসিটা দীর্ঘস্হায়ী না করে আমার হাত ধরল, আর ওর লোকেদের বলল
.
– এদের রাখার ব্যাবস্হা কর। আর হ্যা ওদের কোনো সমস্যা যাতে না হয়।
.
এটুকু বলে জোর করে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। পেছন থেকে সবাই ওকে বলেছে আমায় ছেড়ে দিতে কিন্তু ও কানে তোলেনি, ও নিজে ড্রাইভিং করল না আজ, গাড়িতে বসে ও একটা কথাও বললোনা গাড়িতে হেলান দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। নিরবতা ভেঙ্গে অামি বললাম
.
– দেখলেন তো যারা আপনাকে নিজের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো আজ তারাই আপনাকে ঘৃণা করছে। কতোটা নিচে নামিয়েছেন নিজেকে যে আপনার নিজের মাও আপনাকে..,
.
উত্তরে আদ্ররিয়ান আবারো সেই মুচকি হাসি দিলো। আমিও আর কিছু বললাম নাহ। বাংলোতে আমাকে রুমে নিয়ে এসে ও সোফায় গা এলিয়ে দিলো, আমি চুপচাপ খাটে বসে চোখের পানি ফেলছি। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– আমিতো বলে দিয়েছি ফাইল কোথায় আছে তবুও ওদের কেনো আটকে রেখেছেন?
.
ও ওভাবেই চোখ বন্ধ করে বলল
.
– ফাইলটা হাতে পাই কালকে ওদের ছেড়ে দেবো!
.
– আপনি সত্যিই অমানুষ।
.
ও ওভাবেই মুচকি হেসে বলল
.
– জানি সেটা। বারবার সবাই মিলে মনে করিয়ে দেবার কোনো দরকার নেই।
.
– I just hate you…

ও এবার চোখ খুলে ভ্রু কুচকে বলল
.
– Sorry?
.
– I hate you ( একটু জোরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে )
.
এবার আদ্রিয়ান শব্দ করে হেসে দিলো কিছুক্ষণ হাসার পর বলল
.
– এটারই কমতি ছিলো।
.
এটুকু বলে আবারো সোফায় হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে বেরিয়ে গেলো। আমি ছলছল চোখে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি মুখে যাই বলি সত্যি তো এটাই যে আমি তোমাকে ঘৃণা করতে পারবোনা আদ্রিয়ান। তুমি যতোই খারাপ হও। বড়জোর তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে পারি, তোমাকে শাস্তি দিতে পারি এমনকি সারাজীবনের জন্যে ছেড়ে দিতে পারি কিন্তু ঘৃণা করতে পারবোনা।
.
রুমে খাটে বসে আছি আর ভাবছি যে কী হলো আজ? অবশেষে আমাকে বলতেই হলো! হেরে গেলাম নিজের কাছে নিজে? পারলাম না ফাইলটা বাচাতে? এরজন্য একমাত্র তুমিই দিয়ী আদ্রিয়ান তোমাকে আমি ক্ষমা করতে পারবো না, কোনোদিন না। সারাদিন আদ্রিয়ান আর তার আসেনি। বেশ রাত করেই এসেছে। আমি শুয়ে পরেছিলাম। কিন্তু দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে উঠে বসলাম। আদ্রিয়ান এসছে, ও আমার দিকে একপলক তাকিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। তারপর আমিও আবার খাটে শুয়ে পরলাম, কেনো এসছে ও এখানে? আজ আমি ওকে কোনো মতেই সহ্য করতে পারবোনা। আজ ওর জন্যে আমার পরিবারের সবাই এতো কষ্ট পেয়েছে, ওদের মাথায় বন্ধুক ধরেছে এসব ভেবেই নিজেকে সামলাতে পারছিনা। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান এলো নিজের টি শার্ট খুলে আমার পাশে সোজা শুয়ে কপালে হাতের উল্টোপিঠ ঠেকিয়ে চোখ বুজে রইলো। আমার এখন ওর ধারেপারে থাকারো ইচ্ছে নেই তাই উঠতে গেলেই ও এক টানে আমাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে আমার ওপর আধশোয়া হলো, আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও আমার কপালে সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে আমার গলায় মুখ গুজে দিলো। এইমুহুর্তে এসব একদম আশা করিনি আমি। এতো শক্ত করে ধরে আছে তাই ছাড়াতেও পারছিনা। তাই রেগে প্লাস অসস্থি নিয়ে বললাম

– আদ্রিয়ান ছাড়ো!
.
ও আমাল গলায় মুখ গুজে রেখেই ধীর কন্ঠে বলল
.
– প্লিজ আজ সরিয়ে দিয়ো না আমাকে। I can’t tolerate this any more…একটু শান্তি চাই আজকে আমার। নিজের সাথে লড়তে লড়তে হাফিয়ে গেছি আমি। খুব বেশি ক্লান্ত লাগছে আজ। এই মুহুর্তে তোমাকে খুব প্রয়োজন আমার।
.
ওর কথার মাথা মুন্ডু কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না। আর বোঝার চেষ্টাও করলাম না। এইমূহুর্তে আমার শুধু এটুকুই মাথায় আসছে যে ও কী কী করেছে। তাই ওকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে বললাম
.
– কেনো? আপনার চাহিদা মেটাতে?
.
এটা শুনে ও মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– মানে?

– মানে কালকে ফাইলটা পেয়ে গেলেইতো হয় আমায় মেরে ফেলবেন নয় ছেড়ে দেবেন, আর তো কাছে পাবেননা, তাই হয়তো ভাবছেন যে ছেড়ে যখন দিবোই তো নিজের মনোরঞ্জন করেই নেই!
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি আবারো বললাম
.
– আপনার এতোই প্রয়োজনীয়তা থাকলে হট হাউজে চলে যান। আমাকে ব্যবহার করে তো নিজের অনেক স্বার্থসিদ্ধি করেছেন অন্তত এইক্ষেত্রে নিজের সার্থসিদ্ধির জন্যে আমায় ব্যবহার করবেন না।
.
আদ্রিয়ান শান্ত চাহনি দিয়েই বলল
.
– একটু বেশি বললে না?
.
আমি রাগী গলাতেই বললাম
.
– আপনি যা করেছেন না তারপর আপনাকে যাই বলি তাই কম হবে।
.
ও এবার আমার ওপর থেকে সরে গিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে আমাকে টেনে ওর বুকে নিয়ে গিয়ে জরিয়ে ধরল আমি সরতে চাইলে আরো জোরে ধরে বলল
.
– কাল কী হবে আমি জানি না। কিন্তু প্লিজ আজ আমার থেকে সরে যেওনা। খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকে ব্যাথা করছে ভীষণ। তুমিও আজ দূরে সরে গেলে আমি মরে যাবো।
.
আমি কিছুতেই আজ ওর ওপর সহানুভূতি দেখাতে পারছিনা। একদমি সহ্য করতে পারছিনা ওকে আমি। তাই ঝাড়া দিয়ে ওর বুক থেকে উঠে পরলাম তারপর চেচিয়ে বললাম
.
– একটুও কী শান্তি দেবেননা আমাকে? আর কতো জালাবেন? আপনার যা চাই কালতো দিয়ে দেবো আপনাকে, তবুও কেনো জালাচ্ছেন? আপনি বুঝতে পারছেন না যে আপনাকে সহ্য হচ্ছে না আমার? রোজ জোর করে আপনার বুকে ঘুমোতে বাদ্ধ করেন, বুঝতে পারেন না, আপনার বুকটা আমার কাছে জলন্ত লাভা মনে হচ্ছে। কষ্ট হয় আমার ওখানে মাথা রাখলে, শরীর জলে যায়, দম আটকে আসে আমার। আর কতো কষ্ট দেবেন আমাকে?

আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুসময় তারপর উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পরলো। আমি একটু অবাক হলাম অন্য সময় এসব বললে তো আমার রফাদফা করে দিতো আজ কী হলো? এতো শান্ত? আমি উঠে যেতে নিলেই আমার হাত ধরে ভ্রু কুচকে বলল
.
– কোথায় যাচ্ছো?
.
– সোফায় ( বিরক্তি নিয়ে )
.
– আমিতো আর জালাচ্ছিনা তাহলে যাচ্ছো কেনো?
.
– আপনার সাথে এক বিছানায় আর ঘুমাতে পারবোনা আমি।
.
ও উঠে বসে বলল
.
– তোমাকে উঠতে হবেনা আমি চলে যাচ্ছি।
.
বলে উঠে দাড়িয়ে হাটতে গিয়ে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো, আমি চমকে গেলাম এর আগে এতোটা নিস্তেজ দেখিনি ওকে আমি। খুব ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করতে যে তোমার কী খুব খারাপ লাগছে? কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করব? কেনো করব? যার কাছে আমার, আমার ভালোবাসার, আমার পরিবার কারো কোনো মূল্য নেই তাকে আমি কেনো মূল্য দেবো? ও ধীর পায়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো আর আমিও শুয়ে পরলাম..
বলে উঠে দাড়িয়ে হাটতে গিয়ে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো, আমি চমকে গেলাম এর আগে এতোটা নিস্তেজ দেখিনি ওকে আমি। খুব ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করতে যে তোমার কী খুব খারাপ লাগছে? কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করব? কেনো করব? যার কাছে আমার, আমার ভালোবাসার, আমার পরিবার কারো কোনো মূল্য নেই তাকে আমি কেনো মূল্য দেবো? ও ধীর পায়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো আর আমিও শুয়ে পরলাম। রাতে আর আদ্রিয়ান রুমে ঢোকেনি আমিও অনেক রাত অবধি জেগেই ছিলাম, এক মিনিটের জন্যেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি আমি, কিন্তু শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পরেছি।

সকালে আদ্রিয়ানের ডাকেই ঘুম ভাঙলো আমার। আমি উঠে বসতেই বলল
.
– তাড়তাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। ব্রেকফাস্ট করে আমরা তোমাদের বাড়ি যাবো ওরাও সবাইকে নিয়ে ওখানেই যাবে।
.
আমি কিছু না বলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই আদ্রিয়ান ব্রেকফাস্ট করতে বলল। আমি বললাম
.
– খাবোনা এখন কিছু।
.
সেটা দেখে আদ্রিয়ান বলল
.
– লিসেন! আজ অন্তত অামি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাইনা। তাই চুপচাপ খেয়ে নাও। আমাকে জোর করতে বাদ্ধ করোনা
.
বলেই আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল, আমিও বাধ্য হয়ে খেয়ে নিলাম, বরাবরের মতো আজকেও জিজ্ঞেস করিনি যে ও খেয়েছে কি না!
.
ঘন্টাখানেট পর রেডি হয়ে নিলাম। বেরিয়ে দেখি ও ওয়েট করছে আজকে সাদা শার্ট কালো জিন্স পরেছে, আর আমি নীল কুর্তি কলো জিন্স। তারপর রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে, বেরোতে নিলেই অভ্র এসে বলল
.
– স্যার আমিও যাবো আজ আপনার সাথে!
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ঘড়ি ঠিক করতে করতে বলল

– তোমার ওখানে যাওয়াটা রিস্কি হয়ে যাবে অভ্র। আমি চাই না তোমার কোনো ক্ষতি হোক।
.
আমি ভাবছি অভ্র কেনো যেতে চাইছে ও কী জানে আদ্রিয়ান কী করে। আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে অভ্র বলল
.
– কিন্তু স্যার আপনাকে কীকরে..
.
– অভ্র! আমি না বলেছি মানে না! তোমার বাবা মা আছে ফ্যামিলি আছে ওদের কথা ভাবতে হবে তোমাকে!
.
– স্যার আপনারো তো..
.
আদ্রিয়ান এবার হেসে বলল
.
– হুম আছে! কিন্তু আমি মরে গেলে আফসোস করার মতো আর কেউ নেই। যেই পেপারগুলো রেডি করতে বলেছি করেছো?
.
– জ্বি স্যার
.
– নিয়ে এসো সাইন করবো।
.
অভ্র গিয়ে পেপার নিয়ে এলো, আমি নিরব দর্শকের মতো দেখছি, কীসের পেপার এগুলো, আর এই মুহূর্তে এতো কীসের তাড়া এগুলো সাইন করার? ও পেপার গুলো সাইন করে অভ্রর হাতে দিয়ে দিলো। অভ্র মাথা নিচু করে ভেতরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ডাকলো
.
– অভ্র?
.
অভ্র পেছনে তাকাতেই আদ্ররিয়ান দুই হাত বাড়িয়ে দিলো। অভ্র এক মুহূর্ত দেরী না করে দ্রুত পদে এসে অাদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল
.
– স্যার…
.
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ওকে ছাড়িয়ে বলল
.
– যাও ভেতরে যাও।
.
অভ্র রুমে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম এদের কী হচ্ছিলো মাথায় ঢুকছে নাহ।

আদ্রিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে একমনে ড্রাইভ করছে আর আমি সিটে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বুকের ভেতর টিপটিপ করছে, কী হবে আজকের পর? ফাইলটা দিয়ে দিলে আমি হয়তো মুক্তি পেয়ে যাবো এই নরক থেকে, কিন্তু তারপর? ওই ফাইলটার সাহায্যে ওরা যে ধ্বংস লীলা চালাবে সেই দ্বায় কীকরে এরাবো আমি? আজ আমিও স্বার্থপর হয়ে গেলাম? নিজের পরিবারকে বাচাতে দেশের নিরীহ কিছু মানুষের জীবন ঝুকিতে ফেলছি আমি? কিন্তু আমিও তো নিরুপায়! নিজের চোখের সামনে নিজের পরিবারের সকলের মৃত্যু কীকরে দেখতাম আমি? কিন্তু না দেশকে বাচানোর একটা শেষ চেষ্টা আমি করবোই, তাতে নিজের প্রাণও যদি দিতে হয় তো দেবো! যদি কারো প্রাণ নিতে হয় তাও নেবো সেটা যেই হোক।
.
গাড়ি থামতেই চমকে গেলাম। তাকিয়ে দেখি বাড়ি চলে এসছি, ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিলাম যে কোন দিক দিয়ে এসছি আর কতোসময় কেটেছে বুঝতেই পারিনি। আমাকে নামিয়ে আদ্রিয়ান সোজা গার্ডেন এরিয়ায় নিয়ে গিয়ে দাড় করালো। কালো পোশাক পরা প্রচুর মানুষ দাড়িয়ে আছে। আর ওদের সবাইকে বন্দুক তাক করে দাড় করিয়ে রেখেছে। ওদের দিকে ছলছল চোখে তাকালাম আমি। ওরা আমাকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে গেলো। রিক এসে বলল

– এসো গেছো? তোমারি অপেক্ষা করছিলাম সবাই এবার বেশি সময় নষ্ট না করে বলে দাও তো ফাইলটা বাড়ির ঠ ঠিক কোন জায়গাতে রেখেছো?
.
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। আদ্রিয়ান বলল
.
– আগে এটা বলো যে এখানে সবাই আছে তো? মানে আমাদের হোল টিম?
.
জয়: একজন ও বাদ নেই সব আছে।
.
আদ্রিয়ান বাকা হেসে বলল
.
– গ্রেট!
.
রিক: তো এবার তোমার বউকে বলো ফাইলটা কোথায় আছে তাড়াতাড়ি বলতে।
.
তখনি আব্বু বলল
.
– মামনী বলোনা ওদের। যা হবে সেটা দেখা যাবে।
.
তখনি দ্বীপ আব্বুর মাথায় বন্দুক রেখে বলল
.
– আরেহ আঙ্কেল একটু বেশি কথা বলছেন আপনি! যদি আপনার মেয়ে একেবারে নাই বলে না ওকেই মেরে দেবো। সেটা মানতে পারবেন?
.
আতকে উঠলো আব্বু। আব্বুর আতকে ওঠা মুখ দেখে হেসে রিক বলল
.
– সেইজন্যেই বলছি চুপ থাকুন

আব্বু আর কিছু বললোনা, আমি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি। আদ্রিয়ান আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল
.
– কোন জায়গায় আছে ফাইলটা?
.
আমি অসহায় চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি, আদ্রিয়ান আমাকে ঝাকি দিয়ে বলল
.
– দেখো সময় নেই বেশি আমার হাতে ফাস্ট!
.
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। আদ্রিয়ান রেগে বলল
.
– তুমিকি বলবে নাকি তোমার বাবার মাথায় আবারো বন্দুক ধরব?
.
আমি এবার ওর দিকে তাকিয়ে কেদে দিয়ে বললাম
.
– স্টাডি রুমে আছে ওটা।
.
রিক হুরমুর করে বলল
.
– তাহলে আর ওয়েট করছি কেনো?

– ওয়েট! এতো তাড়া কীসের? সবাই যাবো না তাহলে এদের কে পাহাড়া দেবে? আমার সাথে দুই তিনজন চলো তাহলেই হবে।
.
দ্বীপ, আর কালো পোশাক পরা দুজন এলো আমাদের সাথে, আদ্রিয়ান আমার হাতের বাহু ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমার নিজেকে একটা নির্জীব প্রাণী মনে হচ্ছে। কোনো অনুভূতি কাজ করছেনা। স্টাডি রুমে গিয়ে আদ্রিয়ান আমার হাত ছেড়ে বলল
.
– কোথায় আছে বার করো!
.
আমি কাদতে কাদতে আদ্রিয়ানকে কিছু বলবো তার আগেই ও বলল
.
– তোমার পরিবার এখোনো আমাদের হাতেই বন্দি।
.
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না কাদতে কাদতে আলমারি খুলে নিচের তাকের তিন নম্বর ড্রয়ার থেকে ফাইলটা বের করলাম। সাথে সাথে দ্বীপের চোখ চিকচিক করে উঠল, দ্বীপ এগিয়ে আসার আগেই আদ্রিয়ান আমার হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে গেলো। তারপর হালকা হেসে বলল
.
– At last!
.
বলেই আবার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যেতে লাগল দ্বীপ আর ওই দুজন ও পিছে পিছে এলো। গার্ডেন এরিয়ায় এসেই আদ্রিয়ান কয়েকজনকে বলল আমাদের সবাইকে নিয়ে ভেতরে যেতে। তখনি রিক বলল
.
– কী বলছো ভেতরে কেনো নিয়ে যাবে।
.
আদ্রিয়ান রেগে বলল
.
– চুপ করো এখন। ফাইলটা এখন অামাদের হাতেই আছে। এখন আমি যা করছি ভেবেই করছি।
.
বলেই আমাকে সহ আমাদের সবাইকে ঠেলে ভেতরে নিয়ে গেলো পেছন পেছন আদ্রিয়ান ও এলো। ও এসে রুমে ঢুকে বলল
.
– বাইরে এখন যদি কেয়ামত ও হয়ে যায় তবুও এই রুম থেকে কেউ বেরোবেনা। আর যদি বেরহও তাহলে অমানুষ, জানোয়ার খেতাবি তো দিয়েই দিয়েছো তার প্রাকটিক্যাল প্রতিফলন দেখবে।

ওর এই হুংকারের কেউ কোনো উত্তর দিতে পারলোনা। ও পকেট থেকে গান বের করে কাউকে ফোন করতে করতে দরজাটা বাইরে দিয়ে লক করে চলে গেলো। সবাই চুপচাপ দাড়িয়ে আছি রুমে, সবার মুখেই বিষন্নতা, আব্বু আঙ্কেল খাটে বসে পরলো। আমি গিয়ে আব্বুর পাশে বসে আব্বুকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলাম, আব্বু অামার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
.
– আমাকে ক্ষমা করে দাও মামনী তোমার বিশ্বাস এর মর্জাদা রাখতে পারিনি ঠিক একজন মানুষের হাতে তোমাকে তুলে দিতে পারিনি।
.
অাঙ্কেল অান্টিও এটা নিয়ে আক্ষেপ করলেন আমার কাছে ক্ষমাও চাইলেন কিন্তু ওনাদের দেয়ার মতো শান্তনার ভাষা জানা নেই আমার আমিতো নিজেই নিজেকে সামলাতে পারছিনা ওদের কীকরে সামলাবো? আপি এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বসে রইল। আদিব ভাইয়া বলল
.
আদিব ভাইয়া: এতোগুলো বছর একসাথে থেকেও বুঝতে পারলাম না ও কী?
.
ইশরাক ভাইয়া: ওর অভিনয়ের ক্ষমতাই হয়তো বেশি ছিলো।
.
ইফাজ ভাইয়া: কিন্তু আমাদের এভাবে এখানে আটকে রাখল কেনো?
.
আমি: কাব্য, ওহি, অন্ত, সুলতাপ্পি কোথায়।
.
অাম্মু: ওরা তো পরশুদিনি শারমিন ( ছোট ফুপ্পি) দের বাড়িতে গেছে বেড়াতে।
.
শুনে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম, বাচ্চাগুলো অন্তত এসবের সম্মুখীন হলোনা। জাবিন চুপ করে বসে কাদছে। সবাই এরকম বিভিন্ন কথা বলছে হঠাৎই বাইরে থেকে গোলাগুলির অওয়াজ আসতে লাগল। সবাই চমকে দাড়িয়ে গেলাম।
.
আদিব ভাইয়া: বাইরে ফায়ারিং হচ্ছে নাকী?
.
ইশরাক ভাইয়া: নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাধিয়ে দিলো নাকি? নাকি আবার পুলিশ এসছে?

ইফাজ ভাইয়া: কিন্তু প্রশ্ন হলো যে পুলিশ এলো কীকরে?
.
সবাই এরকম আরো নানারকম কথা ভাবতে ভাবতে গোলাগুলির আওয়াজ আরো বাড়তে থাকলো। একেকটা আওয়াজে আমরা সবাই কেপে উঠছি। এরকম তীব্র গোলাগুলির আওয়াজ শুনে আমি বললাম
.
– অ্ আমাদের বাইরে যেতে হবে।
.
সজীব ভাইয়া: পাগল হয়ে গেছিস? কী পরিস্হিতি বাইরে বুঝতে পারছিস? যেকোনো মুহুর্তে গুলি লেগে যাবে।
.
আপি: আর আদ্রিয়ান ও তো শাষিয়ে গেলো কাউকে না বেড়োতে।
.
ইফাজ ভাইয়া: হ্যা এখন না বেড়োনোই ভালো।
.
প্রায় আধ ঘন্টা পর গোলাগুলির পর সব আওয়াজ থেমে সবকিছু একেবারে শান্ত হয়ে গেলো। কিন্তু এতে আমার মন আরো অশান্ত হয়ে গেলো। আমি ভাইয়াদের বললাম
.
– ভ্ ভাইয়া অ্ আমি বাইরে যাবো।
.
ইফাজ ভাইয়া: কিন্তু অনি।

আমি চেচিয়ে বললাম
.
– আমি বাইরে যাবো তোমরা দরজা ভাঙো
.
সজীব ভাইয়া: কিন্তু অনি
.
আমি: তোমরা ভাঙবে? (চেচিয়ে)
.
আমার জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে আদিব আর ইফাজ ভাইয়া মিলে বেশ কষ্টে দরজা ভাঙলো। আমি ওদের রেখেই ছুটে বেরিয়ে গেলাম। ছুটতে ছুটতে হোচট খেয়ে পরেও গেলাম, কিসের সাথে হোচট খেলাম দেখতে গিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলাম কারণ একটা লাশ ঐ কালো পোশাক পরা লোকের, এগিয়ে যেতে যেতে আরো শকড হলাম কারণ আশেপাশে অনেক কালো পোশাক পরা লোকেদের গুলি খাওয়া লাশ পরে আছে, নিজের রক্ষার জন্যে ওখান থেকেই একটা গান হাতে তুলে নিলাম। আমি এগিয়ে বাইরে গিয়ে গার্ডেন এরিয়ার দিকে তাকিয়ে টোটালি শকড হয়ে গেছি। আদ্রিয়ান এক হাতে গান নিয়ে আরেক হাতে ফাইল খুলে দেখছে, আর ওর চারপাশে কালো পোশাক পরা কিছু লোক দাড়িয়ে আছে। আশেপাশে বাকিদের দেখছি না রিক জয় আর দ্বীপ কাউকেই নয়। কালো পোশাক পরা একজন বলল
.
– ওয়েলডান স্যার সবগুলোকে এভাবে সরিয়ে ফাইলটা নিজের দখলে নিয়ে আসবেন?
.
আরেকজন বলল
.
– ওদের সাথে থেকে ওদেরকেই এভাবে শেষ করবেন ভাবতেই পারিনি। সত্যিই আপনি মাস্টার মাইন্ড। নইলে এভাবে সুচ হয়ে ঢুকে কেউ ফাইল হয়ে বেরোতে পারে? আপনাকে বিশ্বাস করে নিজেরাই নিজেদের জালে ফেসে গেলো!

অামি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তারমানে অদ্রিয়ান ওদেরও সরিয়ে দিয়েছে নিজের পথ থেকে? যাতে ও এখন ফাইলটা নিয়ে নিজেই এই জগতে রাজত্য করতে পারে? নাহ ফাইলটা ওর কাছে থাকতে দেয়া যাবেনা! এতে আমাকে যা করতে হয় আমি করব, আমার একটা ভূলের জন্যে আমি এতোগুলো মানুষের প্রাণ বিপদে ফেলতে পারবোনা। আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে একবার আমার হাতের বন্দুকের দিকে তাকালাম। মন আর মস্তিষ্কের সাথে অনেক্ষণ যুদ্ধ করে ঠিক করলাম আমাকে এটা করতেই হবে? এতোগুলো নিরীহ প্রাণ বাচাতে আমাকে এটা পারতেই হবে।
.
আদ্রিয়ান ফাইলটা দেখতে দেখতে মুখে হালকা হাসি রেখে ঘরের দিকে আসছে। আমি কাপাকাপা হাতে গানটা তুলে ওর দিকে তাক করলাম, ও এগিয়ে আসছে ওর দৃষ্টি ফাইলে। বহু কষ্টে মনের সাথে যুদ্ধ করে অামি গুলি চালিয়ে দিলাম, আর কো-ইনসিডেন্টলি গুলিটা সোজা ওর বুকের বা পাশে গিয়ে লাগল। সাথে সাথে ও দুকদম পিছিয়ে গেলো, আর মুখ দিয়ে ‘উমহ’ টাইপ শব্দ করে উঠল। ওর সাদা শার্ট বুকের দিকটায় রক্তে লাল হয়ে গেলো। ও ভ্রু কুচকে বুকের বা পাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে সামনে তাকালো, সামনে তাকিয়ে আমাকে ওর দিকে গান তাক করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর অবাক দৃষ্টি আরো বেশি বৃদ্ধি পেলো। এরমধ্যে বাকিরাও এসে গেছে আন্টি আদ্রিয়ানকে ওভাবে দেখে জোরে চিৎকার করে উঠল, সবাই শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান হাটু গেরে বসে পড়ল, আমার হাত থেকে গান পরে গেলো। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে ওর রক্তাক্ত বুকটা চেপে ধরে একটা শ্বাস নিলো। আদিব ভাইয়া চিৎকার করে উঠল
.
– আদ্রিয়ান..?

আমিও হাটু গেরে বসে দুইহাতে নিজের মুখ চেপে ধরলাম। সবাই দাড়িয়ে কাদছে কিন্তু ওর কাছে কেউ চেয়েও যেতে পারছেনা। কীকরে যাবে? ও তো একজন টেরোরিস্ট, আইনের শত্রু, দেশদ্রোহী। আদ্রিয়ান আর বসে থাকতে পারলোনা বুকে হাত রেখেই পরে গেলো মাটিতে। সকলের কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। আমি শুধু ভাবছি যে আমি কী করলাম? আর কীকরে করলাম? নিজের হাতে আমি..? আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো তারপর কোনোরকমে হাতটা একটু তুলে ইশারা করে আমাকে ডাকল। আমি অার নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না ছুটে গেলাম ওর কাছে ওর সামনে গিয়ে হাটু গেরে বসে পরলাম, আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে, বুক ফেটে কান্না আসছে। ও আমার দিকে ছলছলে চোখে তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল
.
– অ্ আমার ম্ মাথ্ থাটা এক্ টু ক্ কোলে নেবে? আসল্ লে উঠতে প্ পার্ ছি নাহ।
.
আমি তাড়াতাড়ি ওর মাথাটা কোলে নিয়ে বসলাম। তখনি অভ্র এলো ওর পেছনে পুলিশ ও এলো। অভ্র চেচিয়ে বলল
.
– স্যার?
.
অফিসার: ও মাই গড! ওনার গুলি কীকরে লাগল? অপারেশন এর শেষ অবধি উনি তো ঠিকি ছিলেন।
.
আমরা কেউ অফিসারের কথা বুঝলাম না। অভ্র গাড়ি বের করার জন্য ছুটে বেরিয়ে গেলো। সবাই কাদছে আদ্রিয়ানের এই অবস্হা দেখে। কিন্তু ঐযে ওর করা কাজের জন্যে কেউ কাছে অাসছে না। আদ্রিয়ান হালকা করে মাথাটা আন্টির দিকে ঘুরিয়ে ডাকল
.
– মা..

আন্টি মুখ চেপে ধরে জোরে জোরে কাদছে, ওনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখন ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে তার ছেলের কাছে, বুকে জরিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ওর কৃতকর্মই আন্টিকে আটকে রেখে দিয়েছে ওখানে। আদ্রিয়ান আবারো ডাকলো
.
– মাহ…
.
আন্টি কাদতে কাদতে বসে পরল কিন্তু এলোনা ওর কাছে। আদ্রিয়ান সাধারণত আন্টিকে মম বা আম্মু বলে, মা বলেনা কিন্তু আজ বললো। আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– অ্ আদ্রিয়ান আমি এটাহ এটা করতে চাইনি আমমি আমি জানিনা ক্ কীকরে কী করে..
.
বলেই আবারো কেদে দিলাম, আদ্রিয়ান ভারি নিশ্বাসের সাথে মুচকি হেসে বলল
.
– অাজ্ আজকে একটু অ্আমায় বলত্ তে দেবে? জানো আজ অন্ অনেক কথা ব্ বলবো ভেবেহ ভেবেছিলাম কিনত্ কিন্তুহ বোধ হয় ব্ বেশি কথ্ থা বলার সময় আমাহ আমার হাতে নেই।
.
আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– আদ্ আদ্রিয়ান

– এটুকু বলবোহ আমিহ্ তোমাকেহ কোনো মি্ মিথ্যে বলিনিহ জানোহ? শুধ্ শুধু একটা বল্ বলেছি ওইদিন। তোমাকেহ্ বিয়েহ্ করার কারণটাহ্ আসলে রাগ্ রাগের মাথায় ওসবহ বলেহ ফেলেছিহ। আম্ আমিহ কখনোহ ঐসব চিন্ চিন্তাও করিনিহ!
.
আদ্রিয়ান বহু কষ্টে কথা গুলো বলছে। আমি কাদতে কাদতে বললাম
.
– আদ্রিয়ান তোমার কষ্ট হচ্ছে প্লিজ কথা বলোনা তোমার কষ্ট হচ্ছে। অভ্র (চেচিয়ে)
.
আদ্রিয়ান এবারেও মুচকি হেসে বহু কষ্টে বলল
.
– প্লিজ আজকেহ অন্ততহ ব্ বলতেহ দাও। এমনিতে তো খালি তুমিই বলতেহ থাকোহ। ইউ আর সো টকেটিভ ইয়ার।
.
আমি শব্দ করে কাদছি ওর কথা শুনে বাকি সবাই ও কাদছে। আদ্রিয়ান আবার বলল
.
– আর তাছাড়াহ তুমিহ তোহ আম্ আমিহ মুখেহ কিছুহ নাহ বললেহ আমার মনের কথাহ বুঝতেও পারোনাহ। হয়তোহ আর বলার সুযোগ পাবোনাহ।
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ থামো। কিচ্ছু হবেনা তোমার!
.
এরমধ্যেই অভ্র এসে ওকে নিয়ে যেতে নিলে ও হাত দিয়ে বাধা দিলো। তারপর আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল

– আম্ মি আজ মরেও শান্তিহ পাবোহ কারণ আমিহ আমা আমার কথ্ কথা রাখতেহ পেরেছিহ। তোমাকে কথাহ দিয়েছিলাম যে তোমার কিচ্ছুহ হতে দেবোনা। আজ তোম্ তোমার আর কোনোহ বিপদ নেই, তোমার জীব্ জীবনের আর কোনহ ঝুক্ ঝুকিহ নেই।
.
অভ্র: স্যার এসব পরে বলতে পারবেন এখন যেতে হবে।
.
আদ্রিয়ান: পরেহ সময় নাও পেতে পারি অভ্ অভ্র আমায় বলতেহ দাও।
.
এরপর আমার গালে ওর রক্তাক্ত হাত রেখে বলল
.
– জানোহ আমি খুব লাকিহ। নইলেহ ন্ নিজের ভালোবাসার মানুষটার হাতে তারি কোলেহ মাথা রেখে মরার সুযোগ কজন পায়?
.
– আদ্রিয়ান চুপ করোহ তোমায় হসপিটালে নিতে দাও প্লিজ
.
অভ্র: প্লিজ স্যার..
.
ওর রক্তে আমার গাল আর পোশাকও রক্তাক্ত হয়ে গেছে। ও আমাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে হাফাতে হাফাতে বলল
.
– তবেহ আফসোস যেহ তোমার মনেহ আমার জন্যেহ ঘৃণাহ দেখে মরতেহ হবেহ। হয়তোহ সব জানার পরেহ এই ঘৃণা থাকবেনা কিন্ কিন্তুহ তার সাথেহ হয়তোহ আমিও থাকবোনাহ
.
হঠিৎই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। ওর কথার মানে বুঝছিনা আমি তাই আমি কাদতে কাদতে বললাম

– আদ..
.
– এই দেখোহ তোমাকেহ ঠিক এই জায়গায় এরকমিহ এক বৃষ্টির মধ্যে প্রথম দেখেছিলাম, ভালোবেসেছিলাম, আর আজ ঠিক সেই একি জায়গায়, এই বৃষ্টিতেই আজ আমি হয়তো তোমাকে শেষ দেখবোহ।
.
– থামো প্লিজহ।
.
আদ্রিয়ানের শ্বাস আটকে আসছে তবুও ও বলবেই আজকে। ও ভারী শ্বাস নিতে নিতে বলল
.
– তবে সব সত্যি তোমায় বলেহ যেতে নাহ পারলে ওহ একটাহ সত্যিহ বলেহ যেতেহ চাই? বিশ্বাস করবেহ?
.
বৃষ্টির পানিতে ওর রক্ত ধুয়ে মাটিও লাল হয়ে যাচ্ছে আমি কিছু না ভেবেই হ্যা বোধক মাথা ঝাকালাম ও মুচকি হেসে আমার গাল আরো গভীরভাবে ছুয়ে বলল
.
– I LOVE YOU MAYABINI..
.
আমি এবার শব্দ করে কেদে দিলাম। সবাই অলমোস্ট আওয়াজ করেই কাদছে আর অভ্রও। হঠাৎ আদ্রিয়ানে হাত আমার গাল থেকে আস্তে করে পরে গেলো আর ও চোখ বন্ধ করে নিলো। সেটা দেখে আমার রুহু কেপে উঠলো, কাপা কাপা গলায় ডাকলাম
.
– আদ্ আদ্রিয়ান? আদ্রিয়ান? এ্ এই ত্ তাকাও?
.
কিন্তু এতো ডেকেও ওর সারা পেলাম না অভ্রও ডাকলো, এবার সবাই ছুটে এলো ওকে ডাকল কিন্তু আদ্রিয়ান চোখ খুললোনা, কারো ডাকে সারা দিলোনা। আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে পাথেরের মতো তাকিয়ে থেকে ওর নাম নিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম
.
আমার এই চিৎকারে যেনো সেদিন আকাশো স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা যেনো আমার আর্তনাদের সাক্ষি হয়ে ছিলো, ওর রক্ত বৃষ্টির পানির সাথে আমার গা থেকে ধুয়ে যাচ্ছে কিন্তু সম্পূর্ণ ধুতে পারছেনা, ওর চিন্হ আমার গা থেকে মুছতে আজ বেষ্টির ফোটাও ব্যার্থ হচ্ছে। এই বৃষ্টিই একদিন ওর আমাকে প্রথম দেখার সাক্ষি ছিলো, এই বৃষ্টিই আমি ওকে প্রথম আমার ভালোবাসার কথা বলেছিলাম তার সাক্ষি ছিলো? সেইজন্যেই কী এই বৃষ্টিঈ ওকে চিরকালের মতো ওকে হারানোর সাক্ষি হলো? হারিয়ে ফেললাম আমি আমার আদ্রিয়ানকে? চিরকালের মতো?

আমার এই চিৎকারে যেনো সেদিন আকাশো স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা যেনো আমার আর্তনাদের সাক্ষি হয়ে ছিলো, ওর রক্ত বৃষ্টির পানির সাথে আমার গা থেকে ধুয়ে যাচ্ছে কিন্তু সম্পূর্ণ ধুতে পারছেনা, ওর চিন্হ আমার গা থেকে মুছতে আজ বেষ্টির ফোটাও ব্যার্থ হচ্ছে। এই বৃষ্টিই একদিন ওর আমাকে প্রথম দেখার সাক্ষি ছিলো, এই বৃষ্টিই আমি ওকে প্রথম আমার ভালোবাসার কথা বলেছিলাম তার সাক্ষি ছিলো? সেইজন্যেই কী এই বৃষ্টিই ওকে চিরকালের মতো ওকে হারানোর সাক্ষি হলো? হারিয়ে ফেললাম আমি আমার আদ্রিয়ানকে? চিরকালের মতো? কেনো হলো এরকম? আমাদের গল্পটা এতোটা জটিল কেনো হলো? এরকম হবার কী খুব দরকার ছিলো? কেনো এভাবে সব শেষ হয়ে গেলো? কেনো?
.
.
সকালে ঘুমের মধ্যে গালে ছোট করে চুমু দিয়ে মিষ্টি কষ্টে কেউ বলল
.
– Good morning…
.
সেই মিষ্টি আওয়াজ শুনেই ঘুম ভাঙল, মুচকি হেসে হালকা চোখ ডলে ঘুরে তাকিয়ে বললাম
.
– Very good morning..
.
কিন্তু তাকিয়ে দেখি সে মুখ ফুলিয়ে আছে সেটা দেখে আমি ঠোটে হাসি রেখেই ভ্রুটা হালকা কুচকালাম। এতোক্ষণ ও আমার কাধে হালকা করে হাত দিয়ে ঝুকে ছিলো এখন মুখ ফুলিয়েই উঠে বসল। ওর মুখটা দেখলেই আমার সব কষ্ট নিমেষেই শেষ হয়ে যায়, কারণ আমার সামনে বসে আছে আমার পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে, এখন ওকে যে দেখতো সেই কচলে আদর করে দিতো, মুখ ফুলিয়ে রাখা বলে এক্কেবারে কিউটের ডিব্বা লাগছে। দুধ সাদা গায়ের রং, হালকা বাদামী চুলগুলো সাইডে সিথি করে একটা বেণী করা, মাত্র পাঁচ বছরেই ঘন চুলের বেণীটা পিঠ ছাড়িয়ে পরছে, অনেক কাটতে চেয়েছিলাম কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে কাটতে পারিনি, এমনিতেই ঘন চুল বলে আর জোর ও করিনি, গোলাপী রঙের ঠোটটা ফুলিয়ে রেখে দিয়েছে। ওর মুখ দেখেই বুঝেছি যে আজ ও এই মেয়ে সকাল সকাল কোনো কান্ড ঘটিয়ে এসছে। ও গোমরা মুখে বলল
.
– মাম্মা তুমি আজকেও লেইট করেছো। আর ঐ তৌশিল আজকেও আমাকে বকা দিয়েছে!
.
আমি কপাল কুচকে হালকা হেসে বললাম
.
– কেনো? আজ আবার কী করেছো?
.
ও দুইহাত এক করে মুখটা আরো ফুলিয়ে বলল
.
– আমি বল খেলছিলাম, খেলতে খেলতে ওর গায়ে লেগে গেছে, আর আমি চাওয়ার পরেও ও আমাকে বলটা দেয়নি।
.
আমি ওর দিকে পুরোপরি ঘুরে বললাম
.
– তুমি কী ওকে সরি বলেছো?
.
ও এবার মুখ কাচুমাচু করে বলল
.
– নাহ সেটা বলিনি।
.
আমি এবার কুনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে হালকা উঠে বললাম
.
– কেনো?
.
ও এবার মেরুদন্ড সোজা করে বসে বলল

– আমিতো ইচ্ছে করে মারিনি! আমি খেলতে খেলতে জোরে ছুড়েছিলাম অার ওর গায়ে লেগে গেছে। আমি তো জানতাম না লেগে যাবে, সরি কেনো বলবো?
.
আমি এবার আসাম করে বসে বললাম
.
– আচ্ছা একটা কথা বলো বলটা তৌশিল এর গায়ে লেগেছে?
.
ও হ্যা বোধক মাথা ঝাকালো আমি হেসে বললাম
.
– ও ব্যাথাও পেয়েছে?
.
ও এবারেরও মাথা ঝাকালো। আমি আবার বললাম
.
– তুমি ইচ্ছে করে দাও বা না দাও তোমার জন্য একজন ব্যাথা তো পেয়েছে তাইনা? আর কেউ যদি তোমার অজান্তেও তোমার হাতে ব্যাথা পায় তোমার কী তাকে সরি বলা উচিত না ব্যাথা দেবার জন্যে?
.
– হুম ( মাথা নিচু করে )
.
– তাহলে আমার সুইটহার্ট কী করবে এখন?
.
ও হেসে বলল

– তৌশিলকে গিয়ে সরি বলব, আর তারপর বলটা চাইবো
.
– That’s like my baby…
.
ও এবার খিলখিলিয়ে হেসে বলল
.
– আর তুমি আমার বেস্ট মাম্মা
.
আমি হেসে দিয়ে ওকে ভেঙ্গিয়ে নকল করে বললাম
.
– তুমি আমার বেস্ট মাম্মা…
.
বলেই ওকে কাতুকাতু দিতে লাগলাম আর ও খিলখিয়ে হাসছে। তারপর ও বালিশ তুলে নিলো এরপর দুজনেই বালিশ দিয়ে ছুড়ছুড়ি করে খেলছি যেনো দুজনেই সমবয়সী বাচ্চা। এরপর ক্লান্ত হয়ে দুজনেই শুয়ে পরলাম খাটে। এরপর কিছুক্ষণ হাফিয়ে দুজনেই শব্দ করে হেসে দিলাম। হাসতে হাসতেই আমার চোখ গেলো ঘরের কোনে পরে থাকা বলের দিকে আমি কপাল কুচকে বললাম
.
– মিষ্টি? তুমি যে বললে তোমার বল তৌশিল নিয়ে গেছে?
.
মিষ্টি মুখ টা কাচুমাচু করে বলল
.
– আমি বলটা নিয়ে এসছি।
.
– ও এমনিই বলটা দিয়ে দিলো?
.
মিষ্টি মুখটা গোমরা করে গাল ফুলিয়ে বলল
.
– আমি জোর করে নিয়ে এসছি।
.
– কীভাবে? ( অবাক হয়ে)
.
ও মুখ কাচুমাচু করে আঙ্গুল কচলাতে কচলাতে বলল
.
– আমি ওর চুল টেনে দিয়েছি, গালে খামচিও দিয়েছি, আর পেটে ঘুষি মেরেছি।
.
আমি কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললাম
.
– আমাকে তাহলে কেনো বললে যে বল দেয়নি?
.
– তুমি যাতে ওকে বকো তাই ( মুখ ছোট করে)
.
বলেই খাট থেকে লাফিয়ে নেমে দিলো ভো দৌড়। আমি জোরে চেচিয়ে ডাকলাম
.
– মিষ্টি….
.
বলেই ওর পিছে ছুট লাগালাম। ও খিলিখিলিয়ে হাসছে আর দৌড়চ্ছে আমিও ওর পেছন পেছন হাসতে হাসতে দৌড়ে সিড়ির নীচে এসে ওকে ধরে ফেললাম তারপর কোলে তুলে নিয়ে বললাম
.
– ফাজিল আমাকে বোকা বানানো?

বলেই ওকে কোলে নিয়ে সোফায় বসলাম। ওর পিছে ছুটতে ছুটতে আমি হাফিয়ে গেছি কিন্তু এই মেয়ের মধ্যে ক্লান্তির ক ও নেই। আমার অবস্হা দেখে ও তো হেসে কুটিকুটি। আমি কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে একটা ছোট শ্বাস নিলাম। ও সাথেসাথেই মুখটা ইনোসেন্ট করে ফেললো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে দুজনেই ফিক করে হেসে দিলাম। দুজনেই খুনশুটি করতে করতে বলল কেউ বলে উঠল
.
– কী করছে মা বেটি মিলে?
.
কন্ঠ শোনা মাত্রই মিষ্টি আমাকে ছাড়িয়ে ছুটে গেলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম অভ্র। অভ্র মিষ্টিকে কোলে তুলে গালে চুমু দিলো। আমি হেসে বললাম
.
– তুমি কখন এলে?
.
– যখন আপনারা মা মেয়ে দুষ্টুমিতে মেতে ছিলেন!
.
তারপর মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল
.
– সোনা কেমন আছো?
.
মিষ্টি অভ্রর গলা জরিয়ে ধরে বলল
.
– আমি ভালোই থাকি, কিন্তু তুমি কালকে অসোনি কেনো? ( ভ্রু নাচিয়ে )
.
– আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম। এই দেখো ফ্রি হয়ে এসে গেছি
.
– কিন্তু আমি রেগে আছি ( মুখ ঘুরিয়ে)
.
অভ্য ভয় পেয়ে যাবার মতো ফেস করে বলল
.
– ওহহো আমার মিষ্টি মামনী রেগে আছে আমার ওপর?
.
মিষ্টি মাথা ঝাকালো যে হ্যা। তা থেকে অভ্র বলল
.
– হুমমম তাহলে তো মামনীর রাগ টা ভাঙ্গাতে হয়। কী করা করা যায়? কী করা যায়..
.
এটুকু বলেই অভ্র পকেট থেকে চকলেট বের করে মিষ্টির হাতে দিয়ে বলল
.
– চকলেট…
.
মিষ্টি খুশিতে আটখানা হয়ে অভ্রের গালে একটা চুমু দিলো। কিন্তু পরোক্ষনেই মুখ ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

– আমাকে ঘুষ দিয়ে লাভ হবেনা আমার রাগ ভাঙানো এতো সোজা না।
.
অভ্র অবাক হয়ে বলল
.
– বাপরে! তা কী করলে মিষ্টির রাগ ভাঙবে?
.
– আমাকে নিয়ে আজকে ঘুরতে বেরোতে হবে!
.
– ওকেহ ডান! ( হেসে দিয়ে )
.
মিষ্টি একটা চকলেট খেতে নিলেই আমি বললাম।
.
– মিষ্টি খালি পেটে একদম না। আগে ব্রেকফাস্ট করবে তারপর
.
মিষ্টি মুখটা ইনোসেন্ট করে মেকি হাসি দিয়ে বলল
.
– একটুখানি?
.
– একটুখানিও না রাখো ওটা
.
মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে রেখে দিলো চকলেট। আমি আর অভ্র দুজনেই হেসে দিলাম ওর কান্ড দেখে।

– সকাল সকাল মা মেয়ে কী নিয়ে দুষ্টমী করছিলেন?
.
– আর বলোনা। পাজী মেয়ে একটা, সবাইকে নাকে দরি ঘোরায় সারাদিন।
.
অভ্র এটা শুনে হাসতে হাসতে বলল
.
– কার মেয়ে দেখতে হবে তো! ওর বাবাও তো সবাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে ছাড়তো।
.
সাথে সাথেই আমার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অভ্রও চুপ হয়ে গেলো। মিষ্টি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে অামাদের দিকে? অভ্র ইতোস্তত করে বলল
.
– সরি ম্যাম আসলে …
.
আমি মুচকি হেসে বললাম
.
– ইটস ওকেহ।
.
মিষ্টি কপাল কুচকেই বলল
.
– আমি তো মাম্মার মেয়ে। আমার ও কী বাবা আছে সবার মতো?
.
আমি নিজেকে সামলে মিষ্টিকে বললাম
.
– মিষ্টি যাও রুমে গিয়ে খেলো, ব্রেকফাস্ট সার্ভ করা হলে আমি তোমাকে ডেকে দেবো।
.
মিষ্টি এখোনো কপাল কুচকেই মুখ ফুলিয়ে বলল
.
– অভ্র আঙ্কেল কী বলল?
.
অভ্র এবার মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বলল
.
– আসলে আমি মা বলতে গিয়ে বাবা বলে ফেলেছি তুমি রুমে যাও।
.
মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে ভেতরে চলে গেলো। আমি অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– ওর সামনে আর এসব বলোনা ও বয়স তুলনায় কিন্তু একটু বেশিই এডভান্স।
.
– সরি ম্যাম! বাট আপনি ওকে ওর বাবার বিষয়ে কোনোদিন বলবেন না?
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম

– বলবো অভ্র সঠিক সময় আসলেই বলব! এখন ওর বাবার বিষয়ে ওকে কিছু বললে তো ওর একটা প্রশ্নের উত্তর ও পেয়ে যাবে কিন্তু তখন ওর মনে আরো দশটা প্রশ্ন উঠবে। যেই প্রশ্নের উত্তর পাবার মতো মানসিক পরিস্হিতি ওর এখোনো হয়নি।
.
– হ্যা ! কিন্তু এভাবে সবার থেকে নিজেকে দূরে কেনো সরিয়ে রাখছেন? এতে কার কী লাভ হচ্ছে?
.
– লাভ লোকসানের কথা ভেবে আমি নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখিনি অভ্র। কারো সাথে থাকার যোগ্যতা নেই আমার।
.
– কিন্তু ম্যাম ছয় বছর হয়ে গেছে আর কতো?
.
– বাদ দাও অভ্র। কিন্তু এই ছয় বছর তুমি ছায়ার মতো আমার পাশে ছিলে। কিন্তু কেনো?
.
– কাউকে কথা দিয়েছে তাই
.
– আমি জানি অভ্র। তুমি কিন্তু আমাকেও একটা কথা দিয়েছিলে সেটা খেলাপ করোনি তো?
.
– না ম্যাম করিনি।
.
অভ্র চুপ হয়ে গেলো। দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। নিরবতা ভেঙ্গে অভ্র বলল
.
– ম্যাম আজ হসপিটালে যান নি?
.
– আজ ফ্রাই ডে অভ্র
.
– জানি বাট কোনো ইমারজেন্সি আসেনি?
.
– এখোনো তো সেরকম কোনো কল আসেনি
.
– ওহ
.
– তুমি এখানেই ব্রেকফাষ্ট করবে তো?
.
– না ম্যাম আমি বাইরে থেকে খেয়ে নেবো
.
– চুপচাপ টেবিলে বসো নইলে কানমোলা খাবে।
.
– ঠিক যেভাবে স্যার আমাকে দিতো?
.
আমি হতাশাজনক একটা চাহনী দিলাম ওর দিকে তারপর একটা শ্বাস নিয়ে বললাম

– প্লিজ অভ্র।
.
– ম্যাম আপনি কেনো…
.
– এই টপিক টা থাক না অভ্র।
.
অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো তারপর বলল
.
– আচ্ছা.. আমি মিষ্টিকে নিয়ে টেবিলে আসছি। আপনি ব্রেকফাস্ট রেডি করুন।
.
– আচ্ছা যাও
.
আমি গিয়ে সবকিছু রেডি করতে করতে অভ্র মিষ্টিকে কোলে নিয়ে আসলো। এসেই মিষ্টিকে কোল থেকে নামালো আর মিষ্টি ছুটে এসে আমার কাছে এলো আমি ও ওকে কোলে করে আমার পাশের বসালাম। তখনি সাথি এলো। আমি হসপিটালে যতক্ষণ থাকি ততোক্ষণ সাথিই মিষ্টিকে দেখে রাখে ওই ছয় বছর ধরে। মিষ্টি ছোটবেলা থেকেই ওকে মনি বলে ডাকে।
.
সাথি টেবিলে দুধ রাখতেই মিষ্টি নাক সিটকে বলল
.
– মনি…তোমাকে রোজ টেবিলে এই পচা জিনিসটা রাখতে হবে?
.
সাথি মুখ কাচুমাচু করে বলল
.
– আমি কী করবো? ম্যাম ই তো দিতে বলে
.
আমি মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললাম
.
– কোনো খাবার কে পচা বলতে হয়না মা। আর তাছাড়া এটা না খেলে তোমার শক্তি হবে কীকরে?
.
কিন্তু মিষ্টি নাট সিটকে রেখেই বলল
.
– কিন্তু বাজে খেতে তো এটা!
.
– নাক চেপে ধরো আমি খাইয়ে দেবো আর গন্ধ লাগবে না।
.
মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে রেখে বলল
.
– তুমি রোজই এটা বলো
.
অভ্র হেসে দিলো। আমিও হেসে দিয়ে বললাম
.
– অনেক হয়েছে পাকা বুড়ি এবার এটা খাও।

তারপর মিষ্টিকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষে অভ্র মিষ্টিকে নিয়ে খেলতে বসে গেলো। আজ অভ্রর কাজ নেই তাই জোর করে রেখে দিলাম এখানেই। সারাদিন মিষ্টির সাথে কাটিয়েছে। সত্যিই এই ছয় বছর ও অনেক ভাবে সাহায্য করেছে আমাকে, ভাইয়ের মতো আমার পাশে থেকেছে। বিকেলে অভ্র মিষ্টিকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে গেলো। আমি টিভি অন করে যেই বসেছি ওমনি কল এলো তাকিয়ে দেখলাম হসপিটাল থেকেই এসছে আমি রিসিভ করে বললাম
.
– হ্যালো..
.
– হ্যালো ম্যাম..
.
– হুম বলুন?
.
– ম্যাম ইমারজেন্সি কেস এসছে সার্জারী করতে হবে?
.
– কী হয়েছে?
.
– গুলি লেগেছে বুকে।
.
শুনেই বূকটা ধক করে উঠল। বুকের ভেতরে কোথাও একটা হুহু করে উঠল। নিজেকে কোনোরকমে সামলে বললাম
.
– ওটি রেডি করুন আমি আসছি।

বলেই ফোনটা রেখে একটা শ্বাস নিলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে অভ্র কে ফোন করে বললাম আমি হসপিটালে যাচ্ছি। তারপর সাথিকে ডাকলাম। সাথি এসে বলল
.
– জ্বী ম্যাম?
.
– আমি হসপিটালে যাচ্ছি সার্জারী আছে আসতে রাত হবে। মিষ্টিকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিও।
.
– আচ্ছা
.
তারপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে। নিজেই ড্রাইভিং করে পৌছে গেলাম হসপিটালে। হসপিটালে পৌছতেই দুজন তাড়াতাড়ি আমার কাছে এলো। আমি হাটতে হাটতেই বললাম
.
– সব রেডি আছে?
.
পেছন পেছন ওরা আসতে আসতে বলল
.
– ইয়েস ম্যাম শুধু আপনারি অপেক্ষা করছিলাম
.
আমি ওটির পোশাক পরতে পরতেই ওটি তে ঢুকে গেলাম। গিয়ে লোকটার বুকে লাগা গুলির দাগ দেখেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম তবুও নিজেকে সামলে অপারেশন শুরু করলাম। আর আলহামদুলিল্লাহ্ সাকসেসফুল ও হলো। আমি ওটি থেকে বেরিয়ে পেশেন্ট পার্টিকে নিশ্চিন্ত করে দিয়ে কেবিনে ঢুকতে নিলে একজন আমার সামনে এসে বলল
.
– কনগ্রাচুলেশন! এবারেও সাকসেসফুল।
.
তাকে দেখেই আমার মুখে হাসি ফুটলো হেসে দিয়ে বললাম
.
– ভালো আছো ভাইয়া?
.
ইফাজ ভাইয়া: হুম ভালো। তুমি?
.
– ভালো..
.
– সত্যিই কী তাই?
.
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। ইফাজ ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
.
– ছয় বছর হয়ে গেছে অনি। এভাবে আর কতোদিন ? ভূলটা তোমার একার ছিলোনা। আমাদের সবার ছিলো। কিন্তু নিজেকে একা এভাবে শাস্তি কেনো দিচ্ছো?

– আমি নিজেকে শাস্তি দিচ্ছিনা ভাইয়া
.
– দিচ্ছো শুধু নিজেকে না সবাইকে দিচ্ছো। তোমাকে ছাড়া কেউ ভালো নেই। আর না তুমি ভালো আছো।
.
– ভাইয়া এই বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাইনা
.
– কিন্তু অনি..
.
– ভাইয়া প্লিজ। এটা বলো আপি আর হিয়াজ কেমন আছে?
.
ইফাজ ভাইয়া আবারো একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– ভালো আছে। আদ্রিমা মানে মিষ্টি কেমন
.আছে?
.
– ভালো।
.
– সাথীর কাছে রেখে এসছো ওকে?
.
– হুম। এবার বলো চা খাবে না কফি?
.
– আরেহ না সময় নেই এখন যেতে হবে।.
.
– ওহ
.
– অনেক বদলে গেছিস রে তুই। অনেক ম্যাচিউরড হয়ে গেছিস। কে বলবে এই সেই পিচ্ছি অনি ছিলো?
.
আমি মুচকি হেসে বললাম
.
– বড় হয়েছি তো এখন।
.
ইফাজ ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
.
– আমার কথাগুলো ভেবে দেখো। ছয় বছর আগে যা হয়েছে সেটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো আর এক্সিডেন্ট এর জন্যে দায়ী একজনই হয়, সেটা হলো ভাগ্য। এতে কারো কোনো দোষ নেই।
.
বলেই ভাইয়া চলে গেলো আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। কিছু কিছু ভাগ্যেকে মেনে নেওয়া সহজ হয়না ভাইয়া। আমার অবস্হাটা তোমারা কেউ বুঝবেনা।

Infinite Love part 56+57+58+59+60

হসপিটাল থেকে রাতে এপার্টমেন্টে আসতেই সাথি দরজা খুলে দিলো। আমার এপার্টমেন্ট টা ডুপলেক্স টাইপ অনেকটা সিড়ি আছে থাকার রুম সব ওপরে, আমি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম
.
– মিষ্টি ঘুমিয়ে গেছে?
.
– হ্যা ম্যাম
.
– খেয়েছে তো?
.
– আপনাকে ছাড়া খেতে চাইছিলো না অনেক কষ্টে বুঝিয়ে খাইয়েছি।
.
– হুম তুমি খেয়েছো?
.
– নাহ ম্যাম।
.
– আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। খাবার বারো দুজন একসাথে খাবো।
.
এটুকু বলে ওপরে চলে গেলাম, রুমে গিয়ে দেখি মিষ্টি ঘুমোচ্ছে। আমি মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর কপালে চুমু দিলাম, তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে সাথির সাথে ডিনার সেরে ওপরে চলে ওর । খাটে বসে মিষ্টির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। তারপর কাবার্ড থেকে লুকিয়ে রাখা আদ্রিয়ানের ছবিটা নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে ওর ছবিটা দেখতে দেখতে ছলছলে চোখে বললাম

– দেখো আদ্রিয়ান আজ তুমি আমার সাথে নেই। কিন্তু তোমার অংশ আমার সাথেই আছে। তুমি সারাজীবন শুধু আমাকে দিয়েই গেলে ভালোবাসা, জীবন, সুখ, স্ত্রীর সম্মান সব। আর দেখো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েও তুমি আমাকে এমন কিছু দিয়ে গেছো যা আমার কাছে অমূল্য। আমার মেয়েকে দিয়েছো, আদ্রিমা উমহুম আদ্রিমা আবরার জোহানি আমাদের সন্তান। আমার মিষ্টি। কিন্তু আমার মনে তবুও শূণ্যতা আছে তোমার শূণ্যতা। সেই শূণ্যতা পূরণের জন্যে আমার তোমাকে চাই আদ্রিয়ান…

Infinite Love part 66+67+68+69+70